লাভার নাকি ভিলেন | পর্ব – ২৭

আকাশ ঘরে এসে দেখল মেঘলার জ্ঞান ফিরেছে, শুয়ে শুয়ে কাঁদছে মেঘলা।

আকাশের খুব খারাপ লাগছে কিন্তু সে বোঝতে দিতে চায় না।কারন মেঘলাকে শান্তনা দিতে গেলে সে আরো ভেংগে পরবে।
আকাশঃ এই শুয়ে আছিস কেন….???
কোন সাড়া নেই মেঘলা ফেলফেল করে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।
আকাশঃ কিরে কথা বলছিস না কেন? ব্যাথা করছে?
আকাশ ব্যাথার কথা বলতেই মেঘলার কান্নার আওয়াজ বেড়ে গেল।
আকাশঃ যা ভেবেছিলাম তাই হল। আকাশ মেঘলার কাছে গিয়ে বললো দেখে কোথায় বেশি লেগেছে…
মেঘলা রাগে উল্টো দিকে ঘুরে গেল….
আকাশঃ আচ্ছা এই কান ধরছি আর কখনো মারব না। এবারের মত মাফ করে দেন প্লিজ।
মেঘলা ভেংচি কাটল।
আকাশঃ আচ্ছা সুস্থ হয়ে আমাকেও মারিস…এখন ওষধ লাগাতে দে…
মেঘলা ওষধ লাগাতে চায় না কিন্তু জোর করার মত শক্তি নেই তাই আকাশ জোর করে মলম লাগাতে শুরু করল…
মলম লাগাতেই কাটা জায়গা জ্বালা করতে শুরু করল আর মেঘলাও ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে লাগল।
আকাশঃ কাঁদিস না প্লিজ তোর কান্না আমার সহ্য হয় না মেঘলা। একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে কাঁদিস না প্লিজ। আকাশ মেঘলা বোঝাচ্ছে আদর করে দিচ্ছে কিন্তু কে শুনে কার কথা মেঘলা কেঁদেই চলেছে….
আকাশের মা এতক্ষন বাসায় ছিল না এই মাত্র বাসায় এসেছে এসেই মেঘলার কান্না শুনতে পেয়ে আকাশের ঘরে আসল।
মেঘলা শুয়ে শুয়ে কাঁদছে দেখে আকাশের মা গিয়ে বলল কি হয়েছে মেঘলা কাঁদছিস কেন?
মেঘলা ২ হাত উঁচু করে আকাশের মা কে দেখাল…
আকাশের মা অবাক হয়ে বলল কি সর্বনাশ তোকে এভাবে কে মেরেছে?
মেঘলার নিশব্দ চাহনি প্রমান করলো এটা আকাশের কাজ।
আকাশের মা সাথে সাথেই আকাশ কে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল।
আকাশের মাঃ একটা মেয়ের গায়ে হাত তুলতে তোমার হাত কাঁপল না? এতদিন বাড়ির বাইরে গুন্ডামি করতে এখন ঘরেও শুরু করেছো…??
আকাশের মার আচারনে আকাশ অবাক হলো…
কারন তার ধারনা মেঘলাকে তার মা একদম পছন্দ করে না।
আকাশ কিছু বলল না।
মেঘলাঃ উনার কোন দোষ নেই আন্টি…ছোট বোন ভুল করলে ভাইয়ের যা করা উচিত উনি তাই করছেন…
আকাশের মাঃ কি এমন করেছিস তুই? আর যাই করে থাকিস তাই বলে এভাবে মারবে…?? অমানুষ কোথাকার। তুই দাঁড়া আমি ওষধ নিয়ে আসছি। বলে উনি চলে যাচ্ছিল তখন আকাশ বলল মা দাঁড়াও একটা কথা বলতে চাই।
আকাশের মাঃ হুম বল কি বলবি…
আকাশঃ আমি আজকেই মেঘলাকে বিয়ে করতে চাই তোমরা  যদি মেঘলাকে মেনে না নাও আমি আজকেই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব…বাড়ি ছাড়তে আমার কোন আপত্তি নেই। তোমরা তো মেঘলাকে এটাই বুঝিয়েছ তাই না? ওকে বিয়ে করলে তোমরা মানবে না আমাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবে তাই না?
আকাশের মাঃ আজব তো আমরা কেন মেঘলাকে মেনে নিব না আমরা তোকে বলেছিলাম তোকে বিয়ে করতে বরং মেঘলায় তোকে বিয়ে করবে না বলে দিয়েছে আর কেন বিয়ে করতে চায় না সেটা এখন বোঝলাম এমন জানুয়ারকে কে বিয়ে করবে?
