নাবিলের খবর টা শুনে আকাশ কি খুশি হল নাকি দুঃখ পেল সেটা আবিরের বোধগম্য হল না কারন আকাশ রাস্তায় আর একটাও কথা বলে নি।চুপচাপ কি যেন চিন্তা করতে করতে নিজের রুমে চলে গেল।
এদিকে,
আজ নাবিল কে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দিবে সামিরার মা নাবিলের সাথে দেখা করতে হাসপাতালে গেলেন। এই কয়েকদিন সামিরার মা নাবিলের যত্ন নেওয়ায় নাবিলের উনার জন্য একপ্রকার ভাললাগা তৈরি হয়েছে আর সামিরার মাও নাবিলকে অনেক আপন করে নিয়েছেন।
সামিরা মাঃ বাবা তুমি এখন কোথায় যাবে?
নাবিলঃ আন্টি আমি যানি না কোথায় যাব। আসলে আপাতত আমার কিছুই মনে নেই তাই আশে পাশেই কোথাও থাকার জায়গা খুঁজব যতদিন না সব মনে পড়ছে আমি এখানেই থাকব।
সামিরার মা কিছু বলতে যাবে তখনি তার ফোন বেজে উঠল আর ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে তার মন খারাপ হয়ে গেল।
সামিরা মা ফোনের দিকে বারবার তাকাচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে কোন সমস্যা হয়েছে
নাবিলঃ আন্টি কোন সমস্যা?
সামিরার মাঃতোমাকে আর কি বলব বাবা, আমার মেয়েকে তো দেখেছে।
সামিরা খুবি বদ বদ মেজাজি সারাদিন ঝামেলা করতেই থাকে তার উপড় একটা ছেলে ওকে খুব বিরক্ত করে।ওর জন্য এক দন্ড শান্তি পাইনা আমরা। মেয়েটাকে কোথাও একা রেখে নিশ্চিন্তে থাকতে পারি না।এখন ফোন আসায় ভয় পেয়েছিলাম ভেবেছিলাম হয়তো জনি ফোন করেছে।
নাবিলঃম্যাডামে জন্য একটা বডিগার্ড রাখলেই তো পারেন তাহলে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।
সামিরার মাঃ অনেক ট্রাই করেছি কিন্তু পাইনি আর পাবই বা কোথায়? জনির ভয়ে কেউ সামিরার গার্ড হতে চায় না।
নাবিলঃ তাই নাকি? তা কে এই জনি?
সামিরার মাঃ এলাকার এক নাম্বারের গুন্ডা মারামারি চাঁদাবাজিই ওর একমাত্র কাজ।যানো আমাদের একটাই কত স্বপ্ন ওকে নিয়ে কিন্তু আমাদের অর্ধেক স্বপ্ন সামিরা আর বাকি অর্ধেক জনি ভেংগে দিয়েছে।খুব চিন্তা হয় ওর জন্য।সামিরা যদি সবার মত শান্ত শিষ্ট হত তাহলে ওর উপড় জনির নজর পড়ত না। কেন যে এমন হল মেয়েটাকে মানুষ করতে পারি নি বলে সামিরার মা কেঁদে ফেল্ল।
নাবিলঃ আন্টি আমার জন্য অনেক করেছেন আর উচিত তার জন্য কিছু করা (মনে মনে)
চোখ মুছুন আন্টি,আপনার যদি আপত্তি না থাকে আমি ম্যাডামের গার্ড হতে চাই।
সামিরার মাঃ সেতো খুব ভাল কথা কিন্তু এটা যতটা সহজ ভাবছো তত সহজ না সামিরা এটা মানবে না আর জনি তো খুন করে ফেলবে।
নাবিলঃ সেসব নিয়ে আপনি ভাব্বেন না আপনি চান কিনা শুধু সেটা বলুন।সামিরাকে মানুষ করা তো ২ দিনের কাজ আর জনি সেটাও আমি বুঝে নিব।দেখুন আমার যেহেতু যাওয়ার কোন জায়গা নেই তাই আপনি আমাকে চাকরিটা দিলে আমার থাকারও একটা আশ্রয় হবে আর আপনিও নিশ্চিন্ত হতে পারবেন।
সামিরার মাঃ তুমি সত্যিই থাকবে?
