পাথরের বুকে ফুল | পর্ব – ৩২

অরিএন হতভম্ব হয়ে চিলেকোঠা থেকে বেড়হয়ে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে ।তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না ওযাসেনাত তার সাথে এমন ভয়ঙ্কর একটা কাজ করেছে।ইশশশ কি মারাত্মক ব্যাপার.. ভাবতেই অরিএানের গলা শুকিয়ে আসছে।এখন তার প্রচণ্ড পানি খেতে ইচ্ছে করছে। শুধু খেতে না তারতো মাথায় ডালতেও ইচ্ছে করছে।অরিএান এখনও আগের মত চোখ বড় করেই তাকিয়ে আছে।তার হাতটা বারবার গলে যেতে চাচ্ছে। ব্যাপারটা তার পছন্দ হচ্ছে না। সে ওয়াসেনাতের দেওয়া প্রথম ছোঁয়া কিছুতেই এভাবে ছুঁয়ে নষ্ট করতে চায় না।তার ভাবনা মতে ছুলেই যদি তার প্রিয়সির প্রথম ছোঁয়া বিলিন হয়ে যায়।না এটা সে কিছুতে হতে দিবে না। তাই সে হাত গুটিয়ে বসে আছে।

ওয়াসেনাতের এখনও প্রচুর লজ্জা করছে। কিছুক্ষণ আগের ঘটানো ঘটনা সে ভুলতেই পারছে না।আসলে সে এটাই ভেবে পারচ্ছে না সে কিভাবে এই ডেন্জারাস কাজ করেছে।কিভাবে পারলো সে এটা ভাবতেই তার লজ্জা দিগুণ রূপ নিতে শুরু করে।ওয়াসেনাত লজ্জায় পরে আর অরিএানের সামনেই যায় নি।রিমি আর সে একসাথেই ঘুরপাক খাচ্ছে। ছাদের এক কোনে।

হলুদের পালা প্রায় শেষ। এতসময় ধরে অরিএান ওয়াসেনাতের দেখা আর পেলনা।কিন্তু অরুপকে দেখে তার খানিকটা বিরক্তি লেগেছে।অরিএান এই প্রথম কোনো বিয়ের ফাংশনে এসেছে তাই তার একটু আকটু অনইজি ফিল হচ্ছে। ওয়াসেনাতের বাবা প্রায় সময় তাকে এসে দেখে যাচ্ছে। অরিএান রিমনের সাথেই বসে আছে আর মোবাইলে অফিসের লোকেদের সাথে কথা বলছে।অন্যদিকে মেয়েরা তো শুধু তাকিয়েই আছে।ওয়াসেনাতদের অনেক মেহমানের মেয়েরা তো তার সাথে একটু কথা বলার জন্যে সুযোগ খুজে বেড়াচ্ছে।তাদের মধ্যে কয়েক জন এগিয়ে এসে অরিএানকে জিগ্যেস করে বসে…………
__হাই। আমি মিপ্তা।
__সো হোয়াট
__না আসলে এখানের সবাইকেই আমরা মোটা মুটি চিনি কিন্তু আপনাকে চিনতে পারছি না।তাই আর কি পরিচিত হতে এসেছি।আপনি অনেক আগে থেকেই এই জায়গায় একা একা বসে আছেন তো তাই আর কি।

অরিএান এবার মোবাইল থেকে চোখ তুলে মেয়েগুলো দিকে একবার তাকায়।তারপর আবার মোবাইলে মনোযোগ দেয়।তার একদম মেয়েদের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয় না বিশেষ করে গায়ে পড়া টাইপের মেয়েগুলো সাথে তো একদমই না।তার জীবনে শুধু একটা মেয়েই ইম্পরট্যান্ট আর সে তার নিজের একান্ত আপন বউ।
__কি হল কথা বলছে না যে??
__আমি ইচ্ছুক নই আপনার সাথে কথা বলতে।

