এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ৫৩

মানুষ মানুষকে মাত্র(.৫০)পয়সা কিভাবে দিতে পারে ভাবা যায়।এটা এক মাত্র ওই আধ্যাতিক মানুষ টার পক্ষেই সম্ভব।উনার জন্য গেম টা নিশ্চিত হেরে গেলাম আমি।আসলে উনাকে বোকা বানানো এতটা সোজা নয়।এর পর বিভোর ভাই বিহান ভাই কে ডেয়ার দিলেন যে কাউকে খুব জোরে একটা থাপ্পড় মারতে হবে?মেহু আপু জিজ্ঞেস করলো বিহান ভাই থাপ্পড় মারলে আপনি কাকে মারতে চান আপনার মনের ইচ্ছা কি?কাকে মারতে চান?বিহান ভাই কপাল কিঞ্চিত ভাজ করে বললেন,কেনো আবার নিঃসন্দেহে দিয়া কে মারবো।তাতে কোনো সন্দেহ নেই?আমি কোমরে হাত বেঁধে বললাম,কি বললেন আপনি আমাকে থাপ্পড় মারতে চান?এখানে এত মানুষ থাকতে আপনার নজর আমার দিকে কেনো?আমি আপনার হাতের থাপ্পড় খেতে পারবো না।রিয়া বললো বিহান ভাই ডেয়ার কিন্তু পূরণ করতে হবে আপনার সাহসের পরীক্ষা চলছে।বিহান ভাই শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে উঠে এলেন আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।উনার হাতের থাপ্পড় খেলে আমার গাল ভেঙে যাবে এটা নিশ্চিত। উনি কি মানুষ না অন্য কিছু সেটাই বুঝি না।আমি কি উনার শত্রু নাকি যে এমন করেন আমার সাথে। কেউ নিজের বউ কে এভাবে মেরে আনন্দ পেতে পারে তা উনাকে না দেখলে বুঝতাম ই না।আজ আমাকে থাপ্পড় মারুক উনার একদিন আর আমার যেকদিন লাগে লাগুক।বিহান ভাই হাত কচলাচ্ছেন আর আমার দিকে তাকাচ্ছেন।আমি তো তো করে বললাম দেখুন আমাকে যদি থাপ্পড় মারেন আপনার একদিন আর আমার যে ক’দিন লাগে লাগুক।বিহান ভাই কপাল কুচকে বললেন এই সাহস নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করছিস তুই আমার বিরুদ্ধে। ওড়ণার মুড়ো দুই হাত দিয়ে কচলাচ্ছি উনার দিকে তাকিয়ে।বিহান ভাই হাত উঠাতেই আমি চোখ খিচে অফ করলাম।ঠাসসস শব্দ হয়ে উঠলো শব্দ টা এতই জোরে ছিলো আমার গালে সত্যি মনে হয় মাড়ি নেই। গাল হাত পা অবস হয়ে গিয়েছে।কি হলো বুঝলাম না আমি এখন অনুভূতি শুণ্য। চারদিক যেনো বিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে, সব কিছু থমকে গিয়েছে।এত জোরে শব্দ হলো অথচ কোনো ব্যাথা অনুভব হলো না।তাকিয়ে দেখি বিভোর ভাই আর শুভ ভাই আলিপ ভাইয়ার গাল ধরে মালিশ করে দিচ্ছে।মানে কি থাপ্পড় টা কি আলিপ ভাইয়ার গালে পড়েছে।খানিক টা জোরে লম্বা নিঃশ্বাস টেনে বললাম কি হয়েছে আলিপ ভাইয়া।বিহান ভাই আলিপ ভাইয়ার হাতে একটা ক্যান টাইগার দিয়ে বললেন,আলিপ লাগে নিতো ভাই।আলিপ ভাইয়া হাসি দিয়ে বললেন আরে ভাইয়া না লাগে নি।এত টুকুতে লাগে নাকি।অথচ আলিপ ভাইয়ার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে উনার আসলেই লেগেছে খুব।আমি স্হির নয়নে তাকিয়ে আছি বিহান ভাই এর দিকে।বিহান ভাই টাইগার ক্যান এর মুখ খুলে উচু করে খাচ্ছেন।উনার খাওয়ার স্টাইল টা আরো সুন্দর। এই মুহুর্তে আমি উনার ক্যান খাওয়ার প্রতি ক্রাশড।