ভালবাসার রাজপ্রাসাদ | পর্ব – ২১ | দিবস, রজনীর খেলা

জুন মাসের শেষ। একদিন রাতের খাওয়ার সময়ে অভি বাবা মাকে জানায় যে পরেরদিন ওর কিছু ইন্টারভিউ আছে। একটা চাকরি বড় জরুরি অভির পক্ষে। ছোটোবেলা থেকে অভি বাবা মার কাছে শুনে এসেছে যে বাবা মা ওর জন্য অনেক পয়সা খরচ করেছে আর তাঁর সঠিক ফলাফল অভি তাদের দিতে পারেনি। বাবা মায়ের ভরতসনা শুনে শুনে অভির মন বিষিয়ে গেছে, অন্যদিকে পরীর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ওকে সমাজের সমকক্ষ হয়ে দাঁড়াতে হবে না হলে কেউ ওর আওয়াজ শুনবে না।
রাতের খাওয়ার পরে, বসার ঘরে বসে টি.ভি দেখছিল। পরী ওকে দুধ দেবার জন্য ঢুকে ওকে জিজ্ঞেস করে, “কাল কোথায় কোথায় ইন্টারভিউ আছে?”
অভি, “অনেক জায়গায় পাঠিয়েছিলাম শুধু দু জায়গা থেকে ডাক এসেছে। পি.ডাব্লু.সি আর এন.আই.আই.টি থেকে কল এসেছে। কাল ক্যামাক স্ট্রীট যাবো, দেখি কি হয়।”
সোফায় ওর পাসে বসে, অভির মাথার চুলে বিলি কেটে বলে, “আমার বিশ্বাস তুমি কিছু না কিছু তে পেয়ে যাবে। কিন্তু অভি, রেসাল্ট না পাওয়া পর্যন্ত ত কেউ তোমাকে চাকরি দেবে না। একটু অপেক্ষা করো, গ্রাজুয়েসানের রেসাল্ট বের হওয়া পর্যন্ত।”
অভি, “না পরী, আমাকে কোন রকমে একটা চাকরি পেতেই হবে। যা পাব তাতেই ঢুকে যাবো আমি।”

পরী, “এত উতলা হচ্ছ কেন? আর দুই মাস বাকি রেসাল্ট বের হতে, তারপরে ইন্টারভিউ দাও। এখন তোমাকে কেউ চাকরি দেবে না অভি, গ্রাজুয়েসান ডিগ্রি চাই ই চাই।” পরী ঠিক কথাই বলেছিল। ওর দিকে হেসে বলে, “কাল এমনি এমনি বের হবে? শুধু আমি আর তুমি, খালি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াব দুজনে। এখন তোমার শহর, কোলকাতাকে ঘুরিয়ে দেখাওনি কিন্তু।”
অভি, “হাঃ কোলকাতা আমার শহর নয়, আমি এখানে বেশি সময় থাকিনি। এই শহরেকে ঠিক নিজের বাড়ি বলে মেনে নিতে কষ্ট হয় আমার।”
পরী, “ঠিক আছে বাবা। কাল আমি তোমার সাথে ইন্টারভিউর জায়গায় যাবো, তারপরে না হয় দুজনে কোথাও বেড়াতে যাবো, হল। এখন মাথা ঠাণ্ডা করে ঘুমাতে যাও।”
অভি, “আমার সাথে এসো না প্লিস।”
পরী, “কেন?”
অভি, “আমি এমনিতেই অনেক উত্তেজিত কালকের ইন্টারভিউর ব্যাপারে, তুমি সাথে থাকলে আমার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে। তাঁর চেয়ে বরং তুমি বাড়িতে থাক, আমার ইন্টারভিউ শেষ হলে আমি ফোন করে দেব, তুমি ট্যাক্সি নিয়ে তিনটে নাগাদ নন্দনে চলে এস। একসাথে, মুভি দেখব, স্প্লিবারগের সিন্ডলারস লিস্ট।”
পরী নাক কুঁচকে বলে, “ইস, ইংরাজি সিনেমা? ধুর আমি ইংরাজি সিনেমা দেখিনা, একে ত কিছু বুঝিনা। তুমি আমাকে যদি হিন্দি অথবা বাংলা সিনেমা দেখাতে চাও তাহলে আসতে পারি।”
ঠিক তখনি মা ওদিক থেকে পরীকে শুতে যেতে বলে। অভি টি.ভি বন্ধ করে নিজের ঘরে চলে যায়। যাবার আগে পরীর দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে, “আমি কিন্তু কাল তোমার জন্য নন্দনে অপেক্ষা করব। আসা না আসা তোমার ব্যাপার।”
পরদিন, ইন্টারভিউর পরে অভি নন্দনে অনেকক্ষণ পর্যন্ত পরীর জন্য অপেক্ষা করে। পরীর দেখা না পেয়ে, অভি মর্মাহত হয়ে পরে। মাথায় রাগ চড়ে যায় অভির, সাথে সাথে মনে ভয় ঢোকে। কিছু হয়নি ত ওর, কোলকাতায় নতুন, একা একা ট্যাক্সি চেপে ঠিক ভাবে পৌছাতে পারবে ত নন্দনে। পরীর যদি কিছু হয় তাহলে মা ওকে কেটে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেবে। শেষ পর্যন্ত বাড়িতে ফোন করে পরীর খবর নেওয়ার জন্য। পরী ফোন তোলে, আর অভি রেগে যায় এই ভেবে যে শেষ পর্যন্ত পরী ওর কথা রাখল না।
অভি ফোনে পরীর ওপরে চেঁচিয়ে ওঠে, “আমি তিন ঘন্টা ধরে তোমার জন্য নন্দনে অপেক্ষা করছি আর তুমি বাড়িতে বসে কি করছ?”
পরী বিরক্তির সুরে উত্তর দেয়, “একদম চেঁচাবে না আমার ওপরে।”
অভি থামেনা, “তুমি আসবেনা, সেটা সকালে জানিয়ে দিলেই হত। অত আদিখ্যেতা দেখানর কি ছিল? আমি তোমার জন্য তাহলে নন্দনে অপেক্ষা করে থাকতাম না।”
পরী, “তোমাকে অপেক্ষা করতে কে বলেছিল, আমি কি বলেছিলাম? আমি ত তোমাকে আগে থেকেই বলে দিয়েছিলাম যে যদি তুমি আমাকে হিন্দি বা বাংলা সিনেমা দেখাও তাহলে আমি তোমার সাথে যেতে রাজি আছি।”
অভি, “তার মানে তুমি আসছ না তাই তো। আমি এতক্ষণ তোমার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে আর তুমি এখন বলছ যে তুমি আসবে না।”
পরী, “আমি আগেই বলেছি যে আমার ওপরে ওই রকম ভাবে চেঁচাবে না।”
অভি, “আমি কিছু জানিনা, আমি আরও এক ঘন্টা তোমার জন্য এখানে অপেক্ষা করব। একটা ট্যাক্সি নিয়ে চলে আস।”
পরী, “তুমি কি আমাকে আদেশ করছ তোমার সাথে সিনেমা দেখতে যেতে? আমি আসছি না, তোমার যা ইচ্ছে তাই করো।” এই বলে ফোন রেখে দেয়।
অভি অনেকক্ষণ এদিক ওদিকে ঘুরেফিরে একটা সিনেমা দেখে শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরে যায়। সিনেমায় অভির মন বসেনা, সামনের পর্দায় সিনেমা চলতে থাকে কিন্তু মাথার মধ্যে পরীর ওপরে খুব রাগ হয়। সন্ধ্যের পরে বাড়ি পৌঁছে দেখে যে বাবা অফিস থেকে ফিরে এসেছেন। পরী চেহারা অস্বাভাবিক ভাবে শান্ত, মনের মধ্যে যেন অশান্তির মেঘ জমে উঠেছে, অভির সাথে ঠিক ভাবে কথা বলছেনা পরী। বসার ঘরে বসে টি.ভি চালায় অভি। কিছু পরে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে ধুপ করে ওর সামনে চায়ের কাপ রেখে ওর দিকে বিরক্তি ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। অভি চোখ তুলে তাকাতেই, মুখ ঘুরিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়। অভি জল খাওয়ার ছুতো করে রান্না ঘরে ঢোকে।
গলা নামিয়ে পরীকে জিজ্ঞেস করে, “কথা বলছ না কেন আমার সাথে?” পরী কিছু সবজি কাটছিল, পেছন ফিরে ভুরু কুঁচকে বিরক্তি ভরা চোখ নিয়ে অভির দিকে তাকায়, যেন জিজ্ঞেস করে, “কি চাই তোমার?” অভি ওকে, ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে, “হা ভগবান, কেন মরতে আমি প্রেয়সীকে রাগাতে গেলাম?” হাত বাড়িয়ে ছুঁতে যাবে পরীকে, ঠিক সেই সময়ে বাবা অভিকে ডাক দেন।
বাবা, “তোর ইন্টারভিউ কেমন গেল?”
অভি, “মোটামুটি গেছে।”
বাবা, “কোথায় গেছিলি?”
