লাভার নাকি ভিলেন | সিজন – ২ | পর্ব – ২৩

নাবিলঃ মুচকি হেসে সামিরাকে কোলে নিয়ে হাঁটতে লাগল।

কিছুক্ষনের মধ্যেই জনি তার দলবল নিয়ে এসে হাজির হল।
জনি গাড়িতে বসেই হুকুম দিল নাবিলকে মারার।
নাবিল লোকজন দেখে সামিরাকে কোল থেকে নামিয়ে পাশে দাঁড় করিয়ে দিল।

সামিরাঃ এখন নামাচ্ছিস কেন? নে আরো কোলে নে..

নাবিল কিছু না বলে আবারো মুচকি হাসল।

সামিরা বেশ অবাক হল। কি ব্যাপার জনি কে দেখলে সবার কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায় কিন্তু এর চোখে তো ভয়ের কোন ছাপ দেখতে পাচ্ছি না কেন? এত সাহস কোথা থেকে পায়?
সামিরা ভাবনার জগতে থাকতে থাকতেই একটা ছেলে এসে নাবিলকে মারতে চাইল নাবিল ছেলেটার হাত এমনভাবে ধরল যেন কোন হিংস্র প্রানী তার শিকার ধরেছে।
নাবিলের চাহনিতে ক্ষমতার দম্ভ প্রকাশ পাচ্ছে যা দেখে আশে পাশের সবাই অবাক হয়ে গেছে।

সবচেয়ে বেশি অবাক সামিরা আর তার বান্ধবীরা হয়েছে।

নাবিলঃ ভাইয়ের সাথে কথা বলতে দে কেউ মাঝখানে বাঁধা দিতে আসবি না।

জনিও কেন যানি সবাইকে থামিয়ে দিল নাবিল জনির দিকে এগিয়ে গেল জনিও গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে।

আশেপাশের সবাই বুঝে গেছে এখানে এখন খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে কিন্তু নাবিলের চোখে ভয়ের কোন চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না আর জনিও ক্ষেপছে না।

নাবিল জনির দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।
জনিও হাত মিলাল।

নাবিলঃ বলুন ভাই সমস্যা কি মারতে চাইলেন কেন? কি ভাবলেন আমি আপনার প্রেমিকার উপড় খারাপ নজর দিয়েছি বা প্রেমে পড়ে গেছি?
প্রথম কথা মেয়েদের ব্যাপারে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই ২য় কথা অপ্রিয় হলেও সত্যি এই মেয়েটা কোনো ছেলের ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য না।

কথাটা শুনে সামিরা চেঁচিয়ে উঠল।

নাবিল নিচের মুখে আংগুল চেপে রাগি চোখে সামিরার দিকে তাকিয়ে বলল বল্লাম না কথার মাঝখানে কেউ বাঁধা দিবে না।

সামিরাঃ এই ছেলেটা তো জনির চেয়েও বড় গুন্ডা ( মনে মনে)

নাবিলঃ ভাই দেখুন আপনি যদি ম্যাডাম কে ভালবাসেন তাহলে আপনি নিশ্চুই চাইবেন না উনার দিকে কেউ খারাপ চোখে তাকাক।শুনেছি কেউ ম্যাডমের দিকে তাকালে আপনি তাকে যমের বাড়ি পাঠান কিন্তু দোষ ত তার নয় ম্যড্যামের বিড়ালের সামনে মাছ দিয়ে যদি বলেন খাস না বিড়াল কি মানবে? বডি পার্ট বের করে মেয়ে রাস্তায় বের হলে ছেলেরা তাকাবেই।

আপনার পাওয়ারকে ব্যবহার করে ইনি দিন দিন বিগড়ে যাচ্ছে তাই উনার মা আমাকে বলেছেন উনাকে যেন দেখে রাখি আপনি কি চান না আপনার স্ত্রী হোক যাকে সবাই সম্মানের চোখে দেখবে? নাকি চান রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাবে আর ছেলেদের দেখে চোখ মারবে? সিধান্ত আপনার আমাকে জানিয়ে দিয়েন বলে নাবিল হাঁটতে লাগল।

জনি এতক্ষন একটাও কথা বলে নি।
এবার নাবিলকে ডেকে বলল সামিরাকে নিয়ে যাও।
আর আজ থেকে আমাকে আপনি নয় তুমি করে বলবে আর ভাই নয় জনি বলবা ঠিক আছে?

কথাটা শুনে সামিরার বান্ধবিরা যেন আকাশ থেকে পড়ল।

নাবিল একটু হেসে ফিরে এসে সামিরাকে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেল।

জনির দলের একটা ছেলে বলল ভাই এটা কি করলেন? আপনি ছেলেটাকে কিছু বল্লেন না?

