অফিডিয়ান | পর্ব – ৬৯

— এভাবে ধরলে কেন তুমি? আমাকে মেরে ফেলতে চাও তাইনা? যাতে ওই সিনথিয়া মেয়ে টাকে বিয়ে করতে পারো?

সাফওয়ানের বাম হাতের মুঠিতে ধরে রাখা রুমাইশার দুই হাতের কবজি রুমাইশার মাথার ওপর দিয়ে দেয়ালে চেপে ধরে রেখেছে সাফওয়ান। রুমাইশার রাগে লাল হওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে ও ফিচেল হাসি দিয়ে বলল,
— আপনি কে? আপনাকে তো ঠিক চিনলাম নাহ!

রুমাইশা মুখ বেকিয়ে বলল,
— এখন তো আর বউ কে চিনতে পারবানা, নতুন মেয়ে পেয়েছো যে!

সাফওয়ান আগের মতো করেই উত্তর দিলো,
— বউ! কিসের বউ? কার বউ? আমি তো অবিবাহিত, পিউর অবিবাহিত। এক্সট্রা ভার্জিন।

রুমাইশা বাকা চোখে তাকিয়ে বলল,
— অ্যাহ! আইছে! এতগুলো বছর ইয়ে করে, তিন বাচ্চার বাপ হয়ে বলে নাকি এক্সট্রা ভার্জিন! নকশা মারার আর জায়গা পাও না?

সাফওয়ান ফিক করে হেসে বলল,
— ছিঃ ছিঃ রুমাইশা কাদের, আপনার মুখের ভাষা এত অশ্লীল কবের থেকে হলো? আপনি আজ রাত একটার দিকে এই গেটাপে আমার কাছে হাজির হবেন। আপনার ট্রিটমেন্ট করতে হবে। আপনার মুখের অশ্লীল ভাষা আমি শ্লিল বানিয়ে দেবো। তার জন্য কোনো পারিশ্রমিক ও লাগবে না। সম্পুর্ন ফ্রি! এখন গিয়ে একটু ঠান্ডা হয়ে বসুন।

বলেই রুমাইশার হাত ছেড়ে দিয়ে সাফওয়ান চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু সাফওয়ানের হাত ধরে ফেললো রুমাইশা পেছন থেকে তারপর বলল,
— দাড়াও।

সাফওয়ান কমান্ড শোনার সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে গেলো। রুমাইশা ঘুরে এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে নির্বিকার কণ্ঠে বলল,
— আমাকে এখনি একটা চুমু খাও৷

রুমাইশার এমন আবদারে চমকে উঠলো সাফওয়ান। ঠোঁট টিপে হেসে ও রুমাইশার চোয়াল টেনে দিয়ে বলল,
— এটা তোমার আমাজন নয় মিসেস যে, যখন ইচ্ছা, যা ইচ্ছা করবে, আর কেউ দেখবে না!

রুমাইশা ভ্রুকুটি করে বলল,
— চুমু খেতে বলেছি ব্যাস চুমু খাবা, অতো কথা বলো কেন? বেশি ঢং করলে কিন্তু আমি বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে যাবো! আমি কিন্তু রেগে আছি।

সাফওয়ান ইতস্তত করে এদিক ওদিক তাকালো। আশপাশ দিয়ে অনেক লোকেরই আনাগোনা। যদিও ওয়াশরুমের এদিকটায় আবছা অন্ধকার হওয়ায় দূর থেকে খেয়াল করে না দেখলে কিছুই বোঝা যাবে না৷ সাফওয়ান আবার রিমুর দিকে ফিরে ভ্রু তুলে জিজ্ঞেস করলো,
— খুব জরুরি? না হলেই নয়?