অভি, “এন.আই.আই.টি, ক্যামাক স্ট্রীট।”
বাবা, “ব্যাঙ্কিং, ডাব্লু.বি.সি.এস এই সবে চেষ্টা করিস না কেন? কোন সরকারি চাকরি দেখ।”
অভি তখন রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে, পরী ওর দিকে তাকিয়ে ইশারা করে, “ওই রকম ভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও এখান থেকে।”
বাবা থেমে থাকেন না, নিজের ঘর থেকেই অভির ওপরে বকতে শুরু করেন, “সারা জীবন তো তুই আমাদের কথাই শুনলি না, নিজের মতন চলে গেলি। কত টাকা পয়সা খরচ করে তোকে পড়ালাম, কিন্তু কি রেসাল্ট করলি তুই? এমনি কি আই.আই.টি বা জয়েন্ট পেলি না। কি চাস তুই? তুই ভাল করে জানিস কি করে তোকে কলেজে ভর্তি করেছি সেখানেও মন দিয়ে যদি একটু পড়াশুনা করতিস। পড়াশুনা করতে চাস, না ভ্যাগাবন্ডের মতন ঘুরে বেড়াতে চাস?”
শুরু হল অভিকে বাক্য বাণে বেঁধা। কিছু পরে মা স্কুল থেকে ফিরে অভিকে জিজ্ঞেস করেন ইন্টারভিউর কথা, মাকে জানায় যে ওরা বলেছে রেসাল্ট বের হবার পরে আসতে। রান্না ঘরের দরজায় তখন দাঁড়িয়ে অভি, একদিকে মা অন্যদিকে বাবা, দুজনে মিলে ওকে বকতে শুরু করে দেন। প্রথমত, ইন্টারভিউ ভালো যায়নি, তারপরে পরী আসেনি নন্দনে, তারপরে বাবা মায়ের বকুনি, মাথা যেন আর ঠিক রাখতে পারে না অভি।
চেঁচিয়ে ওঠে সবার ওপরে, “আমাকে একটু কি একা একা বাঁচতে দেবে?”
শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে রেগে মেগে নিজের ঘরে চলে যায়।
পশ্চিম আকাশে বর্ষা কালের ঘন কালো মেঘ, অভির বুকের ভেতরে দুখের কালো মেঘ জমে ওঠে। আলমারির এক কোনা থেকে একটা কাঠের বাক্স বের করে অভি, স্কুলে পড়ার সময়ে এক বন্ধু ওকে উপহার দিয়েছিল। কাঁচের ছোটো ছোটো গুলি ভর্তি সেই কাঠের বাক্সে, ছোটো বেলায় হস্টেলে থাকতে গুলি খেলত অভি। সব গুলি গুলো বিছানার ওপরে ছড়িয়ে দিয়ে, ওর ওপরে শুয়ে পরে, নিজের সেই হারানো ছোটো বেলা ফিরে পেতে চায়।
বালিশে মুখ গুঁজে পরে থাকে, বুকের মাঝে অব্যাক্ত এক বেদনা। কিন্তু সময়কে যে কেউ ধরে রাখতে পারেনা, চেষ্টা করেও ফিরে পাবেনা ওর সেই বাল্যকাল বা ওর মনের সেই অব্যাক্ত ইচ্ছে গুলো। রাতে মা খেতে ডাকতে আসেন, অভি চুপ করে বালিসে মাথা গুঁজে পরে থাকে। একবার ভাবে হয়ত মা বা পরী ওর জন্য রাতের খাবার নিয়ে আসবে, কিন্তু কেউ ওর জন্য খাবার নিয়ে আসে না।
না খেয়ে শেষ পর্যন্ত বিনিদ্র রজনী কাটায় অভি, সকালের দিকে ঘুম পায়। সকালেও কেউ ওকে ডাকতে আসেনা। অনেক দেরি করে ঘুম ভাঙ্গে অভির, চোখ খুলে ঘড়ি দেখে, এত খনে বাবা মা কাজে বেড়িয়ে গেছেন। বাইরে তাকিয়ে দেখে, বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। বাড়িতে শুধু অভি আর পরী, চুপচাপ নিচে নেমে লক্ষ্য করে যে নিজের ঘরের বিছানার ওপরে বসে পরী। জানালার বাইরে একমনে তাকিয়ে আছে আর জানালার বাইরে গাছের ওপরে বৃষ্টির জল পরা দেখছে। চুপ করে বসে, হাঁটু ভাঁজ করা, হাঁটুর ওপরে থুতনি রাখা, দু’চোখে অব্যাক্ত কোন বেদনা ছলকে পড়ছে।
ধিরে ধিরে ওর পাসে গিয়ে বসে অভি। লক্ষ্য করে যে, গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে। পরী নিজের খেয়ালে এতই মগ্ন ছিল যে বুঝতেই পারেনি যে অভি ওর পাসে এসে বসেছে। পরীর কাঁধে হাত রাখতেই পরী নিজের সম্বিৎ ফিরে পায়। জল ভরা লাল চোখে অভির দিকে তাকায়, সারা চেহারায় এক ব্যাথা ফুটে উঠেছে পরীর, বুকের ভেতরে যেন কোন বেদনা ওকে দুমড়ে মুচরে একাকার করে দিয়েছে।
অভি চিন্তিত হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে, তোমার?”
মাথা নাড়ায় পরী, “কিছু না।”
অভি, “ওইরকম ভাবে বসে আছো কেন?”
বুকের ভেতরে যেন দামামা বাজতে শুরু করেছে।
আবার মাথা নাড়ায় পরী, “কিছু হয়নি, বলছি তো।”
পায়ের দিকে তাকিয়ে বিছানার ওপরে নখ দিয়ে খোঁটে। দু’কাঁধে হাত রাখে অভি, পরীর হাঁটুর কাপড় চোখের জলে ভিজে উঠেছে।
বেদনার চাপা চিৎকার করে ওঠে অভির দিকে, “তোমরা সবাই স্বার্থপর। আমার আশেপাশের সব মানুষ স্বার্থপর।”
চুবুকে আঙুল দিয়ে মাথা তুলতে চেষ্টা করে অভি, ঘাড় শক্ত করে রাখে পরী। বার বার অনুরোধ করে, কি হয়েছে জানাতে, পরী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে, বাইরে অঝোরে শ্রাবনের ধারা।
শেষে ধরা গলায় বলে, “যখন ছোটো ছিলাম, আমাকে চন্দ্রানিদির কাপড় পড়তে হত। ওর বই আমাকে পড়তে হত। আমার জন্য কোনদিন নতুন বই কেনা হত না, আমি কোনদিন কোন নতুন জামা কাপড় পাইনি। মায়ের কাছে নতুন জামা চাইতেই মা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকতেন। বড় হলাম আমি, বড় বৌদি আমাদের বাড়ি এলেন। সেই প্রথম আমি পুজোর সময়ে নতুন জামা পাই, বড় বৌদি আমায় নতুন জামা কিনে দেয়। ইন্দ্রানিদি আর চন্দ্রানিদির বিয়ে হয়ে গেল। ওরাই আমাদের বাড়ির খরচ উঠাত। সুমন্তদা শুধু মাত্র এক চাষি, বাকি দুই দাদাও ছোটো ছোটো, কেউ তখন কোন টাকা অর্জন করে না। আমি বাড়ির ছোটো তাই সবাই নিজেদের মতামত আমার ওপরে চাপিয়ে দিতে চাইত।”
দু’চোখে অবিরাম শ্রাবনের ধারা বয়ে চলে পরীর, অভি ওর মাথায় হাত দিয়ে আদর করতে যায়। বিরক্ত হয়ে পরী ওর হাত সরিয়ে দেয়। পরী থামে না, “আমি আরও বড় হলাম। কোনোরকমে আমার পড়াশুনা করান হল। দিদিরা আমার বিয়ের জন্য মেতে ওঠে। মা আর সুমন্তদা আমার বিয়ের কথা শুনে প্রথমে বাধা দেন। ইন্দ্রানিদি ওর দেওরের সাথে আমার বিয়ের ঠিক করে, আমি তখন ক্লাস টুয়েল্ভে পড়ি। শশাঙ্কদা বিয়েতে মত দেননা, আমাকে গ্রাজুয়েসানে ভর্তি করে দেন। গ্রাজুয়েসানের শেষ শশাঙ্কদা আমার বিয়ের ঠিক করে মেঘনা বউদির এক খুড়তুত ভাইয়ের সাথে।
সারা জীবন সবাই মিলে আমার ওপরে নিজেদের মতামত চাপিয়ে দেয়, একবারের জন্য কেউ আমাকে আমার মনের কথা জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করেনি। আমি কে? আমি কি একটা জ্যান্ত পুতুল নাকি? সবার কথা সারা জীবনভর আমাকে শুনে যেতে হবে? আমার নিজের কি কখন কোন মতামত থাকতে পারেনা? ছোটমাকে শেষ পর্যন্ত ডাকা হয় আর তুমি এলে আমার জীবনে। আজ তুমিও আমার ওপরে চেঁচিয়ে উঠলে শেষ পর্যন্ত। আমি কি তোমাদের সবার হাতে একটা কাঠের পুতুল নাকি?
