অফিডিয়ান | পর্ব – ৫৯

পুরো ভার্সিটি টা জুড়েই যেন সাজসাজ রব৷ সবাই এদিক ওদিক তাড়াহুড়ো করে ছুটছে। স্টুডেন্ট সহ অন্যান্য টিচার আর স্টাফরা নিজেদের ভেতর ল্যাবরেটরির বিষয় টা নিয়ে নিচু গলায় আলোচনা করছে৷ বিশালদেহী গার্ড গুলো কঠিন চোখে আশপাশ টা পর্যবেক্ষণ করছে আর অস্ত্র হাতে পাহারা দিচ্ছে৷ যেন একটা মাছিও ল্যাবে অনুপ্রবেশ করতে না পারে৷

রুমাইশা মাথা উঁচু করে বীরদর্পে হেটে চলেছে সামনের দিকে৷ কালো রঙা গগলসের ভেতর দিয়ে নিজের আশপাশ টা তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করছে ও৷ কানে থাকা ব্লুটুথ ডিভাইস টার মাধ্যমে সে সাফওয়ানের সাথে কানেক্ট হয়ে অতি উৎসাহী গলায় বলল,
— মাই ডিয়ার হিউবি, আর ইয়্যু রেডি?

সাফওয়ান সেই গোপন কামরাতে রুমাইশার দেওয়া কালো রঙা; শক্ত কিন্তু স্ট্রেচি পোশাক টা পরে তৈরি হয়ে আছে৷ পোশাক টা ওর গলা পর্যন্ত ঢেকে আছে। ওর নিজের পায়েও এক জোড়া হাইকিং শু, রুমাইশা দুজনের জন্যই সেইম রঙের, সেইম ডিজাইনের শু কিনেছে৷ মুখ টা রুমাইশার কথাতেই ঢাকেনি ও, কারণ এখন আর লুকানোর কিছুই নেই৷ ওর শরীরের ইস্পাত-দৃঢ় পেশী গুলো পোশাক টার ওপর দিয়েই স্পষ্ট ভাবে দৃশ্যমান হয়ে আছে। অসম্ভব রকম সুন্দর লাগছে ওকে।
গতকাল রাতে রুমাইশার সঙ্গ পাওয়ার পর ওর শরীরের সমস্ত এনার্জি গুলো যেন তিনগুন বেড়ে ফিরে এসেছে। বিশালদেহী সাফওয়ানকে এখন প্রচন্ড হিংস্র আর দানবাকার দেখাচ্ছে৷ এখন এই মুহুর্তে রুমের ভেতর কেউ না এলেই হলো। যদিও রুমের বাইরেই দুজন গার্ড অস্ত্র হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু তাদের ভেতরে প্রবেশ নিষেধ।
কানে লাগানো ব্লুটুথ ডিভাইস টার ভেতর দিয়ে রুমাইশার কন্ঠ শোনা মাত্রই মিষ্টি হাসলো সাফওয়ান। মনে মনে দুই বার উচ্চারণ করলো, হিউবি, হিউবি! তারপর প্রতিউত্তরে সে নিজেও বলল,
— ইয়েস, আই অ্যাম, ওয়াইফ্যি!

রুমাইশা মুচকি হাসলো, তারপর হাটতে হাটতেই বলল,
— গোপন রাস্তা টার কোনো চিহ্ন ম্যাপে দেওয়া নেই, সুতরাং আপনাকে রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যেতে আমারই উপস্থিত হওয়া লাগবে। কিন্তু জোনাস আর রবার্ট ল্যাব এরিয়ার সিকিউরিটি ক্যাম হ্যাক করে যা দেখেছে তাতে আপনাকে একটু বেশিই কষ্ট করা লাগবে৷ কিন্তু চিন্তা করবেন না, আপনার ওপর ভার টা বেশি মনে হলেই আমি আপনাকে সঙ্গ দিতে চলে আসবো। আর ওদের কে একটা উচিত শিক্ষা দিয়ে সোজা গ্রাউন্ড ফ্লোরের তিন নম্বর পার্টের পেছনের দিকে চলে আসবেন। আপনার সাহায্য প্রয়োজন না হলে আমি ওখানেই থাকবো। আর ওইখান থেকেই ম্যান হোলের ভেতর দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে বস্টনের শেষ সীমানায় পৌছে যাবো। ম্যান হোল যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে ম্যান হোলের পানি সোজা নর্থ অ্যান্টার্কটিকায় পতিত হয়। ওইখানেই রবার্ট আর জোনাস আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে৷ একবার প্লেনে উঠে পড়তে পারলে আর কোনো বাধাই আমাদের কে দমিয়ে রাখতে পারবে না।