রুমাইশা মুখ খিচিয়ে বলল,
— হ্যা, খুব জরুরি!
বলেই সাফওয়ানের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে সাফওয়ানের কাধ আকড়ে ধরে ওর ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো রুমাইশা৷ হঠাৎ আক্রমণে হকচকিয়ে গেলো সাফওয়ান৷ রুমাইশা যেন পড়ে না যায় তার জন্য তাড়াতাড়ি করে ও রুমাইশার কোমর আকড়ে ধরে নিজের সাথে চেপে ধরলো ওকে।

কিছুক্ষণ পরেই সাফওয়ানের ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিলো ও। সাফওয়ান ওকে নিজের সাথে চেপে ওভাবেই ধরে রইলো। তারপর জিভের আগা দিয়ে নিজের নিচের ঠোট টা লেহন করে বলল,
— শান্তি পেয়েছো?

রুমাইশা চোখ টিপ দিয়ে বলল,
— অন্নেএএক!

সাফওয়ান রুমাইশার চোখ জোড়ায় তাকিয়ে মিষ্টি হেসে ওকে নামিয়ে দিয়ে বলল,
— এবার গিয়ে একটু শান্তি মতো বসো! এতক্ষন তো জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলে! এখন সব ঠান্ডা হয়েছে আশা করি। আমি আর রাফসান একটু বিল্ডিং এর বাইরে যাচ্ছি। চলে আসবো অল্প সময়ের ভেতরেই। তুমি বাচ্চাদের সাথে
থেকো।

রুমাইশা ওপরে নিচে মাথা নাড়ালো৷ রাফসান এলো তখন সেখানে এসে রুমাইশার দিকে এক পলক তাকিয়ে সাফওয়ানের পিঠে চাপড় মেরে বলল,
— ভাই, সেই কখন থেকে তোমাকে খুজতেছি। ফোন দিচ্ছি সেটাও ধরছোনা। এই অন্ধকারে দাঁড়িয়ে তোমরা কি করতেছো?

সাফওয়ান কিছু বললনা, রুমাইশার দিকে এক পলক তাকিয়ে মিটিমিটিয়ে হেসে বলল,
— রঘু ডাকাতের ফিমেল ভার্সনের খপ্পরে পড়েছিলাম!
তারপর আবার রাফসানের দিকে তাকিয়ে বলল,
— চল এবার। হাতে সময় দশ মিনিট। আবার ফিরতে হবে তো! বেশি দেরি করলে অনেক রাত হয়ে যাবে।

রাফসান হু, চলো’ বলে সাফওয়ানের আগে আগে বিল্ডিং থেকে বের হলো, আর রুমাইশার দিকে আর একবার তাকিয়ে রাফসানের পিছু পিছু সাফওয়ান ও বেরিয়ে গেলো।

ওরা চোখের আড়াল হওয়া পর্যন্ত রুমাইশা তাকিয়ে রইলো সেদিকে। তারপর সাফওয়ানরা পার হয়ে গেলে ও ওয়াশরুমের পাশ থেকে আফসানা আর বাচ্চাদের কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

কিছুদূর যেতেই হঠাৎ করে ওর সামনে এসে দাড়ালো সিনথিয়া নামের মেয়েটা, ওর সাথে আর ও কতকগুলো মেয়ে। মেয়েটার চোখ মুখ শক্ত, অদ্ভুত ভঙ্গিতে সে তাকিয়ে আছে রুমাইশার দিকে।
এইভাবে হঠাৎ এরা সামনে এসে দাড়ানোয় রুমাইশা কিঞ্চিৎ চমকালো। তারপর ভদ্রতা বজায় রেখে জিজ্ঞেস করলো,
— কিছু বলবেন?

সিনথিয়া মেয়েটা কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— নাম কি তোমার? আর শাফিনের কি হও তুমি?

এদের এমন কড়া গলায় কথা বলার কারণ খুজে পেলোনা রুমাইশা। বিরক্ত হলো ও খুব। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে ও উত্তর দিলো,
— রাইয়ানা তাসনিম আমার নাম, আমি শাফিনের দূরসম্পর্কের আত্মীয়। কোনো অসুবিধা?

