সময় টা গরমকাল,চারদিকে ভ্যাপসা গরম।চারদিকে গ্রীস্মের ভীষণ উত্তাপে হাঁপিয়ে উঠেছে প্রকৃতি। মাঠ ঘাট নদী-নালা শুকিয়ে খা খা করছে পানির অভাবে রাস্তাঘাটে ধুলাবালির ছড়াছড়ি।কেটে গেছে ছয় ছয় টা মাস।বিগত ছয়মাসে বিহান ভাই একবার ও নড়াইলে আসেন নি।এ শহর কি আর তাকে টানছে না।সে তো বলে এ শহরের টানে সে ঢাকা থাকতেই পারে নাহ।আসবেই বা কি করে তার তো ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম চলছিলো।তার ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম শেষ হয়ে রেজাল্ট ও বেরিয়েছে।ঢাকা মেডিকেল এ টপ করেছেন বিহান ভাই।আমিও সেকেন্ড ইয়ারে উঠে গিয়েছি।সময় টা বেশ খানিক এগিয়ে গিয়েছে।বিহান ভাই এর এমন সাফল্য পরিবারের সবাই অনেক বেশী খুশি।বিহান ভাই এর থেকে ফ্যামিলির সবাই যেনো আরো বেশী খুশি।বিহান ভাই এর রেজাল্ট যে এমন টায় হবে সেটা সবার ই ধারণা ছিলো।কিন্তু বিহান ভাই এর এ নিয়ে তেমন মাথাব্যাথা নেই।কেননা,তার এমন প্রাপ্তি এ প্রথমবার নয় তার জন্মের পর থেকেই প্রত্যেকবার ই এমন কিছু করেছেন।বহুকাল পর উনি নড়াইল আসছেন আজ।উনার এই ভীষণ ভালো রেজাল্ট এ আমার মনে হয় কিছু একটা গিফট করা উচিত।কিন্তু উনি কি গ্রহন করবেন।উনার যে মারাত্মক চয়েজ। দেখা গেলো বললো,হাউ ডিজগাস্টিং ইওর চয়েজ দিয়া।আমি পরবো এত সস্তা আর বাজে কালারের ড্রেস তুই এটা ভাবলি কিভাবে দিয়া।এটা দিয়ে বরং সর্দি মুছিস সেটাই উত্তম হবে।তাছাড়া আরো কত কি বলবেন তার ঠিক ও নেই।উনি বদলেছেন,উনার বিহ্যাভ সব কিছুই বদলে গিয়েছে কিন্তু আমার সাথে সেই ছোট বেলার মতোই থেকে গিয়েছেন।কি সমস্যা আমার সাথে উনার।উনি বলে দিয়েছেন আমাকে খবরদার বদলে যেতে বলবি না দিয়া।আমি বদলে গেলে তুই সহ্য ও করতে পারবি না।তাই আমাকে ফোর্স করবি না বদলে যেতে।
ফোন টা হাতের কাছে পাচ্ছি না।রাখলাম কোথায় সেটাও জানিনা।ইদানিং কি হয়েছে আমার। সব কিছুই শুধু ভুলে যাচ্ছি।বিহান ভাই জানলে বলবে আমাকে পাবনা পাঠাতে হবে।ফোন খুজেও কোথাও পাচ্ছি না,এই ফোনের কি হাত পা গজিয়েছে আমি সেটাই ভাবছি। তা না হলে কোথায় গেলো এই বিরক্তিকর ফোন।এই ফোন আজ পাইলে ওর খবর আছে।অনেকক্ষণ খুজতে খুজতে দেখলাম ড্রেসিন টেবিলের উপর সাজুগুজুর বক্সের উপর ই আছে।রাগে রাগে ইয়া বড় একটা আছাড় দেওয়ার সিধান্ত নিয়েও দমে গেলাম।ফোন ভেঙে ফেললে কোথায় পাবো ফোন।এটা ফোন না হয়ে অন্য কিছু হলে এর আজ সিওর ই খবর ছিলো।
–রিয়ার নাম্বার বের করে রিয়াকে কল দিলাম।
–রিয়া ফোন তুলে বললো হ্যাঁ দিয়া বল।
–বলছি একটু রেডি হয়ে রাস্তায় আয় তো রিয়া।
–কোথায় যাবি?
–একটা জিনিস কিনবো?এসে বলছি।
ফোন কেটে মামিকে বলে রাস্তায় এসে দেখি রিয়া দাঁড়িয়ে আছে।আমি আর রিয়া দুজনে রওনা হলাম।হুট করেই মেহু আপুর সাথে দেখা হলো।মেহু আমাদের দেখে ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বললো কি ব্যাপার মিসেস ডাক্তার আর ডাক্তারের শালী দুজনে মিলে কোথায় যাওয়া হচ্ছে চুপি চুপি।
–আপুকে বললাম একটু শপিং এ যাচ্ছি আপু তুমি যাবে?