জনিঃ ছেলেটার দম আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে এমন একটা কাউকেই তো এতদিন থেকে খুঁজছিলাম আমি ব্যস্ততার জন্য সামিরার দিকে নজর রাখতে পারি না ও দেখে রাখতে পারবে।আর সামিরাকেও মানুষ করতে পারবে।

ছেলেটাঃ কিন্তু….

জনিঃ হা হা হা… উড়তে দে আমার কাজ হয়ে গেলে রাস্তা থেকে সোজা উপড়ে ফেলে দিব।

ছেলেটাঃ মানে….

জনিঃ মৃত্যু নিশ্চিত তবে কিছুদিন পর তোরা এসব বুঝবি না চল কাজে চল বলে জনিও সেখান থেকে চলে গেল।

সামিরার সব কয়টা বান্ধবিই ইতিমধ্যেই নাবিলের attitude এর উপড়ে ক্রাশ খেয়েছে।

শ্রেয়াঃ ছেলেটা দেখতে যেমন হ্যান্ডসাম তেমনি সাহস।তোরা দেখলি মারামারি না করেও কি করে জিতে চলে গেল।এমন ছেলের উপর ক্রাশ না খেয়ে উপায় আছে?








এদিকে মেঘলার আজকে পার্টি অফিসে প্রথম দিন। শপথ বাক্য পাঠ করে সে দলে যোগ দিয়েছে।

কিছুক্ষনের মধ্যেই আকাশ মেঘলাকে অবাক করে দিয়ে একটা এনাউন্স করল।

আকাশঃ লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যানস আমি দলের সিনিয়র হওয়ার ধরুন এই পিচ্ছি মেয়ের যোগদান উপলক্ষে রাতে একটা পার্টির আয়োজন করতে চলেছি আর সবাই সেখানে সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রন যানাচ্ছি।

আকাশের কথায় আবিরো বেশ অবাক হল কারন আকাশ চায় নি মেঘলা রাজনীতিতে আসুক।

মেঘলাঃ তুমি তো চাওনি আমি এসবে আসি তাহলে পার্টি কেন?

আকাশঃ চাই না নাচাই এসে তো গেছিস তাই একটু স্বাগতম না জানালে হয়?

প্রথম দিকে মেঘলা অবাক হলেও পরে বুঝতে পারল আকাশ এখুনো ততটা বদলে যায় নি তাই মেঘলাকে খুশি করতেই পার্টি দিয়েছে।

দেখতে দেখতে সময় কেটে গেল সন্ধ্যা গড়িয়ে গেল।মেঘলা বেশ সাজগোজ করে আবিরের সাথে ক্লাবে গেল কারন আকাশ ক্লাবে পার্টি রেখেছে।

আকাশ বেশ ঝাঁকঝমক ব্যবস্থা করেছে। সবাই মেঘলাকে সবাই welcome যানালো।যদিও আকাশের উপড়ে রাগ আছে তবুও এসব দেখে মেঘলার খুব ভাল লাগছে।কারন মেঘলা নাবিলের বোন হলেও সারাজীবন অবহেলায় বড় হয়েছে।তাকে কেউ কখনো এত সম্মান দেয় নি।

আকাশ মেঘলার জন্য কেক কাটাএ ব্যবস্থাও করেছে।
কেক কাটার পর সবাই যে যার মত এনজয় করা শুরু করল হটাৎ করেই লাইট অফ হয়ে গেল আর রংগিন বাতি জ্বলে উঠল তার সাথে পার্টি সং বাজতে শুরু হল সবাই নাচানাচি শুরু করেছে। সাথে ড্রিংকস করছে

মেঘলা এর আগে কখনো এমন পার্টিতে যায় নি তাই তার কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছে। মেঘলা বারবার আকাশ আর আবিরকে খুঁজছে কিন্তু আদো আলো আদো অন্ধকারে স্বষ্টভাবে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

হটাৎ দেখল আকাশ দূরে কারো সাথে কথা বলছে আর আবির ইরার সাথে নাচছে মনে হচ্ছে তবে এটাই আবির বা আকাশ কিনা সিওর বুঝা যাচ্ছে না।

মেঘলা যখন খুঁজা খুঁজতে ব্যস্ত তখন নিজের কোমরে কারো স্পর্শ অনুভব করল।মেঘলা শাড়ি পড়েছিল তাই কোমরের জায়গাটা খালে ছিল খালি শরীরে অপরিচিত কারোর স্পর্শ পেয়ে মেঘলা আঁতকে উঠল।মেঘলা ঘুরে দেখেতে চাইল কিন্তু হাতের মালিক মেঘলাকে পিছন থেকে আঁশটে পিঁশটে ধরে রেখেছে মেঘলা ঘুরতে পারছে না। স্পর্শটা ক্রমশ স্লাইড করতে শুরু করেছে কোমড় থেকে পেট এমনকি মেঘলার স্পর্শকাতর জায়গাও ছুঁয়ে যাচ্ছে মেঘলা বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।মেঘলার চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়ছে এমন পরিস্থিতে সে কখনো পরে নি। আকাশ মেঘলাকে চুমু খেলেও এমন খারাপ ভাবে কখনো মেঘলার শরীরে হাত দেয় নি আকাশ অন্য কোথাও হাত দেওয়া তো দুর ওর কোমরে কখনো তাকিয়েছে বলেও মেঘলার মনে পরে না।

