বারিধারায় আচ্ছন্ন ভিজে যাওয়া গাছগুলোর পাতা থেকে টপটপ করে নিচে পড়া পানির ফোঁটা, হালকা বাতাসে গাছের পাতাগুলো হেলেদুলে যাওয়া সবকিছুই নিবিষ্ট চোখে দেখছে পরী। জানালার গ্রিলটাও বৃষ্টিতে ভিজে আছে। সেই ভেজা গ্রিলের ওপর হাতের কনুই রেখে তাতে থুতনি ভর দিয়ে বাইরের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছিল। সাথে ভাবছিল অল্প সময়ে ঘটে যাওয়া কাহিনীগুলোর কথা। আগের সময়টায় আর এখনকার সময়টায় যেন বিস্তর ফারাক। সময়টা বুঝি আগেই ভালো ছিল।
সেদিন রাতেই প্রান্ত ওর পরিবার নিয়ে বাড়িতে এসেছিল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। প্রথমে পরীর বাবা-মা আপত্তি জানালেও পরবর্তীতে প্রান্তর বাবা-মা ও ভাইয়ের ব্যবহার ও কথাবার্তায় তারা মুগ্ধ হয়ে যায়। প্রকৃত অর্থে যে অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ওপর প্রান্তর কোনো হাত নেই সেটা তারা নিজেরাও জানেন। এদিকে তারা পরীর মতামত না নিয়ে কিছু বলতেও পারছিলেন না। তাই সহজ উত্তরে বলে দিয়েছিলেন বিষয়টা তারা ভেবে দেখবেন। এছাড়াও এত তাড়াতাড়ি পরীকে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে নেই তাদের। এ কথার পর জোর মতো কোনো জায়গা খুঁজে পায়নি প্রান্ত। তবে হালও সে ছেড়ে দেয়নি। ওরা চলে যাওয়ার পর রেহেনা বেগম প্রান্তর সাথে বিয়ের কথা বললে পরী সটান না করে দেয়। কী ভেবে যেন তিনি নিজেও পরীকে আর এই বিষয়ে জোর করেননি আর কাউকে জোর করতেও দেয়নি।
ফোনের রিংটোনে বাইরের প্রকৃতি থেকে চোখ তুলে বিছানায় রাখা ফোনের দিকে তাকায় পরী। এই সময়টায় ফোনটা তুলতেও ভীষণ আলসেমি লাগছে। উঠতেও ইচ্ছে করছে না এখান থেকে। আর ঐদিকে ফোনটা বেজে চলেছে তো বাজছেই। থামার কোনো নাম নেই। বিরক্ত হয়ে না পেরে শেষমেশ উঠে ফোনের কাছে যায়। ততক্ষণে কলটা আবার কেটে যায়। ফোন হাতে নিতেই আবার কল আসে তুর্যর নাম্বার থেকে। তার মানে এতক্ষণ তুর্যই ফোন দিচ্ছিল। মনটা খুশিতে নেচে উঠলেও পরক্ষণেই আবার বিষণ্ণতায় ছেয়ে যায়। পরী তো জানিয়ে দিয়েছেই প্রান্তকে রিজেক্ট করার কথা। এবং তারপর থেকে তুর্য কোনো ফোন বা ম্যাসেজও করেনি। এখন তাহলে আবার কী দরকারে ফোন করল? প্রয়োজন ছাড়া তো পরীকে তার স্মরণে পড়ে না।
ফোনটা আবার বাজতে বাজতে কেটে গেল। পরেরবারে ফোন রিসিভ করল পরী। এতবার কল দেওয়ার পর রিসিভ করায় ভেবেছিল দু, চারটা ধমক বা বকা বুঝি খাবে। কিন্তু তুর্য এমন কিছুই করেনি। খুবই শান্তস্বরে বলে,
“এতক্ষণ ফোন দিচ্ছিলাম! ঘুমুচ্ছিলে নাকি?”
