মুগ্ধ দেখলো তিতির অডিওটা সিন করেছে। যাক তাহলে নিশ্চই শুনছে এখন। শুনে হয়তো কাঁদছে, কিন্তু শান্তি তো পাচ্ছে! এটাই অনেক। ও কি একটা টেক্সট করবে? তিতির নিশ্চই রিপ্লে দিবেনা। তখন খারাপ লাগবে। এসব ভেবেও টেক্সট একটা করেই ফেলল,
“তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে।”
প্রায় সাথে সাথে মেসেজটা সিন করলো তিতির, কিন্তু রিপ্লে দিলনা। মুগ্ধ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলো শুধু একটা রিপ্লে আসার জন্য। কিন্তু এলনা।
সারারাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে গানটা শুনলো তিতির। শুনতে শুনতে ভাবছিল ওদের প্রথম পরিচয়ের কথা। আহা! কি মিষ্টিই না ছিল মুহূর্তগুলো!!!
তিতিরের সাথে মুগ্ধর পরিচয়টা খুব অন্যরকমভাবে হয়। আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগে “ট্রাভেলারস অফ বাংলাদেশ” এর একটা ইভেন্টে এটেন্ড করেছিল ওরা দুজনেই। ইভেন্টটা ছিল বান্দরবানে “নাফাখুম ট্যুর।”
তিতির এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফ্রি বসে ছিল। আর মুগ্ধ মাস্টার্স লাস্ট সেমিস্টারে উঠেছিল কেবল! ওটা ছিল তিতিরের সেকেন্ড ট্যুর উইদাউট ফ্যামিলি। প্রথমবার ফ্রেন্ডদের সাথে সিলেট গিয়েছিল এইচএসসি সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে। তিতির অবশ্যই খুব ভাগ্যবতী যে ওর ফ্যামিলি ওকে সব ধরনের স্বাধীনতা দিত যা অন্য অনেক মেয়েরা আজও পায়না।
“বাংলালিংক বাংলার পথে” নামক একটা টিভি প্রোগ্রামে ট্রাভেলর টিংকু চৌধুরী বান্দরবানের এক অপার সৌন্দর্যময় জলপ্রপাত নাফাখুমকে দেখিয়েছিল। তা দেখেই তিতিরের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল ওখানে যাওয়ার জন্য। তার কিছুদিন পরই ট্রাভেলারস অফ বাংলাদেশের ফেসবুক পেজে নাফাখুম ট্যুরের একটা ইভেন্ট দেখতে পেল। সাথে সাথে বাবা কে দেখালো, বাবা একটু দোনোমনা করছিল কিন্তু ভাইয়া বলল,
-“ওকে যেতে দাও বাবা। ট্রাভেলারস অফ বাংলাদেশ অনেক সেফ একটা গ্রুপ! আমার তখন ফাইনাল পরীক্ষা চলবে নাহলে আমিও যেতাম। তুমি চিন্তা করোনা তো, আমি জানি আমার বোন যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে, তাছাড়া যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে সে সেভ করতে জানে, এন্ড দ্যাটসওয়াই আম প্রাউ অফ হার!”
সময়টা ছিল নভেম্বর মাস, শীতের শুরু। রাত ১০ টায় বান্দরবানের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়বে। ভাইয়া আর বাবা এসে ওকে বাসে তুলে দিল। ওকে দিতে এসে বাবা আরও চিন্তায় পড়ে গেল কারন, ইভেন্টে সবার সাথেই তাদের ফ্রেন্ডস, কাজিনস আছে কিংবা রিলেটিভস আছে, শুধু তিতিরের সাথেই কেউ নেই। তিতিরের অবশ্য এতে নিজেকে আরো ফ্রি ফ্রি লাগছিল। বাবা আর ভাইয়া ইভেন্ট ডিরেক্টর সাফি আর দোলা বলে গেল যাতে তারা ওর খেয়াল রাখে।
দোলা তিতিরকে ওর সিট দেখিয়ে দিল। তিতির বলল,
-“আপু, রেজিস্ট্রেশনের সময় আমি বলেছিলাম যে আমি জানালার পাশে সিট চাই এট এনি কস্ট!”
