এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা – সিজন ২ | পর্ব – ৩১

পেটের উপর ভারী কিছু পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো আমার।চোখ খুলে আবার ও চেষ্টা করলাম ঘুমোনোর কিন্তু ঘুম আর কিছুতেই এলো না।সারারাত এপাস ওপাস করে কেটেছে আমার।একটুও ঘুম হয় নি আমার।শেষ রাতের দিকে একটু ঘুম এসেছিলো চোখে এক ঘন্টা পরে দেখি আবার ঘুম ভেঙে গিয়েছে।ঘুম ভাঙতেই দেখি আমার পেটের উপর উনার হাত।এই হাতের জন্যই বোধ হয় মনে হচ্ছিলো ভারী কিছু পেটের উপর পড়েছে।ঘুমের মাঝে উনি হয়তো খেয়াল ই করেন নি।আমি হাত আস্তে করে সরানোর চেষ্টা করছি।উনার হাত ধরতেই আমার হাত সহ পেট কোমর এক হাতে জড়িয়ে ধরলেন।উফফ কি মুশকিল হয়ে গেলো এখন উঠবো কিভাবে।এখন কয়টা বাজে সেটাও তো দেখতে পাচ্ছি না।হাতড়ে দেখি বিহান ভাই এর ফোন,ওহ মাই গড ফোন এর পাওয়ার অফ হয়ে গিয়েছে।ফোনের পাওয়ার অফ দেখলে কুচি কুচি করবেন উনি আমাকে।চট জলদী লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠলাম আমি।তড়ি ঘড়ি করে উনার ফোন চার্য দিলাম আমি।ফ্যানের বাতাসে পাতলা মসৃণ চুল গুলো উড়ছে উনার, কখন শার্ট খুলে রেখেছেন উনি।খালি গায়ে সুঠাম দেহের একটা পুরুষ আমার সামনে।লজ্জায় একবার তাকিয়ে আর তাকাতে পারছি না।একটা ছেলের বডি ফিটনেস এতটা সুন্দর ও হতে পারে।এত সুন্দর হওয়ার কি প্রয়োজন ছিলো।ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি চলে আসে লজ্জায় উনাকে নিয়ে ভাবতে গেলে।জিন্স কোমর থেকে নেমে নাভির নিচে নেমে গিয়েছে উনার।কি প্রয়োজন ছিলো জিন্স পরে ঘুমোনোর।পায়ের নিচের দিকে উলটা ভাজ দিয়ে রেখেছেন।হাতের ঘড়ি ও খুলেন নি।

আমি বাইরে দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ পায়চারী করতে করতে ভাবছি,কাল এসে আমাকে অনেক অপমান করেছেন যা তা কথা বলেছেন আমি নাকি পতিভক্তি করিনা।ঘোর পাপী জান্নাত পাবো না।আজ উনাকে এমন বিরক্ত করবো না জাস্ট অতিষ্ট হয়ে যাবে।আমাকে বিরক্ত করা তাইনা বিহান ভাই।আজ সারাদিন এমন বিরক্ত করবো না জিন্দেগীতে ভুলতে পারবেন না প্রমিজ।এইবার বুঝবেন দিয়া ও কম না কিছুতে।সকাল সকাল ব্রাশ করে নিচে গেলাম কেউ উঠার আগেই একটা কফি বানিয়ে এনে ড্রেসিন টেবিলের উপর রাখলাম।উনার তো ঘুম ই ভাঙছে না কি করা যায় তাহলে এখন।

–উনার কানের কাছে গান চালিয়ে দিলাম তুই আমার মাহিয়া মাহিয়া মাহি মাহিয়া।

–উনি বিরক্তির সাথে চোখ মেলে তাকালেন।বিরক্তি মানে ভীষণ বিরক্তি উনার চোখে মুখে।ভীষণ বিরক্ত মুডে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।

–আমি এক গাল হেসে মাথায় ভাল ভাবে ঘোমটা টেনে দিয়ে বললাম,আসসালামু আলাইকুম ।

–চোখ পিটপিট করে কপাল কুচকে তাকিয়ে বললেন,ওয়ালাইকুম আসসালাম। উনি আশ্চর্যজনক ভাবে উত্তর দিলেন।উনি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গিয়েছেন সকাল সকাল আমাকে সালাম দিতে দেখে।

–শুভ সকাল প্রিয় স্বামি।

–গুড মর্নিং,বাট হোয়াট রং উইথ ইউ।

–কেমন আছেন পতিপরমেশ্বর স্বামি।

–আমার ভাল থাকার বারোটা বাজাতে কীত্তন এর রিহার্সাল শুরু করেছিস।এগুলো কি শুরু হয়েছে।উনার কপালের চামড়া বিরক্তিতে কয়েকটা ভাজ পড়েছে।

–ওগো কেমন আছেন বলুন না।খুব জানতে ইচ্ছা করছে আপনি কি সেই কাল রাতের মতোই আছেন নাকি খানিক টা বদলে গিয়েছেন।