সাফওয়ান চেয়ারে বসে ছিলো এতক্ষন, চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল,
— যথা আজ্ঞা মহারানী। ন্যাউ আ’ম লিভিং মা’ রুম, সি ইয়্যু ইন অ্যা বিট, টিল দেইন স্টেই সেইফ।

আর এরপর ই রুমাইশার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে সাফওয়ান বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে খট করে দরজা খুলে দৃঢ় পায়ে ওর রুম থেকে বের হলো।

রুমাইশা ও এগোলো ল্যাবের দিকে। আত্মবিশ্বাসের সাথে হেটে চলেছে ও, আশেপাশের স্টুডেন্ট গুলোর কেউ কেউ ওকে আড়চোখে দেখছে৷ স্কিন টাইট পোশাক ছাপিয়ে রুমাইশার সৌন্দর্য সবার নজর কাড়ছে৷
তাদের সবার দৃষ্টি উপেক্ষা করে রুমাইশা হেটে হেটে একেবারে ল্যাব বিল্ডিং এর সামনে গিয়ে দাড়ালো। ওর সামনে দাঁড়ানো দুজন জাদরেল মুখের গার্ড ওর দিকে হাত বাড়িয়ে ইশারায় পাস চাইলো। রুমাইশা ওর বব হেয়ার কাটিং দেওয়া চুল গুলো সামান্য ঝাকিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো, তারপর বলল,
— আই ডোন’ নিড প্যাস! আ’ম অ্যালাউড ইন এন্যি টাইম!

আর ঠিক সেই মুহুর্তেই ফোর্থ ফ্লোর থেকে কতকগুলো মানুষের সমস্বরে চিৎকার ভেসে এলো। গার্ড গুলো সব সচকিত হয়ে উঠলো। ওপরে কি হচ্ছে জানার জন্য ওরা ব্লুটুথ ডিভাইসের মাধ্যমে খবর নেওয়ার চেষ্টা করলো, কিন্তু প্রোপার কোনো খবর পাওয়ার আগেই থার্ড ফ্লোর থেকে কেউ একজন আতঙ্কিত গলায় চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
— দ্যা ব্যিস্ট ইজ আউট! রান ফ’ ইয়্যোর লাইফ!

রুমাইশার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ড টা উত্তেজিত হয়ে, আতঙ্কগ্রস্ত চেহারা নিয়ে তার হাতে থাকা এসিআর গান টা লোড করতে শুরু করলো। আর তখন তার হঠাৎই চোখ গেলো রুমাইশার দিকে। আগের মতো করেই মিষ্টি হাসছে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি।

৭২. মাইকেল বসে আছে তার রুমে। গতকাল রাতে অ্যাশলির লাশ পাওয়ার পর থেকে সে মোটেও ঠিক নেই। তার দৃঢ় বিশ্বাস গতকাল রাতে তার পেটের ওপর অ্যাশলির আত্মাই ভর করেছিলো, যা সে ইতোমধ্যে তার গ্রুপের সবাইকে একবার করে জানিয়ে দিয়েছে। ইভেন অ্যাশলি যে তাকে বাচানোর জন্য কাকুতি মিনতি করেছে সেটাও সবাইকে বলেছে সে। কিন্তু সবাই ভাবছে অ্যাশলির অকাল মৃত্যুর শকে নাকি তার মাথায় গন্ডগোল হয়েছে। অ্যাশলি যে এইভাবে হঠাৎ দুর্ঘটনায় মাতা যাবে তা সে কখনো ভাবেইনি।