আকাশঃ তোমরা আমাদের বিয়ে দিতে চাও? এটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলছো তুমি? যেখানে মেঘলা এত গরীব।
আকাশের মাঃ মেঘলা গরীব মানে কি? তুই কি জানিস না তোর দাদি তার সম্পত্তির অর্ধেক মেঘলার নামে লিখে দিয়েছেন তাহলে ও গরীব হয় কিভাবে?
আকাশ অবাক হয়ে বলল দাদি মেঘলাকে সম্পত্তি দিয়েছে মানে কি?
রাবেয়া বেগমঃ হ্যা দিয়েছেন মেঘলা এতদিন তোর দাদিকে দেখাশুনা করেছে তাই এটা মেঘলার প্রাপ্য  তাই দিচ্ছেন কেন মেঘলা তোকে কিছু বলে নি?
আকাশঃ কি বলছো এসব তুমি…???
রাবেয়া বেগমঃ হ্যা এটাই তো সত্যি কিন্তু তুই মন খারাপ করছিস কেন তোর তো খুশি হওয়ার কথা। মেঘলা রাজি হলেই তোদের বিয়ে হবে।।
আকাশঃ কিভাবে খুশি হব মা এতক্ষন মেঘলার আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার একটা ভাল কারন খুজে পেয়েছিলাম কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে নাবিলের কথা ঠিক নয়। মেঘলা পরিবারের কারোর কথায় নয় বরং সম্পত্তি পেয়ে বদলে গেছে(মনে মনে)
মা তুমি গিয়ে ওষধ নিয়ে আসো…
রাবেয়া বেগম চলে যাওয়ার পর আকাশ আবার গিয়ে মেঘলার পাশে বসল।
আকাশঃ মেঘলা হাত জোর করে বলছি, কেন তুই এমন করছিস প্লিজ আমাকে বল….
মেঘলাঃ সত্যিই জানতে চান?
আকাশঃ হুম
মেঘলাঃ কিন্তু আমি যে আপনাকে এতটা কস্ট দিতে চাই না। সত্যিটা আপনি সহ্য করতে পারবেন না….
আকাশঃ কি এমন সত্যি? আমি জানতে চাই আমি সহ্য করতে পারব তুই বল মেঘলা তুই কি সত্যিই আমায় ভালবাসিস না?
মেঘলাঃ বলতে বাধ্য করছেন তাই বলছি,
হ্যা এটাই সত্যি আমি আপনাকে কোনদিনি ভালবাসি নি… এতদিন আমার কোন আশ্রয় ছিল না তাই আপনাকে আখরে ধরতে চেয়েছিলাম।
আমি তো প্রথমেই বুঝেছিলাম আপনি আমার প্রতি দুর্বল তাই সেটাকে কাজে লাগালাম। আমাকে আপনার বোকা বলেন কিন্তু আমি কখনোই বোকা ছিলাম না। বোকা তো আপনি…এতদিন যা যা হল সবি ছিল মিথ্যা ছিল কিন্তু আপনি বোঝেন নি এসব কিছুই ছিলি আমার প্ল্যানের অংশ…
সেদিনের সেই যে মাঝির বলা কথা আর আপনাকে দেওয়া সারপ্রাইজ সবি ছিল আমার সাজানো আপনাকে ফাঁদে ফেলার জন্য নাটক করেছিলাম।বআমি তো জানতাম না দাদি এমন কিছু করবেন,বআমি আপনাকে ফাঁসিয়ে এই বাড়িতে নিজের জায়গা করে নিতে চেয়েছিলাম আর কিছুই না। আরে আপনাকে যদি আমি এতই ভালবাসতাম তাহলে গত ১০ বছরে কেন একবারো আপনার সাথে যোগাযোগ করলাম না? একবারো ভাবেন নি? আমি চাইলে কি লুকিয়ে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পাড়তাম না? আর সেটাও না হয় বাদ দিলাম আমি যদি আপনাকে ভালবাসতাম তাহলে সেদিন কি করে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম? নাবিল ভাই গন্ডগোল না করলে তো সেদিনি আমার বিয়ে হয়ে যেত।ভভালবাসলে কি আপনাকে ছেড়ে অন্যকারোর সামনে বউ সেজে বসতে পাড়তাম? আসলে আমি আপনাকে নয় বরং চেয়েছিলাম একটা সুখি জীবন। আর হ্যা আন্টি সত্যি বলছেন আংকেল আমার আর আপনার বিয়ের কথা বলেছিল কিন্তু আমি জানি আপনার মাও এমনি এমনি রাজি হন নি সম্পত্তির জন্য হয়েছেন আর আমি তো আপনার সাথে আমি থাকতে চাইনা তাই আমিই বিয়েতে না করে দিয়েছি।
সত্যি এটাই আপনার প্রতি আমার কোন ফিলিং নেই। সেটার প্রমান পেয়েও আপনি বোঝেন নি, যেখানে আপনি আমার পুতুল ১০ বছর ধরে গুছিয়ে রেখেছেন সেখানে আমি আপনার দেওয়া রিংগুলি খোলে ফেলে দিয়েছি এর পরেও আপনি বোঝেন নি?
