ঠিক বারোটা সময় নামীর ফোনে একটি ম্যাসেজ এলো,
‘ হ্যাপি ফার্স্ট মিটিং নামীদামি। ‘
বই থেকে মুখ তুলে ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই বুকের ভেতর ধড়াস করে ওঠল নামীর। এরপর আরো একটি ম্যাসেজ এসে হৃদয় নাড়িয়ে তুলল তার।
‘ মিসেস সুহাসিনী… হ্যাপি ফার্স্ট ওয়েডিং এনিভার্সারি। ‘
দ্বিতীয় ম্যাসেজটা দেখে থরথর করে কেঁপে ওঠল সে। অতিরিক্ত কম্পনের ফলে দু’হাতে ফোন ধরে রাখতেও হিমশিম খাচ্ছে। এমতাবস্থায় এলো
তৃতীয় ম্যাসেজটি। যেটা দেখে দু’চোখ উপচে জল গড়াতে গড়াতে আকস্মিক হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল।
‘ টু ডে ইজ দ্য ডে টু কিস ইয়র ফরহ্যাড মাই বেগাম ‘
কান্নায় ডুবে গিয়ে চতুর্থ ম্যাসেজটি দেখতেই পেল না। নিধি, প্রাচী এক ছুটে এসে দু’পাশ থেকে নামীর দু’কাধ জাপ্টে ধরল। একসুরে বলল,
‘ হ্যাপি এনিভার্সারি বনু, হ্যাপি এনিভার্সারি। ‘
আকস্মিক হুঁশ ফিরল নামীর। এ কী করছে সে? কাঁদছে কেন? হঠাৎ এতটা ভেঙেই বা পড়ল কেন? সে তো এমন দুর্বল নয়। তবে কি ভালোবাসা নামক অনুভূতিটুকু তার মতো শক্ত ধাঁচের মেয়েকেও দুর্বল করে ফেলল? মুখ থমথমে হয়ে গেল তার। প্রাচী, নিধি দু’জন তাকে ছেড়ে খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
‘ তোমার আর সুহাসের সম্পর্ক আজ এক বছরে পদার্পণ করল। ‘
ওদের সে কথায় কর্ণপাত করল না নামী। তার মনের গভীরে চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগল। এটা কী করে ফেলল সে? এবার যদি এ কথা সুহাসকে জানানো হয় খুব বিশ্রী পরিস্থিতি তৈরি হবে। ছেলেটা খুব খুঁচিয়ে কথা বলতে জানে। তাছাড়া সে ওর জন্য কেঁদে গা ভাসিয়েছে এ কথা জানলে অহংকারে মাটিতে পা’ই ফেলল না। দেখা গেল আকাশে ভাসতে ভাসতে তার মাথার ওপর থুথু নিক্ষেপ করতে শুরু করবে! রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল নামী। সুহাসের কাছে নিজের দুর্বলতা কক্ষনো প্রকাশ করবে না সে। কক্ষনো না। ত্বরিত সামলে নিল নিজেকে। নিধি টেবিলে রাখা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে নামীকে দেয়া সুহাসের চতুর্থ ম্যাসেজটি দেখতে পেল।
‘ আ’ম ওয়েটিং নামী। নিচে এসো। ‘
ম্যাসেজটা দেখে নিধি বলল,
‘ ঐ দেখো রোমিও হাজির। ‘
প্রাচী অবাক কণ্ঠে বলল,
‘ এতদ্রুত? ‘
‘ আসবে না? ‘
হাসতে হাসতে প্রাচীকে এ প্রশ্ন করেই নামীকে বলল,
‘ বনু তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করে নিচে যাও। সুহাস অপেক্ষা করছে। ‘
নামীর অশ্রুসিক্ত নয়নজোড়া সীমাহীন বিস্ময়ে ভরে ওঠল। ঢোক গিলল রয়েসয়ে। বলল,
‘ সুহাস এসেছে! ‘