অ্যাশলির লাশ পাওয়ার পর থেকে মেয়েটার মৃত্যুর কারণ আর সৎমার নিয়েই ব্যাস্ত ছিলেন তারা। সাফওয়ান্নকে একবার গিয়ে যে তারা চেইক দিয়ে আসবেন সেটা কারো মাথাতেই আসেনি৷ ক্যামেরা টা কে ভেঙেছে সেটাও একটা চিন্তার বিষয়। গতকাল রাতে যে লোক গুলো ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করতে এসেছিলো তাদের সামনে থাকা লোক টা বার বার উসখুস করছে সবাইকে কিছু একটা বলার জন্য, কিন্তু তাকে কেউই পাত্তা দিচ্ছে না৷ মাইকেলের সাথেও সে একবার কথা বলতে এসেছে, কিন্তু মন ভালো না থাকায় মাইকেল তাকে তার ধারে কাছে ঘেষতে দেয়নি।

মাইকেল তার রুমে বসে এসবই চিন্তা করছিলো তখনি তার কানে এলো চিৎকার চেচামেচির শব্দ। শব্দ টা সাফওয়ান কে যেদিকে রাখা সেদিক থেকেই আসছে৷ দ্রুত বের হয়ে তিনি ছুটলেন সেদিকে। কিছুদূর যাওয়ার পর পথিমধ্যে তার দেখা হলো একজন গার্ডের সঙ্গে, ব্লুটুথ ডিভাইসের মাধ্যমে সে কাউকে উত্তেজিত কণ্ঠে বলছে আর ও লোক পাঠাতে৷
মাইকেল তাকে রাস্তার ওপরেই থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
— কি হয়েছে? তুমি দৌড়াচ্ছো কেন? ওদিকে কিসের চিৎকার শোনা যাচ্ছে৷

লোক টা কোনোরকমে হড়বড় করে যা বলল তাতে এই বুঝা গেলো যে, সাফওয়ান আহমেদ নামের সেই ক্ষীনকায় পুরুষটি তার রুমে থেকে বের হয়ে পালানোর সময় সামনে যতগুলো গার্ড পেয়েছে সবাইকে কতল করে দিয়েছে, আর সে ক্ষীনকায় পুরুষ আর ক্ষীনকায় নেই, রাতারাতি দানবে পরিণত হয়েছে।

মাইকেল হা হয়ে গেলো গার্ড টার কথা শুনে। গার্ড টা এই কথা গুলো বলেই আবার সামনের দিকে ছুটে চলে গেলো। মাইকেল সামনে যাবে কি যাবে না, সেই দোটানায় পড়ে কিছুক্ষণ দোনোমোনা করলো। তারপর সাহস সঞ্চয় করে দ্রুত পায়ে এগোলো সামনের দিকে, যেদিকে সাফওয়ান কে লুকিয়ে রেখেছিলো তারা।

ছয় নম্বর ব্লক টা পার হওয়ার পরই তার কানে এলো গানশট এর আওয়াজ। ভড়কালো মাইকেল। সাফওয়ানের শরীরে যদি গুলি লাগে, আর তার যদি কিছু হয়ে যায় তবে হারবার্ট তাদের সবাইকে শেষ করে ফেলবে। দ্রুত হাটা বাদ দিয়ে এবার তিনি ছুট লাগালেন। ওনার কাছে কোনো ব্লুটুথ ডিভাইস নেই যে উনি কাউকে বলে দিবেন সাফওয়ান কে যেন কেউ ভুলেও শ্যুট না করে৷

