মাঝরাত, প্রকৃতিতে ছড়িয়ে আছে ঘন অন্ধকার। সাথে হালকা কুয়াশা, ডেকে আনছে শীতের আভাস। তবে আকাশটা ঝকঝকে। জোছনা নেই তবুও উজ্জলতা বিদ্যমান। সময়টা দুই’টার কাছাকাছি। সাদাফ বিরতিহীন পা ফেলে হাটছে। হাতে সিগারেট, কখনো বাতাসের সংঘর্ষে জ্বলে যাচ্ছে, কখনো বা মুখে টেনে জ্বালিয়ে শূন্যে ধোঁয়া ছাড়ছে।
হাতমুখ ধুয়ে সাদাফ ঘরে এসে দেখলো মশারির এক কোণা খুলে মেয়েটিকে বসতে দিয়েছে নুরু মিয়া। আর সে বসেছে একসাথে করে রাখা প্লাস্টিকের ডবল চেয়ারে। গামছায় হাত মুখ মুছতে মুছতে সে বললো, “কত এনেছো?” “যা পাওনা আছো, তার চেয়েও বেশি।” “বেশির দরকার নেই। ন্যায্যটুকু হলেই চলে। দাও…” নুরু
কাপড়ের ব্যাগের এক কোণে পলিথিনে মোড়ানো দুইটা রুটি আছে। এখানে আসার পথে তিনটা কিনেছিলো, একটা খাওয়া হয়েছে দুইটা রয়ে গেছে। পঞ্চাশ টাকা বাঁচিয়ে সেখান থেকে একটা রুটি দিয়েই নাস্তা সেড়ে নেওয়ার কথা ভাবলো। পানি পানের জন্য খালি বোতলটা নিয়ে বাথরুমে গেলো।
নাস্তা করে বের হয়ে দাবা ঘরের দিকে যাচ্ছিলো সাদাফ। পথে চায়ের দোকান থেকে ডাকলো রাজীব সরকার। তার গ্রামের বাড়ির একটা মামলার কথা জানিয়েছিলো দু’সপ্তাহ আগে। শহুরে কোনো পার্টির কাছে ভালো দামে বিক্রি করতে চান তিনি। সাদাফকে বলেছে একটা ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য।
“কি কাজ?” “আমার সাথে একটু শপিংমলে যেতে পারবেন?” “শপিংমলে আমার কি কাজ?” “গেলেই তো দেখবেন। আপনার সময় হবে কি না সেটা বলেন।” “কোন মলে?” দিশা রিকশায় একপাশে চেপে বসতে বসতে বললো, “রূপসা টাওয়ারে।” সাদাফ বিনা সংকোচে, বিনা দ্বিধায় রিকশায় উঠে বসলো।
“কে? কে এখানে?” কোনো সাড়া নেই। কয়েক সেকেন্ড পর বাথরুমের দরজার শব্দ হলে কিছুটা নিশ্চিত হয়ে দরজা খুললো। কারণ চোর ডাকাত হলে তো আর বাথরুমে আসবে না। পরক্ষণে সাদাফকে বাথরুমে হাতমুখ ধুতে দেখে সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো এবং বললো, “খাবার আপনার ঘরে…” “হুম? আমি এখন খাবো না।”
সাদাফ খাটের একপাশে বসে আছে। দিশা তার ঠিক সামনেই, রুমের ফাঁকা জায়গাটার মাঝামাঝিতে দাঁড়িয়ে বললো, “আমি ভাবতেও পারিনি আজ আপনি আসবেন। তবে খুশি হয়েছি বেশ। হঠাৎ কি কারণে এসেছেন জানতে পারি? না মানে বাবার কাছেই এসেছেন নাকি আমার বিয়ের উদ্দেশ্যে আসা?” “আপনার বাবার কাছে এসেছি।” “ওহ্।
পরদিন সকালে তাকে বেতন দেওয়া হলো চার হাজার টাকা। থাকার জায়গা, খাওয়াদাওয়ার পরও চার হাজার টাকা পেয়ে ভীষণ খুশি শ্রাবণ। সে বুঝতে পারছে, এখন সাদাফের কাছে বোধহয় ভালো টাকা আছে তাইতো এতো দিলো। সাদাফ বেরিয়ে যাওয়ার পর শ্রাবণও বের হলো বাজারের উদ্দেশ্যে। এদিকের পথঘাট তার অচেনা।
এতোক্ষণ চিন্তায় চিন্তায় সময় কাটিয়ে অবশেষে দুপুরে ভাত খাওয়ার জন্য ডাকলো শ্রাবণ। কয়েকবার দরজায় টোকা দেওয়ার পর সাদাফ সাড়া দিয়েছে। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললো, “কে?” “আমি, শ্রাবণ। ভাত খাবেন না? বিকেল হয়ে যাচ্ছে যে।” “খাবো না।” “সকালেও খেলেন না ঠিকমতো, এখনো না খেয়ে এভাবে কতক্ষণ থাকবেন!”
সাদাফ রেগে প্লেট রেখে নেমে গেলো বিছানা থেকে। চোখ মুখ যেন লাল হয়ে এসেছে তার। শ্রাবণ হুট করে হাত ধরে ফেললো এবং বললো, “কোথায় যাচ্ছেন, ভাত খেয়ে যান।” সাদাফের যেন এদিকে কোনো ধ্যানই নেই। সে হাত হেচকা টানে ছাড়িয়ে নিয়ে খালি পায়ে বেরিয়ে গেলো।