৭৭. ওরা যখন ম্যানহোলের শেষ সীমানায় পৌছালো তখন ঘড়ির কাটা বিকাল পাঁচ টা পেরিয়ে ছয়টার দিকে অগ্রসর হয়েছে। ম্যান হোলের এপাশের ঢাকনা টা আটকানো। সেখান থেকে পানি ঝমঝমিয়ে পড়ছে নিচে, আর সেটা বয়ে চলে যাচ্ছে সাগরের বুকে। সেই ঝমঝমানো নোংরা পানির ভেতর দিয়েই বুক পর্যন্ত ডুবিয়ে এগিয়ে আসছে সাফওয়ান। রুমাইশার ব্যাকপ্যাক টা ওর নিজের পিঠে৷
সেখান থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে ও ম্যানহোলের ঢাকনার স্ক্রু গুলো খুললো একে একে। কিন্তু এত গুলো বছর ধরে এক জায়গায় স্থীর থাকায় ঢাকনা টা প্রচন্ডরকম শক্ত হয়ে আটকে আছে তার জায়গায়।
সাফওয়ান প্রথমে নিজের হাত দিয়ে কয়েকবার ধাক্কা দিলো ঢাকনা টায়, কিন্তু কাজ হলো না। এদিকে নোংরা পানির সংস্পর্শে এসে রুমাইশা বার বার হাচি দিচ্ছে। সাফওয়ান কে আগের থেকেও বেশি শক্ত করে আকড়ে ধরে রেখেছে ও। পানি টা থেকে গন্ধ আসছে বিচ্ছিরি, রুমাইশার গা গুলাচ্ছে, কিন্তু কিছুই করার নেই।
সাফওয়ান আর ও কয়েকবার হাত দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার পরও যখন সেটা খুলল না তখন সাফওয়ান একটু পেছন দিকে সরে গিয়ে ছুটে এসে পা দিয়ে আঘাত করলো ঢাকনাটায়। আর তখনি সেটা খুলে গিয়ে ছিটকে পড়লো কোনো একদিকে৷ নোংরা পানিটা টা হঠাৎ বাধাহীন হয়ে দ্বিগুণ বেগে বয়ে যেতে লাগলো যেন।
ওদের সামনে এখন পানির ফোয়ারা, কিন্তু এ পানির নিচে শুধু পাথর৷ পানির উচ্চতা টা বেশি নয়, হাটু পর্যন্ত হবে সাফওয়ানের৷ কিন্তু খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে, নইলে অসাবধানতা বসত পা যদি একবার কোনো পাথরের ফাকে আটকে যায়, বা পা ফসকে যায় তাহলে মরতে হবে দুজনকেই। সাফওয়ান জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে রুমাইশা কে কোলে নিয়েই নেমে পড়লো সেখানে৷
তারপর হাটতে হাটতে পাথরের ওপর বয়ে চলা পানি টা পার হয়ে ওরা এলো সমতলে। এখান থেকে আর ও দেড় কিলো দূরে জোনাস আর রবার্ট৷
সাফওয়ান হাটছে, ওর নিঃশ্বাস পড়ছে ঘন ঘন। মাঝে মাঝে একটু বেশিই জোরে দম ফেলছে ও। রুমাইশা কিছুক্ষণ পর বলে উঠলো,
— আমাকে নামিয়ে দিন এবার, বাকি টা আমি হাটতে পারবো। সমস্যা হবে না আমার।
সাফওয়ান রুমাইশার কথায় অসম্মতি জানিয়ে বলল,
— তোর শরীর ভালো না৷ বমি করেছিস একবার, শরীর দুর্বল হয়ে গেছে৷ আমি যদি জানতাম আমাদের সন্তান আসতে চলেছে পৃথিবীতে তবে কখনোই তোকে আমি এই ঝামেলায় জড়াতে দিতাম না৷ এখন জড়িয়ে যখন গিয়েছিস চুপচাপ বসে থাক৷
কিন্তু রুমাইশা শুনলো না, ও বার বার ওকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য জোরাজোরি করতে লাগলো। ওর কথায় অতিষ্ঠ হয়ে সাফওয়ান এইবার বলল,
— বেশি ফটফট করলে সাগরের মাঝখানে ফেলে দিয়ে আসবো। চুপ থাক। তোকে ছোটবেলায় সারাদিন কোলে নিয়ে ঘুরতে পেরেছি যখন, এখনো পারবো। সৃষ্টিকর্তা আমার এই দেহটা অকারণে দেয়নি, তোরে কোলে নেওয়ার জন্য দিয়েছে।
রুমাইশা সাফওয়ানের কাধ টা আর একটু শক্ত করে আকড়ে ধরে মুচকি হেসে বলল,
— ওহ, আচ্ছা! তাহলে আমি আর কোল থেকে নামছি না৷
সাফওয়ান নিজেও রুমাইশা কে আর ও শক্ত করে নিজের সাথে চিপকে নিয়ে ছোট্ট করে বলল,
— হু।
