পাথরের বুকে ফুল | পর্ব – ৩৫ | সর্বশেষ পর্ব

ওয়াসেনাত আর অরিএান হাটছে।তাদের সাথে সাথে রিমন আর রিমি।অরিএান জোড় পূর্বক ওয়াসেনাতের হাত নিজের হাতে কবজা করে রেখেছে।মানে নিজের হাতে আবদ্ধ করে রেখেছে।রিমি প্রচণ্ড রেগে আছে রিমনের উপড়।আর রিমন বেচারা যতবার পা ফেলে রাস্তায় তত বার সরি বলে চলেছে।ইশশশ বেচারা।পিছঢালা রাস্তা।রাতে হালকা পাতলা বৃষ্টি হয়েছে তাই এর রংও কিছুটা পরিবর্ত হয়েছে।রাস্তাটা ঘাড়ো রংয়ে রূপ নিয়েছে।ওয়াসেনাতের হালকা হালকা শীত লাগছে।ঠান্ডা আবহাওয়া তার উপড় ঝিনিঝিনি বাতাস। বাতাসে সবার কাপড়গুলো দোল খাচ্ছে। অরিএান নিজের জ্যাকেটা খুলে ওয়াসেনাতকে পরিয়ে দেয়।ওয়াসেনাত নিজের চোখজোড়া সরুকরে বাঁকিয়ে অরিএানের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট জোড়া প্রশারিত করে।তারপর আবার হাটা ধরে।ওয়াসেনাত রাস্তার চারপাশে দেখছে।এই শহরটাই দিনের আলো ফুটতেই কতটা ব্যস্ত হয়ে পরে তা না দেখলে বুঝা মুশকিল। আকাশের দিকে তাকাতেই সে এক চমৎকার সকাল আবিষ্কার করেছে।অতি আগ্রহ নিয়ে সে অরিএান, রিমি,রিমকে দেখাতে শুরু করে।ওয়াসেনাত প্রতিটি সকালই নিজের ব্যালকুনিতে দাড়িয়ে উপভোগ করে কিন্তু আজ ব্যাপারটা ভিন্ন।আজেই সে এই ব্যস্ত শহরের উপড় সূর্যের প্রথম কিরণ প্রতিফলিত হতে দেখে প্রচণ্ড ভাবে আনিন্দিত। ওয়াসেনাত হুমায়ন আহামেদের শুভ্র উপন্যাসে পরেছে প্রতিটি সকালই নতুন ভাবে শুরু হয়।কিন্তু এটা তার ধারনার বাহিরে ছিল।তার ধারনার মতে সূর্যত প্রতিদিনই তার কৃষ্ণচূড়ার মাথার উপড় দিয়ে উদিত হয়।এতে নতুনের কি আছে।হুমায়নের এই বাক্যকে ভুল প্রমান করতেই সে প্রতিদিন নামাজ পড়ে অতি আগ্রহ নিয়েই ব্যালকুনিতে দাড়ায় আর সেই বইয়ের সেই লাইন পরতে পরতে সকাল দেখে।কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হল সে কখনো নতুন ভাবে সকাল দেখে না।তাই তার মনে হয় এই বাক্য সত্যি না।ওনি বেচেঁ থাকলে তার সাথে স্পেশাল ভাবে দেখা করে সে এর ব্যাপারে বলতো বলে ঠিক করে কিন্তু ওনি তো আর নেই।।কিন্তু আজকে তার মনে হয় না আসলে সে প্রতিটা সকালই নতুন ভাবে দেখেছে।কিন্তু আজকের সকাল না দেখলে এটা সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারত না।কেন তার আজ এটা মনে হচ্ছে?? এটার উওরও সে পেয়ে গেছে।আসলে দোষ ধরবে বলে বা কাউকে ভুল প্রমাণিত করতে চাইলে তার সত্যতা কিছুতেই নিজের চোখে ধরা পরে না।আসলে সে কখনো এমনেই সকাল দেখত না। সে হুমায়নের ভুল ধরতেই সকাল দেখত।এই মহান সত্য থেকে সে বেখবর ছিল।ভাবতেই নিজের লজ্জা হচ্ছে তার। আল্লাহও বলে ছিলেন তুমি অন্যের ছোটছোট দোষ খুজে বের করনা.. আমিও কেয়ামতের দিন তোমার ছোট গুনাহ মাফ করে দিব……ওয়াসেনাত রাস্তার পাশে বসে পরেই কথা গুলো সবাইকে বলল।অরিএান হা করে তাকিয়ে আছে মেয়েটা কোথা থেকে কোথায় চলে যায় আল্লাহ যানে।তারা আবার হাটা ধরে।সকালে নামাজ পড়েই সবাই অরিএানের বাসা থেকে বেড়িয়ে পরে।গন্তব্য আগে ওয়াসেনাতকে বাসায় দিয়ে এসে রিমির বাবা মার সাথে কথা বলবে।হঠাৎ ওয়াসেনাতের ইচ্ছা হল হেটে হেটে যাবে। এত দূর তো হেটে যাওয়া যাবে না।আবার ওয়াসেনাতের কথাও না রেখে পারা যাবে না তাই তারা কিছুক্ষণ হাটবে তারপর গাড়িতে উঠে যাবে।তাই অরিএান গাড়ি নিয়ে এসেছে তবে ডাইভার চালাচ্ছে।ওয়াসেনাত এবার অরিএানের একটা হাতের বাহু ধরে মাথাটা তার কাধে দিয়ে হাটা শুরু করে।অরিএান মুচকি হেসে ওয়াসেনাতের সাথে আরো ঘেঁষে হাটা শুরু করে।রিমনও কম যায় না রিমির হাতটা শক্ত করে ধরে হাটা শুরু করে।রিমি রাগি রাগি চোখে তাকালে রিমনের বিহেভিয়ার এমন যে সে পরোয়াই করে না।ব্যাপারটা ভেবে রিমি মনে মনে হেসেঁ উঠে।

