উত্তাল বাতাসের ধাক্কায় জামা কাপড় তাল মিলিয়ে উড়ছে। চুলগুলো মুখ ঢেকে দিচ্ছে বারংবার, তিন চার সরিয়ে দিয়েছিলো প্রানেশা। এখন আর বলছেনা, নিরুত্তাপ ভঙ্গিতে টানটান হয়ে তাকিয়ে আছে সে। সকাল বাজে আটটা। দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ায় চোখের পাতা থেকে নিদ্রা বিদায় নিয়েছে। হাত মুখটা ধুয়ে এক ড্রেসেই জানালার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
মুগ্ধ বাথরুম থেকে বের হয়ে নতুন কেনা টাওয়াল টা নিয়ে সোজা বারান্দায় চলে গেল। ডিভানে বসে শার্টটা খুলে ছুড়ে ফেলল ফ্লোরে। টাওয়াল টা পড়ে প্যান্ট টা খুলে সেটাও ছুড়ে ফেলল। রাগে নিজের চুল নিজেই ছিঁড়লো। তান্নাকে পেলে এখন খুন করতো ও।
ঘুম ভাঙার পরও শুয়ে রইলো মুগ্ধ তিতির যদি আসে! যদি আগের মত এসে ওর ঘুম ভাঙায়! আজকের দিনটা কি ও না এসে পারবে? অবশ্য নাও আসতে পারে, এখন তো ওর এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গিয়েছে। এখন তো চাইলেও এত সহজে আসতে পারবে না।
উমায়েরের বাড়ি থেকে রাগ করে বেরিয়ে পুরো দেড় ঘন্টা ফুল স্পীডে গাড়ি রান করে এসেছেন।রাগ কমেনি এতক্ষণ পর্যন্ত।নিজেকে কিছুক্ষণের জন্য একা ছেড়ে দিতেই বুঝতে পারলেন রাগটা অহেতুক।রাগটা না করলে এই শেষনিশিতে উনার প্রাণস্পর্শীর কাছেই হয়তো ঠাঁই থাকতো!
আমি কি বেঁচে আছি এখনো? নাকি ম'রে গেছি? এখানে এতো অন্ধকার কেনো? এটা কি কোনো সমাধি?
ম'রে গেছে ভেবে মার্কসের দুঃখের শেষ নেই। এতো তাড়াতাড়ি ম'রতে চায়নি সে। তবুও কেনো এরকম হলো? বাঁচার জন্য কতই না চেষ্টা করেছিলো।
- এতো লম্বা চুল মেয়েটা সামলায় কি করে?___আব্রাহাম মনে মনে ভাবল।
তার দেওয়া কামড়ের দাগ এখনো ইনায়ার গলায় স্পষ্ট হয়ে আছে। দাগটার দিকে দৃষ্টি দিতেই আব্রাহামের ভয়ানক রক্তের তৃষ্ণা জাগল। ঘ্রাণেন্দ্রিয় ভেদ করে মস্তিষ্কে পৌঁছে গেল মিষ্টি মধুর রক্তের সুবাস।
কাউকে ভীষণ ভালবেসে ফেলার পরে নিজের মন বোধ হয় আর নিজের কন্ট্রোলে থাকে না।নিজের অনিচ্ছায় মন অন্য কারো দখলে চলে যায়।মন একবার কারো দিকে ঘুরে গেলে তাকে আর ফেরানো যায় না।এই কিশোরী মন টা যে বিহান ভাই কেটে নিয়েছে শুধুই কি যাতনা দেওয়ার জন্য।
আক্কাস কবিরের কথা টা ট্রান্সলেট করে অবু কে বলল। অবু উত্তরে কিছুই বলল না, দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বুজে পড়ে রইলো। কবির কিছুক্ষণ চুপ করে অবুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো উত্তরের আশায়। তারপর আবার আক্কাস কে দিয়ে তাগিদ দিলো অবু কে কথা বলার জন্য।
মেহমান রা সব বাড়ির ছাদের দিকে এগোচ্ছে৷ সেখানে চিলেকোঠার রুমের পাশের ফাকা জায়গাটাতে স্টেজ তৈরি করা হচ্ছে, রাতের জন্য৷ গায়ে একটা সাদা রঙা পাঞ্জাবি পরে রাফসান সেসবের তদারকি করছে৷
এদুয়ার্দোর চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।নিজের মায়ের ব্যাপারে কোনো ছেলে এরকম খারাপ ধারনা কিভাবে পোষণ করতে পারে?সে হাত দু'টো মুষ্ঠিবদ্ধ করে নেয়।আব্রাহাম পুনরায় বলতে শুরু করে,,,,
