লাভার নাকি ভিলেন | সিজন – ২ | পর্ব – ২৪

আকাশঃ ভালই তো হয়েছে কাঁদছিস কেন? এটা তো মজা পাওয়ার মত বিষয় তুই মজা পাস নি?

মেঘলা অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকাল…

মেঘলাঃ কি বলছো এসব?

আকাশঃ কিছু না…. চল বাসায় চল।

মেঘলাঃ কোন বাসায়…

আকাশঃ তোর শ্বশুরবাড়ি

মেঘলাঃ মানে কি?

আকাশঃ বেশি কথা বলিস….
চল তো বলে মেঘলাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসাল আর নিজের বাড়িতে রাস্তার দিকে গাড়ি ঘুরাল।

মেঘলা এখন আপাতত ঘোরের মধ্যে আছে তাই বেশি জোরাজোরি করল না।সে একমনে কেঁদেই চলেছে।কারন এই কাহীনিটা মেঘলা মেনে নিতে পারছে না।

আকাশঃ আহ কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান টা বন্ধ করবি প্লিজ…অসহ্য লাগছে।

মেঘলাঃ কি হয়েছে আমার সাথে কোন ধারনা আছে তুমার?

আকাশঃ কি আর এমন হয়েছে একটু হাতেই তো দিয়েছে খামছি তো দেয় নি তাই না?

আকাশের কথায় মেঘলার কান্নার আওয়াজ আরো বেড়ে গেল। আকাশ বুঝল চেঁচিয়ে লাভ নেই এই রের্কডার থামবে না।তাই আর কিছু বলল না।
সোজা বাসায় চলে গেল।

কিন্তু বাসায় ঢুকে ঘটল আরেক বিপত্তি আকাশের মা মেঘলাকে দেখেই ক্ষেপে গেল।আর আকাশের ভাবিও মেঘলাকে দেখে অবাক হল।

আকাশের মাঃ এই আপদ টা এখানে কি করছে?
তোর কি কখনো বুদ্ধি হবে না আকাশ? তুই ওকে এখানে কি করে নিয়ে আসলি?

আকাশের ভাবিঃ আকাশের দোষ কি মা দোষ তো হারামজাদির আকাশের মাথাটা একেবারে চিবিয়ে খেয়ে নিয়েছে।বলে বিপাশা এগিয়ে এসে মেঘলার হাত ঝাঁকিয়ে বলল ছেলেটাকে যমের বাড়িতে পাঠাতে চেয়েও তোর স্বাদ মিটে নি? আবার এসেছিস?বের হ বলছি কোন সাহসে এখানে আসলি?

আকাশ চুপচাপ শুনছিল এবার আকাশ বেশ শান্ত ভাবে বলল আমার বউ আমার বাসায় আসবে না তো কোথায় যাবে মা? তোমার আপত্তি থাকলে সেটা অন্য ব্যাপার।তবে বাইরের কোন মহিলা আমার বউ এর গায়ে হাত দেওয়ার সাহস কি করে পায় সেটা বুঝতে পারছি না।

আকাশের মা অবাক হল কারন এতকিছুর পরেও আকাশ মেঘলাকে বউ বলছে।

আকাশঃ দেখো মা তুমি না চাইলে আমাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হবে এই আর কি।তবে বিয়ে আমি মেঘলাকেই করব কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও।

আকাশ বিপাশার দিকে তাকিয়ে বলল আর এই যে মহিলা আপনার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই তাই আমার ব্যাপারে ভবিষ্যতে কথা বলতে আসবেন না আকাশ এতটাও সহ্যশীল না যে সব মেনে নিবে অনেক কিছু সহ্য করছি আর পারব না। আর শুনুন মেঘলার দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস দেখাবেন না।
এই একটা বিষয়ে আমি কোন রকম কম্প্রোমাইজ করব না সারা পৃথিবী এক দিকে আর মেঘলা অন্য দিকে থাকলে আমি ওকেই বেচে নিব।
ও আমাকে মেরেছে আপনাদের না তাই সেটা আমিই বুঝে নিব আপনাদের বুঝতে হবে না।
বলে আকাশ হন হন করে হেঁটে চলে গেল আর হাঁটতে হাঁটতেই বলল ন্যাকামি কান্না ঘরে গিয়ে করলেও হবে নিজের ঘরে যা এখানে দাঁড়িয়ে ডং করতে হবে না।

মেঘলা আসছে না দেখে আকাশ চেঁচিয়ে উঠল কিছু বলছি কথা কানে যাচ্ছে না?

