আকাশ একটা থাপ্পড় মারল…
লাভার নাকি ভিলেন | পর্ব – ২২
মেঘলা যেই গালে হাত দিতে যাবে আকাশ তার হাত ধরে বলল মেহেদী নস্ট হলে মেরে ফেলব।
মেঘলাঃ মারলেন কেন?মিথ্যা কি বলেছি এনগেইজম্যান্ট আর বিয়ের মধ্যে পার্থক্য কি?
আকাশঃ গাছে ফুল হওয়া আর ফল হওয়ার মাঝে যে পার্থক্য বিয়ে আর এনগেইজমেন্ট এ ঠিক তেমন পার্থক্য।
মেঘলাঃ বোঝলাম না…
আকাশঃ বোঝার কথাও না। তুই যে পরিমান মাথা মোটা… তুই কিছু বোঝবি এটা যে ভাববে সেও একটা গাধা…. শোন গাছে ফুল যতগুলি ফোটে ততগুলি ফল হয় না। ফল হয় তার অর্ধেক।
এবারো বোঝিস নি তাই না, আচ্ছা তুই দাঁড়া আমি দরজা টা লাগিয়ে এসে দেখাচ্ছি বিয়ের পর কি কি করা যায় আর বিয়ের আগে কি কি করা যায় না। তাহলেই পার্থক্য টা বোঝবি।
মেঘলাঃ দরজা লাগানোর কি দরকার?
আকাশঃ এখন তোর সাথে যা যা হবে সেসব তো দরজা খুলে করা যায় না তাই দরজা লক করতে হবে…
মেঘলাঃ মানে কি?
আকাশঃ বিয়ের পর একটা ছেলে একটা মেয়ের সাথে কি কি করতে পারে সেটাই দেখাব এখন…
মেঘলাঃ ছি…!!! কি খারাপ আপনি….!!
আকাশঃ যাই হোক বোঝতে পেরেছিস তাহলে…যাক এবার মেইন কথায় আসি আজ থেকে প্রায় ২ বছর আগে, আমি তখন ১ম বর্ষে পড়ি, রাজনীতিতে নতুন ঢুকেছি তাই মারামারি টা একটু বেশিই করতাম তার জন্য প্রতিদিন কলেজে যেতাম, একদিন কলেজ থেকে বাসায় ফিড়ে দেখলাম বাসায় বেশ সাজ সাজ রব বোঝলাম না কি ব্যাপার? বাসায় ফিরার কিছুক্ষন পর জানতে পাড়লাম আমার নাকি বিয়ে তাও আবার ইরার সাথে। ইরার বাবা বিদেশে চলে যাবেন তাই তাড়াতাড়ি করে বিয়ে দিতে চায় আর আমি রাজনীতির জন্য সারাদিন মারামারি করি তাই বাসা থেকে চাচ্ছিল আমি বিয়ে করে সংসারি হয়ে মারামারি ছেড়ে দেই। আমার রাজনীতি করা বাসায় কারো ভাল লাগত না তাই বিয়ের ব্যবস্থা করেছে আমি রাজি হব না জন্যে আমাকে আগে থেকে জানানো হয় নি আমি যতক্ষনে জানলাম ততক্ষনে বিয়ের সব আয়োজন করা শেষ। শপিং করাও শেষ আত্নীয়রা আসা শুরু করে দিয়েছে কি করব বোঝতে পারছিলাম না তখন তুই কেবল নাইনে পড়িস আর তুই কি অবস্থায় আছিস সেটাও জানতাম না।
কিন্তু তোর জন্য আমার ভালবাসাটা ঠিকি ছিল তাই আমি বলি লুকিয়ে বিয়ে করব না বন্ধু বান্ধব কেউ জানে না এটা কমন বিয়ে? কেউ মানতে চাচ্ছিল না পরে আমি বলি এনগেইজমেন্ট করে রাখো পরে না হয় বিয়ে হবে। অনেক কষ্টে সেদিন বিয়েটা আটকে ছিলাম কিন্তু বিয়ের শপিং সহ আত্নীয় দের দাওয়াত দেওয়া হয়ে গিয়েছিল তাই এনগেজমেন্ট টা আটকানো সম্ভব হয়নি এনগেজমেন্ট হয়েছিল আর আমরাও বিয়ের বর বউ এর মত সেজেছিলাম ছবি তুলেছিলাম কিন্তু বিয়েটা আমি করি নি শুধুমাত্র তোর জন্য। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে বিয়েটা করলেই ভাল হত অন্তত কেউ দুশ্চরিত্র তো বলতে পারতো না।
মেঘলা এবার চুপ হয়ে গেল….
