এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা – সিজন ২ | পর্ব – ৪৭

আজ অনেকদিন বাদে বাবার কোলে মাথা রেখে সুয়ে আছি আমি।আমার বাবা কোনো রাজ্যর রাজা না হলেও তার কাছে আমি যেনো একটা রাজকুমারী।বাবা নামক এই মানুষ টা আমার সব চাওয়া পাওয়া গুলো পূরণ করে।জীবনের অনেক বড় প্রাপ্তির নাম হলো আমার বাবা।ভাইয়ার কিছু প্রয়োজন হলে আম্মুকে বা আমাকে দিয়ে বলায়।ভাইয়া নিজ মুখে কিছু চাইতে সাহস পায় না।অথচ আমার এই ভয় বা বাঁধা কোনটায় নেই।বাবা আমাকে এতটায় আদর আহলাদ দিয়েছে যে নিঃসংকোচে যা কিছু প্রয়োজন বাবার থেকে চেয়ে নিয়েছি।অথচ বাবা আমাকে আর ভাইয়াকে দুজনকেই সমান ভালবাসেন।বাবা খাটের কোনায় বসে আছেন আমি বাবার কোলে মাথা রেখে সুয়ে সুয়ে বাবার সাথে গল্প করছি।গল্পের সব টা জুড়ে রয়েছে আম্মু।আম্মু আমাকে বকলেই বাবার কাছে নালিশ জানিয়ে দেই বাবা আমার মুখে হাসি দেখতে আম্মুকে বলে আমার মেয়েকে তুমি আর কখনোই কিছু বলবা না। এইটুকু কথাতেই আমি ভীষণ খুশি হয়ে যায়।আম্মু বলে মেয়ে তোমার আর ছেলে আমার।অতিরিক্ত খরচ করাতে আম্মুর আপত্তি থাকে,কিন্তু বাবা আম্মুকে লুকিয়ে সব ই দেয়।বাবা আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে আর বিভিন্ন গল্প বলছে।আমি ডাক্তার হলে বাবা আর কাজ করবে না,আমি আর ভাইয়ার থেকে পকেট খরচ নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াবে।যদিও বাবার এটা একটা আবদারের কথা।

এরই মাঝে আয়রা টা ঘরে প্রবেশ করেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো।আমি আর বাবা দুজনেই বেশ অবাক হলাম আয়রা টার কাঁন্না দেখে।

‘বাবা বললেন,বুড়ি মা কি হয়েছে।’

‘আয়রা গাল ফুলিয়ে বললো,চাচ্চু তোমার কোলে দিয়াপু কেনো?’

‘আমি ভীষণ অবাক হয়ে বললাম,আমার বাবার কোলে আমার মাথা রাখা তোর হিংসে হচ্ছে কেনো?’

‘নামো আগে আমার চাচ্চুর কোল থেকে।আমি মাথা দিবো ওখানে।’

‘আচ্ছা তোর চাচ্চু হয় আর আমার কি হয়?’

‘তোমার কিচ্ছু না।আমার আপণ চাচ্চু।’

‘ওকে আমিও যাচ্ছি আমার চাচ্চুর কাছে।মানে তোর বাবার কোলে মাথা রাখতে।’

আয়রা ফ্লোরে বসেই পা দাপাতে শুরু করলো আর ভীষণ কাঁন্না জুড়ে দিলো।না আমার আব্বুর কাছে তুমি যাবে না।মানে সে কারো কাছেই যেতে দিবে না।

‘মানে কি সব কিছুর দখলদার তুই একা আয়রা।

‘চাচ্চু ও আমার, আব্বু ও আমার।’

‘তাহলে আমার কে?’

‘তোমার শুধু বিহান ভাই।’

বাবার সামনে কি লজ্জাটায় না পেলাম।বিহান নাকি আমার।এইটুকু মেয়ে কি বলে কি এসব।চোখ রাঙিয়ে আয়রার দিকে তাকালাম আমি।বাবা উঠে গিয়ে আয়রা কে কোলে নিলো।আয়রার কাঁন্না থামাতে বাবা বলছেন,দিয়াকে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিবো আবার আম্মা তুমি আর কেঁদো না।আয়রা গাল ফুলিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।আয়রা কে আমি আর রিয়া ক্ষেপিয়ে অনেক মজা নিয়েছি এতদিন।আয়রা কে জাস্ট বলবো ডিম বড় টা আমি নিয়েছি সাথে সাথে নিজের প্লেটের ডিম ছুড়ে ফেলে বলবে আমি দিয়া আর রিয়াপুর প্লেটের ডিম নিবো।হাতে চিপস এর প্যাকেট থাকলে না নিয়েও যদি বলি নিয়েছি এই কাঁন্না জুড়ে দিবে।আয়রার কান্ড দেখে এখন আবার হাসছি আমি।

‘এর ই মাঝে বিহান এসে বাবার কোল থেকে আয়রা কে নিয়ে বললো, আপনি যান আমি দেখছি।’

বাবা বিহানের কোলে আয়রাকে দিয়ে বেরিয়ে গেলো।

‘বিহান আয়রাকে কোলে নিয়ে বললো,কি হয়েছে আয়রা সোনা তুমি কাঁদছো কেনো?’