সিনথিয়া বলে উঠলো,
— হ্যা, অবশ্যই অসুবিধা৷ তোমার মতো একটা বেহায়া, নির্লজ্জ মেয়ে যে শাফিন বা শাফিনের বাড়ির কারো আত্মীয় হতে পারে এই বিষয় টাই অসুবিধার!

রুমাইশা অবাক হলো এদের এধরণের কথা শুনে। সেই সাথে ওর রাগ হলো প্রচন্ড। ও শক্ত গলায় বলল,
— মানে কি এসবের? কোন সাহসে আপনি আমাকে বেহায়া, নির্লজ্জ বললেন? কারণ বলুন এখনি।

সিনথিয়ার পাশে দাঁড়ানো গর্জিয়াস থ্রিপিস পরা একটা মেয়ে দাঁত মুখ খিচিয়ে বলে উঠলো,
— তোমাকে নতুন করে কারণ বলতে হবে? তুমি মোটেই বুঝতে পারছোনা? তুমি একটু আগে ওই সাদ্দাত হুসেইন ছেলেটার সাথে কি করছিলে আমরা দেখিনি মনে করেছো? তুমি যে বেহায়ার মতো জোর করে তার গায়ের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে তাকে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করছিলে তা আমরা স্পষ্ট দেখেছি!

রুমাইশা ওদের কথার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না। ওদের দিকে নিস্পৃহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর সদর্পে ওদের সামনে থেকে চলে যেতে নিলো।
কিন্তু তখনি ওর বাহু ধরে ফেলে ওকে যেতে বাধা দিলো সিনথিয়া। তারপর ওকে টেনে আবার নিজের সামনে আনতে চাইলো, কিন্তু রুমাইশা কে ওর নিজের জায়গা থেকে এক চুলও নড়াতে সক্ষম হলো না। তাই এবার নিজেই ওর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
— চলে যাচ্ছো কেন এখন? ধরা পড়ে গেছো তাই? শুনলাম তোমাকে নাকি ওই ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো, কিন্তু তুমি খুব হাই ভ্যাল্যুড য়্যুইম্যান কিনা, তাই তার সাথে বিয়ে বসতে রাজি হওনি। এখন যেই দেখেছো আমার মতো একটা সুন্দরী সুশিক্ষিতা মেয়ের সাথে তার বিয়ের কথা উঠেছে তখনি তোমার জ্বলে গেছে, তাই তাকে সিডিউস করার জন্য তুমি নিজের লাজ লজ্জা ভুলে তার ওপর ঝাপিয়ে পড়ছো! ছিঃছিঃ! চেহারা দেখে তো তোমাকে ভালো ঘরের মেয়ে মনে হয়! তা তোমার চরিত্র এমন নর্দমার পানির মতো কেন?

রুমাইশা ওর কথা শুনলে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। ওর এমন হাসি দেখে দমে গেলো সিনথিয়া। রুমাইশা চোখ ঘুরিয়ে এর দিকে তাকিয়ে নির্বিকার কণ্ঠে বলল,
— আপনি যাকে বিয়ে করার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন আমি তার বিবাহিতা স্ত্রী। আমরা বিগত তেরো বছর ধরে একসাথে আছি, আমাদের বাচ্চাও আছে, তিনটা। আপনার মতো সুন্দরী সুশিক্ষিতা মেয়ের কোনো ভ্যালু তার কাছে নেই। আর আমি অবশ্যই হাই ভ্যাল্যুড য়্যুইম্যান, আমার স্বামীর কাছে। এখন আমার সামনে থেকে সরুন।

বলে সিনথিয়া কে নিজের হাত দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে এগিয়ে গেলো রুমাইশা। সিনথিয়া কি বলবে খুজে পাচ্ছে না। ওর মুখ টা কালো হয়ে গেছে। তখনি সিনথিয়ার পাশে দাঁড়ানো সেই থ্রিপিস পরা মেয়েটা পেছন থেকে জিজ্ঞেস করলো,
— মিথ্যা বলে তুমি পার পেয়ে যাবে ভেবেছো? কি যোগ্যতা আছে তোমার যে তোমার মতো একটা মেয়ে কে সে বিয়ে করবে? সে কোথায় আর তুমি কোথায়? আর সে যে তোমার স্বামী তার প্রমাণ আছে তোমার কাছে? লজ্জা করে না যাকে তাকে নিজের স্বামী পরিচয় দিতে?

