ডিসেম্বর মাসের অর্ধেক দিন কেটে গেছে আরও কয়েকদিন পরই নতুন বছরের শুরু । আগে নতুন বছর নিয়ে বেশ আনন্দ থাকতো সুদেষ্ণার মনে কিন্তু বড়ো হওয়ার পর ব্যাপারটা আর নেই। এখনকার ডিসেম্বর আগের মতো সুন্দর নেই। আগে ডিসেম্বর মানেই ছুটি, ঘোরাঘুরি আর এখন ডিসেম্বর মানেই পরীক্ষা। আগে নতুন বছর মানে নতুন ক্লাস , নতুন বই-খাতা কিন্তু এখন আর সেই গুলো কোথায়। পিকনিকের পর কেটে গেছে বেশ কয়েক দিন, সেই দিনের পর কারোর সাথেই আর তেমন দেখা হয়নি তবে ফোনে কথা হয়েছে। সেই দিন সবাই অনেক মজা করেছে,,,,,, তবে সুদেষ্ণার একটু মন খারাপ হয়েছিলো। হিমাদ্র সেই দিন অনেক বারই কথা বলার চেষ্টা করেছে তবে সুদেষ্ণা প্রতিবারই ইগনোর করেছে । তবে সুদেষ্ণার নিজেরই খারাপ লেগেছে, তার পর আর হিমাদ্রর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ওই সব কথা ছেড়ে সুদেষ্ণা আজকের ঘটনায় মনোযোগ দিলো,আজকে সুদেষ্ণার মেজাজ বেজায় চটে আছে তার মায়ের ওপর । আজকে সুদেষ্ণাদের বাড়িতে কোনো আত্মীয় আসবে মনে হয়, তবে কারা আসবে জানে না সুদেষ্ণা। তবে রাগটা আত্মীয় নিয়ে নয় রাগটা হচ্ছে তাকে ঘুম থেকে তোলা নিয়ে। কোন সাতসকালে সুদেষ্ণাকে ঘুম থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে আর রান্না ঘরে কাজও করানো হয়েছে, এতে বেজায় বিরক্ত সুদেষ্ণা। তবে একটা কথা ভেবে বেশ খুশি সুদেষ্ণা,,,,,,, তা হলো তার দিভাই আসছে, সুদেষ্ণার বাবা আনতে গেছে তাদের …… এখন আসছেই হবে। সুদেষ্ণার তো ভেবেই আনন্দ লাগছে আবার কতো দিন পর পুচকুটার সাথে দেখা হবে । সুদেষ্ণা এতো আনন্দর মধ্যে ফ্রেস হওয়ার কথা মাথা থেকে বেরিয়েই গেছিলো। সুদেষ্ণা জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো,,,,,,,,,
————————————————————————–
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সুদেষ্ণা চিৎকার করে উঠলো,,,,,,, বিছানায় তার দিভাই আর পুচকি বসে আছে বিছানায়। সুদেষ্ণা এগিয়ে গেলো তার পুচকির কাছে গিয়েই কোলে তুলে নিলো আর অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিলো ছোটো মুখখানা।
বাহ রে , সুদিতি তোর সব বল ??? আমি তো আর কেউ না ,,,,,,,,, বলেই সুতৃষ্ণা দরজার দিকে হাটা দিলো ।
সুদেষ্ণা পুচকুকে বিছানায় বসিয়ে ছুটে তার দিভাইকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো আর বললো,,,,,,, এই দিভাই তোকেও ভালোবাসি তো কিন্তু পুচকুর থেকে একটু কম ।
সুতৃষ্ণা সুদেষ্ণার হাত ধরে সামনে আনলো আর বললো,,,,,,,,, থাক হয়েছে, আর মাখন লাগাতে হবে না।এখন খাবি চল মা ডাকছে ।
সুদেষ্ণা মুখ ছোটো করে বললো,,,,,, আমি সত্যি বলছি তো দিভাই।
সুতৃষ্ণা এবার হেঁসে দিলো , তারপর একহাত দিয়ে আলিঙ্গন করে বললো জানি আমি । এবার চল মা-বাবা, রাহুল অপেক্ষা করছে।
হ্যাঁ চল,,,,,, ।
————————————————————————–
বেলা সাড়ে দশটা তখন , সুদেষ্ণা আর সুতৃষ্ণা বসে আছে ছাদে আর আচার খাচ্ছে । তারা শীতকালের এই মিষ্টি রোদ বেশ উপভোগ করছে , সুতৃষ্ণা সুদেষ্ণাকে জোর করে ছাদে এনেছে । সুদিতি তার দাদুর কাছে আছে , আর রাহুল গেছে বাজার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে । সুদেষ্ণার মা রান্না ঘরে ব্যস্ত , সুতৃষ্ণা অবশ্য সাহায্য করতে চেয়েছিল কিন্তু তার মা তাকে কাজ করতে দেননি। সুতৃষ্ণার মায়ের মতে,,,,,, মেয়ে তার শ্বশুর বাড়িতে তো কাজই করে এখানে একটু রেস্টে থাকুক না। সুতৃষ্ণা বসে বসে কী আর করতো,,,,,,তাই সুদেষ্ণাকে ছাদে এনেছে গল্প করার জন্য।
এই সু বলতো আজকে কারা আসবে ????
জানি না,,,,,, সুদেষ্ণা মুখে আচার পুরে দিয়ে বললো।
বলতো আমি আজকে কেনো এসেছি??
আমাদের সাথে দেখা করতে,,,,, তাই তো ?? অনেক দিন আমাদেরকে দেখা হয়নি তাই তোর মন খারাপ ছিলো,,,,,, তাই তো ??
না,,,,,,,।
তো,,,,,,??
তোকে আজকে ছেলে দেখতে আসবে , বিয়ে হয়তো তার সাথেই হবে । তাই আমিও এসেছি। বাবা তোকে এই কথাটা কীভাবে বলবে বুঝতে পারছিলো না তাই আমাকে তোকে বোঝাতে বললো ।
সুদেষ্ণা তাকিয়ে রইলো তার দিভাইয়ের পানে , কিছু বললো না। সুদেষ্ণা বুঝতে পারছে না তাকে কীরকম রিয়্যাক্ট করা উচিৎ। তার তো পড়াশোনাও কমপ্লিট হলো না আর এখনই বিয়ে।
সুতৃষ্ণা হয়তো বুঝলো তার বোনের মনের অবস্থা , তাই কাঁধে একটা হাত রাখলো। কেননা একটা সময় তারও এরকম এসেছিলো। তবে তখন তার ভরসাযোগ্য কোনো হাত ছিলো না । সুতৃষ্ণা সুদেষ্ণার কাঁধে হালকা চাপ দিয়ে বললো,,,,,,,এটাই নিয়তি সু,,,,,, মেনে নিলে ভালো হয় । প্রতিটা মেয়েকেই একদিন না একদিন বিয়ে করতেই হয় ।
আমার পড়াশোনা,,,,,,,? সুদেষ্ণা নিজের কান্না গিলে নিয়ে বললো,,,,,,,।
চলবে,,,,