ত্রিধারে তরঙ্গলীলা | পর্ব – ৩২

প্রিয় মানুষের মৃত্যু শোকও একসময় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব৷ কিন্তু চোখের সামনে তাকে অন্যকারো হয়ে যাওয়ার শোক কাটানো অসম্ভব। এই শোক এতটাই
দৃঢ় যে আজন্মকাল থেকে যায়। প্রকৃতির নিয়মে মানুষ হারালে হৃদয় ব্যথিত হয় ঠিকি কিন্তু প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে মানুষ হারালে তা হয় দুর্বিষহ যন্ত্রণার। কেটে গেছে তিন রাত তিন দিন। স্বাভাবিক হতে পারেনি সৌধ। তীব্র আঘাতে হুঁশ হারিয়ে অর্পণ স্যারকে যে আঘাত করেছিল তারা তিন বন্ধু, সে আঘাত সেরে গেছে অনেকটাই। সময়ের স্রোতে একদিন পুরোপুরিই সেরে যাবে। কিন্তু হুঁশে থেকে নিধি যে আঘাত সৌধকে করেছে এ আঘাত কি কোনোদিন সেরে ওঠবে? কিছুটা মলিন হলেও সেরে ওঠবে না কোনোদিন। রাতগুলো কাটছে নির্ঘুম। সৌধকে সামলানো মুশকিল খুব। পরিবারের সদস্যরা এ ব্যাপারে একেবারেই অপারগ। সুজা চৌধুরীর ভরসা ছোটো ভাই অর্থাৎ সৌধর ছোটো চাচা৷ যাকে খুব মানে সৌধ। বলা যায় তার প্রথম বেস্ট ফ্রেন্ড ছোটো চাচা সুলল চৌধুরীই। ভাতিজার কঠিন সময়টা অনুভব করতে পারছে সুলল। তারা উভয়ই প্রিয়তমা হারানোর শোক পেয়েছে। পার্থক্য এটুকুই সে প্রিয়তমার মৃত্যু শোক পেয়েছিল আর সৌধ প্রিয়তমা অন্য কারো হয়ে যাওয়ার শোক পেয়েছে। নিজের ব্যথার চেয়েও ভাতিজার ব্যথা তীব্র। দিনশেষে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বস্তি পেলেও সৌধ পাবে না। তাদের সবাইকে বেশ কঠিন সময় পার করতে হবে এবার। সামলাতে হবে সৌধকে। সুহাস আর আইয়াজ নিজেদের বাড়িতে ফিরে যায়নি। গতকাল নামী আর সিমরান চলে গেছে। যদিও তার ইচ্ছে ছিল না। সুহাস, নামী আর উদয়িনী তিনজনের চাপেই মেয়েটা যেতে বাধ্য হয়েছে। নামী গেছে তার বাসায় আর সিমরান মায়ের সঙ্গে নিজ বাড়িতে। উদয়িনী এতটা জোর করত না মেয়েকে৷ কিন্তু তার মেজাজ চটে গেছে সৌধ নিধিকে ভালোবাসত শুনে। যার কাছে নিজের মেয়েকে দিতে চেয়েছিল। যাকে মেয়ে জামাই করতে তীব্র আগ্রহী ছিল। সে অন্য মেয়ের প্রতি আসক্ত! মেনে নিতে পারেনি উদয়িনী। যদিও সৌধর জীবনে এখন নিধি আর আসবে না, নিশ্চিত। তবু সৌধর মনের ঘরে অন্য নারীর বাস ছিল এখনো আছে। তাই তো এভাবে ভেঙে পড়েছে ছেলেটা৷ ঠিক এখানেই ঘোর আপত্তি জানিয়েছে উদয়িনীর মন৷ নিজ জীবন থেকে পাওয়া শিক্ষা থেকেই নিজের বিশেষ মনোবাঞ্ছা থেকে বেরিয়ে এসেছে। সৌধর মায়ের মনের ভাবনা জানে উদয়িনী।
যা সব ঘটে গেল এরপর কী হতে পারে চৌধুরী পরিবার কী সিদ্ধান্ত নিতে পারে তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দ্বারা ঠিক টের পাচ্ছে। তাই ভয় পেয়েই যতদ্রুত সম্ভব মেয়েকে নিয়ে চলে এসেছে। কারণ যে ভুলটা সে করেছে একই ভুল তার মেয়েকে করতে দেবে না। যদিও তার বিশ্বাস সিমরান নিজেও আগ্রহী হবে না এসবে। অন্য নারীর প্রতি আসক্ত পুরুষের প্রতি লোভ করে জীবন, যৌবন সবটা ধ্বংস করে দিয়েছে উদয়িনী। একই ভুল আর মেয়ের জীবনে করতে চায় না। অন্য নারীর প্রতি আসক্ত ছেলেকে নিজের মেয়ের জন্য মরে গেলেও বাছাই করবে না৷ এতদিন পছন্দ করত, মনে মনে আশা রেখেছিল কারণ এতদিন জানত না সৌধ নিধির প্রতি ভয়ানক ভাবে দুর্বল।
.
