অফিডিয়ান | পর্ব – ৬৮

৮৯. ওরা যখন কমিউনিটি সেন্টারে পৌছালো তখন সন্ধ্যা পার হয়ে রাত নেমে গেছে। পুরো কমিউনিটি সেন্টার টাই সুন্দর করে সাজানো। তার তৃতীয় তলায় শাফিনের বিয়ের অনুষ্ঠান। বরপক্ষ পৌছানোর পর কনেপক্ষ তাদের কে সাদরে গ্রহণ করে নিয়ে গেলো তৃতীয় তলায়।
বেশ অনেক খানি জায়গা জুড়েই কমিউনিটি সেন্টার টা৷ স্টেজের ওপর সাজুগুজু করিয়ে বউ কে বসিয়ে রাখা হয়েছে। শাফিন কে বসানো হয়েছে তার পাশে৷ কাজী এখনো আসেননি। কাজী আসলেই বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেওয়া হবে৷

বরপক্ষ কে স্টেজের সামনে রাখা চেয়ারে বসতে দেওয়া হলো। রুমাইশা, আফসানা আর বাচ্চারা গিয়ে প্রথমে এক জায়গাতে বসলো। আর ওদের পাশে এসে বসলো আন্টি মহল। শাফিনের কাজিন গুলা সব কনের সাথে ফট্যোশ্যুট করতে চলে গেছে। আর বাচ্চারা বসার দুমিনিট পরেই আবার উঠে চলে গেছে খেলতে। সাফওয়ান আর রাফসান কোথায় গেছে তা ওরা নিজেরাও জানে না৷ সাফওয়ান কে একবার চারদিকে নজর বুলিয়ে খুজলো রুমাইশা, কিন্তু পেলোনা৷ বিরক্ত লাগলো ওর খুব। বুড়ো বয়সে এই ব্যাডার খুব পুলক হচ্ছে ভাইয়ের বিয়েতে। সকাল থেকেই সে যখন তখন উধাও হয়ে যাচ্ছে। শুধু সে না, তার ভাই ও৷

কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সিড়ির মুখের কাছ থেকে ভেতরে ঢুকতে দেখা গেলো সাফওয়ান আর রাফসান কে। রাফসান হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে ব্যাপক উৎসাহে সাফওয়ানের সাথে গল্প করে যাচ্ছে। আর সাফওয়ান আছে তার চিরাচরিত গম্ভীর মুখো ভঙ্গি নিয়ে। মাঝে মাঝে রাফসানের কথায় হা হু করে উঠছে ও৷

সাফওয়ান ধীর স্থীর ভাবে হেটে হেটে আসছে। বুদ্ধিদীপ্ত মুখের ওপর তীক্ষ্ণ চোখ জোড়া আশপাশ টা সতর্কতার সহিত পর্যবেক্ষণরত। পার্পল রঙা সুতির পাঞ্জাবি টার হাতা কনুই পর্যন্ত গুটানো। হাতের শিরা উপশিরা গুলো অদ্ভুত সুন্দর ভাবে দৃশ্যমান। এক ফালি চুল কপালের ওপর বাকানো। আটসাট পাঞ্জাবি টা শরীরের সাথে লেগে আছে। পাঞ্জাবীর সাথে সাদা রঙা ট্রাউজার পরা ওর৷ রুমাইশা ওর হেটে আসার পানে তাকিয়ে আছে৷ এত সুন্দর হওয়ার কোনো দরকার ছিলো? এইবার আমাজনে গিয়ে সাফওয়ান কে ও বেশি বেশি খাবার খাইয়ে মোটা করে ফেলবে। আর জিমে যেতে দেবে না। খাটাশ টা দিন দিন যেন বেশি সুন্দর হইতেছে আর রুমাইশার সাথে সাথে আন্টি মহলের ও মাথা খাইতেছে।

