হৃদ রোগ | পর্ব – ১৮

দুপুর আড়াইটে তখন , সূর্যের আলোর প্রখরতা খুব একটা নেই বললেই চলে। শীতকালে সূর্যের আলো গায়ে মাখতে বেশ ভালোই লাগছে । সুদেষ্ণারা বসে এখন আড্ডা দিচ্ছে আর মাঝে মধ্যে বাচ্চাদের দৌড়-ঝাঁপ দেখছে । বাচ্চাগুলোর তো খেয়াল রাখতে হবে , বড়োরা কয়দিকেই বা সামলাবে । সুদেষ্ণাদের একটু আগেই খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ হয়েছে, এখন বড়োরা খেতে বসেছে আর পরিবেশন করছে অনিকরা। ছোটোরা তো সেই কখনই খেয়েদেয়ে টোটো কম্পানি হয়ে টই’টই’ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে । ছোটো গুলো এখন কানামাছি খেলছে, তাদের দেখতে সুদেষ্ণার বেশ ভালোই লাগছে। একটা সময় তারাও তো খেলতো , সেই দিনগুলো খুব সুন্দর ছিলো। সুদেষ্ণার ভাবনার মাঝেই অনু বললো,,,,,,
আমার না বেশি খাওয়া উচিৎ হয়নি,,,,, এখন আমার মনে হচ্ছে বাড়িও যেতে পারবো কি না সন্দেহ।
অনুর কথায় সবাই বেশ বিরক্তি নিয়ে অনুর দিকে তাকালো, কেননা খাওয়ার সময় বার-বার করে ওকে বারন করা হয়েছে বেশি না খাওয়ার জন্য। অনু খাদ্যরসিক মানুষ, ও খেতে প্রচুর ভালোবাসে । যদি অনুর থেকে কোনো কাজ আদায় করার থাকে তো ওকে শুধু আইসক্রিমের লোভ দেখালে ও সব করে দেবে । অনু খাওয়ার সময় কিছু ভাবে না তবে খাওয়ার পর ওকে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া মু্স্কিল । একবার তো অনুর বেশি খেয়ে প্রচন্ড শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। তখন তারা ক্লাস ৯ এ পড়তো । কথা হয়েছিলো যে , টিউশান থেকে তিনজনে চাউমিন খেতে যাবে,,,, তো সেইদিন অনু নিজের কোন আত্মীয়র অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে খেয়েদেয়ে পড়তে এসেছিলো ওই বিকেল ৫ টা নাগাদ । আগে সুদেষ্ণারা ম্যাথ টিউশান যেতো বিকেল ৫ টা’ আর ছুটি হতো ওই সাতটা নাগাদ । সেই দিন ও অনুকে বারন করা হচ্ছিলো,,,,,, যে থাক অন্য দিন খাবো কিন্তু অনুতো নাছোড়বান্দা। শেষমেষ চাউমিন খাওয়া হয়েছিলো আর খাওয়ার পর বাড়ি যাওয়ার পথে অনু পুরো বমি করে ভাসিয়ে দিয়েছিলো । তারপর ওকে তো বাড়ি নিয়ে যাওয়া যাচ্ছিলো না, তবু কোনোক্রমে ওকে বাড়ি পর্যন্ত ছেড়ে আসা হয়েছিলো । তার পরেও অনেক দিনই অনুর শরীর খারাপ ছিলো ।
ভাই তুই নিজের শরীরের অবস্থা দেখে তো খাবি,,,,,, ওতো খাওয়ার দরকার কি যখন তোর শরীর নিতে পারে না। তাছাড়া, নিজের ভালো তুই বুঝবি না?? নিজের ভালো তো পাগলেও বোঝে,,,,,,,,, স্নেহা বেশ রাগ নিয়েই বললো ।
হ্যাঁ, আমি তাই নিজের ভালো বুঝি না কারন আমি পাগল নয় ,,,,,,,,,,,,,, অনু দাঁত কেলিয়ে বললো।
তোর থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা যায় না,,,,,,, স্নেহা মুখ বেঁকিয়ে বললো।
আচ্ছা, ওইসব কথা বাদ দে,,,,,, আগে এটা বল রিয়াদির দাদাটা হেব্বি না ??? মালটাকে এতো দিন দেখিনি কেন বলতো???
