ফ্লোরেনসিয়া – ১১

বাইরে বয়ে যাচ্ছিলো প্রলয়ঙ্কারী ঝড়। চারদিক থেকে ভেসে আসছিল অস্বাভাবিক বাতাসের শব্দ। কামরার দরজা জানালা সব বন্ধ। তবুও কোথা দিয়ে যেন হুড়মুড়িয়ে কামরায় প্রবেশ করল দমকা হাওয়া। ঝনঝনিয়ে ভেঙ্গে গেল সিয়ার কাঁচের গোল জানালা। কামরায় ধূলো উড়োউড়ি করছিল। সিয়া থরথরিয়ে কাঁপতে শুরু করল। ততক্ষণে কামরার ভিতরে সবকিছু তছনছ, লন্ডভন্ড হয়ে গেলো। চারদিকে শুরু হলো ভয়াবহ প্রেতনৃত্য।

নিকষ কালো অন্ধকার। সহসা বিকট শব্দে কোথাও বাজ পড়ল। বাতাসের তান্ডবে মনে হলো দরজা জানালাসহ পুরো ছাদটাই ভেঙ্গে পড়বে মাথার উপর। অকস্মাৎ কড় কড় শব্দে গাছের ডাল ভেঙ্গে গেলো। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাল। প্রতিবার বিজলীর ঝলকানিতে আর্নির ঝাপসা চেহারা দেখা যাচ্ছিলো। পুনরায় ভেসে এলো ওর আত্ম চিৎকার। কখনো স্পষ্ট, কখনো অস্পষ্ট। সিয়া কেমন দিশেহারা হয়ে পড়ল। বাকরুদ্ধ হয়ে স্থির দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইলো। আর্নির আর্তকন্ঠ শুনে ওর বুকের ভেতরে থাকা আত্মা ছটফটিয়ে উঠল।

ঝড়ের গতি বেড়ে গেল। কামরার মাঝে বৃষ্টির পানি গড়াগড়ি খাচ্ছিলো। দরজার ওপাশ থেকে ভেসে এলো ইলহামা অ্যালিয়েভের কন্ঠ। চিৎকার করে সিয়াকে ডেকে যাচ্ছিলেন তিনি। সিয়া নিজের সম্বিত ফিরে পেল। দরজার দিকে দৌড়ে যেতেই কয়েকবার হোঁচট খেলো। কামরা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বই-পত্র। জানালার কাঁচের ভাঙ্গা টুকরো। ওগুলোর উপর পা পড়তেই ওর পা কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ল। সিয়া বিধ্বস্ত মুখাবয়বে কামরার দরজা খুলে দিলো। দরজার বাইরে পরিবারের সবাইকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। প্রত্যেকের হাতে লন্ঠন। ওগুলোও প্রায় নিভু নিভু হয়ে এসেছিলো। সিয়ার দিকে শঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারা। আচমকা ইলহামা অ্যালিয়েভের বুকে ঝাপিয়ে পড়ল সিয়া। কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে উঠল,

– আর্নিকে বাঁচান। ওই রক্তচোষা পিশাচের কবল থেকে আর্নিকে বাঁচান।

কেউ কিছু বুঝল না। সিয়া মুখ তুলে তাকাল। ডিয়েটসকে উদ্দেশ্য করে বলল,

– দাদু আর্নিকে বাঁচান। একমাত্র আপনিই পারবেন ওকে বাঁচাতে।

– আর্নি কোথায়?___উদ্বিগ্ন কন্ঠস্বরে জিজ্ঞেস করলেন ডিয়েটস।

সিয়া জানালার দিকে দৌড়ে গেল। বাকিরা ওর পিছন পিছন কামরায় প্রবেশ করল। সিয়া হাত দিয়ে বাইরের দিকে ইশারা করে বলেল,

– ঐতো আর্নি।

ওর করা ইশারা অনুসরণ করে বাকিরা জানালা দিয়ে পশ্চাদ্ভাগের উঠানের দিকে তাকাল। কিন্তু কেউ কিছুই দেখতে পেল না। পুরো আঙ্গিনা জনমানবশূন্য।

সিয়ার গলা কাঁপছিলো। চেহারায় ভয়াবহ আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। ডিয়েটস শান্ত কন্ঠে বললেন,

