চারিদিকে কেমন গুমোট ভাব। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে আশেপাশে। দূরের কোন স্থান থেকে নিশাচর পাখিটা ডেকে উঠছে বারবার। এমতাবস্থায় একটুও ভয় পাচ্ছে না পরী। অন্ধকার যেন পরীর সাহস আরো বাড়িয়ে দেয়। হারিকেনের আলো চারিদিক কিঞ্চিৎ আলোকিত করেছে। কাঠের ছোট জলচৌকির উপর শায়েরের খাবার রেখেছে পরী কিন্ত শায়ের নেই। সে হয়তো কলপাড়ে গেছে ভেবে পরী দাঁড়িয়ে আছে। জুম্মান কে দিয়ে যে কথা জানতে চেয়েছিল তা সে এখন নিজেই জিজ্ঞেস করবে বলে মন স্থির করল পরী। তাই সে শায়েরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর শায়ের এসে খেতে বসে পড়ল। সারাদিন না খাওয়া সে তার উপর আখিরের বলা কটু কথা গুলো সহ্য হয়নি ওর।মাথা গরম আছে। কারণে অকারণে আখির ওকে কথা শোনায়। কারণ টা শায়ের বেশ বুঝতে পারে। জমিদার আফতাব শায়ের কে বেশিই বিশ্বাস করে। শায়েরের পরামর্শ গুলোকে একটু বেশিই গুরুত্ব দেন তিনি। যা আখির একটুও পছন্দ করে না। তাই সবসময় সে ওত পেতে থাকে কিভাবে শায়ের কে আফতাবের সামনে খারাপ বানানো যায়। আর সে সুযোগ আজকে সে পেয়ে গেছে। পালককে উদ্দেশ্য করে অনেক কিছুই শায়ের কে বলছে আর শায়ের চুপ করে শুনে গেছে। তাই সে রাগ ঝেড়েছে সে কুসুম রুপি পরীর উপর। কিন্ত শায়ের এখনও টের পায়নি যে ওর সামনে পরী দাঁড়িয়ে আছে। পরীও নিজের উপস্থিতি জানান দেয়নি। কিন্ত খাওয়ার মধ্যেই শায়েরের চোখ পড়ল একজোড়া কোমল পায়ের দিকে। ফর্সা পা জোড়ায় ভারি নূপুর চকচক করছে হারিকেনের লাল আলোতে। যদিও ওর সামন দাঁড়নো রমণীর মুখটা ঢাকা তবুও শায়েরের মস্তিষ্ক ভয়ের আশঙ্কা পেলো। সে বুঝে গেল এই রমণীটি কুসুম নয়। খাওয়া ফেলে ছিটকে দূরে সরে এল শায়ের। আচমকা শায়ের কে দাঁড়াতে দেখে পরী কিছুটা কেঁপে ওঠে। সেও দুপা পিছিয়ে যায়। শায়ের থমথমে গলায় বলল, ‘আপনি কেন এসেছেন?আপনি কি জানেন না যে আপনার উপস্থিতি প্রতিটা পুরুষের জন্য বিপদজনক? চলে যান এখান থেকে। অন্দরে ফিরে যান তাড়াতাড়ি নাহলে আমার বিপদ।’
এক মুহূর্তের জন্য পরী থমকে গেল। সব পুরুষের জন্য ও বিপদজনক কথাটা তীরের মতো বিঁধলো পরীর মনে। সেখান থেকে বের হয় অদৃশ্যমান তাজা রক্তস্রোত। সে কম্পিত কন্ঠে বলে উঠল,’আমি তো পালক আপা,,,’
বাকিটুকু বলতে পারল না পরী তার আগেই শায়ের ওকে আটকে দিয়ে বলে,’আমি কিছু শুনতে চাই না। আপনি যার সামনে ইচ্ছা যান। কিন্ত আমার সামনে আসবেন না। এখন অন্দরে ফিরে যান।’
পরী আর দাঁড়াল না। দৌড়ে চলে আসে। আসার সময় পায়ে ব্যথা পায় সিঁড়ির সাথে ধাক্কা লেগে। সেটা কোন ব্যথা নয় পরীর। মনে যে ক্ষরণ হচ্ছে তাতে আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে পরীর। নিজের কক্ষে গিয়ে ঠাস করে দরজা আটকে দিলো সে। ঘরের এক কোনায় গিয়ে মেঝেতে হাটু মুড়ে বসে বলতে লাগল, ‘আপা আমি কি সত্যি সব পুরুষ গো বিপদে ফালাই?তুমিও তাই বিশ্বাস করো?কই আমি ওইদিন না থাকলে তো আব্বা আর সবাই মিইলা কানাই কাকার হাত কাইটা ফালাইতো। আমিই তো বাঁচাইছি তারে। তারপর ও ওই লোকটা ক্যান ওই কথা কইলো? আমি কি সবার শনি নাকি?আমি কি কারো প্রিয়জন হমু না কোনদিন? আপা তুমি তো রাখালরে পাইছো। আমি কি ওমন কাউরে পামু না?’

