পৌষের শীত রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌছে যায়। ভোরে গরম কম্বলের নিচ থেকে কেউ উঠতেই চায় না। পরীও কম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। রুপালি এসেছিল
পরীকে দেখতে। সে পরীর ঘর থেকে বের হয়ে আস্তে আস্তে নিচতলায় নেমে এলো। গরম চাদর গায়ে জড়িয়ে উঠোন জুড়ে হাটাহাটি করতে লাগলো। পেটটা বেশ উঁচু হয়েছে। কয়েক দিন বাদেই পৃথিবীতে ভুমিষ্ঠ হবে ওর সন্তান। মা হওয়ার আনন্দ সব মেয়েরই থাকে। কিন্ত কেন জানি রুপালি সে আনন্দ পাচ্ছে না। সেদিনের পর তো কবির আর তার কোন খবর নেয়নি। নেয়ার সাহস ও নাই। এই বাড়িতে পা রাখলে কবির প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবে কি সন্দেহ।
যদি রুপালিকে কবির ভালোবাসতো তাহলে সে প্রাণের মায়া না করে ঠিকই আসতো। রূপের মোহে কবির তাকে বিয়ে করেছে ঠিকই কিন্ত ভালোবাসতে পারেনি। তার কাছে মেয়েদের দেহটাই প্রধান। রুপালির প্রথম মনে হতো সে’ই পারছে না কবির কে স্বামী হিসেবে টেনে নিতে। কিন্ত আস্তে আস্তে তার ভুল ধারণা ভেঙে যায়। দীর্ঘশ্বাস ফেলা আর মালার চোখের জল সহ্য করা ছাড়া রুপালির আর কিছুই করার নেই।

রোদ উঠেছে বেলা আটটা নাগাদ। এতক্ষণ কুয়াশাচ্ছন্ন ছিল চারিদিক। এরই মধ্যে জমিদার বাড়িতে এসে হাজির হলো নাঈম,শেখর,আসিফ। বৈঠকে ওদের বসতে দেওয়া হলো। মালা ও জেসমিন গিয়ে দেখা করে ওদের সাথে। অনেক দিন পর দেখা হতে ওদের ভালোই লাগলো। গরম গরম ভাপা পিঠা ওদের খেতে দেওয়া হলো।
নাঈম ভাবছে আজকের দিনটা ইনিয়ে বিনিয়ে থেকে যেতে হবে। পরীকে দেখার ইচ্ছাটা ওর কখনোই মিটবে না। একটাবার সে পরীকে দেখার জন্য আকুলিবিকুলি করছে। কিন্ত অতি আবেগের শেষ ফলাফল শুন্য।
আসিফ নাঈম কে বলে,’কি সিদ্ধান্ত নিলি? থাকবি নাকি চলে যাবি?’

-‘সবে তো এলাম দেখি কি করি?’
-‘তোর না দেখা বউয়ের দেখা শ্বশুর বাড়ি। থাকলে সমস্যা নেই।’
বলেই হাসলো সে। নিজের ঘর থেকে বের হতেই নাঈমদের দেখেই সেদিকে এগিয়ে গেল শায়ের। বলল,’আপনারা!! কখন এসেছেন??’
নাঈম মৃদু হেসে জবাব দিল,’এইতো কিছুক্ষণ। আপনার অবস্থা কেমন??’
-‘জ্বী ভালো। তা হঠাৎ আমাদের কথা মনে পড়ল??’
-‘হঠাৎ মানে?’
-‘মানে এতদিন পর এলেন তাই বললাম।’