–এখন দেখা হলো তাই।না হলে তো আমাকে ছাড়ায় যেতে দুজনে।
–বেশী কাজ নেই আপু তাই আর তোমাকে বলি নি।
–এইযে বিশিষ্ট নামকরা ডাক্তারের বউ,আমাদের কিন্তু আজ চিকেন ফ্রাই,আর স্পেশাল নুডুলস খাওয়াতে হবে।
–চোখ ড্যাব ড্যাব করে বললাম,টাকা নেই আপু আমার কাছে।আমি গরিব।
–দেখ রিয়া কি চিটার।এত কিপটা কবে হলি রে দিয়া তুই।বিহান ভাই তোকে টাকা দেয় না এটা জীবনেও বিলিভ করবো না।
–আসলেই দেয় না আপু।তাকে ভাই ডাকলে সে নাকি কিছুই দিবে নাহ।তাছাড়া বলে দিয়েছে আমি যেনো আদবের সাথে যা লাগে তাই যেনো চেয়ে নেই।আমি কেনো চাইতে যাবো বলোতো।তবে বিভোর ভাই এর কাছে টাকা পাঠায় মাঝে মধ্য না
নেওয়ার এক্টিং করি ঠিক ই আসলে আমি টাকা মনে মনে চাই।ভাবি যে এভাবে সেধে তো দিতেই পারে।
–রিয়া আর মেহু আপু বললো সবাই কি আর বিহান ভাই রে দিয়া।কিছু ছেলে এই সুযোগে না দেওয়ার অজুহাত খোজে।
বিভোর ভাই আপনি আর এখানেও?
তিনজনে শপিং মলে গিয়ে বিহান ভাই এর জন্য শার্ট খুজছি।কয়েকশ শার্ট খুজেও মনের মতো পেলাম না।এর ই মাঝে দেখি বিভোর ভাই।বিভোর ভাই থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট খুজছেন।গরমে বিভোর ভাই এ ধরনের প্যান্ট ই পরে থাকেন।
রিয়া আর বিভোর ভাই ঘুরতে ঘুরতে দুজনের সাথে বিশাল এক ধাক্কা খেলো।দুজন দুজন কে দেখে বেশ অবাক হয়ে যায়।বিভোর ভাই ভুত দেখার মতো চমকে গিয়ে বললেন,
–রিয়া তুমি এখানে?
–যেখানে যাবো আপনাকে কি থাকতেই হবে বিভোর ভাই।আপনি ছাড়া এমন দিন কানা হাতি কেউ নেই যে আমার মতো একটা বড় সড় মেয়েকে দিন দুপুরে ধাক্কা মেরে ফেলে দিবে।
–দেখো রিয়া আমি কিন্তু বেশ বুঝতে পারছি যে তুমি ইচ্ছা করেই আমাকে ধাক্কা টা মেরেছো।আমি হয়তো তোমাকে দেখিনি এ কথা সত্য হতে পারে কিন্তু তুমি আমাকে দেখো নি এটা মানতে পারছি না।তোমার ইচ্ছায় ছিলো আমার উপর পড়ার।
–একদম বাজে কথা বললে গলা টিপে দিবো কিন্তু?দেখুন মানুষ জন কিভাবে হাসছে।ছিঃছি আমার জীবনে এত মারাত্মক লজ্জা আমি পাই নি।
–ভাজ্ঞিস রিয়া তুমি আমার উপর পড়েছো অন্য কেউ হলে কি হতো ভাবো?
–আমি আপনার উপর নয় আপনি বরং আমার উপর পড়েছেন।উঠুন বলছি উঠুন আগে।নায়ক রিয়াজের মতো কি আজীবন পড়ে থাকতে চান নাকি?
–চোখ টিপে বললেন আমি তো সেটাই চাই রিয়া।যদি তোমার আপত্তি না থাকে।
–উঠুন আগে।
এই মহিলাদের শপিং মলে আপনার কি হে?
