“আপনি থেকে যান আমার জীবনে বিহান ভাই,থেকে যান আমার হয়ে। যে থেকে যাওয়ায় আমার অধিপত্যে থাকবে শুধু।আপনার জন্য বুকের মাঝে ভীষণভাবে ক্ষত তৈরি হয়েছে আমার।আমি যেনো চোখ খুলে আবার আপনাকে দেখতে পাই।শুধুমাত্র চোখ অফ করলেই কেনো আপনি আসেন।বার বার চোখ খুলে আপনাকে দেখার চেষ্টা করেছি ঠিক তখন ই হারিয়ে গিয়েছেন আপনি।”
“চোখ খোলো দিয়া,তাকিয়ে দেখো আমি এসেছি।”
“কেনো আবার ছলনা করছেন বিহান ভাই?আপনার যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে তাইনা?তাই তো চোখ খুলতে বলছেন।”
“তোমার সাথে ছলনা করলে ছারখার হয়ে যাবে আমার হৃদয় দিয়া।”
“তাহলে চোখ খুলতে বলছেন কেনো?”
“চোখ না খুললে আমাকে দেখবে কিভাবে?”
“চোখ খুললেই আপনি হারিয়ে যাবেন,মিলিয়ে যাবেন কোথায়?এই কল্পনা থেকে আমি বেরোতে চাই না আর।প্রিয়রা কেনো কল্পনাতেই এত সুন্দর হয় বলবেন।কল্পনা গুলোতে নিজের ইচ্ছামতো প্রিয়জনের সাথে সুন্দর সময় কাটানো যায়।”
“তাকাও পিচ্চি,তাকাও আমার দিকে,তোমার বিহান ভাই সত্যি এসছে।তোমার কল্পনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে তোমার সামনে এসেছে।চোখের পানিতে তোমার লেপ্টে যাওয়া কাজল ঠিক করে দিতে এসছি আমি।তোমার মনের ক্ষত ঠিক করতে এসছি আমি।খুব ইচ্ছা করছে এই ইমোশনাল কপালে নিজের ঠোঁট ছুইয়ে দিতে কিন্তু জানোতো প্রিয় ঠোঁটের উষ্ণ ছোয়ায় মনের ক্ষত ঠিক করা যায় না,মনের ক্ষত ঠিক করতে মনের অনুভূতি লাগে।সেই অনুভূতি নিয়ে আমি দাঁড়িয়েছি দিয়া।
যদি একটা দীর্ঘতম অসুখের নাম জিজ্ঞেস করো,
আমি বলব “ভালোবাসা।”
যদি জানতে চাও, “তবে, সুখি কে?”
বুকের ছাতি ফুলিয়ে জানিয়ে দেবো,
যার হৃদপিন্ডে জড়িয়ে রয়েছে এই লাল রঙের
আশ্চর্য ম্যাজিক,
সে’ই সুখি।
লেখা: রুদ্র গোস্বামী”
এই কথাটা আমার নয় দিয়া রুদ্র গোস্বামির।কথাটা আমার মনের কথা।ভীষণ ভাল লেগেছে লাইন গুলো।”
–আমি অশ্রুসিক্ত নয়নে উনার বুক থেকে মাথা উঁচু করে উনার দিকে তাকালাম।উনি উনার দুহাতে আমার গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।এটা কি সত্যি বিহান ভাই।উনি আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললেন,এই পৃথিবীতে এই একটা জিনিস আমি সহ্য করতে পারি না।সেটা হলো তোমার চোখের পানি।প্রিয়জনের চোখের পানি সহ্য করা যায় না দিয়া।প্রেমিকের বুকে রক্তক্ষরণ করে এটা।