“না।“
“কী করছ এখন? ফ্রি তুমি?”
“কেন?”
“বলো।“
“হুম ফ্রি।“
“একটু দেখা করতে পারবে এখন?”
দেখা করার কথা শুনে পরী ভ্রু কিঞ্চিৎ বাঁকা করে ফেলল। মুখভঙ্গি তেমন রেখেই জিজ্ঞেস করল,
“কী দরকারে?”
“তেমন কিছুই না। এমনিই একটু সময় কাটাতাম।“
পরীর ইচ্ছে করছে মুখের ওপর না করে দিতে। যার জীবনে দরকার কোনো মূল্যই নেই তার ডাকে কেন সাড়া দিতে যাবে? কিন্তু ঐযে বেহায়া মন! যার কাছে বারবার হার মানতে হয় পরীকে। এবারও তার ব্যতীক্রম হলো না। মনকে জিতিয়ে দিয়েই পরী উত্তর দিল,
“ঠিকাছে।“
তুর্য কিছুটা খুশি হয়েই বলে,
“তুমি একা লেকে আসতে পারবে? নাকি আমি গিয়ে নিয়ে আসব?”
পরী দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৪:০২ বাজে। পরী বলে,
“আমি একাই আসতে পারব।“
“আচ্ছা আমি লেকেই আছি। তুমি আসো।“
“আচ্ছা রাখছি।“
ফোনটা রেখে পরী ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়ায়। এই মুহূর্তে পরীর পরনে একটা লং টি-শার্ট আর প্লাজো। আলমারি খুলে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় কোন জামাটা পরে যাবে। ভাবতে ভাবতেই কালো কালার একটা থ্রি পিছ পরে চুলটা আঁচড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে লেকের উদ্দেশ্যে।
রিক্সায় চলছে আপনগতিতে। হালকা বাতাসে পরীর ছেড়ে রাখা চু্লগুলো উড়ছে। কিছু অবাধ্য চুল চোখেমুখে এসে পড়ছে। আকাশ এখনো মেঘলা। বৃষ্টির আভাস এখনো আছে। লেকের কাছে এসে ভাড়া মিটিয়ে পরী তুর্যকে ফোন দেয়। তুর্য ফোন রিসিভ করে বলে,
“এসেছ?”
“হ্যাঁ। আপনি কোথায়?”
“সোজা হাঁটতে থাকো। আমি এগোচ্ছি।“
“আচ্ছা।“
ফোন কেটে পরী এগোতে থাকে। আশেপাশে অনেক কপোত-কপোতী দেখা যাচ্ছে। পরীর মনটা কেন জানি ভীষণ বিষণ্ণ লাগছে। কোনো আনন্দ খুঁজে পাচ্ছে না। এটা কি তুর্যর ওপর জমিয়ে রাখা অভিমান? নাকি অন্যকিছু? ভাবতে ইচ্ছে করছে না। মাথা ধরে আসে শুধু শুধু। অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটতে হাঁটতেই সামনে তুর্যকে চোখে পড়ে। তুর্য হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়ে কাছাকাছি এসে পরীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ঘটনায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পরী। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। জমে যাওয়া বরফের মতো স্থির পরী। হার্টবিট কি থেমে গেছে! মুখ দিয়ে কোনো কথাও বের হচ্ছে না। শরীর শিউরে ওঠেছে। প্রতিটি লোমে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। পিঠের মেরুদণ্ড বেয়ে শিহরণের স্রোতধারা ওঠানামা করছে।এটা স্বপ্ন নাকি সত্যি! কী হচ্ছে এসব।
অনেক কষ্টে পরী কাঁপা কাঁপা স্বরে শুধু এতটুকুই বলে,
“কী করছেন!”