দোলা চিন্তায় পড়ে গেল। বলল,
-“সেকি! তোমার রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী এই সিটটাই তো তোমার! আচ্ছা, এই সিটটা যার সে আসুক আমি তার সাথে কথা বলে দেখি!”
তিতির হেসে বলল,
-“ওকে আপু, থ্যাংকস!”
দোলা চলে গেল। শীতের মৃদুমন্দ বাতাসে তিতিরের হালকা শীত করছিল, কিন্তু জানালাটা বন্ধ করতে ইচ্ছে হলোনা। তাই ওড়নাটা মাথায় পেঁচিয়ে নিল। সিটটা এলিয়ে আধশোয়া হয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইল। ওড়নায় ওর মুখটা ঢাকা। ওর যে কি ভাল লাগছিল তা বলে বোঝানোর মত না। খুব ফ্রি লাগছিল নিজেকে! আগামী ১০ দিন ও একটা অন্য জগতে থাকবে। ওর স্বপ্নের জগৎ! যেখানে থাকবে শুধু প্রকৃতি, শুধু সৌন্দর্য। যেখানে থাকবে না কোন নাগরিক কোলাহল! হঠাৎ একটা ডাক ওর ভাবনার রাশ টেনে ধরল,
-“স্কিউজমি!”
ও তাকাতেই দেখতে পেল একটা ছেলে ব্যগপ্যাক হাতে দাঁড়িয়ে! ও তাকাতেই স্বাভাবিকভাবে বলল,
-“আপনার পাশের সিটটা আমার, আমি কি বসতে পারি?”
তিতির ছেলেটার ম্যানার্স দেখে মুগ্ধ হলো। কিন্তু তারপর হঠাৎই খেয়াল হলো ওর পানির ফ্লাস্কটা পড়ে ছিল পাশের সিটে, ম্যানার্সের কিছু না ছেলেটা ভদ্রভাবে ওর পানির ফ্লাস্কটা সরাতে বলছে। ও ফ্লাস্কটা সরিয়ে বলল,
-“সিওর, বসুন।”
-“থ্যাংকস।”
ছেলেটা নিজের ব্যাগপ্যাক উপড়ে উঠিয়ে দিয়ে বসল। তিতির মনে মনে ভাবলো এই ছেলেটা যদি গায়ে পড়া হয় আর সারা রাস্তা প্যাঁচাল পেড়ে ওর মাথা খারাপ করে দেয়! সিনেমা দেখে দেখে তো ছেলেরা ইন্সপায়ার হয় লম্বা জার্নিতে মেয়েদের সাথে লাইন মারার ব্যাপারে! তারপর ভাবলো গান শুনুক আর না শুনুক হেডফোন কানে দিয়ে রাখুক তাতে ছেলেটা কথা বলতে চান্স পাবেনা। এসব ভাবনা শেষ না হতেই দেখলো ছেলেটা নিজের গলায় ঝুলানো হেডফোনটা কানে দিয়ে সিটটা এলিয়ে শুয়ে পড়লো! যাক বাবা বাঁচা গেল! তার মানে ছেলেটা ওর সাথে আজাইরা প্যাঁচাল পাড়বে না।
বাস ছেড়ে দিল। কিছুক্ষণ পর একজন লোক সবার রেজিস্ট্রেশন কার্ড চেক করতে লাগলো। ছেলেটা হেডফোন খুলতেই তিতির ওকে বলল,
-“স্কিউজমি!”
-“হ্যা, বলুন!”
-“একচুয়েলি, এই সিটটা আমার আর আপনি যেটাতে বসেছেন ওটা আমার।”
-“ও আপনি কি আপনার সিটে আসতে চাচ্ছেন?”