সবাই যা বলবে তাই আমাকে মেনে নিতে হবে। আমার নিজের কোন চাহিদা থাকতে পারেনা? ছোটবেলা থেকে দিদিরা, তারপরে দাদাদের, আর এখন তোমার কথা মানতে হবে আমাকে? আমার কি হৃদয় বলতে কিছু নেই? আমার কি নিজের কিছু ইচ্ছে থাকতে পারেনা, অভি?”
পরীকে কাছে টেনে কপালে কপাল ঠেকিয়ে ক্ষমা চায় অভি, “আমি দুঃখিত পরী, ক্ষমা করে দাও।”
অভিকে ঠেলে সরিয়ে দেয় পরী, “তারমানে তুমি যদি জানতে যে আমার খারাপ লাগবে তাহলে তুমি করতে না, তাই ত? তুমি নিজে থেকে একবারের জন্য ভেবে দেখেছ কি, যে আমি তোমার সাথে যখন ওই অজানা জায়গায় গেছিলাম তখন আমার মনের অবস্থা কি ছিল? একবারের জন্য নিজে ভেবেছ কি, যে তুমি অরুনিমার সাথে কি করছ, সেটা আমি জানতে পারলে আমার মনে কি প্রতিক্রিয়া হবে? না, তুমি নিজে থেকে একবারের জন্যেও ভাবোনি। তোমাকে না বললে তুমি ভাবতে পার না, কেন? অভি কেন? তোমরা সবাই স্বার্থপর, শুধু নিজেদের কথাই ভাবো।”
কি বলবে অভি, ভাষা যেন গলার কাছে দুমড়ে আটকে থাকে, কোনোক্রমে উত্তর দেয়, “অরুনিমা একটা ভুল মাত্র, পরী।”
চিৎকার করে ওঠে পরী, “ও, ভুল। পুরুষ মানুষ ভুল করলে ভুল নয় সেটা পুরুষত্ব আর মেয়েরা করলে সেটা ছেনালিপনা, তাই না? কেন এইরকম আলাদা মনের ভাব, অভি?”
অভি পরীর মাথা বুকের ওপরে চেপে ধরে, ডুকরে কেঁদে ফেলে পরী, “পরী, প্লিস, ক্ষমা করে দাও, প্লিস। আমি প্রতিজ্ঞা করছি জীবনে কোনদিন আমি তোমাকে আঘাত করবো না। কখনই না, পরী। আমি তোমাকে সব দুঃখ কষ্ট থেকে অনেক অনেক দুরে রাখব, দুহাতে আগলে রাখবো তোমাকে।”
বুকের কাপড় দু’হাতে আঁকড়ে ধরে কেঁদে ভাসিয়ে দেয় অভির বুক। পরীর পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত করে অভি, “দেখ, আর কেঁদো না, নাহলে এবারে আমি কিন্তু কেঁদে ফেলব। একটি বারের জন্য হাসও, পরী। দেখ, আমি তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমাকে কোনদিন কিছু করতে বলব না, তোমাকে জিন্স পড়তে বলব না, তোমাকে ইংরাজি সিনেমা দেখতেও বলব না। যেখানে তোমার ইচ্ছে হবে না সেই জায়গায় পর্যন্ত যাবো না আমি।”
ওর কথা শুনে চোখের জল মুছে তাকায় অভির দিকে, “কে বলেছে তোমাকে যে আমি জিন্স পড়তে ভালোবাসি না? আমি তোমার জন্য কাজাতে পড়েছিলাম না।”
পরীর মুখে হাসি দেখে অভি স্বস্তির শ্বাস নেয়, “যাক বাবা, বাঁচালে। তা দুপুরে কি রান্না করেছ?”
পরী বিছানার ওপরে ঠেলে ফেলে দেয় অভিকে, “সকাল থেকে এত মন খারাপ ছিল যে রান্না ঘরে ঢুকতে মন করেনি তাই কিছুই রান্না করিনি। ছোটমা বাবু চলে যাওয়ার পরে এখানে বসে বসে শুধু বৃষ্টি দেখেছি। খুব একা মনে হচ্ছিল তখন, জানো।”
অভি ওর হাত ধরে টান দেয় আর পরী ওর বুকের ওপরে পরে যায়, “কে বলেছে তুমি একা? আমি আছি যে তোমার সাথে।”
অভির বুকের ওপরে হাত রেখে, থুতনি রাখে বুকের ওপরে, ওর চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে থাকে পরী। অভি ওর কোমর জড়িয়ে ধরে থাকে শক্ত করে। অভি চোখ টিপে জিজ্ঞেস করে, “সিনেমা দেখতে যাবে?”
বুকের ওপরে আদর করে চাঁটি মেরে বলে, “মাথা খারাপ নাকি, তোমার সাথে আবার সিনেমা দেখতে যাওয়া। রান্না করতে হবে না? দুপুরে খাবে কি?” কোনোরকমে অভির দৃঢ় আলিঙ্গন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।
অভি বিছানায় শুয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে, জানালার সামনের জামরুল গাছের পাতায় টপটপ করে বৃষ্টির জল পড়ছে, সামনের কার্নিশে একটা চরুই পাখি জুবুথুবু হয়ে বসে, মাঝে মাঝে পাখা ঝেরে গায়ের জল শুকিয়ে নিচ্ছে। অভি বুকের ওপরে হাত বোলায়, ঠিক যেখানে ওর প্রেয়সী আদর করে চাঁটি মেরে গেছে, মনে হয় যেন সেই নরম আঙ্গুলের ছোঁয়া এখন লেগে।
“এই এখন পরে পরে কি ভাবছ? খাবার তৈরি, চলে এসো।”
খাবার ঘর থেকে পরী ওকে ডাক দেয়।
খাবার ঘরে ঢুকে পরীকে বলে, “আমি এখন স্নান করিনি, বেবি।”
কাছে এসে পেছনে আদর করে এক লাথি মেরে বলে, “তাড়াতাড়ি স্নান সেরে এস, খিদেতে আমার পেট জ্বলছে।”
অভি ওর পেছনে আদর করে চাঁটি মেরে বলে, “আমি কিন্তু তোমার পেছনে লাথি মারব না, অমন রসাল মন্ড একেবারে কামড়ে খেয়ে নেব।”
খিলখিল করে হেসে ফেলে পরী, অভিকে ঠেলে ঢুকিয়ে দেয় বাথরুমের ভেতরে।
বাবার আদেশ অনুসারে কিছুদিন পরে অভি ব্যাঙ্কিং পরীক্ষার আর অন্য কিছু সরকারি চাকুরির পরীক্ষার ফর্ম কেনার জন্য বারি থেকে বের হবার উদ্যোগ করে। সেদিন সকাল থেকেই আকাশ গুমোট বেঁধে, যেকোনো সময়ে বৃষ্টি নামতে পারে। কোলকাতায় একবার বৃষ্টি নামলে ধরতে অনেক সময় লাগে। এমন সময়ে পরী এসে জিজ্ঞেস করে যে কোথায় যাচ্ছে ও। অভি জানায় যে কলেজস্ট্রিট যাবে ফর্ম কেনার জন্য, পরী ও ওর সাথে বের হবার জন্য জেদ ধরে।
অভি ওকে বুঝিয়ে বলে, “দেখ, আকাশ গুমোট বেঁধে বৃষ্টি যেকোনো সময়ে নামতে পারে। তুমি বাড়িতে থাক, আমি কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ফিরে আসব।”
বিষাদের ছায়া নেমে আসে পরীর চেহারায়, “সারাদিন একা একা বারি বসে কি করব আমি? কোথাও যেতে পারিনা। আমি যদি তোমার সাথে যাই তাহলে তোমার কি অসুবিধে হবে? আমাকে আজ পর্যন্ত কলেজ স্ট্রীট নিয়ে গেলে না।”
অভি ওর বিষণ্ণ চেহারা দেখে শেষ পর্যন্ত মত দেয়, “ঠিক আছে বাবা, তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।”
তাড়াতাড়ি কাপড় পরে বেড়িয়ে এল পরী, দেখে মনে হল যেন কোলকাতার রাস্তায় আগুন ধরাবে। গাড় নীল রঙের স্কার্ট, জানু পর্যন্ত চেপে বসা তাঁর নিচে ঘাগরার মতন ফুলে উঠেছে। পরনের কাপড় চেপে বসে পরীর কোমরের নিচের অংশ যেন ফুটে বেড়িয়েছে। গায়ে আঁটো গোলাপি জামা, গলায় গাড় নীল স্টোল, নিজের অপরূপ যৌবন ঢেকে রাখার জন্য গায়ের ওপরে জড়িয়ে নিয়েছে। মাথার চুল একপাসে সিথে করে আঁচড়ান, ঘাড়ের কাছে আলতো এক খোঁপায় বাঁধা। কানে দুটি ক্রিস্টালের লম্বা দুল। হাঁ করে তাকিয়ে থাকে অভি, ওর গাড় বাদামি রঙের ঠোঁটের দিকে। চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিতে ইচ্ছে করে ওই মধুর ঠোঁট জোড়া।
অভির চোখে ভালবাসার তীব্র চাহনি দেখে লাজুক হেসে বলে, “দেখছ কি ওইরকম ভাবে?”
