পাথরের বুকে ফুল | পর্ব – ৩৩

অরিএান পাগলের মত গাড়ি চালাচ্ছে।তার কাছে নিজেকে পাগলই মনে হচ্ছে। কেমন যেন সব ঘোলাটে লাগছে।জীবনে চলার পথে সে কত বিপদেই না পরেছে। কত ঝড়ঝাপটাই না পার করেছে।কত কষ্ট নিয়ে বড় হয়েছে।কিন্তু কেন যেন এই কষ্ট টাই তার জীবনের সব কষ্টকে হার মানাচ্ছে।সে কিছু তেই এই কষ্ট থেকে নিজেকে বের করতে পাছে না।অরিএানের সেলফোনটা হঠাৎ বেজে উঠলো।অরিএান গাড়ি চালানো অবস্থায় তাড়াতাড়ি সেলফোন কানে ধরে বলে উঠে……
__ওয়াসুকে পাওয়া গেছে…

প্রতিবারের মত এবারও শুধু দীর্ঘশ্বাস শুনতে পেল অপর পাশ থেকে।অরিএান এবার নিজের সর্বোচ্চ রাগ দিয়ে বলে উঠে…….
__ওই শালা কমিশনার তোকে টাকা দিয়ে কাজে কেন রাখা হয়??এখন পর্যন্ত একটা বাচ্চা মেয়েকে খুজে বের করতে পারলি না।তোকেই মেরে পুতে দিবো।দুইদিন থেকে খুজেই চলেছিস কিন্তু একটা খবর ও ঠিকঠাক দিতে পারলি বল??আমি কিন্তু লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি ওয়াসুর কিছু হলে তোদের পুলিশ ফোর্সের কি করবো আই ডোন্ট নো…..

বলেই কলটা কেটে দিল।মোবাইলটা জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল। তার সব কিছুই যন্ত্রনাদায়ক লাগছে।গাড়িটা একটা নিরজন জায়গায় দাড়করিয়ে অরিএান গাড়ি থেকে নেমে পরে।গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে সে ভাবতে শুরু করে কেন সেদিন ওয়াসেনাতকে রাস্তায় ওভাবে রেখে চলে এসে ছিল সে।তার মন তো বলে ছিল ওয়াসেনাতের কিছু একটা হবে।ঠিক সেটাই হল।কথাটা ভাবতেই অরিএানের চোখ দিয়ে গড়িয়ে মোটামোটা পানি পড়া শুরু করে।কাঁদলে নাকি মন হালকা হয় কিন্তু তার বেলায় কেন হচ্ছে না কেন যেন মনে হচ্ছে তার বেলায় মন হলকা হওয়ার বদলে আরো ভারী হয়ে যাচ্ছে।অরিএানের মাথাই কাজ করছে না কোথায় খুঁজবে সে ওয়াসেনাতকে তার মাথাটা কেমন যেন করছে।এই দুই দিনে সে সম্পূর্ন দেশ চুষে ফেলেছে কিন্তু তবুও ওয়াসেনাতের তেমন কোন খোঁজ পেল না।অরিএান কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার গাড়িতে উঠে বসে।একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।গন্তব্য ওয়াসেনাতের বাড়ি।এই দুই দিনে সে ওই একটা জায়গায় শান্তি পেয়েছে।ওয়াসেনাত গায়েবের পর থেকে তার পরিবার একদম ভেঙ্গে পরেছে।তাই অরিএান তাদের সামলানোর চেষ্টাই করে।ওয়াসেনাতের বাড়িতে তার কেন যেন ওয়াসেনাতের উপস্থিতি অনুভব হয়।তার রুমে অরিএান ওয়াসেনাতের গায়ের গন্ধ পায়।সেই গন্ধের সুভাষ নিতেই সে ওয়াসেনাতের রুমে ঘুমায় বিগত দুই দিন থেকে…..

