–ভাল কথায় না গেলে অন্য ভাবে নিতে হবে কথাটা বলেই উনি জোর করে আমাকে পাজা কোলে তুলে বিছানায় এনে ফেললেন।
মানুষের হাত এত শক্ত হয় কিভাবে জানিনা?চেষ্টা করেও উনার হাতের বাঁধন থেকে মুক্তি পেলাম নাহ।আমি অগ্নিচোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।আমার অনিচ্ছায় উনি আমাকে বিছানায় এনে ফেললেন।
“এভাবে না খেয়ে থাকার মানে কি?”
“আমার ইচ্ছা।”
“শরীর খারাপ হলে তখন কি হবে?”
“আপনাকে কে ভাবতে বলেছে।”
“কেউ কিছু বলে কি আমাকে কখনো করাতে পেরেছে।আমি যা করি নিজের ইচ্ছাতেই করি ইউ নো ভেরি ওয়েল দিয়া।”
“আপনার সব ইচ্ছার দাম আছে আর আমার ইচ্ছার দাম নেই তাইনা?আপনার ইচ্ছা হলে আমাকে বিয়ে করবেন,ইচ্ছা হলে নিজের প্রেমিকার গল্প শোনাবেন,ইচ্ছা হলে নিজের প্রেমিকা ভেবে কাছে টেনে নিবেন,ইচ্ছা হলে প্রমের সংলাপ বলবেন,ইচ্ছা হলে অপমান করবেন,ইচ্ছা হলে জোর করে বিছানায় নিয়ে আসবেন, ইচ্ছা হলে বের করে দিবেন।আপনার নিজের ইচ্ছার এত দাম বিহান ভাই।একটা মেয়ে হিসাবে কি দাম আছে আমার।না কিছু আমার ইচ্ছাতে হয়,না কেউ আমায় বোঝে, না কেউ বোঝার চেষ্টা করেছে।যার যা মন চাই আমার উপর চাপিয়ে দেয়।”
“উনি রুম হিটার টা অন করতে করতে বললেন,এত রাগ অভিমান।না খেয়ে থাকলে রাগ আরো বাড়বে ছাড়া কমবে না।”
“আমার রাগ নিয়ে খাওয়া নিয়ে আপনাকে আর ভাবতে হবে না বিহান ভাই।আপনি আপনার রাগ নিয়ে ভাবুন না। আপনার প্রেমিকার সাথে মনোমালিন্য হয়েছে বলে আপনি মুড অফ করে দেখি ৫-৬ ঘন্টা এক ভাবে বই পড়েই যাচ্ছেন।আপনার কফি ঠান্ডা হয়েছে সেটাও খান নি।কারো সাথে কথাও বলেন নি।তো যান না তার সাথে সব মিটিয়ে নিন।”
“সে চেষ্টাই তো করছি দিয়া।”
“তো করুণ এখানে কি চাই?”
“তুই না খেলে ওর রাগ ভাঙবে কিভাবে?”
“আমার খাওয়ার সাথে আসলে কি সম্পর্ক।”
“তুই খেয়ে মাথা ঠান্ডা করলে তোর থেকে বুদ্ধি নিবো।”
“আমি অতটা বুদ্ধিমতি নই বুঝেছেন।বাবাহ কি প্রেম আপনার।বলবো আমি মামিকে তোমার ছেলে নিজের প্রেমিকার সাথে রাগ করে কয়েক ঘন্টা মুড অফ করে আছে।”
“আসলে ওর সাথে মিসবিহেভ করে ফেলছি?”
“ওহ আচ্ছা তাই?”
“আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম।আমি চাইনা ও বুঝে যাক আমি ওকে কতটা ভালবাসি।ও যদি আমার ভালবাসার সঠিক মূল্যায়ন না করতে পারে তাই চাইছি আরেক টু সময় নেয়।”
“উনার কথা শুনে কম্বল মুড়ি দিয়ে সুয়ে পড়লাম।একদম ই বিরক্ত লাগছে আমার উনার কথা।উনার এই প্রেমিকা নিয়ে কোনো কথা আমি সহ্য করতে পারি না।উনি ভাত মাখাতে মাখাতে বললেন দিয়া মুখ তোল আমি খাইয়ে দিচ্ছি।আমি কম্বল থেকে একটু মুখ বের করে তাকিয়ে দেখি উনি ভাত মাখিয়ে টুল নিয়ে খাটের সাইডে বসে আছেন।আমি সত্যি অবাক উনি খাবার হাতে আমাকে খাওয়ানোর জন্য বসে আছে।এটা ও বিশ্বাস করতে হবে।কি হয়েছে উনার ভূতে টুতে আবার ধরে নিতো।কম্বল মুড়ি দিয়ে জোরে বললাম আমি খাবো না কিন্তু।”
“উনি আমাকে শুনিয়ে বললেন,সারাদিন আমি খাই নি কিছু।একজন যদি চাই আমি না খেয়ে থাকি তাহলে ঘুমিয়ে যাক।আমি এখন ব্যাগ গোছাচ্ছি এখনি ঢাকা চলে যাচ্ছি।”
“উনার কথা শুনেই আমি উঠে বসলাম কারণ আমি জানি উনি যা বলবেন তাই ই করবেন।তাছাড়া উনি না খেয়ে আছেন ভেবেই কষ্ট হচ্ছে।”
“উনাকে শুনিয়ে বললাম কেউ খাইয়ে দিতে চাইছে যখন দিক।নেক্সট টাইম যেনো আমাকে আর না বকে।”
“উনি হেসে দিয়ে আমার মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বললেন,দিয়া জানিস ই তো তোকে একটু বকি।তাই বলে তুই রাগ করে চলে যাবি।তুই আমার সাথে কথা না বলে ছিলি কেনো?তুই কথা বলছিলি না দেখেই তো আমার আরো রাগ হচ্ছিলো?”
“আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,কেনো বিহান ভাই?এমন অদ্ভুত কথা কেনো বলেন আপনি?যাই হোক বাদ দেন।আপনার শ্বশুরের মেয়ে কে খুব ভালবাসেন তাইনা?”
“অনেক ভালবাসি বাট সে তো বোঝেনা।উলটা আমাকে ভুল বুঝে কষ্ট দেয় শুধু।”
“কেনো বোঝেনা?..”
“কারণ সে জানেই না তার আম্মুর জামাই তার জন্য কতটা পাগল।”
“আমাকে দেখান তো দেখতে কেমন?”
“দেখলে চোখ ফেরাতে পারবি না।পৃথিবীর সেরা সুন্দরী সে।”
“ওহ আচ্ছা!তা তাকে বলে দিন আপনার মনের কথা।”
“ভয় পাচ্ছি।”
“কেনো?”
