সৌধ ভেবেছিল উদয়িনী আন্টির সাথে দেখা করবে। শেষ পর্যন্ত দেখা করা হলো না৷ আইয়াজের সাথে কথা হয়েছে ভোরবেলা। সে পরামর্শ দিল, উদয়িনী আন্টি নয় শুধু সিমরানের সঙ্গেই একান্তে কথা বলতে। এই বিয়েতে সুহাস রাজি নয়। রাজি নয় উদয়িনী আন্টিও। সুহাসের বিয়ে যেমন সোহান আংকেল নিজের সিদ্ধান্তে দিয়েছে। তেমনটা সিমরানের বেলায়ও করতে চাচ্ছে। সুহাসের সঙ্গে সৌধর সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ফাটল ধরেছে। সুহাসের তরফ থেকেই এই ফাটল। ওর মাঝে ছেলেমানুষী আছে। আইয়াজ, সৌধ দু’জনই অবগত এ ব্যাপারে। সৌধ যদি এখন বাড়ি বয়ে গিয়ে উদয়িনী আন্টিকে জানায় সে এই বিয়েতে রাজি নয়। বিয়েটা যেভাবেই হোক আটকান। তবে সুহাস ভুল বুঝতে পারে৷ সিমরান ওর একমাত্র বোন৷ সে কোনো ফেলনা বস্তু নয়। মা ছেলের অহংবোধ প্রগাঢ়। সেখানে অযথা আঘাত করার প্রয়োজন নেই৷ সিমরানের মাঝে ছেলেমানুষী থাকলেও সুহাসের থেকে ওর বুঝ শক্তি আলাদা। তাছাড়া সৌধকে ছোটোবেলা থেকেই খুব মানে মেয়েটা৷ সেটা যে কারণেই হোক না কেন। তাই একমাত্র সিমরানের সাথে কথা বলাই সমীচীন হবে৷ সিমরান, সৌধর সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে পরিবারে। তাদের সিদ্ধান্ত বিপরীতে মোড় নিচ্ছে বলেই এত জটিলতা। যদি সিদ্ধান্ত এক হয় তবে কোনো জটিলতা সৃষ্টি হবে না৷ আর না তাদের এত বছরের পারিবারিক বন্ধুত্ব, সুহাস সৌধর ঘনিষ্ঠতায় দেয়াল ওঠবে৷
আইয়াজের সাথে কথা শেষ করল সৌধ। এরপর কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করে কল করল সিমরানকে। এ সময় সিমরান ঘুমে থাকে৷ জানে সৌধ। তাই একবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়নি বলে বিচলিত হলো না৷ কিয়ৎক্ষণ পর আবার কল করল। রিসিভ হলো ফোনটা। কর্ণকুহরে পৌঁছাল মিহি কণ্ঠের বিস্ময়কর দু’টি শব্দ,
‘ সৌধ ভাই! ‘
বসা থেকে ওঠে দাঁড়াল সৌধ৷ বা’হাতে কানে ধরা থাকা ফোন ডানহাতে নিয়ে কানে ধরল৷ এরপর বা হাতটা সযত্নে ট্রাউজারের পকেটে ঢুকিয়ে ধীর পায়ে হাঁটতে শুরু করল রুম জুড়ে। ফোনের ওপাশে থাকা তরুণী শূন্য মস্তিষ্কে, ছটফটে হৃদয়ে অপেক্ষা করছে। টের পেল সৌধ। তাই অপেক্ষা দীর্ঘ হতে না দিয়ে দৃঢ় স্বরে বলল,
‘ ন’টার দিকে গলির মোড়ে দাঁড়াব আমি৷ কারো সঙ্গে কিছু শেয়ার করবি না৷ জাস্ট তৈরি হয়ে চলে আসবি৷ দু’তিনঘন্টা সময় নিব। ওকে? ‘
কথাগুলোতে অনুরোধ ছিল না স্পষ্ট। তবে কি আদেশ ছিল? উহুম এ মুহুর্তে এসব ভেবে সময় নষ্ট করতে চায় না সিমরান। তাই ত্বরিত হকচকানো মিহি কণ্ঠে বলল,
‘ ওকে, ওকে আমি আসব। ‘
সিমরান বাক্যের সমাপ্তি দিতেই ফোন কেটে দিল সৌধ। ভাবতে লাগল কোথায় মিট করবে? আর পাঁচ জনের মতো সে কাউকে একাকী রেষ্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে বসতে পারে না৷ পরিস্থিতি যা তাতে বাড়িতে নিয়ে আসাও সম্ভব না৷ তাহলে যাবে টা কোথায়? অনেক ভেবেচিন্তে ছোটো কাকার বাংলোতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল৷ ত্বরিত কল করল ছোটো কাকাকে। যদিও তাকে না জানিয়েও যেতে পারত৷ তবু সে তার ব্যক্তিত্বে স্বচ্ছতা ধরে রাখতেই কল করে অনুমতি চাইল। ছোটো কাকা বলল,
‘ তুই তুইই রয়ে গেলি সৌধ। সময় কাটাতে কাকার বাংলোতে যাবি এরজন্য অনুমতির কী প্রয়োজন? সাত্তার কাকার কাছে চাবি আছে। চাইলে ভাবির থেকেও চাবি নিতে পারিস। ‘
সাত্তার কাকাকে চেনে সৌধ। বাংলো দেখাশোনার দায়িত্বে আছে সে৷ ওখানেই রাস্তার ধারে চায়ের দোকান। ছোট্ট চায়ের দোকান আর বাংলো দেখাশোনা। এই করেই বৃদ্ধ বয়সে পেট চালায় লোকটা৷ ফোন রেখে সকালের নাস্তা সেরে নিল সৌধ। মায়ের থেকে চাবি নিল না। সাত্তার কাকাকেই ভরসা করল৷ মায়ের থেকে চাবি নেয়া মানে কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া। সে এবং তার মা কেউই মিথ্যা সহ্য করতে পারে না৷ সত্যি বলাও সম্ভব না। তাই মিথ্যা যেন বলতে না হয় সে ব্যাপারে সচেতন রইল।
.