মেঘলাঃ আমি কি এসব জানতাম নাকি? কি যে করি নিজেই জানি না এখন তো ভারী ভেজাল হল আকাশ ভাই তো রেগে গেছে…
আকাশঃ তুই তো ঘর থেকে যাবি না জানি বলেও লাভ নেই তাই আমি নিজেই চলে যাচ্ছি কেউ জিজ্ঞেস করলে বলিস রাতে ফিরব না…
মেঘলাঃ ভাইয়া তো রেগে গেছে চলেও যাচ্ছে এখন যদি চলে যায় আর ফিরবে কিনা সন্দেহ আছে বিয়েতেও হয়ত থাকবে না যে জেদ উনার…যেতে দিলে হবে না থামাতে হবে…যেভাবেই কিছু একটা করতে হবে….(মনে মনে)
আকাশ চলে যাচ্ছে তখন পিছন থেকে মেঘলা বলে উঠল খুব ক্ষুদা পেয়েছে… কেউ যদি একটু খায়িয়ে দিত।
আকাশ বিরক্তি নিয়ে মেগলার দিকে তাকিয়ে বলল নিজের হাত কি হয়েছে?
মেঘলাঃ আমি এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না…
আকাশঃ কি…???
মেঘলাঃ একজন বলেছে মেহেদি নষ্ট হলে মেরে ফেলবে…
আকাশ শয়তানি হাসি দিয়ে বলল সত্যি মেহেদী নষ্ট করবি না?? যদি কথা দিস তাহলে খায়িয়ে দিব।
মেঘলাঃ আরে কোনভাবে আপনাকে আটকাতে পারলেই হয় (মনে মনে)
হুম পাক্কা কথা দিচ্ছি।
আকাশঃ জানিস মেঘলা এই মেহেদী না খুব কাজের জিনিস এখন থেকে প্রতিমাসে তোকে মেহেদী কিনে দিব…
মেঘলাঃ কেন প্রতিমাসে মেহেদী পরলে কি কাজ হবে?
আকাশ দরজাটা লক করে মেঘলার কাছে গিয়ে বলল এই দেখ আমি এখন তোর সাথে যা যা করব তুই বাঁধা দিতে পারবি না ভাল হবে না?
মেঘলাঃ মানে কি… এ না আপনি কিছু করবেন না…
আকাশঃ কথা দিয়েছিস মেহেদী নষ্ট করবি না এমনি তো তোকে টাচ করলেই সাপের মত কিলবল করতে থাকিস আজ তা পারবি না এই সুযোগ আর কখনো পাব কিনা কে জানে বলেই মেঘলার ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিল।
মেঘলা বাঁধা দিতে পাড়ছে না। আকাশ মেঘলার কোমর জড়িয়ে ধরে ঠোঁটের স্বাদ গ্রহনে মত্ত হয়ে উঠেছে।
মেঘলা মনে মনে ভাবছে কি বোকা আমি না বোঝেই কথা দিয়ে দিয়েছি…
কিছুক্ষন পর আকাশ মেঘলাকে ছেরে দিয়ে বলল এই মেহেদীর যে এতগুন আগে জানলে মেহেদীর ফ্যাক্টরি দিতাম।
মেঘলাঃ অসভ্য ছেলে….
