অফিডিয়ান | পর্ব – ৩৬

৩৮. সকাল দশ টা, রুমাইশা ঘুমিয়ে আছে এখনো। রুনিয়া ভোরেই উঠে চলে গেছেন রান্না ঘরে। সবাইকে খাইয়ে দিয়ে রুমাইশার জন্য খাবার রেখে গেছেন রুমে। কিন্তু গভীর ঘুমে তলিয়ে থাকা রুমাইশা রুনিয়ার এতবার আসা যাওয়া একটিবারের জন্য ও টের পায়নি। রুনিয়া ও ওকে আর ডাকেন নি, ঘুমাতে দিয়েছেন।

শাফিন ও একটু আগে ঘুম থেকে উঠেছে৷ উঠতো না, যদি সাফওয়ান ওকে সকাল সকাল তলব না করতো তাহলে।
সাফওয়ান কল দিয়েছিলো খানিক আগে৷
কল দিয়ে বলেছে খেয়ে দেয়ে রেডি হতে। রুমির সাথে বিয়ে টা আনুষ্ঠানিক ভাবে না হলেও বাসর টা আনুষ্ঠানিক না হলে সাফওয়ানের চলবে না। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে একবার ই হয়। বিয়ে যদিও করা যায় পরবর্তীতে আবার, কিন্তু প্রথম বারের মতো এমন অনুভূতি থাকে না৷ নিজেদের প্রথম রাত টাকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় ও৷

সাড়ে দশটার দিকে ঘুম ভাঙলো রুমাইশার৷ চোখ মুখ ডলে উঠে বসলো ও৷ আড়মোড়া ভেঙে রুমের চারপাশে চোখ বুলালো ও। বিয়ের পর যেন সবকিছু কে কেমন অন্যরকম লাগছে।

এই ঘর টাতে তো এ আগেও থেকেছে, কিন্তু তখনকার অনুভূতি আর এখনকার অনুভূতি সম্পুর্ণ আলাদা! তখন ঘর টাকে নিজের নিজের মনে হতো না, কিন্তু এখন সব কিছুকে নিজের মনে হচ্ছে৷ এই বিছানাটাকে হঠাৎ মনে হচ্ছে খুব আপন, অথচ কিছুদিন আগে ও এমন মনে হতো না। একটা বিয়ে কি এইভাবেই এত অল্পসময়ে মানুষের মন মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব ফেলে!

এই কামরা টা আগে সাফওয়ানের ছিলো। ছোটবেলায় যখন আসতো এবাড়িতে তখন সাফওয়ান এই রুমে থাকতো। বিছানা, চেয়ার, টেবিল সব কিছুই এইভাবেই বিন্যাস করা ছিলো। রুনিয়া চেঞ্জ করেনি আর পরে। রুমাইশা ও কোনো টা কোনোদিকে সরায়নি। যেটা যেভাবে ছিলো সেটা সেভাবেই আছে।
ওই বড় জাদরেল আলমারি টা সেই প্রথম থেকেই এই ঘরে আছে। কত লুকোচুরি খেলেছে ওরা এই ঘরে৷ সন্ধ্যা বেলায় যখন আলো খুব কম থাকতো, আবছা আলোয় কাউকে তেমন দেখা যেতো না, তখন ওরা সমস্ত বাড়ি জুড়ে লুকোচুরি খেলতো। রুমাইশা বেশির ভাগ সময় ই লুকাতো এই আলমারির নিচের তাকে।
সাফওয়ান জানতো যে রুমাইশা ওখানেই লুকিয়েছে, তারপর ও ভান ধরতো খোজার। আর রুমাইশা হাসতো চুপে চুপে যে সাফওয়ান ওকে খুজে পাচ্ছে না, রোজ একই জায়গায় লুকানো সত্বেও। সেসব মনে পড়লে এখনো হাসি পায় ওর।

ধীরে সুস্থে বিছানা থেকে নামলো রুমাইশা। পড়ার টেবিলের ওপর খাবার রাখা, রুনিয়া ফুপ্পি রেখে গেছে নিশ্চয়৷ কিন্তু এখন ও খাবে না। একবারে দুপুরে খাবে। তাই ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে জামা কাপড় নিয়ে ঢুকলো ওয়াশরুমে। একবারে গোসল দিয়ে বেরোবে৷ এক সেট জামা কাপড় কিভাবে যেন থেকে গেছিলো। রুনিয়া সেটা তুলে রেখেছিলো। নইলে আজ ওর গোসল দিয়ে কি পরতে হতো আল্লাহ জানেন।