নাঈমের বদলে আসিফ বলে,’আসলে এসেছি গ্রামটা দেখতে। বন্যার সময় এক রকম ছিল আর এখন আরেক রকম। এটাই দেখতে এসেছি। একটু পরেই চলে যাবো।’
নাঈম চোখ গরম করে আসিফের দিকে তাকালো। বিনিময়ে হাসলো আসিফ। দিলো সবকিছু মাটি করে। আগ বাড়িয়ে কথাটা বলার প্রয়োজন ছিল কি?
-‘আজকে বরং থেকেই যান। পাশের গ্রামে যাত্রাপালা হচ্ছে। রাতে সবাই দেখতে যাবো। আপনাদের ভালোই লাগবে।’
শায়েরের কথা শুনে নাঈম তৃপ্তির হাসি হাসল বলল,’তাই নাকি!!তাহলে তো যেতেই হয়। সমস্যা নেই আমরা থাকবো।’
-‘শুনে খুশি হলাম। আচ্ছা আপনারা থাকুন আমি আমার কাজে যাই। রাতে দেখা হচ্ছে।’
শায়ের চলে গেল। নাঈম মনে মনে খুব খুশি। আজকে অন্তত শেষ চেষ্টা করে দেখবেন সে। পরীর মুখোমুখি সে হবেই।

নিজের ঘরে বসে কুসুমের পরনের কাপড়টা ভাজ করছে পরী। কুসুম কে একখানা নতুন চাদর দিয়ে ওর পুরোনো চাদরটাও এনেছে। এমনকি জুতো টাও কুসুমের। কোন রকম ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত নয় পরী। আজকে রাতের আঁধারে বের হবে সে। অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরী। বিন্দু আর সম্পানের বিয়ে দেবে সে তাও নিজে দাঁড়িয়ে থেকে। বিন্দুকে বলেছে যাতে সে সম্পান কে সব বলে। সম্পান ও রাজি। আর কি চাই? পরিকল্পনা অনুযায়ী,পশ্চিমের জঙ্গলের মধ্যে একটা পুরোনো কালী মন্দির আছে। ওখানেই বিয়ে সম্পন্ন হবে। একবার বিয়ে হয়ে গেলে চন্দনার আর কিছুই করার থাকবে না। বিন্দু সম্পান ও সুখে থাকবে। তাই আগে থেকেই তৈরি হচ্ছে পরী। রুপালির বাড়ি যাওয়ার সময় কুসুম দেখিয়েছিল জঙ্গলটি। কুসুমের ধারণা এই জঙ্গলে ভুত প্রেতের বাস। তাই দিনের বেলাতেও কেউ যায় না। এটাকেই হাতিয়ার হিসেবে ধরেছে পরী। তবুও কেউ যাতে দেখে না ফেলে তাই রাতেই সেখানে যাবে ওরা। এখন শুধু রাতের অপেক্ষা।

সন্ধ্যা নামতেই চারিদিক হালকা কুয়াশায় ভরে গেলো। গ্রামের মানুষ দলে দলে বের হলো যাত্রা দেখবে বলে। আফতাব সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত। তাই সবাই রওনা হলো। কিন্ত নাঈম গেলো না। শরীর খারাপের দোহাই দিয়ে শুয়ে থাকলো। সেজন্য সবাই তাকে ফেলে যেতে বাধ্য হলো। আসিফ আর শেখর সব বুঝলো কিন্ত কিছু বলল না।
ওরা চলে গেল যাত্রা দেখতে। জমিদার বাড়ির সব পুরুষ চলে গেল শুধু রয়ে গেল নাঈম আর রক্ষিরা।