আমি আলিপ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম কি হয়েছে ভাইয়া আপনার চোখ মুখ এমন ফ্যাকাসে লাগে কেনো?তোহা আপু বললো,আরে দিয়া বিহান ভাই তো তোকেই থাপ্পড় মারতে গেছিলো কিন্তু তোর পাশে আলিপ ভাইয়া থাকাতে স্লিপ করে আলিপ এর গালে লেগেছে।দুলাভাই বললেন,যাক দিয়া বেঁচে গিয়েছে না হলে এই চড় টা দিয়ার গালেই লাগতো।বিহান ভাই বলে উঠেলন,আরে আলিপ বলো না আর এই দিয়া তো পলিটিক্যাল বংশের মেয়ে।ও পলিটিক্স করেই তোমাকে থাপ্পড় টা খাইয়েছে।ও ইচ্ছা করে ঘাড় কাত করেছিলো যাতে থাপ্পড় টা তোমার গালে লাগে।আসলে দিয়ার রাগ ছিলো ও চাইছিলো তুমি যেনো কারো কাছে ভীষণ মার খাও।
‘দিয়া আমাকে কেনো মার খাওয়াবে ভাইয়া।’
‘ওইযে দিয়াকে গতকাল প্রপোজ করেছিলে সে রাগে হয়তো।বুঝলে আলিপ দিয়া কিন্তু এমন ই ভয়ানক মহিলা।একটা ছেলে প্রপোজ করতেই পারে তাই বলে মার খাওয়াবে।এবার বুঝলে আলিপ পাক্কা রাজাকার আমাদের দিয়া। ‘
আলিপ ভাইয়া কখন আবার আমাকে প্রপোজ করলো।কি বলছেন উনি এসব।এইভাবে আন্দাজে কিসব বলছেন বিহান ভাই।আলিপ ভাইয়া কোনো রিয়্যাক্ট করছেন না ক্যানো?বিহান ভাই মিথ্যা বললে আলিপ ভাইয়া তো কিছু বলবেন তাইনা?আলিপ ভাইয়ার চোখে মুখে কেমন লজ্জা লজ্জা ভাব।ভাইয়া দেখলাম রাগান্বিত চোখে আলিপ ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছে।বিভা আপু আর দুলাভাই বললো এসব প্রপোজ ট্রপজ ব্যাপার নাহ এই বয়সে এগুলা হয়েই থাকে।তোহা আপু বললো কিরে আলিপ এই ছিলো তোর মনে আগে বলিস নিতো।তিয়াস ভাইয়া,মেহু আপু,রিয়া সবাই আলিপ ভাইয়াকে বিভিন্ন কথা বলেই যাচ্ছে।আমি ব্যাপার টা বুঝে উঠতে ই পারছি না আসলে কি হচ্ছে।আলিপ ভাইয়া কিছুক্ষণ পর আমাকে বললো ছিঃছিঃদিয়া আমি ভাবতেই পারি নি তুমি এমন একটা কাজ করবে।আলিপ ভাইয়ার দিকে সন্দিহান দৃষ্টি নিয়ে বললাম কি করেছি আমি আলিপ ভাইয়া।কি করেছো জানোনা।কাল আমি যে তোমাকে প্রপোজ করেছিলাম সেটা বিহান ভাইকে বলে আমার নাক না কাটলেও পারতে।
“আপনি প্রপোজ করেছিলেন?”
“তাহলে কি ইয়ার্কি করেছিলাম।তুমি আমার ইমোশন নিয়ে খেলা না করলেও তো পারতে দিয়া।”
“দেখুন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“কাল কি ঘুমোনোর পর সব ভুলে গিয়েছো? রাতে যে মেসেঞ্জারে তোমাকে মেসেজ করেছিলাম আর তুমি না বললে বিহান ভাই কিভাবে জানলো ব্যাপার টা।তোমাকে না বলেছিলাম কেউ যেনো না জানে ব্যাপার টা।”
আলিপ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কি বলবো বুঝতেই পারছি না আমি।নিশ্চয়ই আমি ঘুমিয়েছিলাম তখন বিহান ভাই আলিপ ভাইয়ার মেসেজ দেখেছে এটা আমি সিওর।
বিহান ভাই কে বললাম এদিকে আসুন তো বিহান ভাই।
“বিহান ভাই আমার সাথে এসে বললেন,কিরে তোর মতলব তো ভাল লাগছে না এভাবে নির্জনে ডেকে কি আমাএ ইজ্জত হরন করবি নাকি।”
“নাকি রোমান্স করতে চাই।”
“সিরিয়াসলি।আমার কোনো আপত্তি নেই প্লিজ হাগ মি বেবি।”
“আপনি আলিপ কে ওসব উলটা পালটা বললেন কেনো?”