অরিএানের জীবনে সেরা দুটি সকালই ওয়াসেনাত তাকে দিয়েছে। তার জীবনে আর কিছু চায়ই না। এই মেয়েটা হলেই হবে।সকালের লালছে কিরণে ওয়াসেনাতের রূপ মনে হয় আরো ফুটে উঠেছে।ওয়াসেনাত চোখ বুজেই হাটছে।অরিএানের মনে হচ্ছে পৃথিবীর সেরা সুন্দরী মেয়েটাও ওয়াসেনাতের রূপের কাছে ফিকে পরে যাবে। হতে পারে বেহেস্তের হুরও তার রূপের কাছে কিছু না।হয়ত তাদের রূপদিয়ে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এই মেয়েটার শুধু উপরের রূপই নয় ভিতরের রূপও অসাধারণ। যার সন্ধান পাওয়া মশকিল। যারা পেয়েছে পাগল হয়েছে।কেউ পেয়ে হয়েছে আবার কেউ হারিয়ে পেয়েছে।যেমন ইহান। হ্যাঁ ইহান এখন মানুষিক ভাবে অসুস্থ। শুধু সে না তার মাও।অমিতা পৃথিবীর সব চাইতে খারাপ মা নিজেকে ভাবতে ভাবতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পরে।আর ইমান… নিজের ভুলগুলো বুজতে পারাই তার বড় ভুল ছিল।সে নিজের ছেলেকে এবং প্রিয়তমাকে এভাবে দেখাই তার শাস্তি। অরিএান ঠিক বলেছে।উপরওয়ালা কখনো অন্যায় কারীকে ছেড়ে দেয় না।প্রকৃতি নিজের প্রতিশোধ নিজেই নেয়।অরিএান আকাশের দিকে তাকিয়ে তার সৃষ্টি কর্তাকে কৃতজ্ঞতা যানায়।তিনিই তো তার শূন্যে থালা ভরিয়ে দিয়েছে।ওয়াসেনাতের মত মেয়েকে তার জীবনে পাঠিয়েছে।তাকে হেদায়া করেছে।তার জীবন এখন গোলাপ গাছে ফুল ফুটলে যেমন ঘ্রাণে ঘ্রাণে মোহনিয় হয়ে থাকে ঠিক একই ভাবে এই মেয়েটা তার জীবনকে মোহনিয় করে তুলেছে।অরিএান হঠাৎ বলে উঠে……
__ভালোবাসি..