তুর্য পরীকে ছেড়ে দিয়ে ডান হাতের তর্জনী নিজের ঠোঁটের ওপর রেখে বলে,
“চুপ! কোনো কথা বলবে না।“
এরপর পরীর হাত ধরে এগোতে থাকে সামনের দিকে। পরী অবাক হয়ে শুধু তুর্যর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটছে। এটা কোন তুর্য? এমন কেন করছে! মাথা কাজ করছে না পরীর। তুর্যর ধরে রাখা হাতের দিকে তাকাচ্ছে পরী। কতটা শক্ত করে আগলে ধরেছে যেন ছেড়ে দিলেই দৌঁড়ে পালাবে পরী। তবে কি তুর্যও ভালোবাসে আমায়!
মানুষের আনাগোনা কম এমন জায়গায় নিয়ে দাঁড় করায় পরীকে। পরীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরীর একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বলে,
“আমায় বিয়ে করবে?”
পরী ডান হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে অতি উত্তেজনায়। চোখের পানি ছলছল করছে। যাকে এতটা ভালোবাসে সেই মানুষটা নিজেই বিয়ের কথা বলছে। বাস্তব এতটা সুন্দর ও সত্যি কী করে হতে পারে! তুর্যর ফোন আসে ঠিক তখন। পরী তখনো একটা ঘোরের মধ্যে। তুর্য পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করে। ওপাশ থেকে কী বলল তা শোনা যায়নি। তবে তুর্য বিরক্ততিতে বলে ওঠে,
“শিট!”
তখনই পরী ঘোর থেকে বের হয়। চোখের কোণে জলের বিন্দু এবং ঠোঁটের কোণে তখনও আনন্দমিশ্রিত হাসি পরীর।
তুর্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“স্যরি, স্যরি পরী! জড়িয়ে ধরা, হাত ধরা এসবের জন্য স্যরি। আমি আসলে রিনিকে জেলাস ফিল করাতে চেয়েছিলাম। রিনিকেও ডেকেছিলাম এখানে এক বন্ধুকে দিয়ে। ভেবেছিলাম ও জেলাস হয়ে এসে আমায় গালাগালি করবে বা বকবে। তখন সত্যিটা বলে সব ঠিক করে নেব। কিন্তু ও এসব দেখে চলে যাচ্ছে। বন্ধু ফোন দিয়ে এটাই বলল। আমি যাই এখন কেমন। আর স্যরি প্লিজ।“
তুর্য একদমে কথাগুলো বলে দৌঁড়াতে থাকল। পেছনে তাকিয়ে জোরে জোরে হাঁটতে হাঁটতেই আবার বলল,
“তুমি কিছু মনে কোরো না প্লিজ।“
পরী তুর্যর যাওয়ার পানে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণ যা ছিল সব নাটক! আনন্দের অশ্রুগুলো এবার কষ্টে পরিণত হলো। কতটা কষ্ট ঠিক কতটা কষ্ট হচ্ছে সেটা বোধগম্য পরীর নিজেরই হচ্ছে না। মানুষ কী করে পারে কারো ইমোশন নিয়ে এমন নাটক করতে? আমি কি তবে শুধুই তুর্যর প্রয়োজন!
পরী আর স্থির থাকতে পারে না। হেলে পড়ে যেতে নিলে একটা ছেলে পাশ থেকে ধরে ফেলে। পরী অশ্রুশিক্ত চোখে তাকিয়ে দেখে কাপল। পাশের মেয়েটা বলে,
“আপনি ঠিক আছেন আপু? কোনো সমস্যা?”