রাতের অন্ধকার একটু গাঢ় হতেই রুপালির চিৎকার শোনা গেলো। রুপালির প্রসব বেদনা শুরু হয়েছে। বাড়িতে একটা হইচই পড়ে গেল। ইতিমধ্যে কয়েকজন মহিলা এসে পড়েছে। আবেরজান নাতনির কথা শুনে আর থাকতে পারলেন না। তিনিও চলে এলেন। সবাই এখন রুপালিকে নিয়ে ব্যস্ত।
পরী সেই ফাঁকে বেরিয়ে গেল। এর মধ্যে কেউই পরীর খোঁজ করবে না। সদর দরজা দিয়েই বের হয়েছে সে। কুসুমের পোশাকে ছিল বিধায় কেউ বুঝতে পারেনি। রক্ষিরা ভেবেছে হয়তো কোন কাজে কুসুমকে পাঠানো হয়েছে কারণ সে দ্রুত যাচ্ছে। বাঁধা দিলে রাগ করবে।
পরী ক্ষেতের আইল দিয়ে যাচ্ছে। কারণ অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে পরীর। তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে হবে ওর। বিন্দু সম্পান হয়তো আরো আগে পৌঁছে গেছে।
হারিকেনের আলোয় দ্রুত পা চালায় পরী। সম্পান বিন্দুকে এক করতে পারলে সবচেয়ে বেশি খুশি হবে পরী। বেশ সময় লাগলো জঙ্গলে পৌঁছাতে। কিন্ত কালী মন্দিরটা কোথায়??সেটা তো পরী জানে না। খুঁজতে হবে। জঙ্গলটা বেশ বড়। তবুও পরী খুঁজতেছে। কিছুক্ষণ খুঁজে পেয়ে ও গেলো। তবে আশ্চর্যজনক ব্যাপার যে বিন্দু সম্পান এখনো আসেনি। পরীর হাতে বিন্দুর সেই সিঁদূর কৌটো। এটা দিয়েই বিয়ে হবে। কিন্ত ওরা এখনো আসছে না কেন?
পরী ওদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। তবুও বিন্দু সম্পানের নাম গন্ধও নেই। পরীর এবার ওদের জন্য চিন্তা হচ্ছে। বিন্দু কি বের হতে পারবে? নাকি চন্দনার হাতে ধরা পড়ে যাবে?
বকুল ফুলের ঘ্রাণে ম ম করছে চারিদিক। পরী থাকতে পারলো না আর। পাশেই একটা বড় বকুল ফুল গাছ। তলায় চাদরের মতো বিছিয়ে আছে সাদা ফুলগুলো। হারিকেনটা মাটিতে রেখে ফুল কুড়ায় পরী। মাঝে মাঝে ঘ্রাণ নেয়। পরী ফুল দিয়ে কোচড় ভর্তি করে ফেলেছে। তখনও কেউ আসছে না। পরী আবার আগের জায়গাতে বসে পড়ল।
কারো পায়ের আওয়াজ পাচ্ছে পরী। পাতার খসখস আওয়াজ টের পাচ্ছে। সে খুশি হলো। তারমানে ওরা এসে পড়েছে। পরী হারিকেন হাতে নিয়ে একটু এগিয়ে থেমে গেল। ও বুঝতে পারল বিন্দু সম্পান আসছে না। বেশ কয়েকজন লোক আসছে। তাদের গলার স্বর শুনতে পাচ্ছে পরী। এখানে থাকাটা ঠিক হবে না ভেবে উল্টো দিক দিয়ে দৌড় দিলো পরী। পরী বুঝতে পারল তাকে দেখে ফেলেছে এবং তাড়া করছে। তাই সে প্রাণপণে ছুটলো। বেত ঝারের মধ্যে দিয়ে দৌড়াচ্ছে পরী। গায়ের চাদর কিছুর সাথে আটকে গিয়েছিল বিধায় সেটা ফেলেই চলে এলো। এখন দাঁড়ানোর সময় নেই। ধরা পড়লে চলবে না। অনেকটাই এগিয়ে এসেছে পরী। হঠাৎই গাছের সাথে ধাক্কা লেগে হারিকেনের কাচ ভেঙে গেল। হারিকেনটা ও ছিটকে পড়ে। কোথায় পড়ে তা পরী খেয়াল করে না। সে দৌড়াতে থাকে।