মেঘলা দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেল আকাশও নিজের ঘরে গেল গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মেঘলার জন্য নিজের হাতে খাবার নিয়ে মেঘলার ঘরে গেল।

কিন্তু সেখানে মেঘলা নেই দেখে আকাশ ক্ষেপে গেল।

আকাশঃ আবার পালালি আজ তোকে একবার সামনে পেলে এমন মার মারব জীবনে কোনদিন এমন করার সাহস পাবি না বলে আকাশ যেই বাইরে যেতে নিল তখন ওয়াশরুম থেকে শাওয়ারের আওয়াজ ভেসে আসল।

আকাশঃ যাক ম্যাডাম তাহলে পালান নি কিন্তু এতক্ষন ওয়াশরুমে কি করছে।

আকাশ গিয়ে দরজায় জোরে ধাক্কা দিয়ে বলল সিনেমা করা শেষ হলে বাইরে আয়।

মেঘলার সাড়া নেই।

আকাশঃ ১ থেকে ৩ গুনব এর মধ্যে দরজা না খুললে দরজা ভাংব


.


মেঘলা দরজা খুলতেই ভেজা কাপড়েই মেঘলাকে টেনে বাইরে নিয়ে আসল আকাশ।

আকাশঃপাগল হয়ে গেছিস নাকি?এত রাতে এতক্ষন ধরে কেউ ভিজে?
কি ভেবেছিস পানি ঢালেই পরপরুষের ছোঁয়া মুছে যাবে নাকি?

মেঘলা কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।

আকাশঃ আচ্ছা দাঁড়া আমি মুছে দিচ্ছি বলে আকাশ মেঘলার পেটে হাত ছুঁয়াল আকাশের ছুঁয়ায় মেঘলার অস্বস্তি হল না বরং কেঁপে উঠল। আকাশ আলতো করে হাত বুলাল মেঘলাও চোখ বন্ধ করে নিল।

কিন্তু পরক্ষনেই আকাশঃ এবার যদি ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারি অন্যায় হবে আমার?

আকাশের কথায় মেঘলা বাস্তবে ফিরে আসল।আর লজ্জা পেল।

আকাশঃ টাচ করার জন্য কত কান্না কাটি আর এখন…?? মজা নিচ্ছিস? আর কিছু না বলি ২ মিনিটের মধ্যে চেঞ্জ করবি ফাউল কোথাকার।

মেঘলা লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল আর ড্রেস বদলে নিল।

বেরিয়ে আসার পর আকাশ এসে মেঘলাকে বিছানায় বসিয়ে টাওয়াল নিয়ে মেঘলার মাথা মুছতে লাগল।

আকাশঃ পড়াশুনা আর করবি না মেঘলা?

মেঘলাঃ ও আচ্ছা এই ব্যাপার।
আকাশঃ কি ব্যাপার?
মেঘলাঃ স্বার্থের জন্য আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন মানে পড়াশুনার কথা বলে দল থেকে সরিয়ে দিবেন তাই তো?

আকাশঃ কি…??? আমি নিয়ে এসেছি? আমার খেয়ে কাজ নেই?কোন ছেলে কি না কি করেছে তার জন্য বন্যা বানিয়ে ফেলেছিলি সেজন্য এনেছিলাম তখন ত বুঝিনি আপনিও চোখ বন্ধ করে মজা নিয়েছেন যানলে ছলেটাকে এনে বাসর টা করিয়ে দিতাম যতসব বলে আকাশ উঠে গেল…

আকাশের কথাগুলি মেঘলার সহ্য হল না আবার কেঁদে দিল।

আকাশঃ আহ এটা কবে মানুষ হবে? কই আমি রাগ করলাম আমার রাগ ভাংগাবে তা না কান্না শুরু করে দিয়েছে।কবে যে আমায় একটু বুঝবে উপড়ওয়ালা যানে।মনে মনে

ওই কি হয়েছে এভাবে ঘঁষাঘঁষি করছিস কেন?ছাড় বলছি এভাবে কি ছুঁয়া মুছা যায় নাকি।

মেঘলা পাশে থাকা ফলের ঝুড়ি থেকে ছুরি নিয়ে বলল এবার তো মুছবে?