অভি কথা হারিয়ে ফেলেছে যেন, “যেতেই হবে, তুমি ত মেরে ফেললে আমাকে, পরী।”
লজ্জা পেয়ে যায় অভির কথা শুনে, “উফ, বাবা, আর পারি না। চাবি নাও, তালা দাও আর তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পরো।”
কলেজ স্ট্রীট দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ওরা পরীক্ষার জন্য কিছু বই আর চাকরির ফর্ম কেনে। সেটা পরী প্রথম বার কলেজ স্ট্রীট যাওয়া, আসে পাশের শত শত বইয়ের দোকান দেখে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে ও। সরু সরু রাস্তা, তাঁর ভেতরেও বইয়ের দোকান দেখে অবাক হয়ে যায়। ওদিকে আকাশে মেঘ বেশ একটু জমে আসে। পরী অভিকে জিজ্ঞেস করে, কত বইয়ের দোকান হবে এখানে? ওকে উত্যক্ত করার জন্য অভি উত্তর দেয় যে প্রায় আট হাজার ছয়শ বাইশ খানা বইয়ের দোকান।
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অভির মুখের দিকে, “সত্যি, তুমি গুনেছ?”
অভি হাসি চাপতে পারেনা, “বিশ্বাস করছ না ত, ঠিক আছে গুনে দেখ তাহলে।”
তখন পরী বুঝতে পারে যে অভি ওকে বোকা বানিয়েছে আর সেই রাস্তার মাঝেই ছাতা পেটা শুরু করে অভিকে, “শয়তান ছেলে আমার বোকা বানানো হচ্ছে।”
বাঁ হাতে কাঁধ জড়িয়ে ধরে বলে, “আহ, দারুন, না না তুমি বোকা নও। তুমি কি করে আমার কথা বিশ্বাস করে নিলে সেটাই প্রশ্ন।”
ফর্ম কেনা শেষ, ও অভিকে জিজ্ঞেস করে, “ফর্ম কেনা হয়ে গেছে ত, এখন কি করা যায়?”
অভি জিজ্ঞেস করে, “কফি হাউস যাবে?”
পরী, “না গো, আমি তোমার ওই অরুনা বাঁ সমুদ্রনীলের মতন আতেল নই গো।”
ঠিক সেই সময়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়, আর কোলকাতার বৃষ্টি, একেবারে মুষলধারে নেমে আসে ওদের ওপরে। ঠিক সেই সময়ে বউবাজারের দিক থেকে একটা ট্রাম আসতে দেখে ওরা। পরী ট্রামের দিকে দেখিয়ে অভিকে বলে চড়ে যেতে। অভির জন্য না দাঁড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে ট্রামে লাফিয়ে উঠে পরে আর অভির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। অগত্যা অভি দৌড় লাগিয়ে পরীর পেছন পেছন ট্রামে চড়ে যায়। পরীর ওই বাচ্চা সুলভ আচরন দেখে অভির মনে দোলা লাগে।
ট্রামে উঠে ওর গালে আদর করে চাঁটি মেরে বলে, “কোন ধারনা আছে কি এই ট্রাম কোথায় যাচ্ছে?”
খিলখিল করে হেসে দেয় পরী, “না একদম নয়। জেনে কি হবে তুমি আছো ত আমার সাথে, ব্যাস।”
কন্ডাক্টার কে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারে যে ট্রাম শ্যাম্বাজার যাবে। হাতিবাগানের কাছে এসে গেছে ট্রাম। পরী বাইরে তাকিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, “এই নামো নামো নামো…”
অবাক হয়ে যায় অভি, “কেন কি হল?”
পরী অভির জামা টেনে ধরে বাইরে দেখায়, “দেখ, দর্পণে হটাত বৃষ্টি চলছে, চলো না দেখি।”
অভি নাক কুঁচকে বলে, “ধুর বাবা, বাংলা সিনেমা।”
অভির হাত ধরে টেনে কন্ডাক্টার কে ট্রাম থামাতে বলে, “অ দাদা দারান।” অভিকে বলে, “চলো না, প্লিস। তুমি যদি আমাকে এই সিনেমা দেখাও তাহলে আমি তোমার সাথে ওই চাই পাশ ইংরাজি সিনেমা দেখতে যাব। কি নাম সেই ইংরাজি মুভি টার।”
মুখ বেঁকায় অভি, “সিন্ডলারস লিস্ট।”
পরী, “আচ্ছা বাবা, যারই লিস্ট হোক, আমি দেখতে যাবো, কথা দিচ্ছি। যতক্ষণ তুমি পাশে আছো ততক্ষণ আমার কোন চিন্তা নেই।”
শেষ পর্যন্ত আকাশের বৃষ্টি আর প্রান প্রেয়সীর দৌলতে অভিকে বাংলা সিনেমা, “হটাত বৃষ্টি” দেখতে হয়। সিনেমা দেখে বাইরে বেড়িয়ে দেখে যে আকাশ কালো, বৃষ্টির ধারা অবিরাম ঝরে চলেছে, আর বৃষ্টির চোটে কোলকাতার রাস্তা ঘাটের কথা আর নাই বাঁ জানানো হল আলাদা করে। চারদিকে জলে থই থই। ওদের কাছে একটা ফোল্ডিং ছাতা, মুষলধার বৃষ্টি বাগ মানেনা, কিন্তু দাঁড়িয়ে বৃষ্টি ধরার অপেক্ষা করার জো নেই।
বাবা মা বাড়ি পৌঁছানর আগে বাড়ি পৌছাতে হবে না হলে, আবার কখন আগ্নেয়গিরি ফেটে লাভা নির্গত হবে তাঁর নেই ঠিক। বৃষ্টি তে ভিজে গেছে পরী আর গায়ের কাপড় খুব বাজে ভাবে ত্বকের সাথে লেপটে রয়েছে। চারিদিকে হায়নার চোখের আড়াল করে ছাতা দিয়ে পরীকে আগলে রাখে অভি। গায়ে স্টোল টা ভালো করে জড়িয়ে নিতে বলে। শেষ পর্যন্ত একটা ট্যাক্সি চেপে বাড়ি ফেরে।
বাড়ি ফিরে দেখে যে বাবা বাড়ি পৌঁছে গেছেন। বুকের মাঝে ধুকপুকানি বেড়ে যায় শতগুন। বাবা জিজ্ঞেস করাতে অভি উত্তর দেয় যে, পরীক্ষার ফর্ম কিনতে কলেজ স্ট্রীট গেছিল। বাকি উত্তর পরী দেয় যে, রাস্তায় অরুনার সাথে দেখা হয়ে যায় তাই দেরি হয়ে যায় ওদের। কিছু পরে কাপড় বদলে নিচে এসে দেখে যে মা বাড়ি ফিরে এসেছেন। পরী ঘন ঘন হাচি দিচ্ছে। মা পরীকে জিজ্ঞেস করে যে কেন এত হাচি দিছে। পরী জানিয়ে দেয় যে ওরা কলেজ স্ট্রীট গেছিল অভির ফর্ম কন্তে সেখানে অরুনার সাথে দেখা হয়ে যায় তাই দেরি হয় আর সেই সময়ে বৃষ্টি নামে আর ওরা ভিজে যায়। মা শাল এনে ওর গায়ে জড়িয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখে যে মেয়ের গায়ে জ্বর।
অভির দিকে কটমট করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোর কোন জ্ঞান বুদ্ধি নেই। মেয়েটার শেষ পর্যন্ত জ্বর হয়েছে।”
অভি হাঁ, পরীর জ্বর হয়েছে তার জন্য মা ওকে দায়ী করছেন, ঠিক বুঝতে পারে না। বাবা নিজের ঘর থেকে বলেন, “হাদা ছেলেটা, এই বৃষ্টিতে পরীকে নিয়ে কলেজ স্ট্রীট যাবার কি দরকার ছিল।”
অভি, “ছাতা নিয়ে গেছিলাম আমরা।”
মা রেগে মেগে বলেন, “ওকে নিয়ে যাবার কি দরকার ছিল তোর?”