পরী ডান হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে বলে,
“না আপু।“
চোখের পানি মুছতে মুছতেই পরী হাঁটতে থাকে। সবাই তাকাচ্ছে ক্রন্দনরত পরীর দিকে। যারা এতক্ষণ তুর্যর সাথে পরীকে দেখেছে তারা নিশ্চয়ই এখন অবাক হচ্ছে পরীকে কাঁদতে দেখে। কয়জনই বা খেয়াল করেছে! সবাই তো তার প্রিয় মানুষটির সাথে সুন্দর কিছু মুহুর্ত কাটাতে ব্যস্ত। পরীর চোখের পানি বাঁধ মানতে চাইছে না। লোকজনের উৎসুক বাঁকা দৃষ্টি পড়ছে পরীর ওপর। পরী হাজার চেয়েও কান্না থামাতে পারছে না। বুক ফেঁটে কান্না পাচ্ছে।
পরী লেকের পাশে একটা ফাঁকা বেঞ্চিতে বসে। দু’হাতে মুখ লুকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদে। পরীর ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। কিন্তু এটা সম্ভব নয়। আল্লাহ্ বুঝি এই মুহুর্তে পরীর প্রতি সদয় হলেন। মেঘলা আকাশ কালো অন্ধকারে ঢেকে গিয়ে ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি নামতে শুরু করে। বড় বড় ফোঁটা দুনিয়ার জমিতে পড়ার সাথে সাথেই মানুষজন চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। শুধু বসে থাকে পরী একা। এখন আর চোখের পানিগুলো আড়াল করতে হবে না। পরী এবার ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠে। একটা ছোট বাচ্চা ছেলে ভাঙা ছাতি মাথায় দিয়ে পরীর কাছে আসে। ছেলেটার পরনে ময়লা একটা গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট। এক হাতে কিছু চিপস ও বাদামের প্যাকেট।ছেলেটা ভাঙা ছাতা পরীর দিকে ধরে বলে,
“আপা আপনে বৃষ্টিতে ভিজেন ক্যান? ছাতা আনেন নাই?”
পরী নিশ্চুপে চোখের পানি ফেলে তাকিয়ে থাকে। ছেলেটা আবার বলে,
“আপা ছাতা না থাকলে আপনে আমার ছাতা লইয়া যান। বৃষ্টিতে ভিইজেন না। জ্বর আইব।“
কষ্টের মধ্যেও পরী হেসে ফেলে। কষ্টমিশ্রিত হাসি! পরী ভেজা হাতে ছেলেটার গাল ছুঁয়ে বলে,
“তুমি ভিজলে জ্বর আসবে না?”
“আমগো অভ্যাস আছে আপা।“
পরী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছেলেটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“আমার ছাতা লাগবে না সোনা। আমি ইচ্ছে করেই ভিজছিলাম।“
তারপর ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে ওর হাতে ধরিয়ে দেয়। টাকাগুলো অনেকটাই ভিজে গেছে। পরী উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে,
“বাসায় যাও।“
পরী বাড়ির দিকে রাস্তা ধরে হাঁটে। দুনিয়ার মানুষগুলো ভীষণ অদ্ভুত! যাকে এতগুলো দিন ধরে চিনি তার কাছে আমি শুধুই প্রয়োজন। আর এই ছোট বাচ্চাটা! যে আমায় চেনে না, কখনো দেখেওনি তার আমায় নিয়ে চিন্তা। মানুষে মানুষে এত বিভেদ কেন হয়?
পরীর থেকে কিছুটা দূরে একটা বাস থামে। বাস থেকে ছাতা হাতে নেমে আসে তুর্য। পরীর কাছে এসে ছাতাটা দুজনের মাথায়ই ধরে বলে,
“আরে তুমি এখনো বাড়িতে যাওনি? বৃষ্টিতে কেন ভিজছ?”
পরী ভাষাহীন দৃষ্টিতে তুর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। পরীর মুখে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো গাল, নাক, ঠোঁট গড়িয়ে চিবুকে পড়ছে। পরীকে চুপ দেখে তুর্য বলে,
“কিছু বলো!”