মেঘলার হাতে ছুরি দেখে আকাশের হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল।

আকাশঃ মেঘলা ক ক কি করছিস থাম আমি রাগে এসব বলেছি সত্যি সত্যি বলি নাই।

মেঘলাঃ আমার চরিত্রে দাগ লেগে গেছে আমি আর বাঁচতে চাই না।

আকাশঃ কিসের দাগ?এগুলা কোন ব্যাপার না।

মেঘলাঃ আমার কাছে অনেক ব্যাপার।একটা ছেলে আমাকে টাচ করল এ জীবন আমি রাখতে চাই না।

আকাশ মুখ ফসকে বলে ফেলল অন্য ছেলে কোথায় আমিই তো।

মেঘলা অবাক হয়ে বলল মানে কি?

আকাশ মাথা নিচু করে বলল লুকিয়ে লাভ নেই মিথ্যা বেশিক্ষন বলতে পারি না হুম আমিই ছিলাম।

মেঘলা ছুরিটা হাতে নিয়ে এগিয়ে এসে বকল কি… বল্লি তুই?

আকাশঃ আরে মারবি নাকি?

মেঘলাঃ তো কি করব? দাঁড়া আজ তোর হচ্ছে…

আকাশঃ আ…. বলেই দৌড়।

মেঘলাঃ দাঁড়া বলছি কি কি করলি এগুলা আমার সাথে?

আকাশঃ তো কি করব সারাদিন আবিরের পিছে পিছে ঘুরতে থাকিস আমার কেমন লাগে বুঝিস না….

মেঘলাঃ তাই বলে এভাবে এমন জায়গায় টাচ করবে…

আকাশঃ তো কি হয়েছে সারা শরীরটাই ত আমার একজায়গায় হাত দিলেই হল।

মেঘলাঃ ছি এত খারাপ তুমি? কত মেয়ের গাঁয়ে এভাবে হাত দিয়েছো?

আকাশঃ জীবনে একটা মেয়ের কাছেই তো যাওয়ার সাহস পাই না আবার অন্য মেয়ে…

আকাশ সুযোগ বুঝে এসে মেঘলার হাত থেকে ছুরিটা নিয়ে নিল।

মেঘলাঃ কেন করলে এমন?

আকাশঃকয়েকটা কথা বলব শুনবি প্লিজ।

মেঘলাঃ বলো।

আকাশ মেঘলাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে মেঘলার পায়ের কাছে হাঁটু ঘেরে বসে মেঘলার হাত ২ টি ধরে বলল তুই তো জানিস আমি তোকে কত ভালবাসি…
বিশ্বাস কর মেঘলা এই রাজনীতি তোর জন্য নয়। দেখ আমাকে কেউ রাস্তা থেকে সরাতে হলে আমার সাথে লড়াই করতে হবে কিন্তু তোকে সরাতে শুধু একটু টাচেই যথেষ্ট। এটাই তোকে বুঝাতে চেয়েছিলাম ছেলেরা যা পারে মেয়েরা পারে না কারন মেয়েরা স্পর্শকাতর।মেয়েদের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা তার সম্মান আর প্র‍তিপক্ষ সবসময় দুর্বল জায়গাতেই আঘাত করে।
আজ আমার জায়গায় অন্য কেউ ও থাকতে পারত তোর সাথে খারাপ কিছু ঘটে গেলে আমি কি করে মানব মেঘলা?তোকে সব সনয় চোখে চোখে রাখা কি আমার পক্ষে সম্ভব তাও যেখানে তুই আমারেই বিপক্ষে কাজ করবি।
দেখ মেঘলা আমি নাবিলকে সরাতে চেয়েছিলাম এটা সত্যি কিন্তু ওর সাথে যা ঘটেছে সেটা একটা এক্সিডেন্ট।আমি এমন টা চাই নি তাই তুই তার শাস্তি আমাকে দিস না মেঘলা। দেখে নিস নাবিল ফিরে আসবে আমাকে সবকিছুর জন্য ক্ষমা করে দে মেঘলা।
এসব ছেড়ে পড়াশুনায় মন দে মেঘলা নাবিলের স্বপ্ন পুরন কর…

আকাশের অনুনয় দেখে মেঘলার চোখ ভিজে গেল।

আকাশ কি সত্যিই মেঘলার ভাল চাইছে নাকি মেঘলাকে সরানোর কোন ফন্দি করেছে????

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।