রুমাইশা দাঁড়িয়ে গেলো ওর ওই কথায়, তারপর পেছনে না তাকিয়েই কিঞ্চিৎ ঘাড় ঘুড়িয়ে ও বলল,
— আপনাকে প্রমাণ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন দেখিনা!

তারপর সেখান থেকে গটগট পায়ে ও হেটে চলে গেলো আফসান আর বাচ্চারা যেদিকে বসেছে সেদিকে৷

৯১. বউ নিয়ে যখন ওরা বাড়িতে ফিরলো তখন রাত প্রায় একটা। বিয়ে বাড়িতে রুমাইশা কে নিয়ে পরবর্তীতে বেশ খানিক কাহিনি ঘটে গিয়েছে। আন্টিমহল যখন সিনথিয়ার থেকে শুনেছে যে সাদ্দাত হুসেইন বিবাহিত আর রাফসানের বোন সম্পর্কিত মেয়েটাই তার বউ তখনি তারা বেজায় ক্ষেপেছে। তারা প্রথমে রুমাইশা কেই জেরা করতে চলে এসেছিলো, কিন্তু রুমাইশার মেজাজ এমনিতাই সপ্তমে চড়ে ছিলো। আর এরপর আন্টিমহলের এমন প্রশ্ন ছোড়াছুড়িতে ওর মেজাজ টা গেলো পুরাই খারাপ হয়ে। ও সোজা সাপটা বলে দিলো যে,
— আমি পিইসফুলি এইখানে বসে থাকতে চাই। কেউ এখন আমাকে অযথা প্রশ্ন করে ডিস্টার্ব করুক সেটা আমি মোটেই পছন্দ করবো না। যে আপনাদের কে সাদ্দাত হুসেইন অবিবাহিত সেই নিউজ দিয়েছে তাকে গিয়ে প্রশ্ন করুন।

রুমাইশার এমন ক্যাটকেটে উত্তর শুনে আন্টি মহল পুরাই তাজ্জব বনে গিয়েছে। আর এরপর যখন রাফসান আর সাফওয়ান বাইরে থেকে ফিরলো তখন সবাই মিলে রাফসান কেই ধরে বসলো। কিন্তু সাফওয়ান এসে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আন্টিমহল কে বলল যে, আন্টি গ্রুপের ভেতর তাকে নিয়ে এমন হাইপ দেখে রাফসান একটু মজা করেছে।
এরপর আর ও কিছু বাক বিতন্ডা শেষে সে মামলা নিষ্পত্তি হলো। কিন্তু রুমাইশার মেজাজ ঠান্ডা হলো না। সিনথিয়া মেয়েটার ওপর সে ভয়ানক রেগে আছে, তাকে বলে কিনা বেহায়া নির্লিজ্জ মেয়ে! যে ছেড়ি নিজে একদিনে একটা বুইড়া ছেলে দেখে পাগল হয়ে গেছে, সে আবার অন্যরে বলে বেহায়া নির্লজ্জ!

রুমাইশা সিনথিয়ার ওপরের সব রাগ সাফওয়ানের ওপর ঝাড়ছে। ওই ঘটনার পর আর একটা কথাও ও বলেনি সাফওয়ানের সাথে। চোখ মুখ শক্ত করে রেখেছে ও। আর বাড়ি ফিরে সোজা চলে গিয়েছে আয়েশা রাশা কে নিয়ে যে কামরায় আছে সেখানে৷
তারপর সাদমান আর শাহমীর কে দিয়ে বলে পাঠিয়েছে যে সে রাতে রাশা কে নিয়ে আয়েশার কাছেই ঘুমাবে। আর সাফওয়ান যেন বাচ্চাদের নিয়ে চিলেকোঠার কামরায় ঘুমায়।

