ইট পাটকেল | পর্ব – ৪৪

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গোলাম ইশতিয়াক ভিতু চোখে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। একটা চেয়ারে হাত পা বেধে বসিয়ে রাখা হয়েছে তাকে। পড়নে একটা সাদা ট্রাউজার আর সেন্ডো গেঞ্জি। এসির মধ্যেও দরদর করে ঘেমে যাচ্ছে সে। রুমের মধ্য বিশ জন অ*স্রধারি লোক দাঁড়িয়ে আছে। সাদা পাঞ্জাবি তে আয়াহমিন কে অসম্ভব সুন্দর লাগে। তাই হয়তো সে সব সময় শুভ্র পাঞ্জাবিতে নিজেকে আবৃত করে রাখে।
গোলাম ইশতিয়াকের সামনে আয়েসি ভঙ্গিতে বসে আছে আশমিন। পায়ের উপর পা তুলে দুই হাত মাথার নিচে দিয়ে সিলিংয়ের দিকে মুক করে বসে আছে। সানভি ষষ্ঠ বারের মতো হাই তুলে ক্লান্ত চোখে তাকালো গোলাম ইশতিয়াকের দিকে। আশমিন বিরক্ত হয়ে চোখ খুললো। সানভির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
— এতো ঘনঘন হাই তুলছ কেন? জানো না অতিরিক্ত হাই তোলা আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না? তাই হাই তোলার পর আস্তাগফিরুল্লাহ পড়বে। পড়ো,”আস্তাগফিরুল্লাহ”
সানভি মলিন মুখে পড়লো
— আস্তাগফিরুল্লাহ।
আশমিন বিরক্ত চোখে তাকালো গোলাম ইশতিয়াকের দিকে। হাতের থাকা গা*নের নল দিয়ে কপাল চুলকে শান্ত গলায় বলল,
— কেমন আছেন ইশতিয়াক সাহেব? শরীর স্বাস্থ্য ভালো? দিনকাল কেমন চলে? রাতে বিরিয়ানি কেমন ছিল? আমি পাঠিয়েছি৷ পুরান ঢাকার বিখ্যাত কাচ্চি। গুনলাম আপনি দুই প্লেট খেয়েছেন? সত্যি নাকি? এজন্যই তো এতো বড় ভুড়ি। কমোড ভেঙে পড়লে কি হবে ভেবে দেখেছেন? আপনার বাথরুম ই যদি আপনার হাতে সেফ না থাকে তাহলে জনগণ কিভাবে সেফ থাকবে বলুন তো?
সানভি হতাশ চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে গেলো! আশমিন সোজা হয়ে বসে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
— এর চেয়ে বেশি ফর্মালিটি করার মুড না ধৈর্য কোনটাই আমার নেই বুড়ো। তারাতাড়ি ঢাকনা খোল আর তোর ভিতরের আবর্জনা বের কর।আমিও দেখি তোর ভিতরে কতটা নর্দমা আছে৷ একটা ও যাতে তোর পেটের ভিতর অবশিষ্ট না থাকে। তাহলে তোর ঢোলের মতো পেট লাথি মেরে ফাটিয়ে কথা বের করবো। নে শুরু কর।
গোলাম ইশতিয়াক ভরকে গেলেন।মন্ত্রী পরিষদ এমনকি দলের সবাই আশমিন কে শান্ত গম্ভীর হিসেবেই চেনে। রেগে গেলেও সে ঠান্ডা মাথায় কথা বলে। আজ আশমিনের এমন ভাষা শুনে শুধু গোলাম ইশতিয়াক ই নয় সানভি ও অবাক হয়েছে।
গোলাম ইশতিয়াককে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আশমিন সত্যি সত্যি তার পেট বরাবর নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে এক লা*থি মারলো। কাঠের চেয়ার ভেঙে নিচে পরলো ইশতিয়াক।
ব্যথায় কুকিয়ে উঠল সামান্য। মুখ দিয়ে গলগল করে র*ক্ত বের হচ্ছে। দুজন গার্ড এসে আবার বসিয়ে দিল তাকে। আশমিনের শান্ত চেহারা রক্তিম আকার ধারণ করেছে। শিকারী চোখ জোড়া দিয়ে হিংস্র বাঘের মতো তাকিয়ে আছে সামনের মানুষ টার দিকে।
আশমিন তার দিকে ঝুকে গলা চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলল,
— আমার পরিবারের দিকে হাত বাড়ানোর আগে নিজে বাচার ব্যবস্থা করা উচিত ছিল না? এখন তোর কি হবে? ক্ষমতা আর টাকা নিয়ে কবরে যাবি? দেখা তোর ক্ষমতা। নিয়ে আয় তোর টাকা। দেখ বাচতে পারিস কি না। আমার মেয়েদের আঘাত করেছিস! আমার ভালবাসা আজও জীবন মৃত্যুর মাঝে ঝুলে আছে। প্রতিদিন যন্ত্রণায় নীল হয়ে যায় ও। তাকাতে পারিনা ওর দিকে। বুকটা পুড়ে যায়। বুঝিস তুই?
