এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ৫২

নীল আর কালো রং মানেই আমার কাছে শুভ্র প্রেমের রং।যে রং আমার মন ভালো করে দেয়,যে রং মনের কোনে সুপ্ত অনুভূতির সংমিশ্রণ সৃষ্টি করে।।এই দুইটা রং এ আমার বেশীর ভাগ ড্রেস আর জিনিস পত্র।যেখানেই যায় পছন্দ হিসাবে এই রং দুইটা পছন্দ করি।আজ ও আমি ব্লু স্কার্ট প্লাজু, আর সাদা কামিজ পরেছি, গায়ে ব্লু ওড়ণা, কপালে ব্লু টিপ,হাত ভর্তি ব্লু আর সাদা কাঁচের চুড়ি পরেছি,এক পায়ে কালো সুতা পরি তাই আর পায়েল পরি নি। বিহান ভাই আজ এশ কালারের শার্ট আর কালো জিন্স প্যান্ট পরেছেন উনার সৌন্দর্য আলাদা ভাবে প্রকাশ করার কিছুই নেই আজ উনি কালো সানগ্লাস ও পরেছেন লুকিং পুরাই ড্যাশিং উনি।
বাবা দেখি আম্মুকে বলছে,আচ্ছা দিয়ার আম্মু তুমি কেমন মা বলোতো।মেয়েটা যে শাড়ির অভাবে পেটিকোট পরে কামিজ এর উপরে তোমার চোখে যায় না।এত শাড়ি কি করবা মেয়েকে দিতে পারো না ওর শখ করে শাড়ি পরতে।অনেক দিন ধরেই দেখি দিয়া পেটিকোট পরে প্রায় প্রায়।বাবার কথা শুনে হোচট খেলাম আমি।আম্মু বলছে শাড়ি আর তোমার মেয়ে ভাবা যায়।আমি তো কোনদিন দিয়াকে পেটিকোট পরতে দেখলাম না তুমি কবে দেখলে বলোতো।বাবা শান্ত কন্ঠে আমার দিকে ইশারা করে দেখালেন,ওইযে দেখো তোমার মেয়ে।আম্মু তো বিশ্রি ভাবে বলে উঠলো ওটা পেটিকোট না প্লাজু মানে সালোয়ার।আজকাল যে কি সব সালোয়ার উঠেছে আমার কাছে বিশ্রি লাগে দেখতে।কেনো নরমাল সালোয়ার আর কামিজ কি খারাপ লাগে।নরমাল সালোয়ার পরলে কত সুন্দর লাগে দেখতে তা না কিসব পরে।রাস্তা ঘাট যেখানে যাবো এই প্লাজু পরা সব মেয়ের।বুড়ো বুড়ো মহিলারাও দেখি এখন এসব পরে মানুষ তো বয়সের সাথে মানিয়ে পোশাক পরবে তাইনা।আম্মুকে বললাম আম্মু প্লাজুর মান সম্মান আর রাখলে না তুমি।তুমিও পরো একদম কিউট লাগবে তোমাকে একদম হিরোইন লাগবে কথাটা বলেই হাসিতে পেট ফেটে যাওয়ার উপক্রম আমার।বাবা হেসে দিয়ে বললেন, তোমার আম্মু স্ট্রোক করবে এক্ষুণি। এমনি অন্যরা পরে তা নিয়ে যে ক্ষোভ। দূরে বিহান ভাই দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছেন।আম্মু বললো আমার সাথে ইয়ার্কি হচ্ছে ফাজিল মেয়ে।আম্মু আর বাবার থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলাম।
টার্মিনাল থেকে বাসে উঠলাম আমরা সবাই।আজ শুভ ভাইয়া ও যাচ্ছে আমাদের সাথে।ভাইয়া থাকলে বিহান ভাই তো আরো বিরক্তিকর কথা বলেন যেনো ভাইয়া বুঝতে পারে উনি আমাকে ফুফাতো বোনের নজরেই দেখেন।আমি আর রিয়া এক সিটেই বসেছি,মেহু আপু আর তোহা আপু এক সিটে,বিহান ভাই আর শুভ ভাইয়া এক সিটে,আলিপ ভাইয়া আর বিভোর ভাই এক সিটে, বিভা আপু আর দুলাভাই এক সিটেই বসেছে।আজ আর কপোত কপোতিরা পাশাপাশি বসে নি কেউ ভাইয়ার সামনে আমি আর বিহান ভাই ব্যাপার টা কেমন দেখায় আবার তোহা আপুর সামনে শুভ ভাইয়া আর মেহু আপু বাড়ি গিয়েই কুট কাচারী করবে তাই এভাবেই বসা সবাই।