ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে চলছে এখন , দুইদিন পরেই নতুন বছরের আগমন। কালকের পরই এই বছরের সমাপ্তি , ৩৬৫ দিন আর ১২ টা মাসের সমাপ্তি। সুদেষ্ণার পাড়ায় বেশ হইচই চলছে , “৩১ ডিসেম্বর” নিয়ে । পুরো পাড়া বেলুন আর ঝারবাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে, কালকে সুদেষ্ণাদের পাড়ায় ফিস্ট আছে । সবাই মিলে একসাথে নুতন বছরের আগমনে আনন্দ করবে,,,,, তারপর খাওয়া-দাওয়া,নাচ-গান তো আছেই। সুদেষ্ণা এখন নিজের বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে সবাই কে দেখছে, সবাই কতো আনন্দ নিয়ে মিলেমিশে কাজ করছে । সুদেষ্ণার এতে অবশ্য কোনো মাথা ব্যাথা নেই, তার এখন আর কোলাহল ভালো লাগে না। সুদেষ্ণার কোনো নিরিবিলি স্থানে বসে থাকতে ভালো লাগে,,,,, পাখি, গাছপালা, মানুষ, যানবাহন এই সব দেখতে ভালো লাগে। এই সব ভাবনার মধ্যে সুদেষ্ণার ফোনটা স্বশব্দে বেজে উঠলো । সুদেষ্ণা নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো, ঘরের ভেতরে গিয়ে ফোন হাতে নিলো। ততক্ষণে ফোন কেটে গেছে,,,,, আবার রিং হলো। স্ক্রিনে হিমাদ্রর নামটা ভেসে উঠলো। সুদেষ্ণা ফোন রিসিভ করলো না। গুনে গুনে পাঁচটা মিসকল এলো , সুদেষ্ণা একটাও রিসিভ করেনি। এবার টুংটাং শব্দে মেসেজ এলো , হিমাদ্র পাঠিয়েছে। সুদেষ্ণা মেসেজ সিন করলো,,,,,,,,,,
“তুমি আমার ফোন রিসিভ করবে ? না আমি তোমার রুমে আসবো । আমি তোমার বাড়ির নীচেই আছি , আসতে বেশি সময় লাগবে না কিন্তু।
হিমাদ্রর মেসেজ দেখে সুদেষ্ণার বুকে ধ্রিম ধ্রিম শব্দ হতে লাগলো, সুদেষ্ণা বেলকোনিতে গিয়ে তাকালো নীচের দিকে। তাদের বাড়ির বাম দিকে একটু দূরে হিমাদ্রর গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, গাড়ির কাচ থেকে আবছা আবছা হিমাদ্রকে দেখা যাচ্ছে । আবার সুদেষ্ণার ফোন বেজে উঠলো, এবার সুদেষ্ণা কাঁপা হাতে ফোন তুলে কানে নিলো ।
হিমাদ্রির বেশ গম্ভীর গলায় বললো, “তোমার দুঃখবিলাস শেষ হলে নীচে নামো । আমি অপেক্ষা করছি।
হিমাদ্রর কথায় সুদেষ্ণা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো । সুদেষ্ণা এর আগে চন্দ্রবিলাস , বৃষ্টিবিলাস শুনেছে,,,,,, তবে দুঃখবিলাস এই প্রথম শুনলো। সুদেষ্ণা কিছু বলবে তার আগেই হিমাদ্রির বলে উঠলো,,,
“আমি আঙ্কেলের থেকে পারমিশন নিয়েছি , তুমি রেডি হয়ে নীচে নামো । আমার কাছে বেশি সময় নেই।
এবার সুদেষ্ণা মুখ খুললো,,,,,, বেশ রাগি গলায় বললো, “আমি ব্যস্ত আছি , আপনি চলে যান ।
হিমাদ্র একটু চুপ থেকে করুন গলায় বললো, ” প্লিস । তোমার বেশি সময় নষ্ট করবো না । কিছু দরকারি কথা ছিলো।
সুদেষ্ণা ছোট্ট করে বললো, “আসছি।
হিমাদ্ররা যে দিন সুদেষ্ণাদের বাড়ি এসেছিলো সেই দিনই সুদেষ্ণার হিমাদ্রর সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিলো । সেই দিনের পর সুদেষ্ণা আর হিমাদ্রর বাড়ির লোকের আসা-যাওয়া হয়েছে, তবে তাদের কথা পর্যন্ত হয়নি। হিমাদ্র আবশ্য যোগাযোগের চেষ্টা করেছে , সুদেষ্ণা লজ্জায় আর ফোন রিসিভ করেনি। চুমুর কথা সুদেষ্ণা আজও ভুলতে পারেনি , যখন চোখ বন্ধ করছে তখন হিমাদ্রর মুখ ভেসে উঠছে । সেই ঘটনার পর অনেক দিনই সুদেষ্ণা ভালো মতো ঘুমাতে পারিনি। সুদেষ্ণা মারাত্মক লজ্জা পেয়েছিলো ওই ঘটনায়। হিমাদ্র যে এত দুষ্টু সুদেষ্ণার তা জানা ছিলো না । সেই দিন হিমাদ্ররা যাওয়ার পর আননোন নম্বর থেকে কল এসেছিলো,ওটা হিমাদ্রই করেছিলো । সেটা অবশ্য সুদেষ্ণা জানতো না, রিসিভ করার পর বুঝলো । কল যখন রিসিভ করলো হিমাদ্রর কন্ঠে ভেসে এলো,,,,,,,
“এখনো দাঁড়িয়ে আছো যে , বসে একটু নিঃশ্বাস নাও । এটুকুতে এই অবস্থা বিয়ের পর কী করবে ?