মেয়েটা একটু লজ্জা পেলো।এই প্রথম তার সাথে কেউ এভাবে কথা বলেছে।কলেজের বেস্ট সুন্দরীদের মধ্যে সে অনায়াসে একজন।কত ছেলেযে তার জন্যে পাগল বলার বাহিরে।কিন্তু এই প্রথম অরিএানকে দেখেই তার হৃদয় দোলা দিয়েছে।আর সে পুুরুষই তার সাথে এভাবে তাচ্ছিল্য ভাবে কথা বলছে ব্যাপারটা তার মোটেও ভালো লাগছে না।কিন্তু তবুও বলে উঠে………
__সুন্দর মানুষরা বুঝি এমনই অহংকারী হয়??
__অহংকারের কিছু নেই। একজন মানুষের সব সময় সব জায়গায় কথা বলতে ভালো লাগবে এমন তো নয় মিস।আমার বেলাও তাই।আমি মেয়েদের থেকে মোটামুটি দূরত্বে থাকি।আশা করি বুঝতে পারছেন।সো ডোন্ট মাইন্ড। (মোবাইলের দিকে তাকিয়ে। বিরক্তি ভঙ্গিতে বলে উঠে।)

মিপ্তার কেন যেন অরিএানের এমন কথা খুব ভালো লেগেছে।যাকে বলে হৃদয়ে গিয়ে গেঁথেছে। সে এটা বুঝতে পেরেছে।চেস্টা করলেই অরিএানের মুখ থেকে কথা বের করতে পারবে।তাই তার বাকি মেয়েদের নিয়ে অরিএানের আসে পাশে কিছু চেয়ার এনে বসে পরে।অরিএান এবার প্রচণ্ড বিরক্ত। তার মাঝে রিমনও গায়েব হয়ে গেছে।এটা তাকে আরো বিরক্তি করছে।মিপ্তা আবার বলে উঠে……..
__ওকে যান মাইন্ড করবো না। কিন্তু আমারা তো একটু কথা বলতে পারি।এমন বিয়েতে আপনারও একাএকা বোর লাগছে আমার ও চলেন একজন আর একজন সম্পর্কে যানি। আচ্ছা আমার নাম তো বললাম এবার আপনার টাও বলেন………..
__ওনার নাম অরিএান খান(ওয়াসেনাত মাএই রিমির কাছ থেকে এই পাশে আসতেই তার মাথায় রাগ চটে বসে অরিএানকে মেয়েদের মাঝে বসে থাকতে দেখে।তার মধ্যে তার সবচেয়ে সুন্দরী কাজেনও আছে।ব্যাপারটা তার মোটেও ভালো লাগলো না।মানে মানে বলে উঠে…..
__সুন্দর জামাই হলেও সমস্যা। মেয়েদের কুনজর থেকে বাঁচাতে বাঁচাতে আমার বারোটা বাজবে।অসজ্জকর।

__আরে ওয়াসেনাত তুই ওনাকে চিনছ নাকি??
__হুম বাবার বস ওনি। না চিনে উপায় আছে।(চোখ রাঙিয়ে অরিএানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে)

অরিএান এবার আরো বেশি চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে।এটা কেমন কথা।তার বাবার বস মানে কি??তার নিজের হাজবেন্ট এটা বলতে কি বেশি কষ্ট হয়।ফাউল মেয়ে।সবসময় উল্টাপাল্টা না করলে হয় না।একেই এত ঘন্টা খবর নাই তার উপড় এসেই ব্লেন্ডার করে বসে আছে।আরে আমি যে এত সময় অপেক্ষায় আছি সে দিকে মহারাণীর খবর নাই।উল্ট উড়ে এসে ফালতু কথা বলা।অরিএান দাতঁ মুখ শক্ত করে বলে উঠে………
__কোথাই ছিলে এতক্ষণ??
__এই আপনি তো বলেছেন মেয়েদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলেন আর এখানে দেখি আপনি নিজেই ওয়াসুকে প্রশ্ন করছেন?(মিপ্তার পাশের একটা মেয়ে বলে উঠে)
__আরে ওনি তো আমাকে ভালো করেই চিনে তাই এমন বলছে।দেখি একটা চেয়ারদে। গল্প করি।