ওর সামনে ছোটো মা অভিকে বকুনি দিচ্ছে, ছোটোমায়ের কথা শুনে পরীর মনে বড় আঘাত লাগে। পরী অভির পখ নিয়ে ছোটমাকে কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু অভি আঙুল নাড়িয়ে ওকে চুপ থাকতে ইশারা করে। পরী ব্যাথা ভরা চাহনি দেয় অভির দিকে। পরীকে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে অভিকে ডাক্তারের কাছে নাম লেখাতে বলে।
বাবার বন্ধু, বাড়ির ডাক্তার, রাতে পরীকে দেখে যান আর কিছু ওষুধ লিখে দেন। বলেন যে কিছু না শুধু একটু সর্দি জ্বর হয়েছে, কিন্তু মেয়ের জ্বর দেখে পরীর ছোটমা অতি বিচলিত হয়ে ওঠেন। অভি মাকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে শুধু মাত্র একটু সর্দি জ্বর হয়েছে, অতে চিন্তা করার কিছু নেই, কিন্তু মায়ের মন মানেনা। রাত বেড়ে চলে, পরীর জ্বর বেড়ে যায়। দরজার ফাঁক থেকে দেখে যে পরী জ্বরের তাপে কাঁপছে আর মা ঠায় ওর মাথার কাছে বসে জল দিয়ে কপাল ধুয়ে দিচ্ছেন।
সারা রাত জ্বরের বেদনায় কাতরায় পরী, মাথার কাছে মা বসে থাকেন, চিন্তায় ঘুম আসেনা, ওদিকে বসার ঘরে জেগে বসে অনুতপ্ত অভি, দু’চোখে ঘুম নেই। সকালের দিকে পরীর জ্বর কমে আর একটু ঘুমাতে পারে পরী। ওদিকে অভি শুধু মাত্র দূর থেকে দেখে ব্যাথায় কাতরানো হৃদয়কে, মায়ের সামনে ওর কাছে গিয়ে মাথায় হাত বোলানোর উপায় পর্যন্ত নেই।
সকাল বেলায় মা অভিকে বলেন যে, পরীর জ্বর একটু কমেছে, মা স্কুল যাচ্ছেন, অভি যেন সারাদিন বাড়িতেই থাকে। অভিকে না বললেও পরীকে ছেড়ে ও কোথাও যেত না। বাবা মা চলে যাওয়ার পরে, পরীর ঘরে ঢোকে। আপাদমস্তক চাদরে ঢাকা। পাশে বসে ঝুঁকে ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে এক ভাবে চেয়ে থাকে। আদর করে গালে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়। গালের লালিমা যেন নেই, একরাতের জ্বরে যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।
গায়ে জ্বর না থাকলেও, বিছানা ছেড়ে ওঠবার শক্তি টুকু ছিলনা ওর। চুপ করে আদর করে হাত বুলিয়ে দেয়, নিজের খাবার কথা ভুলে গিয়ে। মা আদেশ দিয়ে গেছেন সময় মতন ওষুধ খাওয়াতে পরীকে। বিছানা ছেড়ে উঠে ওর জন্য খাবার আনতে যায়, আর হাতে টান পরে। ঘুরে দেখে পরী ওর দিকে তাকিয়ে কষ্টে হেসে মৃদু সুরে বলে, “একটু বসে যাও।”
ওর হাসি হাসি চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “একটু কিছু খেয়ে নাও তারপরে ওষুধ খেতে হবে। আজ আমি আর কোথাও যাচ্ছি না, তোমার কাছেই থাকব সারাদিন।”
বিছানা মাথার দিকে বালিশ দিয়ে পরীকে উঠিয়ে বসিয়ে দেয়, গলা পর্যন্ত টেনে দেয় গায়ের চাদর। রুটি দুধ মেখে খাওয়ানোর জন্য নিয়ে আসে। অভি ওকে মুখ ধুতে বলে, পরী অনুনয় সুরে বলে, “না।”
অভি মৃদু বকুনি দেয়, “মুখ না ধুলে হবে? যা বলছি তাই করো।”
তোয়ালে ভিজিয়ে চোখ মুখ মুছিয়ে দেওয়ার পরে খাইয়ে দেয়। হাত মুখ মুছিয়ে দেওয়ার পরে যেন পরীর একটু ভালো লাগে, গালের লালিমা যেন কিঞ্চিত ফিরে আসে।
“ভালো লাগছে?” ওকে জিজ্ঞেস করে। শুধু মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, ঠিক আছে। খাওয়ানোর পরে ওষুধ খাইয়ে দেয়।
অভি পরীকে বলে, “মাথা ধুইয়ে গাঁ হাত, মুছিয়ে দেই ভালো লাগবে।”
পরীকে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে সাহায্য করতে হবে নাকি, পরী দরজা বন্ধ করে জোর গলায় বলে, “না।” অভি ওর কথা শোনে না, গরম জল করে এনে হাত পা মুখ মুছিয়ে দেয়, পরী বারবার অনুনয় করে, পায়ে যেন হাত না দেয়। হাত পা ধোয়ানর পরে, পরীর শরীর বেশ হালকা লাগে।
“রবীন্দ্রনাথের সাজাহান পড়ে শোনাবে আমাকে?”
অভির কাছে আব্দার করে।
অভি বিছানায় উঠে বসে, পরী গায়ের ওপরে চাদর টেনে ওর বুকের ওপরে মাথা রেখে শুয়ে পরে। বাম হাত দিয়ে পরীকে জড়িয়ে ধরে, এক হাতে খুলে ধরে রবীন্দ্রনাথের সঞ্চয়িতা। সাজাহান কবিতার কিছু অংশ পড়ে শোনানর চেষ্টা করে অভি। পরী ওর বাংলা কবিতা পড়া শুনে হেসে ফেলে, “থাক অনেক পড়ে ফেলেছ, আর কবিতার পিন্ডি চটকাতে হবে না।”
অভি নিরুপায় হয়ে পরীকে জানায়, “তুমি জানতে যে আমার বাংলা খুব সুন্দর, তাও আমাকে পড়তে বললে কেন?”
হেসে উত্তর দেয় পরী, “দেখতে চেয়েছিলাম তুমি সত্যি বাংলা পড়তে পারো কিনা।”
মাথার ওপরে চুমু খেয়ে বলে, “হাঁ ভগবান।”
মাথার ওপরে ঠোঁটের পরশ পেয়ে বুকের কাছে আরও জড়সড় হয়ে বসে বলে, “শক্ত করে জড়িয়ে ধরোনা আমায়।”
অভি বই ছেড়ে, দু’হাতে নিবিড় আলিঙ্গনে বেঁধে ফেলে পরীকে। বুকের কাছে যেন লেপটে যায় পরী।
অভি ওর কানে কানে বলে, “আমি হিন্দিতে তোমার জন্য কবিতা লিখেছি, শুনবে?”
পরী মাথা নোয়ায়, “হ্যাঁ।” অভি আবার বলে, “হিন্দি তে কিন্তু।” পরী জানায়, “প্রেমের কি ভাষা হয় নাকি, তুমি বলবে আমি ঠিক বুঝে নেব।”
ডায়রিতে কি লিখেছিল, একবার চোখ বন্ধ করে মনে করে নেয় তারপরে ওর হিন্দি কবিতা শোনায়। কবিতা শোনার পরে পরী অভির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে, দুহাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে। মুখ উঁচু করে অভির ঠোঁট ছুঁতে যায়। পরীর ঠোঁট ছোঁয়ার বদলে ওর মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে অভি।
অভি, “তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাও, তারপরে আমাদের অনেক কিছু ভাবতে হবে, সোনা।”
পরী, “আমাকে তোমার বুকের কাছে লুকিয়ে নাও, অভি।”
বুকের ওপরে মাথা চেপে ধরে অভি বলে, “তুমি এখানেই থাকবে পরী, সবসময়ে এখানে থাকবে।”
দিন দুই পরে পরীর জ্বর সেরে গেলে অভি “সিন্ডলারস লিস্ট” দেখতে যাবার কথা বলে। পরী এক উপায় বের করে এবারে যাতে ওরা ধরা না পরে। অভিকে বলে যে ওরা বাবু, ছোটমা বেড়িয়ে যাবার পরেই সিনেমা দেখতে বেড়িয়ে পড়বে আর ওদের ফিরে আসার আগেই বাড়ি ফিরে আসবে। সুকৌশল পরিকল্পনা, যেমন ভাবা তেমনি কাজ, কিন্তু বাদ সাধে বর্ষা কাল। তাই আর সেদিন যাওয়া হয়ে ওঠে না।
কিন্তু পরদিন যেই বাবা মা বেড়িয়ে যান কাজে, ঠিক তারপরেই অভি তৈরি হয়ে নেয়। আকাশের দিকে তাকিয়ে পরীকে অনুরধ করে যে ও যেন বৃষ্টির জন্য তৈরি থাকে আর সেই মত কাপড় পরে। কিন্তু লাজুক সুন্দরী পরী, শাড়ি ছাড়া যেন জগতে ওর কাছে আর কোন সুন্দর পোশাক হয় না। যথারীতি হাল্কা গোলাপি রঙের শিফন শাড়ি আর ছোটো হাতার কাঁচুলি পরে বেড়িয়ে এল। ফর্সা গায়ের রঙ আর তাঁর সাথে শাড়ির রঙ বেশ মিলিয়েছে।
লাল ঠোঁট, চোখের কোলে কাজল, কপালে ছোটো গোলাপি টিপ সব মিলিয়ে অভির সেদিন মনে হয়েছিল যে, সিনেমা না হয় আর কোন একদিন দেখা যাবে আজ পরীকেই দেখি। হাতে ধরে কালো ক্লাচ ব্যাগ আর বাঁ হাতের সরু কব্জিতে সোনার টাইটান ঘড়ি, ছোটমা কয়েকদিন আগেই কিনে দিয়েছে। হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসে পরে দুহাতে জড়িয়ে ধরতে যায় পরীকে, মিষ্টি হেসে পরী ওকে বলে, “না, একদম কোন শয়তানি না, চল বেড়িয়ে পরি।”
উঠে দাঁড়িয়ে এক হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে অভি, অন্য হাতের তর্জনী দিয়ে চিবুক ছুঁয়ে সুন্দর মুখখানি ওপরে তোলে। অভির বুকের ওপরে হাত রেখে জামা ধরে নেয়, প্রেমঘন গভীর কালো চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।
অভি, “তুমি এত সুন্দর কেন, পরী?”