যত সামনে এগোচ্ছে ততই চিৎকার চেচামেচি কানে আসছে মাইকেলের। আট নম্বর ব্লকে আসার পর থেকে আর কোনো শোরগোল কানে আসলো না মাইকেলের। হঠাৎ করেই যেন নিশ্চুপ হয়ে গেছে সব। আর একটু এগোতেই ধস্তাধস্তির আওয়াজ কানে এলো তার। মাইকেল এবার ছোটা থামিয়ে হাটা ধরলো। আর কয়েক পা হাটার পরই কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি টাকে পেয়ে গেলো সে৷
চার পাশে লাশের পাহাড় বানিয়ে মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে সাফওয়ান৷ ওর ডান হাতে একজন কে গলা ধরে উচু করে ধরে রেখেছে। সে ছেলেটি নিজেকে বাচাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনোমতেই সুবিধা করতে পারছে না। নিজের পা দিয়ে সাফওয়ান কে আঘাত করতে যাচ্ছে সে, কিন্তু সে পা দুটোর এক টাও সাফওয়ানের শরীর পর্যন্ত পৌছাচ্ছে না৷

সাফওয়ান কারো উপস্থিতি টের পেয়েই ছেলেটার গলা ধরা অবস্থাতেই ফিরে তাকালো ওর বা দিকে। চোয়ালের ওপর খানিক টা কেটে গেছে ওর, রক্ত চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে সেখান থেকে। মাইকেল হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে ওকে৷ মাইকেলের মাথায় আসলো না, কাল দুপুরেও যাকে হাড়লিকলিকে দেখেছিলো সে কিভাবে এত পরিবর্তন হয়ে গেলো! এটা কিভাবে সম্ভব! তবে কি সাফওয়ানের মেডিসিন ওর কাছেই ছিলো? শুধু মাত্র সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছিলো সেটা প্রয়োগ করার জন্য? কিন্তু এখন কি করার?
সাফওয়ান কে তাদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় হারবার্ট নিজে এসেছিলো। আর বলে গেছিলো সাফওয়ান কে যেন তারা মোটেই লাইটলি না নেয়। কারণ সে একজন ইন্টারন্যাশনাল হিটম্যান, তার বুদ্ধি, শক্তি, ট্রিক্স কোনো কিছুর সাথেই পেরে ওঠা তাদের মতো নগন্য ব্যাক্তি দের পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
কিন্তু সাফওয়ানের অমন কঙ্কালসার চেহারা দেখে মাইকেল মনে মনে হারবার্টের ও সমস্ত কথা এক প্রকার হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু তার বোঝা উচিত ছিলো, যেখানে হারবার্টের মতো একজন বিশাল মাপের মাফিয়া সাফওয়ানের ব্যাপারে তাকে সাবধান হতে বলেছে, তখন সাবধান হওয়াটাই তাদের জন্য বেস্ট ছিলো। সাফওয়ান কে আর ও কড়া গার্ডে রাখা তাদের প্রথম থেকেই উচিত ছিলো। কিন্তু দয়া দেখিয়ে তো ওরা সাফওয়ানের হাত পায়ের বন্ধনি গুলো সব খুলে দিয়েছিলো! ভুল টা প্রথম থেকেই তাদেরি।

মাইকেল কে দেখে সাফওয়ান তার কালো রঙা ঠোঁটের ভেতরে থাকা ক্যানাইন দাঁতদ্বয় বের করে নিঃশব্দে এক হিংস্র হাসি দিলো। তারপর হাতে ধরা ছেলেটাকে হাত দিয়ে উচু করে ধরে রেখেই মাইকেলের দিকে এগোলো ও৷
সাফওয়ান কে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে মাইকেল পেছাতে লাগলো। গতকাল দুপুরেও সাফওয়ানের ঠোঁট এতটা কালো ছিলো না, ওর চোখ এতটা আগুন ঝলসানো ছিলো না, ওর দাঁত গুলো এমন ঝলক দিচ্ছিলো না৷ তাহলে আজ কি এমন হলো! সব কিভাবে বদলে গেলো এত দ্রুত!