আকাশ হাসতে হাসতে খাবার হাতে নিয়ে মেঘলাকে খায়িয়ে দিল।
মেঘলাও খেয়ে নিল।
রাতে সুমি আর মেঘলা আকাশের ঘরে ঘুমাল আর আকাশ একই ঘরে সোফায়….
কিন্তু মাঝরাতে আকাশের ঘুম ভেংগে গেল।
সে রীতিমতো ভয়ে পেয়ে গেল….
আকাশ তার বুকের উপড়ে ভাড়ি কিছু একটা অনুভব করল সাথেসাথে সে ফোনের ফ্লেশ অন করল।
কিন্তু যা দেখল তাতে সে হতবাক হয়ে গেল কারন সে দেখলো তার উপড়ে মেঘলা শুয়ে আছে।
আকাশ ধমক দিতেও পারছে না কারন ধমকে যদি সুমি জেগে যায় আর সুমি এই অবস্থায় ওদের দেখলে মান সম্মান থাকবে না আর কিছু না বলেও পারছে না।
কিন্তু এদিকে মেঘলা গভীর ঘুমে আছন্ন।
আকাশঃ এর কি একটুও বুদ্ধি নেই? কখন এসেছে এখানে?মেঘলা এই মেঘলা উঠ…কি করছিস এসব? ফিসফিস করে…
কিছুক্ষন ডাকার পর
মেঘলা আকাশের বুকে থেকেই আরমোড় ভেংগে বলল কি হয়েছে?
আকাশঃ এখানে কি করছিস?
মেঘলাঃ ঘুমাচ্ছি…
আকাশঃ এখানে কেন?
মেঘলাঃ ইচ্ছা হয়েছে…
আকাশঃ কেউ দেখলে কি করবে বোঝ?
মেঘলাঃ আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে আর কি হবে? আর যাই হয়ে যাক পরে হবে এখন তো হচ্ছে না।
সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করব? এত বোকা আমি না।
আকাশঃ কি বুদ্ধির সাগর রে…. কিছুটা ধমক দিয়ে বকল উঠ বলছি নিজের জায়গায় গিয়ে ঘুমা।
মেঘলাঃ আমার জায়গাতেই আছি চুপ থাকেন তো শুধু শুধু কথা বলে লাভ নেই আমি এখানেই থাকব থাপ্পড় মারলেও যাব না…
আকাশঃ কিন্তু মেঘলা…
মেঘলাঃ কোন কিন্তু না ঘুমান তো
আকাশঃ উফফ এই মেয়েকে কিভাবে বোঝাব….
মেঘলাঃ বোঝাতে কে বলল ঘুমাতে দিবেন কি?
আকাশঃ জ্বি ম্যাডাম আপনি ঘুমান আমার ঘুম তো হারাম করে দিয়েছেন।
মেঘলাঃ ধন্যবাদ তবে আমি মাত্র ৫০ কেজি আমাকে নিয়ে ঘুমানো টা এতও কষ্টকর নয় চাইলেই আপনিও ঘুমাতে পারেন… যাই হোক গুড নাইট…
মেঘলা তো আপন মনে ঘুমাল কিন্তু আকাশ টেনশানে ঘুমাতে পারল না সারারাত মেঘলাকে দেখে দেখেই কাটিয়ে দিল। তার টেনশান হলেও ভালও লেগেছে মেঘলার এমন আচারনে সে খুশিই হল।
ভোরের আলো ফোটার আগেই আকাশ মেঘলাকে বিছানায় রেখে বাইরে চলে গেল…..
ঘুম ভেংগে মেঘলা নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করল তারপর সে উঠে বাড়ির কাজে লেগে পড়ল। আকাশের কথা আর মনে নেই।
বেলা ১ টা বাজে আকাশ কে বাড়ির কোথাও দেখা যাচ্ছে না মেঘলা এদিক ওদিক সব জায়গায় খুজে দেখল কিন্তু আকাশ কোথাও নেই।
মেঘলাঃ কোন কি বড় ভুল করেছি? আকাশ কি রাগ করে কোথাও চলে গেছে?