৭৮. ম্যাথিউ পালাতে সক্ষম হয়নি। হারবার্টের গার্ড দের হাতে ধরা পড়ে গেছে ও পালিয়ে যাওয়ার সময়। তবুও নিজের সাথের ছেলে গুলোকে ও সেইফ জোনে পাঠিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। শুধু ও-ই যেতে সক্ষম হয়নি। বর্তমানে ভার্সিটির পাশের এক বিল্ডিংয়ের পরিত্যক্ত একটা কামরায় চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে ওকে৷
চোখের কাছটাতে কালশিটে দাগ পড়ে গেছে, ঠোঁটের কোনা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে চুইয়ে চুইয়ে, গায়ের পোশাক টা মারের চোটে ছিড়ে গেছে কয়েক জায়গায়, সে ছেড়া জায়গা গুলো দিয়ে শরীরের বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন উকি দিয়ে আছে৷ ওর পাশেই হাতে মোটা সোটা একটা লৌহ দন্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কয়েক জন ছেলে।
এতক্ষন ওরা ওকে লাঠিপেটা করছিলো, কিন্তু কাঠে কাজ না হওয়ায় এখন লোহার দিকে চলে গেছে ওরা। ম্যাথিউ যদি সাফওয়ানের লোকেশন ঠিক ঠিক বলে দেয় তবে এই লোহার রডের একটা বাড়িও ম্যাথিউ ওর শরীরে পড়বেনা এবং তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে কথা দিয়েছে হারবার্ট।
ম্যাথিউ চোখ বুজে পড়ে আছে চেয়ারে, নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করছে ও। এই লোহার রডের একটা বাড়ি খেলেই ওর দম ফুরিয়ে যাবে চিরতরে, নিজের জীবন বাচানোর জন্য কি ও এখন বলে দিবে নিজের বন্ধুর কথা?
কিন্তু যদি বলে দেওয়ার পর ও ওর কপালে মৃত্যুই লেখা থাকে তাহলে? হারবার্টের ওপর তার কোনো বিশ্বাস নেই। সে কথা দিয়ে কথা রাখে ঠিকই, কিন্তু সেটা শুধু বন্ধুদের বেলায়৷ শত্রুদের বেলায় নয়। তাহলে সে কি করবে? নিজের বন্ধুর প্রাণ বাচাতে সে চুপ থাকবে? নাকি তার জীবন বাচানো বন্ধু টার সাথে সে বিশ্বাসঘাতকতা করবে?
ম্যাথিউ চুপ করে আছে দেখে ওর পাশে দাড়ানো ছেলে গুলর একটা তার হাতে থাকা রড টা উচু করে ধরলো ওকে আঘাত করার জন্য। মুভমেন্টের শব্দ পেতেই ম্যাথিউ ঝট করে চোখ খুললো, তারপর সাথে সাথেই বলে উঠলো,
— আমি বসের সাথে কথা বলতে চাই৷
রড উচু করে ধরা ছেলেটা মুখ বেকিয়ে হাসলো নিঃশব্দে, তারপর রড টা আবার নিচে নামিয়ে সে তার পাশে দাঁড়ানো ছেলেটাকে ইশারা করলো হারবার্ট কে খবর টা দেওয়ার জন্য, যে ম্যাথিউ তার সাথে কথা বলতে চায়৷
আদেশ পেয়ে সে ছেলেটা ছুটলো হারবার্টের উদ্দ্যেশ্যে। তার কিছুক্ষন পরই সেই ছেলেটাই আবার ঢুকলো কামরায়, হাতে একটা খান্দানী চেয়ার নিয়ে। আর তার কিছুক্ষণ পরেই ছ জনের একটা গার্ড নিয়ে কামরায় প্রবেশ করলো হারবার্ট৷
হারবার্ট এসে পায়ের ওপর পা তুলে বসলো চেয়ার টায়, তারপর ম্যাথিউ কে উদ্দেশ্য করে বলল,
— বলো, আমি শুনছি৷
ম্যাথিউ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ধীর গলায় বলে উঠলো,
— সাফওয়ান বস্টন হারবর এর ওয়ালস্টোন সী বিচ থেকে প্লেইনে চড়বে, তারপর কোথায় যাবে সেটা আমি জানিনা, আমাকে বলা হয়নি। এতক্ষনে হয়তো পৌছেও গেছে ওরা সেখানে। ওর সাথে ওর স্ত্রী আছে আর খুব সম্ভবত ওর দুজন বন্ধু। এর বেশি কিছু আমি জানিনা৷
হারবার্ট তীক্ষ্ণ চোখে ম্যাথিউএর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলে উঠলো,
— তোমার কথা আমি কেন বিশ্বাস করবো? যেখানে তুমি আমার সাথে প্রথমেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছো, আর নিজের বন্ধুর সাথেও এখন বিশ্বাসঘাতকতা করছো!
