পাথরের বুকে ফুল | পর্ব – ৩১

ওয়াসেনাত আর রিমি পা ছুলিয়ে বসে আছে।তাদের মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। আর তাদের একমাএ বিরক্তির কারন এখন দুজন পুুরুষ। আর এই মহান পুুরুষ হল অরিএান আর রিমন।দুদিন পরে লামিয়ার বিয়ে। ওয়াসেনাত আর রিমি প্রচণ্ড বিজি কাজের মাঝে।এর মধ্যে অরিএান কল করে তাদের দুজনকে বাড়ির পিছনের সাইডে একটা পুকুর আছে সেখানে ডেকেছে।ওয়াসেনাত আর রিমি বিগত দুই তিন ঘন্টা পুকুরে পা ডুবিয়ে বসে আছে কিন্তু জনাবদের আসার নাম নেই বললেই চলে।ওয়াসেনাত এবার বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে উঠে……….
__দেখ ভাই আমার মনে হয় আমাদের আবুল বানাতেই তারা এমন করছে। তা না হলে এভাবে এখানে বসায় রাখার কোন মানে হয়?
__ঠিক কথা চল

দুজনই উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে। পিছনে ঘুড়তেই দুজনেই একসাথে আউউউউউউ করে চিৎকার দিয়ে উঠে।কারন তাদের পিছনে অরিএান আর রিমন পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আকর্ষীক ভাবে দেখেছে বলেই এই চিৎকারের আবির্ভাব হয়েছে।অরিএান আর রিমন দুজনেই ওদের অবস্থা দেখে হু হা করে হেসে উঠে।অরিএান বহু কষ্টে হাসি থামিয়ে বলে উঠে……….
__ভিতু কথাকার। এভাবে ভয় পাওয়ার কি আছে?আর তোমরা এখানে এতক্ষণ বসে ছিলে কেন?
__কেন মানে কি আপনি নিজেইত কল করে আমাদের এখানে বসে থাকতে বলেছেন আর এখন পালটি মাড়ছেন কেন?আর কেন ডেকেছেন তাড়াতাড়ি বলেন যেতে হবে।
__এত তাড়া কিসের। তোমার প্রেমিক পুুরুষ তো এখানে।
__মানে কি?আপনারা কি আমাদের প্রেম করতে ডেকেছে?যাকে বলে জলে ডুবে প্রেম
__জলে ডুবে প্রেম মানে
__তা না হলে পুকুর পারে কেন ডাকলেন। যতসব তাড়াতাড়ি বলেন?

ওয়াসেনাত হাত নাচিয়ে নাচিয়ে কথা বলছিল অরিএান খপ করে তার হাত ধরে কিছুটা কাছে নিয়ে আসে যা দেখে রিমন বলে উঠে……
__ওই শালা নিজের বেডরুম পাইছস না কি। আর লজ্জা করে না ভাইয়ের সামনে বোনের লগে প্রেম করতে।এখন এসব রেখে যা বলতে এসেছিস বল আর তারপর চল মিটিং আছে আজকে।
__শালা কাবাব মে হাড্ডি। ওয়াসু কালকে আন্টিকে নিয়ে Apollo hospital চলে আসবে আমি অপেক্ষা করবো। রিমন তোমাদেরকে বাসার সামনে থেকে নিয়ে যাবে।আর আন্টির আগের রিপট গুলোও নিয়ে আসবে বুঝলে।
__কিন্তু কেন?
__আন্টির চোখের অপারেশন করাতে চাই যাতে আগের মত দেখতে পায়।

