ত্রিধারে তরঙ্গলীলা | পর্ব – ৮৯

ছুটির দিনে একটি অঘটন ঘটিয়েছে অর্পণ স্যার। সাপ্তাহিক ছুটিতে মজার মজার রেসিপি তৈরি করে নিধি। আজও করছিল। অতীতে মেয়েটা মোটেই রান্নাবান্নায় পটু ছিল না। বিয়ের পর শাশুড়ি আর স্বামীর কাছেই শিখেছে। আর এখন তো তাদের থেকেও বেশি দক্ষ হয়ে গেছে সে। তার হাতের রান্না ছাড়া পেটে খিদে মেটে না অর্পণ স্যারের। আর না ভরে মন। বরের এই পছন্দ, ভালো লাগাকে গুরুত্ব দিয়ে ছুটির দিনের আয়োজন গুলো বেশ অন্যরকম ভাবে করে সে। আজও তার ব্যতীক্রম হয়নি। শাশুড়ি মা গিয়েছেন গ্রামের বাড়ি। আজ বাসায় মোটে তিনজন। তারা স্বামী-স্ত্রী আর সন্তান অনিরূপ। নিধি একা একাই সব রান্না করছিল। অর্পণ স্যার এসে টুকটাক হেল্প করে। সব কাজ শেষ প্রায়। শুধু সালাদ তৈরি করা বাকি। তাই নিধি বলে,
‘ স্যার আপনি সালাদ তৈরি করে ফেলুন। আমি ঝটপট অনিকে গোসল করিয়ে খাইয়ে দিই। লেট হয়ে গেলে ছেলেটা না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়বে। ‘
মাথা দুলায় অর্পণ। গুনগুনিয়ে গান করতে করতে এগিয়ে যায় ফ্রিজের দিকে। নিধি প্রায় দৌড়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হয়েও থেমে যায়। অর্পণের পানে তাকায় সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে। ওর থেমে যাওয়ায় পিছু ঘুরে অর্পণ স্যার। নিমেষে ভ্রু নাচিয়ে নিধি শুধায়,
‘ খুব মুডে আছেন মনে হচ্ছে? কাহিনি কী? ‘
রহস্যময় এক হাসি দেয় অর্পণ। নিধির বুক ধক করে উঠে ওই হাসি দেখে। ভ্রু কুঁচকে ফের প্রশ্ন করে,
‘ কী চলছে মনে? ‘
চশমার আড়ালে থাকা অর্পণের চোখ দুটোয় আনন্দেরা ছুটোছুটি করে৷ মুখে অমায়িক হেসে জবাব দেয়,
‘ ঠিক তোমার মনে যা চলছে তাই। ‘
মুখ হা হয়ে যায় নিধির। তার মনে কী চলছে উনি টের পেল কী করে? পরোক্ষণেই আবার মস্তিষ্কে তাড়া এসে হানা দেয়। সে মুখ ভেঙিয়ে সরে পড়ে ত্বরিত। অর্পণ স্যারের হাসি বিস্তৃত হয়। লম্বা একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে বলে,
‘ আমি যে ঠিক কতটা উদ্বিগ্ন হয়ে আছি নিধি! কখন বলবে তুমি? ধৈর্যরা যে আর বাঁধ মানছে না। ‘
ছেলেকে গোসল করিয়ে খাইয়ে ঘুম পাড়াচ্ছিল নিধি। ঘুমিয়ে গেলে অনিরূপকে শুইয়ে দিয়ে বুকে মৃদু থাপ্পড় দিচ্ছিল। হঠাৎ অর্পণ স্যারকে স্তম্ভিত মুখে ঘরে ঢুকতে দেখে। ডানহাতের বুড়ো আঙুলটা চেপে ধরা। নিমেষে চোখের পাতায় ধরা দেয় স্যারের আঙুলের ফাঁক বেয়ে টলটলে রক্তের ধারা! যে দৃশ্যে চমকে যায় সে। হতভম্ব হয়ে উঠে আসে। আতঙ্কিত কণ্ঠে প্রশ্ন করে,
‘ হাত কে টে গেছে! কতটুকু কা টল? উফফ, আপনাকে বলছিলাম চাকু হাতে তিড়িং বিরিং করবেন না। ‘
কথাটা বলেই ছুটে চিকিৎসা বাক্স নিয়ে আসে। অর্পণ চুপচাপ গিয়ে বসে ডিভানে। নিধি খুব মনোযোগ দিয়ে ব্লাড পরিষ্কার করে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়। সঙ্গে বোনাস হিসেবে দেয় বকাঝকা। ছুঁড়ে দেয় অহরহ সন্দিহান বাণী।