-“না মানে, আমি বলতে চাচ্ছি আমি কি আপনার সিটটা ধার পেতে পারি? একচুয়েলি আমি জানালার কাছে ছাড়া বসতে পারিনা, অস্বস্তি লাগে। তাই আমি রেজিস্ট্রেশনের সময় বলেছিলাম জানালার পাশে সিট লাগবে আমার। ওনারা কেন দিলনা বুঝলাম না।”
-“ও, ইটস ওকে! নো প্রব্লেম!”
এরপর চেকার এসে ওদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড চেক করে গেল।
তারপর সাফি আর দোলা একটা স্পিচ দিল। দোলা শুরু করেছিল,
-“হ্যালো,
ডিয়ার ট্রাভেলার ব্রাদার্স এন্ড সিস্টার্স.. হোপ এভরিথিং ইজ ওকে স্টিল নাও।”
একথা বলেই আপু মিষ্টি একটা হাসি দিল। সেই হাসিতে মোটামুটি সবাই তাল মেলালো। তারপর সাফি ভাইয়া হেসে বলতে শুরু করলো,
-“ট্যুর প্ল্যান আপনারা সবাই কমবেশি জানেন, তবুও আরেকবার রিপিট করছি আমরা কোনো তাড়াহুড়োর ট্রিপ চাইনি। দৌড়ের উপর সব দেখা হয় ঠিকই কিন্তু উপভোগ করা যায়না, তখন ট্যুর হয় নট ট্রাভেলিং! তার উপর আমরা যাচ্ছি জঙ্গলে। তাই যেখানে ৬/৭ দিনে যাওয়া আসা হয় সেখানে আমাদের ১০ দিনের প্ল্যান! আজ রাত ১ টার দিকে কুমিল্লা পৌঁছে যাব, ওখানে আমরা আমাদের ডিনার করে নেব। তারপর আরেকটা টি-ব্রেক পাব ৩/৪ টার দিকে। সকাল ৬/৭ টার মধ্যে আমরা বান্দরবান শহরে পৌঁছে যাব। তারপর লাঞ্চ করে ওখা থেকে জিপে করে সোজা থানচি। পথে নিলগিরি, চিম্বুক পড়বে জাস্ট ১০ মিনিটের জন্য একটা ঢুঁ মারবো। তারপর আবার যাত্রা! থানচি পৌঁছাতে আমাদের দুপুর হয়ে যাবে। লাঞ্চ করবো ওখানেই। তারপর একটু রেস্ট নেব। যেহেতু থানচির পর আর কোন বাজারঘাট পাবো না তাই থানচি থেকেই পুরো ১০ দিনের বাজার করে নেব। বিকালটা আমরা বাজার করে আর পাশের একটা ছোট জলপ্রপাত ঘুরে কাটাবো। সন্ধ্যায় বার-বি-কিউ হবে। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাব যাতে সকাল সকাল উঠতে পারি। আর থানচিতে আমরা তাঁবুতে থাকবো। পরদিন সকালে আমরা আবার রওনা দিব। কিন্তু নৌকায় করে, বাইরোড থানচি পর্যন্তই। রওনা দেয়ার আগে সবাই বাড়িতে কথা বলে নেবেন। কারন, থানচির পর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। প্রায় দুইদিন নৌকা ভ্রমনের পর আমরা যেখানে পৌঁছাব সেই যায়গার নাম রেমাক্রি। রেমাক্রি থেকে তিন ঘন্টা হাটার পর আমরা পৌঁছাব আমাদের স্বপ্নের নাফাখুম জলপ্রপাতে। তারপর আমরা ওই রাতটা পাশের পাহাড়ি গ্রামে কাটাব। তারপর কাছের আরো দুটো জল্প্রপাত দেখব পরেরদিন। তারপর যেভাবে গিয়েছি ওভাবেই ব্যাক করবো। আশা করি এই যাত্রার জন্য আপনারা সকলেই