–রিয়া,বিভোর ভাই,তোহা আপু,তিয়াস ভাইয়া,মেহু আপু,বিভা আপু সবাই ছাদে হুড়মুড় করে প্রবেশ করে হ্যাপি বার্থডে বলে প্রবেশ করলো।আমি ভীষণ অবাক হলাম।মুখে হাত দিয়ে ঘন নিঃশ্বাস নিলাম।তারা আমাকে এইভাবে চমকে দিবে আমি তো ভাবতেই পারিনি।আমাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে বিভোর ভাই বললেন,কিরে বোন কি ভেবেছিলি তোর জন্মদিন আমরা ভুলে গিয়েছি।তোর জন্মদিন কি আমরা ভুলতে পারি।তুই এ কদিন মন খারাপ করে ছিলি তাই তোর এই খারাপ মন কে ভাল করতে আমাদের তোর এই খারাপ ভাই বোন দের এই আয়োজন।তবে হ্যাঁ তোর একমাত্র হাজবেন্ড এর প্লান ছিলো।আর আমরা দেখলাম প্লান টা ওয়াও ছিলো।তাই এ কদিন ধরে সবাই আমরা প্লান করছিলাম।
–আমি অবাক হয়ে বললাম বিভোর ভাই আপনি এমন করতে পারলেন,আমার আর একটু হার্ট এট্যাক হচ্ছিলো।সবাই ভুললেও আপনি কিভাবে ভুলে যেতে পারে এটা ভেবেও কাঁন্না পাচ্ছিলো খুব আমার।
–বিভোর ভাই আমার গালে আদরের সাথে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,পাগলি একটা শুধু কাঁদে।যতদিন তোর বিভোর ভাই বেঁচে থাকবে দিয়ার জন্মদিন ভুল হবে না।
–আপনারা কোথায় ছিলেন বিভোর ভাই।
–রিয়া, তোহা,মেহু,বিভা আপু সবাইকে এলার্ট করা ছিলো তোর জন্মদিনে এইবার আমরা এমন ভাব করে থাকবো তুই যেনো মনে মনে খুব দুঃখ করিস।আমরা নিচেই ছিলাম।বিহান এর গিফট গুলো পাড়ার ফ্রেন্ড দের দিয়ে পাঠিয়ে আমরা আড়ালে ছিলাম।তোর কাছে গিফট পাঠাতে বিভা আপুর সাহায্য নিয়েছিলাম।আপুও সব টায় জানতো।
–বিহান কে উপরে পাঠিয়ে ফানুস আর বেলুন উড়ানোর দায়িত্বে নিচে ছিলাম আমরা।আজ আকাশে রঙিন ফানুশের মতো আমাদের দিয়ার জীবন রঙিন হোক সেই কামনায় শুভ জন্মদিন দিয়া।
–বিভা আপুর দিকে অভিমান নিয়ে তাকিয়ে বললাম,বিভা আপু আমাকে বললে না কেনো তুমি?আমাকে রিতীমত ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে তুমি।তোমার উপর ও রাগ করেছিলাম যে তুমিও আমার জন্মদিন ভুলে গেলে।
–বললে কি আর সারপ্রাইজড হতি গাধী।তোর মুখে হাসি ফোটাতেই তো কিছুই বলি নি আমরা।শুভ জন্মদিন দিয়া পাখি আমাদের অভিমানি বুড়ি টা বলেই বিভা আপু আমার গাল টেনে দিলো।
–ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম ভাইয়া তুমিও।অন্যবার বলো আমার একমাত্র বোনের কি চাই তার জন্মদিনে।এইবার কিছুই বলো নি তুমি।আমার কথা ভুলে গিয়েছিলে তোমার ঘরে বউ আসার আগেই।এটা ভেবেই দুঃখ হচ্ছিলো আমার।আম্মুকে বলবো তোমার কোনদিন বিয়েই না দিতে।ভাইয়া তুমি আমাকে ভুলে গেলে আমার অনেক কষ্ট হবে।
–কি আর করা আমার এই ছোট্ট বোনের বিশাল অভিমান ভাঙানোর দায়িত্ব টা তো আমার ও আছে।আমি কি আমার একমাত্র আদরের বোনের জন্মদিন ভুলতে পারি।বিগত এগারো মাস ধরে অপেক্ষা করছি কবে আমার অভিমানি বোনের জন্মদিন আসবে আর সারপ্রাইজ দিবো।আমার বোনের যা চাই তাই দিবো আমি।আর একটুও মন খারাপ নয় কিন্তু পাগলি টা।