প্রাচী নিশ্চিত হতে বেলকনির দরজা খুলে উঁকি দিল গ্রিলের ফাঁকে। অমনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। সুহাসের বেশভূষা দেখে কপালে পড়ল সুক্ষ্ম ভাঁজ। কবে হবে এই ছেলেটার বুদ্ধি? এমন প্রশ্নে জর্জরিত হলো হৃদয়। তাদের সবচেয়ে লম্বা বন্ধু সুহাস। অথচ ওর বোধবুদ্ধি সব হাঁটুর নিচে। তার দিদা ঠিকই বলে লম্বা ছেলেদের বুদ্ধি থাকে হাঁটুর নিচে। সুহাসই তার চাক্ষুুস প্রমাণ৷ বিবাহবার্ষিকীতে বউকে উইশ করতে এসেছে। তার গেটআপ থাকবে অন্যরকম। অথচ এ ছেলে কিনা টিশার্টের সাথে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে এসেছে! চোখমুখ কুঁচকে ফেলল প্রাচী। তক্ষুনি ফোন করল সুহাসকে। বলল,
‘ এই ছ্যাড়া, তুই থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ছস কেন? এইভাবে কেউ কোনো মেয়েকে প্রপোজ করতে আসে? ‘
‘ বইন যা গরম পড়ছে। ফুল প্যান্ট পড়ে বেরোনোর সাহস পাইনি। সৌধও থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে আসছে। ‘
‘ আরে গাধা ওর ব্যাপার আর তোর ব্যাপার এক হলো নাকি? আজ তোর ম্যারেজ ডে। বউকে উইশ এণ্ড প্রপোজ করতে আসছিস। ‘
‘ ধূরর, প্রবলেম নেই। আমি তো আর কোনো অচেনা মেয়ে বা গার্লফ্রেন্ডকে প্রপোজ করতে আসিনি। এসেছি বউকে প্রপোজ করতে। থ্রি কোয়ার্টার পড়ি, হাফ পড়ি বা কিছু নাই পড়ি তাতে কি আসে যায়। ‘
কথাগুলো বলেই দুষ্টুমি ভরে হাসল সুহাস৷ প্রাচী বিড়বিড় করে বলল,
‘ অসভ্য ছেলে ! ‘
‘ আমার সভ্য বউটাকে কুইকলি পাঠারে জান। ধৈর্যে কুলাচ্ছে না আর৷ ‘
প্রাচীর সংবিৎ ফিরল। পিছনে তাকিয়ে দেখল নিধির উৎসুক চোখ আর নামীর থমথমে মুখ। অমনি ফোন কেটে উত্তেজিত কণ্ঠে বলে ওঠল,
‘ ঐ তো আমার দোস্তটা দাঁড়াই আছে। ‘
প্রাচীর কথা শুনে নামীর হৃৎস্পন্দন যেন লাফাতে শুরু করল। সুহাস এসেছে! আজ তাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী। শুধু ম্যাসেজ করে উইশ নয় সরাসরি দেখা করতেও চলে এসেছে। আবারো কান্না পেয়ে গেল তার। অসম্ভব সে কান্না কেন পেল? খুশিতে কী? এই খুশি কীসের আভাস? তার আর সুহাসের সম্পর্কের মোড় বদলে দেয়ার? নিধির কথায় ধ্যান ভাঙল নামীর।
‘ কোনো ভয় নেই, পুরো এলাকা ম্যানেজ করা আছে আজ। যতখুশি এই চত্তরে দু’জন সময় কাটাও। ‘
প্রাচী ঠোঁট টিপে হেসে বলল,
‘ তুমি রাজি থাকলে আমরা কিন্তু আজ রুম বুকও করে ফেলতাম! ‘
মৃদু কম্পন খেলে গেল নামীর শরীরে। লজ্জায় মস্তক নত হলো কিঞ্চিৎ। নিধি পুনরায় চাপাস্বরে তাড়া দিল তাকে,
‘ কী হলো নামী, ছেলেটা অপেক্ষা করছে তো। ‘
ছেলেটা অপেক্ষা করছে তো। এই বাক্যটি যেন কর্ণে নয় একদম বুকে গিয়ে লাগল নামীর। অতীতে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা, বর্তমানের স্রেফ বন্ধুত্ব সব তুচ্ছ করে কাপড় বদলে, গেটের চাবি নিয়ে ছুটে নিচে চলে গেল৷