ওয়াসেনাত অন্ধকারে আচ্ছন্ন একটা রুমে হাত পা বাধা অবস্থায় চেয়ারের সাথে হেলান দেয়ি আছে। তাকে বেশ ক্লান্ত লাগছে।চোখে মুখে ঘামের ছড়াছড়ি। হাত গুলোতে লাল দাগ হয়ে আছে।পরনে সেই দিনের পুরনো হলুদ শাড়ি আর হেজাব।হাতের চুড়িগুলো ভেঙ্গে হাতে ডুকে গেছে।তাই হাতের অবস্থা বেশি ভালো না।চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়তে পড়তে এক বিশেষ দাগের সৃষ্ট করেছে।হঠাৎ ঠাসসস করে দরোজাটা খুলতেই ওয়াসেনাত তার দুর্বল চোখগুলো খুলে তাকানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু পারছেনা।সব ঝাপসা মনে হচ্ছে। ওয়াসেনাত কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে উঠে…..
__কেককককে?আমাকে কেন বেধে রেখেছেন??যেতে দেন প্লিজ… কে ও খানে.. প্লিজজজ খোলো এই সব… হাতে ব্যথাও হচ্ছে। আমি আম্মুর কাছে যাবো..প্লিজ ছাড়(কান্না জড়িত কন্ঠে)

সামনের মানুষটা তার দিকে এগিয়ে আসছে। ঝাপসা চোখে সে এটা বুঝতে পেরেছে সামনের মানুষটা একজন মহিলা।তবে কে তা এখনো বুঝা যাচ্ছে না।ওয়াসেনাত এবার নিজের সব শক্তি দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠে…..
__কে আপনি? আর কি চান?কেন বেধে রেখেছেন আমাকে?? আমি বাড়ি যেতে চাই।
__বাড়ি যেয়ে কি করবে মামনি??এখানেই যখন সব পাবে তবে বাড়ি কেন??হুম…..

ওয়াসেনাত এবার তার এলোমেলো মাথা সামনে হালকা এগিয়ে নিয়ে বুঝার চেস্টা করছে কে এই ব্যক্তি.. ব্যক্তিটি তার সামনে চেয়ার টেনে বসতেই ওয়াসেনাত বলে উঠে…..
__আপনি???????
__হুম আমি। তো বল এই দুইদিনে নাকি তুমি পানি ছাড়া কিছুই খাওনি??কেন??স্টাফদেরকে তুমি প্রচণ্ড জ্বালিয়েছ।এটা কিন্তু ঠিকনা।ভালো মেয়েরা কিন্তু এমন করেনা। বাইদা ওয়ে এবার বল কি এমন জাদু আছে তোমার মাঝে যে সব ছেলেরা দেব দাস হতেও রাজি হয়ে যায়।বল কাহিনীটা কি??
__আমাকে বেধে কেন রেখেছেন মিসেসস অমিতা চৌধুরী??
__বলবো বলবো কিন্তু এভাবে নাম নেওয়া কিন্তু উচিত না।আফটার আল কিছুসময়ের ব্যবধানে আমরা শাশুড়ি বউমা হব।একটা ইন্টেরেস্টিং কথা আছে।শুনবে??আচ্ছা আমিই বলি। আমি যখন যুবতি ছিলাম তখন কিন্তু তোমার মতই সুন্দরী ছিলাম। কিন্তু কই আমার পিছনে তো এত ছেলে পাগল ছিল না।তবে তোমার বেলায়।এমনটা হওয়ার কারন কি বলবে??রহস্যটা কি??
__মানুষের মনটা সুন্দর হতে হয়..তার রূপ না.. মনের সৌন্দর্য বড় আপনার তো মনটাই বিষাক্ত।আমাকে যেতে দিন আমার পরিবার অপেক্ষা করছে।
__তোমার পরিবার অপেক্ষা করছে তো আমার কি?? আমার ছেলেও তো অপেক্ষা করতে করতে প্রায় অসুস্থ হয়ে পরেছে।সেটা কি??হুম।কি ভেবে ছিলে আমার ছেলেকে নিজের জালে ফাঁসিয়ে আরামছে ওই অরিএানের সাথে সংসার করবে। তা তো হবে না। আমার কাছে আমার ছেলে ইম্পরট্যান্ট।
__এই আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন না কি।আমি অরিএান খানের বউ আর ওরই থাকবো।আর কি সব পাগলের মত কথা বলছেন?? ছেলে আর আপনি মা হাহাহাহহাহা।মা ছেলের সম্পর্ক আপনি বুঝেন?? আমার জন্যে এটা এ বছরের সেরা হাস্যকর কথা। আপনি নিজেকে মা মনে করেন??
__এই মেয়ে তুমি আমাকে এমন কথা বলতে পারলে?? কিভাবে?? সাহস তো কম না??তুমি আমাকে অপমান করছ??
__অপমান না আমি আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছি আপনি পৃথিবী সব চাইতে খারাপ আর বাজে মা। আসলে আমার চোখে আপনি মা নামের কলঙ্ক.. আমার তো ঘৃন্না হয় আপনাকে দেখলে??
__এই মেয়ে তোর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। কি ভেবে ছিসস আমার ছেলে তোকে ভালোবাসে বলে আমি তোকে ছেড়ে দিবো না কখনো ও না। তুই জানিসস আমি কে??(ওয়াসেনাতের গাল চেপে কথা গুল বলে উঠে)
__আপনি সেই মহিলা যে টাকার জন্যে স্বামীকে রেখে আবার বিয়ে করেছেন আপনি সেই মহিলা যে নিজের লোভের জন্যে রূপ দেখিয়ে একজনকে নিঃশেষ করেছেন।আপনি সেইইই মহিলা যে শুধু টাকার জন্যে ভালোবাসার নাটক করে সেই লোকের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছেন।আপনি সেই মহিলা যে একটা লোকের ভালোবাসাকে হাতিয়ার বানিয়ে তাকে খুন করে নিজে সম্পদশালী হয়েছেন।আর সবচাইতে বড় কথা আপনি সেই জঘন্য মা যে নিজের সন্তানকে চিনতে পারলেন না।তার উপড় অত্যাচার করেছেন।মা হয়ে তাকে লাথি মেরে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। তার সামনে তার বাবাকে মেরেছেন।নিজের অমানুষ ছেলেকে দিয়ে তাকে মার খাইয়েছেন।খুন করার জন্যে বলে গেছেন ছিই।তবুও সে ছেলে কিভাবে আপনাকে ছেড়ে দিল??আমি হতবাক কিভাবে?? আর আপনি কেমন মা আল্লাহ এমন মা কিভাবে বানালো আমি জানি না কিন্তু আমার মনে হয় আপনি মা না মার মত দেখতে ডাইনি..কই আমার মা তো এমন না। তিনি না দেখেই আমার মনের কথা বলতে পারে… না শুনেও আমার.. আমার কষ্ট বুঝতে পারে..আমি ব্যথা পেলে অনেক দূর থেকে তা অনুভব করতে পারে..কিন্তু আপনি সামনা সামনিও চিনতে পারলেন না?কিভাবে??ওর চোখ, ওর নাক, ওর চেহারার কাঠিন সব তো আপনার মতই তবুও চিনলেন না… চোখ থাকিতে অন্ধ প্রবাদটা মনে হয় আপনার জন্যেই কেউ লিখে গেছে…আপনি তো মা নামের কলঙ্ক…