– বাইরে কেউ নেই।

সিয়া চমকাল। চট করে জানালার দিকে দৃষ্টি সরিয়ে নিল। যেন নিজেই নিজের চোখ দু’টোকে বিশ্বাস করতে পারল না। মূর্তির মতো স্থির দাঁড়িয়ে রইল। কয়েক সেকেন্ড সময় গড়াল। সিয়া কেমন অনুভূতিহীন হয়ে গেল। সহজ সাবলীল কন্ঠস্বরে বলল,

– আর্নি এখানেই ছিলো। আমি স্পষ্ট দেখেছি। একটা ভয়ংকর রক্তচোষা পিশাচ ওর ঘাড়ে কামড়ে ধরেছিলো। আর্নি বাঁচার জন্য চিৎকার করে আমার কাছে সাহায্য চেয়েছিলো।

অদূরে কোথাও পুনরায় বাজ পড়ল। প্রচন্ড শব্দে কানে তালা লেগে গেলো। সবাই নিজেদের কান চেপে ধরল। অথচ সিয়া নিশ্চুপ, নির্বাক। দূর থেকে ভেসে এলো মানুষের আর্তনাদ। সেই আর্তনাদে বুকের ভেতটাও কেমন কেঁপে কেঁপে উঠল। হাওয়ার ঝাপটায় লম্বা লম্বা গাছগুলো মাটিতে নুয়ে পড়ল। ভাঙ্গা কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। নিকষ কালো অন্ধকার কেটে গিয়ে প্রকৃতি ধারণ করেছে ছাই বর্ণ। কালো মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে গিয়ে আকাশ টা ঝকঝকে পরিষ্কার দেখাচ্ছিলো।

– মাঝে মাঝে তোমার চোখগুলোও তোমাকে ধোঁকা দিবে সিয়া। নিজের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সর্বদা সজাগ রেখো। আর্নি ওখানে ছিলো না। সবটাই ইন্দ্রজাল। তোমাকে বাড়ির বাইরে বের করে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা।___গম্ভীর কন্ঠে কথাগুলো বলে উঠলেন ডিয়েটস।

– কিভাবে নিশ্চিত হবো দাদু? হতে পারে আপনারা এখানে আসার আগেই আর্নিকে নিয়ে পিশাচটা দূরে কোথাও চলে গেছে।

– আর্নি এই মাঝরাতে আমাদের বাড়িতে কেনো আসবে? তোমার মনে এরকম কোনো প্রশ্ন জাগেনি সিয়া?____অকপটে জিজ্ঞেস করলেন ক্রিসক্রিংগল।

– জেগেছিলো। কিন্তু স্বচক্ষে দেখা ভয়ংকর দৃশ্য আর ওর করুণ আর্তনাদ এক মূহূর্তের জন্যও মিথ্যে মনে হয়নি।

ডিয়েটস ম্লান হাসলেন। দৃঢ় গলায় বললেন,

– সব মিথ্যে। সবকিছুই মায়া। তোমাকে শক্ত থাকতে হবে। তোমার জন্য সত্যি আর মিথ্যা বুঝে নেওয়া খুব সহজ ব্যাপার সিয়া।

সিয়া কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকাল। ডিয়েটসকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইল। ওর চোখের ভাষা বুঝতে পারলেন ডিয়েটস। ওকে জিজ্ঞেস করলেন,

– যখন তুমি আর্নিসহ ওই পিচাশটাকে দেখেছিলে, তখন তোমার কাঁধে থাকা ক্রুশ চিহ্নটায় কি আগুনে পুড়ে যাওয়ার মতো জ্বালা যন্ত্রণা অনুভব করেছিলে?

– না।

– এতেই প্রমানিত হয় তোমার চোখের সামনে যা কিছু ঘটেছিলো, সবকিছুই ছিলো ধোঁকা। কারণ যখন কোনো ভ্যাম্পায়ার নিজের স্বরুপে তোমার সামনে এসে দাড়াবে, তখন তোমার ক্রুশ চিহ্নটা জ্বলতে শুরু করবে। তুমি শরীর পুড়ে যাওয়ার মতো জ্বালা যন্ত্রণা অনুভব করবে।

সিয়ার কৌতুহলী দৃষ্টি বিস্ময়ে বদলে গেল। ওর মন-মস্তিষ্কজুড়ে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। ডিয়েটস পুনরায় কথা বললেন,

– আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয়, তবে সকাল বেলা আর্নির বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে এসো। আপাতত নিশ্চিন্ত থাকো, আর্নি এখানে আসেনি।