ওয়াসেনাত নিজের বুজে থাকা চোখগুলো খুলে তাকায় মনে হয় সে ভয়ঙ্কর কিছু শুনেছে।আবার অরিএানের মুখের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসেঁ উঠে…সেও মনে মনে বলে উঠে……
__আমিও ভালোবাসি খুববব করে

কিন্তু মুখে বলতে পারলো না।লজ্জায়।বাংলাদেশের বেশির ভাগ মেয়েরাই স্বামীকে ভালোবাসি বলতে লজ্জা পায়।যেখানে বিদেশিরা পান্তাভাতের মত ইজি মনে করে রাস্তায় দাড়িয়ে লিপ কিসস করাটাকে কিছুই মেনে করে না।একজন স্যার বলে ছিল বাঙালীর যা গোপনে করার কথা তা প্রকাশে করে আর যা প্রকাশে করার কথা তা গোপনে করে।যেমন ভালোবাসাটাতে তো গোপনের কিছু নেই। এটা তো প্রকাশের জিনিসস কিন্তু বাঙালীরা এটা গোপনে করে। ছেলেরা নিজের বউকে গোপনেই ভালোবাসি বলে আর মেয়েরাতো বলতেই পারেনা।মারামারি জিনিসটা যেখানে গোপনে করা উচিত মানুষ সেটা সামনা সামনি করে এটাই বাংলাদেশ। তবে যেমনই হোক আমার দেশশশ।ওয়াসেনাতের আজকে নিজের কলেজের সেই স্যারের কথাটা মনে পরতেই সে আবার মুচকি হেসে উঠে মনে মনে ভাবে স্যার সেদিন সঠিক বলেছেন।কিন্তু অরিএান তেমন না।সে তো প্রকাশেই ভালোবাসি বলে।আসলেই সে লাকি… খুব করে…

অরিএান তার দাদা আর রিমন একটা সোফায় বসে আছে।আর সামনের সোফায় বসে আছে অরুপ আর তার বাবা মা।রিমি অপরাধীর মত মাথাটা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। আর রিমনের দিকে তাকিয়ে রাগে ফসফস করছে।ছেলেটার হাবভাব এমন যেন সে পৃথিবীর সবচাইতে শক্তি ধর ব্যক্তিদের নিয়ে বসে আছে।নো টেনশন। রিমির বাবা তো শুনেই মাথা গরম করে বসে আছে।ছেলে যেমনই হোক এতে তার সমস্যা নেই কিন্তু তাই বলে মেয়েকে তুলে নিয়ে বিয়ে করবে। সাহস তো কম না।কিন্তু মেয়ের মতা মতও যানা প্রয়োজন তাই মেয়েকে বলে উঠে…..
__রিমি তোর কি এই ছেলেকে পছন্দ না??বলে দে?? আমি তো একে জেলে দিব এটা কেমন কথা মেয়েকে তুলে নিয়ে বিয়ে করবে।আমি মানি না এই বিয়ে। তুই তোর মতামত দে??
__এগুলো কেমন কথা। তুমি চাইলেও এমন করতে পারোনা আমিও কিন্তু মন্ত্রী। আর রিমন আমার নাতি সো ওর ব্যাপারে ভেবে কথা বলবে।ভালোবাসাটা ভুল না। কিন্তু ও যেভাবে বিয়ে করেছে সেটা ভুল ছিল। তার জন্যে আমরা লজ্জিত প্লাসস ক্ষমাপর্থি।আমি চাই ওয়াসেনাত আর অরিএানের সাথেই ওদের বিয়ে দিব তাও আজই।এখন সাতটা বাজে আর সব আয়োজন শেষ প্রায়।ওয়াসেনাতের বাবার সাথেও কথা হয়ে গেছে।তোমাদের মতামতের প্রয়োজন ছিল।তাই এখানে আশা।