বলতে বলতে ওয়াসেনাত সেন্সলেস হয়ে পরে।ওয়াসেনাতের প্রতিটা কথা আজ না চাইতেও অমিতার মনে তিরের মত লাগছে।সে সব মিলাতে শুরু করে।এই এত বছর বহু বার মিলিয়েছে।কিন্তু এভাবে লাইন বা লাইন মিলাতে পারে নাই।কিন্তু আজ এই মেয়েটা তাকে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে তার কোথায় কোথায় ভুল হয়েছে।অমিতা নিজের মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে।তার মাথা কাজ করছে না।যে সব সত্য সে বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না তাকে সেই সবই ভাবতে হচ্ছে। তার মন বার বার বলছে…সবই সত্য…কিন্তু তিনি মানতে নারাজ।মনকে বার বার বুঝাতে চাচ্ছে এটা সত্য নয়।যদি এটা সত্য হয় তবে তার জীবনের কত বড় ভুল এটা ভাবতে অমিতা পাগলের মত রুম থেকে বের হয়ে যায়।তার কেন যেন দম আটকে আসছে।হয় তো পুরনো করা কঠিন অন্যায় তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।রুম থেকে বেড় হয়ে সে খেয়াল করল সে অরিএানের বাবার পুরনো বাড়িটাতে আছে।তার ছেলের যে কত বুদ্ধি ভাবতেই তার অবাক লাগছে।ইচ্ছে করেই সে ওয়াসেনাতকে এখানে রেখেছে যাতে অরিএানের মাথায়ও না আসে ওয়াসেনাত এমন একটা জায়গায় থাকতে পারে।বাড়িটা তাকে পুরনো স্মৃতিগুলো আরো বেশি করে মনে করিয়ে দিচ্ছে তাই তিনি তাড়াতাড়ি বাসাটা থেকে বেরিয়ে আসে।