অনেক আলো আসতেই পরী পেছন ফিরে তাকায়। আগুনের ফুলকি উঠছে। দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। পরী বুঝতে পারলো যে হারিকেনটা ছিটকে খড়ের গাদায় পড়েছে। আগুন দেখেও অপেক্ষা করে না পরী। আবার দৌড় দিলো। রাস্তায় এসে হুশ ফিরলো পরীর। ঘাড় ঘুরিয়ে জঙ্গলটা দেখে নিলো সে। আগুনের লাল আলো এখনো দেখা যাচ্ছে। স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল পরী। হঠাৎ করে কি হয়ে গেল তা বোধগম্য হচ্ছে না ওর। বিন্দু সম্পান কোথায়? আশেপাশে ভালো করে তাকায় সে। অন্ধকারে কিচ্ছু দেখা যায় না। মাথা ধরে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো পরী। এই রাস্তায় বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব নয়। কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ। চাদরটাও হারিয়ে গেছে। মুখটা শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢাকলো পরী।
তারপর হাঁটা ধরে বাড়ির পথে। এক পা এগোতেই পায়ে ব্যথা অনুভব করে পরী। জুতো খুলে দেখে তাতে বড়সড় বেল কাটা বিঁধে আছে। টেনে কাটা বের করার চেষ্টা করে পরী। কিন্ত পারে না তাই জুতো খুলে খালি পায়ে রওনা হলো। ঠান্ডা মাটি তার উপর গায়ে চাদর নেই। তাছাড়া শরীর জ্বালাপোড়া করছে খুব। শরীরের কিছু কিছু জায়গায় কেটে ছিঁড়ে গেছে। এতক্ষণ উত্তেজনায় পরী কিছু টের না পেলেও এখন পাচ্ছে। অন্ধকারে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটতে লাগল পরী। কোনরকম পথ চিনে বিন্দুর বাড়িতে গেলো।

অনেক মানুষের জটলা বিন্দুদের বাড়ি। চন্দনা মাটিতে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদছে আর সম্পান কে গালমন্দ করছে। সম্পান নাকি বিন্দুকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। এটা বলছে আর সম্পান কে অভিশাপ দিচ্ছে। পরী এবার বেশ অবাক হলো। ওরা যদি পালিয়ে যাবে তাহলে পরীকে বলল না কেন??এক মুহূর্ত দেরি না করে পরী ছুটলো নিজের বাড়ির দিকে। তবে এবার সদর দরজা দিয়ে ঢুকতে পারলো না সে। তাই বাড়ির পেছন দিক দিয়ে গাছে উঠে ছাদে গেল সে। তারপর নিজের ঘরে গেল।
মালাকে ওর ঘরে দেখে আঁতকে ওঠে পরী। মালা যে এসময় ওর ঘরে আসবে তা ভাবেনি পরী।
আজ মালা ভয়ানক রেগে আছে। ফর্সা মুখখানি লাল বর্ণ ধারণ করেছে। মাকে এভাবে দেখে ভয় হলো পরীর। মালা জিজ্ঞেস করল,’কোথায় গিয়েছিলি??’

পরী চট জলদি জবাব দিতে পারলো না। মালা অপেক্ষাও করলো না। ঠাস করে চড় মেরে দিলো পরীর গালে। এমনিতেই পরীর শরীর দূর্বল। তাই সে তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল। মালা পরীকে টেনে তুলে আবার থাপ্পড় দিলো। পরপর কয়েকটা থাপ্পড় দিতেই রক্ত লাল হয়ে গেছে পরীর গাল দুটো। শক্ত হাতের মারে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে যেনো। পরী চুপচাপ রইলো। মালা চিৎকার করে উঠল বলল,’এই দিন কি দেখতে চাইছি আমি??তোরে সব বিপদ থাইকা আগলাইয়া রাখতে ঘর থাইকা বাইর হইতে দেই না। ক্যান জানোস?? কারণ সুন্দরের কদর সবাই করে না। লালসার চাহনি অনেক ভয়ংকর। সুন্দর সবাই ধরতে চায়। চোখ দিয়া তারা শরীরে হাত দেয়। তোরে সেই সব থাইকা বাঁচাইতে ঘরে আটকাইয়া রাখি। আর তুই রাইত বিরাইতে বাইরে যাস। আমার কথা তো বুঝোস না। ঝিনুকের মুক্তা যহন মানুষ দেখে তহন বেইচা দেয়। না দেখলে ওই মুক্তা সুরক্ষিত থাহে। তোরে তেমনিই সুরক্ষিত রাখতে আমি ঝিনুকের মধ্যে রাখলাম যাতে কেউ দেখতে না পারে। আর তুই!! তুই কি আমার মাইয়া??’

