36★
৬৯
‘ইউ নো হুয়াট?আপনাকে দেখার খুউব খুউব ইচ্ছে ছিলো আমার।বলতে পারেন,স্বপ্ন ছিলো,স্বপ্ন!’
আরহাম দৃষ্টি ফিরিয়ে বললেন, ‘যেতে দিন।’
সদ্য ১৭ তে পা দেয়া কিশোরী মেয়েটা বায়না ধরে বলল, ‘না প্লিজ থাকুন।একটু কথা বলি?’
‘আমাকে যেতে হবে।পথ ছাড়ুন প্লিজ।’
মেয়েটি গোল চশমার আড়ালে সামনে থাকা অতি সুদর্শন পুরুষটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল বলল, ‘হ্যালো ওয়েট!আমি কি দেখতে খারাপ?আপনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন না কেন?নিচে কি দেখছেন আমার দিকে তাকান।’
আরহামের রাগ হচ্ছে।তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বললেন, ‘আমি যাব।পথ ছাড়ুন।”
আরহামের এমন বার্তায় মেয়েটি খুশিতে গদগদ হয়ে বলল, ‘যাবেন তো।আচ্ছা আপনি কি জানেন আপনি দেখতে অনেক কিউট।ওভার কিউট একেবারে।’
আরহাম হাত মুষ্টিবদ্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে রাগ কন্ট্রোল করলেন।
আরহামের নীরবতা দেখে আদওয়া মুখ ভেংচে বলল,’
ওখানে গিয়ে কী করবেন?ওখানে তো সোফায় ভেজা বেড়ালের মতো চুপটি করে বসে থাকবেন।তাঁর চেয়ে বরং আমার সাথে কথা বলুন।’
‘এই মেয়ে সোজা কথা বুঝেন না?আপনার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার।সো লেট মি গো।’
আরহামের ধমকে মেয়েটির রুহ অবধি কেঁপে উঠলো।এতক্ষণের শান্ত মেজাজের সুন্দর মানুষটির এমন ধমক সে মোটেও আশা করে নি।ওর চিন্তা ভাবনা মাঝপথে থাকতেই আরহাম এই সুযোগে প্রস্থান করলেন।আদওয়া যখন বুঝতে পারলো উনি চলে গেলেন,তখন ঠোঁট উল্টে কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল, ‘আপনি আমাকে ধমক দিয়েছেন। আমি বাপির কাছে বিচার দিবো।হুহ!’
আয়বীর সাহেবের অনুরোধে একপ্রকার জোর করেই ডিনার করতে হলো তাদের।খাবার সময় আরহাম দেখলেন,মেয়েটি বারবার দরজার আড়াল থেকে আরহাম কে দেখছে আর চোখাচোখি হলেই মুখ দিয়ে ভেংচি কাটছে।আরহাম তৃতীয়বার আর তাকালেন না। তবে ভেতরে ভেতরে উনার হাসি পাচ্ছে খুব।
খাবার শেষে বিদায় নিচ্ছেন ঠিক তখুনি মেয়েটি চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ‘বাপি বাপি’ ডাকতে ডাকতে ড্রয়িংরুমে আসলো।আরহামদের চলে যেতে দেখে ওর চেহারা মলিন হয়ে গেল মুহুর্তেই।সামনের দূজনকে পরখ করে বাপির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বাপি উনারা কী চলে যাচ্ছেন?’
‘হ্যাঁ মামণি।’
সে করুণ চোখে সামনের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘থেকে যান না আপনি।আরহামকে উদ্দেশ্য করে বলল, আপনাকে বলছি না আঙ্কেলকে বলছি।’
‘মামণি কি…
আয়বীর সাহেব এর কথার মাঝেই আহনাফ তাজওয়ার বললেন, ‘যেতে হবে মামণি।তুমি যেয়ো আমাদের বাসায়।’
আরহাম অন্যদিকে চেয়ে আছেন।এসবে উনার কোনো মনোযোগ নেই।এখান থেকে কোনো ভাবে চলে গেলেই বাঁচি!
‘আচ্ছা, আসবো।আঙ্কেল আমার একটা বিচার আছে।’
মেয়ের এমন কথায় আয়বীর সাহেব অস্বস্তিতে পড়লেন।মেয়েটার বয়স হয়েছে ঠিকই।কিন্তু এখনো বুঝ হয়নি পুরোপুরি।
আহনাফ তাজওয়ার একটু অবাক হয়ে বললেন, ‘বিচার?কার বিচার?”