‘ কী সমস্যা আপনার? এত্ত আনন্দিত কী নিয়ে? একশবার করে বলছিলাম, সাবধানে, শান্ত হয়ে শষা কাটুন৷ বাহাদুরি দেখিয়ে বাম হাতে কে কাটাকুটি করতে বলেছে? ‘
ভদ্র, সভ্য, শান্ত প্রকৃতির ছেলে অর্পণ। ঠান্ডা মাথার জ্ঞানীগুণি মানুষ। তবু বউ বাচ্চার ব্যাপারে ছেলেমানুষী করে ফেলে ভীষণ। যেমন আজ করছে! নিধির পানে অপলকভাবে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে সে। তার কাছে মনে হয় রাগান্বিতা নিধিকে যতটা সুন্দর দেখায়। এত সুন্দর আর কক্ষনো দেখায় না। ওহ হ্যাঁ গোসল শেষে ভেজা চুলেও হার্ট টাচিং সুন্দরী লাগে।
‘ নির্লজ্জের মতো হাসছেন আবার? মন কোনদিকে ছিল আপনার? হাত কীভাবে কাটলেন। ডান হাত, তাও আবার বৃদ্ধা আঙুল! ভাবতে পারছেন? ‘
‘ আমি কি বাচ্চা ছেলে যে হাত কেটে এসে কান্নাকাটি করে বউয়ের আঁচলে চোখ মুছব? ‘
তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল নিধি। চিকিৎসা বাক্স নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ফোঁস ফোঁস করে বলল,
‘ একটুর জন্য সেলাই দিতে হলো না। আজ আপনার কী হয়েছে হ্যাঁ? কোন রমণী দেখে মাথা আওলাই গেছে শুনি? ‘
বা হাতে বুকের বা’পাশে চেপে ধরল অর্পণ স্যার। শরীর ছেড়ে বসে মুচকি হেসে বলল,
‘ ধুরর কী সব যে বলো না… যাও তো শাওয়ার নিয়ে এসো। খিদে পেয়েছে খুব। ‘
নিধি আর কিছু বলল না। একা একা তো আর ঝগড়া করা যায় না৷ এই লোকটার সাথে তার কখনোই ঝগড়া জমে না। সে ঝগড়া করবে, বকাঝকা করবে আর এই লোক হাসির বস্তা খুলে বসে থাকবে। তাও আবার যে সে হাসি না। মিটিমিটি, মুচকি মুচকি বদমায়েশি হাসি। শাওয়ার নিতে চলে গেল নিধি। ওয়াশরুমে ঢুকার পর আচমকা সে নিজেও হেসে ফেলল। এই পৃথিবীতে পুরুষ মানুষের মতো অসহায় আর কেউ আছে নাকি? দেশের প্রেসিডেন্ট হলেও বউয়ের কাছে নির্লজ্জ, বদমায়েশ হয়েই থাকতে হয়। বউয়ের চোখ রাঙানো, বকাঝকা মুখ বুঝে সহ্য করে হাসিখুশি থাকতে হয়। কারণ বউরা যে হয় হোম মিনিষ্টার। পুরো পৃথিবী জয় করা পুরুষরা ঘর জয় করতে বরাবরই অপারগ। এই অসীম ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা শুধু নারীদেরই দিয়েছেন বোধহয়।
কালো, নীল মিশ্রণে সূতি তাঁতের শাড়ি পরেছে নিধি। খিদে পেয়েছে প্রচণ্ড। তাই কোনো প্রকার প্রসাধনী না মেখেই খাবার খেতে চলে গেল। সঙ্গে এলো অর্পণ। নিধির মনে পড়ল স্যারের হাত কেটেছে। তাও আবার ডান হাতের বৃদ্ধা আঙুল। সে খাবার বাড়তে বাড়তে বলল,
‘ খাবেন কী করে এবার? ‘
অর্পণ গাঢ় চাউনিতে তাকাল একবার। ভেজা চুলে শাড়ি পরিহিত স্নিগ্ধ রমণীর থেকে দৃষ্টি ফেরানো দায়। তাই দৃষ্টি স্থির রেখেই চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,
‘ আল্লাহ পাক একটা ব্যবস্থা করবেনই। ‘
ছোটোছোটো চোখে তাকিয়ে বসল নিধি৷ প্লেটে খাবার বাড়তে বাড়তে বলল,