আজ আরো একটা বিষণ্ণ সকাল। অরিএানের জন্যে আর একটা ভয়ঙ্কর সকাল। যে সকালে তার প্রিয়তমা নেই সে সব সকাল তার চাই না।কেন যেন তার দম বন্ধ হয়ে আসে এই সব সকালে।ওয়াসেনাতের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে তার জীবনের সব সকালই সুন্দর আর প্রাণবন্ত ছিল কিন্তু এই তিনটে সকালই ওয়াসেনাতকে ছাড়া তার দম বন্ধ টাইপের ছিল।ওয়াসেনাতের ওড়নাটা একবার নাকের কাছে এনে জোড়ে একটা নিশ্বাস নিয়ে চোখ খুলে তাকায়।আজকের সকালটা তার কাছে আরো বিষাক্ত মনে হচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই কিছু জিনিস অপ্রিয় হলেও তা জীনের সাথে এমন ভাবে জরিয়ে থাকে তা কখনো চাইলেও বাদ দেওয়া যায় না।অরিএানের মনে হচ্ছে যদি তার জীবনটা পেন্সিলের লিখা কোনো বই হত তবে সে অনায়াসে খারাপ সময়গুলো ইরেজার দিয়ে মুছে দিত আর তার ফেইড়িপরীর সাথে কাটানো সময় গুলোতেই জীবন থামিয়ে দিত। কিন্তু তা করা যাবে না ভাবতেই তার নিশ্বাস আটকে আসছে।

অরিএান ওয়াসেনাতের মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।তার এখন মনে হচ্ছে ওয়াসেনাত একদিন ঠিক বলে ছিল সত্যি তার মায়ের কোলে জাদু আছে।তা না হলে তার এত কষ্টের সময় এমন ভালোলাগা কাজ করত না।অরিএান নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠে…….
__যদি আপনাকে আম্মু বলে ডাকি ওয়াসু রাগ করবে??ও যদি রাগ করে আমি কিন্তু ডাকবো না।আমি চাই না আমার বউ নাক ফুলিয়ে থাকুক।
__না ও রাগ করবে না।তবে হালকা পাতলা ঝগড়া কিন্তু করবে। সে তার প্রিয় জিনিসের সাথে মোটেও কম্পোমাইজ করতে চায় না।কিন্তু আমি বুঝিয়ে বলব।আমি চাই তুমি আমাকে ওর মতই আম্মু বলে ডাকো।তুমি তো আমার ছেলের মত…(চোখের পানি বাধা বিহিন ভাবে চলছে আর ওনি ধরা গলায় কথাগুলো বলে উঠছে)
__শুধু ছেলের মত(একটু করুন গলায় বলে উঠে)
__না ছেলেই তুমি আমার ছেলে। খুশি
__হুম তবে কেন অপারেশন করাতে চাচ্ছেন না??
__ওয়াসুকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না আর তুমি বলছ আমি চোখ ঠিক করবো আরামছে..না ওকে ছাড়া আমি এমন কিছুই করব না। আর অপারেশন করতে গিয়ে যদি আমি মারা যাই তবে কি আর ওর সাথে কথা বলতে পারবো??না তো আমি আমার মেয়েকে না দেখে মরতে পারি কিন্তু ওর সাথে কথা না বলে না…(কেঁদে কেঁদে বলে উঠে)