রিমির বাবার মাথায় আকাশ ভেঙে পরেছে টাইপের করে মুখটা করে ফেলেছে।আসলে যেকোনো বাবার কাছেই ব্যাপারেটা ভয়ঙ্কর। সকাল সাতটা বাজে যদি কেউ এসে বলে আপনার মেয়েকে তুলে নিয়ে বিয়ে করেছি আর এখন আজই অনুষ্ঠান করবো।ভায়াবহ ব্যাপর।তবুও তিনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে….
__রিমি যা বলবে তাই হবে।ও মানলে বিয়েটা মেনে নিবো ও না মানলে নিবো না।

রিমনের রিলেক্স থাকা মুখটা চুপসে গেছে।সে করুন চোখে তাকিয়ে আছে রিমির দিকে।যদি মেয়েটা উল্টাপাল্টা বলে তবে তো তার সংসার করার সাদ শেষ।বেচারা।রিমি একবার রিমনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে…..
__বাবা ওকে আগে থেকেই আমার পছন্দ ছিল।তোমাকে কালই বলতাম কিন্তু তার আগেই যাই হোক বিয়ে জীবনে একবারই হয়। আমারো হয়েছে।তাই আমি ওর সাথেই থাকতে চাই শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত।

এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে দেয় রিমি।বাবা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেও মেনে নেয়।তার মেয়ের ভালো থাকা টাই ইম্পরট্যান্ট আর ওয়াসেনাত যে বাড়িতে থাকবে সেখানে তার মেয়েও ভালো থাকবে।তাই তিনি মেনে নেয়।রিমন তো অবাক এটা শুনে সে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।রিমি তাকে পছন্দ করে।ইশশশ তার তো সবার সামনেই নাচতে ইচ্ছে করছে।

চারিদিক আলো আর আলো। এ যেন একটা আলোর মিলন মেলা।আসলেই আলোরই মিলন মেলা।আজকে যে ওয়াসেনাত অরিএানের বিয়ে বলে কথা।তবে আজ একটা না দুইটি বিয়ে একসাথে। রিমি আর ওয়াসেনাত একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের দৃষ্টি একদম সরছে না।ওয়াসেনাত আজ ঘাড়ো খয়েরি রং এর ওই দিনের লেহেঙ্গাটা পরেছে। তার সারা শরীর জুড়ে সবুজ ডাইমন্ডের গহনায় মোড়ানো। মাথার ঘোমটা টা দিয়ে তার মুখ ডেকে দেওয়া হয়েছে।কিন্তু নেটের ওড়না হওয়ায় ওয়াসেনাতের উজ্জ্বল চেহারাটা দৃশ্যমান।রিমি আজ লাল রং এর লেহেঙ্গা পরেছে।তাকেও অসাধারণ লাগছে।তার গায়ে লাল কহিনুরের গহন।দুজনেকেই আজ চোখ ধাঁদানো সুন্দর লাগছে।তারা নিজেদের চোখ নিজেদের সামনে থেকে সরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে।দুজনের মুখেই হাসি। তবে চাপা কষ্টেরও ছাপ রয়েছে।শত হোক আজ তারা নিজেদের আপন মানুষগুলোকে ছেড়ে চলে যাবে।