‘ আমি কাউকে খাইয়ে দিতে পারব না। ‘
‘ আমি কাউকে বলিনি খাইয়ে না দিলে অনাহারে মৃত্যুশয্যায় চলে যাব। ‘
চোখ মুখ শক্ত করে তাকাল নিধি। অর্পণ স্মিত হেসে বলল,
‘ স্বর্গ থেকে মর্ত্যে কেন এলেন দেবি? ‘
মনে মনে হাসি পেলেও মুখ কঠিন করে নিধি বলল,
‘ হয়েছে এত পাম দিতে হবে না। খাইয়ে দিচ্ছি। ‘
অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল অর্পণ। নিধি নিজেও মৃদু হেসে নিজে খাওয়ার পাশাপাশি তাকে খাইয়ে দিল। খাওয়া শেষে অর্পণ যখন উঠতে উদ্যত হলে নিধি বলল,
‘ ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসুন। কথা আছে আপনার সাথে।’
অর্পণ যেন ঠিক এই একটি কথারই অপেক্ষায় ছিল। আর অল্পসময় অপেক্ষা মাত্র। সে চলে এলো ড্রয়িং রুমে। নিধি তার হাতের কাজ সেরে চলে এলো ত্বরিত। সে আসতেই অর্পণ উঠে দাঁড়াল। লজ্জা করছিল নিধির। তবু সুসংবাদটা তো জানাতেই হবে। প্রথমবারের সেই মুহুর্ত গুলো ঠিকঠাক সংরক্ষণ করতে পারেনি। কত জটিলতা, দ্বিধা, দ্বন্দ্ব, মানসিক যন্ত্রণায় গিয়েছে। আজ কোনো দ্বিধা, দ্বন্দ্ব নেই। আর না আছে মানসিক অশান্তি। সে ভালো আছে। সুখী আছে এই মানুষটার সঙ্গে। আজ মন খুলে প্রাণ ভরে স্বীকার করতে পারে সম্মুখের এই ভদ্রলোককে সে ভালোবাসে। ভীষণ… সেই ভালোবাসার ফল সরূপ দ্বিতীয়বার তার গর্ভে এই ভদ্রলোকের সন্তান এসেছে। ফাস্ট বেবির দু বছর যেতে না যেতেই সেকেন্ড বেবি! আর সময় নেয় না নিধি। কয়েক পা এগিয়ে একদম কাছাকাছি চলে আসে। অর্পণ স্যারের বুক ঢিপঢিপ করছে। হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে নিধিরও। উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের লম্বাটে মানুষটার মুখাবয়ব উদ্বিগ্ন ভীষণ। আর পীড়া দেয় না নিধি। তার দু’পায়ের ওপর নিজের দুপা রেখে একদম সমানে সমান হয়ে দাঁড়ায়। পড়ে যাওয়ার শঙ্কায় আলগোছে তার কোমর জড়িয়ে ধরে অর্পণ স্যার। নিধি প্রসন্ন চিত্তে দু-হাত বাড়িয়ে গলা জড়িয়ে ধরে প্রিয় পুরুষটার৷ মিষ্টি স্বরে কানে কানে বলে,
‘ অভিনন্দন অনির আব্বু। আমরা দ্বিতীয়বার বাবা, মা হতে যাচ্ছি। আওয়ার সেকেন্ড বেবি ইজ কামিং…’
‘ বুঝতে পারছিলাম আমি। জাস্ট তোমার মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছিলাম। অন্য কোনো রমণী নয় এই রমণী আর তার গর্ভাশয়ে আসা ছোট্ট অংশটাতেই বিভোর ছিলাম। ‘
আবেগাপ্লুত হয়ে গেল নিধি। অর্পণ স্যার আবেশে কোলে তুলে নিল ওকে। কপালে এঁটে দিল গভীর চুম্বন। এরপর খুশিতে পুরো বাসা জুড়ে ঘুরল বউকে কোলে তুলে। নিধি এতবার করে বলল নামাতে সে শুনছিল না। এমতাবস্থায় ফোন বেজে উঠল নিধির। তবু অর্পণ স্যার ওকে নামাল না। ঘরে গিয়ে ফোন নিয়ে নিধির হাতে দিল। আর সে ওকে সহ গিয়ে বসল ডিভানে। কী আর করার বরের কোলে বসেই শুনতে হলো বন্ধু আইয়াজের বাবা হওয়ার সুখবর!