দূর থেকেই রুমাইশার দিকে নজর গেলো সাফওয়ানের৷ শিকারী চোখে তার বউ তার দিকে তাকিয়ে আছে। রিমুর এমন দৃষ্টি দেখে সাফওয়ানের মাথায় চাপলো দুষ্টু বুদ্ধি। ও মনে মনে বলল,
— আমাকে অবিবাহিত সাজানোর চেষ্টা! দাড়াও তোমার মজা দেখা আমি বের করছি।

ও পাশে থাকা রাফসান কে চাপা গলায় বলল,
— শোন, তোর আদরের বোন মজা দেখতে চায়। আমি তো আর তার কোনো আবদার ফেলিনা, তাই তাকে একটু ভালোভাবে মজা দেখাতে চাই। এখন শুধু তোর সাপোর্ট প্রয়োজন।

রাফসান কিছু না বুঝতে পেরে প্রশ্ন করলো,
— মজা মানে? কিসের মজা? কিসের সাপোর্ট?

সাফওয়ান ওকে ওইখানে দাড় করিয়েই এ মাথা থেকে ওমাথা সব বুঝিয়ে দিলো। খুবই চাপা সুরে বলল যেন রুমাইশার কানে ভুলেও না যায়। রুমাইশা ওদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো, দুজনের হঠাৎ এমন রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে গুরুতর আলোচনা করতে দেখে রুমাইশা ভ্রু কুচকালো। সাফওয়ান কিছু একটা বুঝাচ্ছে আর রাফসান ওর প্রতিকথায় মাথা নাড়াচ্ছে! রুমাইশা মনে মনে বলল,
— খোদার হৃষ্টপুষ্ট খাসি দুটো কি এমন গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছে? খাসি তো না, পাঠা!

রুমাইশা কিছুক্ষণ চেষ্টা করেও শুনতে পেলো না৷ আলোচনা শেষে দুজন আবার হেটে এদিকে আসতে শুরু করলো। রুমাইশা ভাবলো এবার বোধহয় সুবোধ বালক দ্বয় এসে তাদের কাছে বসবে। কিন্তু রুমাইশার সে আশায় বালি দিয়ে সাফওয়ান আর রাফসান দুজনেই ওদের সামনে দিয়ে হেটে চলে গেলো। আর সাফওয়ান তো তাকিয়েও দেখলো না, যেন ওকে চেনেই না! জীবনে কোনো দিন এই মেয়েকে ও দেখেনি, আজই প্রথম।

রুমাইশা ওর যাওয়ার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইলো৷ এটা ওর সাফওয়ান তো? নতুন জায়গায় এসে জ্বীন ভুত ভর করেনি তো ওর ঘাড়ে! কিন্তু রুমাইশা কে এবার আরও অবাক করে দিয়ে সাফওয়ান আর রাফসান গিয়ে আন্টি সমাজের কাছাকাছি গিয়ে বসলো।

রুমাইশা ভ্রু কুচকে তাকালো ওদের দিকে। দুজনে আসলে কি মতলব ফেদেছে সেটা বুঝার চেষ্টা করছে ও। কিন্তু তারপর আবার ওদের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে সামনে তাকালো ও, কিন্তু কান খাড়া করে রইলো ওদের দিকে।

আন্টি সমাজের ভেতর গুঞ্জন শুরু হয়ে গেলো। রুমাইশা কান পেতে রইলো ওদিকে কি কথা হয় শোনার জন্য। তখনকার বিবাহ ম্যানেজমেন্ট আন্টি মুখ খুলেছে। রুমাইশা তার নাম দিয়েছে বিবাহ ম্যানেজমেন্ট আন্টি, কারণ আসার পর থেকেই তার মুখে বিয়ে বিষয়ক কথা ছাড়া আর কোনো কথা নাই৷ ভদ্রমহিলার পরণে একটা নেভি ব্লু রঙের হাফ সিল্ক জামদানি শাড়ি। গহনা ও ভালোই পরেছেন৷ বয়স হবে ষাটের মতো। তিনি তার পাশে বসা অন্য আর এক মহিলা কে বললেন,
— আমাদের সিনথিয়ার সাথে ভালোই মানাবে, তাইনা বুবু? কি বলো?