পরী, “সৌন্দর্য সবসময়ে যে দেখে তাঁর চোখে লুকিয়ে থাকে। সুন্দরী আমি নয়, তোমার দৃষ্টি, তোমার চাহনি আমাকে সুন্দরী করে তুলেছে, অভি।”
সারা রাস্তা পরী ওর একদম পাসেপাসে ছিল, একবারের জন্য ও যেন ওকে আলাদা করতে মন করছিল না অভির। নন্দনে তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেল। আকাশে কালো মেঘের খেলা শুরু হয়ে গেছে, বৃষ্টি যেকোনো সময়ে নামতে পারে।
পরী ওকে জিজ্ঞেস করে, “সিনেমাটা কি ধরনের?”
অভি উত্তর দেয়, “সত্য ঘটনা অবলম্বে এই সিনেমা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এক জার্মান ইহুদী প্রায় এক হাজার ইহুদীদের হিটলারের অত্যাচার থেকে বাঁচায়।”
অস্ফুট চেঁচিয়ে ওঠে পরী, “তুমি আমাকে হরর সিনেমা দেখাতে এনেছ? কেউ কি তার গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে এইরকম সিনেমা দেখতে যায়?”
অভি হেসে ওঠে, “না বেবি, হরর সিনেমা নয়, এট।”
পরী, “তুমি আস্ত পাগল, এটা হরর নয়ত কি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধরে কাহিনী তারপরে আবার সত্য ঘটনা অবলম্বনে, তাঁর মানেই ত ভয়ের গল্প, দুখের গল্প।”
অভি অনেক নাম শুনেছে ওই সিনেমাটার তাই ওকে দেখতে হবেই, কোনোরকমে পরীকে রাজি করায় সিনেমা হলে ঢুকতে। শেষ পর্যন্ত ওর কাতর মিনতির সামনে পরী হার মানে। নন্দনে খুব মানুষ সেইদিন ওই সিনেমা দেখতে এসেছিল, একে বর্ষাকাল তার ওপরে একটু অন্যধরনের সিনেমা বলে হলে লোকসংখ্যা কম। পরী ওর ডানদিকে বসে কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে সিনেমা দেখতে থাকে।
সিনেমায় এক দৃশ্য ছিল যে, রাল্ফ ফিয়েন্স এক সকালে কাঁধে বন্দুক নিয়ে নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে বারন্দায় দাঁড়ায়। তারপরে সেই বন্দুকের নল তাক করে সামনের জেলের খোলা জায়গার দিকে, যেখানে অনেক ইহুদী মজুর কাজ করছিল। একটা ছোটো ছেলে কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে একটা ছোটো ঘরের সিঁড়িতে বসে একটু বিশ্রাম করছিল। রালফ ফিয়েন্স তাঁর দিকে বন্দুক তাগ করে সেই ছোটো ছেলেটার মাথার মধ্যে গুলি চালিয়ে দেয়, প্রানহীন রক্তাক্ত দেহ লুটিয়ে পরে মাটির ওপরে। সেই দৃশ্য দেখে পরী ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। অভির বুকের জামা খামচে ধরে বুকের ওপরে মুখ লুকিয়ে ফেলে।
পরী, “না না না, আমি এইরকম বীভৎস সিনেমা দেখতে পারব না। আমাকে এখানে থেকে নিয়ে চল, আমি আর এই সিনেমা দেখব না, প্লিস নিয়ে চলো আমাকে।”
অভি মিনতি করে, “বেবি, এটা শুধু একটা মুভি।”
পরী মুখ না উঠিয়েই বলে, “সত্য ঘটনার অবলম্বনে তৈরি, আমি আর দেখতে পারবোনা।”
অভি, “প্লিস বেবি।”
পরী বিরক্তি ভরা চাহনি নিয়ে ওর দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে বলে, “তুমি কেমন ধারা মানুষ? প্রেমিকরা তাদের প্রেমিকাদের নিয়ে কোথায় রোম্যান্টিক সিনেমা দেখতে যায় আর তুমি কিনা তোমার প্রেমিকা কে নিয়ে এই রকম উধভট একটা বেদনাদায়ক সিনেমা দেখাতে এনেছ।”
অভি, “ওকে বাবা, কি চাও তুমি? দেখতে চাও না চলে যেতে চাও?”
পরী, “না আমি আর এই সিনেমা দেখতে চাই না। আমাকে প্লিস এখান থেকে নিয়ে চলো।”
সিনেমার মাঝখানেই ওরা হল ছেড়ে বেড়িয়ে এল, অভির মন খারাপ হল বটে কিন্তু পরীকে দুঃখ দিয়ে সিনেমা দেখতে মন চাইল না। আকাশের দিকে তাকিয়ে পরী লক্ষ্য করল যে ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে।
অভির দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে বলে, “অভি, বৃষ্টি নামলো বলে, কি করব? আমার শাড়ি ভিজে যাবে যে?”
অভি, “বারি ফিরে যাই চলো।”
বারির ফিরে যাবার কথা শুনে পরীর মন খারাপ হয়ে গেল। পরী ওকে বলল, “একদিনের জন্যও ঠিক করে বের হতে পারিনা। চলো না সেই আইস্ক্রিম পার্লারে যেখানে অরুনাকে নিয়ে গেছিলে।”
অভি আর পরী, ট্যাক্সি চেপে আউট্ট্রাম ঘাটের স্কুপ আইসক্রিম পার্লারে চলে আসে। পরীকে নিয়ে সেই একই জায়গায় বসে অভি, যেখানে অরুনাকে নিয়ে বসেছিল। পরী বড় কাঁচের জানালার বাইরে তাকিয়ে গঙ্গার দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে, আকাশ কালো, জল কালো, মাঝে দিগন্তের দিকে একটু খোলা আকাশ, নয়নাভিরাম দৃশ্য।
পরী হেসে ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “এই রকম রোম্যান্টিক জায়গা থাকতে তুমি কিনা আমাকে নিয়ে সিন্ডলারস লিস্ট দেখতে গেছ, কি মানুষ তুমি, অভি?”
পরীর কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে বসে থাকে অভি, পরী আইস্ক্রিম খেতে খেতে মাঝে মাঝে ওর মাথার গাল ঘষে দেয়। বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে দিয়েছে। পরী ওকে বলে যে এবারে বারি ফেরা উচিত। তাড়াতাড়ি আইস্ক্রিম শেষ করে ট্যাক্সি চেপে বাড়ি পৌঁছায় ওরা। বাড়িতে কেউ ফিরে আসার আগেই বাড়ি ঢুকে পরে। সারাটা রাস্তা দু’জনে বেড়াল ছানার মতন মারামারি করেতে থাকে, পরী ওকে খেপিয়ে তোলে যে প্রেমিকা কে নিয়ে কেউ কি ওই রকম উধভট সিনেমা দেখতে যায়, আর অভি রেগে যায় কেননা ওই সিনেমাটা ওর খুব প্রিয়।
দরজা খুলে পরী সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠে, পেছনে অভি। হাল্কা গোলাপি রঙের সিফন শাড়িটা যেন আস্টেপিষ্টে কমনীয় দেহের সাথে লেপে গেছে। ফুলে ওঠা নিতম্বের দোলা দেখে অভির মন নেচে ওঠে, শাড়ির আঁচল একদিক থেকে সিঁড়িতে পরে পরীর পেছন পেছন ধাওয়া করছে যেন। অভি শাড়ির আঁচল টেনে ধরে আর আঁচল ওর বুক থেকে খসে যায়। আচমকা অভির এই ব্যাবহারে পরী চমকে ওঠে, শাড়ির অপর প্রান্ত ধরে মিনতির সুরে অভিকে বলে, “সোনা, প্লিস ছেড়ে দাও।”
অভি ওর কথায় কান না দিয়ে শাড়ির আঁচল টেনে ধরে সিঁড়ির দেয়ালের ওপরে চেপে ধরে পরীর কমনীয় দেহ। বুক থেকে আঁচল খসে গেছে, কাঁচুলি অনাবৃত উন্নত বক্ষ যুগল যেন কাচুলির ভেতর থেকে ঠেলে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অভি নিজেকে আর সামলাতে পারে না। অভি নিজের শরীর ওর দেহের ওপরে চেপে ধরে। লজ্জা পেয়ে যায় পরী, হাত উঠে আসে বুকের ওপরে, ঢেকে নিতে চায় নিজের লজ্জা। শ্বাসের ফলে উন্নত বক্ষ ওঠা নামা করে আর মনে হয় যেন এই ফেটে পড়বে।
অভি দু’হাত নিয়ে যায় অনাবৃত কোমরে, মৃদু চাপ দিতে শুরু করে পেটের দুপাশের নরম তুলতুলে নারী মাংস। প্রেমিকের হাতের ছোঁয়ায় পরীর শ্বাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভির কামনা ভরা চোখের সামনে পরীর মুখ। দু হাতে অভির জামার কলার মুঠি করে ধরে আর ওর প্রেমঘন চোখের দিকে তাকায়। লাল ঠোঁট জোড়া অল্প খোলা, অভির সারা মুখের ওপরে তপ্ত কামনার শ্বাস বয়ে যায়। অভির সিংহ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
প্রকাশ্য দিবালোক সিঁড়ির জানালা দিয়ে ওদের ওপরে পরে, পরী লজ্জায় লাল হয়ে ওকে বলে, “প্লিস সোনা এখানে নয়।”