ম্যাথিউ মাথা নিচু করে ফেলে বলল,
— আমার কাছে নিজের বন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই৷ নিজের জীবন বাচানোর জন্য আমাকে এটা করতেই হবে৷ আর সাফওয়ান ও হয়তো আমার ব্যাপার টা বুঝবে, কারণ আমি ওকে বলতে শুনেছি জীবন বাচানো ফরজ, ফরজ অর্থ হলো অবশ্য কর্তব্য।
তারপর মাথা তুলে সোজা হারবার্টের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
—আর আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি কারণ আপনাকে আমি পছন্দ করিনা৷ কখনো করিনি, এখনো করিনা, ভবিষ্যতেও করবো না৷ কিন্তু আমি এখন সত্যি কথাই বলছি।
হারবার্ট পায়ের ওপর থেকে পা নামালো। তারপর চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে রডধারী ছেলেটার উদ্দেশ্যে বলল,
— ওর হাত পা বেধে ওর কোমোরের সাথে একটা পাথর বেধে সাগরে ফেলে দিয়ে আসো। ওর মতো বিশ্বাসঘাতক কে না আমার প্রয়োজন, আর না সাফওয়ানের।
বলেই কামরা থেকে বেরিয়ে গেলো হারবার্ট৷ আর ম্যাথিউ সেই চেয়ারের ওপর বসেই নিজের চোখ দুইটা বুজে নিলো, প্রাণ বাচানোর শেষ চেষ্টা টাও তার ব্যর্থ হলো!
রডধারী ছেলেটা নিজের হাতের রড টা রেখে এগিয়ে এলো ম্যাথিউ এর বাধন খুলে তাকে তার জন্য নির্ধারিত শাস্তি দেওয়ার জন্য।
৭৯. জোনাস আর রবার্ট নিজেদের প্লেইন টাকে সি বিচের রানওয়েতে রেখেই আশেপাশে ঘুর ঘুর করছে সাফওয়ান আর রুমাইশার অপেক্ষায়। রবার্ট চিন্তায় পড়ে গেছে, সি বিচের বালির ওপর দিয়ে তার প্লেইন টা ঠিকভাবে সে আকাশে ওড়াতে সক্ষম হবে কিনা। কিন্তু সক্ষম তাকে হতেই হবে, এছাড়া কোনো উপায় নেই৷
ওদের ল্যাবরেটরি টা হারবার্ট ষড়যন্ত্র করে ক্লোজ করে দেএয়ার পর থেকে ওরা সবাই দলছুট হয়ে গেছিলো, কিন্তু ওদের হৃদ্যতা কোনো অংশেই কমেনি, বরং আর ও গাঢ় হয়েছে৷
রবার্টের মনে আছে, সে যখন ল্যাবে একেবারেই নতুন, তখন তার হাতে কোনো টাকাই ছিলো না। তার স্ত্রী তখন সন্তানসম্ভবা। পেটে তার ট্রিপলেট। সি সেকশন ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না।
কিন্তু তার স্ত্রীর অবস্থা এতটাই ক্রিটিক্যাল ছিলো যে হয় স্ত্রী নয়তো সন্তান তিনটার যে কোনো একজন কে বাচানোর অপশন দিয়েছিলো ডাক্তার রা। ওর এত সামর্থ্যও ছিলো না যে কোনো বড় হসপিটালে নিজের স্ত্রী কে সে অ্যাডমিট করাবে।
আর এই চরম বিপদসংকুল অবস্থাতেই তার দুদিনের পরিচয়ের কলিগ, সাফওয়ান এসে হাজির হয়। আর এর পরের পুরোটাই এখনো রবার্টের কাছে স্বপ্নের মতো। সাফওয়ান সে রাতেই রবার্টের স্ত্রী কে নিয়ে শহরের সবচেয়ে নামীদামী হসপিটালে অ্যাডমিট করে, আর সেখানেই জোনাসের সাথে তার পরিচয়। জোনাস ছিলো সেই হসপিটালের কার্ডিওলোজিস্ট ডিপার্টমেন্টে, সে থেকেই গাইনী ডিপার্টমেন্টের ডাক্তার দের সাথে কথা বলে রবার্টের ওয়াইফের জন্য সব চেয়ে সেরা ট্রিটমেন্টের ব্যাবস্থা করে, আর হসপিটালের সমস্ত এক্সপেন্স বহন করে সাফওয়ান৷ সে এক্সপেন্সের একটা টাকাও পরবর্তীতে ফেরত নেয়নি সাফওয়ান।
