লাভার নাকি ভিলেন | পর্ব – ২৯

আকাশঃ মেঘলা এই মেঘলা… হারামজাদি কুটনি বুড়ি উঠ বলছি….

এত ডাকার পরেও মেঘলার ঘুম ভাংগার নাম নেই
কিছুক্ষন পর আধো আধো ঘুমে মেঘলা চোখ খুলে তাকাল কিন্তু কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না।
আকাশঃ উঠ বলছি….
মেঘলাঃ এই তো শোয়েছি এখুনি সকাল হয়ে গেল কি করে?
আকাশঃ সকাল হয় নি, আমার চা খেতে ইচ্ছা হয়েছে…উঠ গিয়ে যা চা বানা।
মেঘলা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল মনে হয় আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। রাত ২ টা বাজে কেউ চা খায় নাকি? নিচে চিনি আছে শরবত বানিয়ে খেয়ে ফেলুন তাহলে মাথা ঠান্ডা হয়ে যাবে।
আকাশঃ আমাকে কি তোর জোকার মনে হচ্ছে? মজা করিস আমার সাথে ফাযিল মেয়ে…
মেঘলাঃ যান তো এখান থেকে, আমাকে ঘুমাতে দিন…
আকাশঃ আমি যে ঘুমাতে পারছি না সেটা কি তোর চোখে পরছে না?
মেঘলাঃ চা খেলে আরও ঘুমাতে পারবেন না।
আকাশঃ তাহলে শরবত বানিয়ে দে।
মেঘলাঃ আমার খুব ঘুম পাচ্ছে তো…
আকাশঃ পানি ঢেলে দিলেই আর ঘুম পাবে না দিব নাকি?
আপনার জীবনেও ভাল হবে না বলতে বলতে আকাশের দিকে ২ হাত বাড়িয়ে দিল মেঘলা।
আকাশঃ কি করব? হাত ২ টা ভেংগে দিব নাকি?
মেঘলাঃ যতসব আজেবাজে কথা কোলে নিন…নাহলে নিচে যাব কি করে পায়ে ব্যাথা তো??
আকাশঃ যন্ত্রনা… আচ্ছা কি আর করা যাবে চল নিয়ে যাচ্ছি…
আকাশ মেঘলাকে কোলে নিয়ে নিচে গেল…
এই মুটকি কে কোলে করে আনার চেয়ে তো নিজে করে খাওয়ায় ভাল ছিল…
মেঘলাঃ আপনি যে আমার ঘুম ভাংগানোর জন্য নিয়ে এসেছেন বুঝি না মনে করেছেন? দেখেন এবার আপনাকে আমিও কেমন মজা বোঝাই? (মনে মনে)
এই খবরদার আজেবাজে কথা বলবেন না আমি মোটেও মুটকি না। নিজের শরীরে শক্তি নেই আবার আমাকে বলছে আমি নাকি মোটা…
আকাশঃ হইছে চুপ থাক…
মেঘলাকে নিয়ে আকাশ টেবিলে বসিয়ে দিল মেঘলা টেবিলে বসে বসে আকাশ কে অর্ডার দিচ্ছে।
মেঘলাঃ এই যে শুনোন, রান্না ঘরে ছুড়ি আছে আর ফ্রিজে লেবু এনে কেটে দিন। লবন আর চিনিটাও নিয়ে আসুন।
আকাশঃ একটা থাপ্পড় মারব আমি এসব করব কেন? তুই কর…
মেঘলাঃ তাহলে কোলে করে নিয়ে যান আমি নিয়ে আসছি।
আকাশঃএই মোটকি কে কোলে নেওয়ার চেয়ে নিজে করে নেওয়া ভাল। কিন্তু সব আমি করলে তিনি করবেনটা কি খোদা জানে?
মেঘলাঃ আপনি তো একটা গাধা তাই চিনি পানি একসাথে মিশাতে পারেন না। চিনি গুলতে আমাকে নিয়ে আসলেন।
আকাশঃ তোর সাথে সময় কাটাতে যে আমার ভাল লাগে সেটা তুই বোঝিস না মেঘলা( মনে মনে)
এই ডাইনী আমাকে কথা শুনানোর সাহস পাস কোথা থেকে?
মেঘলাঃ উফফ… যান তো সবকিছু নিয়ে আসুন আমার ঘুম পাচ্ছে খুব।
আকাশ বাধ্য হয়ে সবকিছু এনে দিল।
মেঘলাঃ এক বয়াম মরিচ আর মুটো ভর্তি লবন দিতে পাড়লে বেশ ভাল হত (মনে মনে)
আকাশঃ পরিমান টা একটু কম হয়ে গেল না?
মেঘলাঃ কিসের?
আকাশঃ লবন আর মরিচের…
মেঘলাঃ কি সাংঘাতিক ব্যাপার আপনি সত্যি আমার কথা বোঝে ফেলেন কি করে?