বাসের মধ্য বিহান ভাই আর আমার সাথে কথা বলার সুযোগ পান নি তবে চোখাচোখি হয়েছে বেশ কয়েকবার।বাসের মধ্য বাদাম বিক্রি করছে একটা ছেলে। বাদাম কিনে শুভ ভাইয়ার দিকে ছুড়ে দিয়ে বললাম ভাইয়া বাদামের খোসা গুলো ছড়িয়ে দাও।বিহান ভাই বাদামের প্যাকেট টা ক্যাচ ধরে বললেন শুভ দিয়াকে এমন ছেলে দেখে বিয়ে দিতে হবে যে বাদামের খোসা ছড়িয়ে দিতে পারে।বলেই উনি বাদাম গুলো খাওয়া শুরু করলেন।আমি উনার খাওয়া দেখছি আর লুচির মতো ফুলছি আমার বাদাম উনি এইভাবে খাচ্ছেন।খাওয়া শেষে খোসা গুলো প্যাকেটে ভরে আমার দিকে ছুড়ে মারলো।আমি একটু মুখ কালো করে রইলাম।
পার্কের সামনে গিয়ে বাস থামতেই সবাই ধাক্কাধাক্কি করে নামছে যা দেখে বিহান ভাই ভীষণ বিরক্ত।এত ধাক্কাধাক্কি উনার ভাল লাগছে না।যদিও উনার বিরক্ত হতে বেশী টাইম লাগে না।সেকেন্ডের মাঝে বিরক্ত হয়ে পড়েন।এইদিকে আমার চিন্তা ভাবনা ক্লাস ফাইভের বাচ্চাদের মতো যে আমি সবার আগে নামবো অনেক ধাক্কাধাক্কি করে কয়েকজনের পরেই নামলাম।সারারাস্তা গাছে গাছে লাগানো ওয়ালে ওয়ালে লাগানো পোষ্টার পড়তে পড়তে এসেছি তাও বেশ জোরে জোরেই পড়তে পড়তে এসছি যা নিয়ে বিহান ভাই ইশারায় কয়েকবার চোখ রাঙানি দিয়েছেন।উনার চোখ রাঙানির ফলে মনে মনে পড়েছি বাকিটা।
পার্কে ঢুকেই দেখি আরিফ ভাইয়া উপস্হিত।উনাকে আমিই বলেছিলাম যে আমরা পার্কে এসছি।উনাকে দেখে বিভা আপু বিভোর ভাই সহ বাকিরা ভীষণ খুশি হলেও বিহান ভাই মারাত্মক অখুশি কারণ আলিপ আর আরিফ ভাই কে উনার পছন্দ হচ্ছে না।উনি জেলাস ভীষণ জেলাস উনি উনার বউ এর পাশে কাউকে পছন্দ করেন না।পার্কে সবাই ঘুরাঘুরি করছি আরিফ ভাইয়া আমাকে একটু আড়ালে ডেকেছেন বিকজ উনি তোহা আপুর সাথে একটু ভাব ভালবাসা করতে চাইছেন বাট তোহা আপু তো বিহান ভাই এর প্রতি ক্রাশড।এইদিকে বিহান ভাই ভাবছেন আরিফ ভাইয়া আমার সাথে প্রেম করবেন।যদিও আমি এখনো উনাকে কিছুই বলি নি কারণ উনি জিজ্ঞেস না করেই শুধু রাগ দেখান।আমাকে আর আরিফ ভাইয়াকে দেখে বিহান ভাই দূরে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন।উনার রাগের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আগে আমি বিহান ভাই এর কাছে গিয়ে বললাম শুনুন না বিহান ভাই।উনি কোনো কথার উত্তর দিয়ে কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।বুঝলাম উনি রাগের দেশে প্রবেশ করছেন।
‘তাই বলে উঠলাম ওইযে আলিপ ভাইয়া না বিহান ভাই তোহা আপুকে ভালবাসে আমাকে সেটাই বলতে ডেকেছিলো।’
‘আমার কথা শুনে বিহান ভাই আশ্চর্য বনে গেলেন। আমাকে বললেন হোয়াট?ও তোকে নয় তোহা কে লাইক করে সিরিয়াসলি।’
‘আরে হ্যাঁ বিহান ভাই সত্যি।’
‘ভালবাসুক আর যায় করুক সেটা তোকে বলছে কেনো?দুনিয়ায় কি আর মানুষ নেই?’