ওয়াশরুমের দরজা টা বন্ধ করে ব্রাশ করলো। এরপর ওজু করে নিয়ে মাথার ওপরের ঝর্ণা ছেড়ে দিলো। গোসল টা কাল রাতের ধকলের পর করলে ভাল্লাগতো, কিন্তু তা করা হয়নি। অসময়ে গোসল দিলে সাথে সাথেই ঠান্ডা লাগে ওর৷ এখন গায়ে পানি পড়ার পর ভাল্লাগছে অনেক৷ শান্তি শান্তি ফিল হচ্ছে খুব৷ অনেক সময় নিয়ে গোসল করলো ও, নিতম্ব ছাড়ানো চুল গুলোতে শ্যাম্পু করলো।
গোসল শেষে গা থেকে পানি ঝরিয়ে টাওয়েল দিয়ে গা হাত পা মুছে চুলে পেচালো।

তার পর ওয়াশরুমের হ্যাঙ্গারে রাখা সালওয়ার নিয়ে পরলো৷ এরপর কামিজ পরতে গিয়েই বাধলো বিপত্তি৷ কামিজ মনে করে ওড়না নিয়ে চলে এসেছে। সেটা হয়তো বিছানাতেই পড়ে আছে৷ অন্তর্বাস ও নেই এখানে একটাও, যে সেটা পরবে!

কামিজ টা আনতে ওড়না টা ডান কাধের ওপর দিয়ে বুকের ওপর দিয়ে দিলো আলতো করে। মাথা থেকে টাওয়েল টা খুলে ভেজা চুল গুলো পিঠের ওপর ছড়িয়ে দিলো। রুমে যদিও কেউ নেই, দরজা টাও লক করা। তারপর ও বুকের ওপর কিছু না থাকলে কেমন যেন লজ্জা লাগে!
ওয়াশরুমের লক খুলে বের হলো রুমাইশা। কিন্তু ও যা ভেবেছিলো তা হয়নি। কামিজ টা থেকে যায়নি, বিছানার কাছে মেঝেতে পড়ে আছে৷ হয়তো জামা কাপড় গুলো হাতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় হাত থেকে কখন পড়ে গিয়েছে।

এগিয়ে গিয়ে চুল ঝাকিয়ে নিচু হয়ে কামিজ টা তুললো ও। চুল গুলো মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো। তারপর আবার চুল ঝাকিয়ে উচু হয়ে কামিজ টা একবার ঝাড়া দিয়ে ওড়নাটা এক টানে খুলে বিছানার পায়ের ওদিক টায় ছুড়ে দিয়ে কামিজ টা পরে নিলো৷ তারপর আবার ঘুরে ওয়াশরুমে যেতে নিলো ভেজা কাপড় গুলো আনতে। আর তখনই পেছন থেকে এক পুরুষালি কণ্ঠে গলা খাকারি শোনা গেলো।

রুমাইশা জমে গেলো সাথে সাথেই। চোখ বড় বড় হয়ে গেলো ওর! রুমে কেউ ছিলো! কিন্তু ও যে……
ঢোক গিলল রুমাইশা। তারপর ওইখানে দাড়িয়েই আস্তে আস্তে ঘুরে পেছন ফিরলো ও। সাফওয়ান খাড়া হয়ে বসে আছে বিছানার পায়ের দিক টায়। ছুড়ে দেওয়া ওড়নাটা ওর মাথায় পড়ে চোখ দুইটা সহ মুখ টাও ঢেকে দিয়েছে।

রুমাইশার কান গরম হয়ে গেলো!
ছি ছি! সাফওয়ান কি দেখে ফেলেছে ওকে ওই অবস্থায়! লজ্জায় চোখ মুখ কুচকে গেলো রুমাইশার। সাফওয়ানের কাছে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে সাফওয়ানের মাথার ওপর থেকে ওড়না টা উঠিয়ে নিলো ও।

ওড়না ওঠানোর পরই ওর চোখে পড়লো সাফওয়ানের বিস্ময়ে হতবাক দৃষ্টি! চোখের পলক পড়ছে না ওর! মুখ টা কিঞ্চিৎ হা হয়ে আছে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে রুমাইশার দিকে অপলকে চেয়ে আছে ও। ভেজা চুলে রুমাইশার অর্ধ নগ্ন দেহ দেখে সাফওয়ানের হৃৎপিণ্ডের দৌড়ানি থামে গেছে যেন!