– আমার শরীরে থাকা এই ক্রুশ চিহ্নের রহস্য কি দাদু?____সিয়া বিস্মিত কন্ঠে জানতে চাইল।

– সময় নিয়ে তোমাকে সবটা পড়ে বলবো। আপাতত যেকোন কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে প্রস্তুত হও।

সিয়া দ্বিতীয় কোনো প্রশ্ন করল না। ঝড়ের দাপট অনেকটাই কমে এসেছিলো। ইনায়া সিয়ার একহাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিলো। চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করল ওকে। সিয়ার মনে হলো, সবাই সবটা জানে। শুধু ও’ই কিছু জানেনা নিজের সম্পর্কে।

________★★_______

একটা মিষ্টি সকাল। পশ্চিম আকাশটা বেশ ঝকঝকে পরিষ্কার। পূর্বদিকের আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা। ক্ষণে ক্ষণে আকাশের রঙ বদলাতে থাকে। কোথাও লালচে, কোথাও হালকা বেগুনী রঙ ধারণ করে আছে। সূর্য তখনো উঁকি দেয়নি

চারদিকে স্নিগ্ধ নির্মূল পরিবেশ। মেঘগুলো যেন পাহড়গুলোকে ছুঁয়ে যাচ্ছিলো। পাশেই আরও একটি সুউচ্চ পাহাড় থেকে নেমে এসেছে জলপ্রপাত।

– এস্টীম রুলার, আপনার কি মন বিষণ্ণ?

ঠোঁট ছড়িয়ে হাসল আব্রাহাম। উচ্ছ্বসিত কন্ঠস্বরে বলল,

– তুমি এখনো গ্রামে প্রবেশ করতে না পারার বিষয়টা নিয়ে ভাবছো?

গতকাল মাঝরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে আব্রাহাম রিসোর্টে ফিরে এসেছিলো। কাস্ত্রোরুজ থর্পের ত্রিসীমানায় কোনো মানুষের চিহ্ন মাত্র ছিলো না। কোনো মানুষের সাহায্য ব্যতীত থর্পে প্রবেশ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তারপর মাঝরাত থেকে ঝড়ের তান্ডব শুরু হয়েছিল। নিলসোনসহ সে পাহাড়ের একটা গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলো। বৃষ্টি থেমে যেতেই রিসোর্টে বন্ধুদের কাছে ফিরে এসেছিলো।

– পাহাড়ে বৃষ্টি মানেই অপার্থিব সৌন্দর্য। আমার প্রেম পাহাড়।

কথাটা বলে নিলসোনের দিকে তাকাল আব্রাহাম। ছেলেটা তখন বেলাডোনার পাশে বসে থাকা একটা মেয়েকে দেখায় ব্যস্ত। ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে পেছন ফিরে তাকাল আব্রাহাম। হালকা কিছু খাবার খেয়ে পাহাড়ের চুড়ায় কিছুক্ষন বিশ্রাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে তার বন্ধুরা আড্ডায় মশগুল হয়ে উঠেছিল। একসাথে বসতে না বসতেই ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে স্টুয়ার্ড আর বেলাডোনা। মূলত ঝগড়াটা প্রপোজ করা নিয়ে। ট্রুথ ওর ডেয়ার খেলছিলো ওরা। খেলায় ডেয়ার নিয়েছিলো স্টুয়ার্ড। নিজের সাহসিকতার প্রমান দিতে বেলাডোনাকে প্রপোজ করতে বলেছিলো বন্ধুরা। কিন্তু স্টুয়ার্ড সেটার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ব্যঙ্গ করে বলল,

– ওর মতো একটা অসভ্য, বেয়াদব আর ঝগড়ুটে মেয়েকে আমি প্রপোজ করতে পারবো না। আমার সাহস থাকলেও রুচিতে বাঁধছে।

কথাটা শুনে বেলাডোনার মস্তিষ্কে যেন আগুন জ্বলে উঠে। ভীষণ অপমান বোধ করে। নিমেষেই দু’জনের মাঝে ঝগড়া শুরু হল। বাকিরা হেঁসে লুটোপুটি খাচ্ছিলো।

– এমিলিগ্রিনকে পছন্দ করো?_____নিলসোনকে উদ্দেশ্য করে কথাটা জিজ্ঞেস করল আব্রাহাম।

নিলসোন কিঞ্চিৎ লজ্জা পেল। আব্রাহামের দিক থেকে নিজের মুখ লুকানোর বৃথা চেষ্টা করল। অগোছালো স্বরে উত্তর দিলো,

– ক্ষমা করবেন। সেরকম কিছু না।

– সবসময়ই দেখি এমিলিগ্রিন এর আশে পাশে ঘুরঘুর করো। সুযোগ পেলেই ওর দিকে তাকিয়ে থাকো। এসবের মানে কি?