সেদিন তার স্ত্রী সহ তিনটা বাচ্চার থেকে দুটিকে বাচাতে পারে ডাক্তার রা, আর একটি বাচ্চা পেটের ভেতরেই মারা যায়। তবুও সেদিন সাফওয়ানের করা এত বিশাল উপকারের কথা রবার্ট আজ ও পর্যন্ত ভোলেনি। সেদিনের পর থেকেই সাফওয়ান ওর জন্য এক বিশাল কিছু, এখন রবার্টের টাকা হয়েছে, গাড়ি, বাড়ি, প্রাইভেট জেট সব হয়েছে, কিন্তু সেদিন সাফওয়ানের করা উপকারের কাছে তার এ সম্পদের পাহাড় কিছুই না। তাই সাফওয়ানের জন্য যেকোনো রিস্ক নিতে সে রাজী।
এমন সময়ে হঠাৎ জোনাসের কণ্ঠ কানে এলো রবার্টের। জোনাস দূর থেকে চিৎকার করে বলছে,
— ওরা আসছে, ওরা আসছে! তুই এখনি পাইলটিং রুমে চলে গিয়ে টেকঅফের প্রস্তুতি নে, ওদের কে প্লেইনে উঠিয়ে আমি তোকে সিগন্যাল দিবো৷
জোনাসের কথা শোনা মাত্রই রবার্ট প্লেইনের সিড়ি বেয়ে উঠে সোজা পাইলটের কক্ষে চলে গেলো। আর প্লেইন টা কে আকাশে ওড়ানোর সমস্ত প্রস্তুতি নিতে লাগলো। এরপর ব্লুটুথের মাধ্যমে জোনাস কে বলল,
— ওদের কে প্যারাস্যুট ব্যাগ দিয়ে তুই নিজেও একটা পরে নিস। হারবার্ট যদি জানতে পারে আমরা ফ্লাই করে যাচ্ছি আমাজনে, তবে বুলেট মেরে উড়িয়ে দেবে, তখন যেন আমরা বেচে ফিরতে পারি।
জোনাস সম্মতি জানিয়ে রবার্টের সাথে কানেকশন ডিসকানেক্ট করে সাফওয়ান আর রুমাইশার ওর কাছে এসে পৌছানোর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলো।
সাফওয়ান রুমাইশাকে কোলে নিয়ে ছুটে আসছে ওদের দিকে, এখনি এখান থেকে সরে পড়তে হবে ওদের কে। ম্যাথিউ এর সাথে হওয়া হারবার্টের প্রতিটা কথা শুনেছে ও, ম্যাথিউ এর ব্লুটুথ ডিভাইস টা সাফওয়ানের সাথে কানেক্টেড হয়েই ছিলো অনেক আগে থেকে, ম্যাথিউ ও সেটা জানতো। তাই হারবার্ট ধরে ফেলার পর ও সেটা ও ডিসকানেক্ট করেনি, ব্লুটুথ ডিভাইস টা ওর প্যান্টের পকেটে থাকায় হারবার্ট ও কিছুই বোঝেনি।
সাফওয়ান জোনাসের কাছাকাছি এসেই রুমাইশার বন্ধন গুলো খুলে নিজের থেকে ছাড়িয়ে মাটিতে নামিয়ে দিলো। তারপর জোনাস কে বলল,
— আমাদের কে এই মুহুর্তেই বের হতে হবে, নইলে হারবার্ট আর ওর গার্ড রা আমাদের নাগাল পেয়ে যাবে। সেটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না৷
জোনাস সম্মতি জানিয়ে সাফওয়ান আর রুমাইশা কে সিড়ি বেয়ে প্লেইনে উঠে যেতে বলল, আর ওরা উঠে গেলে জোনাস নিজেও উঠে প্লেইনের সিড়িটা প্লেইনের ভেতরে নিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো।
এরপর রবার্ট কে জানিয়ে দিলো যে ওরা সবাই উঠে গেছে ভেতরে, রবার্ট যেন এবার ফ্লাইটের প্রস্তুতি নেয়। এখান থেকে আমাজন পর্যন্ত যেতে মিনিমাম দশ থেকে বারো ঘন্টা লেগে যাবে৷ রবার্ট প্লেইন টাকে রানওয়েতে যথাসম্ভব রান করিয়ে টেকঅফ করে আকাশে উড়াল দিলো।
সাফওয়ান আর রুমাইশা প্রথমেই নিজেদের ভেজা পোশাক পরিবর্তন করে শরীরে লেগে থাকা নোংরা পানি গুলো ভালোভাবে ধুয়ে মুছে অন্য পোশাক পরে নিলো। এরপর জোনাস ওদের কে প্যারাসুট ব্যাগ গুলো ধরিয়ে দিলো। সাফওয়ানের আগে স্কাই ডাইভিং করার অভিজ্ঞতা থাকলেও রুমাইশার সে অভিজ্ঞতা জিরো। আর অভিজ্ঞতা ছাড়া প্যারাসুট নিয়ে লাফ দিতে গেলে মৃত্যুর সম্ভাবনা নব্বই শতাংশ, তাই শেষমেশ সিদ্ধান্ত হলো সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে সাফওয়ান আর রুমাইশা ট্যান্ডেম স্কাইডাইভিং করবে। রুমাইশা কে সাফওয়ানের সাথেই জুড়ে দেওয়া হবে। এতে কারোরই আর কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে না।
.