সাফওয়ানের এমন দৃষ্টি দেখে রুমাইশা কি করবে বুঝতে পারলো না। লজ্জা লাগছে ওর প্রচন্ড, সেই সাথে হাসি ও লাগছে। ঠোট টিপে নিঃশব্দে একটু হেসে নিলো ও৷

তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে সাফওয়ানের চোয়ালে হাত ছুইয়ে ওর দিকে চেয়ে থাকা সাফওয়ানের মুখটাকে নিজের দিক থেকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলো।

কিন্তু মুখ টা ঘুরিয়ে দেওয়ার পর ও আবার ফিরে তাকালো সাফওয়ান। তারপর রুমাইশার সরু কোমর টা দু হাতে পেচিয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে ওর চোখে নিজের মুগ্ধ দৃষ্টি রেখে নেশা যুক্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,
— আমার মুখের ওপর ওড়না ফেলে এত সুন্দর একটা দৃশ্য দেখতে না দিয়ে যে গুরুতর অপরাধ তুই করেছিস তার জন্য তোকে কঠিন সাজা দেওয়া হবে, আজকে রাতের বেলা।

রুমাইশা দিমে গেলো না। উলটো সাফওয়ানের চোখের আর ও গভীরে তাকালো ও, তারপর ধীরে ধীরে সাফওয়ানের কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদু, নেশা ধরানো গলায় বলে উঠলো,
— শাস্তি দাতা যদি আপনি হন তবে আমি যেকোনো শাস্তির জন্য প্রস্তুত!

রুমাইশার এমন মাদকতাময় কন্ঠে সাফওয়ানের মাথাটা ঘুরে গেলো যেন। তড়িৎ গতিয়ে রুমাইশার ভেজা চুলের নিচ দিয়ে মোলায়েম ঘাড় টা খপ করে ধরে ফেললো ওর ইস্পাত কঠিন হাত খানা দিয়ে। আর তারপর ই মুখ ডুবিয়ে দিলো রুমাইশার বিউটি বোন আর গলার মাঝ বরাবর। রুমাইশার সারা শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো, আবেশে বন্ধ হয়ে গেলো দু চোখ।
সাফওয়ান ক্ষিপ্রতার সাথে ঠোঁট চালনা করতে থাকলো ওর উজ্জর শ্যমলা রঙা নরম গলায়। গলার কাছ টা শুষে নিলো প্রগাঢ় চুম্বনে। চোখে দাঁতের ছোয়া লাগলো গলায় কয়েকবার।

রুমাইশার মুখে পরম সুখের আভাস দেখা গেলো! কিন্তু পরক্ষনেই হুস ফিরলো ওর! চোখে মেলে সাফওয়ান কে নিজের থেকে সরিয়ে দিলো ও। এখন মোটেও সাফওয়ানের আদরে গলে যাওয়া যাবে না।
রুমাইশা এইভাবে সরিয়ে দেওয়ায় অসহায় হয়ে তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সাফওয়ান প্রেয়সীর দিকে। বুকের ভেতর ওর ধক ধক করছে, রুমাইশাকে এই মুহুর্তে ওর সমস্ত শরীর, মন, প্রাণ খুব করে চাইছে!

রুমাইশা সাফওয়ানের চোখ মুখের এই অসহায়ত্ব খেয়াল করে দুষ্টু হাসি দিলো, তারপর সাফওয়ানের থেকে দূরে সরে গিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগোতে এগোতে বলল,
— দেনমোহরের টাকা এখনো বাকি আছে জনাব, সেগুলো পরিশোধ করে আপনার এখনকার এই চেহারাটা আমাকে একবার দেখাইয়েন৷ যতদিন বেচে থাকবেন ততদিন শুধু এই চেহারা দেখানোর পরবর্তী মুহুর্ত গুলোই স্মরণ করবেন।

এরপর সাফওয়ান কে আর একবার ঘায়েল করা দৃষ্টি দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লক করে দিলো রুমাইশা। সাফওয়ান হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। আর একটু হলেই নিয়ন্ত্রণ হারাতো ও৷ কিন্তু রুমাইশা কি বলে গেলো! শান্ত শিষ্ট চেহারা টা শুধু ওপরে ওপরে! কি চালু রে বাবা! আমাকে সিডিউস করে! আবার শান্ত না করে চলে যায়! এইডা কিছু হইলো?