.
পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে৷ যাদের ব্যক্তিত্ব এতটাই দৃঢ়, শীতলতায় আচ্ছন্ন যে তাদের সামনে খুব হিসেব করে কথা বলতে হয়৷ বেহিসেবে একটু বেচাল হয়ে গেলেই পড়তে হয় তীব্র লজ্জা আর অস্বস্তিতে। সিমরানের জীবনে সৌধ এমনই একজন। যার সামনে দাঁড়াতে হলেও দশবার ভাবতে হয় তাকে৷ পরনের কাপড় ঠিক আছে তো? সাজসজ্জায় বাড়াবাড়ি রকমের কিছু নেই তো? জামার রঙটা সৌধ ভাইয়ের পছন্দ হবে? কথা বলার সময় সৌজন্য ধরে রাখতে পেরেছে? উগ্র হয়ে যায়নি তো কোনো বাক্য? সে কি সৌধ ভাইয়ের কাছে সুশীলা হতে পারবে? এরকম অজস্র দুঃশ্চিন্তা জাপ্টে ধরে সিমরানকে। তার অনুভূতি সেই সব মেয়েরাই বুঝতে পারবে। যারা কিশোরী বয়স থেকে কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে নিজের প্রতি আকর্ষিত করতে স্ট্রাগল করে যাচ্ছে। অথচ কিশোরী বয়স পেরিয়ে যুবতীর কোঠায় পৌঁছে গিয়েও মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হচ্ছে না।
একরাশ দুঃশ্চিন্তায় বুঁদ হয়ে দুরুদুরু বুকে গলির মোড়ে এলো সিমরান। মুহুর্তেই ডানপাশের রাস্তা থেকে সৌধর গাড়ি এসে থামল তার সামনে। গাড়ির দরজা খুলে দিতেই কোনোদিক না তাকিয়ে ঝটপট ওঠে পড়ল সে। এরপর দরজা লক করে পাশে তাকাতেই দেখতে পেল নেভি ব্লু রঙের টি-শার্ট পরনে সৌধ। অত্যন্ত গম্ভীর মুখে স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে বসে আছে। দৃষ্টি সামনে অবিচল ছিল। সে তাকিয়েছে টের পেতেই তার দিকে ফিরে তাকাল। নিরাসক্ত, সচ্ছ সুন্দর দৃষ্টি। সিমরান তাকিয়েই রইল। সৌধ বুঝতে পারল না মনে মনে হাসছে সে। কারণ কাকতালীয় ভাবে তাদের দু’জনের পোশাকের রঙ মিলে গেছে। প্রায় ঘন্টা লাগিয়ে ড্রেস বাছাই করার কষ্ট দূর হলো সিমরানের। এই ড্রেসটা নামী কিনে দিয়েছিল তাকে৷ এখন পর্যন্ত পরা হয়নি। আজই প্রথম। নেভি ব্লু কালার কটন কাপড়ের গাউন৷ জমিনে সোনালি সুতোর কাজ বিধায় তার সাথে মিলিয়ে সোনালি রঙের ওড়না নিয়েছে। গোপনে একটি শান্তির নিঃশ্বাস বেরুলেও মনটা শান্তি পেল না। কারণ তার অবচেতন মন ঠিক টের পেয়েছে সৌধ ভাই কেন আলাদা করে তাকে ডাকল। প্রত্যাখ্যান নিশ্চিত জেনেও এসেছে সে৷ নামী সব সময় বলে, সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা সবচেয়ে উত্তম। সেই কথাটায় তীব্র বিশ্বাস রেখেই আসা। তার ভবিতব্যে যদি সৌধ না থাকে। কীভাবে সামলাবে নিজেকে জানে না৷ এতদিন যেভাবে কেটেছে এভাবে কাটলে কতদিন বাঁচবে তাও জানে না।