.
গত তিন রাতের মতো চতুর্থ রাতটাও নির্ঘুম। সৌধর সঙ্গে জেগে আছে আইয়াজ আর সুহাসও। সৌধ তার বিছানার মাঝ বরাবর সটান হয়ে শুয়ে। একধ্যানে তাকিয়ে আছে চরকির মতো ঘুরতে থাকা ফ্যানটার দিকে। ক্ষণে ক্ষণে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে ছেলেটা। জীবনটাও তো ঠিক চরকির মতোই। আজ তুমি যাকে যতটা দেবে কাল সে তোমাকে ততটাই ফেরত দেবে। আকস্মিক চোখ বুজে ফেলল সৌধ। ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল,
‘ আমি তাকে একবিন্দু কষ্টও ফেরত দিতে চাই না৷ শুধু চাই ও সুখী হোক, সুখে থাকুক। কারণ আমি ওকে ক্ষমা করতে চাইনা। ও যতদিন সুখে থাকবে আমি ঠিক ততদিনই ওকে ক্ষমা করতে পারব না৷ ওর সুখটা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকুক। আমি যেন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারি ওর সুখের গল্প শুনে। আমি যেন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময় একটিবার বলতে পারি নিধি, আমি তোকে ক্ষমা করিনি। ‘
রাত গভীর হয়নি৷ সবে দশটা বাজে। আইয়াজ আর সুহাস কমেডি মুভি দেখার প্ল্যান করছে। যাতে সৌধর বুক একটু হালকা হয়৷ তাদের এই প্রচেষ্টা বুঝতে পারে সৌধ। তাচ্ছিল্য ভরে একটুখানি হাসে। ওর ব্যথা কি আর ওরা বুঝে? যে পুরুষের বুকের ভেতরে বাস করা নারী প্রতি রাতে অন্য পুরুষের বুকে ঘুমায় সে পুরুষ জানে জীবন কত নৃশংস, নিয়তি কত্ত বড়ো বেইমান, নারী কি ভয়াবহ ছলনাময়ী!
সহসা ওঠে বসল সৌধ। বিড়বিড় করে বলল কিছু কথা৷ সুহাস, আইয়াজ কান সজাগ করে শুনে নিল সবটাই,
‘ও যদি ক্লাস নাইন বা ইন্টার পড়ুয়া মেয়ে হতো।তাহলে নিজের মনকে বুঝ দিতে পারতাম। মনের দিকে যদি দুর্বল প্রকৃতির মেয়ে হতো তবু মেনে নিতাম। যদি আল্লাহ প্রদত্ত কোনো অসুখ করে ও মারা যেত তবু মনটাকে স্বান্তনা দিতাম। ছাব্বিশ বছর বয়সী একটি মেয়ে। খুব শিঘ্রই পরিপূর্ণ ডক্টর পেশায় নিয়োজিত হবে। সে কী করে পারল এমন একটি ঘটনা ঘটাতে? কী করে পারল! ‘
শেষে চিৎকার করে ওঠল সৌধ। সুহাস এসে ধরল ওকে৷ আইয়াজ ভীত স্বরে বলল,
‘ ছোটো কাকুকে ডাকব? ‘
সৌধ তড়াক করে ওঠে দাঁড়াল। বদ্ধ উন্মাদের মতো সুহাসের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ছুটে গেল ঘরের বাইরে। পেছন পেছন সুহাস আর আইয়াজও ছুটে গেল। সুহাস ভেবেছিল, সৌধ বাড়ির বাইরে চলে যাবে৷ কিন্তু না সে তার মায়ের ঘরের সামনে গিয়ে ডাকতে শুরু করল,
‘ আম্মা, আম্মা দরজা খোলো, আম্মা। ‘
সৌধর কণ্ঠে বড্ড তাড়াহুড়ো। যা থেকেই টের পাওয়া যায় মানুষটার বুকের ভেতর কতখানি অশান্তি বিরাজ করছে। সুহাস, আইয়াজ চিন্তান্বিত ভঙ্গিতে সৌধর পেছনে দাঁড়িয়ে। ওদের শরীরে ঘাম ছেড়ে দিয়েছে বন্ধুর করুণ দশা দেখে। তানজিম চৌধুরী আধোঘুমে ছিলেন৷ ছেলের এক ডাকেই ধড়ফড়িয়ে ওঠেছেন তিনি৷ এরপর দ্রুত পায়ে এসে দরজা খুলেই ভীত স্বরে বললেন,