মেঘলা আকাশ কে এখন অপছন্দ করলেও সবসময় আকাশেই ওকে সব কিছু থেকে রক্ষা করত তাই মেঘলা মনে প্রানে আকাশকে ডাকছে আর কান্না করছে কিন্তু পার্টির বাজনার আওয়াজে মেঘলার কান্নার শব্দ কারো কানে পৌছাল না।কিছুক্ষন পর মেঘলাকে ছেড়ে দিয়ে ছেলেটা চলে গেল।

কিছুক্ষন পর পার্টি শেষ হল।লাইট জ্বলে উঠল।
মেঘলা এক কোণে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।মেঘলাকে নিতে আবির মেঘলার কাছে আসল কিন্তু মেঘলাকে কাঁদতে দেখে আবির অবাক হল।

আবিরঃ মেঘলা তুমি কাঁদছ কেন কি হয়েছে?নাচো নি?

মেঘলা কিছু বলছে না শুধু কাঁদছে।মেঘলা সবসময়েই চাপা স্বভাবের নিজের কষ্ট আকাশ ছাড়া কারো সাথে শেয়ার করত না বা কেউ তার কষ্ট শুনতে চাইত না তাই বলত না।তাই আজ আবিরকেও বলতে পারছে না।

তখন আকাশ আর ইরা সেখানে আসল।
আকাশঃ কি ব্যাপার আবির বাসায় যাস নি? অনেক রাত হয়েছে তো বেরিয়ে পর দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

আকাশ কথাগুলি বলতে বলতে এসে দাঁড়াল আকাশকে দেখেই মেঘলা দৌড়ে গিয়ে আকাশকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল। এমন ভাবে আকাশ কে ধরেছে যেন খুব ভয় পেয়েছে।

আকাশ বুঝতে পারল বিশাল কিছু ঘটেছে তাই ম্যাডাম রাগ ভুলে জড়িয়ে ধরেছে।

আকাশ আবির আর ইরাকে ইশারা করে সেখান থেকে চলে যেতে বলল। আর তারাও চলে গেল।

আকাশ মেঘলার চোখ মুছতে মুছতে বলল
ভয় পেয়েছিস? বল কি হয়েছে?

মেঘলা কান্নার ঠেলায় কিছু বলতে পারছে না শুধু আ আ আ করছে আর ইশারা করে দেখাছে।

আকাশঃ পাগল হয়ে গেছিস নাকি কিসব দেখাচ্ছিস কোমড় পেট এসব কি? লজ্জা সরম ভুলে গেছিস?ঢাক বলছি বলে আকাশ কাপড় টেনে মেঘলার পেট ঢেকে দিল।

মেঘলাঃ আ আ আ….

আকাশঃ বুঝেছি বলতে পারবি না ঠিক আছে থাক বলতে হবে না বলে মেঘলাকে কোলে নিয়ে গিয়ে
আকাশ মেঘলাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল। তারপর পানি আনতে যেতে চাইলে মেঘলা আকাশের হাত চেপে ধরল।

আকাশঃ ছাড় এখন আমি আছি তো আর কিছু হবে না

মেঘলা তবুও ছাড়ল না।
আকাশঃ পাগলি একটা আচ্ছা আয় আমার সাথে বলে মেঘলাকে সাথে নিয়ে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসল তারপর মেঘলাকে পানি খেতে বলল।

মেঘলা এক চুমকে সবটা পানি খেয়ে নিল।

আকাশঃ শরীর খারাপ লাগছে? চোখ মুখে পানি দিবি…??

মেঘলাঃ না….

আকাশঃ এখনো তো সেই ছোট মেঘলাই আছিস তবুও বড় হওয়ার ভাব কেন নেস বল তো? এখন বল কি হয়েছিল?

মেঘলা আবার কেঁদে দিল।

মেঘলাঃ আ আ একটা ছেলে……..

আকাশঃ একটা ছেলে…..

মেঘলাঃ আমাকে…..নিজের কোমরের দিকে ইশারা করল

আকাশঃ তোকে কি করেছে? কোমরে হাত দিয়েছে?

মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে বলল হুম…এখানেও ধরেছে এখানেও….

আকাশঃ হয়েছে হয়েছে আর দেখাতে হবে না বুঝেছি কি করেছে….

মেঘলাঃ আ আমি খারাপ ড্রেস পড়ি নি তো।কেন করল এমন?

আকাশঃ ভালই তো হয়েছে কাঁদছিস কেন? এটা তো মজা পাওয়ার মত বিষয় তুই মজা পাস নি?

মেঘলা অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকাল…

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।