ভাবনার অতল গহ্বরে সিমরান। সৌধ গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে। বেশি দূরের পথ নয়। সতেরো মিনিটেই পৌঁছাল। জায়গাটা চেনা সিমরানের। বন্ধু, বান্ধব নিয়ে ঘুরতে এসেছে বহুবার। কিছু দূরেই রেললাইন। ওখানে করা কতশত ছবি, ভিডিয়ো আছে তার। চেনা জায়গাতেও অচেনা জায়গার দেখা পেল সে। এদিকটা কেমন সুনসান। ভূতুড়ে ভূতুড়েও। ঢোক গিলল সে। সৌধ গাড়ি থামিয়েছে। এখানে পার্কিং করার মতো ব্যবস্থা নেই৷ তাদের পেছনে দু’টো বাইক আসছিল। সৌধ ফোন করল প্রথম বাইকে থাকা একজনকে। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই বলল,
‘ রাসেল আশপাশেই থাকিস। গাড়ি এখানে রেখে গেলাম। ‘
‘ ওকে ভাই। ‘
ফোন কেটে সিমরানকে নামতে ইশারা করল সৌধ। মুখে মাস্ক পড়ে নিজেও নেমে পড়ল। দু’মিনিটের মতো হাঁটতে হলো ওদের৷ উত্তর, দক্ষিণ, পশ্চিম তিন মোড়ের রাস্তা৷ পশ্চিমের রাস্তা শুরু হতেই একটি ছোট্ট চা স্টল। চা স্টলে বসা বৃদ্ধ লোকটির সামনে গিয়ে সৌধ সালাম দিল। বলল,
‘ ভালো আছেন সাত্তার চাচা? ‘
সাত্তার চাচা সেই বৃদ্ধ যার দাদু শব্দটির সঙ্গে পরিচয় নেই। সবাই তাকে এক নামে চেনে৷ সে নামটি হলো সাত্তার চাচা। কচি থেকে তাগড়া যুবক সবাই তাকে সাত্তার চাচা বলে। এই যেমন সৌধর ছোটো কাকা সুলল চৌধুরী তাকে সাত্তার চাচা ডাকে। সৌধও সাত্তার চাচা ডাকে৷ কুশলাদি বিনিময় করে বাংলোর চাবি নিল সৌধ। এরপর তাকে অনুসরণ করে পিছু পিছু বাংলোর সামনে চলে এলো সিমরান। প্রথম দর্শনে সিমরান হকচকিয়ে গেল। তার শহরে এত সুন্দর একটি বাংলো আছে শুনেনি তো কখনো। আশ্চর্যান্বিত মুখে চারপাশে তাকিয়ে রইল সে। বাংলো সইসই চিকন পাকা রাস্তাটা ধরে হাঁটছিল ওরা। সৌধ নির্লিপ্ত। সিমরান বিহ্বল দৃষ্টিতে চারপাশ তাকিয়ে দেখছে আর এগুচ্ছে। দু’পাশে হরেকরকমের ফুল গাছ। রঙবেরঙের সে ফুল গুলো থেকে সুঘ্রাণ ভেসে আসছে। একপাশে ছোট্ট একটি পুকুর। খেয়াল করল সেখানে লাল, সাদা শাপলা ফুটেছে। বুকের ভেতরটা ভালো লাগায় শিরশির করে ওঠল ওর। সৌধ অনেকটা এগিয়ে গেছে। বাংলোর বারান্দা পেরিয়ে প্রধান দরজার তালা খুলল। ভেতর থেকে দু’টো বেতের চেয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো তক্ষুনি। সিমরানের মুগ্ধতায় ভরা মুখে তাকিয়ে বলল,
‘ পুকুর পাড়ে আয়। এদিকটা ঠান্ডা। ‘
হুঁশ ফিরল সিমরানের। ত্বরিত তাকাল সৌধর দিকে। দু-হাতে দু’টো চেয়ার নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বলিষ্ঠ দেহের সুদর্শন পুরুষটি। এই তো আর কিছু সময়। মানুষটা প্রত্যাখ্যান করবে তাকে। বুকের ভেতর এই মুহুর্তে যে পুলকিত অনুভূতি আছে সবটা শুষে নেবে একটি বাক্যে,
‘ আমার পক্ষে তোকে বিয়ে করা সম্ভব না সিনু। ‘
বিদ্যুতের ঝটকা লাগার মতো কেঁপে ওঠল সিমরান। লম্বা করে নিঃশ্বাস টেনে তা ছেড়ে দিল আবার। পা বাড়াল ডান পাশে। সৌধর পাশে গিয়ে বসতেই সৌধ বলল,
‘ প্রথম এনিভার্সারিতে ছোটো কাকিকে এই বাংলোটা গিফট করেছিল কাকা। প্র্যাগ্নেসির তিনমাস চলছিল। দাদুনি বাড়ির বাইরে তাও আবার এমন একটা জায়গায় নতুন বাংলো বাড়িতে থাকার পারমিশন দেয়নি। প্ল্যান ছিল প্রথম সন্তানকে নিয়ে দ্বিতীয় বছর প্রথম এখানে থাকবে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা মানুষের পরিকল্পনাকে অসফল করে নিজ শক্তির দৃঢ়তা দেখিয়ে দিলেন। ‘