.

১২ টার দিকে বেরোলো শাফিন আর সাফওয়ান৷ সাফওয়ান নিজেকে ঠিক ঠাক ভাবে ঢেকে ঢুকে নিলো। গাড়ি নিবেনা। রিকশা করে যাবে আবার রিকশা করে আসবে৷ বাংলাদেশে এসে এই প্রথম রিকশা চড়বে ও৷ সেই কোন ছোটবেলায় চড়েছিলো তা ওর মনেও নেই৷

রুনিয়া কে বলে বের হলো সাফওয়ান আর শাফিন৷ রুমাইশা জানে না কিছু এ ব্যাপারে৷ ওকে বলা হয়নি কিছুই। রুনিয়া কেও বলা হয়েছে যেন রুমি কে কিছু না জানানো হয়। রুনিয়া ও মেনে নিয়েছে৷

রুমাইশা নিজের মনে রুমে বসে খাচ্ছে আর ফেসবুক ঘাটছে৷ দ্রুত ভাত খাচ্ছে কারণ সাফওয়ান তখন একগাদা চকোলেট আর চিপস দিয়ে গেছে৷ সেগুলো খেতে হবে৷ ও যে পেটুক সেটা সাফওয়ান কে না জানালেও রুনিয়া ফুপ্পি বলে দিয়েছে সাফওয়ান কে।

রুমি যে ছোটবেলায় পেটুক ছিলো তা জানতো খুব ভালোভাবেই। কারণ সাফওয়ান কিছু খেলে আগে এসে ভাগ বসাতো সেখানে, অবশ্যই অবশ্যই ওকে অর্ধেক দেওয়া লাগবে, নইলে আকাশ পাতাল এক করে কান্না শুরু করবে৷
কিন্তু এখন রুমাইশার পাতলা শরীর দেখে ও ভেবেছিলো তিনি মনে হয় এখন আর খাবো খাবো করেন না৷ কিন্তু ওর ধারণা সম্পুর্ন ভুল প্রমান করে সকালে রুনিয়া বলেছেন যে এখনো চিপস চকোলেট খাওয়ার জন্য লাফালাফি করে। তাই সাফওয়ান এনে দিয়েছে।

সাফওয়ান আর শাফিন রওনা হলো। রিকশা করে প্রথমেই গেলো আর এন রোডে৷ সেখানের একটা শাড়ির দোকানে ঢুকলো দুজন৷ সাফওয়ানের এমন অদ্ভুত সাজপোশাকে সবাই অন্যরকম ভাবে তাকাতে লাগলো ওর দিকে। রাস্তাতেও একই সমস্যা ফেইস করেছে সাফওয়ান। কিন্তু এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছে ও৷

এসব খেয়াল না করে শাড়ি দেখায় ব্যাস্ত হলো ও। শাফিন ও ভাইকে এমন স্বাভাবিক থাকতে দেখে নিজেও শাড়ি দেখায় মনোনিবেশ করলো।

দোকান দার গুলো কেমন যেন ভড়কে গেলো সাফওয়ান কে দেখে। ভয়ে ভয়ে ওরা সাফওয়ান কে শাড়ি দেখাতে লাগলো। কয়েক জন তো স্যার স্যার করে সাফওয়ানের কান মাথা ঝালাপালা করে ফেলতে লাগলো।

শাফিন সাফওয়ানের থেকে কিছুটা দূরে থেকে অন্যান্য শাড়ি দেখছিলো৷ ওর বিপরীত পাশে দাঁড়নো দুইটা মেয়ে সাফওয়ান কে দেখে নিজেদের মধ্যে কথা বলাবলি করতে লাগলো,
— দ্যাখ দ্যাখ, ওই যে মাস্ক পরা চোখে কালা চশমা লাগানো, ইয়া লম্বা যে লোক টা বসে আছে হেতি আমাদের ডিপার্টমেন্টের লেকচারার। হেই আমাদের অনলাইনে ক্লাস নেয়, এমনি ক্লাসে আসে না। লজ্জা পায় মনে হয়।

— আরে দোস্ত, তোগের স্যার টা তো জোস! হেতির মাসল দেখছিস? শার্টের ওপর থেকে কেমন ফুলে ফুলে উঠছে! ভেতরে সিক্স প্যাক আছে মনে হয়!