আদওয়া অকপটে বলে দেয়, ‘আপনার ছেলের।’
‘আপনার ছেলের’ কথাটি কূর্ণকুহরে যেতেই আরহাম চরম বিস্ময় নিয়ে মেয়েটির দিকে তাকালেন।যে এখন আরহামকে ফাঁসিয়ে শান্তি পাচ্ছে।
আব্বু অবাক দৃষ্টিতে আরহামের দিকে তাকিয়ে আছেন। জীবনে এমন পরিস্থিতি তে পরতে হবে এটা উনার অজানা ছিলো।আরহাম তো এমন নয়!
আয়বীর সাহেব প্রচন্ড শকে নীরব হয়ে তাকিয়ে আছেন মেয়ের দিকে।
নিজেকে কোনোমতে সামলে আহনাফ তাজওয়ার জিজ্ঞেস করলেন ‘আরহাম?ও কি করেছে?বলো।’
আদওয়া আস্তে আস্তে গুছিয়ে বলতে লাগলো, ‘আমি বাইরে উনার সাথে কয়েকটা কথা বলতে চাইছিলাম ভালোভাবেই।উনি আমাকে ধমক দিয়েছেন। আমাকে কেউ ধমক দেয় না।আমি খুব ভয় পেয়েছি উনাকে।’
আদওয়ার কথা শুনে আরহামের এখন মন চায়,অস্বস্তি ঢাকতে এখনি মাটি ফাঁক করে লুকিয়ে যেতে, অথবা অদৃশ্য হয়ে যেতে।ইসসস যদি এর কোনোটা সম্ভব হতো!এমন পরিস্থিতিতে এই প্রথম পড়া হলো আরহামের।
আব্বু এবার ব্যাপারটা কিছুটা আঁচ করতে পারলেন।তবুও গম্ভীর থেকে আরহাম কে আদেশ দিলেন, ‘এ কাজ তুমি ঠিক করো নি আরহাম।ওকে সরি বলো।’
আরহাম আর সামনে তাকাতে পারলেন না।কোন দূঃখে যে আসছেন এ বাসায়।তবুও বাধ্যের মতো মাথানিচু করে বললেন, ‘সরি।’
আদওয়া এবার খুশি হলো।পুনরায় বায়না ধরে বলল, ‘শুধু ‘সরি’ হবে না আঙ্কেল।ভেরী ভেরী সরি বলতে হবে।’
আয়বীর সাহেব মেয়েকে চুপ করতে বললেন, ‘হয়েছে তো আদওয়া।উনি তো সরি বলেছেন বিনাদোষে।আবার কেনো জেদ ধরছো?’
আদওয়া অবাক হওয়ার ভান করে বলল, ‘বিনাদোষে নয় বাপি।উনি সত্যি আমাকে ধমক দিয়েছেন।’
আরহাম বাবার দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। আহনাফ মুখে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে কিছু ইশারা করতেই আরহাম আবারো বললেন, ‘ভেরী ভেরী সরি।’
________
সিটে মাথা লাগিয়ে হেলান দিয়ে বসে আছেন আরহাম।ছেলেকে বেশ কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষন করে আরহাম তাজওয়ার বললেন, ‘কিছু মনে রেখো না।মেয়েটা অনেক ছোট,বুঝ কম।ওর বাবাও গেটের বাইরে বেরিয়ে ওর পক্ষ থেকে সরি বলেছে।এটা নিয়ে মন খারাপ করো না আর।
‘করছি না আব্বু তবুও….এমন পরিস্থিতিতে প্রথম পড়লাম।’
আহনাফ তাজওয়ার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।বলা বাহুল্য, উনারও প্রথম এমন অদ্ভুত দৃশ্য দেখা!