রাত এখন প্রায় তিনটার কাছাকাছি। রবার্ট যত দ্রুত সম্ভব প্লেইন টাকে আমাজনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সকাল ছয়টা নাগাদ ওরা পোছে যাবে আমাজনের কাছে। তখন আর কোনো চিন্তা থাকবে না। পাইলটের কক্ষে রবার্টের পাশে বসে আছে জোনাস। জোনাসের ঘুম আসছে, মাঝে মাঝে ঢুলছে ও, থেকে থেকে তন্দ্রায় ওর মাথাটা নিচের দিকে চলে আসছে, পরক্ষনেই আবার ধড়মড় করে ঠেলে উঠছে৷ রবার্ট হাসছে ওর কান্ডকারখানা দেখে
রবার্ট জোনাস কে অনেকবার বলেছে যে তুই ভেতরে গিয়ে ঘুমা, কিন্তু জোনাস ভিত্রে যাবে না৷ ও এখানেই থাকবে৷ ওর ভাষ্যমতে, সাফওয়ান তার ঘুমন্ত বউ এর দিকে যে প্রেমপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আর ঘুমিয়ে থাকা অবস্থাতেই যে পরিমাণ কেয়ার কছে তাতে সে সেখানে থাকতে খুবই অস্বস্তি বোধ করছে, তাই কপোত-কপোতী কে ও তাদের মতো করে ছেড়ে এসেছে।
রবার্ট মুচকি হাসলো, জোনাস কে ও বলল,
— আমি কখনোই ভাবিনি, এমন রগচটা আর নিষ্ঠুর প্রকৃতির কোনো প্রফেশনাল হিটম্যান কখনো কাউকে এত গভীরভাবে ভালোবাসতে পারবে! আর সেটা যদি সাফওয়ান হয়, তাহলে তো কখনোই সম্ভব না, কিন্তু আমার সব ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো ওর বউ এর প্রতি ওর ভালোবাসা দেখে। কতখানি পথ ও ওর বউকে কোলে নিয়ে ছুটেছে তুই ভাবতে পারছিস! আমি তো আমার ছোট্ট মেয়েটাকেও এতখানি রাস্তা একনাগাড়ে কোলে নিয়ে দৌড়াতে পারবো না।
জোনাস বলল,
— আমাদের সাথে ওর তুলনা চলে নাকি! আমরা হলাম অর্ডিনারী হিউম্যান ব্যিং, হোমো স্যাপিয়েন্স। আর ও হলো হোমো স্নেইক।
দুজনেই ওরা হেসে উঠলো, জোনাস আবার বলা শুরু করলো,
— ওর বডি দেখেছিস তুই? আমার বয়স ওর থেকে তিন বছর বেশি, জিমে যাই সপ্তাহে তিন দিন, তবুও ভুড়িটা একটু একটু করে ফুলছে, আর ওকে দ্যাখ! আমাদের ল্যাবের অপজিটের বাইশ তলা বিল্ডিং এর ফিফথ ফ্লোরের সেই ন্যান্সি নামের মেয়েটা কি পাগলই না হয়েছিলো ওরে দেখে, একদিন তো শুধু আন্ডারওয়ার পরে খুজে খুজে সাফওয়ানের বেডরুম পর্যন্ত চলে গেছিলো, আর খেয়েছেও ঝটকা, মরেছেও। মেয়েটার লাশ পাওয়া গেছিলো পর দিন মেয়েটিরই অ্যাপার্টমেন্টে। সাফওয়ান যে কিভাবে সবকিছু এত সুন্দর করে ম্যানেজ করে আমার মাথায় আসে না৷
রবার্ট খুজলি করে বলল,
— এইজন্যই তো তুই ডাক্তার, আর ও হিটম্যান। তোর ও ওর মতো মাথা থাকলে তো তুইও হিটম্যান হতি৷ কিন্তু তোর যে মাথা, হিটম্যান কেন, হিটমাছি হওয়ার ও যোগ্যতা নেই তোর৷
জোনাস ক্ষেপে গিয়ে বলল,
— মানুষ মারার থেকে মাছি মারা বেশি কঠিন৷ তুই একটা মানুষের হার্ট বরাবর চাকু ঢুকিয়ে দিবি, খেলা খতম। কিন্তু একটা মাছি? একটা মাছি মারতে তোর জান প্রাণ বেরিয়ে যাবে। শালারা শুধু উড়াওড়ি করে৷
রবার্ট নির্বিকার মুখে সামনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— এই জন্যই তো বলেছি, তুই হিটমাছি। তোর হাটুর নিচে বুদ্ধি।
.