ইশতিয়াকের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে জান বের হয়ে যাবে নিশ্চিত।
আশমিন ছেড়ে দিলো। শান্ত ভঙ্গিমায় গিয়ে আবার চেয়ারে বসে পরলো। ইশতিয়াক কাশতে কাশতে নিচে বসে পরেছে। সানভি তার দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো। পানি পেতেই ঢকঢক করে খেয়ে নিলো সে। আশমিন এখনো নীরব চোখে তাকিয়ে আছে। ইশতিয়াক সেদিকে তাকিয়ে কাপা কাপা গলায় বলল,
— মিসেস চৌধুরীর সাথে আমার ডিল হয়েছিল।তার জোগাড় করা মেয়েগুলো কে পাচার করতে সাহায্য করলে আমাকে মোটা অংকের একটা কমিশন দেয়া হবে। গত পাচ বছর যাবত আমি তাকে সাহায্য করছিলাম। কিন্তু এর মধ্যেই আপনি সব কিছু জেনে ফেললেন। লাস্টবার যখন মেয়েগুলো কে উদ্ধার করলেন তখন আমাদের অনেক লস হয়েছিল।বিদেশি পার্টি থেকে কোটি কোটি টাকা নেয়া হয়েছিল। তাই মেয়ে দিতে না পারায় তারা খুব চাপ দিচ্ছিল। মিসেস চৌধুরী কে না পেয়ে সেই টাকা তারা আমার কাছ থেকে নিয়েছে। দিতে অস্বীকার করেছিলাম।
এতে তারা আমার মেয়েটাকে মে*রে ফেললো। তাই বাধ্য হয়েই দিতে হলো। নাহলে আমার ছেলেটা কে ও মে*রে ফেলতো।টাকা আর মেয়ে হারিয়ে আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।আপনাকে বরবাদ করতে চাইছিলাম। সেই সুযোগ করে দিলো আপনার শ্বাশুড়ি। সে চাইতো আপনার সন্তান আর আপনাকে সরিয়ে দিতে।আপনার মায়ের জন্য তার সারা জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। সে তার স্বামী কে হারিয়েছে।তাই প্রতিশোধ নিতে চাইছিল সে। বাড়ির সমস্ত ইনফরমেশন সে আমাকে দিতো। সে জানতো না আমি নূর কেও আক্রমণ করবো। আমি আপনার মেয়ে কে আঘাত করিনি। আপনার মেয়েকে নাফিসা শিকদার আঘাত করেছে। মায়া বেগম কে লারা মেরেছে। আমি শুধু নূর,,
আর কিছু বলতে পারলো না ইশতিয়াক। আশমিন তার কপাল বরাবর শু*ট করে দিয়েছে। চোখ দিয়ে আগুন বেরুচ্ছে ওর। আবার ধোকা! আশমন ইশতিয়াকের দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
— নূর নয়,ম্যাম বলা উচিত ছিল ইউ স্কা*উন্ড্রেল।
গান টা সানভির হাতে দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
— এটা ওর হাতে ধরিয়ে দাও।পারফেক্ট সুইসাইড লাগা চাই।
সানভি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। আশমিন ফোন কানে নিয়ে বলল,
— সব কয়টা কে উপরে পাঠিয়ে দাও অমি।
একটা ও জেনে বেচে না ফেরে। কাজ শেষ করে আধঘন্টায় আমার গোডাউনে দেখা করো।