ওয়াসেনাত অরিএানের সামনে বরাবর বসে পড়ে।এবার আবার বলে উঠে…..
__মিপ্তা আপু কি যেন বলছিলে??বল
__আরে তেমন কিছু না ওই আর কি ওনার সাথে একটু কথা বলছিলাম। এই আর কি। (লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলে উঠে)

অরিএান এবার চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে পিছনে হালকা ঝুকে ওয়াসেনাতের দিকে তাকিয়ে আছে।ওয়াসেনাত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ ফিরিয়ে বলে উঠে…….
__মি.অরিএান আমার আপু কিন্তু কলেজের সেরা সুন্দরী শুধু তাই নয় যে দেখে সেই ক্রাশ খায়।এক কথায় যাকে বলা যাবে জাতিয়ে ক্রাশ।আপনি কয় বার খেয়েছেন বলবেন।(অরিএানের দিকে তাকিয়ে)
__আমি তো ক্রাশ খাই না। আমি তো মরেছি।(ওয়াসেনাতের দিকে তাকিয়ে)

মিপ্তা এবার চকত করে অরিএানের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকায়।অরিএান আগের দৃষ্টি অব্বাহত রেখে তাকিয়ে আছে।মিপ্তা আসলেই বুঝতে পারে নাই অরিএান ওয়াসেনাতকে বলছে কথাগুলো। সে অরিএানকে বলে উঠে……..
__কি ক কি বললেন আমমি আসলে শুনতে কি ভুল করেছি না তাই জিগ্যেস করেছি।
__আমি কারো রূপে ক্রাশ খাই না।কারন একটাই একজনেতেই মরেছি আমি।সেই প্রান পাখি আমার।যার চোখে আমি নিজেকে ভাসায়।আমার হৃদয়ে যার সুভাস।যার ফুলের পাপড়ি দিয়ে হৃদয় আমার মোহনিত ।সেই আমার একমাএ জীবনের একমাএ ভালোবাসা।(ওয়াসেনাতের সামনে ঝুঁকে)
__মানে(মিপ্তা চোখ পাটাপাটা করে অরিএানের দিকে তাকিয়ে আছে)

অরিএান এবার ওয়াসেনাতের হাত নিজের হাতে অবদ্ধ করে বাঁকা হেসেঁ বলে উঠে……..
__তুমি নিজ দায়িত্বে বল জান।যেহেতু তুমিই প্রথমে ভুল বলেছ।

মিপ্তা এবার প্রচণ্ড অবাক হয়ে বলে উঠে……
__এই আপনি ওর হাত এভাবে ধরে আছেন কেন আর ওকে জানইবা বলছেন কেন??এসব বলে কিন্তু লাভ নাই ওর বিয়ে হয়ে গেছে।ওর হাজবেন্ড জানলে কিন্তু খবর আছে।
__তাই নাকি জান। তা তোমার হাজবেন্ডের নাম টা তো বল আমিও শুনি।(ওয়াসেনাতের হাত আর একটু টেনে)

ওয়াসেনাত শুধু চোখ গোলগোল করে চারিপাশে তাকাচ্ছে ব্যাচারি কোথায় চেয়েছে অরিএানকে শায়েস্তা করবে উল্টা নিজেই ফেঁসে গেছে।অরিএান এবার আবার বলে উঠে…..
__বল ডার্লিং বল……
__না মানে ওনিই আমার হাজবেন্ড।অরিএান খান(মাথা নিচু করে বলে উঠে)
__কি(চিৎকার করে বলে উঠে মিপ্তা)
__হুম এই মহারাণীই আমার কলিজার বউ।আর কিছু জানার আছে মিস মিপ্তা।
__সরি আসলে আমি বুঝতে পারি নি।