‘ কী হইছে আব্বা? ‘
সৌধ কিছুটা শান্ত হলো। ধীরপায়ে ঘরে ঢুকে অসহায় ভঙ্গিতে মায়ের দিকে তাকাল। বলল,
‘ আমি কি খুব বেশি বড়ো হয়ে গেছি আম্মা? ‘
চোখ ছলছল করছিল তানজিমের। হঠাৎ অশ্রু ছেড়ে দিয়ে হাত বাড়িয়ে সৌধর গাল স্পর্শ করলেন। বললেন,
‘ এই কথা বলো কেন আব্বা? মায়ের কাছে সন্তান কোনদিন বড়ো হয়? ‘
সৌধর মুখে দেখা দিল একটুখানি হাসির আভাস। পেছন থেকে সুহাস, আইয়াজ এগিয়ে এসে বলল,
‘ সৌধ রুমে চল। আংকেলের ঘুম ভেঙে যাবে। ‘
‘ ভাঙবে না, আব্বা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে। ‘
বন্ধুকে উত্তর দিয়েই মা’কে নিঃসংকোচে বলল,
‘ আমি যদি আজ তোমাদের সাথে ঘুমাই অন্যায় হবে আম্মা? ‘
আকস্মিক ছেলেকে জাপ্টে ধরলেন তানজিম চৌধুরী। সন্তানের ব্যথা মায়ের চেয়ে কে বেশি বুঝে? যে ছেলেটা ক্লাস সিক্সে ওঠার পরই বাবা, মায়ের সাথে ঘুমাতে লজ্জা পেত। যার ব্যক্তিত্বে আঘাত করত বাবা, মায়ের মাঝখানে ঘুমাতে। আজ সে নিজে থেকেই বাবা, মায়ের কাছে থাকতে চাচ্ছে।
মায়ের সম্মতি পেয়ে পেছনে তাকাল সৌধ। হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সুহাস, আইয়াজকে বলল,
‘ তোরা কি হাসবি? ‘
সুহাস তৎক্ষনাৎ মাথা দু’দিকে নাড়াল। না না একদম হাসবে না। আইয়াজ স্তব্ধ মুখে কিয়ৎক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল,
‘ না, না হাসব কেন? তোর আম্মা তোর আব্বা একশবার ঘুমাবি তাদের সাথে। আমরা হাসার কে, হু আর উই? ‘
আইয়াজের প্রতিক্রিয়া দেখে সৌধর চোখ দু’টো ছোটো ছোটো হয়ে গেল। আইয়াজ মুহুর্তেই মাথা ঝাঁকানো থামিয়ে বোকা বোকা হাসতে লাগল। সৌধ ওর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সুহাসের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ গো এ্যাঁ। ‘
ওরা চলে গেল। তানজিম চৌধুরী ছেলের জন্য বালিশ বের করে বিশাল বিছানার মাঝ বরাবর রাখল। গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ল সৌধ। তানজিম চৌধুরী ছেলের পাশে শুয়ে বললেন,
‘ সকালবেলা তোর আব্বা দেখে অনেক খুশি হবে। ‘
ঈষৎ হাসল সৌধ। চোখজোড়া বন্ধ করে হাঁপ নিঃশ্বাস ছাড়ল। এরপর হাত বাড়িয়ে মায়ের একটা হাত টেনে নিজের মাথায় রেখে বলল,
‘ হাত সরাবা না। ‘
বুক ভেঙে কান্না এলো তানজিম চৌধুরীর। সারারাত সে আর ঘুমাতে পারল না। সৌধও যে ঘুমায়নি টের পেল ওর চোখের কার্ণিশ ঘেষে পড়া একফোঁটা অশ্রু কণা দেখে। যা তার বুকের ভেতরটা তীরের ফলার মতো আঘাত করল। কখনো সে সৌধর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল কখনো বা বুকে। মা মাথায় হাত বুলানোর পাশাপাশি বুকেও হাত বুলাচ্ছে। কিঞ্চিৎ আরাম পেল সৌধ। একসময় চোখ বোজা অবস্থাতেই বুকে রাখা মায়ের হাতের ওপর দৃঢ়ভাবে নিজের হাতের তালু রেখে চাপ দিয়ে বলল,
‘ এখানে ব্যথা করছে বুঝতে পারলে কী করে আম্মা?’