মালা পরীকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। পরী স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মা ওকে কিসব বলে গেল?? কোন লালসার কথা বলে গেল??তাহলে নিশ্চয়ই মালাও এরকম কিছুর শিকার ছিলো। কোন কিছু নিয়ে ভিশন ভয় পাচ্ছে মালা। যার কারণে পরীকে সে ঘরবন্দি করে রাখে। সেই ভয়ের কারণ টা কি?? একে তো বিন্দুর চিন্তা আর মালাও কি বলে গেলো। মাথায় প্রশ্নের জটলা পেকে গেছে। তাকে যে জানতে হবে সব প্রশ্নের উত্তর।
সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি পরী। কাপড় বদলে নিজের পোশাক পড়ে নিলো সে। বিন্দুর সিঁদুর কৌটো হাতে নিয়ে সারারাত ভেবেই গেল। বিন্দু সম্পান কোথায় গেলো?সত্যিই পালিয়ে গেল??এসব ভাবনা পরীকে ঘুমাতে দিলো না। সকাল হতেই নিজ ঘর ছেড়ে বের হয় পরী। হাতে তার তখনও সিঁদুর কৌটো আছে। সেটা পরী খেয়াল করলো না। বাইরে এসে দেখে অন্দরের উঠোন ভর্তি মহিলা। সবাই রুপালির ঘরে উঁকি দিচ্ছে। পরী দ্রুত রুপালির ঘরে যায়। নবজাতক কে দুগ্ধ পান করাচ্ছে রুপালি। পরী গিয়ে আস্তে করে রুপালির পাশে বসে। অসম্ভব সুন্দর বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে অষ্ফুটস্বরে বলে উঠল,’মাশাল্লাহ’
আবেরজান পাশেই বসা ছিলেন। তিনি বললেন, ‘তোর অহন আহার সময় হইলো? পোলা হইছে কোন রাইতে।’
দাদির কথায় রুপালি বলল,’আহ দাদি থাক না। পরী তো ঘুমাচ্ছিল। এখন তো এসেছে।’
পরীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল রুপালি। পরীও হাসলো কিন্ত মনটা এখনও কু গাইছে। পরী বাচ্চাটাকে কোলে নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালো। পরীর হাতে সিঁদুর কৌটো দেখে রুপালি জিজ্ঞেস করে,’তোর হাতে এটা কেন??’
পরী জবাব দিতে পারে না। রুপালিও ফের প্রশ্ন করতে পারে না। কারণ বাইরে থেকে জুম্মানের গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সে ‘পরী আপা’ বলে ডাকছে। পরী দৌঁড়ে বের হয়ে জুম্মানের কাছে গেলো। জুম্মান তখনো হাপাচ্ছে। পরী জিজ্ঞেস করে, ‘কি হয়েছে জুম্মান??’
জুম্মান হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,’আপা,,,’
-‘কি??’
-‘আপা বিন্দু দিদি,,’
-‘বিন্দু কি??’
ভয়ে কথা বলতে পারছে না জুম্মান। শরীর এখনো কাঁপছে জুম্মানের। পরী চিৎকার করে জুম্মান কে ঝাঁকিয়ে বলে,’বল না বিন্দুর কি হয়েছে??’

-‘বিন্দু দিদি পশ্চিম জঙ্গলে গাছের ডালে ঝুলতাছে আপা।’

জুম্মান কে সরিয়ে পরী দৌড় দিলো। মালা সাথে সাথেই পরীকে টেনে ধরে। কিন্ত এবার মায়ের কোন বাঁধা মানে না পরী। ঝাড়ি মেরে মালার হাত ছেড়ে দৌড়ে চলে যায়। আজ পরী ভুলে গেছে মায়ের দেয়া কসম। ভুলে গেছেন নেকাব পরতে। ভুলে গেছে নিজের সৌন্দর্য লুকাতে। যে পরীর সৌন্দর্য পর্দার আড়ালে লুকানো ছিল আজ সেই পরী পর্দা ভেদ করে বের হয়েছে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।