সবাই উঠে পরে মিপ্তার সাথে সাথে বেচাড়ি ভাবতেই পারেনি প্রথম প্রেমে পোড়েই ছ্যাকা খাবে।অরিএান এবার ওয়াসেনাতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে…..
__তো জান কি জেন বলেছিলে??ওওও বস।আমি বাবার বস।তো তোমার কি বল??
__আরে আমি কি মিথ্যা বলেছি না কি।আপনি তো সত্যেই বাবার বস তাই নয় কি।
__সহজ ভাষায়.. তোমার কি হই.. বললেই হত।যাই হো এবার বল কোথায় ছিলে??কখন থেকে খুজেই চলেছি।
__আমি ওই দিকেই ছিলাম।
__কোন দিকে?? আর ওটা কি ছিল ওয়াসু!!আমার তো হার্ড এটাক এসে গেল বলে।ইশশশ সম্পূর্ন ঘায়েল আমি। (ওয়াসেনাতের হাত বুকে নিয়ে চোখ বুজে বলে উঠে)

ওয়াসেনাত তাকিয়ে আছে।চোখবুজে থাকলেও কি মানুষকে এত সুন্দর লাগে!!হয়ত..ওয়াসেনাতের মনে হচ্ছে সময়টা এখনেই থমকে যাক..আর ওর হাত অরিএানের বুকের বা পাশের ধাকধাক ধনি ছুঁয়ে দেখুক…..🍁

ওয়াসেনাত রিমির পিছনে দৌড়াতে দৌড়তে হাপিয়ে উঠেছে।তবুও তাকে ধরা মসকিল হয়ে গেছে।কিন্তু ওয়াসেনাত মনে প্রানে শপথ করেছে। আজকে ওর মুখ হলুদে ভড়িয়ে দিবে।তাই দুই হাতের মুঠোয় হলুদ নিয়ে ছাদা সহ বাড়িময় দৌড়ে বেড়াচ্ছে।ওয়াসেনাত এখন পা টিপে টিপে বাড়ির অন্ধকার রুম গুলোতে রিমিকে খুঁজছে। রিমি ছাদ থেকে নেমে ওয়াসেনাতদের বাসায় ডুকে পড়েছে।বাসায় কেউ নেই তাই একটা লাইট জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে।একটা লাইট হলেও ঘরময় আলোকিত করে রেখেছে লাইটের আলোটুকু।ওয়াসেনাত ঝাপসা আলোয় রিমিকে মনোযোগ দিয়ে খুজে চলেছে।পিছনে কারো পায়ের শব্দ পেয়ে ওয়াসেনাত রিমি মনে করে তার এক হাতের হলুদ নিয়ে মুখে লাগতে গিয়েই বুঝতে পারে সে ব্যক্তি রিমি না কারন হল হলুদ কারো বুকে লেগে গেছে।আর যাই হক রিমিতো এত লম্বানা।তাই ওয়াসেনাত ভালো করে দেখার চেস্টা করে বুঝতে পারে ব্যক্তিটি অরিএান। অরিএানের সাদা পান্জাবিতে ওয়াসেনাতের পাচঁ আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট। ওয়াসেনাত হালকা জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলে উঠে……
__সরি আমি দেখিনি আপনি ছিলেন আসলে রিমি মনে করেই আমি হলুদ দিয়েছিলাম।ইশশ আপনার কত সুন্দর পান্জাবিটা এভাবে হলুদ দাগ পরে গেল আমার জন্যে।
__দোষ করলে তো শাস্তি পেতে হয় তাই নয় কি ওয়াসু(ওয়াসেনাতকে দেয়ালের সাথে চেপে বলে উঠে)
__এই এই আপনি কি করছেন..
__তুমি কি জানো শাড়ি পড়লে তোমাকে কত সুন্দর লাগে??না জানো না কারন জানলে তো সব সময় শাড়ি পড়েই থাকতে তাই না জান!!তবে সমস্যা নেই একসাথে থাকা কালিন তোমাকে নিজ হাতে শাড়ি পড়িয়ে দিব।আর হলুদের হাত একদম বুক থেকে সরানোর জন্যে মোচড়ামুচড়ি করবে না।তুমি যানো এই হাত আমার ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ে ওষুধের মত কাজ করে!!তাও তুমি জানো না। জানলে নিশ্চুই সারা জীবন এভাবে হাত রেখে আমার ওষুধ হতে।হবে??