বুবু সম্বোধন করা মহিলাটি বললেন,
— সিনথিয়া কে একবার ডাকবো? কৌশলে একটু দেখে নেওয়া যাবে দুজন কে কেমন লাগে!

তখন বিবাহ ম্যানেজমেন্ট আন্টি বললেন,
— তুই চুপ থাক, আন্দাজে আগের থেকে মানিয়েছে কিনা দেখার কি দরকার! আগে ছেলেটা সম্পর্কে আর ও ভালো ভাবে খোজ খবর নিই! ছেলেটার পাশে আর একটা ফর্সা মতোন ছেলে বসে আছে, ওইটা শামসুলের ছেলে না?

— হ্যা, তাই তো মনে হচ্ছে, ছেলের সাথে ওর ভালোই খাতির আছে বোঝা যাচ্ছে, ডাকবো নাকি ওকে? কিন্তু ওর নাম টা তো জানিনা!

বিবাহ ম্যানেজমেন্ট আন্টি এবার রাফসান কে ডাক দিলেন,
— অ্যাই ছেলে, অ্যাই ফর্সা মতোন ছেলে!

হঠাৎ পেছন থেকে এমন কর্কশ কন্ঠ ভেসে আসায় রাফসান পেছনে ফিরে তাকালো। সাফওয়ান নিজের ফোনের ভেতর ঢুকে আছে, ওর একটা জরুরি মেইল এসেছে সেটাই দেখতে লেগে গেছে ও৷
রাফসান তাকানোর পর মহিলা জিজ্ঞেস কিরলেন,
— তুমি শামসুল কাদেরের ছেলে না?

রাফসান মাথা নাড়িয়ে বলল,
— জ্বি আন্টি।

ভদ্রমহিলা যেন খুশি হলেন অনেক। উচ্ছাসের সাথে মুখে হাসি ফুটিয়ে তিনি বললেন,
— এদিকে আসো তো বাবা, তোমার সাথে দুটো কথা বলি!

রাফসান চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে সাফওয়ানের দিকে তাকালো, তারপর দাঁত কেলিয়ে চাপা গলায় বলল,
— তোমার প্লান কাজে দিচ্ছে ভাই, ডাক পড়ে গেছে। গেলাম আমি। কি বলে শুনে আসি।

সাফওয়ান ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসলো। তারপর আবার নিজের কাজে লেগে পড়লো। কিন্তু কান পেতে রইলো রাফসান কি বলে সেটা শোনার জন্য।

রাফসান গিয়ে বসলো বিবাহ ম্যানেজমেন্ট আন্টির বিপরীতে। আন্টিই প্রথম কথা শুরু করলেন, বললেন,
— আমাকে চিনতে পেরেছো? আমি শাফিনের চাচাতো ফুফু হই। তোমাকে যখন শেষ বার দেখেছিলাম তখন তুমি এত্তটুকুন ছিলে। তা বাবা কি করছো এখন?

রাফসান মনে মনে বলল,
— জ্বি খুব চিনেছি, আপনাকে বাপের জন্মে এই প্রথম দেখলাম।
তারপর মুখে বলল,
— জ্বী আন্টি, আমি বর্তমানে একটা কলেজে ম্যাথ প্রফেসর হিসেবে আছি৷

ভদ্রমহিলা উৎসুক চেহারা নিয়ে বললেন,
— তা বিয়ে থা করছো নি?

রাফসান বলল,
— জ্বী আন্টি করেছি।
তারপর পাশ ফিরে আফসানা আর রুমাইশা যেদিকে বসে আছে সেদিকে দেখিয়ে বলল,
— ওইখানে নীল রঙের শাড়ি পরে যে মেয়েটি বসে আছে ওইটাই আমার ওয়াইফ।

ভদ্রমহিলা ভ্রু কুচকে ওদের কে দেখার চেষ্টা করলেন কিছুক্ষণ, তারপর বললেন,
— আর পাশের ওই মেয়েটা কে?