নাবিলঃ অবশ্যই আন্টি…
অতঃপর সামিরার মা নাবিলকে নিয়ে বাসায় গেল।
নাবিলকে দেখে সামিরা ক্ষেপে গেল….
সামিরাঃ মা এই ছেলেটা এখানে কেন?
সামিরার মাঃ এই ছেলেটা আবার কি ধরনের সম্মোধন,ভদ্রভাবে কথা বলো আর ও এখন থেকে এই বাসায়ই থাকবে।
সামিরাঃ কি?পাগল হয়েছো নাকি?কেন এখানে কেন থাকবে?
সামিরার মাঃ আমার ইচ্ছা তাই
সামিরাঃ না থাকবে না মা আমি আমার বাসায় কাউকে থাকতে দিব না।ভিখারি কোথাকার আমাদের এখানে আসছে।
নাবিলের রাগ হচ্ছে সেটা সামিরার মা বুঝতে পারল।
সামিরার মাঃ এসো তো বাবা তুমি ভিতরে এসো পাগলের কথায় কান দিয়ে লাভ নেই।
নাবিল তার সাথে ভিতরে গেল বাসা দেখে বুঝা যাচ্ছে সামিরারা বেশ বড় লোক বাসায় সামিরা আর তার মা ছাড়াও কয়েকজন কাজের লোক আছে।
নাবিল গিয়ে সোফায় বসল।
সামিরার মাঃ তুমাকে তো আগেই বল্লাম বাবা…
নাবিলঃ চিন্তা করবেন না আন্টি কয়েকদিন অপেক্ষা করুন মানুষ হয়ে যাবে।
সামিরার মাঃ রাগ করো নি শুনে ভাল লাগল আচ্ছা তোমার তো নিজের নাম মনে নেই তোমাকে কি নামে ডাকা যায় বলোতো।
নাবিলঃ যা খুশি ডাকুন আমার কোন আপত্তি নেই।
সামিরার মাঃ একটা নাম দেওয়া দরকার কি নাম দেয়া যায়…??
সামিরা দুর থেকে বলে উঠল আপদ ছাড়া আর কি।আপদ কে আপদ ডাকলেই হবে।
নাবিল চোখ গরম করে সামিরার দিকে তাকাল
সামিরার মাঃ কি আর বলব ওকে মানুষ করা কারো পক্ষে সম্ভব না।
নাবিলঃ ঠিক হয়ে যাবে আন্টি আমি যাওয়ার আগে ওকে মানুষ বানিয়ে রেখে যাব কথা দিলাম। ছোট মেয়ে তাই বুঝে কম।আপনি শুধু অনুমতি দিন তাহলেই হবে।
সামিরার মাঃ তুমি পারবে বাবা? যা করা দরকার করো মারতে হলে মেরো তাও ওর আচারন টা একটু ঠিক হোক। তুমি যানো ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খায়।
নাবিলঃ কোনো ব্যাপার না আন্টি ঠিক হয়ে যাবে।ছাড়ুন এসব আমার নাম দিবেন বলছিলেন…
সামিরার মাঃ তোমাকে এখন থেকে অরন্য ডাকব।
নাবিলঃ ঠিক আছে আন্টি।
সামিরার মা কাজের মেয়েকে ডেকে বলল নাবিলকে উপড়ে ঘর খুলে দিতে। যাও বাবা ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
কাজের মেয়ে যেতে চাইলে
নাবিল বলল দাঁড়ান…
সামিরার মাঃ কি হল?
নাবিলঃ ম্যাডাম কোথায় থাকেন?
সামিরার মাঃ উপরে কেন?