ওয়াসেনাত মনে মনে বহুবার হ্যাঁ বলেছে কিন্তু সামনাসামনি বলতে পাড়ে নি।কেন জেন গলায় কথাটা আটকা পরেছে।অরিএানের এক হাত ওয়াসেনাতের কোমড় জড়িয়ে আছে আর এক হাত ওয়াসেনাতের ডান হাত নিজের বুকের বা পাশে চেপে রেখেছে।হালকা আলোয় দুজকেই খুব সুন্দর লাগছে।ওয়াসেনাতের মুখের একপাশে রিমির লাগানো হলুদ লেগে আছে।সাদা লালের মিক্সরনের মুখে হলুদ জাস্ট্ অসাধারণ লাগছে।অরিএান কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে খুব যত্নে নিজের ঠোঁট জোড়া ওয়াসেনাতের গালে ছুঁয়ে দেয়।ওয়াসেনাত কারেন্টের ছাটাকা লাগলে যেভাবে কাপে ঠিক একুই ভাবে কেঁপে উঠে চোখগুলো বুজে নেয়।অরিএান আবার ওয়াসেনাতের এমন লজ্জা মাখা মুখ দেখে একটু হাসে।তারপরে বলে উঠে…..
__আমাদের হলুদের সময় আমিই তোমাকে প্রথম হলুদ ছুয়াবো।মনে থাকে যেনো।

ওয়াসেনাত এবার নিজের বাম হাতটা এগিয়ে এনে অরিএানের গালে বাকি হলুদটুকু লাগিয়ে দিতেই অরিএান আবাক হয়ে নিজের হাতগুলো হালকা ডিলে করে ফেলে এই সুযোগ ওয়াসেনাত পাখির মত ফুড়ুৎ করে অরিএানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে এক দৌড় লাগায়। দৌড়াতে দৌড়াতে বলে উঠে…….
__আমি কিন্তু আগেই লাগিয়ে দিলাম…. হলুদ(হাসতে হাসতে)

অরিএান হা করে ওয়াসেনাতের হাসিতে চকচক করা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।এই মুখের গভীর হাসিটা তাকে আবার একবার ভালোবাসার সাগরে ডুবিয়েছে।কথাটা ভেবেই এক গাল হেসে দেয় সে।

ওয়াসেনাত দৌড়ে ছাদে এসেই একটা হালকা পাতলা ধাক্কা খায় অরুপের সাথে।ওয়াসেনাতের এমন গভীর হাসি দেখে অরুপের মুখ শুকিয়ে আসে।তার মনে কেউ কড়া নেড়ে বলছে এই অপ্সরীকে তুই হারিয়ে ফেললি।ইশশশশ কি বোকারে তুই পেয়েও হারালি…..ওয়াসেনাত অরুপকে দেখে হাসিটা একটু চাপিয়ে বলে উঠে……
__আরে আপনি কেমন আছেন??আমাবস্যার চাঁদের মত গায়েব হয়ে গেলেন কেন??
__তোমাকে হারিয়েই আমি হারিয়ে গেছি ওয়াসু (ওয়াসেনাতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে)