_______
আব্বুকে বাসায় ড্রপ করে ফুপির বাসায় আসলেন আরহাম।ঘড়িতে তখন এগারো টা বাজে।ড্রয়িংরুম পেরিয়ে উপরে উঠতে নিলেই ফুপি এসে খাওয়ার জন্য জোর করতেই আরহাম বললেন, খেয়ে এসেছেন।
রুমে গিয়ে দেখলেন, মাইমুনা রুমে।চোখে তন্দ্রা ভাব স্পষ্ট উনার।আরহামকে দেখে তাৎক্ষণিক সোজা হয়ে বসে বললেন, ‘হাফসার থাকার কথা এখানে।কিন্তু ও-ই আমাকে জোর করে এখানে দিয়ে গেছে।’
‘আচ্ছাহ।উনি কোথায়?’
‘প্রথম রুমে।’
আরহাম ওয়াশরুম থেকে চেন্জ করে আসলেন।আ্যাশ কালার গেবাটিনের সাথে একটা ব্রাউন কালার শার্ট পড়ে হাতা ফোল্ড করছেন।মাইমুনা পেছন থেকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এত সুন্দর লাগছে উনাকে!
আরহাম উনার দিকে ফিরে বললেন, ‘বসে আছেন কেন?শুয়ে পড়ুন আপনি।আমি আসছি।’
রুম থেকে বেরিয়ে প্রথম রুমে আসলেন আরহাম।দরজায় নক করতেই ইনায়াত এসে দরজা খুললো।আরহাম ভাবছিলেন, ইনায়াত হয়তো নিচে।কিন্তু….
‘কি ভাইয়া?’
৭০
‘উমায়ের কোথায়?’
‘রুমে।’
‘একটু দরকার ছিলো।’
‘ভাবি তো ঘুমিয়ে গিয়েছেন।’
‘সমস্যা নেই।তুমি একটু বাইরে যাবে কী?’
‘ওকে।’
আরহাম ভেতরে ঢুকে দরজা লক করে হাফসার মাথার পাশে শিয়রে বসলেন।কেমন করে ঘুমায় মেয়েটা!গালে হাত রেখে বাচ্চাদের মতো!তৃপ্তি মিটিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে ওর কপালে গাঢ় একটা চুমু দিলেন।তারপর ঝুঁকে চোখে,নাকের ডগায়,গালে,অবশেষে ঠোঁটে চুমু দিয়ে ক্ষ্যান্ত হলেন তিনি।হাফসার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে ভাবলেন, ‘আপনি যদি বুঝতেন আপনি আমার কী?সেদিন যদি একটুর জন্য রাদ আপনাকে নিকাহ করে নিতেন তবে আমার যে কী হতো।সত্যি বলছি,আপনি অন্য কারোর হয়ে গেলেও আপনাকে আমি ভুলতে পারতাম না।ভীষণ রকম ভালোবাসি।আম্মু-আব্বুর পরও আমার একান্ত দূটো পৃথিবী আছে।তাদের ছাড়া একমুহুর্ত থাকতেও আমার ভীষণ কষ্ট হয়।তাই বাড়ি গিয়েও ফিরে এসেছি।’
মন চাইলো আরো কিছুক্ষণ থাকতে।তবে ইনায়াত বাইরে দাঁড়িয়ে।প্রিয়তমাকে আরো একপলক দেখে উঠে গেলেন।
আরহাম রুমে এসে দেখলেন মাইমুনা শুয়ে পড়েছে। আরহামও লাইট অফ করে শুয়ে পড়লেন।কোনো এক জড়তা থেকে মাইমুনাকে বুকে টানতে পারলেন না।
_______
নীরব,নিস্তব্ধ রজনী।ঝিঁঝি পোকর আওয়াজ ছাড়া কিছু কানে আসছে না।তবে দূর থেকে কোনো এক মাহফিলের একটু একটু আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।ঘড়ির কাটা টকটক শব্দ তুলে বারোটা পেরোয়,একটা পেরোয়।আরহামের অস্থিরতা বাড়ছে প্রতিটা মুহুর্ত।হাফসা-মাইমুনা দু’জনকেই উনি ভীষণ ভালোবাসেন।হাফসার সাথে থাকলেও ভেতরে ভেতরে প্রতিনিয়ত মাইমুনার সাথের দূরত্ব উনাকে খুব করে পোড়ায়।আর কিছু ভাবতে পারলেন না আরহাম।সব জড়তা ভেঙে ফেলে ঘুমন্ত মাইমুনা কে যত্নে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলেন।কপালে অনবরত কয়েকটা চুমু খেয়ে নিলেন।অনেকদিন পর মাইমুনাকে স্পর্শ করলেন।কোনো এক যন্ত্রণা থেকে চোখ থেকে টপটপ করে বেশ কয়েকফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।অনুভব করলেন, বুকে চেপে রাখা যন্ত্রণা টা ক্রমশ কমে আসছে।তবে হাসিমুখের আড়ালে যে যন্ত্রণা আরহাম প্রতিনিয়ত অনুভব করতেন, সে যন্ত্রণার উপশম কি মাইমুনা?