রিমন অবাক হয়ে অরিএানের দিকে তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাতের মায়ের কোল পানিতে ভিজিয়ে একাকার অবস্থা করেছে।কিন্তু একটা সাউন্ডও আসছে না কেউ দেখলেও বুঝবে না আসলেই কি অরিএান ওয়াসেনাতের মায়ের কাপড় নিজের চোখের পানিতে ভিজিয়ে ফেলেছে।অরিএান শুধু ভাবছে কত ভালোবাসা থাকতে পারে মায়ের মাঝে।ইশশশশ কিন্তু তার মা… ভাবতেই তার ঘৃন্না হয়।এত ভালোবাসার মাকে রেখে কোথায় তুমি ওয়াসু প্লিজজজ ফিরে এসো।অরিএান নিজের মনে কথাটা কয়েকবার বলে উঠে।তারপর নিজেকে সামলিয়ে বলে উঠে…….
__আম্মু তুমি কি ওয়াসেনাতকে ভালোবাসো??
__জীবনের থেকেও বেশি
__যানো ওয়াসেনাত বলেছে ভালোবাসা মানে ভালো থাকা।তুমি যদি ওকে ভালোবেসে নিজেকে ভালো রাখতে না পার তবে তুমি ওকে ভালোবাসনি।তুমি কি চাও তোমার মেয়ে তোমাকে এসে বলুক আম্মু তুমি আমাকে ভালেবাসো না!!
__কখনই না
__তবে অপারেশনটা করাও।ও যদি এসে দেখে তুমি অপারেশন করাও নি তবে কিন্তু ও অনেক রাগ করবে আর আমার এত সুন্দর তুর্কি স্টাইলের চুলগুলো ছিড়বে আর বলবে তুমি কেন আম্মুকে বুঝিয়ে বলনি… ব্যাপারটা মোটেও ভালো হবে না।আল্লাহ চাইলে হতে পারে তুমি চোখ খুলে প্রথমেই তোমার মেয়েকে দেখবে!!তাই অপারেশন কর।আর দুই ঘন্টা পরেই তোমাকে আমি হস্পিটালে নিয়ে যাব।প্লিজ না করবে না।শুধু মনে রাখো ভালোবাসা মনে ভালো থাকা।

অরিএান প্রচণ্ড রাগ, ঘৃণা, ক্ষোব নিয়ে অমিতার সামনে দাড়িয়ে আছে।আজ দীর্ঘ ১৫ বছর পরে সে এই মহিলার সামনে দাঁড়িয়েছে।যদিও তার জীবনেও এর সামনে আসার ইচ্ছা ছিল না তবুও আজ জীবন বাচাতেই আসা।কারন সে জানে তার জীবনটাকে এর ছেলেই কোথাও লুকিয়ে রেখেছে।অরিএান সাজা সোফায় বসে পা গুলো সামনের কাঁচের টেবিলটাতে তুলে দেয়।অমিতা শুধু হা করে তাকিয়ে আছে।সে এখন বিস্ময়ের সপ্তমাংশে আছে।সে এটা দেখে অবাক হচ্ছে ওয়াসেনাত সত্যিই বলেছে অরিএান হুবহু তার মতই হয়েছে।সেই চোখ সেই ঠোঁট সেই নাক কিন্তু কিভাবে।অমিতা মনে মনে ভাবছে ছোটো বেলায় তো সে সম্পূর্ন তার বাবার মত ছিল।হঠাৎ তার মাথা চট করে ঘুড়ে উঠে.. বাবার মত মানে।সে এত বছর এটা মাথাই আনেনি অরিএান ছোটো বেলায় তার বাবার মত ছিল।তার মানে…তার মনে টা অমিতা ভাবতেই তার সারা শরীর ঘামে একাকার হয়ে গেছে।অমিতা আরো অবাক হচ্ছে এটা ভেবে তাকে আর অরিএানকে পাশাপাশি দাড় করালে যে কোনো পাগলও বলতে পারবে তারা মা ছেলে।হায় আল্লাহ!! কথাটা ভাবতেই তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠছে।তার এমন অবস্থা দেখে পাশের কাজের মেয়েটা তাকে একটা চেয়ার এনে বসিয়ে পানি খাওয়ায়।অমিতার এমন বেহাল অবস্থা দেখে অরিএান হু হা করে হেসে বলে উঠে………
__ভয় নেই জেলে দিব না।কিন্তু আমার জানকে না দিলে জানে মেরে দিব।কথায় রেখেছেন ওকে মিসেসস অমিতা চৌধুরী??(প্রচণ্ড রাগি গলায় বলে উঠে)