প্রাইভেট জেট টির ভেতরের অংশের লং সোফায়, মাথার নিচে কুশন বালিশ দিয়ে ঘুমিয়ে আছে রুমাইশা। আর ওর সোফার অপজিটের সোফায় বসে আছে সাফওয়ান। চোখে ঘুম নেই ওর। একদিকে হারবার্টের তার দলবল সহ নিজেদের ওপর আক্রমণের শংকা, অন্যদিকে বাবা হতে যাওয়ার খুশি, দুইটার কোনোটাই তাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না। এক দৃষ্টিতে ও তাকিয়ে আছে রুমাইশার শুকিয়ে যাওয়া মুখ খানার দিকে৷
প্লেইনে উঠে আর ও একবার বমি করেছে রুমাইশা৷ খাবার যা খেয়েছিলো সব উঠে গেছে তাতে, পেটে ওর এখন কিছুই নেই। আর প্লেইনের খাবারে স্বাদ লাগে না, যার জন্য ও মোটেই আর খেতে চাইছে না।
সাফওয়ান অনেকবার জোরাজোরি করেছে, তারপর ও ওকে খাওয়াতে পারেনি, গা গুলাচ্ছে ওর৷
সাফওয়ান ভেবে পাচ্ছে না কি খাওয়াবে ওকে। এইভাবে খালি পেটে থাকলে তো ও আর বাচ্চা দুজনেই অসুস্থ হয়ে পড়বে! কি করবে তখন সাফওয়ান! আর আমাজনে পৌছে খাবার জোগাড় করে খেতে খেতেই তো বেলা চলে যাবে৷ এতটা সময় না খেয়ে ওর রিমু কিভাবে থাকবে!
সাফওয়ান বসা থেকে উঠলো, তারপর পাইলটের কামরার দিকে এগোলো। জোনাস আর রবার্ট এখনো ওদের নিয়েই আলোচনা করছে। সাফওয়ান দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই থেমে গেলো দুজনেই।
ওরা দুজন হঠাৎ নিশ্চুপ হয়ে যাওয়ায় সাফওয়ানের সন্দেহ হলো। চোখা চোখে রবার্টের দিকে তাকিয়ে ও জিজ্ঞেস করলো,
— কি এমন কথা বলছিলি তোরা, যে আমাকে দেখে থেমে গেলি? কি চলছে তোদের মাঝে বল।
রবার্ট ফস করে বলে উঠলো,
— জোনাস বলছে সে যদি মেয়ে হতো, তবে তোর বউ কে সরিয়ে ও নিজেই তোর বউ হতো, কারণ তোর কেয়ার দেখে ও তোর প্রেমে পড়ে গেছে।
সাফওয়ান জোনাসের মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলল,
— তুই মেয়ে হলে মার্কেট পেতি মা জোনাস, ছেলে আছিস ঠিকই আছিস। মেয়ে হলে সারাজীবন ভার্জিন থাকতিস।
রবার্ট ঠোঁট টিপে হাসলো সাফওয়ানের কথায়। জোনাস মুখ কালো করে ফেললো। রবার্ট সেটা খেয়াল করে জোনাসের পিঠ চাপড়ে বলল,
— আরে ভাই, মন খারাপ করিস না, তুই মেয়ে হচ্ছিস না। ছেলেই থাকবি। সেরেনা ও তোকে খুব ভালোবাসে, তাই চিন্তা করিস না।
সাফওয়ান ওদের এইসব রসিকতায় আর যোগ না দিয়ে রবার্ট কে জিজ্ঞেস করলো,
— রবার্ট, প্লেইনের ভেতর সবচেয়ে বেশি স্বাদযুক্ত কোনো খাবার থাকলে সেটা দয়া করে রেডি করে দিবি আমার রিমুর জন্য। ওকে কিছু না খাওয়াতে পারলে ওর শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। ও একা হলেও চিন্তা ছিলো না, কিন্তু ও এখন দুজন, তাই আমার চিন্তা টাও ডাবল।
রবার্ট আর জোনাস এতক্ষন জানতো না এ ব্যাপারে। জানা মাত্রই জোনাস লাফিয়ে উঠলো, রবার্টের মুখে চওড়া হাসি ফুটলো। দরাজ হেসে ও সাফওয়ানের দিকে দু হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
— কনগ্রাটস, ব্রো! বাবা হওয়ার অনুভূতি পৃথিবীর সেরা অনুভূতি গুলোর ভেতরে অন্যতম। আমার বাচ্চা গুলো যখন আমাকে বাবা বাবা বলে ডেকে বাড়ি মাথায় তোলে তখন আমার কি যে ভালো লাগে, বলে বুঝাতে পারবো না!