সাফওয়ান কয়েকবার কথা বলতে গেছে ওর সাথে কিন্তু রুমাইশা দরজাই খোলেনি। আয়েশা কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছেন কি হয়েছে, কিন্তু তার প্রশ্নের ও কোনো উত্তর দেয়নি রুমাইশা। মেকআপ উঠিয়ে, শাড়ি বদলে শুধু পেটিকোট আর অন্তর্বাস পরেই ও শুয়ে পড়েছে রাশা কে বুকে নিয়ে।

আর সাফওয়ান উপায় না পেয়ে সাদমান আর শাহমীর কে নিয়ে একা একাই চিলেকোঠার কামরায় গিয়ে শুয়ে পড়েছে! কেন যে ওরকম পাকনামি করতে গেলো ও! এখন রিমু কে ছাড়া সে কিভাবে ঘুমাবে সেই চিন্তা করছে ও শুয়ে শুয়ে। বিগত বারো বছরে একটা রাত ও রিমুকে ছাড়া ও থাকেনি। রিমু ওকে ঘর থেকে বের করে দিলে সাফওয়ান গিয়ে সোফার ওপর শুয়ে পড়তো, আর ভোর বেলা উঠে দেখতো বউ তার ঠিকই বুকের ওপর ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু আজ রিমু যে ক্ষ্যাপা ক্ষেপেছে তাতে ওর কাছে ঘুমাতে আসবে কিনা সেই ব্যাপারে সন্দিহান সাফওয়ান৷

তারপরও কামরার দরজা লক করেনি ও। খোলাই রেখে দিয়েছে। তার বউয়ের আবার ঘুমালে রাগ পড়ে যায়। এক ঘুমের পরে দেখা যাবে তিনি মেয়েকে কোলে নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, কারণ বরের বুকে না ঘুমালে তার ঘুমিয়ে যুৎ হয় না!

এসব চিন্তা ভাবনা করে, বিছানা ছেটে উঠে নিজের চোখের লেন্স আর আর্টিফিশিয়াল টাং টা খুলে নির্দিষ্ট স্থানে রাখলো সাফওয়ান। তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে আবার একবার চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে শুয়ে পড়লো ও৷ ঘুম আসবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়৷

.

ভোর প্রায় চারটা। সাফওয়ান এতক্ষণ ধরে জেগেই ছিলো। কিছুক্ষণ আগেই ওর চোখ লেগে এসেছে। সাফওয়ান বিছানার এ মাথায় ঘুমিয়ে আছে পাশ ফিরে। আর অন্য পাশে সাদমান আর শাহমীর। সাফওয়ানের পরণে শুধু একটা ট্রাউজার। শরীরের উর্ধাংশ উন্মুক্ত।

ঠিক এমন সময় ওর রুমের দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো একটা অবয়ব। ধীর গতিতে সে এগিয়ে এলো সাফওয়ানের বিছানার দিকে। অবয়ব টি আর ও এগিয়ে এসে সাফওয়ানের বাহু স্পর্শ করলো। নিজের হাত টা সাফওয়ানের বাহুতে মোলায়েম ভাবে ছুয়ে দিলো কনুই পর্যন্ত। ঘুম হালকা হয়ে এলো সাফওয়ানের৷ নড়ে উঠলো ও। অবয়ব টা হাত উঠিয়ে নিলো সাথে সাথে৷ কিন্তু সাফওয়ান আবার স্থীর হয়ে যেতেই অবয়ব টা আবার ও নিজের হাত সঞ্চালন করলো সাফওয়ানের পেশিবহুল বাহু তে।
আর সেই মুহুর্তেই জেগে উঠলো সাফওয়ান। তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে ও মুখ তুলে তাকালো অবয়ব টির দিকে, প্রথম দেখায় তাকে হঠাৎ করে রিমু ভাবলেও পরক্ষণেই আগন্তুক কে চিনতে পারলো সাফওয়ান। আর এর পরমুহূর্তেই ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই অবয়ব টি ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো সাফওয়ানের ঠোঁটে।