মানসিকভাবে প্রস্তুত। সকলের কাছে পরস্পরের প্রতি সহযোগীতার মনোভাব আশা করছি। এখন আমরা আর অপরিচিত নই, আমরা এখন একটা ফ্যামিলি। গ্রুপের কোন মেম্বার অন্য মেম্বারকে কোন বিষয়ে হ্যারাস করবেন না, ছোট করবেন না। যদি কারো নেগেটিভ আচরণ দেখা যায় তাহলে তাকে ওই মুহূর্তে ওই যায়গায় ফেলে চলে যাওয়া হবে। রান্নাবান্না সাধারণত মাঝিরাই করে। কিন্তু মাঝিদের আমরা সবাই সাহায্য করবো, মনে রাখবেন দশের লাঠি একের বোঝা। রেমাক্রির পর থেকে রাস্তায় আপনাকে প্রচুর জোঁক ধরবে তাই নিজের প্রতি ও সকলের প্রতি এক্সট্রা খেয়াল রাখবেন। যখনই দেখবেন আপনাকে জোঁকে ধরেছে আশেপাশে যারা থাকবে তাদের কাছে সাহায্য চাইবেন। আর যদি আপনি দেখেন আপনার পাশের মানুষটিকে জোঁকে ধরেছে তাহলে তাকে নিজ দায়িত্বে সাহায্য করবেন। আর সব শেষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলছি, পাহাড়িদের ড্রেসআপ বাঙালিদের মত হয়না, দয়া করে তখন নিজের চোখকে ও মুখকে সংযত রাখবেন। তাদের জীবন্যাত্রার প্রতি সম্মান রাখবেন। মনে রাখবেন ওখানে আমরা বিপদে পড়লে সাহায্যের জন্য পাহাড়িদের কাছেই যেতে হবে। কারন আবার মনে করিয়ে দেই থানচির পর মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। এতক্ষণ ধরে আমার বকবক শোনার জন্য ধন্যবাদ, হ্যাপি ট্রাভেলিং!”
তারপর আবার সেই সেম ঘটনা। ছেলেটা হেডফোন কাজে গুঁজে দিল। আর তিতির জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ একটা ডাক কানে এল,
-“স্কিউজমি। স্কিউজমি! এই যে শুনছেন?”
তিতির চোখ মেলে দেখলো পাশের ছেলেটা ওকে ডাকছে, হায়রে! কখন ও ঘুমিয়ে পড়লো টেরই পায়নি! তিতির তাকাতেই ছেলেটা বলল,
-“সবাই ডিনার করতে নেমেছে। আমিও যাচ্ছি। আপনি বাসে একা ঘুমাবেন তাই ডাকলাম। কিছু মনে করবেন না।”
তিতির দেখলো পুরো বাসে কেউ নেই। বলল,
-“থ্যাংকস! কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টের পাইনি।”
-“হ্যা ভালই ঘুম আপনার, একটু আগে তো সাফি সবাইকে মিনি মাইকে বলল ২০-৩০ মিনিট ব্রেক টাইম। এর মধ্যে ডিনার সেড়ে নিতে হবে।”
তিতির লজ্জা পেয়ে গেল। আসলেই যখন তখন যেকোনো যায়গায় ঘুমিয়ে পড়ার প্রতিভাটা ওর ভালই আছে। বাস থেকে নামতে নামতে ছেলেটা বলল,
-“বাই দ্যা ওয়ে, আমি মুগ্ধ। আপনি?”
তিতির বলল,
-“কি ব্যাপারে?”
মুগ্ধ অবাক হয়ে বলল,
-“মানে?”
-“আপনি যে জিজ্ঞেস করলেন আমি মুগ্ধ কিনা ওটাই জানতে চাচ্ছি, কি ব্যাপারে মুগ্ধ হওয়ার কথা বলছেন? ট্যুর? বাট এটা তো মাত্র শুরু!”