মাইকেল এসব ভাবতে ভাবতেই পেছাতে লাগলো। আর ঠিক সেই মুহুর্তেই সাফওয়ান ওর কালো রঙা দ্বিখণ্ডিত জিহবা টা বের করে নিজের চোয়ালের ওপর হওয়া ক্ষতটা লেহল করলো।
আঁতকে উঠলো মাইকেল। সাফওয়ান যে তার ওই লকলকে জিহবা টা এতখানি বের করতে পারে তা তার ধারনাতেও ছিলো না৷ গত দুমাস ধরে সাফওয়ান কে সে রোজ দেখছে কিন্তু এমন হিংস্রতায় পরিপূর্ণ সাফওয়ান কে সে আজ প্রথম দেখেছে।

পেছাতে পেছাতে একসময় দেয়ালে গিয়ে পিঠ ঠেকে গেলো মাইকেলের। বিশালদেহী সাফওয়ান তার ঠিক সামনে এসে দাড়লো। ওর হাত দিয়ে ধরে রাখা ছেলেটা দম বেরিয়া যাওয়ার যন্ত্রনায় ছটফট করছে। সাফওয়ান কিছুটা ঝুকে মাইকেলের কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে, কিছুটা ফিসফিস কন্ঠেই বলে উঠলো,
— আমার স্বার্থে এমন দারুণ প্লেজারের আয়োজন করার জন্য আপনাকে অনেক, অনেক ধন্যবাদ।

কথা টা বলেই নিজের হাসি হাসি মুখ টা মাইকেলের কানের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে, সোজা হয়ে নিজেও মাইকেলের থেকে কিছুটা দুরত্ব নিয়ে দাড়ালো। আর এরপর নিজের হাসি হাসি মুখ টা হঠাৎ করেই বজ্রকঠিন করে হাতে ধরে রাখা ছেলেটার মাথা টা ধরে পাশের দেয়ালের সাথে ক্ষিপ্র গতিতে আছড়ে মারলো সাফওয়ান। ছেলেটার মাথার খুলি থেকে কিছু অংশ ছিটকে গেলো এক পাশে। আর সেটা দেখে মাইকেল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো সাফওয়ানের দিকে।
হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে গেছে তার। বিপি হাই হয়ে যাচ্ছে। বুকের বা পাশ টা হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখে অসহায় চোখে তাকালো মাইকেল সাফওয়ানের দিকে। দাঁড়ানো থেকে আস্তে আস্তে বসে পড়লো সে মেঝেতে৷

সাফওয়ান নির্বিকার চোখে দেখতে লাগলো মাইকেলের এমন বেদনাপূর্ণ চেহারা। সেই মুহুর্তেই ধুপধাপ করে ছুটতে ছুটতে এদিকে এসে পৌছালো প্রায় পঞ্চাশ জনের মতো গার্ড। ওদের সবার হাতেই স্টেন গান। কারণ সাফওয়ান কে ডিরেক্ট বুলেট শট দেওয়ার জন্য পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, যেভাবেই হোক সাফওয়ান কে জীবিত রাখতে হবে। নইলে হারবার্টের বিশালরকম ক্ষতি হয়ে যাবে৷

সাফওয়ান মাইকেলের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে ওদের দিকে তাকালো। আর তারপর নিজের স্ট্রেচি প্যান্ট টার পকেট থেকে ওর টু সাইডেড সৌর্ড টা বের করে স্বাগতম জানানোর ভঙ্গিতে সুন্দর করে হেসে গার্ড গুলোর দিকে এগোলো৷ পেছন থেকে বুকে হাত দিয়ে বসে থাকা মাইকেল তাকিয়ে রইলো সাফওয়ানের যাওয়ার পানে৷