–কিছু খেয়েছিস তুই।কি খেয়েছিস।

–স্বামি সকালে উঠে কিছুই খায় নি এখনো,আমি কিভাবে খাই বলেন তো।
ওগো এই নিন আপনার ব্রাশ আর পেষ্ট।দ্রুত ব্রাশ করে নিন, আপনার কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

–উনি চোখ মুখের অদ্ভুত একটা রিয়াকশন দেখাতে দেখাতে উঠলেন।প্যান্ট একটু টেনে উপরে তুলে তোয়ালে গলায় নিলেন।ব্রাশ টা আমার হাত থেকে নিয়ে ভ্র‍্য যুগল কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।

–ওগো ওভাবে কি দেখছেন গো।

–হোয়াট দ্যা ল্যাঙ্গুয়েজ। স্টপ ইট জাস্ট স্টপ ইট।মাথায় এত বড় একটা ঘোমটা টেনে শাবানা শাবানা বিহ্যাভ করছিস কেনো?পাগলের গুষ্টিতে বিয়ে করে নিজেই পাগল হয়ে যাবো।

–কেনো গো এই শুভ সকালে ওভাবে কথা বলছেন কেনো?

–শুভ কে অশুভ করতে এত সকালে উঠেছিস তাইনা?দশ মিনিট জাস্ট দশ মিনিটে রেডি হ।বই নিয়ে আয় তোকে আজ বই পড়াবো বলেই ওয়াশ রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলেন।আর বাইরে এসে এসব উদ্ভব ভাষা শুনলে এখন থেকে আছাড় মারবো অত্যাচারি বংশের বারান্দায় গিয়ে পড়বি।

–দুই মিনিটে বেরিয়ে এলেন ওয়াশ রুম থেকে।ওয়াশরুমের দরজা খুব জোরে খুললেন। দরজা খোলার শব্দে বুক কেঁপে উঠলো আমার।টাওয়াল পরে মুখে ব্রাশ নিয়ে ক্ষিপ্ত নয়নে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।উনার চোখ রক্তজবার মতো হয়ে আছে।উনার রাগের মাত্র বাড়ার সাথে সাথে চোখ দুটো ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে।কিন্তু কেনো ওয়াশ রুমে গিয়ে হলো এমন।আমি হাতের মুঠোয় ওরনার এক কোনা ধরে কচলাচ্ছি আর ঠোঁট কামড়ে ধরে ভাবছি কি হলো টা কি উনার।

–উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,কি দিয়েছিস ব্রাশে।

–আমি দুই কান ধরে বললাম,কসম কিচ্ছু দেয় নি আমি ব্রাশে।আপনার ব্যাগ থেকে ব্রাশ আর পেষ্ট নিয়েই দিয়েছি আর কিছুই দেয় নি আমি।

-সিরিয়াসলি।

–আমি তো আসলেই কিছুই দেয় নি তাহলে উনি কি বলছেন।আমি তো অন্য ঝামেলা করিনি উনি রেগে আছেন কেনো?কি মুশকিলে পড়লাম কি জানি।

–উনাকে আমার দিকে এগোতে দেখে আমি পেছনে যেতে যেতে সোফার উপর পড়ে গেলাম।উনি আমার দিকে খানিক টা ঝুকে বললেন, খুব সাহস বেড়েছে তাইনা?আমার পেছনে লাগার খুব শখ তাইনা মিসেস বিহান।কি ছিলো এটাতে পেষ্ট।

–পে’পে’পেষ্ট ই ছিলো।

–ওকে নাউ ইউ টেল মি হোয়াট ইজ দিস।বলেই উনার ব্রাশ আমার গাল ধরে জোর করে দাঁতে ঘষে দিলেন।

–ওয়াক থু!বিহান ভাই কি ছিলো এটা।ওয়াক।এটা তো পেষ্ট না তাহলে কি এটা।

–এটা সেভ করা ফোম ছিলো।যা ব্যবহার করে ছেলেরা দাঁড়ি গোফ কাটে।তুই আমাকে এটা দিয়েছিস, তোর জন্য এই অখাদ্য আমি মুখে দিলাম।