বিয়ের ছয় মাসের মাথায় কামিনী চৌধুরী হঠাৎ করেই নিজের আগের রুপে ফেরা শুরু করে। কথায় কথায় নূর কে অলক্ষি অপয়া বলে অপমান অপদস্ত করতে থাকে।নূর তাতে খুব একটা পাত্তা দেয় নি।নিজের মতো করে জীবন কাটাতে থাকে সে।আশমিন কিংবা রাফসান শিকদার কাউকেই এ ব্যাপারে কিছু বলতো না নূর।
বিভোর ভাই কলার ঝাকি দিয়ে বললেন,আপু এইদিক টা একটু খেয়াল করো প্লিজ।বড় বোন আর দুলাভাই থাকলে এইসব দিক খেয়াল রাখতে হয়।তাছাড়া বিয়ে কিন্তু ফরজ আপু।তোমাদের সবার ফরজ আদায় হয়ে গিয়েছে আর আমাকে পাপী বানিয়ে রাখতে চাও।আমি জীবনে কোনো পাপ করিনি।
অর্ক ডিনার শেষ করে নিজের ঘরে এসে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে।বৃদ্ধাশ্রম আর অনাথাশ্রম মিলিয়ে যে বিল্ডিংটা করা হবে ওইটারই ডিজাইন দেখছে।তনিমা আজ আবার এনজিওতে আসে নি,সাথে ওই হতচ্ছাড়া অয়নটাও।
লাঞ্চ টাইম শুরু। সবাই রওনা করল ক্যান্টিনে। কেউ বা ডেস্কেই বসল বাটি খুলে। বাড়ি থেকে আনা সুস্বাদু খাবারের ঘ্রানে মুহুর্তে অফিস ম ম করে উঠল। একেকজন যখন তৃপ্তি নিয়ে খেতে থাকে,সেই ক্ষনে চুপ করে বসে আছে মারিয়া। চেহারায় বিষাদের ছাঁয়া। পেট খুদায় চোঁ চোঁ করলেও খাওয়ার ইচ্ছে নেই।
প্রানেশার গাল ছেড়ে সুফিয়ান উঠে দাঁড়ালো৷ প্রানেশা পাথরের মতোন শক্ত হয়ে বসে আছে। সুফিয়ান এক গ্লাস পানি পান করে নিজেকে শান্ত করলো। তারপর লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে বিছানায় শুয়ে প্রানেশাকে টেনে নিজের বুকের উপর শোয়ালো।
সিয়া জানালার কাচ ঈষৎ ফাঁক করে উঠোনের দিকে তাকায়। মুহূর্তেই ওর শরীরের সমস্ত রক্তবিন্দু হিম হয়ে যায়। প্রশস্ত কালো কুচকুচে ডানার একটা বিশালাকৃতির প্রাণী আর্নির গলা চেপে ধরে। যার ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে ধারালো দু'টো শদন্ত বেরিয়ে আসে। ভয়ংকর দেখতে প্রাণীটা আর্নির ঘাড়ে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে।
আর যেই মেয়েটিকে আকাশ ভাইকে মারার চেষ্টা করল তার জন্যেই বা আকাশ ভাইয়ের এত টান কেন থাকবে...??
শান্তা ভ্রুঁ তুলে বলল ' দু-হাজার কম দিলো?'
' তাইতো দেখছি।'
' কত্ত বড় ধরিবাজ! ঠকালো আমাদের। দেখাচ্ছি মজা!'
সে তে*ড়ে যেতে নিলে পুষ্প থামিয়ে দিল। টেনে ধরে বলল
' যাসনা! এখন বললেও বিশ্বাস করবেনা।
"উনি আমার মুখে আঙুল ঠেকিয়ে বললেন, নো ভাই মিসেস বিহান।জাস্ট বিহান তোমার মুখে কত বেশী কিউট লাগে তুমি জানো?ভুল করেও তো বলতে পারো,নাম ধরে ডাকতে পারো।"
সন্ধ্যা হতে না হতেই তিতিরের জ্বর মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেল। ওকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। কিন্তু ও কিছুতেই যেতে চাচ্ছে না। উল্টোপাল্টা কথাবার্তা বলছে। অবশেষে মুগ্ধ ওকে জোর করে তুলে নিয়ে গেল। ডাক্তার দেখে বলল, ‘ভাইরাস জ্বর। এন্টিবায়োটিকস দিচ্ছি। চিন্তা করবেন না ঠিক হয়ে যাবে।’