আয়রা আমার দিকে আঙুল ইশারা করে দেখালো।

কি পাক্কা আমাকে বিহানের কাছে বকা খাওয়াবে বলে আমার দিকে ইশারা করছে।

“আমি আয়রার দিকে আবার চোখ পাকাতেই উনি বলে উঠলেন, কি ব্যাপার ভয়ানক অত্যাচারী মহিলা।এতদিন আমাকে অত্যাচার করছিলে মেনে নিয়েছি তাই বলে এখন এই টুকু বাচ্চাকে অত্যাচার করবে।”

আমি উনার কথা শুনে আয়রার দিকে রাগী চোখে তাকালাম।

“উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,খবরদার আয়রাকে চোখ রাঙাবে না তুমি।রাজাকার দের উত্তম উত্তরাধিকারী তুমি দিয়া।একটা বাচ্চাকেও ছাড় দিচ্ছো না।এতদিন আমাকে ভয়ানক অত্যাচার করেছো আর এখন এই শিশু টাকে করছো।”

“এই দেখুন বার বার রাজাকার আর অত্যাচারী বলবেন না বুঝেছেন।আপনাকে কিভাবে অত্যাচার করেছি আমি।”

উনি আয়রাকে নামিয়ে দিলেন কোল থেকে।আমি খাটের কোনায় সুয়ে আছি চুল নিচে ঝুলে পড়েছে।উনি আমার মাথার দুই পাশে দুই হাত ঠেকিয়ে ঝুঁকে পড়লেন আমার মুখের উপর।নাকের সাথে নাক ছুই ছুই অবস্থা। ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।উনি নাকের সাথে নাকের ঘষা দিয়ে বললেন,

“অত্যাচার করেছো তুমি ভীষণ অত্যাচার।
এই ইয়াং ছেলেটার সামনে বিরিয়ানি রেখে খাওয়ার পরিবেশ তৈরি করে দাও নি।খেতে ইচ্ছা করলেও পারি নি।এটা রিতীমত ভীষণ অত্যাচার।”

“ধীর শান্ত গলায় বললাম, কিভাবে।”

“এইযে বিয়ে করা বউ সামনে দিয়ে ঘুরেছো কখনো নিজ থেকে এসে একটু আদর করোনি।”

“আমি না হয় করিনি,আপনাকে তো আর ধরে রাখিনি কোনদিন।”

“আমি একটু কাছে গেলে তো তুমি সরাসরি একটা চরিত্রহীনের সার্টিফিকেট ঝুলিয়ে দিতে।”

আমি হাসলাম উনার কথা শুনে।

“উনি ফিসফিস কন্ঠে বললেন,ঝুঁকে আছি তোমার দিকে, গিভ মি কিস শ্যামাঙ্গিনী। ”

কি ভীষণ লজ্জা পেলাম উনার কথা শুনে।এইভাবে মুখের উপর এসে কেউ বলে গিভ মি কিস।লজ্জায় মুখ অন্যদিকে ঘুরালাম আমি।

এরই মাঝে আয়রা আরো জোরে কেঁদে দিলো।বিহান আয়রাকে কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিলো।আয়রার কাঁন্না থামাতে বিহান নিজের ফোন আয়রার হাতে দিয়ে ইউটিউব ধরিয়ে দিলো। আয়রা মনোযোগ দিয়ে ‘নিক্স যে সব পারে ‘ কার্টুন দেখছে।উনি আয়রাকে ফোন দিয়ে উনার প্যান্টের পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে বিছানায় রেখে ওয়াশ রুমে গেলেন।আমি আয়রকে একটু ভয় দেখাতে বিহানের ফোন নিয়ে ভয়েজ সার্চ দিলাম আহট বলে।সনি আট চ্যানেলের আহট প্লে করার জন্য।বুঝলাম না আমি তো বললাম আহট “আ” কি তারা শোনে নি।সার্চ অপশনে উঠেছে আ বাদে হট।সাথে সাথে দেশ বিদেশের নোংরা ভিডিও হাজির।

আয়রা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,দিয়াপু দেখো আমার মতো ছোট কাপড় পরেছে।আমি দ্রুত ফোন থেকে এসব কাটার চেষ্টা করছি।