অরুপের এমন কথায় ওয়াসেনাত একটু হকচটিয়ে যায়।সে চোখগুলো এদিক ওদিক করছে।অরুপকে একবার ভালো করে দেখেই সে বুঝতে পেরেছে অরুপের অবস্থা ভালো না।কেমন যেন চোখের নিচে কালি পোড়ে গেছে। ফর্সা মুখটা ফেকাসে হয়ে গেছে।চুলগুলোও কেমন এলোমেলো হয়ে আছে।ওয়াসেনাত অরুপের এমন পরিবর্তনের কোনো মানে খুজে পেল না তাই সে চুপ করে দৃষ্টি নাড়াচাড়া করছে।আসলে ওয়াসেনাতের মানে খুঁজে পাওয়ার কথাও না কারন অরুপ কখনো তার মনের কথা ওয়াসেনাতকে বুঝিয়ে বলেনি।সব সময় সাধারন ব্যবহার করেছে।ব্যাপারটা ভাবতেই অরুপের নিজের প্রতি খুব রাগ হয়। কেন সে আগে তার মনের কথা বললো না।কেনো??
__ওয়াসু তোমার সাথে আমার কবে দেখা হয়েছিল যানো??ভুলে গেছ মনে হয়।সেদিন ছিল বৃষ্টির দিন তুমি কাকভিজা হয়ে রিমির সাথে আমাদের বাসায় এসে ছিলে। তখন তুমি ক্লাস নাইনে পড়তে।ইশশশ কত কিউট একটা মেয়ে ছিলে তুমি।কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে, ভিজা হেজাব, সাদা জামা ভিজে একাকার। গুটিগুটি পায়ে রিমির পিছনে দাড়িয়ে এক পা এক পা এগিয়ে আসছিলে।আর বলছিলে….. এই রিমি আমি ভিজেই বাসায় চলে যেতে পারবো প্লিজ যেতেদে।রিমি চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে ছিল তোমার দিকে আর তুমি ভিতু চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলে(বলেই হেসে উঠে)আমি কিন্তু সেদিই প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম এক ভিজা কিউট পরীর।কিন্তু কপাল বরই অদ্ভুত তোমাকে পেতে পেতেই হারিয়ে ফেললাম।আমার বোন বলেছে আমি তোমাকে সত্যি কারের ভালোবাসতে পারি নি।কিন্তু আমার তো তা মনে হয় না।যদি এমন হত তবে কি আমি প্রতিদিন তোমার স্বপ্ন দেখতাম। না তো। তুমি যানো তুমি আমাকে ঘুমাতে দেওনা।সারা রাত তোমার ভাবনায় বিভোর থেকে যখনই চোখ লেগে আসে তখনই তুমি সবুজ জামা পরে হেজাবে কাঠগোলাপ গেঁথে গেঁথে সেই মাতাল হাসি হাসো।আমি ছুঁতে চেয়েও পারি না। ঠিক তখনই ঘুম ভেঙে যায়।আচ্ছা আল্লাহ তো অনেক মিরাকেল করে তবে যদি এমন হয় তুমি আবার আমার হয়ে যাও তবে সত্যি আমি সারা জীবন আগলে রাখবো এই বুকে। বিশ্বাস করো কখনো কষ্ট দিবো না।প্লিজ চলে আসবে????

ওয়াসেনাত বাকরুদ্দ হয়ে দাড়িয়ে আছে।তার জানা ছিলনা তার জন্যে কারো মনে এমন সুপ্ত ভালোবাসা জমা আছে।শুধু ওয়াসেনাত না অরিএান, রিমি,আর রিমনও আজ অরুপের এমন হৃদয় কাপানো কথায় কেপে উঠেছে।রিমিতো কেঁদেই দিয়েছে।সে ভাবতে পারেনি তার ভাই এত ভালোবাসা বুকে জমিয়ে রেখেছে।তার কেন যেন এখন বিশ্বাস ঘাতকতা করতে ইচ্ছে করছে।তার মন চাচ্ছে অরিএানের বুক থেকে ওয়াসেনাত নামের ফুলটা ছিঁড়ে তার ভাইয়ের মনের ফুলদানীতে সাজিয়ে দিতে।ইশশশশ যদি সে এমন করতে পাড়তো। অরিএান শুধু তাকিয়ে আছে।আজ অরুপের অনবরত চোখের পানি তাকে যানিয়ে দিচ্ছে ওয়াসেনাতকে তার মতই কেউ এত ভালোবাসে।কিন্তু সে কিছুই করতে পারবে না।ওয়াসেনাত নামের মেয়েটা তো তার অক্সিজেন। আর অক্সিজেন ছাড়া সে বাচবে কিভাবে।না সে কিছুতেই তার জীবন দিতে পারবে না।এই মেয়ে তো তার জীবন।জীবন কি কেউ দেয়!!না তবে সে কেনো দিবে।সবাই দাড়িয়ে আছে শুধু ওয়াসেনাতের পরের কথা শুনতে চায়।ওয়াসেনাত কি বলে অরুপকে সেটাই সবাই দেখতে চায়।অরুপ কাদঁতে কাদঁতেই নিচে বসে পরে।ওয়াসেনাত এবার কি করবে সে তো কারো চোখের পানি হতে চায় নি।তবে কেন সবাই তার জন্যেই কাদেঁ।কেন??