‘ মায়েরা সব বুঝতে পারে। ‘
উত্তর দিয়েই ছেলেকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে ওঠল তানজিম চৌধুরী। কাঁদল সৌধও। তার কান্না শব্দহীন। অথচ ব্যথা কী ভীষণ গভীর!
.
.
কেটে গেছে চার রাত৷ পঞ্চম রাতটাও নির্ঘুম। সুহাস ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়। এভাবে কাটতে থাকলে সৌধকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। নাওয়া, খাওয়া ঘুম বাদ দিয়ে ছেলেটা কী একটা ঘোরে আছে, কীভাবে বের করবে এখান থেকে মাথা কাজ করছে না৷ হঠাৎ আইয়াজ বলল,
‘ দোস্ত আর মাত্র তিনদিন ছুটি আছে৷ চল সৌধকে নিয়ে দু’দিনের জন্য কক্সবাজার চলে যাই। খোলা আকাশের নিচে, সমুদ্র পাড়ে নির্ঘুম কাটালে আর যাইহোক বদ্ধ ঘরের মতো যন্ত্রণা হবে না। ‘
আইয়াজের কথাটা মনে ধরল সুহাসের। সুজা আংকেলকে কল করে অনুমতি নিয়ে সৌধকে জানাল তারা আগামীকাল কক্সবাজার যাবে। এ কথা শুনে হঠাৎ সৌধ বলল,
‘ বারে যাবি? ‘
সুহাস চোখ, মুখ কুঁচকে বলল,
‘ হোয়াট! ‘
গতকাল থেকেই সিগারেট চাচ্ছিল সৌধ। প্রথমে দিতে না চাইলেও আজ সকালে এনে দিয়েছে। তাকে সঙ্গ দিয়ে নিজেরাও এক, দুইটা খেয়েছে। ভেবেছিল সিগারেট অবধিই সীমাবদ্ধ থাকবে সৌধ। কিন্তু এখন তো ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি মাত্রায় চলে যাচ্ছে। যদিও সৌধর জন্য এটা ব্যাপার না। সৌধর বড়ো ভাইয়ের বন্ধুর নিজস্ব বার আছে। তবু তাদের তো একটা ইমেজ আছে। প্রচণ্ড দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেল সুহাস, আইয়াজ। এখন যা অবস্থা তাতে সৌধর মতের বিরুদ্ধে যাওয়া মানে বিপদ ডেকে আনা৷ কিন্তু সে তো বিবাহিত। নামী যে ধরনের মেয়ে যদি একবার ভুলক্রমেও এসব কানে যায় রক্ষা থাকবে না। এমনিতেই ক’দিন ধরে মেয়েটাকে সময় দিতে পারছে না৷ না দেখা না ঠিকভাবে কথা। এরওপর যদি শুনে বন্ধু নিয়ে বারে গেছে সে। নিশ্চিত গলা কা টবে। নয়তো বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণা দেবে। এই মেয়ের নীতি, রাগ, জেদ সম্পর্কে এতদিনে খুব ভালো করেই জানা হয়ে গেছে। এদিকে আইয়াজও অসহায় বদনে দাঁড়িয়ে। ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে বন্ধুর মুখের দিকে৷ বন্ধুর বিরহে আজ যদি তারা দু’জন বারে যায় তাদের বিরহ আসন্ন নিশ্চিত!