নিজের মন মতো বকবক করতে করতে পরী মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়ল। যখন ওর ঘুম ভাঙে তখন উঠে বসে সে। বেলা কতটুকু হলো তা বোঝার জন্য পরী বাইরে এলো। দোতলায় দাঁড়িয়ে পরী দেখতে পেল মালা হারিকেন হাতে কলপাড়ের দিকে যাচ্ছে। পরী অবাক হয়ে গেল এসময় ওর ঘুম ভেঙেছে!! কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পরী নিজেও গেল ওযু করতে।
ফজরের নামাজ পড়ে পরী আর ঘুমালো না। অন্দরের উঠোন জুড়ে হাটাহাটি করতে লাগল। কুসুম ভোরেই ঘুম থেকে ওঠে। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। সে চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে পরীকে দেখে চমকে গেল। পরীর দিকে এগিয়ে এসে বলল, ‘পরী আপা আপনে এতো সক্কাল সক্কাল উঠছেন!! আমার তো বিশ্বাস হইতাছে না।’
-‘বকর বকর না কইরা সামনে থাইকা সর। তুই আইজ আমার সামনে আসবি না। আর যদি আসোস তাইলে ওই পানিতে তোরে চুবামু।’
রাতের রাগটা পরী কুসুমের উপর ছাড়লো। কুসুম বেচারি কিছুই বুঝলো না। এই সকালে সে তো কিছুই করেনি তাহলে এভাবে বলল কেন পরী?

-‘এই সকালে কারে চুবাবি পরী?’
নারী কন্ঠস্বর পেয়ে ঘাড় ঘুরালো পরী। চোখের সামনে রুপালিকে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ছুটে গেল। ঝাপটে ধরলো বোনকে কাছে পেয়ে। খুশিতে রুপালি ও আগলে নিলো আদরের ছোট বোনকে। কিছুক্ষণ দুবোন আলিঙ্গন করে তবে শান্ত হলো। পরী হাক ছাড়লো,’আম্মা!!ও আম্মাজান আপনে কই??দেখেন কেডা আইছে!!’
নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো মালা। রুপালিকে দেখে সেও চমকে গেল। রুপালি মালাকে সালাম দিয়ে বলল,’কেমন আছেন আম্মা?শরীর ভাল তো?’

-‘হুম ভাল। তা জামাই কই?’