“কি বলেছি”
“আমাকে প্রপোজ করেছে কখন আলিপ।”
“আমার বউ কে প্রপোজ করে সাহস কি?কাল রাতেই একটা থাপ্পড় মারতে ইচ্ছা হচ্ছিলো বাট আজ কায়দা করে রাগ টা মিটিয়ে নিলাম।আচ্ছা আলিপের কি লজ্জা করে না এভাবে আত্মীয়ের বাসায় বছর বছর পড়ে থাকতে।”
“মানে আপনি ইচ্ছা করেই চড় মারলেন।আর আমাকেও কালারিং করলেন।”
“হ্যাঁ সাপ ও মরলো না লাঠি ও ভাঙলো না।”
“পাশে থাকা দোকান দার বললো ভাই ভাবি কি রাগ করেছে নাকি।কিছু সাজুগুজু কিনে দিন রাগ কমে যাবে?অনেক সুন্দর জিনিস আছে এখানে।”
“এখন দিলেও ছুড়ে ফেলে দিবে।”
দোকানদার কে বললাম কয়েক জোড়া কানের দুল,মালার সেট,আর চুড়ি দিন তো প্যাক করে।এমন সময় হুড় মুড় করে মেহু আপু,তোহা আপু আর রিয়া এসে ইচ্ছা মতো জিনিস নেওয়া শুরু করলো।এইদিকে লজ্জায় নাক কাটা যাচ্ছে আমার।এইভাবে একজনের পকেট খালি করানো টা লজ্জাজনক আমার কাছে।বিহান ভাই বিভা আপুকে ডাক দিয়ে বললেন আপু এসো তুমি নাও পছন্দ মতো।এমনিতেই বিহান ভাই এর এখন টাকার সমস্যা নেই।উনি একজন নামকরা ডাক্তার সাথে ফ্রিল্যান্সার।চারজনে প্রায় আট হাজার টাকার জিনিস নিলাম।তবে আমি নিয়েছি শুধুই একপাতা কালো টিপ আর কিছুই নেয় নি।উনার টাকা খরচ হচ্ছে দেখে খুব খারাপ লাগছে আমার। প্রচুর ঘোরাঘুরি করে বাসায় ফিরলাম।বাসায় ফেরার পর তোহা আপু বললো জানিস দিয়া আমি কি ভাবছি বিহান ভাই এর গফ টা না জানি কত লাকি।আমি নিশ্চিত বিহান ভাই উনার গফ কে গিফট এ গিফট এ মুড়িয়ে রাখবেন।ইস উনার গফ যদি আমি হতে পারতাম।মনে মনে বললাম উনি দামি দামি গিফট দিয়ে ভালবাসা প্রকাশ করেন না।উনি চাইলেই অনেক কিছু পারেন দিতে বাট দেন না।
রাতে ঘুমোনোর সময় রিয়া আমার হাতে একটা প্যাকেট দিলো।প্যাকেট টা খুলে দেখি প্রচুর সাজুগুজুর জিনিস। আমার চোখে তাক লেগে গেলো দেখে।সাজুগুজুর এত গুলা আইটেম দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।উনি তাহলে খেয়াল করেছেন আমি আসলে কিছুই নেয় নি দোকান থেকে।নেল পালিশ,পায়েল,গাজরা,চুড়ি,মালার সেট,লিপিস্টিক।
কেটে গেছে অনেক গুলো দিন।হালকা হালকা শীত ও পড়েছে।মেডিকেল এক্সাম ও হয়ে গিয়েছে আজ রেজাল্ট দিবে।ভীষণ মন খারাপ দুঃচিন্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি ছাদের রেলিং ধরে।ভাল লাগছে না পৃথিবীর কোনো কিছুই সব কিছু যেনো বিষন্ন লাগছে।কাল রাত থেকে বিহান ভাই এর ফোন ও রিসিভ করিনি আমি।মনের আকাশে জমেছে ভীষণ অন্ধকার।কি হবে না হবে ভেবে পৃথিবীর কিছুই ভাল লাগছে না।বাবা আর আম্মু ছাদে এসছে আমার চোখ পানিতে টই টুম্বর হয়ে আছে।বাবা আমাকে বললো মা দিয়া এতটা ভেঙে পড়ো না।আমাদের দোয়া আছে তুমি অনেক চেষ্টা করেছো ইনশাআল্লাহ ভালো কিছু হবে মা।আম্মু বললো দিয়া একদম মন খারাপ করো না।যা হবে সব ভাল হবে।মা বাবার দিকে তাকিতে ফিকে হাসি দিলাম।যে হাসির মধ্য কোনো প্রাণ নেই।আম্মু বললো আমরা একটু বাজারে যাচ্ছি একদম চিন্তা করোনা।