ওয়াসেনাত বিস্মিত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে উঠে………….
__মাকে আগে অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে তারা বলেছে তেমন কিছু করা যাবে না।তাই…
__শেষ চেস্টা করতে সমস্যা কি আর আমি আই স্পেশালিষ্ট দের সাথে কথা বলে রেখেছি আর ওখানে অনেক বিদেশি ভালো ডাক্তারো আছে সো টেনশন নেওয়ার কিছু নেই আশা করি তিনি ভালো হয়ে যাবে।
__আপনি এত কিছু করবেন আমাদের জন্য??
__তোমাদের জন্যে কিছু কই করলাম। যা করছি আমার জন্যে।আপ্টার আল ওনি আমার শাশুড়ি।সো এখন বকবক না করে যাও।
__আজিব লোক আপনি। নিজেই ডেকেছে আবার নিজেই তাড়িয়ে দিচ্ছেন।(বলেই হাটা ধরে অরিএান কিছুক্ষণ হেসেঁ নিজের গন্তব্যর দিকে যায়)

ওয়াসেনাতের মায়ের চোখের অপারেশন চার দিন পরে।তার মা দেখতে পাবে ব্যাপারটা ভাবতেই অবাক লাগছে তার। সাথে প্রচণ্ড খুশি তবে এই সবই অরিএানের জন্যে পসিবল হয়েছে।তাকে তো একটা থেংক্স দেওয়া উচিত। তাই ওয়াসেনাত অরিএানকে সে যেখানে বাচ্চের পড়ায় সেখানে আসতে বলেছে।সন্ধ্যায় আবার লামিয়ার গায়ে হলুদ। ওয়াসেনাত তাড়াতাড়ি আসবে বলেই বাচ্চাদের পড়াতে চলে যায়।ইদানীং অরিএানকে না দেখলে কেমন যানি লাগে।মনের মাঝে এক বিশাল শূন্যেতা ফিল হয় যা ওয়াসেনাতকে প্রতি মুহুর্তে অরিএানের প্রতি তার ভালোবাসার জানান দেয়।ওয়াসেনাত আজ কালো আর লালের মিক্সরনে একটা ফ্রি পিজ পরেছে।প্রতিবারের মত আজও অসাধারণ লাগছে।

__আজকাল আমাকে তুমি চোখে হারাছো। ব্যাপারটা কি তুমি জানো বেইবি??

ওয়াসেনাত চমকে পিছনে তাকায় সাথে সাথে খানিকটা ধাক্কাও খায় অরিএানের কিলার লুং ইশশশ কি লাগছে ভাবতেই ওয়াসেনাতের সুধু তাকিয়ে থকতে ইচ্ছে করছে।নীল শার্টের সাথে কালো পেন্ট। ইন ছাড়া শার্টের হাতা ভাজ করা। গাড়ির সামনে হাত ভাজঁ করে তাকিয়ে আছে ওয়াসেনাতের দিক।অরিএানের এমন কথায় ওয়াসেনাত হালকা লজ্জা পায়।আসলেই যে ব্যাপারটা সত্য এটা তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। অরিএান এবার এগিয়ে এসে বলে উঠে…..
__ইশশশ এভাবে লজ্জা পেও না। তুমি তো যানো জান তোমার এমন লুকে আমি একবার সেন্সলেস হয়েছিলাম।মানে আছে নাকি ভুলে গিয়ে আবার করতে চাও??
__এমন কিছুই না
__তো কেমন কিছু বল শুনি।
__চলেন তো এখন দেড়ি হয়ে যাবে পড়ে আসতে লেইট হবে।আজকে তো লামিয়ার হলুদ মনে আছে আপনার?
__আমার বউ নিজের মুখে বলেছে ভুলার প্রশ্নই উঠে না।
__ভালো।(মুচকি হেসে)