-‘বৈঠক ঘরে। আম্মা সাথে নওশাদ ও এসেছে। আপনি ওদের নাস্তা দেন আমি ঘরে যাই। পরী আয় আমার সাথে।’
পরী খুশি মনে রুপালির পেছন পেছন দোতলায় নিজের ঘরে গেল। তালাবদ্ধ ছিল রুপালির ঘর। পরী গিয়ে চাবি নিয়ে আসে। নিজ হাতে সব পরিষ্কার করে। রুপালি ততক্ষণে কলপাড়ে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে আসে। রুপালি এসে পালঙ্কের উপর বসতেই পরীর খেয়াল করে রুপালির পেটটা একটু উঁচু। পরী গিয়ে রুপালির পাশে গিয়ে বসে ওর পেটের উপর হাত রাখলো। চোখের ইশারা করল বোনকে। ওর বোন ও মাথা নেড়ে সায় দিলো। পরী আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে,’আপা তুমি আহার সাথে সাথে এত খুশির খবর আনবা ভাবি নাই। তোমারে আমি আর যাইতে দিমু না। আমার কাছেই রাইখা দিমু।’
পরী খুশি হলো খুব। কারণ বিয়ের দুবছর ধরে যখন রুপালির বাচ্চা হচ্ছে না সবাই কথা শোনাতো রুপালিকে। বারবার জিজ্ঞেস করতো খুশির খবর কবে পাবো?এতে কষ্টের সীমা ছিল না রুপালির। বোনের কষ্ট পরীকে ও পোড়াতো খুব। কিন্ত এখন পরীর বেশ খুশি লাগছে।
রুপালি অবিশ্বাস্য চোখে তাকায় পরীর দিকে। কিছু আচ করেছে হয়ত। পরীও তাকিয়ে আছে তার প্রিয় বোনের দিকে। রুপালি পরীর কাধে হাত রেখে বলে,’এভাবে কথা বলছিস কেন তুই?’
-‘কেমনে কথা কই মানে?’
-‘আগে তো এই ভাষাতে কথা বলতি না এখন হঠাৎ করে হলো কি তোর?তুই না মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিস!! তাহলে এভাবে কথা বলছিস কেন? কি হয়েছে তোর?’
পরী সহজ স্বীকারোক্তি দিলো,’কিছু হয় নাই আপা। তুমি খালি খালি চিন্তা করতাছো।’
রুপালি কপট রাগ দেখিয়ে বলে,’আবার ওভাবে কথা বলিস। পরী তুই বুঝতে পারছিস না কেন আমরা বড় ঘরের মেয়ে। আমাদের শৌখিন হতে হবে। কাজকর্ম, ভাষা,চলাফেরা সবার থেকে আলাদা হতে হবে।’
সামান্য হেসে পরী বলে,’বড় ঘরে বিয়া হইছে তোমার। এই কথা কি শ্বশুরবাড়ির মানুষ শিখাইছে তোমারে?একটা কথা মনে রাইখো আপা,কবর কিন্ত ধনী গরীব আর ভাষা দেখে না। আর আমি আগের থাইকা বদলাইয়া গেছি।’
-‘বদলালে হবে না পরী। তুই আগের মতো হ।’
তীক্ষ্ণ চাহনিতে রুপালির দিকে তাকালো পরী। অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠল। ফিসফিস করে বলল,’তুমি কি চাও আগের পরীকে?’
রুপালি থমকে গেল পরীর চোখের দিকে তাকিয়ে। আমতা আমতা করে বলল,’শুধু ভাষা ঠিক কর তাতেই হবে। তোর মনে নেই বড় আপার কথা? বড় আপা বলেছিল সবসময় এই পরিবারের সম্মান রক্ষা করতে। আর গ্রাম্য ভাষা সেও পছন্দ করতেন না। আমাকে তোকে সবসময়ই তো শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে বলতো।’