সাফওয়ানের তন্দ্রা ছুটে গেলো ঝড়ের গতিতে। আর এরপরেই তড়িৎ গতিতে আগন্তুকের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের ডান হাত দ্বারা আগন্তুকের চোয়াল আর কান বরাবর নিজের সর্বশক্তি দ্বারা একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো ও। ওর সে থাপ্পড়ের ভর সামলাতে না পেরে ছিটকে গিয়ে দেয়ালের সাথে বাড়ি খেলো আগন্তক।

আর এরপরেই সাফওয়ান বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বজ্র কন্ঠে বলল,
— আপনি যে এতটা বেহায়া হবেন আমি তা ভাবিনি আফসানা। এই মুহুর্তে আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যান।

কিন্তু সাফওয়ানের সে কথা আফসানার কানে গেলো না। ও সাফওয়ানের ওই জ্বলজ্বলে চোখ জোড়া আর ক্যানাইন দ্বাতদ্বয় দেখে হেল হারিয়ে ফেলেছে। দেয়ালের নিচে বসেই হতবাক হয়ে, বিস্ফোরিত নয়নে ও তাকিয়ে আছে সাফওয়ানের দিকে।

রাগে সাফওয়ানের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেছে। চোখ জোড়া দিয়ে যেন আগুন ঝরছে। হাত পা কাপছে ওর, নিঃশ্বাস পড়ছে ঘন ঘন৷ সাফওয়ান এবার নিজের ট্রাউজারের পকেট থেকে ওর টু সাইডেড সৌর্ড টা বের করেই তার মাঝখানে চাপ দিলো। সাথে সাথে সৌর্ড টার দু পাশের ব্লেড দুইটা বেরিয়ে এলো খচ করে৷ রুমের আবছা আলোয় চক চক করে উঠলো সে দুটো। আফসানার কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো যেন।

ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে সৌর্ড টা নিজের ডান হাতের মুঠিতে শক্ত করে ধরে, ধীর পায়ে আফসানার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে, দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে সাফওয়ান বলল,
— পাঁচ সেকেন্ডের ভেতরে যদি আপনি এখান থেকে না বের হন, তাহলে আমি ভুলে যাবো যে আপনি রাফসানের স্ত্রী।

আফসানার হুস ফিরলো এবার। দ্রুত গতিতে মেঝে থেকে উঠে পড়ি কি মরি করে ও ছুটে পালালো কামরা থেকে৷
আফসানা চলে যেতেই নিজের সৌর্ড টার মাঝে চাপ দিয়ে আবার ও ব্লেড দুটকে ভেতরে ঢুকিয়ে দিলো সাফওয়ান। তারপর সেটা পকেটে ঢুকিয়ে রেখে হুড়মুড়িয়ে ও বেরিয়ে এলো রুম থেকে, আর এরপর ছাদের মাঝের দিকে গিয়ে হাটু ভেঙে ও বসে পড়লো ছাদের ওপর৷ রাগে ওর গা কাপছে থর থর করে। ওই দৃশ্য টা মনে পড়লেই মন চাচ্ছে নিচে গিয়ে আফসানা কে জবাই করে দিয়ে আসতে। সে যদি রাফসানের স্ত্রী না হতো তাহলে ওকে ওইখানেই পিস পিস করে কাটতো সাফওয়ান৷

ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছাড়তে লাগলো ও। চোখের সামনে বার বার রিমুর চেহারা টা ভেসে উঠেছে৷ নিজের অজান্তেই ওর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো,
— ক্ষমা করো আমাকে, ক্ষমা করো রিমু! তুমি ছাড়া অন্য কেউ আমাকে ছুয়েছে! আমি তোমার আমানত রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছি! এটা জানলে তুমি যত কষ্ট পেতে তার থেকে বেশি কষ্ট আমি পাচ্ছি রিমু! আমি কোন মুখে তোমার সামনে যাবো রিমু! ক্ষমা করো আমাকে! ক্ষমা করো!