অমিতা এখনো কোনো জবাব দিচ্ছে না। অরিএানের মাথায় আ০গুন জ্বলছে।তার মনে হচ্ছে লাবার মত তার মগজ টকবগ করছে। অরিএান নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে সামনের কাঁচের টেবিলটা তুলে খুব জোড়ে উপড়ে তুলে নিচে ছুড়ে দেয়।সাথে সাথে এক বিকট সাউন্ডে অমিতা কেঁপে উঠে।অমিতা ভেবে পাচ্ছেনা কিছু। ছেলেটার রাগটাও তার মতই হয়েছে।অরিএান রাগে ফসফস করছে।অমিতা এটা বুঝতে পেরেছে অরিএান ওয়াসেনাতকে পাগলের মত ভালেবাসে শুধু তাই না ওই মেয়ের জন্যে দুনিয়ার সব রকমের পাগলামিও করতে পারবে।সব কিছু ধ্বংস করতেও একবার ভাববে না।কিন্তু তার ছেলেও তো ওই মেয়েকে ভালোবাসে তাকে না পেলে তার ছেলেও পাগল হয়ে যাবে তবে সে কার পক্ষে যাবে!!অরিএানের নাকি নিজের ছেলের।সে কি বলে দিবে ওয়াসেনাতকে কোথায় রেখেছে।না এটা সে কি করে করতে পারে মা হয়ে ছেলের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে সে পারবে না। কিছুতেই না।কিন্তু অরিএানের সাথে তো সে একবার না বারবার বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে।সেটার কি হবে…অরিএান কি সত্যি তার….না না তা কেন হবে… ইহানের বাবা তো তকে মিথ্যা বলবে না…যদি হয় তবে সে নিজের…___…যদি এমন হয় তবে অরিএান তাকে কি শাস্তি দিবে.. সে কি অরিএানকে তার জানপাখির ঠিকানা বলে নিজের পাপ কিছু কমাবে…নাকি ইহান…অরিএান… ইহান দুজনের কথা ভাবছে আর নিজের সাথে তর্কবিতর্ক করেই চলেছে অমিতা কিন্তু কিছু মিলাতে পারছে না…ওই দিকে অরিএান নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে চৌধুরী ভিলায় তান্ডব চালাচ্ছে। আর একটাই প্রশ্ন করে চলেছে…..
__আমার জান কোথায়……

এক গ্লাস পানির ঝাপটানিতে ওয়াসেনাত হালকা হালকা করে চোখ খুলে তাকায়।ঝাপসা ঝাপসা চোখে এসে আবার কারোকে নিজের সামনে দেখে ভাঙ্গা গলায় বলে উঠে………………
__অমিতা চৌধুরী প্লিজ আমাকে আম্মুর কাছে যেতে দিন।অরিএান আর আমার দুইদিন পরেই অনুষ্ঠান ও আমার জন্যে অপেক্ষা করবে। প্লিজজজ যেতে দেন।আমি পায়ে পড়ি প্লিজজজ যেতে দেননননন
__অরিএানকে ভুলে যাও জান এখন তোমার সব জুড়ে শুধু ইহান থাকবে…সরি জান তোমার মনে হয় খুব লেগেছে…ইশশশশ কত ব্যথা পেয়েছ..(ওয়াসেনাতের হাতের কবজিতে ছুঁয়ে ছুঁয়ে বলে উঠে)
__আপনি আমাকে ছুঁবেন না… আপনার সাহস তো কম না…ছুঁবেন না.. ইহান..অরিএান জানলে মাটিতে পুতে ফেলবে(চিৎকার করে কাপাঁ গলায় বলে উঠে)
__তাই নাকি.. ওই অরিএানকে আমি ভয় পাই নাকি..আর তোমার মুখে যাতে অরিএানের নাম আর না শুনি। শুধু ইহান বলবে শুধু ইহাননন…আর কিছুক্ষণ পরে আমাদের বিয়ে হবে…ওওও বিয়ের আগে ওই অরিএানের সাথে ডিভোর্স হওয়া প্রয়োজন ঠিক বলেছিনা আচ্ছা তারো ব্যবস্থা করব।
__আমি মরে যাবো তবুও ওই পাপ কাজ করব না।আল্লাহ যা ঘৃন্না করে তার মাঝে ওই কাজটাও একটা।আর বিয়ে মরে যাবো ধরকার হলে তবুও তোকে করব না।আমার বিয়ে একবারই হয়েছে।আর ওটাই আমার প্রথম এবং শেষ। আর আমি অরিএানের নাম মুখে আনতে হবে না ও আমার হৃদয়ে আছে।হ্যাঁ আমি ভালোবাসি অরিএান খানকে।খুব ভালোবাসি।আমি ওয়াসেনাত বিনতে তৌপিক নিজের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ওই অরিএান খানকেই ভালোবাসি এবং বাসবো……(মাথাটা উপড়ে তুলে চিৎকার করে বলে উঠে)