অরিএান আজ নিজেকে কালো আর খয়েরীতে সাজিয়েছে।অরিএান আজ কালো শেরওয়ানি পরেছে সাথে খয়েরী কাপড়ে বাধা পাগাড়ি আর বিশাল খয়েরী রং এর ওড়নাটা তার বাম হাত পেঁচিয়ে এক সাইডে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।রিমনও সেইম সেজেছে কিন্তু তার পাগড়ি আর ওড়নার রং রিমির লেহেঙ্গার সাথে মিলিয়ে পরা হয়েছে।ওয়াসেনাত আর রিমিকে নামতে দেখে অরিএান আর রিমন এগিয়ে গিয়ে হাতগুলো বাড়ি দেয়।ওয়াসেনাত আর রিমিও তাদের হাতগুলো ধরে কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা আর এক পাও নড়ছে না।ওয়াসেনাত আর রিমি বারবার হাত ঝাড়ি দিচ্ছে কিন্তু তাদের কারো হেল দুল নেই এক দৃষ্টিতে তারা ওয়াসেনাত আর রিমির দিকে তাকিয়ে আছে।তারা যেন অষ্টম আশ্চর্য জনক কিছু দেখছে।ওয়াসেনাত আর রিমি একবার নিজেদের দিকে তাকায় তো একবার ওদের দিকে।তারা চোখে চোখে ইশারা করে খুব জোড়ে তাদের চিমটি কাটে। বেচারারা এবার ব্যথা প্লাসসস লজ্জা একসাথে পায় আর দুজনেই হেসে তাদের এগিয়ে নিয়ে আসে।সবার দৃষ্টি তাদের দিকে ইশশশশ কি সুন্দর জুটি। আল্লাহ বানিয়েছে বলে কথা।আবার কবুলল বলে দুইজোড়াই বিয়ে পড়ানো হয়।বিদায় বেলায় ওয়াসেনাত আর রিমির কান্না দেখে অরিএান আর রিমনের চোখে পানি চলে আসে।তারা মনে মনে বলে উঠে তাদের মেয়েদের তারা কখনো বিয়ে দিবে না।তাদের আগে যানা ছিলনা মেয়ের বাবা দেরও এত কষ্ট হয়।তাদের ধারনা ছিল বাবারা মেয়েদের বোঝা মনে করে আসলে যে কথাটা কতটা মিথ্যা তা ওয়াসেনাতের বাবা যখন বলেছে… আমার মেয়েকে আমার কাছেই রেখে দি বাবা??এমন হৃদয় কাপানো কথা সহজে আসার কথা না।তিনি যে তার মেয়েকে কত ভালোবাসে এটা তার প্রমান ছিল….কথাগুলো ভেবেই অরিএান আর রিমন দীর্ঘশ্বাস নেয়।এটাই নিয়তি…..

নতুন বউ এভাবে হকস্টিক দিয়ে যদি ঘরের জিনিস ভাঙে ব্যাপারটা ভয়ঙ্কর। কিন্তু এই ভয়ঙ্কর ব্যাপারটা রিমন আর অরিএান অতি মজার মনে করে সোফায় গা এলিয়ে দেখছে।তবে ব্যাপারটা সবচাইতে দাদাজানের হৃদয় কাপাঁছে।তার নতুন দুই নাত বউ কোথায় তাকে একপেগ দুইপেগ সার্ভ করে দিবে তা না তারা সব বৌতল আরামছে ভাঙছে। মনে হচ্ছে এটার চাইতে মজার ব্যাপার আর নেই। ব্যাপারটা ভাবতেই তার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তিনি অতি ভয় নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।তাকে দেখে এখন পাচঁ বছরের বাচ্চার মত লাগছে।সে অন্যায় করেছে আর তার মা তাকে শায়েস্তা করছে।বেচারা বুড্ডা দাদাজান 🤣🤣সব মোটামুটি ভেঙে ওয়াসেনাত লেহেঙ্গা পড়া অবস্থায় কোমড়ে হাত দিয়ে এসে দাদাজানের সামনে দাড়িয়ে শাসানো গলায় বলে উঠে……
__দাদাজান আপনার বয়স হয়েছে।আর আপনি কি না এই সব ছাইপাঁশ খান!!কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার!!আপনি জানেন এগুলো শরীরের জন্যে কতটা ঝুঁকি পূর্ন। আর আপনারা ওনাকে এগুলো কিভাবে খেতে দেন..(অরিএান আর রিমনের দিকে তাকিয়ে)
__ওরা নিজেরাইত খেয়ে থাকতো আগে। এখন খায়না দেখে সাধু সেজে বসে আছে(নিচের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে)
__অতশত বুঝি না আজকে থেকে এগুলো এ বাসায় দেখছিত আপনার যে কি হবে আল্লাহ মালুম..
__মা আমাকে ছোটবেলায় এভাবে বোকত।ওনি নাই তাই তো এমন ভোখে গেছি। (কাঁদোকাঁদো গলায় বলে উঠে)
__কে বলেছে মা নেই আজ থেকে আমি আপনার মা আর আপনি আমার বুড়া ছেলে(বলে খিলখিল করে কোমড় দুলিয়ে হেসে উঠে)