৭৩. রুমাইশা দ্রুত পায়ে হেটে চলেছে গ্রাউন্ড ফ্লোরের তিন নম্বর ব্লকের পেছন দিকের উদ্দ্যেশ্যে। গতকাল এখানে ঢোকার সময়ে অনেক কষ্টে ম্যানহোলের ডাকনা টার স্ক্রু গুলো খুলেছিলো ও৷ সেগুলো খুলে রেখেই শুধু ঢাকনা টা কোনোরকমে জায়গা মতো রেখে ও চলে গেছিলো। আজ ও ওরা সেই জায়গা দিয়েই বেরিয়ে যাবে। আর যাওয়ার সময় খুব দ্রুত গতিতে আবার স্ক্রু গুলো লাগাতে হবে, নইলে প্রতিপক্ষ বুঝে যাবে যে ওরা এদিক দিয়েই পালিয়ে গেছে। কাজ টা সাফওয়ানই করতে পারবে।

রুমাইশা নিজের ব্লুটুথ ডিভাইস টার মাধ্যমে একবার জোনাসের সাথে কানেক্ট হলো। ওদিকে সব ঠিক ঠাক আছে কিনা, কোনো সমস্যায় পড়তে হয়েছে কিনা তাদের, সেসব খোজ খিবর নিলো। আর তারপর ওদের কে বলল, কোনো সমস্যায় না পড়লে ও আর সাফওয়ান ঘন্টা খানেকের ভেতরেই এইখান থেকে বের হয়ে যাবে৷ আর এইখান থেকে বের হয়ে নিজেদের সবচেয়ে দ্রুত গতিতে ছুটলে আর এক ঘন্টার মতো লাগবে ওদের কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌছাতে।
জোনাস খবর গুলো পেয়ে রুমাইশা কে নিশ্চিত করলো যে তারা জায়গা মতোই অবস্থান নিয়েছে, শুধু সাফওয়ান কে নিয়ে বের হওয়া মাত্রই যেন তাদের কে জানানো হয় প্রাথমিক প্রস্তুতির জন্য৷ রুমাইশা সম্মতি জানিয়ে ওদের সাথের কানকশন ডিস্কানেক্ট করে ফেললো, আর তারপর আবার এগোলো নিজের গন্তব্যের দিকে৷

.

নিজের টু সাইডেড সৌর্ড টা দিয়ে সমানে কুপিয়ে যাচ্ছে সাফওয়ান। কাকে কোথায় আঘাত করছে দেখছে না। বিপুল তৃপ্তি নিয়ে এ কাজ করছে সে। এরকম সুযোগ লাস্ট কবে পেয়েছে তা ওর মনে পড়ে না। এতদিন পরে এইভাবে এতগুলো কে খতম করে দিতে পেরে ওর শরীরে আনন্দের শিহরণ বয়ে যাচ্ছে৷

কিন্তু এভাবে চললে তো হবে না। এত গার্ড আসতে থাকলে ওর সময় লাগবে অনেক। হারবার্ট এর কানে এতক্ষণে খবর পৌছে গেছে। এর ভেতরে যদি হারবার্ট আর ও লোকজন নিয়ে চলে আসে তবে আজকে আর ও বের হতে পারবে না। এদের কে ভোগে পাঠাতে পাঠাতেই ওর সব সময় চলে যাবে৷
ডান হাতে সৌর্ড টা সমানে চালানো অব্যাহত রেখে বাম হ্বত দ্বারা নিজের ব্লুটুথ ডিভাইস টা রুমাইশার সাথে কানেক্ট করলো সাফওয়ান। তারপর রুমাইশা কে পেয়েই ও বলে উঠলো,
— নিড হেল্প ওয়াইফ্যি, ক্লিয়ার দ্যা ফার্স্ট ফ্লোর। দ্যান কাম ট্যু ম্যি, আ’ম অন দ্যা ফোর্থ।

সাফওয়ানের আদেশ পাওয়া মাত্রই ঝড়ের বেগে গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে ফার্স্ট ফ্লোরের দিকে ছুটে চলল রুমাইশা৷

( আমার শরীর টা বেশি ভালো নেই, তাই তেমন বড় পর্ব লিখতে পারিনাই 😪)

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।