আপনি আমাকে বলেছিলেন আমি যেন একটু চালাক হই কিন্তু ভাইয়া আহ আমি আপনাকে বলছি আপনি একটু চালাক হোন আজ আপনি যেভাবে ফেঁসে গেছেন এটা থেকে বের হতে আপনার অনেক সময় লাগবে….
আকাশের চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে আকাশ যেন পাথর হয়ে গেছে….
বুকে অসম্ভব যন্ত্রনা হচ্ছে নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে কথা বলার শক্তি সে হারিয়ে ফেলেছে….
কারন মেঘলা যা যা বলল সবি সত্যি সত্যি ঘটেছে।
মেঘলা আরো কিছু বলতে চাইল….
আকাশ মেঘলাকে থামিয়ে দিয়ে বলল কিছু কথা নাহয় না বলাই থাক… আমি হয়ত আর নিতে পারব নারে মেঘলা…তুই যেভাবে প্রমান সহ ব্যাখ্যা দিলি এভাবে আর একটু বল্লে আমি হয়ত সেন্সলেস হয়ে যাব আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমি ভাবতেই পারছি না আমার এতদিনের সাজানো স্বপ্নগুলি আজ এক মুহুর্তের ঝড়ে ভেংগে গেল….
মেঘলাঃ আমি এগুলি বলতে চাই নি কিন্তু আপনি জোর করেছেন আমার কিছু করার নেই ভাইয়া ভালবাসা তো জোর করে হয় না। 
আকাশ হেসে বললো ঠিকি বলেছিস জোর করে আর যাই হোক ভালবাসা হয় না। আসলে
জীবন পরিবর্তনশীল দেখ কালকের তুই  আজো আছিস কিন্তু সেই তুই আর এই তুই এর মাঝে কত পার্থক্য। জানিস মেঘলা সময় বরই নির্মম মানুষ সেই আগেরটাই আছিস কিন্তু সময় টা আর নেই তাই আজ এত কাছে থেকেও আমাদের মধ্যে কত দুরত্ব। একটু আগেই এত অধিকার নিয়ে যার গায়ে হাত তুল্লাম এখন তাকে মারা তো দূর একটা ধমক দিওয়ার ক্ষমতাও আমার নেই।
এ অবস্থায় আমার কি বলা উচিত আমি জানি না কিন্তু শেষ একটা কথা বলি আমাকে নিয়ে এভাবে না খেললেও পারতি রে…
এরপর হয়ত কখনো আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারব না।
তবে কখনো আর তোকে বাধা দিব না আজ থেকে তুই মুক্ত এতদিন যা যা করেছি পারলে ক্ষমা করে দিস। যার সাথেই থাক ভাল থাক এটাই চাই….
আকাশ চোখের পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেল।
আকাশ রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে….. 
আকাশ….হুম আমিই আকাশ, সেই আকাশ
যে ছোট বেলা থেকে সে চাইত তার পরিবার তার ভালবাসাকে মেনে নিক। আজ সবাই মেনে নিয়েছে এতদিন ধরে সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে যে রাতদিন মারামারি করেছে আর জীবন বাজি রেখে নিজের জায়গাটা আজ করেই নিয়েছে জানেন আজ আকাশের সব স্বপ্ন আজ পুরন হয়েছে। আজ তার মন খুলে হাসা উচিত কিন্তু হাসি তার মুখে শোভা পাচ্ছে না কারন হাজার বাধা দেওয়ার পরেও চোখের জল যে হাসিটাকে মলিন করে দিচ্ছে। 
কারন তার সব স্বপ্ন যাকে কেন্দ্র করে ছিল যে মেয়েটার জন্য সে পাগল ছিল,
অসুস্থ অবস্থাতে হাসপাতালে বেডে শুয়েও সে যে মেয়েটার ফিরে আসার অপেক্ষায় রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকত… আজ সেই মেয়েটা ভালবাসার সকল টান ছিন্ন করে চলে গেছে।
জানিস মেঘলা আজ থেকে এই আকাশ আর কখনো বৃস্টিতে ভিজে বলবে না আমিও তোকে ভালবাসি

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।