অরিএানের দাদাজান সবাইকে অবাক করে ওয়াসেনাতকে জোড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।অরিএান কখনো তার দাদাকে কাদঁতে দেখে নি এমনকি বাবার মৃত্যুর সময় চোখের পানি পড়ার আগেই মুছে ফেলেছিল। তার এই অবস্থা দেখে তারাও অবাক হয়ে সোফা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে।রিমি এবার এগিয়ে এসে বলে উঠে…..
__সব আদর ওর আমির নাই??(মুখ কালো করে)
__আসো আসো তুমিও তো আমার মা…

দাদাজান দুই নাতবোকে জোড়িয়ে আছে অরিএান আর রিমন এগিয়ে গিয়ে তারাও সবাকে একসাথে জড়িয়ে নেয়।তাদের দেখেই মনে হচ্ছে সুখি পরিবার।….. 💕টাকা পয়সা সব থাকলেও একটা ভালো নারী সব ঘরের জন্যে কতটা প্রয়োজন এটা তার প্রমান।

অরিএানের রুমে ডুকে ওয়াসেনাত এটু অবাক হল। এটা আসলে কার রুম ভেবে পাচ্ছে না।দেখে মনে হচ্ছে তার রুম কারন দেওয়াল গুলতে ওয়াসেনাতের নিজের বাসার রুমের মত রং করা হয়েছে।ইশশশ একদম তার নিজের ঘরের মত।ওয়াসেনাতকে বাহিরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অরিএান তার কোমড় ঘেঁষে হাত রেখে বলে উঠে….
__তোমার যাতে মনে না হয় এটা আমার ঘর।তোমার মনে হবে এটা তোমার নিজের রুম আর আমি তোমার রুম পার্টনার।

ওয়াসেনাত মাথাগুঁড়িয়ে অরিএানের হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।ইশশশ কত সুন্দর ছেলেটা।ওয়াসেনাতের ভাবনায় বেঘাত করে অরিএান ওয়াসেনাতকে কোলে তুলে নিয়ে ভিতরে নিয়ে আসে। সম্পূর্ন রুম ফেইড়ি লাইটদিয়ে সাজানো।রুম জুড়ে সব সাদা গোলাপের ছড়াছড়ি। অরিএানের মনে হচ্ছে সাদা গোলাপের মাঝে ওয়াসেনাত একটা টকটকে লাল গোলাপ।অরিএান আলমেরা থেকে একটা লাল শাড়ি নিয়ে এসে বলে।…..
__আমার খুব সখ তোমাকে লাল শাড়িতে চুল ছাড়া রুপে দেখবো।প্লিজজ সুযোগটা কি দিবে??

ওয়াসেনাত মুচকি হেসে ওয়াসরুম থেকে ব্লাউজ আর পেটিগোট পরে লজ্জায় জড়োশর হয়ে অরিএানের সামনে দাড়ায়।অরিএান ওয়াসেনাতের এমন রূপ দেখে শুধু হা করে তাকিয়ে আছে।তার হাত পা কাপঁছে। যে কি না নানা মেয়ের শরীর নিয়ে খেলেছে আর আজ সে নিজেই কাপঁছে ভাবতে ওয়াসেনাতের হাসি পাচ্ছে।কিন্তু কিছু বললনা।অরিএান তার কাপাঁ হাতে ওয়াসেনাতের দৃশ্যমান জায়গাগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে শাড়ি পড়াতে গিয়ে সে ঘামে একাকার হয়ে গেছে।অরিএান শাড়ির আচলটা ওয়াসেনাতের বাহুতে জড়িয়ে তার খোঁপাটা খুলে খুব যত্নে চিরনি দিয়ে আছড়ে দেয়।ওয়াসেনাত শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।ছেলেটা কতটা যত্নবান তার প্রতি।তার প্রতিটা জিনিস, প্রতিটি কাজ সে নিখুঁত ভাবে করবে।অরিএান এবার নিজের শেরওয়ানি চেন্জ করে একটা সাদা পান্জাবি পড়ে এসে ওয়াসেনাতকে কোলে তুলে নেয়।ওয়াসেনাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে কোথায় নিচ্ছে তাকে……