ওয়াসেনাত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। ওয়াসেনাতের নিজেকে খুব লাকি মনে হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে আল্লাহ তাকে খুব ভাগ্য করে এমন লোকের সাথে পরিচায় করিয়ে দিয়েছে।ওয়াসেনাতের সামনে অরিএান বসে আছে।তবে কিছুটা দূরে।অরিএানকে ঘিড়ে কিছু বাচ্চা বসে আছে।আর অরিএান খুব সুন্দর করে খাতায় কিছু লিখে তাদের ঝুজিয়ে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে তাদের নিয়ে আবার হাসি ঠাট্টা করছে।আবার মাঝে মাঝে কিন্চিত বিরক্তি নিয়ে সূর্যের হালকা আলোয় ভ্রু কুচকে চোখের উপরে হাত দিচ্ছে। হালকা হালকা ঝিড়ি বাতাসে তার চুলগুলো নাড়াচাড়া করছে।ওয়াসেনাতের ভাবতে অবাক লাগছে এত সুন্দর একটা লোক তার নিজের। তাও আবার একান্তে নিজের।যার জন্যে সব মেয়েরাই পাগল প্রায় সেই ব্যক্তিটি শুধু তার।ইশশশ কি ফিলিংস ভাবতেই ওয়াসেনাতের কেমন যানি ফিল হচ্ছে। ওয়াসেনাত তার ভাবনায় এতটাই বিভোর ছিল যে অরিএান কখন তার সামনে চলে এসেছে সে বুঝতে পারেনি।অরিএান ওয়াসেনাতের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে…….
__এভাবে কি দেখছ?কেমন যানি নেশা নেশা লাগছে।যার নাম ওয়াসেনাত নেশা।এটা কিন্তু সব নেশাকে ছাড়িয়ে। বুঝলে জান।সেই প্রথম দিন থেকে প্রতি নিয়ত ঘায়েল করেই চলেছ।এর কি বিচার হওয়া উচিত নয়?
__আপনি নিজেও যে করেছেন তার বিচার হওয়াও উচিত।ঠিক বলেছি না??

অরিএান এবার হকচোটিয়ে গেছে। মেয়েটা যখনই তার কোমল শীতল গলায় তার সাথে এমন ভাবে কথা বলে তখন সে আর কিছু বলতে পারে না। তার তখন শুধু শুনতেই ইচ্ছে করে।কিন্তু এখন আর শুনার সময় নেই ওয়াসেনাতকে বাসায় পৌছে দিতে হবে।কারন লামিয়ার হলুদ আজ।

ওয়াসেনাতদের সারা বাড়ি সাজানো হয়েছে। ঘর ভর্তি মেহমানের আনা গোনা।হলুদের অনুষ্ঠান শুরু প্রায়।আজ রিমিদের ফ্যামিলিও অনুষ্ঠানে এসেছে।তারা আসলে আসতে চায় নি।কিন্তু রিমির জোড়াজড়িতে আর ওয়াসেনাতের বাবার রিকুয়েস্টে আসতে হয়েছে।অরুপ তো শুধু একবার ওয়াসেনাতকে দেখার জন্যে এসেছে।কেন যেন তার বড্ড ইচ্ছে জেগেছে ওয়াসেনাতকে একবার দেখার।ওয়াসেনাত আজ প্রথম শাড়ি পরেছে।কাচা হলুদ শাড়ি সাথে মেচিং ব্লাউজ, চুড়ি,হেজাব পরেছে।

অরিএান আজ সাদা পান্জাবি পরেছে।সাদা মানুষ সাদা পরলে যেমন লাগে তা আর না বলেই নয়।ছাদেই পেন্ডেল করা হয়েছে।অরিএানকে দেখে মেয়েরা তো ফিট কিন্তু অরিএানকে যে ফিট করতে পারবে তাকে সে খুজেই পাচ্ছে না।বেশ কিছু সময় পরে এক ছাক হলুদ শাড়ি পড়া মেয়েদের মাঝে অরিএান ওয়াসেনাতকে খুজে পায়। কিন্তু তাকে দেখার পড়ে সে নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছে।অরিএান শুধু তাকিয়েই আছে।ওয়াসেনাতকে একদম হলুদ পরী লাগছে।ওয়াসেনাতেরও অরিএানকে দেখে একই অবস্থা কিন্তু মুহুর্তেই তার প্রচুর রাগ হওয়া শুরু করে কারন সব মেয়েরা অরিএানকে চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে।ওয়াসেনাতের কেমন যেন হিংসে হচ্ছে। ইশশশ ছেলেটা এত সুন্দর না হলেও পারতো।কিছু মেয়েদের কুনজর থেকে তো বাচানো যেত।