গলির মোড়ে গাড়ির ভেতর শুয়ে আছে সৌধ। আজ সে ছোটো কাকার গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে। তাদের বাড়িতে দু’টো গাড়িতে এসি রয়েছে এক বাবা দুই ছোটো কাকা। আজ ছোটো কাকার গাড়ি ফ্রি ছিল। তাই তারটা নিয়েই বন্ধুর বিয়ের প্রথম বছর পালন করতে এসেছে। প্রাচী জানাল নামী নিচে নেমেছে। অর্থাৎ সব ঠিকঠাক। এবার সে আরামসে ঘুম দেবে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আজিজ। সে এলাকার কয়েকটা ছুটকো নেতাদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে। সৌধ গলা উঁচিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল,
‘ এই আজিজ সুহাস গেছে? ‘
‘ হ’রে মাম্মা গেছে। ‘
‘ খেয়াল রাখিস। ‘
আজিজের পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা বলল,
‘ ভাই আপনি চিন্তা না করে চিল করেন। আমরা আছি। ‘
সৌধ বাঁকা হাসল। বিড়বিড় করে বলল,
‘ তোদের না থেকে উপায় আছে? পকেট ভরিয়েছি কি আর এমনি এমনি। ‘
***
গেট খুলে পুনরায় তালাবদ্ধ করল নামী। জড়ীভূত হয়ে দুরুদুরু বুকে তাকাল সুহাসের দিকে। ল্যামপোস্টের আলোয় লম্বাটে দেহটি দেখেই হৃৎস্পন্দন যেন থমকে গিয়েও আবার চঞ্চল হয়ে ওঠল। সুহাস ইশারা করল কাছে যেতে। নামী ধীরে ধীরে এগুতে লাগল। অদ্ভুত এক সম্মোহনে ডুবে রইল সে। নামীর অগ্রগতি দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল সুহাস। ঠোঁট জুড়ে মুচকি মুচকি হাসি লেপ্টে দাঁড়াল রাস্তার মাঝখানে। দীর্ঘ কয়েকমাস যাবত ব্যায়ামের মাধ্যমে তৈরি দেহের বুক টান টান করে সে দণ্ডায়মান রইল। যেন নিজের স্বাস্থ্যের উন্নতি দেখাতে ভীষণ মরিয়া সে। মরিয়া থাকবে না কেন? এসব যে শুধুই নামীর জন্য। তার প্রাক্তনরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বর্তমান লুক দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অরিন তো সেদিন কমেন্টেই বলল,
‘ বলেছিলাম আমি নিয়মিত জিমে যাও। নিজের প্রতি যত্নশীল হও। এবার আমার কথা ফলল তো? কীসে তোমার ভালো, কীসে তোমার মন্দ এই অরিন ছাড়া আর কে বুঝবে? ‘
কমেন্টটা সঙ্গে সঙ্গে ডিলিট করে দিয়েছে সে। এতদিন ম্যাসেন্জারে ব্লক থাকলেও সেদিন সরাসরি ফেসবুক থেকেই ব্লক করেছে। তার এই উন্নতি সব মেয়েদের নজড়ে পড়েছে শুধু নামী ছাড়া৷ এখন পর্যন্ত নামী কোনো প্রকার মন্তব্য করেনি। অথচ সে মুখিয়ে আছে এই মেয়েটার থেকে কিছু শোনার জন্য।
নামী এসে সামনে দাঁড়াতেই প্রকৃতির স্নিগ্ধ বাতাস ছুঁয়ে দিল সুহাসকে। তার কপাল জুড়ে থাকা সিলকি চুলগুলো উড়তে লাগল সে বাতাসে। উড়ল নামীর পিঠ জুড়ে থাকা খোলা চুলও। আচমকা মাথা তুলে আকাশ পানে তাকাল সুহাস। ঘন মেঘে ঢাকা আকাশটায় না আছে চন্দ্র, না আছে নক্ষত্রের মেলা। আকাশের মুখ ভার বুঝতে পেরে দৃষ্টি নামাল। তাকাল নামীর স্নিগ্ধ মুখশ্রীতে। নামী দু’বার পলক ফেলল। সুহাস দেখল ঘন পাপড়ি যুক্ত কাজল কালো চোখ দু’টির নমনীয়তা।ঢোক গিলে ত্বরিত কানের নিচে চুলকে নিয়ে বলল,