–মেহু আপু, রিয়া,তোহা আপু সবাই বোকা বানালে আমায়।তোমাদের সাথে কথা নেই।তোমাদের জন্য অনেক দুঃখ হয়েছে আমার।আমি অনেক কেঁদেছি আজ।
–রিয়া আর মেহু আপু বললো,এটা আমাদের গ্রেট বিহান ভাই এর প্লান।প্লান টা ভীষণ মারাত্মক রকমের সুন্দর ছিলো।আসলেই বিহান ভাই এর তুলনা কারো সাথে করা যায় না।জীবনে অনেক চমৎকার রকমের সারপ্রাইজ দেখেছি কিন্তু বিহান ভাই এর মতো এতটা মারাত্মক সুন্দর কোথাও দেখি নি।আজ যদি শিরির ফরহাদ বেঁচে থাকতো তাহলে সে ও অবাক হয়ে যেতো বিহান ভাই কে দেখে।
–বিহান ভাই চুলের মধ্য হাত চালাতে চালাতে বললেন বুঝলে রিয়া,মেহু,তোহা তার সবার জন্য অভিমান হয়েছিলো শুধু আমি বাদে।আমি ছাড়া সবার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে।হিংসা হচ্ছে তোমাদের দেখে।
–লজ্জায় উনার দিকে তাকাতে পারছি না আমি।আজ উনার চোখে উনার মুখে আমার প্রতি ভালবাসার অনুভূতি দেখেছি।এর পরেও কি বলবেন উনি আমায় ভালবাসেন না।আজ আমার মন বুঝে গিয়েছে উনার মনে আমার জন্য বিশাল অনুভূতির সম্রাজ্য আছে।আপনি আর কোনদিন এটা বোঝাতে পারবেন না যে আপনি আমাকে ভালবাসেন না।এত গুলো বছরের জমানো অনুভূতি আজ প্রকাশ করলেন কিন্তু মুখে বললেন না ভালবাসি।আপনার ওই মুখে ভালবাসি শুনতে ভীষণ ইচ্ছা করছে।তাহলে আপনার সেই শ্বশুরের মেয়ে সে কে ছিলো?তাকে কি ভুলে গিয়েছেন।সে কি আমি,ভেবেই আনন্দে ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো লাজুকতার হাসি।আপনাকে আপনার নিজের মুখে বলতেই হবে বিহান ভাই।আমাকে যা কিছুই বলেন এটা আর কখনো বিশ্বাস করাতে পারবেন না আপনার মনের দখলদার অন্যকেউ।আপনার লিগ্যাল শ্বশুরের মেয়ে আমি আর এই আমি ই থেকে যাবো পাক্কা প্রমিজ।আমার অধিকারে আমি অন্যকাউকে প্রবেশ করতে দিবো না।আপনি আইনগত ভাবে আমার,শরিয়ত মোতাবেক আমার,আর মনের রাজত্বেও আমার।আমার আমার শুধুই আমার।
–নিচে থেকে বিভোর ভাই আর তিয়াস ভাইয়া টেবিল নিয়ে এলো।টেবিলে কেক রাখা হলো।আমার হাত ধরে সবাই মিলে কেক কাটলাম।আমি সবার গালে তুলে খাইয়ে দিলেও উনার গালে তুলে খাইয়ে দিতে ভীষণ লজ্জা পাচ্ছি।ইচ্ছা করছে অথচ পারছি না।বিভা আপু,রিয়া,মেহু আপু,তোহা আপু সবাই আমাকে রিকুয়েষ্ট করেই যাচ্ছে বিহান ভাইকে কেক খাইয়ে দিতে কিন্তু আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে।কিভাবে উনার গালে তুলে খাইয়ে দিবো।উনার আর আমার মাঝে কখনো এমন কিছু হয় নি।ভালবাসলেও আর পাঁচ জনের মতো খুব গভীর ভাবে কোনো কথা হয় নি।