ছেলেটা হেসে ফেলল,
-“আমার নাম মুগ্ধ। আমি আপনার নামটা জানতে চাচ্ছিলাম। বারবার স্কিউজমি স্কিউজমি করতে কার ভাল লাগে বলুন। আফটারল আগামী ১০ দিন একই যায়গায় থাকছি। নামটা তো জানা প্রয়োজন।”
তিতির লজ্জা পেয়ে হেসে বলল,
-“ওহ, আমার নাম তিতির।”
-“বাহ, নামটা খুব সুন্দর! তিতির নামের মানে জানেন?”
-“হুম, একটা পাখির নাম।”
মুগ্ধ রেস্টুরেন্টে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
-“তিতিরপাখি দেখেছেন কখনো?”
-“নাহ!”
-“তিতির খুব সুন্দর দেখতে।”
-“ঢাকায় আছে নাকি?”
-“নাহ, আমি ঝারখান্ডে দেখেছিলাম। রাঁচীর এক জঙ্গলে।”
-“বাপরে! আপনি খুব ঘোরাফেরা করেন নাকি?”
-“তা বলতে পারেন তবে আমি জঙ্গল প্রেমিক! পাহাড়ে জঙ্গলে ঘুরতে বেশি পছন্দ করি।”
-“ওহ! নাফাখুম গিয়েছেন আগে?”
-“হ্যা, দুইবছর আগে গিয়েছিলাম। এটা সেকেন্ড টাইম।”
-“আমার এই প্রথম।”
-“ওহ! আপনার সাথে কেউ নেই?”
-“নাহ! আমি একাই এসেছি। আচ্ছা আপনারা ছেলেরা মেয়েদের কোথাও একলা যেতে দেখলেই একথা জিজ্ঞেস করেন কেন?”
-“কিছু মনে করবেন না প্লিজ। আসলে এই টাইপের ট্রিপে কখনো কোন মেয়েকে একা যেতে দেখিনি তো তাই। হয় ফ্রেন্ড, নয় বিএফ, নয় হাসবেন্ড, নয় কাজিন, নয়তো ভাই। কেউ কেউ সাথে থাকেই।”
-“আমার সাথে কাউকে লাগেনা। আই ক্যান টেককেয়ার অফ মাইসেল্ফ।”
-“আপনি বোধহয় রেগে যাচ্ছেন।”
-“নাহ, রেগে যাচ্ছিনা। সত্যি কথা বলতে কি আজকাল অনেক মেয়েরই যাওয়ার সাহসটা থাকে কিন্তু ফ্যামিলি যেতে দেয়না একা। সেক্ষেত্রে আমি বাঁধিয়ে রাখার মত একটা ফ্যামিলিতে জন্মেছি। আমি স্বাধীন, কখনো কেউ কোন কিছুতে বাধা দেয়না।”
-“বাধা দেয়না বলেই বোধহয় আপনি আপনার ফ্যামিলিকে রেসপেক্ট করেন। আর তাদের সম্মান বজায় রাখেন।”
তিতির হেসে বলল,
-“হ্যা। ওরা আমার ইচ্ছে অনিচ্ছার এত মূল্য দেয় বলেই আমিও ওদের কথা রাখার ট্রাই করি অলওয়েজ।”
সাফি ভাই দূর থেকে হাত নাড়ছে। মুগ্ধও হাত নেড়ে তার রিপ্লে দিল। বলল,
-“চলুন, খেতে বসা যাক।”
মুগ্ধ সাফিদের টেবিলেই বসলো। সাফি কার সাথে যেন কথা বলছিল। চোখাচোখি হতেই হাসি বিনিময় হলো শুধু। দোলা জিজ্ঞেস করল,
-“কি অবস্থা আপু? ভাল লাগছে?”
-“হ্যা, খুব।”
-“কোন প্রব্লেম হলে আমাকে বলবে, আসলে বুঝতেই তো পারছো এতগুলো মানুষ! আলাদা ভাবে খেয়াল রাখা ডিফিকাল্ট।”
-“ইটস ওকে আপু, আমি আপনাকে বলবো।”
দোলা হেসে বলল,
-“বাই দ্যা ওয়ে, মুগ্ধ ভাইয়ার সাথে আলাপ হয়েছে?”