নাবিলঃ আপনি খুব সরল আন্টি তাই বুঝেন না দেখুন অপরিচিত কাউকে এত বিশ্বাস করা ঠিক না আর ম্যাডাম যেহেতু উপড়ে থাকে আর উনি যুবতি তাই একটা ছেলেকে পাশাপাশি ঘরে থাকতে দেওয়া উচিত না। আমাকে নিচে কোন রুম দিন আন্টি। যানেন তো আগুন আর ঘী পাশাপাশি রাখতে নেই।
সামিরার মা নাবিলের কথায় অবাক হল।
এই যুগেও এমন ছেলে আছে? এমন একটা ছেলেই তো খুঁজছিলাম যে কিনা জনির হাত থেকে সামিরাকে বাঁচাবে সামিরাকে মানুষ করবে। অরন্যেই সেই ছেলে।
আচ্ছা অরন্য তুমি তাহলে যাও নিজের ঘরে যাও।
নাবিল কাজের মেয়ের সাথে ঘরে চলে গেল।
নাবিল নিজের ঘরে বসে বসে চিন্তা করছে।
নাবিলঃ মা বাবা কেমন আছে? মেঘলাটাই বা কেমন আছে কে যানে আকাশ ওদের উপড় অত্যাচার করে নি তো?
না আকাশ যতই খারাপ হক মা বাবা মেঘলার কোন ক্ষতি করবে না ওর যত জেদ ছিল সব তো আমার সাথে ছিল। তবুও খোঁজ নিতে হবে।
নাবিল যখন চিন্তায় মগ্ন তখন সামিরা রুমে আসল।
নাবিল সামিরাকে দেখে বলে উঠল আজব আপনি না বলে ঘরে ঢুকলেন কেন?
সামিরাঃ এই ইডিয়েট বাসাটা আমার আমি কোথায় যাব তোর কাছে জিজ্ঞাস করতে হবে?
নাবিলঃ তুই এটা আবার কেমন কথা ভদ্রতা বলতে কিছু শিখেন নি?
সামিরাঃ এই চুপ একদম চুপ… শোনো তোমাকে আমার সহ্য হয় না কোন আপদ কে আমি আমার বাসায় থাকতে দিব না।
নাবিলঃ শুধু বাসায় থাকব তাই না এখন থেকে তোমাকে আমার কথায় উঠতে হবে আমার কথায় বসতে হবে।
সামিরাঃ শুনেছি মা বলেছে তাই বলছি বাঁচতে চাইলে চলে যাও।
নাবিলঃ আমি কি করব সেটা আমি বুঝব এখান থেকে যাও এখন।
সামিরাঃ এই তুমি আমাকে হুকুম করছো?
নাবিলঃ মার খাওয়ার ইচ্ছা না থাকলে যাও বলে নাবল সামিরাকে বের করে দিয়ে নিজে আবার নিজের চিন্তায় ডুব দিল।
নাবিলঃ আমাকে ফিরে যেতে হবে যদিও আমি বিশ্বাস করি আকাশ আমার পরিবারের কোন ক্ষতি করবে না তবুও যেতে হবে নিজে একটু ফিট হয়েই ফিরে যাব তার আগে এই জনির একটা ব্যবস্থা করে যাব আন্টি আমার জন্য অনেক করেছেন তাই তার জন্য আমার এইটুকু করা উচিত।
।
।
।
।
এদিকে আকাশও মেঘলার চিন্তায় মগ্ন কারন মেঘলা পড়াশুনা বাদ দিয়ে প্রতিশোধের নেশায় মেতে উঠেছে।
আকাশঃ মেঘলাকে আমার আটকাতে হবে আমি নাবিলকে জেলে পাঠাতে চেয়েছিলাম ঠিকি কিন্তু এই অবস্থা করতে চাইনি আমি জানি নাবিল ফিরবে এত সহজে হেরে যাওয়ার মত দুর্বল নাবিল নয় কিন্তু ও ফিরার আগেই মেঘলা তার নিজের জীবনটার ১২ টা বাজিয়ে দিবে মনে হচ্ছে আমার ওকে আটকাতে হবে ওকে বুঝাতে হবে এখন ওর পড়াশুনা করার সময় রাজনোতি করার সময় নয়।
ভাবতে ভাবতে আকাশ ঘুমের দেশে পাড়ি দিল।
।
।
।
।
।
।
মেঘলাও আবিরের বাসায় ভালই ছিল কিন্তু আজ তাদের মাঝে কিছু প্রবলেম হচ্ছে।
আবিরঃ দেখো মেঘলা তোমাকে আমি আশ্রয় দিয়েছি তাই আমার কথামত চলা তোমার দায়িত্ব।আমি বলছি তুমি এসব রাজনীতিতে যাবে না আমি যেতে দিব না।
মেঘলাঃ আমি যা বলি তাই করি…আমাকে বলে লাভ নেই।
আবিরঃ তাই বলে আমাদের বিরোধী দল? তোমাকে মারতে ওদের ২ মিনিট সময় ও লাগবে না বুঝেছো? নাবিল ভাইকে দেখে বুঝতে পারছো না?