অনিকের দাদা রুদ্রিক দাও উপস্থিত এই ফ্যামিলি পিকনিকে । রিয়াদি রুদ্রিকদার গার্লফ্রেন্ড হওয়ায় ওদের ফ্যামিলিরও আসার কথা ছিলো কিন্তু তারা কোনো কারনে আসতে পারিনি। তাই রিয়াদি আর ওনার দাদা রিয়ান পিকনিকে উপস্থিত হয়েছে । দাদাটা বেশ ভালো,ব্যবহারও অমায়িক। এই অল্প সময়ে বেশ সবার সাথে মিশে গেছে। দাদাটা কলেজের লেকচারার, দেখতে সুন্দর আর স্মার্ট । তাই তো অনু একটা বড়োসড়ো ক্রাস খেয়ে বসে আছে ।
ছিঃ, মুখের কি ভাষা,,,,,,,,, ভদ্র ভাবে কথা বলতে পারিস না ?? তোর বাড়িতে দাদা , ভাই নেই ? তাদের কেও মাল বলিস??,,,,,,,, কেয়া মুখ বেঁকিয়ে বললো।
বাবা রে , কে বলছে,,,,,,, নিজে যেনো ধোয়া তুলসী পাতা। আর শোন আমার বাড়িতে দাদা, ভাই আছে আর তাদের ছাড়া সবাই আমার কাছে মাল ।
ভাই , থাম তোরা,,,,,,, । তোরা দুজনেই খুব ভালো মেয়ে,,,,,,,, সুদেষ্ণা বললো।
তবু ছেলে কিন্তু জোস,,,,,,, কী বলিস স্নেহা ? অনু চোখ টিপ দিয়ে বললো।
স্নেহা মুখ বেঁকিয়ে বললো,,,,,,,,ওই সব আমি দেখি না , তুই দেখ ।
অনু চোখ ছোটো করে তাকালো স্নেহার দিকে, তারপর বললো,,,,,,,, তুই ভদ্র মেয়ে রে । আচ্ছা এই সব কথা ছাড় , আমরা আর আমাদের ফ্যামিলিরা সবাই মিলে কিন্তু মিউজিক্যাল চেয়ার খেলবো । আর আমরা সবাই ট্রুথ-ডেয়ার খেলবো ।
আচ্ছা,,,,,,,,, সবাই তালে তাল মেলালো ।
এই সু গিয়ে দেখ না আকাশদের কাজ হলো কি না , তারপর তো আমাদের খেলা শুরু হবে,,,,,,,, অনু বললো।
সুদেষ্ণা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো, তারপর গেলো যেখানে খাওয়ানো হচ্ছিলো।
————————————————————————–
আকাশ জানিয়েছে সব কাজ হয়েই গেছে, এবার সবাই একজায়গায় জরো হবে তারপর সবাই অনেক মজা করবে । সুদেষ্ণা তো আজকে অনেক খুশি আছে,,,,,,, আজকে অনেক মজা করেছে সুদেষ্ণা। সবার সাথে কতো ভালো সময় কাটিয়েছে , সুদেষ্ণার তো মনে হচ্ছে যে স্বপ্ন দেখছে,,,,,,,, ঘুম ভাঙ্গলেই সব ভ্যানিশ । এই সব ভাবতে ভাবতে সুদেষ্ণা অনুদের কাছে যাচ্ছিলো । কিন্তু হঠাৎ কারোর ডাক শুনে থেমে গেল সুদেষ্ণা , হৃৎপিণ্ডটা শব্দ করে লাফাতে লাগলো। বুকের বা পাশটা চেপে ধরলো সুদেষ্ণা, এই কন্ঠ চেনা তার । এই কন্ঠের মালিক যে সুদেষ্ণার খুব প্রিয় । সুদেষ্ণা আর পেছনে ঘুরলো না ওই ভাবেই রইলো,,,,।
তোমাকে ডাকছি শুনতে পারছো না ?? হিমাদ্র সুদেষ্ণার সামনে দাঁড়িয়ে বললো ।
তাকালো সুদেষ্ণা, দুজনের চোখাচোখি হলো । হঠাৎ সুদেষ্ণার চোখ জ্বালা করতে লাগলো,,,,,,, এতক্ষণ যে আনন্দটা ছিলো নিমিষেই তা হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো । তবু নিজেকে দুর্বল করলে চলবে না, সুদেষ্ণা নিজেকে সংযত করে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালো হিমাদ্রর দিকে,,,,।
আমার তোমার সাথে কথা আছে ,,,,।
কিন্তু আমার শোনার মতো সময় নেই,,,,,,,,,, কঠিন গলায় বললো সুদেষ্ণা। তারপর যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
সু,,,,,,,,,,, হিমাদ্র শান্ত কন্ঠে ডাকলো ।
সুদেষ্ণা থমকে গেলো,,,,,,হিমাদ্রর শীতল কন্ঠ শুনে দাড়িয়ে পড়লো, তাকালো হিমাদ্রর দিকে । সে তার দিকেই তাকিয়ে। হিমাদ্রর ডাকে কিছু একটা ছিলো যা তার অন্তর আত্মা কাঁপাতে সহ্মম , তার চোখে কিছু একটা ছিলো,,,,,, সুদেষ্ণার এখান থেকে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। তারমধ্যে হঠাৎ মেয়েলি কণ্ঠ শোনা গেলো , দুজনেই তাকালো বক্তার দিকে। সুদেষ্ণা এই আন্টিটাকে চেনে,,,,,,,, অনিকদের কোনো আত্মীয় হবে হয়তো, বেশ ভালো খাতির হয়েছে তাদের মধ্যে।
হিম এতক্ষণে তোর আসার সময় হলো ???? কয়টা বাজে সময় দেখেছিস??? খাবি কখন ??? চল আগে খেয়ে নিবি,,,,,, আমার আরো অনেক কাজ আছে তো। হিমাদ্রর থেকে চোখ ফিরিয়ে আন্টি সুদেষ্ণাকে বললো, আরে তুমি এখানে,,,,,,, চলো ওখানে সবাই খুঁজছে। তিনি দুজনকে তাড়া দিয়ে চলে গেলেন
তোমাকে এখন ছাড় দিচ্ছি, পুরো ছেড়ে দিচ্ছি না ।,,,,,,,,, এই বলে হিমাদ্র স্থান ত্যাগ করলো।
সুদেষ্ণা হিমাদ্রর যাওয়ার দিকে হ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো। হিমাদ্র কি বলে গেল সব সুদেষ্ণার মাথার ওপর দিয়ে গেলো,,,,,,,,।
চলবে,,,,

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।