অমি আচ্ছা বলে ফোন কেটে দিলো। সে এতক্ষণ আশমিনের অনুমতির অপেক্ষায় ছিল।আশিয়ান তার দিকেই তাকিয়ে। অমি ইশারায় সায় জানাতেই আশিয়ান ক্রুর হাসলো। পুলিশ কমিশনার আর তার চেলাদের দিকে তাকিয়ে ক্ষুব্ধ গলায় বলল,
— কার কলিজায় হাত দিয়েছিস জানিস? মিনিস্টার আশমিন জায়িন চৌধুরীর বউ,মাফিয়াআশিয়ান শিকদার আর ভেজালমুক্ত অমি শিকদারের বোন আর
ভাগ্নীর দিকে। তোদের আর বেচে থেকে কি হবে? ম*রে যা।
পরপর কয়েকটা গু*লি তে কাজ শেষ করে বেরিয়ে গেল আশিয়ান আর অমি।
জঙ্গলের সামনে গাড়ি দাড় করিয়ে রেখেছে আশমিন। বুকের ব্যথা আজ আবার বেড়েছে। সে যাকেই মা বলে ডাকে সেই কেন এমন বিনাশিনী হয়ে উঠে! তার মা ডাকটাই কি বিষাক্ত?
গাড়ি থেকে বেরিয়ে টলমল পায়ে হেটে চলে জঙলের গভীরে।শেষরাত চলছে এখন।অনেকটা ভিতরে ঢুকতেই একটা খালি জায়গায় এসে থামলো আশমিন। আশেপাশেই কোথাও শেয়াল ডাকছে। আশমিন টান হয়ে শুয়ে পরলো ঘাসের উপর। পাশের হালকা ঢিবির মতো উচু জায়গাটা জরিয়ে ধরে ধরা গলায় গুনগুন করে গাইলো,
ওই চাদের টিপে মন ভরে না মা,,,
দোলনা দোলে মন দোলে না মা,,
রাতের চোখে ঘুম যে নামে,,
চাদের পাশে মেঘ যে থামে,,
আমার পাশে নেই তো তুমি মা,,
তোমায় ছাড়া ঘুম আসে না মা,,
ডুকরে কেদে উঠলো আশমিন। মা বলে কয়েকবার ডেকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো কামিনী চৌধুরীর কবর। শুভ্র পাঞ্জাবি কবরের মাটিতে মাখামাখি হয়ে গেলো। আশমিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে দুই হাতে কবরের ঘাস পাতা পরিস্কার করতে লাগলো। মাঝে মাঝে হাত থামিয়ে জরিয়ে রইলো কিছুক্ষন। কষ্টে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। তার ভাগ্যটা কেন এমন! কেন বারবার আপন মানুষ গুলো তাকে আঘাত করে! যাদের আগলে রাখার কথা তারাই কেন ক্ষতবিক্ষত করে দেয়?
(আলহামদুলিল্লাহ। আপাতত একটু সুস্থ আছি। যারা এখন এই ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হন নি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি,খুবই সাবধানে থাকুন। এই জ্বর আধমরা করে দেয়।আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া জ্বর কমিয়ে দেয়ার জন্য। আমি আজ কতদিন ভাত খেতে পারিনা হিসেব নেই। এখনো খাবার পেটে পরে না।শুধু পানির উপর বেচে আছি। দোয়া করবেন সবাই।গল্পের আর কয়েক পর্ব আছে। খুব শীঘ্রই শেষ হবে গল্প। এতো ভালবাসা দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন। সাবধানে থাকুন।)

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।