________
সময় প্রবহমান।সেকেন্ড যায়,মিনিট,যায়,ঘন্টা যায়,সবমিলিয়ে একটা একটা করে দিন যায়।জীবনের ক্ষণ ফুরিয়ে আসে।কেটে গেছে বেশ কয়েকদিন।রহমতের দিন ছাপিয়ে মাগফিরাত বিদায় নেওয়ার পথে।সেই সুন্দর নিয়মে বাঁধা পড়ে আছে সাহরি-ইফতার-তারাবিহ।শান্ত পরিবেশ।সময়টা দূপুরের।বাড়িটা কেন এত নীরব!কমবেশি পাঁচজন মানুষ ও তো আছে।তাও কেন এত নীরব!ইসস যদি একটা ফুটফুটে বাচ্চা থাকতো।সারা বাড়ি হয়তো খুশিতে মাতিয়ে রাখতো।ভাবতেই সে লজ্জায় হাবুডুবু খেতে লাগলো।তখুনি আরহাম আসলেন। বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে ছিলো হাফসা।হাফসার সামনাসামনি টুল এনে বসে আইসক্রিমের বক্স থেকে এক চামচ হাফসাকে খাইয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘হাসছিলেন কেন?’
হাফসার মান্থলি ব্রেক চলছে।তাই রোজা রাখা নিষিদ্ধ।আইসক্রিম মুখে নিয়ে একধ্যানে কিছুক্ষণ তাকালো সামনে বসা পুরুষটার দিকে।উনাকে এই প্রথমবার ব্ল্যাকশার্ট পড়তে দেখেছে হাফসা।শার্টের ওপরের দূটো বোতাম খোলা, হাতা ফোল্ড করা।শুভ্র হাতে ঘন পশমের ছড়াছড়ি।সাদা হাতে মেয়েদের মতো লাল লাল আঙুল। নখের সেইপ লম্বাটে।খুব সুন্দর!আর সুন্দর উনার সাদা সাদা হাতের অনামিকা আঙ্গুলে ব্ল্যাক ডায়মন্ডের আংটি টা।সাথে অ্যাঁশ টাও।
হাফসার মুখে আরেক চামচ ধরতেই হাফসার ধ্যান ভাঙ্গে।
‘হাসছিলেন কেন?’
37★
হাফসার মুখে আরেক চামচ ধরতেই হাফসার ধ্যান ভাঙ্গে।
‘হাসছিলেন কেন?’
‘উহু,এমনিই।’
‘নিশ্চয়ই কিছু ভাবছিলেন।বলুন কি জন্য হাসলেন?’
‘তেমন কিছু না।’
‘কেমন কিছু?’
হাফসা কথা কাটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।মিথ্যে তো বলা যাবে না।সত্যি কথা বলতে গেলে অপ্রস্তুত হয়ে পড়বে
বলল, ‘আপনি বুঝলেন কি করে আমার আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছিলো?’
আরহামও আরো কয়েক চামচ খাইয়ে ধীরগলায় বললেন ‘বুঝেছি।আপনার ইচ্ছে মতো আপনার পছন্দের জিনিস খাওয়াচ্ছি।তারপর আমার পছন্দের জিনিস খেতে হবে।’
হাফসা ঠোঁট উল্টে বলে ‘ভাত?’
‘হুমম।’
‘পরে খাবো প্লিজ…
‘উহু,সকাল থেকে দূপুর অরেন্জ আইসক্রিম ছাড়া কিছুই খান নি।অসুস্থতায় আরো অসুস্থ হবেন,উইক হবেন।আমি এখুনি খাবার নিয়ে আসছি।কোথাও যাবেন না।’
আরহাম চলে যেতে উদ্যত হলে হাফসা পেছন থেকে বলে, ‘আচ্ছা শুনুন না!আরেকটু আইসক্রিম খাই?তারপর বিকেলে ভাত….