আকাশঃ শুধু আমি না সবাই বোঝবে।
কুটটি বুড়ি তো এসবেই চিন্তা করবে তাই না?
মেঘলা বিড়বিড় করতে করতে সরবত বানিয়ে আকাশ কে দিয়ে বলল নিন খেয়ে উদ্ধার করুন..
আকাশ খেয়ে চলে যেতে চাইল,
মেঘলা বলে উঠল ওমা একা একা কোথায় যাচ্ছেন আমাকে নিয়ে যাবে না?
আকাশ তাছিল্যের হাসি দিয়ে বলল আমি কি তোর বডিগার্ড নাকি যে তোকে কোলে করে ঘুরে বেড়াব? ইচ্ছা করে আমাকে দিয়ে কাজ করিয়েছিস আমি কি বোঝি নি?
আর আগে তোকে দরকার ছিল তাই নিয়ে এসেছিলাম ছিলাম এখন আর নিয়ে যাওয়ার দরকার মনে করিছি না…বসে বসে ঘুমা এখানে
মেঘলাঃ ভাইয়া এই ভাইয়া একটু শুনুন না…. আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আমাকে নিয়ে যান প্লিজ এখানে খুব ঠান্ডা কি করে ঘুমাব।
আকাশ হাসতে হাসতে চলে গেল।
মেঘলাঃ আস্ত একটা ভিলেন হয়েছেন। আমি আপনাকে অভিশাপ দিব হুম….
আকাশঃ আমি কোলে করে নিয়ে গেলে তুই সুস্থ কি করে হবি? আমি রেখে চলে এসেছি তাই এখন একা একাই আসার চেস্টা করবি।জানি কস্ট হবে। চেস্টা করলেই হাঁটতে পাড়বি কিন্তু সুস্থ হয়ে যাবি
(মনে মনে)
মেঘলা আকাশ কে ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে নিজেই হাঁটার চেস্টা করল কিন্তু প্রথমেই পরে গেল হাঁটতে পারল না। আবার চেস্টা করল তারপর একটু একটু করে হাঁটতে লাগল। এখন আর আগের মত ব্যাথা লাগছে না তাই একটা একটা করে সিঁড়ি পার হল। কিন্তু ঘুমে তার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে সে রুম পর্যন্ত আর যেতে পারল না ঘরের বাইরেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
আকাশ মেঘলার কান্ড দেখে অবাক হল। আজব এভাবে কোন মানুষ ঘুমাতে পারে? এভাবেই যদি ঘুমাবি তাহলে এত কস্ট করে উপড়ে আসলি কেন যতসব ফাযলামি।
আসলে আমাকে শান্তি দিবি না এটাই বড় কথা। আকাশ রাগ করতে করতে গিয়ে মেঘলাকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিল তারপর আঘাতের জায়গায় মলম লাগাতে শুরু করল। মলম দেওয়ার পর মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। কিন্তু মেঘলা তা দেখতে পাচ্ছে না কারন সে গভীর ঘুমে আছন্ন।
আকাশঃ কি আজব এভাবে কেউ ঘুমাতে পাড়ে এত কিছু করছি তাও টের পাচ্ছে না?ঘুমাচ্ছে নাকি ঘুমের অভিনয় করছে? কিন্তু দেখে তো মনে হচ্ছে সত্যিই ঘুমোচ্ছে অভিনয় তো মনে হচ্ছে না। কিন্তু যদি অভিনয় হয়….
না না ওকে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না যে আমি এখনো ওর প্রতি দুর্বল। এখান থেকে এখনি চলে যেতে হবে বলেই আকাশ চলে গেল।
পরদিন সকালে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে মেঘলা অবাক হল। তারপর উঠতে গিয়ে দেখল ব্যাথাও অনেক কমে গেছে হাঁটতে কস্ট হচ্ছে না তাও সে বিছানায় বসে থাকল।
কিছুক্ষন পর এক প্লেট খাবার নিয়ে মেঘলার ঘরে আসল আকাশ।
আকাশঃ ভুলেও চিন্তা ভাবিস না যে আমি তোকে আদর করে খাওয়াতে এসেছি। একদমি তা না আজ আমার বউ আসবে আর তার সব কাজ তোকে করতে হবে তাই ওষধ দিতে এসেছি। তাড়াতাড়ি যেন সুস্থ হতে পাড়িস তাই ন্যাকামি না করে চুপচাপ খা।
মেঘলাঃ খাব না… কি করবেন?
আকাশঃ কি আবার করব? অবশ্যই থাপ্পড় মারব… আমার এত সময় নেই যে বলব সোনা মনা খাও প্লিজ..
মেঘলাঃ আমাকে সোনা মনা বল্লেও খাব না,
আকাশঃ হারামজাদি খা বলছি….