সুদেষ্ণা হতবম্ব , কি শুনছে এই সব । গম্ভীর হিমাদ্র এই সব বলছে সুদেষ্ণার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে । পরমূহুর্তে বিয়ের কথা শুনে সুদেষ্ণার কান গরম হয়ে এলো লজ্জায়। চিবুক নামিয়ে নিলো তৎক্ষণাত । সুদেষ্ণা লজ্জায় আর কিছু বললো না ।
হিমাদ্র সুদেষ্ণার কোনো শব্দ না পেয়ে আবার বললো , “রাগ করেছো পদ্মফুল? তোমার অনুমতি ব্যতীত তোমাকে স্পর্শ করায় ।
“পদ্মফুল ” এই শব্দটা সুদেষ্ণার কাছে বেশ মোহনীয় শোনালো । এই নামে তাকে কেউ কখনো সম্বোধন করেনি । সুদেষ্ণার সারা শরীর শিরশির করে উঠলো। ভালোলাগায় মনটা ভরে উঠলো সুদেষ্ণার। উওেজনায় গলা থেকে শব্দ বেরোলো না।
হিমাদ্র হয়তো সুদেষ্ণার অবস্থা বুঝলো।তাই উওরের আশা না করে আবার বললো, “ তুমি যখন পুরোটাই আমার তাই অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম না । হিমাদ্র একটু থেমে আবার বললো , “এখন আপাতত রাখছি, পরে ফোন করবো ,,,,,,, নিজের খেয়াল রাখবে ।
ফোন কেটে দিলো হিমাদ্র , সুদেষ্ণা ফোনটা বুকের মাঝে নিয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো । তার প্রচুর শ্বাস কষ্ট হচ্ছে । সুদেষ্ণা ভাবতে পারিনি হিমাদ্র কখনো তাকে এরকম বলবে । সুদেষ্ণার পুরো শরীর কাঁপছে , বুকে ঢাক-ঢোলের শব্দতো আছেই । সুদেষ্ণা হিমাদ্রর কথা গুলো ভেবে লজ্জায় মুখ ঢেকে নিলো । সে আর হিমাদ্রর সামনে যেতে পারবে না , তার দিকে হয়তো তাকাতেও পারবে না । হিমাদ্রর কথা ভেবে সেই রাতে সুদেষ্ণার আর ঘুমানো হলো না ।
————————————————————————-
সুদেষ্ণা রেডি হয়ে নীচে নামলো , তার দিদিভাই সুদিতিকে নিয়ে টিভি দেখছে । সুদেষ্ণা রান্না ঘরে গেলো মাকে বলে বেরোনোর সময় তার দিভাই বললো, ” কোথায় যাচ্ছিস ছোটো??
সুদেষ্ণা মিথ্যে বললো, ” স্নেহাদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি । সুদেষ্ণা মা কেও একই কথা বলেছে । নাহলে সবাই কী ভাববে,,,,,,।
সুতৃষ্ণা চোখ ছোটো ছোটো করে তাকালো আর বললো, “ থাক হয়েছে আর মিথ্যে বলতে হবে না । হিমাদ্র বাবাকে ফোন করে যখন বলছিলো আমরা এখানেই ছিলাম।
এবার সুদেষ্ণা বেশ লজ্জা পেলো । তার দিনটাই খারাপ সবাই লজ্জা দিচ্ছে । হিমাদ্র বাবাকে জানিয়েছে ব্যাপারটা মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছিলো । মাও জানে আর সুদেষ্ণা মাকে মিথ্যে বললো ব্যাপারটা লজ্জাজনক বটে ।
সুতৃষ্ণা নিজের বোনের অবস্থা বুঝতে পেরে বললো, “ অনেক লজ্জা পেয়েছিস এবার মা হিমাদ্র অপেক্ষা করছে । আমি দেখা করে এলাম । কত করে বললাম ঘরে আসতে এলো না , ওর অনেক কাজ আছে । আবার জানিস কি বলেছে,,,,,
বলেছে, “ তোমার বোনকে যেই দিন আমার নামে করে দেবে সেই দিনই তোমাদের বাড়ি যাবো । সুতৃষ্ণা হেঁসে হেঁসে আবার বললো, “ ভাগ্য করে এমন বর পাচ্ছিস ।
সুদেষ্ণা মুচকি হেঁসে বেরিয়ে পড়লো।
————————————————————————–
সুদেষ্ণা হিমাদ্রর গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো । হিমাদ্র দরজা খুলে দিলে সুদেষ্ণা ভেতরে বসলো । সুদেষ্ণা হিমাদ্রর দিকে না তাকিয়ে সিটবেল্ট বাঁধায় মনোযোগ দিলো । ওমনি হিমাদ্রর কন্ঠ কানে এলো,,,,,,,,
“তুমি বড্ড পোড়াও আমাকে । তুমি রিভেঞ্জ নিচ্ছো আমার থেকে,,,,,,,, তাই না ?
সুদেষ্ণা হিমাদ্রর দিকে চোখ ছোটো ছোটো করে তাকালো আর বললো, “ আমি আবার কী করলাম? আর কীসের রিভেঞ্জের কথা বলছেন ?
হিমাদ্র এবার বেশ নরম গলায় বললো,,,,,,,,
চলবে,,,