ওয়াসেনাত এবার হাটুগেড়ে অরুপের সামনে বসে পড়ে।অরিএান হতবাক চোখে তাকিয়ে আছে।তার বুক ধুকধুক করেই চলেছে।তার মনে অজানা ভয় হচ্ছে। তার হৃদয় কাতর হয়ে আছে।মুখে আহত ভাব অব্বাহত।মোটামুটি উপস্থিত সবাই তাকিয়ে আছে।সবার চোখে আতঙ্ক।অরুপের হৃদয় বিদারক কান্নায় সবাই আতঁকে উঠেছে।ওয়াসেনাত এবার কোমল গলায় বলে উঠে………..
__অরুপ এভাবে কাঁদবেন না।আমি আপনার ভালোবাসাকে প্রচণ্ড ভাবে সম্মান জানাই।ভালোবাসা যে কেউ যে কাউকে ভাসতে পারে।কিন্তু সব ক্ষেএরে পূর্নতা পেতে হবে এমন কিন্তু নয়।ভালোবাসায় পূর্নতা অত ইম্পরট্যান্ট নয়।ভালোবাসায় ভালোবাসাটাই ইম্পরট্যান্ট। আসলে আল্লহ আমাকে আপনার জন্য তৈরিই করে নি।তা না হলে আপনি তো অরিএানের আগেই আমার জীবনে ছিলেন কেন আমি আপনার হইনি??ওনি চানি তাই। আপনার জন্যও কেউ আছে।আপনার জন্যেও ওনি তৈরি করে রেখেছে কাউকে।আর সময় হলে সে আপনার জীবনে আসবে।ভালোবাসা মানেই কিন্তু পাওয়া না। ভালোবাসা মানে মনের সুপ্ত আবেগ। যা আপনাকে ভালো রাখে।আমাকে ভালোবেসে যদি আপনি নিজেকেই ভালো না রাখেন তবে এটা ভালোবাসা না। যদি আমাকে ভালোবেসে থাকেন তবে নিজেকে ভালো রাখেন।কারন ভালোবাসা সবাইকে ভালো রাখতে শিখায়। বুঝলেন। এবার বাচ্চাদের মত না কেঁদে হাসেন।এভাবে কাঁদলে সবাই বাচ্চা বলবে।

অরুপ এখন কাঁদছে না সে শুধু তাকিয়ে আছে তার সামনের মেয়েটির দিকে।মেয়েটি কত সহজেই তার মনটা হালকা করে দিল।তার কানে শুধু একটা কথাই বাজতে শুরু করেছে
ভালোবাসা মানে নিজেকে ভালো রাখাআমাকে ভালোবেসে থাকলে নিজেকে ভালো রাখেন
হুম সে নিজেকে ভালো রাখবে কারন সে ওয়াসেনাতকে প্রমান করে দেখাবে সে তাকে সত্যি ভালোবাসে।

অরিএান তার নিজের বুকে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে বলে…….
__আল্লাহ তোকে বড্ড দয়া করেছে। তোর তো উচিত তার ইবাদতে নিজেকে ডুবানো…….

ওয়াসেনাত গেটে দাড়িয়ে আছে। অরিএান নিজের গাড়িতে একবার উঠছে আবার নামছে।ওয়াসেনাত জিগ্যেস করায় বলে উঠে….তার নাকি ওয়াসেনাতকে রেখে যেতে ইচ্ছে করছেনা।মনের মাঝে ভয় করছে।কেন যেন মনে হচ্ছে সে ওয়াসেনাতকে হারিয়ে ফেলবে।জবাবে ওয়াসেনাত হেসে হেসে বলে………আমি তো আপনারই ওই উপরওয়ালা আমাকে আপনার জন্যে বানিয়েছে। সো হারানোর প্রশ্নই উঠে না…………………. 🍁

চলবে………………..

ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন…………………🍂

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।