আমি যে উনাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম ভেবেই মারাত্মক লজ্জা লাগছে।ইস কি লজ্জা।কি ভেবেছেন আমাকে উনি কে জানে।কি নির্লজ্জর মতো আমি উনার বুকে গিয়ে আকড়ে ধরেছিলাম।পরমুহুর্তে ব্যাপার টা এত লজ্জায় ফেলবে আমি তো ভাবতেই পারিনি।উনি এক পা দু’পা করে এগিয়ে আসতে শুরু করলেন আমার দিকে।নিচের ঠোঁট কামড়ে মৃদু হেসে এগিয়ে আসছেন।আঙুলে একটু কেক নিয়ে আমার গালে লাগিয়ে দিতেই ছুটে পালালাম ছাদ থেকে।ইস এত লজ্জা লাগছে কেনো?পেছন থেকে যে সবাই আমাকে এত ডাকলো আমার সেদিকে কোনো হুঁশ নেই।রুমে এসে লজ্জায় মুখ ঢাকলাম দুহাতে।তাকাতেই পারছি না লজ্জায়।
কিছুক্ষণের মাঝেই বিহান ভাই রুমে প্রবেশ করলেন আর আস্তে করে ঘরের সিটকিনী লাগিয়ে দিলেন।উনার প্রবেশে বুকে দুরুম দুরুম আওয়াজ শুরু হলো।এ আওয়াজ ছিলো ভীষণ লজ্জার।উনাকে দেখেই ঠিক করা শাড়ি আবার ও ঠিক করতে শুরু করলাম।উনার ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি আর হাতে কড়ি বেলির গাজরা যার থেকে ভেষে আসছে সুঘ্রাণ।উনি এগিয়ে আসছেন ক্রমশ আমার দিকে আমার হার্টবিট ততটাই বেড়ে যাচ্ছে।এই অদ্ভুত মানুষ টা দেখছে আমি লজ্জা পাচ্ছি তবুও এসেই আমার কোমরে হাত দিয়ে এক ঝটকায় উনার কাছাকাছি টেনে নিয়ে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে যাচ্ছেন।নিঃশব্দে এই আমায়িক হাসিতে এত সৌন্দর্য কেনো?আমাকে নড়তে দেখে বলছেন এভাবে ছটফট করছো কেনো?পারবে আমার বাঁধন থেকে যেতে।আমি নিশ্চুপ আছি।কিছুই বলছি না।আমার অন্য হাত টেনে নিয়ে উনার মুখে দিলেন,ডান হাতে কেকের টুকরো ছিলো সেটাই নিজের মুখে নিলেন।এই মানুষ টা এত অসভ্য হয়েছে কবে। কেকের টুকরোর সাথে কি আমার এই বাচ্চা আঙুল দুইটা ও খেয়ে ফেলবেন।এক হাত তো এমনি কোমর স্পর্শ করেছে অন্য হাত দিয়ে আমার হাতের কব্জি ধরে রেখেছেন।উনার ঠান্ডা হাত কোমরে যখন লেগেছে তখন থেকেই ঠান্ডায় কেঁপে উঠছি আমি।এই অসভ্য মানুষ টা সব দিক থেকে অত্যাচার করছে আমায়।না ছাড়ছে কোমর না ছাড়ছে হাত।পৃথিবীর সব অদ্ভুত শিহরণ এখন আমার মাঝে।বেডের উপর বেলির গাজরা টা রেখেছিলেন।গাজরা টা নিয়ে আমার খোপায় পরিয়ে দিতে দিতে বললেন, শ্বশুরের পিচ্চি মেয়ে যদি এভাবে লাজুকতা নিয়ে নীল শাড়ি পরে এলোমেলো চুলে, লেপ্টে যাওয়া কাজলে আমার সামনে আসে তাহলে তার শ্বশুরের ছেলে যদি ভুলভাল কিছু করে ফেলে সে দায়ভার কিন্তু শ্বশুরের মেয়েকেই নিতে হবে।
কি আধ্যাতিক কথা উনার।আবার ও লজ্জায় মুখ ঢাকলাম।উনার সামনে থেকে পালাতে মন চাইছে আমার।
লাজুকতা আর মৌনতায় কেটে গেলো আরো কিছুক্ষন।স্বাভাবিক হলো পরিবেশ।