.
.
সকাল থেকেই আইয়াজের স্নায়বিক অবস্থার বেহাল দশা। বাবা, মা হওয়া কী মুখের কথা? একজনকে শারীরিক, মানসিক উভয় যন্ত্রণা সহ্য করে মা হতে হয়। আরেকজনকে তীব্র মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করে হতে হয় বাবা। সেই ভয়ংকর, গা শিউরে উঠা সময়টুকুর কথা জীবদ্দশায় কখনো ভুলতে পারবে না আইয়াজ। ওটির ভেতর ফারাহর পাশেই ছিল সে। মানসিক ভাবে ফারাহ ভীত হলেও আইয়াজকে বুঝতে দেয়নি৷ এদিকে ডাক্তার হওয়া সত্যেও বউয়ের সিজার হচ্ছে এই দুঃশ্চিন্তায় তার ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়। সাধারণত ডেলিভারির পর বাচ্চা আর মাকে কিছুক্ষণের জন্য একত্র করা হয়৷ ওদের বেলায় হলো উল্টো। একদিকে সিজার হচ্ছে অপরদিকে ফারাহকে ভরসা দিচ্ছে আইয়াজ। কিন্তু নিজে যে দুঃশ্চিন্তা, ভয়ে ঘেমে-নেয়ে একাকার হুঁশ নেই। চোখ, মুখ লাল হয়ে যাচ্ছেতাই অবস্থা। হাত, পাও থরথর করে কাঁপছে৷ শুধু জ্ঞান হারানোই বাদ গিয়েছে ওর। ডাক্তার, নার্স উভয়ই তার অবস্থা দেখে বিস্মিত। তাই বাচ্চা দুটোর নাড় কে টে সঙ্গে সঙ্গেই আগে বাবার কোলে দিয়েছে। সাদা, লাল সংমিশ্রণে ছোট্ট দুটো দেহকে কোলে নিয়েই সে কি কান্না আইয়াজের। সে কান্নার শব্দে বদ্ধ চোখজোড়া খুলে যায় ফারাহর। চিৎ হয়ে শোয়া। নড়চড় করতে পারছে না৷ দেহের অর্ধেকাংশ অবশ। তাই আড়দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে দেখে স্বামী, সন্তানকে। নিমেষে দুচোখ উপচে অশ্রুঝড়ে তারও। ব্যস এইটুকু দৃশ্যই তারপর আবার চোখ বুঝে নেয়। এরপর যখন চোখ খুলে তখন সে কেবিনে। শাশুড়ি আর জা এর কোলে বাচ্চা দুটো। কেমন স্বরে কাঁদছে! ওই স্বর শুনে ওর বুকের ভেতর ধুকপুক করে উঠে। উতলা হয় মন একবার ওদের বুকে জড়িয়ে নেয়ার জন্য। তক্ষুনি
শুনতে পায় শাশুড়ি মায়ের গলা,
‘ দুধ খাওয়াতে হবো। আয়াজ নে তুই ওরে কোলে রাখ আমি দেখি বউয়ের বুকে দুধ নামছে কিনা। ‘
এরপর শাশুড়ি মা এগিয়ে আসে। ফারাহ হাত দুটো নাড়ানোর চেষ্টা করে পারে না৷ এদিকে শাশুড়ি মা কোনোকিছু না বলেই বুকের সামনে জামার চেইন খুলে ফেলে। হতভম্ব ফারাহ লজ্জিত হয়ে বাঁধা দিতে যায়। শাশুড়ি মা তখন নিচু গলায় বলে,
‘ ওমা! বাঁধা দেও কেন? পোলা দুইটা খিদায় ছটফট করতেছে৷ ডাক্তার, নার্স যাই বলুক যতই উন্নত মানের, পুষ্টি সমৃদ্ধ দুধ লিখুক। ওইসব আমি ওদের খেতে দিব না। আয়াজকে আনতেই দেই নাই। মায়ের বুকের দুধ ছাড়া কোনো নকল দুধ আবার নাতিরা খাবে না। ‘
বলতে বলতেই তীব্র লজ্জায় ফেলে দিল ফারাহকে। তার নাজেহাল অবস্থা দেখে ফের শাশুড়ি বলল,
‘ অতো লজ্জা করো কেন? এইখানে আমরা দুই মেয়ে মানুষ আর তোমার স্বামী ছাড়া আর কে আছে? ‘