অভির ভেতরে যেন এক ক্ষিপ্ত হায়না জেগে ওঠে, চেপে ধরে নিজের তলপেট পরীর তলপেটের ওপরে। কঠিন শলাকার পরশ বুঝতে দেরি হয় না পরীর। ঠিক তলপেটের ওপরে কঠিন অভি, মৃদু শীৎকার করে ওঠে পরী, “আহহহ… প্লিস সোনা এখানেই আমাকে পাগল করে তুলো না… প্লিস হানি…”
ঠোঁট চেপে ধরে ওই রসালো ঠোঁটে জোড়ার ওপরে, থামিয়ে দেয় পরীর শীৎকার, মুখের ভেতরে টেনে নেয় পরীর শ্বাস আর লালার মধু। পরী দুহাতে ওর মাথা আঁকড়ে ধরে। কম্পিত উন্নত বক্ষ যুগল, অভির প্রসস্থ বুকের ওপরে লেপে যায় মাখনের মতন, পরী যেন গলে গিয়ে প্রলেপ লাগিয়ে দেয় নিজেকে। তীব্র কামনার আগুনে পরী অভির নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে দাঁতের মাঝে আর আলতো আলতো চাপ দিতে শুরু করে। কামরের সেই স্পর্শ অভিকে উন্মাদ করে তোলে, হাত নামিয়ে নিয়ে আসে পরীর কোমল সুগোল নিতম্বের ওপরে আর চেপে ধরে দুই নারী মন্ড কঠিন থাবার মাঝে।
নখ বসিয়ে দেয় শাড়ির ওপরে দিয়ে আর পিষে ধরে কোমল নারী মাংস। দুহাতে চেপে ধরে পরীকে মাটি থেকে উঠিয়ে নেয়, পরী নিজের ভার অভির ওপরে ছেড়ে দেয় আর দুহাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে। কোলে তুলে বসার ঘরে ঢুকে ডিভানের ওপরে ছুঁড়ে দেয় পরীর কমনীয় শরীর। ডিভানে শুয়েই পরী ওর আঁচল গুটিয়ে নিয়ে বুকের কাছে জড় করে ধরে মিনতি করে অভির কাছে, “প্লিস এখুনি শুরু করো না সোনা, বাবু যেকোন মুহূর্তে বাড়ি ফিরে আসবে।”
এক টানে জামার বোতাম খুলে ফেলে অভি, জামা ছুঁড়ে ফেলে মাটিতে। প্রেমিক অভি লালসার লেলিহান শিখায় জ্বলে এক বুভুক্ষু হায়নার ন্যায় হয়ে উঠেছে। হিংস্র চোখে ক্ষুধার্ত দানবের মতন তাকিয়ে থাকে পরীর দিকে। বিছানার ওপরে চড়ে পরীর দিকে এগিয়ে যায় আর পরী ওর চোখের ভাষা দেখে ভয়ে দেয়ালের দিকে পিছিয়ে যায়। এ কোন অভিমন্যু, এত ওর প্রানের অভি নয়, কেঁপে ওঠে পরীর বুক।
ওর পা ধরে টান মারে অভি, এক লাথি মারে অভির বুকের ওপরে। অভির হাত পৌঁছে যায় শাড়ির গিঁটের ওপরে, নাভির চারদিকের নরম মাংসে নখ বসিয়ে খামচে ধরে। পরী বারংবার অভিকে শান্ত হতে কাতর মিনতি জানায় কিন্তু ক্ষুধার্ত অভি উন্মাদ হয়ে উঠেছে। পেটের ফর্সা ত্বকের ওপরে নখের আঁচরে লাল হয়ে ওঠে।
পরী চিৎকার করে ওঠে ক্ষিপ্ত নাগিনীর মতন, “আমাকে ছেড়ে দাও অভি। আমার লাগছে।”
কি হয়েছিল সেদিন অভির, কিছুই জানে না, কোন কারন নেই তাও পরীর ওপরে যেন ওকে খুবলে খাবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। পরীর চিৎকারে অভির সম্বিৎ ফেরে, ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে, পরীর গাল বেয়ে প্রচন্ড বেদনার অশ্রু গরাচ্ছে। ডুকরে কেঁদে ওঠে পরী, কম্পিত ঠোঁটে ধিক্কার জানায়, “ছেড়ে দাও আমাকে, তুমি আমার অভি নও।”
অভি তাও ছাড়েনা পরীকে, ওর কাতর মিনতি অভির কানে পৌঁছায় না। বুকের কাঁচুলি হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে একটান মারে আর পরপর করে ছিঁড়ে ফেলে হালকা গোলাপি রঙের বক্ষ আভরন। ভেতরের অন্তর্বাস সরে যায় বুকের অপর থেকে। বাম হাতে চেপে ধরে পরীর কোমল অনাবৃত বক্ষ।
বুকের আভরন ছিঁড়ে যেতেই, মর্মাহত পরী প্রাণপণে চিৎকার করে ওঠে, “দূর হয়ে যাও তুমি, তুমি কিছুতেই আমার অভিমন্যু হতে পার না, তুমি একটা জানোয়ার।”
এক হাতে বুকের কাপরে বুকের ওপরে কোন রকমে গুটিয়ে, ডান হাতে সজোরে এক থাপ্পর লাগিয়ে দেয় অভির গালে। চোখের চশমা খুলে মেঝেতে পরে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। অভি ওর বুক ছেড়ে দেয়। পরী আবার এক থাপ্পর কষিয়ে দেয় অভির গালে। আবার চিৎকার করে ওঠে ওর দিকে, “তুমি একটা জানোয়ার, তুমি পশু হয়ে গেছ অভি। আমি যে অভিমন্যু কে চিনতাম সেই অভি তুমি নও, আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও, অভি। দূর হয়ে যাও, আমি তোমাকে ঘৃণা করি।”
থাপ্পর খেয়ে অভির গাল লাল হয়ে যায়, ওর পশু সুলভ ঘোর কেটে যায়। চোখ বন্ধ করে পায়ের কাছে মাথা নিচু করে পরে যায়। কোনোরকমে গায়ের কাপড় বুকের কাছে গুটিয়ে নিয় কেঁদে ফেলে পরী। অভি আর ভাবতে পারেনা, কি হয়েছিল ওর, কেন ওর মধ্যে হটাত করে এক বুভুক্ষু হায়না জন্ম নিয়েছিল? উত্তর নেই অভির কাছে।
দেয়ালে মাথা ঠুকে কাঁদে পরী, “কেন কেন, তুমি আমার সাথে এই রকম ব্যাবহার করলে? কেন?”
পরিতাপের জল অভির চোখে দিয়ে গড়িয়ে পরে। পরীর পায়ের ওপরে মাথা রেখে কেঁদে ফেলে অভি, ফর্সা পা ভিজে যায় অভির চোখের জলে। অনেকক্ষণ ধরে দুজনে কাঁদে, পরীর কাছে ভর্তসনা জানাবার ভাষা নেই আর অভির কাছে ক্ষমা চাইবার ভাষা নেই।
বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। অনেক পরে পরী কোন রকম নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে, নিজের ঘরে ঢুকে যায় আর দরজা বন্ধ করে দেয়। পরিতপ্ত অভি দেয়ালে মাথা ঠোকে বারবার। বারংবার নিজেকে প্রশ্ন করে, “কেন অভিমন্যু কেন, তুমি তোমার প্রেমিকার সাথে এই জানয়ারের মতন ব্যাবহার করলে।”
উত্তর নেই অভির কাছে।
ভাগ্যবশত অভির কাছে আরও একটা চশমা ছিল। বাবা মা ফিরে আসার পরে, সারা বিকেল ওরা একে ওপরে দিকে তাকাতে পারেনি। দুজনেই অবিশ্বাস্যভাবে চুপ করে যায়। কান্নার জন্য পরীর চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। মা পরীকে কারন জিজ্ঞেস করাতে, পরী জানায় যে বিকেলে একটু বেশি ঘুমিয়ে পড়েছিল তাই চোখ মুখ লাল।
কোনরকম রাতের খাবার খেয়ে শুতে চলে যায় অভি। সারা রাত ঘুমাতে পারেনা অভি, ওর কানে পরীর কান্না বার বার ধাক্কা দেয়, “তুমি একটা জানোয়ার, তুমি পশু হয়ে গেছ অভি। আমি যে অভিমন্যু কে চিনতাম সেই অভিমন্যু তুমি নও।”
সকালে অভির দেরি করেই ঘুম ভাঙ্গে। নিচে নেমে দেখে যে বাবা মা কাজে বেড়িয়ে গেছেন, ঘরের মধ্যে কোথাও কোন আওয়াজ নেই, সারা বাড়ি যেন অস্বাভাবিক ভাবে নিস্তব্ধতার আঁচলে মোড়া। চুপ করে বসার ঘরে গিয়ে বসে, দেয়াল গুলো যেন ওর দিকে রেগে মেগে তাকিয়ে আছে, মাথার ওপরের ছাদ যেন ওর ওপরে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। দরজা জানালা যেন ওকে বারংবার ধিক্কার জানাচ্ছে যে ও একটা নোংরা বীভৎস বুভুক্ষু জানোয়ার। টি.ভি চালায় অভি, কিন্তু সেই টি.ভির আওয়াজ ওর কান পর্যন্ত পৌঁছায় না।
কিছু পরে পর্দার আড়ালে পরীর পায়ের আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে। বসার ঘরের পর্দা সরিয়ে পরী চায়ের কাপ নিয়ে ঘরে ঢুকে ওর দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। লজ্জায় আর পরিতাপে অভি মাথা তুলে তাকাতে পারেনা। মুখ নিচু করে পাথরের মতন সোফায় বসে থাকে চুপ করে। কিছু পরে মাথা উঠিয়ে পরীর দিকে তাকায়। পরী ওর দিকে জল ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে। সামনে এসে টেবিলের ওপরে সায়ের কাপ রেখে ওকে জিজ্ঞেস করে, “কাল কি হয়েছিল তোমার?”