পরীর দূর্বল যায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছে রুপালি। রুপালি খুব ভাল করেই জানে যে পরী একমাত্র সোনালীর কথা মান্য করে তাই সে পরীকে আটকে দিয়েছে। আসল কথা এখনো পরীকে জানায়নি রুপালি। পরীর জন্য একটা সম্বন্ধ এনেছে সে। নওশাদের জন্য। নওশাদ রুপালির মামা শ্বশুরের ছেলে। ফুপাতো ভাইয়ের বিয়েতে নওশাদ এসেছিল কিন্ত তের বছরের পরী তখন মায়ের আদেশে ঘরবন্দি। রুপালির শ্বশুরবাড়ির থেকে যেসব মেয়েরা এসেছিল তারা পরীর সৌন্দর্যের প্রশংসা করেছিল। সে কথা নওশাদের কানেও পৌঁছেছে। কিন্ত শত চেষ্টা করেও পরীর মুখ দেখা তার সাধ্য হয়নি। মাঝেমাঝে সে রুপালির সাথে জমিদার বাড়িতে আসতো। নানা বাহানায় পরীকে দেখার চেষ্টা করতো কিন্ত বরাবরের মতোই সে ব্যর্থ হতো। তাই এবার সে সরাসরি রুপালির স্বামী কবিরের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয় নওশাদ। পরীকে না দেখলেও সে রুপালিকে দেখেছে। নিশ্চয়ই পরী রুপালির মতোই সুন্দর।
আর তাছাড়া নওশাদ কে না করার কোন কারন ও নেই। উচ্চবিত্ত ঘরের উচ্চশিক্ষিত ছেলে। শহরে তার ব্যবসা। আগে সে চাকরি করতো। তাতে খুব কম বেতন বিধায় বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা করছে। নওশাদের পারিবারিক অবস্থা বেশ ভালো। কবিরদের মতোই বাড়িতে আটচালা বড় বড় তিনটা টিনের ঘর। গোয়ালে গরু আছে,পাকা করা কলপাড় কাজের মেয়ে আছে জমিজমার অভাব নেই। পরীর সুখ হবে সেখানে। তাই স্বামীর কথা ফেলতে পারেনি। তাছাড়া নওশাদ খুবই ভাল ছেলে। তা রুপালি ওর সাথে মিশে বুঝেছে। তাই রুপালির ও অমত নেই। এই বিষয়ে মালার সাথে কথা বলবে রুপালি। কবির কথা বলবে আফতাবের সাথে।
পরী চুপ করে আছে দেখে রুপালি হালকা ধাক্কা দিলো পরীকে।
-‘কি রে চুপ করে আছিস কেন?কথা বল?’
নড়ে উঠলো পরী। একে তো পালকের জন্য খারাপ লাগছে। তার উপর শায়ের রাতে তাকে অপমান করেছে। আর রুপালি এখন ওর মন খারাপ করে দিয়েছে। হাল্কা কেশে পরী বলল,’ঠিক আছে আমি এখন থেকে তোমার কথা শুনব। ভালোভাবে কথা বলব।’
কথাটা বলে পরী একদণ্ড বসলো না। দ্রুত পা ফেলে কক্ষের বাইরে চলে এলো। রুপালি ডাকলো অনেক বার পরী শুনলো না। কিন্ত বাইরে গিয়ে পরীর রাগটা আরো বেড়ে গেল। জুম্মান দাঁত বের করে হাসতে হাসতে এসে বলে,’আপা শায়ের ভাইয়ের কাছ থাইকা ডাক্তার,,,,’
পরবর্তী বাক্য মুখ থেকে বের করতে পারল না জুম্মান। পরী কষিয়ে চড় মেরে দিলো জুম্মানের গালে। গালে হাত দিতে ভ্যাবলার মতো ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইল সে। পরী ভারি গলায় বলে,’তোর কাছে শুনতে চেয়েছি আমি?এরপর কোন ফালতু লোকের কথা আমাকে বলতে আসবি না।’
কথাটা বলেই পরী চলে গেল। জুম্মান থাপ্পড়ের শোকের উপর আছে। কালকেই তো পরী জুম্মান কে বলল খবর আনতে আর এখন কি হলো?এক রাতে এতো পরিবর্তন!! ভাষার ও পরিবর্তন হয়েছে। জুম্মান ভাবলো হয়তো কোন দুষ্ট জ্বীন ভর করেছে।ভয় পেয়ে সে দৌড়ে গেল রুপালির কাছে।

পরী অন্দরের উঠোনে আসতেই দেখল কুসুম বৈঠক ঘর থেকে অন্দরে ঢুকছে। পরীর কুসুম কে দেখেও রাগ হলো। তেড়ে গেল কুসুমের দিকে তবে মালাকে আসতে দেখে পদচরণ থামিয়ে দিলো। পরীকে উপেক্ষা করে কুসুম মালাকে উদ্দেশ্য করে বলল,’বড় মা হুনছেন নি সুখান পাগলারে গফুর চাচা পানিতে চুবানি দিছে ইচ্ছা মতো।’
বলেই কুসুম খিলখিল করে হাসতে লাগল। পরী ধমক দিয়ে বলে,’এতে হাসার কি আছে? একটা পাগলকে চুবালো আর তুই হাসছিস?তোকে চুবানি দিলে বুঝবি কেমন লাগে?’