তুই ও বুঝবি, বিষয়টা। বাচ্চা আগে ল্যান্ড করুক৷
জোনাস হেসে বলল,
— জীবন যুদ্ধে এক ধাপ এগিয়ে গেলে ব্রাদার। আর এদিকে আমার সেরেনা বাচ্চা নিতে চায় না, বলে এখনো সময় আছে। এরকম আনন্দ আমিও পেতে চাই। এবার গিয়েই ওকে রাজি করাবো আমি।
রবার্ট অটো পাইলট অন করে রেখে উঠলো। তারপর ওরা সবাই মিলে এলো আবার ভেতরে। রবার্ট ঢুকলো কিচেনের দিকে৷ সাফওয়ান আর জোনাস বসলো রুমাইশার থেকে কিছুটা দূরে রাখা সোফায়। নিজেদের ভেতর নিচু গলায় ফিসফিস করে কথা চালিয়ে যেতে থাকলো ওরা দুজন৷
খনিকক্ষন পর রবার্ট এলো প্লেটে করে একটা বিফ বার্গার আর স্যালাড নিয়ে। তারপর সাফওয়ানের সামনে ধরে বলল,
— বেশি করে বিফ দিয়েছি, সিজনিং দিয়েছি অল্প করে, তোরা কেমন খাস তা তো আমি বেশি জানিনা, তবুও চেষ্টা করেছি, চিজ বেশি করে দিয়েছি, এটা চলে কিনা দ্যাখ। আর স্যালাড টা আমার ওয়াইফের স্পেশাল রেসিপি, খুবই মজার, তোর ওয়াইফের কাছে কেমন লাগবে জানিনা, তবে আমার খুবই পছন্দের।
সাফওয়ান রবার্টের হাত থেকে প্লেট দুইটা নিয়ে রুমাইশার সামনের সোফায় গিয়ে বসলো, তারপর সেগুলো পাশে রেখে দিয়ে রুমাইশার চোয়ালের ওপর নিজের হাত দিয়ে ছোট ছোট করে চাপড় দিতে দিতে বলল,
— রিমু, রিমু রে, উঠ তো! খেতে হবে, উঠ।
রুমাইশা চোখ মেললো ধীরে ধীরে৷ তারপর সোফার ওপর কিছুক্ষণ আড়ামোড়া করে চোখ দুইটা রগড়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো ও৷ তারপর সাফওয়ানের কথা মতো বেসিনে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এসে আবার সোফায় বসলো। সাফওয়ান ওর হাতে আগে স্যালাডের প্লেট টা তুলে দিলো। রুমাইশা প্লেট টা হাতে নিয়ে খানিক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল,
— আমাকে কি আপনার ছাগল মনে হয়, এসব পাতা পুতি দিয়ে ভর্তি করে রেখেছে কেন?
বাংলায় বলার কারণে জোনাস রবার্ট কেউই কিছু বুঝলো না। তবুও সাফওয়ান অপ্রস্তুত হয়ে একবার তাকালো ওদের দিকে। তারপর আবার রুমাইশার দিকে গিরে বলল,
— এটা যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর খাবার। খেলে শক্তি পাবি, চুপ চাপ খা। বেশি বকিস না।
রুমাইশা সাফওয়ানের দিকে স্যালাডের প্লেট টা এগিয়ে দিয়ে বলল,
— আপনি খান, আমাকে বার্গারের প্লেট দিন।
সাফওয়ান স্যালাডের প্লেট টা ঠেলে আবার রুমাইশার দিকে এগিয়ে দিয়ে ধমকের সুরে বলল,
— প্রেগন্যান্ট কে? আমি? না তুই? আমি স্যালাড খেলে তোর কি লাভ হবে? চুপ চাপ খা বলছি!
রুমাইশার রাগ লাগলো খুব। ওর সাথে ধমক দিয়ে কথা বলে! প্লেট টা নিয়ে সাফওয়ানের দিক থেকে ফিরে উলটো দিকে বসলো ও। তারপর চামচে করে স্যালাড খেতে লাগলো এক এক বারে এক গাদা করে। বার্গার টা ও খাবেই না, শুধু স্যালাডই খাবে।
পাঁচ মিনিটে সে বাটি ক্লিয়ার করে রুমাইশা উঠে যেতে নিলো বেসিনের দিকে৷ কিন্তু সাফওয়ান থামিয়ে দিয়ে বলল,
— কই যাস? বার্গার টা কে খাবে? তোর নানা?
রুমাইশা কোনো উত্তর দিলো না, তাকালোও না৷ সোজা হেটে চলে গেলো বেসিনের দিকে৷ তারপর প্লেট টা ধুয়ে প্লেট হোল্ডারে রেখে আবার চলে এলো ও নিজের জায়গায়। তারপর পানির বোতল থেকে ঢকঢক করে পানি খেলো। সাফওয়ান কিছুই না বলে দেখেছে শুধু রুমাইশা কি কি করে।
রুমাইশা এবার সাফওয়ানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে কুশন বালিশ টা কোলের ওপর নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো।
সাফওয়ান বার্গারের প্লেট টা নিয়ে রুমাইশা যে সোফায় আছে সেই সোফায় গিয়ে বসলো। তারপর ওর দিকে প্লেট টা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
— নকশা না মেরে খেয়ে নে, আমরা এমনিতেই ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশনে আছি, এখন এরকম রাগ অভিমান দেখার মতো কোন অবস্থা আমার নেই। চুপচাপ খা।
রুমাইশা যেভাবে ছিলো সেভাবেই বসে থাকলো। সাফওয়ানের দিকে ফিরলো না, প্লেটও নিলো না। ওর এমন হঠাৎ অভিমানে সাফওয়ান কেমন যেন দিশেহারা বোধ করলো। রুমাইশার দিকে আর একটু এগিয়ে এসে ও বলল,
— বিফ দিয়েছে এতে রবার্ট বেশি বেশি করে, চিজ ও দিয়েছে বেশ খানিক টা। এটা শুধু শুধু নষ্ট করিস না। আমি কিন্তু আর একবার ও বলবো না খেতে!