ছাদের ওপর বসেই হাসফাস করতে থাকলো সাফওয়ান। আর কিছুক্ষণ ওভাবে বসে থেকেই সেখান থেকে উঠে ও চলে গেলো কামরায়। এরপর ওয়াশরুমে ঢুকে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকবার থুথু ফেলে এরপর কুলি করলো ও। তারপর নিজের ডান হাতের বাহুটা পানি দিয়ে রগড়ে রগড়ে ধুয়ে ফেললো কয়েকবার৷

বেসিনের সামনের আয়নার দিকে তাকালো সাফওয়ান। আর তাকানোর সাথে সাথেই আবার ও সেই নোংরা দৃশ্য ভেসে উঠলো ওর চোখের সামনে। গা গুলিয়ে উঠলো ওর। আর সাথে সাথেই মুখ ভরে বমি করলো ও।

বমি করা শেষে মাথা তুলে হাপাতে লাগলো সাফওয়ান। তারপর আবার হাত মুখ ধুয়ে, শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে শাওয়ারের নিচে দাড়ালো ও। এরপর অনেক অনেক ক্ষণ ধরে গোসল দিলো সাফওয়ান৷

প্রায় ঘন্টা খানেক পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো ও। তারপর এসে আবার বিছনায় গা এলিয়ে দিলো ও। ঘুমে ওর চোখ জোড়া ভেঙে আসছে। রিমু কে খুব দরকার ওর এখন এই মুহুর্তে। নইলে চোখে ঘুম থাকলেও ঘুম আসবে না ওর।

ঠিক সেই মুহুর্তে ঘুমন্ত রাশা কে কোলে নিয়ে কামরায় ঢুকলো রুমাইশা। হাতে ওর শাড়ি আর ব্লাউজ। পরণে পেটিকোট আর অন্তর্বাস। আর তার ওপর দিয়ে একটা গামছা জড়ানো ওর শরীরের উর্ধাংশে।

রুমাইশা কে দেখেই বিছানা ছেড়ে উঠে এলো সাফওয়ান। আর এরপর রুমাইশার কোল থেকে রাশা কে নিয়ে বিছনায় শুইয়ে দিয়ে এসে ঝড়ের গতিতে রুমাইশার গা থেকে গামছা টা খুলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে রিমু কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সাফওয়ান।
তারপর ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
— খুব ঘুম পাচ্ছে রিমু! আমাকে একটু জড়িয়ে ধরে ঘুম পাড়িয়ে দাও, তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম আসছে না!

রুমাইশা সাফওয়ানকে জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই ঠেলতে ঠেলতে বিছানার দিকে নিয়ে গেলো, তারপর সাফওয়ান কে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে একটা তোয়ালে নিয়ে এসে ওর ভেজা চুল গুলো ভালো ভাবে মুছে দিলো।

তারপর বিছানায় উঠে বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো ও। এরপর সাফওয়ানের দিকে তাকিয়ে নিজের দু হাত বাড়িয়ে দিলো ও বাচ্চাদের মতো।
সাফওয়ান ঘুম জড়ানো চোখে তাকিয়ে ছিলো ওর দিকে। রুমাইশা হাত বাড়িয়ে দিলে ও নিজেও বিছনায় উঠে রুমাইশার বাড়ানো হাতের ভেতর দিয়ে নিজের মাথাটা গলিয়ে দিয়ে ওর বুকের ওপর রাখলো। আর এরপর রিমুর বুকে মুখ ডুবিয়েই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো ও।

( আপনারা কমেন্ট না করলে ভাল্লাগে না, বেশি বেশি করে কমেন্ট করবেন, নইলে কিন্তু গল্প দিতামনাহ! 😒)

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।