ইহানের মাথা গরম হয়ে গেছে ওয়াসেনাতের মুখে এমন কথা শুনে তাই রাগে ক্ষোবে প্রচণ্ড জোড়ে ওয়াসেনাতের গালে থাপ্পড় মারে।থাপ্পড়ের কারনে ওয়াসেনাতের গালে পাচঁ আঙ্গুলের দাগ রক্তের মত ভেসে উঠে।তার ঠোঁট জোড়াও দাতেঁর সাথে লেগে কেটেঁ রক্ত পরা শুরু করে।ওয়াসেনাত রক্তাক্ত ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে ক্লান্ত মুখে এক হৃদয় কাপাঁনো হাসি দেয়ে বলে………
__ভালোবাসায় কষ্ট থাকাটাই স্বাভাবিক। কারন ভালোবাসা তো গোলাপের মত একে পেতে হলে কাটাঁ তো লাগবেই…এটাই আমার কাটাঁ, এই যন্ত্রনা আমাকে বার বার বলছে ভালোবাসোস তুই হ্যাঁ তুই সত্যিই ভালোবাসোস অরিএানকে।হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ভালেবাসি খুব যত্নে ভালোবাসি অরিএানকে।

ওয়াসেনাতের এমন হাসি ইহানকে আরো রাগিয়ে দিয়েছে।সে আরো একটা থাপ্পড় দিয়ে বসে সাথে সাথে ওয়াসেনাত সেন্সলেস হয়ে যায়।ইহান এবার হাটুগেড়ে বসে পড়ে।ওয়াসেনাতের কাটাঁ ঠোঁট ছুঁতে চেয়েও ছুঁয়ে দেখলো না।সে হুহু করে কেঁদে উঠে।ইশশশশশ কেন ওয়াসেনাতের মুখের ভাষা গুলো তার জন্যে হয় নি। কেননননন(বলেই এক বিকট চিৎকার করে উঠে)…ইহানের চিৎকারে সম্পূর্ন রুম সহ বাড়ি কেঁপে উঠে…..

অরিএান রক্তাক্ত হাতে ফ্লোরে বসে চিৎকার করে বলছে…..
__আমার একটাই বাঁচার মানে প্লিজজজ ওকে দিয়ে দেন…আপনাদের তো সব আছে।কিন্তু আমি আমি তো নিঃশ্ব
ও ছাড়া কিছুই নেই আমার… কিছু না…প্লিজজজজ দিয়ে দেন…….
🍁ভালোবাসা এক যন্ত্রনা যা সবার হৃদয় কাপাঁছে।এমনটা কিন্তু নয়।কিন্তু ওই যে ভালোবাসা হল গোলাপের মত.. পেতে হলেতো কাটাঁ লাগবেই ।সবাই কষ্টে আছে।আসলে ভালোবাসা কি??🍁🍁
আমি বলি……
ভালোবাসা হল এক সুপ্ত অনুভূতি
যা একবার কাউকে ঘায়েল করলে
তা জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত নিজের রূপ রং এর কোনো পরিবর্ত করে না।
ভালোবাসা মানে এক অনন্ত প্রতিশ্রুতি…..
আমি ছিলাম, আছি,থাকবো
ভালোবাসা তো এমনই হয়🍁🍁🍁🍁
হাফসা……………….🍁
অরিএানও ভালোবাসেছে,ইহান ও,অরুপও একজন কে ঘিড়েই সবার ভালোবাসা.. কিন্তু সে!! সে অরিএানের!!উপরওয়ালা তো তার করেই বানিয়েছে সেই ভালোবাসাকে…ভালোবাসা তো ছেড়ে যেতে শিখায় না ভালোবাসা শত কষ্টে আঁকড়ে ধরতে শিখায়।যেমন ওয়াসেনাত…. সে কিন্তু কষ্টের মাঝেও ভালোবাসাকে মনে রেখেছে।এটাই ভালোবাস…………ভালোবাসা যতটা না সহজ একে তার সম্মান সহিত টিকিয়ে রাখা কঠিন…

চলবে……….🍁

ভুলগুলো আল্লহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন………..কয়েক জনের মতে আমি কি ভালেবাসার উপড় PHD করছি নাকি?? কি ভাবে এত থিউরি দি??😂😂সেটা না হয় পরে একদিন বলব…..তবে কমেন্ট গুলা সেই ছিললললল🤣🤣PHD করা সহজ ব্যাপার না আর এটা তো পৃথিবীর সব চাইতে সহজ ভাষায় কঠিন বিষয়!!

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।