কথার সমাপ্তি টেনে অদ্ভুত রকমের হাসল সৌধ। সিমরান বলল,
‘ খুব সুন্দর বাংলো। ছোটো আংকেল ভীষণ রুচিশীল। ‘
সৌধ তাকাল একবার। সিমরান খেয়াল করে পুকুরের দিকে তাকাল। সৌধ স্মিত হেসে বলল,
‘ আমি জানতাম তুই’ই অনেক রুচিশীল। জানাটা ভুল কেন হলো? ‘
আচমকা চোখ ফেরাল সিমরান। সৌধর দৃষ্টি তখন পুকুরে ফুটা ছোট্ট সাদা শাপলাতে স্থির। বলল,
‘ আমার পক্ষে তোকে বিয়ে করা সম্ভব না সিনু৷ আই এম রেইলি সরি। ‘
সিমরানের সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠল। নিমেষেই সামলে নিল আবার। বলল,
‘ বিয়ে তো একদিন করতেই হবে। পাত্রী আমি হলে সমস্যা কোথায়? ‘
ভ্রু বাঁকিয়ে তাকাল সৌধ। এমন ভারিক্কি কথা সিমরানের থেকে আশা করেনি সে। সেদিনের একরত্তি মেয়ে সিমরান। কবে এত বড়ো হয়ে গেল! নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে সৌধ কিছু কথা বলল ও’কে। যাতে তার অনুভূতি বুঝতে পারে সিমরান। আর একটা মেয়ে কখনোই অন্য মেয়ের প্রতি গভীরভাবে আসক্ত ছিল এমন ছেলেকে স্বামী রূপে চাইবে না৷ জানে সে।
কথা গুলোতে তীব্র আফসোস ছিল,
‘ কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রথমদিন। বড়ো ভাইরা ফার্স্ট ইয়ারদের রেগ দিচ্ছিল। রেগিং আমার তখন থেকেই অপছন্দ। তাই বন্ধুদের নিয়ে কিছুটা দূরে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম মেরুন রঙের সেলোয়ার-কামিজ পরা একটা মেয়ে এগিয়ে আসছে। লম্বা, ফর্সা অতি সাধারণ পোশাকের মেয়েটিকে সাধারণ ভাবেই দেখছিলাম। বড়ো ভাইরা ডাকল ওকে। রেগ দিল। মেয়েটা তেজীয়ান। বড়ো ভাইদের আদেশ মানবে না। ভাইরাও কম তেজীয়ান নয়৷ হট্টগোল বেঁধে যাচ্ছে প্রায়। এমন সময় আমি ওখানে উপস্থিত হলাম। জানতে পারলাম আমাদেরই ব্যাচমেট। মেয়েটার মুখের দিকে তাকালাম একবার। গোলগাল মুখ। ঠোঁট দু’টো লাভ শেপ। মৃদু হেসে ভাইদের জিজ্ঞেস করলাম, কী করতে বলেছেন? ওরা প্রথমে বিব্রত হচ্ছিল। বড়ো হলেও আমার স্থান তাদের কাছে আরো বড়োতে। ভয়ও পাচ্ছিল কিঞ্চিৎ। আমি আশ্বাস দিলাম। তারা আমাকে বলল বড়ো ভাইদের মধ্যে দেখতে কালো, মোটা আর চোখের মণি সাদা ভাইয়ার চোখের দিকে পলকহীন এক মিনিট তাকিয়ে থাকতে হবে। মেয়েটা নাছোড়বান্দা। কিছুতেই তাকাবে না। আমি ওর সামনে গেলাম। চোখে চোখ রাখতেই আমার বুকে টান পড়ল। কী আশ্চর্য দু’টো চোখ। পিঙ্গলবর্ণের ঐ চোখ দু’টি দেখেই আমি ভাইদের দিকে তাকালাম। বললাম, ‘ আছলাম ভাইয়ের জায়গায় আমি থাকলে সমস্যা আছে? ‘ ওরা এক সুরে না করল। সমস্যা নেই। মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ ফার্স্ট ইয়ার? ‘
‘ হ্যাঁ।’