মেঘলাঃ মরলে মরব তাও আমি লড়াই করব।
আবিরঃ আমি তোমাকে এসব করতে দিব না দরকার হলে পায়ে শিকল দিয়ে রাখব।
মেঘলাঃ আমাকে আটকানোর ক্ষমতা কারোর নেই। আমি দেখতে চাই আকাশ কতটা নিচে নামতে পারে।
আবিরঃ দেখতে থাকো তবে সেটা ঘরের ভিতর থেকে। আজ থেকে এই ঘরের বাইরে যাওয়া নিষেধ দেখি তুমি কিভাবে বাইরে যাও বলে আবির বাইরে থেকে দরজা লক করে দিল।
মেঘলাঃ দরজা খুলো আমি বাইরে যাব…দরকার হলে আমি এখানে থাকব না তবুও আমি বন্দি থাকব না।খুলো বলছি।
আবিরঃ রাজনীতির ভুত মাথা থেকে নামুক তারপর খুলব।
মেঘলাঃ লাত্তি মারব তোমাকে….
আবিরঃ কি করবে…
মেঘলাঃ খুন করে ফেলব…
আবিরঃ শুনতে পাই নি
মেঘলাঃ জানুয়ার একবার বের হতে দে তারপর দেখিস কি করি আমি।
আবিরঃ পড়তে বসো… পড়া ছাড়া আর কোনো শব্দ শুনতে চাই না।
মেঘলাঃ তোই পড় তোর শ্বশুরের দাদি কে পড়া।পড়ার গোস্টি কিলাই।
আবির দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে বলল কি হয়েছে?
মেঘলা মুখ ভোঁতা করে বলল আমি রাজনীতি করব…
আবিরঃ আমি কে হই তোমার? কেউ না তোমার জন্য আমার কোন মায়া দয়া নেই বুঝেছো আমার সাথে রাগ দেখিয়ে লাভ নেই আমার কথা না শুনলে তোমাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে
চলো এখন খেয়ে এসে পড়তে বসবে
মেঘলাঃ আমি খাবও না পড়বও না।
আবিরঃ ছেলেরা গায়ে হাত দিলে মজা পাও?
মেঘলাঃ মানে কি?
আবিরঃ এই যে বলছো খেতে যাবে না মানে কি চাইছো তোমাকে আমি কোলে করে নিয়ে যাই তাইনা?
মেঘলা হা করে তাকিয়ে আছে।
আবিরঃ নিজে যাবে নাকি কোলে নিব?
মেঘলাঃ যাচ্ছি যাচ্ছি….
আবির বসে থেকে মেঘলার খাওয়া দেখল তারপর নিজে বসে থেকে মেঘলাকে পড়াল।
আবিরঃ এবার লক্ষি মেয়ের মত ঘুমাও আর কখনো যেন রাজনীতির কথা মুখে না শুনি বলে আবির চলে গেল।
মেঘলাঃ ফাউল ছেলে দেখ এবার আমি কি করি রাতেই আমি এখান থেকে পালাব।