রাফসান উত্তর দিলো,
— ওই মেয়েটা সম্পর্কে আমার বোন হয়৷

ভদ্রমহিলা আবার ও উৎসুক চাহনিতে জিজ্ঞেস করলেন,
— তা তার বিয়ে শাদি দিছো নি?

রাফসান সেন্টি খাওয়া মুখে তাকিয়ে রইলো মহিলার দিকে। চোদ্দগুষ্টির সবার বিয়ে শাদির খোজ এবার সে রাফসানের থেকে নিবে কিনা সেই চিন্তা গ্রাস করলো ওকে। ওপাশ থেকে রুমাইশা এসব শুনে মনে মনে বলল,
— এমনি এমনি কি তোর নাম আমি বিবাহ ম্যানেজমেন্ট আন্টি দিয়েছি, বজ্জাত মহিলা!

তারপর আবার কান পাতলো ও। রাফসান কিঞ্চিৎ হেসে উত্তর দিলো,
— না আন্টি, এখনো বিয়ে দেইনি, ছেলে খুজতেছি। ভালো ছেলে পেলে খুব শিগগিরই বিয়ে দিয়ে দেবো।

সাফওয়ান এতক্ষন কান পেতে ওদের কথা শুনছিলো, রাফসানের এমন কথা শুনে ওর হাসি পেলো অনেক। কিন্তু ঠোঁট চেপে সে হাসি টা ও আটকে নিলো। আড়চোখে একবার রুমাইশার দিকে তাকালো ও৷ রুমাইশা কটমটে চোখে রাফসানের দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে ওর আর ও হাসি পেলো৷
ভদ্রমহিলার সাথে সাথে তার পাশে বসা অন্যান্য মহিলারাও রাফসানের প্রতিটা উত্তর মনোযোগ দিয়ে শুনছে। রুমাইশার বিয়ে হয়নি শুনে কয়েকজন খুবই খুশি হলেন। নিজেদের ভেতর আলোচনায় লেগে গেলেন৷ তখন ভদ্র মহিলা আবার জিজ্ঞেস করলেন,
— তা বাবা, তোমার পাশে বসা ওই ছেলেটা, সাদ্দাত হুসেইন না কি যেন নাম, ওনাকে তুমি ভালোভাবে চেনো?

রাফসান মেইন টপিকসে ঢুকতে পেরে উৎসাহ নিয়ে উত্তর দিলো,
— অবশ্যই চিনি আন্টি, একদম মায়ের পেটের ভাইয়ের মতো!

— তা ছেলে কেমন? স্বভাব চরিত্র ভালো? আর ছেলের বয়স কতো? বলতে পারো?

রাফসান কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে ভাবনা চিন্তা করার নাটক করলো, তারপর বলল,
— বয়স আর কতো হবে, এই চৌত্রিশ, পঁয়ত্রিশের মতো! আর ছেলের স্বভাব চরিত্রের কথা জিজ্ঞেস করছেন! একদম হিরের টুকরো ছেলে! চাঁদের কলঙ্ক থাকতে পারে, কিন্তু সাদ্দাত হুসেইনের চরিত্রে কোনো দাগ নেই। আমি তো ভাবছিলাম আমার বোন টার সাথে ওর একটা ব্যাবস্থা করে দিবো, এমন ছেলে কি হাতছাড়া করা যায় বলেন! কিন্তু আমার বোন টা একটু বেশি বোঝে, বলে নাকি দেশ ছেড়ে কোথাও যাবে না,

সাফওয়ান এসব কথা শুনে আড়চোখে একবার রুমাইশা কে দেখলো। সর্বনাশ, বউয়ের কটমটে দৃষ্টি এখন রাফসানের দিক থেকে ঘুরে তার ওপরেই ভর করেছে। যেভাবে তাকাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে এখনি চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।
সাফওয়ান মনে মনে রাফসানের উদ্দেশ্যে বলল,
— ভাই এবার থাম, ওদিকে ভেতরে ভেতরে বিস্ফোরণ হচ্ছে, ফাটবে গিয়ে আমার ঘরে!