আরহাম ওর কথায় কোনোরুপ তোয়াক্কা না করে চলে গেলেন।হাফসা সরু চোখে উনার যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আচমকা হেসে দিলো।দূনিয়াতে পাওয়া অন্যতম একটা উপহার ‘আরহাম’।এই মানুষটা এত অমায়িক কেন!
এইযে সারা রাত পেটের ব্যাথায় কেঁদেছে,ছটফট করেছে, মানুষটা একটাবারও ওর পাশ থেকে সরেননি,বারেবার হট ওয়াটার প্যাকেট গরম করে দিয়েছেন,এটা সেটা খাইয়ে দিয়েছেন, সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন, সকাল থেকে একটার পর একটা খাবার নিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন।এত করেন মানুষটা!একটাবার বিরক্ত হোন না!আজকে বাইরেও যাননি।সারাক্ষণ ওর কাছাকাছি থাকছেন।হাফসা সকালে সাতটার পর ঘুমিয়েছিলো,কিন্তু উনি ঘুমাননি।অথচ ঘুম না হলে উনার মাথাব্যথা করে,এটাও বুঝতে দেন নি।সাহরিও ঠিকঠাক করেন নি।অর্ধেক খেয়েই চলে আসছিলেন রুমে!
_________
বিকেলের শেষাংশ।দূর আকাশে লালচে আভা দেখা যাচ্ছে।প্রকৃতি অশান্ত।বাতাসে রমরমা ভাব।ছাদে রাখা বেঁতের চেয়ার বসে আছেন আরহাম।মনের মধ্যে একটা চিন্তা বারবার ঘুরপাক খায়। সেদিন রুদ্র ‘র সাথে উমায়েরের অপ্রত্যাশিত মুহুর্ত।আজও এটার সত্যি জানেন না আরহাম।তবে উমায়ের কেও উনি বিশ্বাস করেন।বারে বারে উমায়েরের কাছ থেকে শুরু থেকে ঘটনা টা শুনতে চেয়েছিলেন কিন্তু কোনো এক ভয়ের আশঙ্কায় চেয়েও বারবার পিছু হটেন।অনেক কষ্টে আরহাম আর হাফসার মধ্যকার সম্পর্ক ঠিকঠাক হয়েছে।নতুন করে জানতে গেলে আবার যদি কোনো সমস্যা হয়।যদিও সম্ভাবনা নেই, তবু মনে হয় হাফসার সাথে যদি উনার দূরত্ব বেড়ে যায়?এই দ্বিধায় প্রতিবারই নিজের অশান্ত মনকে সামলে নেন।আর রুদ্র!উনার কোনো খোঁজ নেই।শুধু গতদিন একটা মেসেজ আসছিলো।মেসেজটা এমন,’আমি রুদ্র।কেমন আছেন?এসছিলাম একমাস আগে।হুট করে একটা ইমার্জেন্সী কাজ পরায় আমি আবার ইরান ফিরছি ১৩ তারিখে।কোনো কারণে আমি যদি আপনার কাছে বিরক্তি বা,সমস্যার কারণ হই তবে ক্ষমা করবেন।আপনার করা সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ।আল্লাহ হাফিজ।’
এই শেষ।আরহাম রিপ্লাই করেন নি কিছু।তবে মনটা কেমন খরচ করছে বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই ভয় লাগছে।এতে রুদ্র জড়িত নয়।তবুও মন আকুপাকু করছে।কেন এমন হচ্ছে!খারাপ কিছু হবে না তো!