মুগ্ধ বলল,
-“আরে উনি তো আমার পাশের সিটেই। আলাপ হবে না কেন?”
দোলা বলল,
-“ওয়াও, দেন গ্রেট! মুগ্ধ ভাইয়া তুমিও একা, ওনাকে একটু দেখে রেখো। উনি একা এই ট্রিপে।”
মুগ্ধ বলল,
-“তুই বলার আগে থেকেই দেখছি।”
তিতির চমকে তাকালো মুগ্ধর দিকে। দোলা বলল,
-“মানে?”
-“মানে সবাই বাস থেকে নেমে গিয়েছিল, তখনও উনি বাসে ঘুমাচ্ছিলেন। আমিই তো ডেকে নিয়ে এলাম। এটা দেখে রাখা হলোনা?”
দোলা হেসে বলল,
-“আচ্ছা বুঝলাম।”
খাওয়া শেষে উঠে যেতেই তিতির বলল,
-“বিল পে করতে হবে না?”
মুগ্ধ বলল,
-“না না, এটা ট্যুরের মধ্যেই। ওরাই দেবে। বাস ছাড়তে আরো ৪/৫ মিনিট বাকী। চলুন বাইরে গিয়ে দাঁড়ানো যাক।”
তিতির ওর সাথে যেতে যেতে বলল,
-“আপনার সাথে কেউ নেই?”
-“নাহ, আমি একাই ঘুরি অলওয়েজ। তাছাড়া আমার সাথে ঘোরার মত কেউ নেইও।”
-“ওহ! আচ্ছা, দোলা আপু আপনার পরিচিত? তখন দেখলাম তুই করে বলছেন।”
মুগ্ধ হেসে বলল,
-“ও সাফির গার্লফ্রেন্ড, আর সাফি আমার আপন চাচাতো ভাই। সেই সূত্রেই দোলার সাথে পরিচয়।”
-“ওহ! কে বড়?”
-“আমি সাফির ১ বছরের বড়।”
-“ওহ!”
কিছুক্ষণ ওরা হাইওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে রইল। প্রথমে কেউ কোন কথা বলছিল না। মুগ্ধই শুরু করলো,
-“আপনি কিসে পড়ছেন?”
-“এবার এইচএসসি দিলাম।”
মুগ্ধ অবাক হলো,
-“মানে এখনো ইউনিভার্সিটিতে যাননি?”
-“নাহ, পাবলিকে পরীক্ষা দিব তাই কোথাও এডমিশন নেইনি। এইতো ফিরে আসার পরই এক্সাম।”
-“তুমি তো পুরাই বাচ্চা। সরি তুমি করে বলে ফেললাম।”
-“ইটস ওকে। সাফি ভাইয়া, দোলা আপু তো প্রথম থেকেই তুমি বলে, আপনিই তো আপনি আপনি করছিলেন।”
-“ওহ! তাই না? ওই আর কি! আমি ওদের মত প্রথমেই কাউকে ওভাবে বলতে পারিনা।”
-“ও, আপনি কিসে পড়েন?”
-“ইস! আর চার মাস পরে কথাটা জিজ্ঞেস করতে যদি।”
-“তাহলে কি হবে?”
-“বলতে পারতাম আমার স্টাডি কম্পলিট।”
তিতির হেসে দিল। মুগ্ধ বলল,
-“আমি মাস্টার্স করছি। লাস্ট সেমিস্টার। এই এই বাস ছেড়ে দিচ্ছে, চলো চলো।”
বাসে উঠে বসতেই মুগ্ধ বলল,
-“এখন কি আবার ঘুমাবে?”
তিতির হেসে বলল,
-“আপনি কি আবার হেডফোন কানে গুঁজবেন?”
এবার মুগ্ধও হেসে দিল।