কুসুমের হাসি মিলিয়ে গেল। সকালেও পরী এই কথাটাই বলেছে।
-‘চুবাবে না তো কি করবে কন আপা। গফুর চাচার মাইয়া আমেনা আছে না ওরে তো সুখান পাগলা পানিতে টাইনা নিয়া মারতে বইছিল। হের লাইগা তো চাচায় ওরে চুবাইছে।’
মালা শুধু একটা বাক্য ব্যবহার করলো,’কুসুম কথা না কইয়া রান্না ঘরে আয়।’
কুসুম পরীর দিকে তাকালো। পরী রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। কুসুম দৌড়ে চলে গেল। অতঃপর পরীও নিজের ঘরে চলে গেল।

দুপুরে গোসল ছেড়ে সবেমাত্র বের হয়েছে পরী। এরমধ্যেই চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে নিচে নামে। কুসুম জোরে জোরে ডাকছে মালাকে। পরী দোতলায় দাঁড়িয়ে থেকেই বলল,’আম্মা নামাজ পড়ে এতো চিল্লাস কেন?’
-‘আপা শহরের ডাক্তারবাবু আছে না?ওইযে নাঈম ডাক্তার,হেয় আইছে তার কিসব দরকারি জিনিস রাইখা গেছে। অখনই চইলা যাইতে চায় কি করমু?’

নাঈমের কথা শুনে চমকালো পরী। তবে কুসুমের সামনে তা প্রকাশ করলো না।
-‘এখন চলে যাবে কেন,তুই বল দুপুরে খেয়ে যেতে। না বললে শুনবি না। আমার কথা বলবি।’
কুসুম মাথা নেড়ে চলে গেল। মাথা মুছে পরী যোহরের নামাজ আদায় করে নিল। তারপর চুপচাপ নিজের ঘরে বসে রইল।

নওশাদ আর কবিরকে বৈঠক ঘরের একটা কক্ষে থাকতে দেওয়া হয়েছে। এবাড়ির জামাইয়ের ও অন্দরে ঢোকা নিষেধ। তাছাড়া বিশালাকার বৈঠক ঘরে অনেক গুলো ঘর আছে। যত মেহমান আসুক সমস্যা হয় না।
নিজের কক্ষের বারান্দায় চৌকি পেতে বসে আছে নওশাদ। কবির ঘুমাচ্ছে। ওদের বাড়ি দূরে বিধায় ভোর রাতে রওনা হয়েছে ওরা। তাই সকালেই এসে পৌঁছেছে। নাঈম কে দেখে নওশাদ চিনলো না। পরে দুজনে কথাবার্তা বলে পরিচিত হয়ে নিয়েছে।
কথা বলার সময় কুসুম এসে ওদের খেতে ডাকলো। হাত মুখ ধুয়ে সবাই খেতে বসলো। আফতাব,আখির আর শায়ের ও বসেছে।
মালা কুসুম আর জেসমিন খাবার বেড়ে দিচ্ছেন। খাওয়ার মাঝে কবিরই প্রথম কথা তুলল পরীর বিষয়ে। আফতাব কে উদ্দেশ্য করে বলল,’আব্বা আমার একটা কথা আছে।’
-‘কি কথা??’
-‘নওশাদ খুবই ভাল ছেলে। শহরে বড় ব্যবসা করে। তাই আমি একখান প্রস্তাব আনছি। যদি পরীর সাথে ওর বিয়ে দেন তো পরী ভালো থাকবে।’
উক্তিটি শেষ হতে না হতেই বিষম খেলো নাঈম। জোরে জোরে কাশতে লাগল সে। শায়ের ওর পাশেই বসেছিল তাই দ্রুত পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।