রুমাইশা তখন ও জানালার দিকেই তাকানো, অভিমানে ওর দুচোখ থেকে দুফোটা পানি পড়লো গড়িয়ে। একটু ভালো করে বললে কি হতো! এইভাবেই বলতে হলো! সারাজীবন এরকমই করবে। সবসময় ধমকের ওপর রাখবে ওকে৷
রুমাইশা চোখ মুছলো না। সাফওয়ানের দিকে না তাকিয়েই ওর হাত থেকে প্লেট টা নিলো। তারপর জানালার দিকে ফিরে বসে খেতে শুরু করলো ও। সাফওয়ানের সাথে কোনো কথাই বলল না৷
সাফওয়ান ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো একটা। তারপর পানির বোতলের মুখ টা খুলে হাতে ধরে রাখলো, রুমাইশা যেন পানি খাওয়ার প্রয়োজন বোধ করলে বেশি বেগ পেতে না হয় তার জন্য।
এসব রাগ অভিমান কিভাবে ভাঙাতে হয় তা ওর জানা নেই! রুমাইশা ওর ওপর খুব কমই অভিমান করে, কিন্তু রুমাইশা অভিমান করলেই সাফওয়ানের অস্বস্তি হয় অনেক, ও কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। মুখে শুধু ধমক চলে আসে৷ ও জানে, যে এতে রুমাইশার অভিমান বাড়বে বৈ কমবে না। কিন্তু ওর কিছুই করার থাকে না।
বার্গার টা বড় বড় কামড় দিয়ে শেষ করলো রুমাইশা। সাফওয়ান ওর হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে পানির বোতল টা এগিয়ে দিলো। রুমাইশা পানি খেয়ে বোতলের মুখ টা আটকে সেটা রেখে দিলো পাশে। তারপর সোফার ওপরে বসে দুই হাত দিয়ে নিজের হাটুদ্বয় জড়িয়ে ধরে মাথাটা হাটুর ওপর বিশ্রামে রেখে সোফায় হেলান দিলো।
সাফওয়ান মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকলো ওকে। কিছুক্ষণ ওকে পরখ করে নিয়ে মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— খারাপ লাগছে?
উত্তরের আশায় কিছুক্ষণ রুমাইশার দিকে অসহায় হয়ে তাকিয়ে রইলো ও। কিন্তু রুমাইশার দিক থেকে কোনো উত্তরই এলো না। ও সেরকম করেই বসে রইলো।
সাফওয়ান ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো একটা। তারপর কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকা রুমাইশাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসার চেষ্টা করলো ও। কিন্তু রুমাইশা শক্ত হয়ে বসে রইলো, কিছুতেই সাফওয়ানের কাছে যাবে না ও।
কিছুক্ষণ টানাটানি করার পরও যখন সাফওয়ান ওকে নড়াতে পারলো না তখন উপায় না পেয়ে সাফওয়ান রুমাইশার বাহুর নিচ দিয়ে নিজের মাথা টা গলিয়ে দিলো রুমাইশার কোলের ভেতর। আর তখনি রুমাইশার চোখ থেকে এক ফোটা পানি এসে পড়লো সাফওয়ানের চোয়ালের ওপর৷
রুমাইশার নাকের সাথে নাক লাগিয়ে সাফওয়ান নরম গলায় বলল,
— সর্যি, আর ধমকাবোনা কখনো, কসম! এবারের মতো মাফ করে দে! আর কাদিস না!
রুমাইশা হাটুর ওপর থেকে মুখ খানা উঠিয়ে নিয়ে সোফার থেকে পা নামিয়ে মেঝেতে ঠেকালো তারপর নাক টেনে চোখ মুছলো। সাফওয়ান ওর কোলে আগের মতো করেই মাথা রেখে পড়ে রইলো। ওর রিমুর ছলছলে চোখ দুইটা দেখে ওর বুক ফাটছে, কিন্তু কিভাবে ওই মুখে হাসি ফুটাবে মাথায় আসলো না ওর। কিছুক্ষণ ওভাবেই থেকে এরপর কাত হয়ে রুমাইশার কোমর টা দুইহাতে জড়িয়ে নিয়ে ওর তল পেটে মুখ ডুবিয়ে রইলো সাফওয়ান।
কিন্তু এই নিরবতা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। খানিক্ষণ পর হঠাৎই বিকট শব্দ হয়ে দুলে উঠলো ওদের প্রাইভেট জেট টা৷