কিন্তু রাফসানের কোনো হেলদোল নেই, সে মহা উৎসাহে বলতে লাগলো,
—আসলে ছেলে আমেরিকার সিটিজেন তো! বউ নিয়ে সেখানেই সেটেল হবে। কিন্তু আমার বোনের দেশপ্রেম একটু বেশি আরকি! সে কিছুতেই দেশ ছাড়িতে রাজি না। তাই আর আমরা সে সম্পর্কে আগাইনি।

আন্টিমহলের চোখ চকচক করে উঠলো। পাশ থেকে একজন মহিলা অন্যদের সাথে কিসব আলোচনা করে উঠে চলে গেলেন। তার কিছুক্ষণ পর একটা লম্বা চওড়া, খয়েরী রঙা লেহেঙ্গা পরিহিত একটা মেয়েকে নিয়ে হাজির হলেন সেখানে৷ মেয়েটির পিঠের মাঝ বরাবর লম্বা চুল, সেগুলো পিঠময় ছড়ানো। দেখতে সুন্দ্রি, কিন্তু তাকে হঠাৎ করে টানতে টানতে এইখানে নিয়ে আসায় সে মনে মনে একটু বিরক্ত। মেয়েটিকে নিয়ে আসার পর ভদ্রমহিলা মেয়েটিকে দেখিয়ে বলে উঠলেন,
— আসলে আমাদের একটা বিবাহ যোগ্য মেয়ে আছে, সিনথিয়া নাম, অনার্স কমপ্লিট করেছে সবেমাত্র। আমরা তার জন্য একটা ভালো ছেলে খুজছি। আর ওই ছেলেটার মতো ছেলে হলে আমাদের খুব ভালো হতো!

সিনথিয়া নামক মেয়েটা তার পাশে থাকা তার মায়ের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে চাপা সুরে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হচ্ছে মা এখানে, তোমরা কোন ছেলের সাথে আমাকে জুড়ে দেওয়ার ফন্দি আটছো বলতো!

মেয়েটির মা তাদের থেকে তিন চার সারি সামনের চেয়ারে বসা সাফওয়ান কে দেখিয়ে বলল,
— ওই যে ওই ছেলেটা, ও বাড়িতে শাফিনের পাশে যে লম্বা করে সুন্দর করে ছেলেটা বসে ছিলো সেই ছেলেটা।

সিনথিয়া কে এতকিছু বলতে হলো না, পার্পল কালার দেখেই ও চিনতে পেরেছে যে সে আসলেই কে৷ মুহুর্তেই ওর বিরক্তি মাখা মুখ টা খুশি খুশি হয়ে গেলো৷ এই লোক টাকে নিয়ে তাদের কাজিন মহলে বিরাট এক আলোচনা হয়ে গেছে অলরেডি। ওরই এক খালাতো বোন পার্পল কালারের পাঞ্জাবি ওয়ালা ছেলেটার ওপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে। এখন এই নিউজ টা তাকে দিলে জব্বর এক মজা হবে। সিনথিয়া মেয়েটা তার মাকে জিজ্ঞেস করলো,
— নাম কি মা ছেলেটার?

ভদ্রমহিলা উত্তর দিলেন,
— সাদ্দাত হুসেইন।

সিনথিয়া মেয়েটা মহা উৎসাহে যেদিক থেকে এসেছিলো সেদিকে আবার ছুট লাগালো। তার মা তাকে পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলল,
— কোথায় ছুটছিস? কাজ এখনো শেষ হয়নি তো!