ওয়াসেনাত চোখমুখ খিঁচে দাড়িয়ে আছে।চিলেকোঠার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ই কেউ একজন তার হাত হুট করে টেনে এনে তাকে রুমের ভিতরে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।ঘটনাটা এত দ্রুত গতিতে হয়েছে যে সে বুঝেই উঠতে পারছে না কেন এবং কাতাকে এভাবে ধরে নিয়ে এল।ওয়াসেনাত নিজের মুখের উপড় কারো গরম নিশ্বাস অনুভব করছে।অন্ধকারে সামনের ব্যক্তির চেহারা দেখা না গেলেও ওয়াসেনাত বুঝতে পেরেছে কে হতে পারো।ওয়াসেনাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই সামনের ব্যক্তি বলে উঠে………
__জান আজ কি আমাকে তুমি মারার প্লানিং করেছ নাকি।আমার তো মনে হয় তাই।কেন এত সুন্দর তুমি বলবে প্লিজ আমিও শুনতে চাই কি এমন রহস্য এই রূপের যা মিনিটে সবাইকে ঘায়েল করার ক্ষমতা রাখে। হলুদ রং টা যে এত সুন্দর হয় তাতো যানাই ছিল না। আর তুমি না পরলে তো মনে হয় না আমি এই জীবনে তা যানতে পারতাম।
__আপনি জিবনেও মানুষ হবেন না? এভাবে এলিয়েনের মত আসার মানে কি?আপনি জানেন আমি কতটা ভয় পেয়েছি।আমার তো জান যায় যায় অবস্থা। এমন বেহুদা কাজের মানে কি??
__সবই প্রেম বুঝলে জানু।সবই প্রেম।
__আমি কিন্তু আপনার সাথে প্রেম করতে পারবো না??
__কেন কেন??
__আমার দাড়া প্রেম আসে না যদি কিছু আসে তবে তা শুধুই ভালোবাসা(বলেই হেসে উঠে)
__তবে ভালোবাসাই দেও আমি তো ভালোবাসার কাঙ্গাল। যদি পায় একটু চাই অনেক টুকু(হালকা ঝুকে বলে উঠে)
__আমি কিন্তু খুব সুন্দর কথা মিলাতে পারেন। যানেন এটা
__যবে থেকে একজনের নীলাভ চোখে নিজেকে হারিয়ে আমি নতুন হয়েছি তবে থেকে বহু কিছু জীবনে যোগ হয়েছে।সবই ওই ফেইড়িপরীর দোষ বুঝলে।ওর প্রেমে পড়ে প্রথমে অর্ধেক পাগল হয়েছি আর এখন সম্পূর্ণ।
__তাই তবে বলেন কি করলে মানুষে রূপ নিবেন?
__শুধু একটু ছোঁয়া আর একটু ভালোবাসা পেলেই আমি মানুষ হয়ে যাবো কিন্তু যার কাছে চাইছি সে তো পাত্তাই দিচ্ছে না।
__দিবে দিবে সময়ের অপেক্ষা

বলেই ওয়াসেনাত অরিএানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে পড়ে শুধু একটা ধাক্কা দিলেই যে অরিএান সরে যাবে তেমনটা কিন্তু নয়।ওয়াসেনাত যাওয়ার আগে বেশ ভায়াবহ একটা কাজ করেছে যা অরিএানকে মুহুর্তেই মূর্তি বানিয়ে দাড়ার করেছে।ওয়াসেনাত যাওয়ার আগে টুপ করে অরিএানের বাম গালে একটা চুমু একে দিয়ে যায় যা অরিএানের সম্পূর্ণ শরীর কাপিয়ে তুলেছে।তার মনের মাঝের সুপ্ত ভালোবাসা বারবার উকি দিয়ে বলছে…….
__এটা একটু ছায়াঁ এবং একটু ভালোবাসা ছিল যা তুমি চেয়েছ………….

চলবে……….

ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।