“রিজেক্ট করে যদি।”
“আপনাকে আবার কেউ রিজেক্ট করবে।আমাকে ঠিকানা দিন আমি বলে দিবো।”
“তোকেই বলবো সিওর।বাট আজ ঘুমিয়ে পড়।এই ক্ষুদা নিয়ে ঘুমোচ্ছিলি ক্ষেপি একটা। আর হ্যাঁ প্রাইভেট যাবি নাকি সুয়ে থাকবি।”
“আমি অসহায় হয়ে বললাম প্রাইভেট যাওয়ার থেকে সুয়ে থাকা বেশী উত্তম”
উনি আর কথা না বাড়িয়ে ট্রাউজার আর গেঞ্জি পরে ঘুমিয়ে গেলেন।উনি ঘুমিয়ে গেলে উনার সুচে ফোটা আঙুল এ হাত বোলালাম আমি।মন চাইছিলো ঠোঁট ছুইয়ে দেই কিন্তু পারলাম নাহ।
কেটে গেছে প্রায় এক মাস আর কয়েক দিন বাকি আছে মাত্র।বিহান ভাই এর ছুটি ও শেষ প্রায়।উনি ঢাকা ফিরে যাবেন শুনছি।উনার ব্যাগ ও গোছানো হয়ে গিয়েছে।
সকাল ছয়টায় গোসল করে ওয়াশ রুম থেকে মাথায় টাওয়াল পেচিয়ে বের হলাম।বেরিয়েই দেখি বিহান ভাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।আমার চোখ তখন মাথায় ওঠার অবস্থা, উনি জেগে আছেন।আমি ভ্রু নাচিয়ে বললাম কি ব্যাপার আপনি জেগে গিয়েছেন কখন।
–উনি আড়মোড়া দিয়ে বললেন,হঠাত ঘুমের মাঝে ঘুরে সুতে গিয়ে দেখি আমার সামনে বিশাল ওই ড্রেসিন টেবিলের আয়নায় এক রমনী শাওয়ার নিচ্ছে।তারপর আর আয়না থেকে চোখ সরাতে পারিনি।এতক্ষণ দেখলাম অনেক কিছুই।এখন আমার এই নিষ্পাপ চোখের কি হবে দিয়া।আজ যা দেখেছি তা দেখে ভীষণ ভাবে শিহরিত, কম্পিত,চমকিত আরো অনেক কিছুই আমি।
–আমার সামনের বিশাল ড্রেসিন টেবিলের আয়না আর একবার ওয়াশ রুমের দিকে তাকিয়ে উনার দিকে তাকালাম।চোখে,মুখে বিস্ময় আমার।
–আপনি একদম ই মিথ্যা বলবেন না,দরজা তো দেওয়ায় ছিলো।
–নিজের মন কে নিজে সান্ত্বনা দিয়ে কি হবে দিয়া।আমি সত্যি যা দেখেছি তা প্রকাশ করতে পারছি না।
–আপনি এত বিশ্রি রকমের অসভ্য মানুষ কেনো?এভাবে৷ তাকিয়ে ছিলেন কেনো?
–থাক এখন আর লজ্জা পেতে হবে না।যা দেখার তো দেখেই ফেলেছি।এখন তো আর তা ফেরানো যাবে না।
–আমি আজ ই বাড়ি চলে যাবো, এই বাড়িতে আর থাকবো না।চব্বিশ টা ঘন্টা আমাকে বিরক্ত করেই যাচ্ছেন আপনি।
–উনি আমার হাত টেনে ধরে বললেন,ও বাড়িতে গিয়ে কি করবি সব রাজাকার কে এক জায়গা করবি,বাটপারি আমার সাথে চলবে না মিসেস দিয়া।কি ধুরন্ধর বুদ্ধি ভাবা যায়।একটা সদ্য বিবাহিতা মেয়ে বিয়ের পরের দিন বাবার বাড়ি গিয়ে কি বলবে আমি আর তোমাদের জামাই এর সাথে থাকবো না।এর কারণ হিসাবে মানুষ কি ভাববে শুনি।মানুষ না ভাবলেও তুই বলবি আমার জামাই এর সমস্যা আছে,মহা সমস্যা যে সমস্যার জন্য আমি চলে এসছি।তা না হলে আমার মতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলের বউ থাকবে না এটা কি হতে পারে।
সব সময় দুই লাইন বেশি বলেন আপনি?
–তাতো বুঝলাম, কি ব্যাপার কি দিয়া এত সকালে গোসলের কারণ কি?
–কোনো কারণ নেই এমনি করেছি।
–এটাও কি আমাকে বিলিভ করতে হবে আপু?