কিন্তু সে মেয়েটা এখনি আসছি’ বলে চলে গেলো। এদিকে বিবাহ ম্যানেজমেন্ট আন্টি রাফসান কে বলল,
— তুমি ছেলেটাকে একবার ডাক দাও না! দুটো কথা বলে দেখি।

এ কথা সাফওয়ানের কানে যাওয়া মাত্রই ও উঠে পড়লো চেয়ার থেকে, তারপর কানে ফোন ধরে ফোন রিসিভ করার ভান করে চলে গেলো অন্যদিকে। যাওয়ার সময় রুমাইশার দিকে আরও একবার আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো, তার বউ এর দৃষ্টি এখনো তার দিকেই নিবদ্ধিত। বেচারা ঢোক গিলে দ্রুত পা চালিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে৷ রাফসান পেছনে তাকিয়ে সাফওয়ান কে চলে যেতে দেখে ভদ্রমহিলা কে বলল,
— অনেক ব্যাস্ত মানুষ, বোঝেনই তো! বিশাল বড় বিজনেস সামলায়, ফোনের পর ফোন আসতেই থাকে!

ভদ্র মহিলা বিষয় টা বোঝার ভঙ্গিতে সহমর্মিতা দেখিয়ে মাথা নাড়ালেন। এদিকে সাফওয়ান উঠে গিয়ে মনে মনে বলল,
— ব্যাটা রাফসান, তোকে বললাম তোর আদরের বোন কে মজা দেখাইতে, আর তুই আমারে মজা দেখানোর ব্যাবস্থা করতেছোস!

এরপর ও কল করলো রাফসান কে। সাফওয়ানের কল পেয়ে রাফসান আন্টিমহলের থেকে জরুরি কলের কথা বলে বিদায় নিয়ে চলে এসে কল রিসিভ করলো, করতেই সাফওয়ান খিচিয়ে বলে উটজলো,
— শালার বাচ্চা শালা! তোকে এত উপকার করতে বলেছি আমি? আজ যদি তোর বোন আমার ওপর চড়াও হয়, তাহলে সেটা আমি তোর ওপরেই ডাবল করে এপ্লাই করবো।

রাফসান দাঁত কেলিয়ে বলল,
— যেকোনো এক পক্ষ মজা দেখবে, কোন পক্ষ দেখবে সেটা বিষয় না, গুডলাক!

৯০. খাওয়া দাওয়া শেষে ওরা সবাই বসে আছে। সাফওয়ান আর রাফসান, আফসানা আর বাচ্চাদের সাথে বসে আছে। আর রুমাইশা গিয়ে বসেছে শাফিনের পাশে। ওর মুড মশান খুবই খারাপ। মুখে কোনো হাসি নাই, মুখ টা গম্ভীর হয়ে আছে ওর। সাফওয়ান মাঝে মাঝে বউ এর এমন ঈষাণ কোণের মেঘের মতো মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছে। কিন্তু রুমাইশা একবার ও তাকাচ্ছে না ওর দিকে। কোনো দিকেই তাকাচ্ছে না৷ এক ধ্যানে ওর সামনে বসা সিনথিয়া নামক মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে ও।

শাফিন তার রুমি আপুর এমন চেহারা দেখে শেষ মেশ জিজ্ঞাসা করলো,
— কি হয়েছে তোমার আপু, তুমি এমন মুখ করে আছো কেন? ভাইয়ার সাথে কিছু হইছে নাকি?