পরী নির্লিপ্ত উত্তরে বাঁকা হেসে বলে,
“বলব! অনেক কিছুই বলার আছে আমার আপনাকে।“
এরপর আর কিছু না বলেই তুর্যর হাত ধরে হাঁটতে থাকে। পরীকে কোনো প্রশ্ন করেও উত্তর মেলে না। লেক থেকে তুর্যদের এলাকা কাছেই। হেঁটে যেতে ১০ মিনিটের মতো লাগে। এই ১০ মিনিট কোনো প্রকার কথা না বলেই তুর্যর হাত ধরে হাঁটতে থাকে। প্রান্ত যেই ক্যারাম-বোর্ডের দোকানে থাকে সেই দোকানের থেকে কিছুটা দূরে এসে তুর্যর হাত ছেড়ে দেয়। কড়া দৃষ্টি তুর্যর দিকে নিক্ষেপ করে বলে,
“আপনি খুব ভালো একটা মানুষ। এতে সত্যিই আমার কোনো সন্দেহ নেই। আপনাকে চোখ বন্ধ করেও যে বিশ্বাস করা যায় এটাও আমি জানি। কিন্তু আপনার মানসিকতা ভীষণ কঠিন আপনি জানেন সেটা? আপনি কী করে পারলেন আমার ইমোশন নিয়ে এমন নাটক করতে? আমি আপনার কাছে যে শুধুই প্রয়োজন সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি আমি। আচ্ছা একটা কথা বলেন তো, আপনি কি সত্যিই কখনো বোঝেননি আমি আপনার ওপর দূর্বল? বুঝেছিলেন নিশ্চয়ই। আর ঠিক এজন্যই আপনি আমায় বারবার ব্যবহার করেছেন। কখনো বোনের ভালোবাসা বাঁচানোর জন্য আবার কখনো বা নিজের ভালোবাসা বাঁচানোর জন্য।“
এইটুকু বলে পরী একটু দম ছাড়ে। তারপর আচমকাই তুর্যর শার্টের কলার চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“আমিও একটা মানুষ! আমার ইমোশনেরও দাম আছে। কিন্তু কারো প্রয়োজন মেটানোর জন্য জন্ম আমার হয়নি। আপনার কাছে যদি আমি শুধু ফেলনাই হই তাহলে দেখে নিন এই ফেলনা ঠিক কতটা কঠিন হতে পারে। আজকের এই নাটকটা আপনি না করলেও পারতেন। নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছেন আমায় নিয়ে এভাবে মজা করে।“
তুর্য পরীর হাত শার্ট থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
“আমি স্যরি পরী! আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি তুমি এতটা হার্ট হবে।“
পরী ঝাঁকি দিয়ে তুর্যর থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
“চুপ! একদম চুপ। আমি আর আপনার কোনো কথাই শুনতে চাই না। আর না আপনাকে কিছু বলতে চাই। যা বলার তা আমি কাজে করে দেখাব। আজ, এই মুহূর্তে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম প্রান্তকে বিয়ে করার!”
পরী চোখের পানি মুছতে মুছতে হাঁটতে থাকে। পেছন পেছন তুর্য অনেকবার ডাকলেও পরী থামেনি। তাই বাধ্য হয়ে তুর্য নিজেও পরীর পেছনে পেছনে যায়। পরী দোকানে গিয়ে দেখে প্রান্ত ক্যারাম খেলছে। পরীকে ভেজা অবস্থায় দেখে প্রান্ত অস্থির হয়ে বলে,
“এই তুমি ভিজে এসেছ কেন? কী সমস্যা? কোনো দরকার? ছাতা আনোনি কেন?”
পরী প্রান্তর কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই বলে,
“আজই আপনার পরিবার নিয়ে আমার বাসায় আসবেন।আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি।“
ঠিক তখনই তুর্য এসে দাঁড়ায় পেছনে। পরীর প্রতিটা কথা তুর্যর কানে গেছে। পরী প্রান্তকেও আর কিছু বলতে না দিয়ে তুর্যর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যভাবে হেসে একটা রিক্সায় উঠে পড়ে।