মেঘলাঃ উহু…
আকাশ সত্যি সত্যি মেঘলাকে থাপ্পড় মারল…
মেঘলাঃ আহ আগে তো এত জোরে মারতেন না এখন এত মারেন কেন?
আকাশঃ আবার বাড়তি কথা বলছিস? খেতে বলছি না?আকাশ মেঘলার মুখ চেপে ধরে খাবার দিয়ে দিল।
মেঘলাঃ ইয়াক…. খাব না আমি, বমি পাচ্ছে….
আকাশঃ তাই নাকি বিয়ের আগেই বাচ্চার মা হয়ে যাচ্ছিস? ভাল,ভাল খুবি ভাল কিন্তু বাচ্চার বাবাকে চিনিস তো? নাকি কার বাচ্চা সেটাও গুলিয়ে ফেলেছিস? অবশ্য জানবি কি করে তোর ত আর একটা আশিকি না অনেকগুলি আশিকি কবে কার সাথে ছিলি কি করে মনে রাখবি?
মেঘলাঃ ছি…কিসব বাজে কথা বলছেন?আমি বলছি খাবারটা ভাল লাগছে না তাই বমি পাচ্ছে…
যাতা বলতে থাকেন মুখে একটুও আটকায় না।
আকাশ মেঘলার কয়েকটা চুল ধরে আস্তে করে টেনে বলল আবার কথা বলছিস? নিচের দিকে তাকিয়ে খা বলছি…
মেঘলার খাওয়ার কোন লক্ষন নেই দেখে আকাশ নিজের হাতেই মেঘলাকে জোর করে খাইয়ে দিল তারপর ওষধ খাইয়ে ঘর থেকে চলে গেল।
মেঘলাঃ এমন আচারন থাকলে জীবনেও কোন মেয়ে প্রেমে পড়বে নাকি? ভাল করে বল্লেই তো খেতাম। খচ্চর ভিলেন একটা।
মেঘলা ঘরে শুয়েছিল কিছুক্ষন পর নিচে হাসির আওয়াজ শুনে মেঘলা ঘর থেকে বেড়িয়ে দেখল, সত্যি সত্যিই ইরা এসে হাজির।
ইরার খুশি যেন আর ধরছে না…আকাশ ও প্রচুর খুশি ইরা আসতে না আসতেই তাকে নিয়ে হুলস্থুল শুরু করে দিয়েছে আকাশ।
আকাশ গলা ছেড়ে ডাকতে শুরু করল।
মেঘলা…..মেঘলা আরে এই ডাইনি মেঘলা কোথায় তুই?এত ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না?
মেঘলা উপড় থেকে আকাশ আর ইরার কাজকর্ম দেখছিল আকাশ যে তাকে ডাকছে সেটাও শুনছে কিন্তু ইচ্ছা করেই নিচে নামছে না।
মেঘলাঃ দুনিয়ায় কি মেয়ের অভাব পড়ছিল যে এই সাকচুন্নিটাকে বিয়ে করতে হবে…?? আমার একদম পছন্দ না এই ফাউল মেয়েটাকে। অন্য কেউ যদি বউ হতো ভাল হত…
(মনে মনে)
আকাশঃ আরে এই মেঘলার বাচ্চা মেঘলা… যদি শরীরের হাঁড়গুলি ভাংগতে না চাস এক্ষুনি নিচে আয়…
মেঘলা এবার নিচে আসল।
মেঘলাঃ সমস্যা কি বাড়িতে ডাকাত এসেছে মনে হচ্ছে?
ইরাঃ তোমার এত বড় সাহস আমাকে তুমি ডাকাত বলছো?
মেঘলাঃ দিন দুপুরে বাসায় ডাকাত আসবে না সেটা বোঝেছিলাম কিন্তু কোন জঞ্জাল যে এসেছে সেটা তো বোঝতেই পেরেছি।
আকাশঃবওই কাকে কি বলছিস?ইরা আমার হবু বউ। এত সাহস কি করে হয় আমার বউ কে তুই জঞ্জাল বলিস?
মেঘলাঃ আজব তো আমার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই নাকি?আমি কেন কাউকে কিছু বলব?
আসলে বউ বাড়িতে আসলে সবাই খুশি হয় শুনেছি কিন্তু আপনি যেভাবে চেঁচাচ্ছেন শুধু আমি না যে কেউ শুনলে ভাববে বাড়িতে ডাকাত পড়েছে। মেঘলা ইরার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটল
আকাশঃ বাহ বাহ… তারমানে মেঘলা ম্যাডাম এই ইরাকে সহ্য করতে পাড়ছে না। তারমানে উনি আমার প্রতি দুর্বল কিন্তু স্বীকার করতে চান না। তাহলে তো এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে হয়। কাঁটা দিয়েই আমি কাঁটা তুলব মেঘলা। আমি তোকে স্বীকার করিয়ে ছাড়ব তুই আমাকে ভালবাসিস।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।