খানিকটা কঠিন কন্ঠে কথাটা বলে উঠল আব্রাহাম। নিলসোনের গলা শুকিয়ে গেল। সে ইতস্তত বোধ করল। রুলারের মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরাতে চাইল। কিন্তু তেমন কোনো কথা খুঁজে পেল না।

– তুমিতো জানো। একজন সাধারণ মানুষ আর একজন ভ্যাম্পায়ারের মধ্যে কখনো ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে না। এটা সম্ভব নয়। সুতরাং এখানেই থেমে যাও। তোমরা দু’জনেই আমার খুব কাছের। আমি চাইনা তোমাদের কারো কোনো ক্ষতি হোক।

নিলসোন আঘাত পায়। প্রেমময় অনুভূতিতে ঘায়েল হওয়া হৃদপিণ্ড টা নিমেষেই দগ্ধ হয়। বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস।

_________★★________

কিয়েভ, স্যাভেরিন ক্যাসল।

দুর্গের একটি বড় কামরায় সোফার উপর বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে বসে আছেন পিদর্কা স্যাভেরিন। পাশে বসে আছে ভিক্টোরিয়া আর ক্যারলোয়েন। তাদের সামনের সোফায় বসে আছে একজন মধ্যবয়স্ক লোক। লোকটার নাম জোসেফাইন। পিদর্কা স্যাভেরিনের অনেক পুরনো বন্ধু। সবার হাতে ছিল রক্তের গ্লাস। গ্লাসে চুমুক দিয়ে সম্পূর্ণ রক্তটুকু পান করলেন পিদর্কা স্যাভেরিন। লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

– ফ্লভেয়ার মুক্ত হয়ে গেছে। ওকে পুনরায় কফিন বন্দি করে রাখার ব্যবস্থা করো।

– এখন আর সেটা সম্ভব নয়। কারন সে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।_____অত্যন্ত স্বাভাবিক গলায় কথাটা বললো জোসেফাইন।

সোফা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে পড়লেন পিদর্কা স্যাভেরিন। রাগমিশ্রিত কন্ঠস্বরে বললেন,

– ও আমাদের সবার জন্য বিপজ্জনক। এমনকি তোমার জন্যও। কারন ওকে তুমিই বন্দী করে রেখেছিলে এতোদিন।

– তুমি এ ব্যাপারে অনারেবল ওভারলর্ডের সাথে কথা বলো। তিনি তোমাকে সাহায্য করতে পারেন।

– আমি এদুয়ার্দোকে এ ব্যাপারে কিছুই জানাতে পারবো না। তাহলে সবগুলো রহস্য একসাথে ফাঁস হয়ে যাবে।

– সবগুলো রহস্য এমনিতেও একদিন ফাঁস হবে। সত্যি কখনো লুকানো থাকে না।

– তবুও আমি এদুয়ার্দোকে কিছুই বলবো না। কারন আমি ওকে হারাতে চাইনা।

জোসেফাইনের ভ্রু কুঞ্চিত হলো। ক্ষণকাল কিছু একটা ভাবল। অতঃপর শব্দ করে হাসতে শুরু করলো। ভিক্টোরিয়া আর ক্যারলোয়েন বিস্মিত হলো। এমন সঙ্কটজনক মুহূর্তে লোকটা এভাবে পাগলের মতো হাসছে কেনো? বুঝতে পারল না। এরই মাঝে জোসেফাইন প্রশ্ন করলো,

– আর কত অন্ধকারে রাখবে তাকে? একদিন এই অন্ধকারের অতল গহ্বরে তুমি নিজেই তলিয়ে যাবে। সে আসবে। সমগ্র ভ্যাম্পায়ার সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে দিতে সে আসবে।

পিদর্কা স্যাভেরিনের মুখখানা কেমন গম্ভীর হয়ে যায়। তিনি ভয় পান। অসামান্য ভয়ে জর্জরিত হন। জোসেফাইন বেশ মজা পায়।

– তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছো, তুমি নিজেও একজন ভ্যাম্পায়ার। আমাদের সাথে সাথে তুমি নিজেও মা’রা পড়বে। ফিদেলের কথা যদি সত্যি হয় তাহলে এদুয়ার্দো, আব্রাহাম কেউ বাঁচবে না।_______দৃঢ় গলায় কথাটা বলেন পিদর্কা স্যাভেরিন।

– আমার কিছুই করার নেই। পারলে ডিয়েটসকে অক্ষত অবস্থায় তুলে নিয়ে এসো। ও আমার থেকেও বড় জাদুকর। এমনকি তোমার কাঙ্ক্ষিত জিনিষগুলোও ওর কাছে আমানত হিসাবে আছে।

– ডিয়েটস আমার কথা কেনো শুনবে? তাছাড়া ও জাদুর দুনিয়া থেকে বহু বছর আগেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।

– যদি না শোনে, শুনতে বাধ্য করবে।

পিদর্কা স্যাভেরিন ইতস্তত পায়চারি করেন। নেকড়ে শাবকগুলো যেমন কাতর হয়ে প্রতীক্ষা করে কখন তাদের মা-বাবা শিকার নিয়ে ফিরবে, পিদর্কা স্যাভেরিন তার চেয়েও বেশি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন এদুয়ার্দো স্যাভেরিনের জন্যে। কে জানে ডিয়েটসকে নিয়ে স্যাভেরিন ক্যাসলে কবে ফিরে আসবে সে?

_______★★_______

কাস্ত্রোরুজ থর্প।

পড়ন্ত বিকেল। সিয়াদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে আর্নি। নীল রঙের ব্লাউজ আর সাদা রঙের স্কার্ট পরনে ছিলো। হালকা লাল রঙা চুলগুলো পিঠময় ছড়িয়ে রেখেছিলো। চুলের ভাঁজে ভাঁজে শ্বেতশুভ্র বুনো ফুল গুঁজে দিয়েছে ও। বেশ পরিপাটি করে নিজেকে সাজিয়েছে আজ। হাঁটতে হাঁটতে পুলকিত নয়নে এদিকে সেদিকে দেখছিলো। বাড়ির কাছে রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলো সিয়া। পরনে হাঁটু পর্যন্ত লম্বা সাদা রঙের গোল ফ্রক। আর পায়ে হালকা গোলাপী রঙের কেডস।

ভোর হতে না হতেই সিয়া আর্নির বাড়িতে গিয়েছিল। আর্নিকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় দেখে ও মনে স্বস্তি ফিরে পেয়েছিল। কিন্তু গতকাল রাতে ঘটা লোমহর্ষক ঘটনাটার কথা আর্নিকে কিছুই জানায়নি সিয়া। কিছুক্ষণ গল্পগুজব শেষে হঠাৎই আর্নি ওকে বলেছিলো,

– বিকাল বেলা তৈরি থাকিস। তোকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো।

– কোথায়?______সিয়া কৌতুহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করেছিলো।

– একজনের সাথে দেখা করাতে।

কথাটা বলতে গিয়ে আর্নির ফর্সা গাল দু’টো আরক্তিম হয়ে উঠে। ও লাজুক হাসে। সিয়া কিছু বুঝতে পারেনি। শুধু অনুমান করে নিয়েছিলো। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করেছিলো,

– সেই একজনটা কি কোনো পুরুষ?

আর্নি সম্মতি সূচক মাথা নাড়াল। বাকিটা বুঝে নিতে সময় লাগেনি সিয়ার। ও থমথমে ভরাট কন্ঠে বলেছিল,

– ঠিক আছে। দেখা হবে বিকেলে।

সিয়া সকালের ঘটনাটুকু মনে করল। ওর কপালে সূক্ষ্ম দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠল। আর্নি ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াল। চোখের সামনে তুরি বাজিয়ে জিজ্ঞেস করল,

– আমাকে কেমন লাগছে দেখতে?

– সুন্দর।___ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিলো সিয়া।

– শুধু সুন্দর?

– অনেক সুন্দর।

আর্নি ঠোঁট ছড়িয়ে হাসে। সিয়ার একহাত মুঠোবন্দি করে ধরে বলে,

– চল। যাওয়া যাক।

– কোথায় যাচ্ছি আমরা?____জিজ্ঞেস করে সিয়া।

– বেলাভূমিতে। ওখানে সে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

– কে?

– ক্লিভল্যান্ড এদুয়ার্দো স্যাভেরিন।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।