মা বাবা চলে যাওয়ার পর আকাশের পানে তাকিয়ে আছি।আকাশে সাদা মেঘের খেলা চলছে কি চিন্তাহীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে মেঘ গুলো।ছাদ থেকে রুমে গেলাম সোফায় বসে আছি চোখ নিচের দিক দিয়ে।
কারো উপস্হিতি অনুভব হলো পেছনে তাকিয়ে দেখি হাতে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে এগিয়ে আসছেন বিহান ভাই।উনার চোখে মুখে ভীষণ হাসি আর আনন্দ।আমি বিষন্ন নয়নে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।প্রিয়রা সব সময় ম্যাজিকের মতো কল্পনাতে এসে দেখা দিয়ে মন খারাপ করে চলে যায় কেনো?আমার মনের কোনে যে সারাক্ষণ বিচরণ করছে সে সব সময় আমার কল্পনায় বিরাজমান।উনি কি কল্পনা তে এলেন নাকি বাস্তবে।উনি আমার কাছে এসে কোনো কথা না বলেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন।উনার পরণে সাদা এপ্রণ ও রয়েছে।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।হাঁটু গেড়ে বসে আমার দিকে ফুল গুলো ধরে বললেন কনগ্রাচুলেশন ডিয়ার বউ।ফিউচার ডাক্তার মিসেস বিহান।আজ আমি ভীষণ খুশি মিসেস বিহান।জীবনের আজকে যতটা খুশি এতটা খুশি আগে কখনো হই নি আমি।উইল ইউ ম্যারি মি বউ বলেই হাতে একটা চুমু দিলেন।দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস টেনে সব ক্লান্তি আকাশ পানে উড়িয়ে দিলাম।উনার হাত থেকে ফুলের স্টিক নিয়ে উনার গলা জড়িয়ে ধরে উনার নাকের সাথে নিজের নাকের ঘষা দিয়ে বললাম আরো এক কোটি বার আপনাকেই বিয়ে করতে চাই।আপনি এসেছেন এই মুহুর্তে আপনাকেই ভীষণ প্রয়োজন ছিলো আমার।
আমি ভাবতেই পারিনি এভাবে উনি আসবেন আর আমাকে সারপ্রাইজ দিবেন।উনাকে দেখে মনের ক্লান্তি সব দূর হয়ে গেলো।
উনি আমার গায়ে একটা সাদা এপ্রণ পরিয়ে দিলেন আর বললেন রোজ অসুস্থ হবো আর তোমাকে দিয়ে হার্ট বিট চেক করাবো।এপ্রণে তোমাকে দারুণ মানিয়েছে দিয়ে।আই লাভ ইউ বউ।
বাইরে হই হুল্লোল শুরু হয়ে গিয়েছে।নিউজ টা সব জায়গা ছড়িয়ে গিয়েছে।রিয়া ও চান্স পেয়েছে আমার সাথে ঢাকা মেডিকেল এ।ফ্যামিলিতে সবার খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে।আম্মু আর বিহান ভাই আমার থেকেও বেশী খুশি।আম্মু আর বাবা এসে আমার কপালে চুমু দিলেন।নিউজ টা শুনে রাস্তা থেকেই ফিরে এসছে।রিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
বিহান ভাই এর চোখে মুখে এত আনন্দ আগে দেখি নি।আমাকে দরূন সারপ্রাইজ।দিতে ঢাকা থেকে ছুটে আসা উনার।
“ভালবাসার আরেক নাম ই বিহান ভাই”

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।