সৌধ বারে যাবি প্রশ্নটা করেই ঝটপট তৈরি হয়ে নিয়েছে। এরপর একটা সিগারেট ধরিয়ে বেলকনিতে যেতে যেতে আদেশ করে গেছে, তৈরি হতে। বুক ধুকপুক নিয়ে তৈরি হয়ে নিল সুহাস, আইয়াজ। আত্মাটা হাতের মুঠোয় নিয়েই বেরিয়েছে বারের উদ্দেশ্যে।
নেশায় অভ্যস্ত না সৌধ বা সুহাস, আইয়াজ। আজই প্রথম বারে এসেছে তারা৷ চারপাশে চাকচিক্যময় লাইটিং। পরিচিত অনেক ভাই, বন্ধুরাও রয়েছে। ওদের তিনজনকে দেখে তারা ভূত দেখার মতোই তাকিয়ে আছে৷ বিগ বস ক্লাবের তিন পার্টনার বারে এসেছে! বিষয়টা হজম হচ্ছিল না অনেকেরই৷ এরই মধ্যে সুন্দরী ডান্সারের রঙ্গলীলা শুরু হয়ে গেল। সৌধর অবশ্য এসবে হুঁশ নেই। সে জীবনে প্রথমবারের মতো রেড ওয়াইন গলায় ঢালল। চোখ, মুখ কুঁচকে মাথা নিচু করে ফেলল মুহুর্তেই। সুহাস, আইয়াজ ঢোক গিলে বলল,
‘ খুব বাজে নারে? ফেলে দে ইস কী দুর্গন্ধ! ওয়াক থু..’
কিয়ৎক্ষণ পর মাথা তুলল সৌধ। মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলল,
‘ এই দুর্গন্ধই তো চাই। যাতে ভেতরে থাকা আগুনপোকাটা এই গন্ধে পালিয়ে যায়। ‘
কথাটা বলেই একের পর এক গ্লাস শেষ করতে লাগল সৌধ। সুহাস ওর হাত টেনে ধরে আকুতি স্বরে বলল,
‘ দোস্ত আর না। ‘
সৌধ চোখ গরম করে তাকাল। সুহাস ফের বলল,
‘ দোস্ত চল বাড়ি যাই৷ নামী কল করছে। যদি টের পায় আমরা কোথায় সর্বনাশ হয়ে যাবে। ‘
এ পর্যায়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলল সৌধ। ধরে রাখা রেড ওয়াইনের গ্লাসটা টেবিলে রেখে সুহাসের দিকে তাকাল তীক্ষ্ণ ভাবে। বলল,
‘ নামীকে কল কর। ‘
চমকে ওঠল সুহাস৷ বলল,
‘ ভাই গর্দান যাবে আমার। ‘
‘ কিচ্ছু হবে না। ফোন করে বলবি ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিতে আমরা হানিমুন যাব। ‘
‘ হোয়াট!’
চিৎকার দিয়ে ওঠল সুহাস৷ আইয়াজ হতভম্ব। সৌধ মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলল,
‘ বলদ! কক্সবাজার যেতে চাইলি তখন, তাই বলছি হয়ে যাক হানিমুন। তুই আর নামী। আইয়াজ আর ফারাহ। আর তোদের চারজনের সাথে আমি। তাহলে কী হলো আমরা না?’
হঠাৎ কাশতে শুরু করল সুহাস। একটুক্ষণ কেশে নিয়ে বলল,
‘ তাই বল। ‘
পরোক্ষণেই আবার চ্যাঁচিয়ে ওঠল,
‘ আইয়াজ ফারাহ কী করে যাবে? ওদের তো বিয়েই হয়নি। ‘
‘হবে, আগামীকাল। ‘
সৌধর কথা শুনে চোখ দু’টো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো ওদের। আইয়াজ ধরা গলায় বলল,
‘ ও মনে হয় পাগল হয়ে গেছে রে। আমার ইমোশন নিয়ে মজা নিচ্ছে। ‘
‘ ধূরর শা লা ওর নেশা হয়ে গেছে। ‘
সুহাস কথাটা বলেই ঢুলতে থাকা সৌধকে জাপ্টে ধরল। বলল,
‘ দোস্ত তোর নেশা হয়ে গেছে, বাড়ি চল। ‘
‘ নেশা হলেও তাল ঠিক আছে। ‘
সুহাসের কানে কানে বলল সৌধ। সুহাস বলল,
‘ ওঠ বাড়ি যাব। ‘
সৌধ হঠাৎ নিশ্চুপ হয়ে গেল। সামনে যে মেয়েটি ডান্স করছে তার দিকে নিভু নিভু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আঙুল তুলে সুহাসকে দেখিয়ে বলল,
‘ সুহাস দেখ ওই মেয়েটা বার ডান্সার সবাই ওকে ঘৃণার চোখে দেখে। তুই আর আইয়াজও দেখছিস।
কিন্তু আমি দেখছি না। কেন জানিস, ও নর্তকী হলেও বেইমান না।‘

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।