–বাবাহ আপু!জীবনে প্রথমবার আপনার মুখে আপু ডাক শুনে আহত হওয়ার উপক্রম আমার বিহান ভাই।এনি ওয়ে আপনি বিলিভ করলে করেন না করলে না করেন আই ডোন্ট কেয়ার।
–এই বিবাহিত বেয়াদব মহিলা আমাকে অনুকরণ করে কথা বলে।হাউ ডেয়ার ইউ দিয়া।
গোসল করার কারণ কি?
–মানুষ কেনো গোসল করে?
–যে মেয়ে শীতের সময় সাতদিন গোসল করে না একভাবে সে এত ভোরে গোসল করেছে তার কারণ কী?বড়ই সন্দেহের ব্যাপার।
–আমি সাত দিন গোসল করি না।কে বলেছে এমন বাজে কথা।আপনি ছাড়া কেউ বলবে না।
–কাহিনী কী এত সকালে?
–আপনি কি প্রথম দেখলেন কাউকে এত ভোরে গোসল করতে।
–বিবাহিত সব কাপল দের ই দেখেছি!আমি কি বুঝে নিবো তুই ও তাই।
–যা ইচ্ছা বুঝেন কিন্তু আমি আসল সত্য বলতে পারবো না।
–না বললেও তো অনেক কিছু বুঝি।
–কি বুঝলেন।
–কিভাবে আম্মুর এই নিষ্পাপ ছেলেটার ঘুমের ফায়দা নিচ্ছে এক বিবাহিত মহিলা।
–ঘুমের ফায়দা।
–তো তাই ছাড়া কি?এইভাবে আমাকে ঘুমের মাঝে অপবিত্র না করলেই কি নয় মিসেস বিহান।
–আর একবার ও বাজে কথা বলবেন না।আমাকে কি ওই রকম ভাবেন আপনি?আমি কি জন্য আপনার সাথে এসব করতে যাবো।
–এখন আর অস্বীকার করে লাভ কি?যায় আমিও গোসল করে আসি।এই নিষ্পাপ ছেলেটার ভার্জিনিটি এইভাবে নষ্ট করে দিলে।বিশাল বড় একটা নিউজ পেপারে উঠে আসা উচিত এই নিউজ।
–এই থামুন আপনাকে উঠতে হবে না।আপনি যা ভাবছেন তা নয়।
–আমি যা ভাবছি তাই ই।আমি তোর কাজিন দের সবাইকে এক্ষুনী কল দিয়ে বলতেছি ওয়েট।
–দেখুন কাল প্রচন্ড ঠান্ডায় আমি গোসল করতে পারি নি।এইজন্য সারারাত ঘুম হয় নি।তাই এত সকালে গোসল করেছি।
–ইয়াক থু দিয়া!এইজন্য রুমে এত বিশ্রি দূর্গন্ধ বেরোচ্ছিলো।প্রচুর বমি পাচ্ছে আমার।পিশাচিনী একটা।
দেখুন জান বাঁচানো ফরজ,ঠান্ডায় না মরার থেকে গোসল না করা উত্তম।ভুলভাল মানে খুজছেন তো কি করবো।বলেই বেরিয়ে গেলাম রুম থেকে।
কিছুক্ষণ পরেই বিহান ভাই বেরিয়ে গেলেন ঢাকার উদ্দেশ্য। উনার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি এক নজরে।উনার এইবারের যাওয়া যেনো আরো বেশী কাঁদাচ্ছে আমাকে।এতদিন সব সময় চোখের সামনে ছিলো ঝগড়া করলেও ভাল ছিলাম,তৃপ্তি পেয়েছি।
ফোনে টুংটাং করে মেসেজ এসছে,মেসেজ টা উনার ই।ইনবক্স ওপেন করে দেখি,,
“বুঝলে প্রিয়…
ভালোবাসাটা পিথাগোরাসের উপপাদ্য নয় যে প্রমাণ করতেই হবে!!
ভালোবাসাটা হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতার মতো, যা শুধুই উপলব্ধি করতে হবে! ভালবাসি মুখে বলে বোঝানো যায় না।”(কপি)