এরই মাঝে বিহান আয়রার হাত থেকে ফোন টা কেড়ে নিলেন।ফোনের দিকে একবার চোখ স্হীর করে তাকালেন।ভয়ে হাত পা কাঁপাকাপি শুরু হলো আমার।উনি আমাকে ভীষণ ভাবে বকবেন।আর ছিঃকি ভাববেন আমাকে নিয়ে।বিরক্ত হয়ে তাকালেন আমার দিকে।আয়রার হাতে আমার ফোন ধরিয়ে দিয়ে বললেন,তোমাদের ঘরে গিয়ে ফোন দেখো সোনা যাও আমি আসছি।আয়রা তো ফোন নিয়ে চলে গেলো আমার কি হবে এখন।উনি দরজার পর্দা টেনে দিলেন।

উনি ফোন প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে আমার দিকে বিরক্ত হয়ে তাকালেন।আমি দ্রুত বিছানা থেকে উঠে শাড়ি ঠিক করতে লাগলাম।উনি ধীর গতিতে ক্রমশ ঝুঁকে এলেন আমার দিকে।দুজন দুজনের নিঃশ্বাসের একদম কাছাকাছি।

–আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,কি?

–উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,এইটুকু একটা বাচ্চাকে এসব দেখাতে লজ্জা করলো না তোর।

–কি ব্যাপার উনি তুমি থেকে দেখছি আবার তুই তে চলে গিয়েছেন।

–দেখুন, আমি ওসব দেখায় নি।ভুলে হয়েছে এটা।

–সিরিয়াসলি!ভুলে হয়েছে।আমি তাই জীবনে ফোনে এসব সার্চ করিনি কোনদিন।তুই কিনা এসব দেখিস। আমার ফোন ই অপবিত্র করে দিয়েছিস আজ।

–মোটেও না আমি আহট বলেছিলাম আ ওরা বোঝে নি তাই আ বাদে ওইটা হয়েছে।

–বার বার কি এসব তোর সাথেই হয়।মামাতে ভাইকে বশিকরণ এর জায়গা লিখিস করতে হয় কিভাবে।আবার আ বাদ গিয়ে হট হয়ে যায় শুধু।ইউ নো হোয়াট দিয়া বার বার ইন্টারেসটিং ভুল গুলো তোমার ই হয় কিন্তু।

–এই কথাটা শুনে বেশ লজ্জা পেলাম।

–আজ সারাদিন এইসব নিয়েই পড়ে আছো দেখছি।সকালে একবার দেখলাম আমাকে হট বললে এখন ইউটিউবে সার্চ করছো।এসব না করে সরাসরি বললেই তো পারো নিড প্রচুর আদর।

–উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেই উনি আমার দুই হাত শক্ত ভাবে চেপে ধরলেন।

–ফিস ফিস করে বললাম,কেউ কিন্তু চলে আসবে এখন।

–উনি নেশাক্ত ভাবে কাছে এগিয়ে এসে বললেন,আসুক। কথাটা বলেই ভূমিকম্পণ এর গতিতে ওষ্টে গভীর ভাবে চুমু দিয়ে দিলেন।

আমি লাফিয়ে উঠলাম বিছানা থেকে।উনি দুষ্টুমির চাহনি তে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে আর হাসছেন।মাথার চুলে হাত চালিয়ে দিয়ে বললেন,এত ছটফট করো কেনো তুমি?

লজ্জায় মৌন থেকে বিছানা থেকে ওয়ালেট টা নিলাম।

আমি উনার ওয়ালেট নিয়ে বললাম,এইযে টাকা আছে আমাকে বললেন কেনো টাকা আনেন নি।আমাকে টাকা ধার দিন।

–ধার দিবো?এমনি নিবে না।

–এমনি তো লাগবেই আপনি তো দিচ্ছেন না।

–ওকে দিবো আমি যা চাইবো তাই দিতে হবে।

–কি চাই আপনার বলুন।

–সে যেটায় চাই চাইলে দিতে হবে।

–আচ্ছা দিবো।

–মনে থাকে যেনো।পরে আর না বলতে পারবে না কিন্তু।

–থাকবে।

–উনি একনজরে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।

–আমি বললাম কি দেখছেন?

–তুমি কত সুন্দর তাই দেখছি।

–আমি কই সুন্দর। আমি তো কালো।

–আমার চোখ দিয়ে তাকিয়ে দেখো পিচ্চি,তাহলেই বুঝবে এই পৃথিবীতে আমার চোখে তোমার থেকে সুন্দর আর কোনো মেয়ে নেই।

–কিভাবে দেখবো?

–অয়েট বুঝাচ্ছি,নিজেই প্রমান পাবে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।