ওর গলার আওয়াজ শুনে আর থাকতে পারেনা অভি। পরীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে পেটের ওপরে মুখ লুকিয়ে নেয়। কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে, “আমি জানিনা পরী, আমি সত্যি জানি না আমার কি হয়েছিল।”
পরী ওর মাথা নিজের দিকে তুলে ধরে আবার জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছিল তোমার?”
চিকচিক করছে পরীর চোখ, ঠোঁটে লেগে মৃদু হাসি। অভির হৃদয় যেন কেউ মুঠির মধ্যে করে নিয়ে মুচরে দেয় আর বিবেক ওকে ধিক্কার জানায়। আবার জিজ্ঞেস করে পরী, “আমার অভি ত ওইরকম ছিল না। তুমি কেন আমার সাথে হায়নার মতন ব্যাবহার করলে সত্যি বলোতো?”
কেঁদে ফেলে অভি, “আমি সত্যি বলছি পরী, আমি জানিনা কেন আমি কাল তোমার সাথে ওইরকম ব্যাবহার করেছিলাম। এই শেষবারের মতন আমাকে ক্ষমা করে দাও পরী।”
পরী সোফায় বসে অভির মুখ দুহাতে আঁজলা করে ধরে ওর চোখের দিকে তাকায়। আঙুল দিয়ে গালের জলের দাগ মুছিয়ে বলে, “তুমি একটা ভীষণ শয়তান ছেলে।” নাকে নাক ঘষে বলে, “তুমি একটা জানোয়ার, একটা পশু তুমি।”
চোখের থেকে চশমা খুলে টেবিলের ওপরে রেখে দেয়। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে অভির ঠোঁটের কাছে এনে ধরে, ওকে চা খেতে বলে। অভি ওর কোমর প্রাণপণে জড়িয়ে ধরে ওকে মিনতি করে বলে, “আমার এই ব্যাবহারের জন্য তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবেনা ত?”
হেসে ফেলে পরী, “কি করে যাই বলো, তোমাকে ছেড়ে? তুমি শয়তান, তুমি পশু হতে পারো, কিন্তু তুমি যে গাধা একটা। আমাকে ছাড়া তুমি জীবনে এক পা ও চলতে পারবে না। আমি কি করে আমার সেই ছোট্ট রাজকুমার কে ছেড়ে চলে যাই বলো ত? আমি ত তাকে ছেড়ে যেতে পারিনা। ওই কথা কখন মুখে আনবে না, যে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো। এবারে চা খেয়ে নাও।”
অভির ঠোঁটের কাছে চায়ের কাপ ধরে চা খাইয়ে দেয়। চা খাওয়ানোর পরে বাইরে তাকিয়ে দেখে যে ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে অভিকে বলে, “বাইরে দেখ, মেঘের দেবতারা আকাশ থেকে আমাদের আশীর্বাদ করছেন। চলো না ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে মজা করি।”
পরী অভির হাত ধরে ধরে টানতে টানতে ছাদে নিয়ে গেল। ওর মুখের হাসি ফিরে এসেছে দেখে অভির মরা গাঙ্গে জোয়ার এল যেন। ছাদে উঠেই ওর হাত ছেড়ে দৌড়ে গিয়ে ছাদের মাঝে দাঁড়িয়ে পরে, বৃষ্টির মাঝে। চোখ বন্ধ করে মাথা উঁচু করে, হাত দুটি দুপাশে ছড়িয়ে যেন বৃষ্টিকে আহবান জানায় ওকে ভিজিয়ে দেওয়ার জন্য। অভি হাসে আর পরী দিকে তাকিয়ে থাকে।
পরনের কাপড় ভিজে গিয়ে কোমরের নিচ থেকে পুরো অঙ্গে লেপটে গেছে। পরী যেন শিশিরে ভেজা জুঁই। লম্বা ঘন কালো চুল বেয়ে টপ টপ করে জল বেয়ে চিবুকের নিচে গিয়ে অল্প জমে ওঠে তারপরে টপ টপ করে নিচে পড়তে থাকে। সামনে দাঁড়িয়ে যেন স্বর্গের অপ্সরা মেনকা, এই যেন সাগর জলে স্নান সেরে ওর চোখের সামনে উঠে এসেছে।
চোখে মুখের জল মুছে অভির দিকে তাকিয়ে জোরে ডাক দেয়, “কি হল, ওখানে দাঁড়িয়ে কেন? এখানে এস।”
মৃদু হেসে অভি উত্তর দেয়, “ভুলে গেছ? কয়েক দিন আগেই কিন্তু তুমি জ্বর থেকে উঠছ।”
খিলখিল করে হেসে ফেলে পরী, “না না ভুলিনি, আবার পড়লে তুমি আছো ত আমাকে দেখার জন্য।”
মাথা নাড়ায় অভি, “তুমি শুধরবে না তাই না।”
অভি বৃষ্টির মধ্যে, ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। পরী ওর চোখে দেখে বুঝতে পারে যে অভি কি করতে চলেছে, দু পা পেছনে সরে যায়। অভি আবার দু’পা ওর দিকে এগিয়ে যায় আর পরী আবার দু’পা পিছিয়ে যায়, এ যেন এক বিড়াল আর ইঁদুরের খেলা। অভির চোখে দুষ্টুমির হাসি, একবার হাতে পেলে হয় পরী।
পরী ওর চোখের হাসি দেখে এক দৌড়ে অভির ঘরে ঢুকে পড়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। অভি মাথা দোলায়, “দুষ্টু মেয়ে, কত লুকোচুরি খেলবে আমার সাথে।”
বন্ধ দরজার অন্য পাশ থেকে পরী জোরে বলে ওঠে, “এস না, দেখি কেমন ধরতে পারো।”
দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে পড়ে অভি, পরী বিছানার পাসে দাঁড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে থাকে। চোখে মুখে সেই পুরানো হাসি।
অভি ওর হাসি দেখে জিজ্ঞেস করে, “শয়তান মেয়ে, আমার ভেতরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে তারপরে আবার দুরে ঠেলে দেওয়া হয় কেন?”
পরী ওকে উলটো প্রশ্ন করে, “সবসময়ে কি তোমার শয়তানি করার ইচ্ছে জাগে? কখন কি আমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে না, একবার অন্তত্ত আদর করে জড়িয়ে ধরে আকাশের দিকে চেয়ে থাকতে। তুমি জড়িয়ে ধরলে মনে যেন এক অনাবিল শান্তির ছায়া নেমে আসে, আমি নিরুদ্বেগে তোমার কোলে মাথা রেখে যেন ঘুমিয়ে পড়তে পারি।”
পরীর কথা শুনে অভির মন ভারী হয়ে যায়, পরিতাপ ঢেকে দেয় ওর হৃদয়কে। অভি ওর দিকে দু’পা এগিয়ে যায়, পরী বলে ওঠে, “আমি কিন্তু একদম ভিজে গেছি, একদম কাছে আসবে না।”
অভি হাত ভাঁজ করে মাথার ওপরে বাড়ি মারে, পরীর দিকে এগতে আর সাহস করেনা। ভারাক্রান্ত মনে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে তুমি আমাকে ক্ষমা করনি, তাই ত?”
বিছানার ওপরে ভিজে তোয়ালে ছুঁড়ে ফেলে অভির সামনে এগিয়ে আসে। অভির কলার ধরে উঁচু হয়ে নাকে নাক ঠেকায়। অভির নিস্পলক কাতর চোখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “তুমি ত ক্ষমার যোগ্য নও। তবে একটা শর্তে ক্ষমা করতে রাজি আছি, যদি তুমি আমার ছবি আঁকো।”

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।