‘ তুমি এসেছ? ‘
বোকার মতো প্রশ্নটি করে আপনমনেই গালি দিল নিজেকে। কয়েক পল চোখ বন্ধ করে থেকে মনে করার চেষ্টা করল সৌধ, আইয়াজের শেখানো বুলি গুলো। এরপর চোখ খুলল। নামী একই ভঙ্গিতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে। তাকিয়ে আছে তার পানে। আবারো ঢোক গিলল সুহাস। আপাদমস্তক নামীকে দেখে নিয়ে উদ্যত হলো হাঁটু গেড়ে বসার। আচমকা প্রকৃতির শান্তরূপ অশান্ত হতে শুরু করল। বাতাসের বেগ বেড়েছে। ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে প্রকৃতিতে। আবারো আকাশে চোখ তুলল সুহাস। বলল,
‘ বৃষ্টি আসবে নাকি! ‘
নামী ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। সে নিঃশ্বাসের শব্দে সুহাস তাকাল ওর দিকে। বলল,
‘ শুভ বিবাহবার্ষিকী নামী। ‘
নামীর হাঁটুতে কিঞ্চিৎ কম্পন অনুভূত হলো। নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত রেখে সে বলল,
‘ সেম টু ইউ সুহাস। ‘
ঈষৎ হেসে চারপাশে দৃষ্টি ঘোরাল সুহাস। পকেট হাতিয়ে কিছু একটা বের করে হাত মুঠো করে রাখল। নামী হঠাৎ চমকে ওঠল শরীরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ফোঁটা পড়ায়। বলল,
‘ বাসায় চলে যাও সুহাস বৃষ্টি পড়ছে! ‘
কথাটা বলেই পিছু ঘুরল সে। উদ্যত হলো ফিরে যেতে। সুহাস কিঞ্চিৎ রাগান্বিত হলো এতে। পিছন থেকে হাত টেনে ধরল নামীর। বলল,
‘ এটাত হয় না নামীদামি। বৃষ্টি আসুক, সুনামি আসুক, ভূমিকম্প হয়ে পৃথিবী ধসে পড়ুক। তবু আমি যাব না। আর না তোমাকে যেতে দিব। ‘
নামী বিস্ময় ভরে তাকাতেই সুহাস হ্যাঁচকা টানে ওকে নিজের সম্মুখীন করে দাঁড় করাল। হাতে কিঞ্চিৎ ব্যথা অনুভব করল নামী। বড্ড জোর খাঁটিয়ে ধরেছে ছেলেটা। বুঝেই চাপা গলায় বলল,
‘ এত জোরে ধরেছ কেন? ছাড়ো, যাব না আমি ছাড়ো। ‘
ছেড়ে দিল সুহাস। ততক্ষণে তুমুল বর্ষণ শুরু হয়েছে। গা ভিজে কাপড় লেপটে যাচ্ছে শরীরে। নামী হতভম্ব মুখে তাকিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। আর সুহাস রয়েসয়ে হাঁটু গেড়ে বসল তার সামনে। যদিও সৌধ, সিমরান এটি শেখায়নি তবু নিজ গরজে বসল। অবাক হওয়ার শীর্ষে পৌঁছে গেল নামী। দৃষ্টি কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। সুহাস পলকহীন নামীর সিক্ত মুখের অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘ শত চেষ্টা করেও ভালোবাসি বলতে পারিনি। চাইও না বলতে। লাইফে এত মেয়েদের ভালোবাসি শব্দটা বলেছি যে আসল জনকে বলতে এলেই দ্বিধায় পড়ে যাই। আই লাভ ইউ শব্দটাকে আমি হাঁট, বাজারের জিনিসের মতো সস্তা করে ফেলেছি। তাই হয়তো তোমার মতো মূল্যবান মানুষটাকে ওটা বলতে এত দ্বিধা কাজ করে আমার৷ ভালোবাসি না বলেও ভালোবাসা যায়। আই লাভ ইউ শব্দটি ছাড়াও প্রিয়জনকে প্রপোজ করা যায়। নামীদামি,