— দেখেছি, দেখেছি। স্যার যখন অনলাইনে ক্লাস নেয় তখন স্যার কে দেখতে যা লাগে না! বই টা যখন হাতে নিয়ে ধরে রাখে বুকের কাছে তখন আর ও জোস লাগে। চুল গুলো ঝাকি দেয় এমনে,

প্রথম মেয়েটা দ্বিতীয় মেয়েটাকে সাফওয়ানের চুল ঝাকি দেওয়া স্টাইল টা অভিনয় করে দেখালো।
শাফিন ও দেখলো সেটা। ঠোঁট টিপে হাসলো ও এদের কথা বার্তা শুনে

ঠিক এমন সময় সাফওয়ান পেছন ফিরে শাফিন কে ডাকলো নিজের চয়েচ করা শাড়ি টা দেখার জন্য৷ শাফিন ইশারায় বোঝালো যে সে আসছে। কিন্তু মেয়ে গুলো শাফিন কে খেয়াল করেনি৷ দ্বিতীয় মেয়েটা প্রথম মেয়েটাকে বলল,
— দোস্ত, তোর স্যারের ভয়েস তো পুরাই আগুন! বিয়ে শাদি করেছে কিনা জানিস?

প্রথম মেয়েটা তখন ওকে একটা চাটি মেরে বলল,
— স্যার বিয়ে করেছে কিনা তা জেনে তুই কি করবি? লাইন মারবি? নিজের চেহারা দেখেছিস আয়নায় কোনোদিন? আর স্যারের হাইট দ্যাখ, আর তোর হাইট দ্যাখ; স্যারের কোমর পর্যন্ত হবি তুই। তার মানে তুই স্যারের ইয়েতে গিয়ে টোকা খাবি৷

দ্বিতীয় মেয়েটা চোখ মুখ কুচকে বলে উঠলো,
— ছি ছি দোস্ত, তুই এরকম কথা আমাকে বলতে পারলি! তোর মন মানসিকতা এত নষ্ট! এই মন নিয়ে তুই হাটা চলা করিস কিভাবে?

প্রথম মেয়েটা আবার দ্বিতীয় টাকে চাটি মারলো। শাফিন সাফওয়ানের দিকে এগোলো। মেয়ে দুইটার কথা আর শোনা হলো না। কিন্তু ওর খুব হাসি পাচ্ছে। কিন্তু অনেক কষ্টে দাঁতে দাঁত চেপে হাসি টা আটকানোর চেষ্টা করছে ও। ওকে অকারণে এমন দাঁত কেলাতে দেখলে ভাইয়া কেলাবে তখন৷

ভাইয়ের পাশে গিয়ে বসলো ও৷ আর তখনই দেখলো সাফওয়ান হোয়াট গোল্ডেন পাড়ের গাড় মেরুন রঙা একটা শাড়ি হাতে নিয়ে বসে আছে। শাফিন পাশে এসে বসলে সাফওয়ান শাফিন কে শাড়িটা দেখালো।
শাড়িটা দেখে মুগ্ধ হলো শাফিন৷ অর্গেঞ্জা কাতানের শাড়িটা সত্যিই চোখে লাগার মতো! ভাইয়ের পছন্দ কে আর ও একবার তারিফ করলো ও মনে মনে।

শাড়িটা হাতে নিয়ে সাফওয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
— খুব সুন্দর শাড়িটা, আপুর গায়ে সেই সুন্দর মানাবে।

সাফওয়ানের মুখ না দেখেও শাফিন বুঝলো যে ভাই তার সন্তুষ্ট হয়েছে তার উত্তরে। ব্লাউজ পিস টা শাড়ির থেকে কেটে নিয়ে এক সাথে শাড়ি টা প্যাক করতে বলল সাফওয়ান।
রুমাইশার জন্য আর দুইটা সুতির শাড়ি নিলো ওরা। তারপর সাফওয়ান মায়ের জন্য ও একটা শাড়ি কিনলো। মাকে কিছুই দেওয়া হয়নি এখনও পর্যন্ত। মায়ের হাতে টাকা তুলে দিলেও ওইভাবে কখনো কোনো কিছু উপহার দেওয়া হয়নি। দিবে দিবে করেও দেওয়া হয়ে উঠে না। আজ একটা সুযোগ হয়েছে। এ সুযোগ মিস করা যাবে না৷

সেলসম্যান সবগুলো প্যাক করে দিলে টাকা পরিশোধ করে দোকান থেকে বেরিয়ে পড়লো ওরা গহনা কেনার উদ্দ্যেশ্যে৷