–এই যে বিশেষ এক ধরনের মহিলা এই শপিং মলের কোথায় লেখা আছে যে এটা মহিলাদের মল।এখানে ছেলে মেয়ে উভয়ের ড্রেস পাওয়া যায়।বরং এই দোকেন ছেলেদের জিনিস পাওয়া যায় তুমি এখানে কেনো?আমার জন্য আন্ডারওয়্যার কিনতে এসেছো বুঝি।
–ছিঃনির্লজ্জ একটা।মুখে কি কিছু আটকায় না আপনার।
দুজনে উঠে একটু স্বাভাবিক হয়ে নিয়ে একটা কসমেটিক্স এর দোকানে সামনে দাঁড়ালো দুজনে।
–আচ্ছা বাবাহ সরি!এনি ওয়ে রিয়া এই কফি কালারের ড্রেসে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।ট্রাস্ট মি!ভীষণ সুন্দর লাগছে আমি চোখ সরাতেই পারছি না রিয়া।
-কি ব্যাপার বিভোর ভাই!মতলব কি?আজ আমার এত প্রশংসা এ যেনো অতি প্রশংসা।আকাশে কি আজ দিনের বেলা পূর্ণিমার বিশাল চাঁদ উঠেছে নাকি।
–হুপ!আমি সারাজীবন ই তোমার প্রতি ক্রাশড।বাট তুমি বুঝেও না বোঝার ভান করো কেনো বলোতো।
–বাসা থেকে ভেবেই বেরিয়েছেন যে আজ আমাকে লেকফুল করেই ছাড়বেন।আমার সাথে এসব বলে লাভ নেই।
–আমার চোখের দিকে তাকাও রিয়া কি মনে হয় তোমার।এই চোখ কি বলতে চাই তুমি কি বুঝো না।
–এই চোখ তো ভীষণ দুষ্টু ছোট বেলা থেকেই দেখছি।
–আই লাইক ইউ রিয়া এন্ড আই লাভ ইউ রিয়া,রিয়েলি লাভ ইউ রিয়া।তুমি কেনো বুঝো না রিয়া তোমাকে ভাল লাগে আমার।আমি জানি এটা তুমি বুঝো।
–আপনি তো এমন সবাই কে বলেন।
–আমি প্রমিজ করছি কারো সাথে ফান করবো না তোমার মতো করেই চলবো।যা বলবে তাই।
–রিলেটিভ এর মাঝে রিলেশন টিলেশন করার ইচ্ছা নেই।
–রিলেটিভ তো কি হয়েছে।মানুষ কি করেনা।
–দেখুন আমি করবো না ব্যাস।
–ফ্যামিলি নিয়ে ভাবছো,আমি ম্যানেজ করবো।
— আপাতত কিছুই ভাবছি না।সরুণ দিয়া আর মেহু আপু খুজবে।
–খুজুক তার আগে একটা জিনিস দেখায়।
–রেশমি চুড়ি দেন তো ভাই।
–কি কালার ভাইয়া।
–লাল,নীল,সাদা,কালো,সবুজ।
–কার জন্য এসব বিভোর ভাই?
–তোমার?
–আপনি দিলে নিবো ক্যানো?
–কিছু ভেবে নিয়ে নাও।
–কি ভাববো আপনাকে,বয়েই গেছে।
–প্লিজ রিয়া,রিকুয়েষ্ট করছি।জীবনে কিছুই দেওয়ার সাহস পায় নি।এইটা ফিরিয়ে দিও না।
দোকানদার বললও,ভাই যখন রিকুয়েষ্ট করছে নিন না।
–কাউকে বলবেন নাতো আমাকে চুড়ি দিয়েছেন, ক্ষেপাবে আমাকে।
–প্রমিজ বলবো না।বাট পরে ছবি দিও।
–আচ্ছা দিবো,বাই।
–মেহু আপু বললো,রিয়া তোর হাতে কি চুড়ি।কত করে নিলো রে ডজন।
–রিয়া হেসে বললো ৬০ টাকা।
–আমাকে একট দে রিয়া,এত চুড়ি কি করবি।
–না আপু এখান থেকে দেওয়া যাবে না।দোকানে ভরপুর আছে।
–কেনো স্পেশাল কিছু আছে এতে।
–আছে তো বটেই।
–পুরা মল খুজে বিহান ভাই এর জন্য একটা এ্যাশ কালারের শার্ট কিনলাম।উনার কি পছন্দ হবে সেই ভেবে আরো ঘেমে যাচ্ছি।
–ওই দিকে মেহু আপু কার জন্য যেনো শার্ট খুজে চলেছে।আপুকে বললাম কার জন্য কিনবা আপু?
–আপু হেসে বললো ফ্রেন্ডের জন্মদিন তো তাই।
কেনাকাটা শেষ করে বাসায় ফিরে এলাম।বাসায় এসে ভাল ভাবে শার্টটা মেলে ভাবছি উনার কি সত্যি পছন্দ হবে নাকি ছুড়ে ফেলবে।এই প্রথমবার তাকে ভেবে কিছু কেনা আমার।