ইহজনম এবং পরজনম দু’জনমের জন্যই আমার হৃদয়কে মুঠো ভর্তি করে তোমার তরে সমর্পণ করলাম। ‘
ডান হাত মুঠো বন্দি করে উঁচু করতেই চমকে গেল নামী। এ কোন সুহাসকে দেখছে সে? আজ কোন সুহাস তার সম্মুখে এসেছে? কী বলছে এসব সে? হৃদয়কে মুঠোভরে সমর্পণ এও সম্ভব! দু-চোখ জলে ভরে তা গাল বেয়ে পড়তে লাগল নামীর। মৃদু আলোয় নামীর মুখে সুহাস শুধু বৃষ্টির পানিই দেখতে পেল। বৃষ্টির পানির সাথে চোখের পানিও যে বেরুচ্ছে তা বুঝল তখন যখন নামী ঠোঁট কাঁপিয়ে বলল,
‘ সেই স্বপ্ন দেখিয়ো না সুহাস, যে স্বপ্ন একদিন দুঃস্বপ্ন হয়ে ভেঙে যায়। ‘
সুহাস প্রতিবাদ করে বলল,
‘ ভাঙবে না নামী। ক্যান ইউ ট্রাস্ট মি। ‘
ঝমঝম শব্দে বৃষ্টি পড়ছে। প্রচণ্ড শীত লাগল নামীর। এই শীত শুধু দেহ নয় মনেও পৌঁছে গেল। সুহাস হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করল নামীর এক পা। নামী আঁতকে ওঠে পিছু হাঁটতে নিতেই সুহাস টেনে ধরল। বোঝাল পা উঁচু করতে সে কোনো বাঁধা শুনবে না আজ। নামী থেমে গেল৷ অবাধ্য হতে ইচ্ছে করল না আর। আজ যেন তার বাধ্য হওয়ার দিন। সুহাসের বাধ্য বধূ রূপে ধরা দেয়ার দিন৷ সুহাস নিজের হাঁটুর ওপর নামীর পা তুলে ভেজা পাজামা একটু উপরে তুলল। এবারে ভয়ানক লজ্জা পেল নামী। কী করছে এসব সুহাস? বোধগম্য হলো না তার। সুহাস অতি যত্ন নিয়ে বা হাতে থাকা একটি রূপোর পায়েল পরিয়ে দিল পায়ে। বলল,
‘ গার্লফ্রেন্ডদের প্রপোজ করলেও বউকে প্রপোজের ব্যাপারে বড্ড আনাড়ি আমি৷ তাই কীভাবে কী করব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ প্রাচী একটা গানের ভিডিয়ো পাঠাল। হিরো হিরোইনকে এভাবেই পায়েল পড়াচ্ছিল। তাই এভাবেই ট্রাই করলাম। ‘
কথাগুলো বলেই ওঠে দাঁড়াল সুহাস। বৃষ্টিতে ভেজা নামীর অধরকোণে তাকিয়ে পুনরায় বলল,
‘ স্বীকৃতি দেইনি বলে যে বিয়েটা আড়ালে পড়ে আছে। তা আমি প্রকাশ্যে আনতে চাই। কেন জানো? তোমার আশপাশে ওকে সহ্য করতে পারছি না। কেন পারছি না জানো? বিকজ ইউ আর মাই ওয়াইফ৷ মিসেস. সুহাসিনী। ‘
‘ ও ‘ শব্দটায় ভড়কে গেল নামী। কার কথা বলছে সুহাস? নামীর মুখো ভঙ্গি দেখে ফিচেল হাসল সুহাস। বলল,
‘ কুশলের থেকে দূরে থাকবে। ওকে জানিয়ে দেবে ইউ আর ম্যারেড, এণ্ড আ’ম ইউর হাজব্যন্ড। ‘
মুখ হা হয়ে গেল নামীর। কুশল তার ক্লাসমেট, ভালো বন্ধুও। গতমাসে হুট করেই প্রপোজ করে বসে ছেলেটা। বিষয়টা খুবই গোপনে ঘটেছে। তবু সুহাস জেনে গেছে সবটা। তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে গেল নামী। বলল,
‘ আসলে ব্যাপারটা। ‘
‘ আসলে, নকলে শুনতে চাই না। যা বললাম মাথায় রাখবে। ‘
উত্তর দিল না নামী। সুহাস এ প্রসঙ্গে আর কথা বলল না। আপাতত নামীকে নিয়ে উথাল-পাতাল বৃষ্টিতে গা ভেজাতে ইচ্ছে করল। দুলতে ইচ্ছে করল প্রগাঢ় প্রণয় তরঙ্গে। যে ইচ্ছেটাকে উস্কে দিল আকস্মিক বজ্রপাত ঘটে ল্যামপোস্টের বাতি নিভে গিয়ে। নামী অন্ধকার ভয় না পেলেও বজ্রপাত ঘটে বাতি নিভে যাওয়ার ভীত হলো। আতঙ্কিত স্বরে ডাকল,