‘নাম?’ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে উত্তর দিল, ‘ জান্নাতুল ফেরদৌসী নিধি। ‘
আমি ওর চোখে, ওর নাকে, ঠোঁটে, থুতনীতে সমস্ত জায়গায় আমার চোখ বিচরণ করতে করতে বললাম, ‘কলেজ সম্পর্কে ধারণা নেই তোমার? শোনো বড়ো ভাই রেগ দিচ্ছে। এটা মেনে নিতে তুমি বাধ্য৷ আছলাম ভাইয়ের চোখে তাকাতে অসুবিধা থাকলে আমার চোখে তাকাও। যত দেরি করবে তোমারি সময় নষ্ট হবে। ‘
নিধি এবার আমার দিকে ভালোভাবে তাকাল। আমি চোখে ইশারা করে বুঝালাম আমরা সেম ব্যাচ। উই আর ফ্রেন্ডস। সো অসুবিধা কী? বুদ্ধিমতী মেয়ে। মেনে নিল। পাক্কা এক মিনিট পলকহীন তাকিয়ে রইল আমার চোখে। আর আমি তাকিয়ে রইলাম ওর ব্রাউন কালার হৃদয়ে টান পড়া চোখ দু’টিতে। এরপরই পরিচয় আর বন্ধুত্ব হলো আমাদের। সময় প্রবাহিত হলো ঠিকই। কিন্তু ওই যে এক মিনিটের দৃষ্টি বিনিময়। আমি ওর চোখে খুঁজে পেলাম আমার প্রথম যৌবনে সদ্য প্রস্ফুটিত হওয়া গোলাপকে। শুরুটা ওখান থেকেই হলো। ভীষণ জেদি আমি। এক কথার মানুষ যেমন, তেমনি এক অনুভূতিতে অটুট৷ কলেজ জীবনের পাঁচটা বছর কাটিয়ে দিলাম। একতরফা ভালোবেসে আর অপেক্ষা করে। এরপর যখন সেই নিখুঁত, গভীর ভালোবাসা থেকে আঘাত পেলাম। তখন আমার মনে কী ভয়ানক জেদ চেপে ওঠল কল্পনাতীত। এই আঘাত কোনোদিন সেরে ওঠবে না। আর না প্রথম অনুভূতির তিক্ততা আমার হৃদয় থেকে মুছে যাবে। আমি নিধিকে ভালোবাসতাম, প্রচণ্ড পরিমাণে ভালোবাসতাম। ঐ ভালোবাসা এ জন্মে কারো প্রতি আসা সম্ভব না। আর যদি ভুলক্রমেও আসে তাহলে প্রথমবারের ভুলটা দ্বিতীয়বার করব না। ‘
থামল সৌধ। অনুভব করল সিমরান অস্বস্তিতে ভুগছে। কিন্তু তাকাল না একবারো। পুনরায় বলল,
‘ আমার ভুল কি ছিল জানিস? নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসা। ভালোবাসায় অন্ধত্ব বোকামি। আমি ওকে সেক্রিফাইস করেছিলাম। ভালোবাসায় ততক্ষণ সেক্রিফাইস করতে নেই যতক্ষণ না অপর মানুষটা পূর্ণাঙ্গ রূপে নিজের হয়। আমার ভুলটা ঠিক এখানেই। আমার দম ছিল। নিধিকে নিজের করার দম ছিল আমার। আমি ওকে মুক্ত পাখির মতো চেয়েছিলাম বলে সেই দমটা নিভিয়ে রেখেছিলাম। ‘
ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলল সৌধ৷ জড়োসড়ো হয়ে গেল সিমরান৷ বুকের ভেতর জ্বলছে। ভীষণ জ্বলছে তার। নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস গুলো স্বাভাবিক করে নিয়ে সৌধ বলল,
‘ একজন মানুষকে দূর থেকে যেমন দেখায় সে পুরোপুরি তেমন হয় না। আমাকে তুই ততটুকুই চিনিস যতটুকু তোর সামনে প্রকাশ করেছি। এ পৃথিবীর কোনো মানুষই কারো কাছে নিজেকে পুরোপুরি প্রকাশ করে না৷ আমিও করি না। সুহাস আমাকে যেভাবে, যে রূপে চিনে তুই চিনিস না। তুই যেভাবে যে রূপে জানিস অন্য কেউ সেভাবে জানে না। আমি আমার আম্মার কাছে যে রূপ দেখাই সেটা কিন্তু অন্য কেউ দেখে না। প্রত্যেকটা মানুষ ভেদে আমি আলাদা। আমি তোর কাছেও আলাদা। এই আলাদাটুকু নিয়েই থাকতে চাই। ‘