নাক লাল হয়ে উঠল ফারাহর৷ আবার বাচ্চাদের কথা ভেবে নিজেকে সান্ত্বনাও দিল। বাচ্চা দুটোর খিদে মিটছিলই না। ভালোভাবে দুধ পাচ্ছিল না শুরুতে। তাই কান্নাকাটি করছিল খুব। সন্ধ্যার পর পর ওরা ঠিকঠাক দুগ্ধপান করতে পারল। ফলশ্রুতিতে ঘুমিয়েও পড়ল। কিন্তু ফারাহ খেয়াল করল ওরা বেশিক্ষণ ঘুমাচ্ছে না৷ একবার উঠে খাচ্ছে আবার কিছুক্ষণ ঘুমাচ্ছে। আবার খাচ্ছে আবার ঘুমাচ্ছে। যেন খিদে পেলেই জাগে, গলা ছেড়ে কাঁদে। খাবার পেলে খেয়ে শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যায়। ওদের খাওয়া, ঘুম ছাড়া যেন আর কিচ্ছুটি করার নেই৷ কিচ্ছুটি না৷ সত্যিই তো তাই। কী করবে আর?
রাত দশটা। বাচ্চারা খেয়ে ঘুমাচ্ছে। আইয়াজ ফারাহর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
‘ ঘুমাও একটু। ‘
ফারাহ স্বচ্ছ দৃষ্টি মেলে তাকাল। মাথা থেকে আইয়াজের হাতটা ধরে মুখের কাছে এনে সন্তর্পণে একটি চুমু খেয়ে বলল,
‘ ভয় করছে। ‘
‘ কেন! কী নিয়ে ভয়?’
‘ আমি ঘুমালেই যদি ওরা উঠে যায়? কান্না করে। ‘
ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেলল আইয়াজ। কেমন একটা অদ্ভুত সুখ ওদের চোখে, মুখে আর বুক জুড়ে ছন্দ তুলে বেড়াচ্ছে। ফারাহর এই মিষ্টি দুঃশ্চিন্তায় বিগলিত হলো আইয়াজ। কপালে চুমু দিয়ে বলল,
‘ উঠলে তো কান্না শুনে তুমিও উঠে যাবে। এ আবার চিন্তার কী? একটু ঘুমাও। ভীষণ টায়ার্ড লাগছে তোমাকে। ‘
‘ দু দু’টো জমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছি। এমন লাগবে না বলছ? ‘
হাসল আইয়াজ। বাচ্চাদের দিকে একবার তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ ওদের নাম কি রেখেছি শুনবে? ‘
মৃদু হেসে মাথা নাড়ল ফারাহ। আইয়াজ বলল,
‘ বড়োটার নাম, আইরাজ আহমেদ আনান আর ছোটোটা…’
ফারাহ ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘ ফাইরাজ আহমেদ ফানান। ‘
বিস্ময়াপন্ন হয়ে আইয়াজ বলল,
‘ কী করে জানলে! ‘
‘ ফোনের নোটসে লিখে রেখেছিলে। দেখে ফেলেছি দু’মাস আগেই! ‘
আশ্চর্য হয়ে আইয়াজ বলল,
‘ বুঝতেও দিলে না! ‘
‘ দিলে কি এই মুহুর্তটা পেতাম? ‘
ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্নটি করল ফারাহ। আইয়াজ বিমুগ্ধ হয়ে আচমকা ওর ঠোঁটে চুমু দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করল। আনান, ফানান এর চেয়ে ত্রিশ সেকেন্ডের বড়ো৷ আইয়াজ ভেবেই রেখেছিল যে আগে আসবে তার নাম হবে আনান। পরেরজন ফানান। বাবা মায়ের সঙ্গে মিলিয়ে সুন্দর সুন্দর দুটো নাম বাছাই করে রেখেছিল সে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।