–আর আপনি জেনে শুনে আমার মুখে দিলেন,তাও আবার আপনার মুখের তা।সরুন তো বমি পাচ্ছে।

–আর বেশী পাকনামি করবি।

–আপনার টাওয়াল খুলে যাচ্ছে বিহান ভাই।

কথা টা শুনেই উনার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।তাৎক্ষনাত টাওয়াল ওর গিট ধরে উঠে গেলেন।মনে হয়ে একটু লজ্জা পেয়েছে উনি।চোখ মুখের ভাব যেনো কেমন মনে হলো।আমার দিকে তাকিয়ে ডান চোখ টিপে আবার ওয়াশ রুমে প্রবেশ করলেন।উনি এমন অসভ্যর মতো চোখ মারা শিখেছেন কবে।এই ছেলের দ্বারা দেখছি সব ই সম্ভব।খানিক পরে ওয়াশ রুম থেকে গোসল শেষ করে বের হলেন
টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে।আমি সোফাতে বসে ফোন গুতাচ্ছি।আমার হাত থেকে ফোন টা কেড়ে নিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে বললেন,আমার চুলের পানিটা মুছে দে তো দিয়া।উনার চুলের পানি ফোটা ফোটা আমার চোখে মুখে পড়ছে। আমি খানিক টা অবাক হয়ে বললাম,আমি দিবো।উনি আমার পাশে বসে বললেন,তাহলে কি আমার আর পাঁচটা বউ আছে সে দিবে।আমি উনার মাথার চুল মুছে দিতে দিতে বললাম,কেনো শ্বশুরের মেয়ে আছে না আপনার।সে কোথায় বিহান ভাই।কখনো তো আপনাকে ফোন টোন দিতে দেখি না।আমার বফ আছে সে তো সারাদিন ফোন করে।উনার মাথার পানি মোছা অবস্থায় আমার হাত ধরে বললেন,তুই এত সুইট করে কিভাবে কথা বলিস দিয়া।একটা ছেলেকে ভীষণভাবে জেলাস ফিল করানোর ক্ষমতা তোর মাঝেই আছে।এই বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী মেয়েটা কি আমার পুচকি।আমি উনার কথার মানে পুরাটায় বুঝলাম তবুও প্রশ্ন করলাম,তা বিহান ভাই ইদানিং আমাকে বউ বউ করেন কেনো?কাহিনী কী?উনি আমার হাত উনার হাতের মধ্য নিয়ে আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললেন,তুই এত প্রশ্ন করিস কেনো?তুই না আর পিচ্চি নেই বেশ বড় হয়ে গিয়েছিস।আর প্রেমিক হৃদয়ের না বলা কথা গুলো ও বুঝে নিতে শিখে গিয়েছিস।উনাকে আবার ও প্রশ্ন করলাম প্রেমিক টা আবার কে বিহান ভাই?উনি উঠে গিয়ে ড্রেসিন টেবিলের সামনে গিয়ে বললেন,লোসন কোথায় তোর দিয়া।আমি লোসন টা এগিয়ে দিয়ে বললাম,বিহান ভাই বললেন না প্রেমিক টা কে?উনি আমার গালে একটু লোসন লাগিয়ে দিয়ে বললেন,তুই ও যেটা শুনতে অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছিস আমিও সেটা বলতে হাজার বার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হচ্ছি।আচ্ছা দিয়া আমি না হয় বলতে পারছি না তুইতো হুট করেই বলতে পারিস তাইনা?এইযে তুই আর আমি আছি আর তো কেউ নেই এখন তো বলতে পারিস।

পৃথিবীর সব লজ্জা কি আমার নাকে এসে পড়লো এখন।ভীষণ লজ্জা পেয়ে বাইরে ছুটে এলাম।ইস বেলকনিতে বেলি ফুলগুলো কি সুন্দর ফুটে আছে।উনি পাশে থাকলে এই পৃথিবীর সব কিছুই সুন্দর লাগে আমার কাছে।দিয়া তুই এত বোকা কেনো সারাজীবন কানের কাছে শ্বশুরের মেয়ে করে গেলো তুই বুঝতেই পারলি না।বেলি ফুলের দিকে তাকিয়ে বললাম,আচ্ছা আমি এত বোকা ছিলাম কেনো?লজ্জায় মুখ ঢাকলাম দু’হাতে।যদিও উনি নিজ মুখে কিছুই বলেন নি।উনাকে আমি এইবার ঢাকা যাওয়ার আগে বলিয়েই ছাড়বো।ইস আম্মু যদি সেদিন জোর করে বিয়েটা না দিয়ে দিতো আজ এই মানসিক তৃপ্তি আমি পেতাম ই না।পরিবার আসলেই বিয়ের জন্য সব সময় সঠিক সিধান্ত ই নেয়।আই লাভ ইউ আম্মু।তোমার রাগি মুডি,খিটখিটে মেজাজের ভাতিজা টা না আসলেই বেষ্ট।উনার এই রাগ আমার অভ্যাস,আমার ভালবাসা এখন।উনার এই ভীষণ রাগ,অগ্নিচোখ না দেখে থাকতে পারিনা আমি।উনি না বকলে সব কিছু অসহ্য লাগে।উনি বকার পরেই ভালবাসার সুন্দর একটা ইঙ্গিত দেন।উনি ই আমার ভালবাসা উনি আমার অভ্যাস।সকালের মৃদু বাতাস এসে গায়ে লাগছে, নিচে মারুফা খালা ছোট মাছ কাটছেন।আমিও ধীরে ধীরে নিচে গেলাম।মামি আমাকে দেখে বললেন এত সকালে তুই কেনো উঠেছিস।মামিকে বললাম,বাড়ির বউ দেরিতে উঠলে কেমন দেখায় মামি বলেই হেসে রান্না ঘরে গেলাম।মামি মারুফা খালাকে বলছে, দিয়া মনে হয় ধীরে ধীরে বুঝতে শিখছে এটা ওর সংসার।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।