সিমরান কিছু বলতে উদ্যত হলো। সৌধ বলতে দিল না৷ নিজেই বলল,
‘ আমি তোকে বিয়ে করতে চাই না। শুধু তোকে নয় এ মুহুর্তে আমার পক্ষে কাউকে বিয়ে করা সম্ভব না। আর তোকে কোনো মুহুর্তেই সম্ভব না কারণ, আমি হয়তো দ্বিতীয় কাউকে ভালোবাসতে পারব না। সিনু, তোর জীবনটা উদয়িনী আন্টির মতো হোক। এটা আমরা কেউ চাই না৷ সোহান আংকেল ভীষণ ভালো মানুষ। আমি তার মতো ভালো নই, উদার নই। আমাকে বিয়ে করলে উদয়িনী আন্টির থেকেও অধিক যন্ত্রণা পাবি তুই৷ ‘
এত এত কথার ভীড়ে সৌধ খেয়াল করল না সিমরানের চোখ বেয়ে অনর্গল জল গড়াচ্ছে। সে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
‘ তুই কী চাস মায়ের মতো ভালোবাসাহীন সংসার করতে? সারাজীবন ধুঁকে ধুঁকে জীবন কাটাতে। সামনে থাকা উজ্জ্বল ভবিষ্যতটাকে দূরে ঠেলে নরকে ঝাঁপিয়ে পড়তে? ‘
‘ তুমি নরক নও। আমি তোমাকে ভালোবাসি।আমার কাছে স্বর্গ তুমি। ‘
আচমকা চোখ বুজে ফেলল সৌধ। দু-হাত মুঠোবন্দি করে পরোক্ষণেই দৃষ্টি খুলল। সিমরান কাঁদছে। সে আঁচ করেছিল এমন কিছুই হবে। তাই না তাকিয়েই দৃঢ় স্বরে বলল,
‘ আমি শপিংমলের কোনো জামা নই সিনু৷ কান্নাকাটি করে আমাকে পাওয়া যাবে না। ‘
সহসা কান্না থেমে গেল সিমরানের। অদ্ভুত এক খারাপ লাগা এসে ভর করল বুকের ভেতর। সৌধ ভাই এভাবে বলতে পারল তাকে? ভালোবাসে বলে সে তো আর ছ্যাঁচড়া মেয়ে মানুষ হয়ে যায়নি। অসহায় বোধ করল খুব৷ নিরুপায় লাগল নিজেকে। সৃষ্টিকর্তা কেন এই মানুষটাকে ঘিরে তার হৃদয়ে এত ভালোবাসার জন্ম দিল? যদি নাই পাবে তবে এতখানি ভালোবাসায় কেন মন ডুবাল? অসহায় চোখে তাকাল সৌধর পানে। শক্ত চোয়ালে সৌধ সটানভাবে বসে। সিমরান তাকিয়েছে। অশ্রুসিক্ত তার দৃষ্টিদ্বয়। টের পেয়ে ঢোক গিলল। এক নিঃশ্বাসে বলল,
‘ আমি তোকে ভালোবাসি না। তুই যে চোখে আমাকে দেখিস আমি ভুলক্রমেও কখনো সে চোখে দেখিনি৷ তোর আত্মসম্মান কি এতটাই ঠুনকো? যে ছেলে তোকে ভালোবাসে না, নিজের জীবনের সঙ্গে জড়াতে চায় না৷ যে ছেলে তার পরিবারের কাছে তোকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আজ তোর সামনে বসেও প্রত্যাখ্যান করছে। তাকে বিয়ে করবি? বউ হবি তার? ‘
দম বন্ধ হয়ে এলো সিমরানের। আচমকা দু’হাতে কান দু’টো চেপে ধরে বলল,
‘ চুপ করো প্লিজ। ‘
সৌধ চুপ করল না। একের পর এক বলতেই থাকল,
‘ তুই জেনে-বুঝে আগুনে ঝাঁপ দিবি? ‘
সহসা মৃদু চিৎকার দিল সিমরান। অসহনীয় গলায় বলল,
‘ কথা শেষ করো সৌধ ভাই। ‘
সিমরান উত্তেজিত হচ্ছে। আরো বেশি উত্তেজিত করে তুলতে ফের সৌধ বলল,
‘ বাড়ি ফিরে যা৷ আম্মাকে ফোন দিয়ে বল এই বিয়েতে তুই রাজি না৷ এতদিন ভুল করেছিস। আজ মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করে না করে দিলি। সোহান আংকেল আমাদের বাড়ি যাওয়ার আগে আম্মাকে ফোন দে৷ ‘