‘ সুহাস! ‘
তৎক্ষনাৎ মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে শুকরিয়া জানিয়ে নামীর হাত চেপে ধরল সুহাস। কণ্ঠে গভীরতা মিশিয়ে বলল,
‘ এই তো। ‘
হৃৎস্পন্দন থেমে গেল নামীর। ঘুটঘুটে অন্ধকারে মাথা ভনভন করতে লাগল। অন্ধকার, তুমুল বর্ষণে সুহাসের হাতের স্পর্শে যেন আরো গভীরতা মিশে রইল। টের পেল নামী। দুরুদুরু বুকে কম্পিত কণ্ঠে বলল,
‘ বাসায় যাব, ফিরে যাও তুমি। ‘
‘ যাব তো। ‘
সহসা ভেজা, উত্তপ্ত নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ল নামীর মুখশ্রীতে। শিউরে ওঠে পিছুটান দেওয়ার চেষ্টা করল নামী৷ টের পেয়ে এক হাতে ওর কটিদেশ বেঁধে ফেলল সুহাস। উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে ভারিক্কি স্বরে বলল,
‘ ডোন্ট মুভ নামী। ‘
নামী শুনল না। শক্তি প্রয়োগ করল খুব। সুহাস অনড় হয়ে নামীর কপালে অধর স্পর্শ করে পুনরায় বলল,
‘ ডোন্ট মুভ জান। ‘
শরীর জুড়ে ঝংকার খেলে গেল নামীর। দু’হাতে সুহাসের বাঁধন আলগা করার চেষ্টা করে কাঁপা গলায় বলল,
‘ আমরা রাস্তায় আছি সুহাস। কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ। ‘
এ কথায় ক্ষেপে ওঠল সুহাস। হাতের বাঁধন দৃঢ় করে নামীর নাকে নাক ঠেকাল। ঠোঁটের কাছাকাছি ঠোঁট নিয়ে বলল,
‘ আর কত কন্ট্রোল করব? কন্ট্রোলে আছি বলেই বিয়ের এক বছর পরও তুমি স্টিল ভার্জিন। ‘
‘ কী আশ্চর্য পাগলামি করছ কেন? ‘
‘ চুপপ, জাস্ট দু’মিনিট। ‘
‘ মানে! ‘
‘ কিস অন দ্য লিপ। ‘
‘ সুহাস… ‘
‘ অনুমতি দেবে না? ভেবে বলো। আমি অতটা ভদ্র নই যে অনুমতি না দিলে খালি মুখে ফিরে যাব৷ জোর করেই কিস করে দিব৷ এমন ভাবে করে দিব দুদিন কাউকে মুখ দেখাতে পারবে না। ‘
‘ ছিঃ ‘
মুখ ঝামটা মেরে দিল নামী। সুহাস বলল,
‘ তার মানে তুমি অনুমতি দেবে না? ‘
নামী কড়া গলায় বলল,
‘ না। ‘
‘ অর্থাৎ কঠিন চুমু চাচ্ছ? গোটা এক বছর জমিয়ে রাখা বিধ্বস্ত চুমুর বর্ষণ? ‘
হৃৎস্পন্দন ধড়াস ধড়াস শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠল। নামী আর শক্তি প্রয়োগ করছে না। আর না সুহাসের থেকে ছোটার আকুতি জানাচ্ছে। সুহাস অনুভব করল নামীর শরীর শীতল আর নরম হয়ে এসেছে। নিঃশ্বাসে বেড়েছে গভীরতা। আর অনুমতির অপেক্ষা করল না সে। কিন্তু অনুমতি না দেয়াতে শাস্তি দিল ঠোঁটে ঠোঁটে উত্তপ্ত ঘর্ষণে। মৃত্তিকা ভিজল আকাশ চেড়া বর্ষণে। কোনো এক নারীর কোমল ঠোঁটজোড়া ভিজল কোনো এক পুরুষ ঠোঁটের উত্তপ্ত চুমু বর্ষণে। দু’জোড়া হৃদয়ও ভিজে ওঠল হৃদয় চেড়া বর্ষণে। আজ যেন উথাল-পাতাল বর্ষণে শান্ত আকাশ, উত্তপ্ত মাটি, তৃষ্ণার্ত হৃদয় সমস্তই ভিজিয়ে তোলার দিন৷