৭১
ইফতারি টেবিলে সবাই আযানের অপেক্ষায়।মোনাজাত শেষ হওয়ার পরও হাফসাকে এখনো হাত সামনে রেখে অন্যমনষ্ক হয়ে থাকতে দেখে আরহাম হাফসার হাতে হাত স্পর্শ করতেই ও চমকে উঠলো।ইশারা বুঝে মুখ মাসাহ করতেই আযান পড়লো।আরহাম হাফসা-মাইমুনার মুখে খেজুর তুলে দিয়ে ইফতার শুরু করলেন।
{ভালোবেসে স্ত্রীর মুখে ভাতের যে লোকমাটি স্বামী তুলে দেয়,সেটাকেও ইসলাম সাদাকাহ হিসেবে গন্য করে।}
*****
নিচে মাইমুনা আর আম্মু তারাবিহ পড়ছেন। হাফসা রুমের বেলকনিতে তাসবিহ হাতে চুপচাপ বসে আছে।কাকামণি, মামণিকে কতদিন দেখা হয় না!উনাদের কথা মনে হতেই হাফসার ঠোঁট ভেঙে কান্না চলে আসে।কিছুক্ষণ ঠোঁট কামড়ে কান্নার উথাল ঢেউ আটকানোর চেষ্টা করলো,তবে আটকালো না।হাঁটু তে মুখ বুজে নীরবে কাঁদতে লাগলো।আপন পরিবেশ, আপন মানুষ ছেড়ে থাকার কী যে তীব্র যন্ত্রণা সেটা শুধু যার সাথে হয় সে বুঝে।
______
কান্না করলে মন হালকা হয়।বেশ কিছুক্ষণ কান্নার পর কান্না থামলো হাফসার।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে দূ গাল মুছে আবারও চুপচাপ বসে রইলো।তবে অশান্ত মন শান্ত হলো না।আরহামের প্রতি গাঢ় অভিমান হলো।লোকটা কেমন জানি!
উনি তো পারতেন আমাকে বাড়ি নিয়ে যেতে।বিয়ে প্রথা অনুযায়ী, বিয়ের পর তো স্বামী রা স্ত্রীর বাড়ি গিয়ে থাকেন।কিন্তু আপনি এমন করেননি।বুঝলাম আপনি ব্যস্ত।বিয়ে উপলক্ষ্যেও ছুটি হলো না?কাকামণি কতবার ফোন করে বলেছেন সাথে ওইদিন স্বয়ং বাড়িতে এসেও দাওয়াত দিয়ে গেছেন।কিন্তু আপনি এসব পাত্তা দেন না!
আর কথা বলবো না আপনার সাথে ‘বিড়বিড় করে একা একাই কথাটা বলে উঠলো হাফসা।আরহামের প্রতি ওর অভিমান হচ্ছে সাথে রাগ।নিচ থেকে ডাক আসলো।এখন তালিম হবে!উনারা তারাবিহ পড়ে চলে আসছেন।
হাফসা শোবার প্রস্ততিই নিচ্ছিলো।আজকে আরহাম আসবেন না। আজ মাইমুনার সাথে থাকবেন।বিছানা গুছাতে গেলেই দরজার ক্যাচক্যাচ শব্দ হয়।আরহাম ভেতরে আসলেন।হাতে চাটনীর বৈয়াম।
হাফসাকে পরখ করে বললেন,’আজ এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাচ্ছেন যে!ডিনার করবেন না?’
‘খিদে নেই।’
‘একটু খাওয়া যায় না?’
হাফসা নিচুমুখে রয়।উত্তর পাওয়া হলো না আরহামের।
আরহাম চাটনীর বৈয়াম টা বিছানার পাশে বক্সে রেখে বললেন, ‘আচার খাবেন বলেছিলেন দিবো?’
হাফসা মাথা নাড়িয়ে না বুঝায়।আরহাম ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।উমায়ের আজ এতো চুপচাপ কেন!পরক্ষণেই সকাল থেকে এখন পর্যন্ত হাফসার সাথে কাটানো সব মুহুর্তের কথা মনে করলেন!নাহ এমন তো কিছু করেননি,যার জন্য উমায়ের কষ্ট পাবেন বা রাগ করবেন!তাহলে এমন মুখ ভার করে রয়েছেন কেন উনি!
আরহাম হাফসার কাছাকাছি গিয়ে বসলে হাফসা মুখ ফিরিয়ে নিতেই আরহাম বললেন,
‘কি হলো?’
হাফসা অন্যদিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো ‘ঘুমাবেন না?’
‘হুমম।’
‘তাহলে যান আপুর ঘরে।আমার ঘুম পাচ্ছে।’
‘আপনার সাথে ঘুমাবো আমি।’
হাফসা নিরুত্তর দেখে আরহাম জিজ্ঞেস করলেন,
‘হয়েছে কি হোমাপাখি!তালিম চলাকালীন একটাবারও আপনি আমার দিকে তাকাননি।কেন?’