বাক্য গুলো কী নিষ্ঠুর! পাশের মানুষটা কত বড়ো মাপের পাষাণ। ভেবেই সহসা ওঠে দাঁড়াল সিমরান। অমনি পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভয়ংকর ভাবে কেঁপে ওঠল৷ সে কাঁপুনি আর থামল না৷ অতিরিক্ত যন্ত্রণা, উত্তেজনা মিলিয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগল। সৌধ বিচলিত হলো এ দৃশ্য দেখে। ত্বরিত সিমরানের হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিল পাশে। দৃঢ় গলায় বলল,
‘ শান্ত হো। মাথা ঠান্ডা কর। জাস্ট কন্ট্রোল সিনু। ‘
ধরে রাখা হাতটা আলগোছে ছাড়িয়ে নিল সিমরান। তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল,
‘ তুমি শান্ত হতে পেরেছিলে? তুমি কন্ট্রোল করতে পেরেছিলে নিজেকে? পারোনি তো। আমাকে কেন বলছ তাহলে। যে যন্ত্রণায় নিজে ভুগছ সেই একই যন্ত্রণায় আমাকে ভোগাতে তুমিই বাধ্য করলে। ‘
সত্যি বাক্য। সৌধ নিভে গেল৷ হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করল ওর মাথায়। বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
‘ আমি নিরুপায় সিনু। তোর ভালোর জন্যই বলছি। আমি তোকে বিয়ে করতে পারব না। আমি ভুলতে পারব না আমার প্রথম প্রেমের বিচ্ছেদ যন্ত্রণাকে। ‘
আবারো তাচ্ছিল্য ভরে সৌধর হাত ছাড়িয়ে দিল সিমরান। কাঁদতে কাঁদতে বলল,
‘ আমিও পারব না। তুমি যেমন নিধিপুর স্বার্থপরতা মনে রেখেছ। আমিও তোমার প্রত্যাখ্যান মনে রাখব।’
কথাটা বলেই হুহু করে কেঁদে ফেলল মেয়েটা। সৌধ স্তম্ভিত হয়ে বসে রইল৷ কেটে গেল কয়েক পল। এরপর আচমকাই থেমে গেল সিমরান৷ ধাতস্থ হয়ে নিজের চোখের পানি গুলো মুছে ওঠে দাঁড়াল। ওঠে দাঁড়াল সৌধ নিজেও। বলল,
‘ চল, বাড়ি ফিরবি। ‘
তিনটে শব্দ বলেই পা বাড়াল সৌধ। শরীর টলছে সিমরানের। খুব কষ্টে নিজেকে সামলে এগুচ্ছিল। আর ভাবছিল সৌধর বলা প্রতিটি কথা। হঠাৎ স্মরণ হলো, কলেজে নিধি আপুর চোখ দেখেই প্রেমে পড়েছিল সৌধ। মন মানল না সিমরানের। প্রত্যাখ্যান পেয়েও তার ভেতরের অনুভূতি হাহাকার করে ওঠল। হৃদয় গহিন থেকে জাগ্রত হলো একটিই কথা। যে চোখে প্রেম, ভালোবাসা ছিল না সে চোখ দেখে সৌধ ভাই প্রেমে পড়ল। ভালোবেসে ফেলল বিশুদ্ধভাবে। তবে যে চোখে তার জন্য অগাধ প্রেম আছে, প্রগাঢ় ভালোবাসা আছে। আছে তাকে পাওয়ার একরাশ তৃষ্ণা। সে চোখে তাকালে কি পাথর মনে ফুল ফুটবে না? গলবে না বিরহে ভরা বরফ টুকরো?
‘ সৌধ ভাই।’
কান্না মিশ্রিত ভাঙা কণ্ঠস্বর শুনতেই পা দু’টো থমকে গেল সৌধর৷ পেছন ঘুরে দাঁড়াতেই সিমরানকে সম্মুখে আবিষ্কার করল। বলল,
‘ বল? ‘
‘ তুমি যাকে ভালোবাসো তার চোখে তাকিয়েছিলে তো। ‘
‘ বহুবার। ‘
অত্যন্ত গম্ভীর ভাবে উত্তর দিল সৌধ। সিমরান বলল,
‘একটা অনুরোধ করব? ‘
‘হু?’