স্বর্ণ পট্টিতে গিয়ে প্রয়োজনীয় গহনা কিনে আর ও কয়েক দোকান ঘুরে দুইটা পিউর সুতি থ্রিপিস আর দুইটা হেভি এমব্রয়ডারির সালওয়ায়ার কামিজ নিলো সাফওয়ান। সব গুলো নিজের পছন্দে কিনলো। তারপর সিট কাপড়ের দোকান থেকে কিনলো কয়েক টা সুতি ব্লাউজ আর পেটিকোটের পিস৷

আরও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনে দুইভাই ফিরে আসলো বাড়িতে। এসেই মায়ের কাছে মেরুন রঙা শাড়িটা আর গয়না গুলো দিয়ে ব্লাউজ টা সন্ধ্যার ভেতরেই বানিয়ে ফেলতে বলল। অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো রুনিয়ার হাতে ধরিয়ে দিলো। আর এরপর মায়ের জন্য কেনা শাড়িটাও দিলো মায়ের হাতে৷ দিয়ে বলল,
— এইটা তোমার জন্য মা, এইটা পরে আজ বাবা কে চমকে দিও।

রুনিয়া সাফওয়ানের কথা শুনলে লজ্জা পেয়ে হেসে উঠলো। শাড়ি টাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো। মুখে হাসি ধরছে না তার৷ ছেলের থেকে উপহার পেয়ে প্রচন্ড খুশি হয়েছেন তিনি। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে শাড়িটা খুব মনে ধরেছে রুনিয়ার।

মাকে এইভাবে কিশোরি মেয়েদের মতো লজ্জা পেতে দেখে আর হাসতে দেখে সাফওয়ান খুশি হলো খুব। দুই হাতে মায়ের মুখ টা ধরে একটা ডলা দিয়ে নিজের রুমের উদ্দ্যেশ্যে চলে গেলো ও।

ছেলের থেকে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত উপহার আর আদর পেয়ে রুনিয়ার চোখের কোণে খুশির কান্না জমলো! সাফওয়ানের মুখের এই তৃপ্ত হাসি টা উনি দেখেননি কতোকাল!
উনি ভাবেনইনি কখনো রুমি কে ছেলের বউ করার কথা! অথচ তার ছেলের খুশি সারাটা সময় তার আশে পাশেই ছিলো। আনমনে হাসলেন রুনিয়া৷ ছেলের এমন খুশি খুশি চেহারা দেখে তার আর ইশতিয়াকের বিয়ের প্রথম দিন গুলোর কথা মনে পড়লো রুনিয়ার। লাজুক লতার মতো হেসে নিজের আর রুমাইশার শাড়ি আর অন্যান্য জিনিসপত্র গুলো নিয়ে নিজের রুমের দিকে এগোলেন।

ইশতিয়াক রুমে নেই, অফিসে গেছেন৷ আসবেন খানিক পরেই৷ রুমাইশার শাড়িটার ব্লাউজ টা বানানোর জন্য রুমের বেলকনিতে রাখা পা চালিত সেলাই মেশিন টা রেডি করতে লাগলেন। নিজের জামা কাপড়, ব্লাউজ পেটিকোট সব নিজে নিজে বানানোর জন্য মেশিন টা কিনে ছিলেন।

সেলাই মেশিন টা বেলকনিতে রেখেছেন কারণ বাড়ির ভেতর দিকে নিলে শব্দে সবার অনেক অসুবিধা হয়। তাছাড়া শাফিন পড়াশোনা করে সারাদিন বলতে গেলে। তাই এক কোণায় নিয়ে এসেছেন যেন কারো কোনো অসুবিধা না হয়।

সেলাই মেশিন টা ঠিক ঠাক করে রুমাইশার রুমে গেলেন তিনি। রুমাইশার শরীরের মাপ টা নিতে হবে কোনো ভাবে। ওকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে৷

রুমাইশা শ্যাম্পু করেছে আজ। লম্বা চুল গুলো শ্যাম্পু করার দিনে শুকাতে সময় লাগে অনেক। চুল শুকাতে জানালা টা খুলে জানালার দিকে পেছন ফিরে বসে বসে ফোন চাপছে ও।
রুনিয়া এলেন এমন সময়। হাতে ওনার পরিমাপের ফিতা।এসে বললেন,
— উঠে দাড়া, তাড়াতাড়ি।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।