কিন্তু রুমাইশা শাফিনের প্রশ্নের উত্তর তো দিলোই না, উলটো ঝাঝালো গলায় বলল,
— চুপ থাক, নইলে তোর ভাইয়ের ওপরের রাগ সব তোর ওপর ঝাড়বো।

তাতেই শাফিন বুঝলো গিট্টু টা ভালোভাবে লেগেছে! ও আর কথা বাড়ালো না। সাফওয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো, সে বেচারা মাঝে মাঝেই বউয়ের দিকে তাকাচ্ছে, কিন্তু অ্যাটেনশন পাচ্ছে না। তাতে বুঝলো ঝামেলা টা ভাইই বাধিয়েছে৷

সিনথিয়া মেয়েটা ব্যাপক খুশি। সে সারাক্ষণ লাফিয়ে বেড়াচ্ছে সাফওয়ানের আশে পাশে। খাইতেও সে বসেছিলো সাফওয়ানদেরই কাছাকাছি। সেই রাগে রাগে রুমাইশা আর ওদের সাথে বসেনি৷ ও গিয়ে বসেছে বিবাহ ম্যানেজমেন্ট আন্টিদের সাথে।
এদিকে খাবার টেবিলে বসে সিনথিয়া মেয়েটার ব্যাপারে সাফওয়ানের সাথে খাওয়ার পর কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্টি মহল। রুমাইশা সব চুপচাপ শুনে গেছে।
আর এ সিদ্ধান্ত শাফিনের কাজিন মহল জানার পর থেকে ছেলে মেয়ে উভয় দল খুব লাফাচ্ছে! ছেলে গুলো তো প্রথম থেকেই খাতির জমানোর চেষ্টা করছিলো, এবার মেয়ে গুলাও সাফওয়ানের আশেপাশে ঘুরে খাতির জমানোর চেষ্টায় আছে, হাজার হলেও হবু দুলাভাই! আর সিনথিয়া মেয়েটাকে ওরা বার বার গিয়ে সাফওয়ানের কথা বলে বলে লজ্জা দিচ্ছে। আর মেয়েটাও ওদের এসব রসিকতা শুনে লজ্জায় লাল টমেটো হইতেছে বার বার।

সাফওয়ান পড়েছে বিপদে। তবুও রুমাইশাকে জ্বালানোর জন্য ও এখনো চুপচাপই আছে৷ কাউকে কিছুই বলছে না৷ মাঝে মাঝে রাফসানের দিকে ও ঠান্ডা দৃষ্টি দিয়ে বুঝাচ্ছে যে,
— কখন দেখবি আমি রিমু কে নিয়ে হাওয়া হয়ে গেছি, আর সব সমস্যা তোর ঘাড়ে এসে পড়েছে। তখন বুঝবি মজা।

কিন্তু রাফসান সেসবের তোয়াক্কা করছে না। ও সাফওয়ান এর এমন অসহায় অবস্থায় খুব মজা পাচ্ছে। শাফিন কেও এ সিচুয়েশন সম্পর্কে অবগত করা উচিত, তাহলে সেও একটু মজা নিতে পারবে। রাফসান এ কথা ভেবে উঠে স্টেজের দিকে এগোলো। আর সাফওয়ান উঠে চলে গেলো ওয়াশরুমের দিকে। সাফওয়ানের যাওয়ার পানে তীর্যক চোখে তাকিয়ে রইলো রুমাইশা৷

ওয়াশরুমের এদিকটা কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। আবছা আলোয় মোটামুটি দেখা যাচ্ছে। সাফওয়ানের চোখে লেন্স থাকার কারণে ও ওর নাইট ভিশন টা মিস করছে। যদিও দেখা যাচ্ছে মোটামুটি, কিন্তু ক্লিয়ার না।

ও ওয়াশরুমে ঢুকে, কাজ কর্ম শেষ করে, ফ্রেস হয়ে আবার বের হলো। কিন্তু বের হয়ে কয়েক পা এগোতেই ওর পেছনে, খুব কাছে কারো নিরব উপস্থিতি টের পেলো ও৷ ওর মুখে ফুটে উঠলো বাকা হাসি। আর তারপরেই ঝড়ের গতিতে পেছনে ফিরে এক ধাক্কায় তাকে দেয়ালের কাছে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।

( পড়া বাকি আছে কিছু, তাই বড় পর্ব দিতে পারিনি, কালকে দিবো ইন শা আল্লাহ, আপনারা রাগারাগি কইরেন না যেন 🥹)

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।