‘ সেই কিশোরী বয়স থেকে যে তোমাকে ভালোবাসে তার চোখের দিকে একবার তাকাবে? গভীর ভাবে। ‘
ঢোক গিলল সৌধ। সিমরানের ফর্সা মুখশ্রী কান্নার ফলে লালচে বর্ণে পরিণত হয়েছে। নাকের ডগাও রক্তিম। মেয়েটার ভেতর জেদ আছে। তেজও আছে। জানত সে। শুধু জানত না এই মুহুর্তে দেখা অসহায়ত্ব টুকুকে। এর পেছনে দায়ী সে নিজে। ভাবতেই তার দৃঢ় ব্যক্তিত্ব বিব্রত হলো। সুহাস যদি জানতে পারে আজকের ঘটনাটি। তাকে ক্ষমা করতে পারবে তো? শ্বাস রোধ হয়ে এলো। ভাবনায় বিভোর হয়েই সিমরানের চোখে চোখ রাখল সে। অশ্রুতে বড়ো বড়ো ঘন পাপড়ি গুলো জড়োসড়ো হয়ে আছে। জলপূর্ণ দৃষ্টি। ঝাপসা সে দৃষ্টিতে তীব্র অভিমান। প্রগাঢ় ভালোবাসায় প্রত্যাখ্যান পেয়ে তীব্র অভিমানী দু’টো চোখ। ভিজে ওঠছে ক্ষণে ক্ষণে। নিঃশ্বাস আঁটকে ঠাঁই দাঁড়িয়ে সৌধ। নির্নিমেষে সে চোখে তাকিয়ে শুধু একটা কোথাই ভাবছে, কার জন্য আঘাত দিলাম তোকে? নিধির জন্য, নিজের জন্য নাকি তোরই জন্য।
‘ সৌধ ভাই? ‘
‘ হু? ‘
‘ তুমি কেন নিধি আপুকে এতখানি ভালোবাসলে? আমায় কেন একটুও ভালোবাসলে না। আমাকে যদি অল্পখানিও ভালোবাসতে তোমাকে এত দুঃখ পেতে হতো না, আমিও এতখানি দুঃখ পেতাম না। ‘
সৌধ নিশ্চুপ। সিমরানের দুই গাল বেয়ে অশ্রু ঝড়ে পড়ল। ভাঙা কণ্ঠে ফের বলল,
‘ আমাকে ভালোবাসলে কী খুব ক্ষতি হতো? ‘
এতক্ষণ অনেক কথা বললেও এ মুহুর্তে উত্তর খুঁজে পেল না সৌধ। রক্তিমা, অসহায় মুখশ্রীর সিক্ত দৃষ্টিজোড়ায় তাকিয়ে রইল নিষ্পলক। ভাবতে লাগল দ্বন্দ্বময় অজস্র ভাবনা৷ অনুভব করল তার বুক কাঁপছে। কেন কাঁপছে?
আচম্বিতে সম্মুখের নারী শরীর, অসহায় মুখ আর জলপূর্ণ চোখ দুটি মিলিয়ে গেল৷ সিমরান চোখের পানি মুছতে মুছতে এক ছুটে রাস্তায় বেরিয়ে গেল৷ সৌধ স্তব্ধ মুখে অবশ দেহে ঠাঁই দাঁড়িয়ে। এদিকে তীব্র অভিমান বুকে চেপে, ভগ্ন হৃদয়ে অটোতে ওঠে বসল সিমরান। সৌধ ভেবেছিল সে গাড়িতে গিয়ে বসেছে। কিছুক্ষণ পর এসে যখন দেখল সিমরান গাড়িতে নেই৷ আশপাশে তাকিয়েও খুঁজে পেল না। তখন সাত্তার চাচার কাছে ছুটে গেল। জিজ্ঞেস করলে সাত্তার চাচা বলল,
‘ মেয়া তো অটোত কইরা চইলা গেল। ‘
চমকে ওঠল সৌধ। দেরি না করে তৎক্ষনাৎ ছুটে গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। সিমরান যে অটোতে ওঠেছে সেটা ধরতে সময় লাগল না তার। শুধু নিশ্চিত হয়ে নিল সিমরান ঠিক আছে৷ এরপর বাড়ি পর্যন্ত অটোর পিছু পিছু এলো সৌধ। সিমরান নেমে বাড়িতে ঢুকছে দেখে নিয়ে অতঃপর সে রুদ্ধশ্বাস ত্যাগ করল। গাড়ি ঘুরালো নিজের বাড়ির দিকে। বাড়ি ফিরে প্রথম যে কথাটি শুনল তা বলল তার দাদুনি। কারণ সে সিমরানকে একদমই পছন্দ করে না। আর সৌধ তার অতি পছন্দের নাতি৷ তাই তাদের বিয়ের কথাবার্তা চলাকালীন কঠিন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ওই মেয়েকে বাড়ির বউ করো না। কেউ তার নিষেধ মানছিল না। আজ সিমরান নিজেই ফোন করে বিয়েতে অমত পোষণ করেছে। তাই দাদুনি বেজায় খুশি। বেশ খোশমেজাজে সে এসে সৌধকে জানালো,
‘ শুনছ দাদুভাই ঐ দস্যি মেয়ে বিয়েতে না করে দিছে। আল্লাহ কতবড়ো বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিল তোমারে। অমন দস্যি মেয়ের স্বামীর হওয়ার চেয়ে চিরকুমার থাকা ঢেড় ভালো।‘