অরিএান ওয়াসেনাতকে ছাদে নামিয়ে দেয়।ওয়াসেনাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ইশশশ কি সুন্দর করে সাজানো ছাদটা।আর ছাদের মাঝে মাঝারি সাইজের সাদা পর্দায় অবৃত একটা বিছানা রয়েছে।যাতে সাদা গোলাপের ছড়াছড়ি। ওয়াসেনাত জিগ্যেসুক দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে…. অরিএান বলে উঠে…….
__এটাও আমার সখ ছাদে বাসর করবো(একটু লজ্জা লজ্জা ভাবে মাথা ঝুলিয়ে)

ওয়াসেনাতের এবারও প্রচুর হাসি পাচ্ছে কিন্তু সে হাসছে না।সে অন্য কিছুর পিপারেশন নিচ্ছে। অরিএান এবার ওয়াসেনাতকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওয়াসেনাত অরিএানের সামনে হাটুগেড়ে বসে বলে উঠে……
__আমি না অতশত করে বলতে পারিনা।জীবনে কখনো কোনো ছেলেকে নিজের জীবনে আমি স্থান দি নি।আমার সবই শুধু আপনি মানে আমার স্বামীকে ঘিড়ে।আপনিই সেই ব্যক্তি যাকে আমি সব দিয়ে এখন শূন্যে। আমার কাছে এখন কিছুই নেই।ভালোবাসি…. খুব ভালোবাসি…..

অরিএান স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে।সে কাদঁছে।প্রচণ্ড ভাবে। ওয়াসেনাত বিরক্তি ভঙিতে তাকিয়ে আছে।কারো বউ তাকে প্রপোজাল দিলে কি সবাই এই ভাবে কাদেঁ?? কই সে তো আগে দেখে নি তোবে এখন কেন এমন হচ্ছে। অরিএান হুট করে বসে ওয়াসেনাতকে সর্বশক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে।ওয়াসেনাত ব্যথা পাচ্ছে তবুও তার মুখে জয়ের হাসি…..অরিএান এবার ওয়াসেনাতের মুখটা একটু উঁচু করে ধরে নিজের ভিজাঁ ঠোঁটের সাথে ওয়াসেনাতের ঠোঁট চেপে ধরে।ওয়াসেনাত তো থ মেরে হাতপা ছেড়ে দিয়েছে।হঠাৎ ঝুম ধরে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়।অরিএান একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে এক বিশাল হাসি দিয়ে আবার ওয়াসেনাতের ভেজাঁ ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নেয়।

আজ তাদের ভালোবাসা এক পূর্নতার জোয়াড়ে ভাসছে।সাথে বৃষ্টিও তাদের সাগতম জানাচ্ছে। একটা ভালো সঙ্গের চাইতে জীবনে মহা মুল্যবান আর কিছু না।খারাপকে খারাপ না ভালোই ভালো করতে পারে।অন্ধকারকে আলোই পারে আলোকিত করতে।এটাই ছিললল ওয়াসেনাত আর অরিএানের ভালোবাসার মুল ভাব।……..

সমাপ্ত…

ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন….সব পাঠক পাঠিকাবে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ আমাকে এত এত বালতি ভালোবাসা দেওয়ার জন্যে এবং এই গল্প টাকে। শেষ বলতে কিছু নেই এটা তো ফর্মালেটি।অরিএান ওয়াসেনাতের ভালোবাসারও শেষ নেই।মাএ তো শুরু নতুন জিবন।নতুন ভালোবাসা।সবাই মোটামুটি ভালোবেসেছেন কিন্তু কেউ অল্প ব্যাপার বা অল্প দোষ নিয়েও লাগতে এসেছে তাই একটু মন খারাপ হলে কিছু কথা শুনিয়েছি।তার জন্যে আমি দুঃখীত। আসলে লিখিকা হলে ও মানুষ তো তাই এমন আজগোবি ব্যবহার মাঝে মাঝে করেছি তার জন্যে সরি।আর নতুন গল্প #তুমি~হলেই~চলবে..ওই গল্পে হয়ত অরিএানের চাইতেও বেশি ভালোবাসে এমন নায়ক থাকবে।কালকে থেকে দিবো।আসা করি আপনাদের মন জয় করতে পারবো।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।