‘আমি কি বলতে বলেছি নাকি,উনি যদি বলেন আমি কি করবো?’
‘উনি?হোয়াট দ্যা হেল।আরিফ কে উনি বলছিস কেনো?’
‘দেখুন আপনি এত কথার ভুল টুল ধরবেন নাতো।আমি কি অত বুঝে বলেছি নাকি।’
‘হ্যাঁ তুই তো খুকি।দুনিয়ার অসভ্য কাজে তোকে পাওয়া যায়।অসভ্য মহিলা কোথাকার।’
‘এইযে দেখুন আপনি আবার শুরু করেছেন কিন্তু।’
‘তুই কি ঘটক হয়েছিস দিয়া।একটা কাঠের বাটওয়ালা লম্বা বড় ছাতা কিনে দেই।ওইটা নিয়ে ঘুরবি আর ঘটকালি করবি।পেশা হিসাবে খারাপ না।মাসে যদি চার পাঁচ টা বিয়ে দিতে পারিস এমনিতেই বিশ হাজারের উপরে ইনকাম হবে।আরো যদি কোনো সমস্যা থাকা পাত্র পাত্রীর বিয়ে দিতে পারিস হিউজ ইনকাম।হিউজ ইনকাম দিয়া ভেবে দেখ।তুই তোর বাবা,তোর কাকারা,তোর দাদা সবাই মিলে এই ব্যাবসায় লেগে পড় ভালো ইনকাম।’
‘দেখুন আপনি কোথায় চলে গেলেন।আমি জাস্ট হেল্প করছি একজন ভালবাসার মানুষকে। ‘
‘তোর হেল্প এর চক্করে আরিফ আমার বউ এর প্রেমে পড়ে যাবে।ঘটকালি থেকে অনেক কিছু হয়ে যাবে।দেখি তোর ফোন টা দে।’
‘ফোন টা উনার হাতে দিতেই আরিফ কে ব্লক করে দিলেন আর বললেন নাউ টেনশন ফ্রি হলাম।’
‘ছিঃছিঃ আরিফ ভাইয়া কি ভাববেন উনাকে এইভাবে ব্লক দিয়ে দিলাম।’
‘আরিফ কি ভাববে তাতে তোর কি?
আরিফের ভাবনা নিয়ে তোকে কে ভাবতে বলেছে।একটা থাপ্পড় মেরে দাঁত এর মাড়ি ফেলে দিবো যাতে মাছের মাথা আর গরুর হাড্ডি খেতে না পারিস।’
‘আপনি সব সময় এমন আধ্যাতিক কথা কেনো বলেন? ‘
‘মুখে একটা ফু দিয়ে কপালে পড়া চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বললেন,আমি মানুষ টাই আধ্যাতিক যে তাই।’
‘উনি আমার দিকে তাকিয়ে গালে একটা আঙুল ঢুকিয়ে দুই দাঁতের মধ্য দিয়ে কামড়ে ধরে রেখে দুই মিনিট আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। অতঃপর বলে উঠলেন প্রেম কি ক্যান্সারের থেকেও ডেঞ্জারাস?এই রোগে আকৃষ্ট মানুষ আর কখনো প্রেমের মরণ ব্যাধি থেকে বাঁচতে পারে নি।’
‘সত্যি কি প্রেম মরণ ব্যাধি বিহান ভাই?’
‘হ্যাঁ।’
‘মরণ ব্যাধি ই যদি হবে তাহলে আমার হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছা করে কেনো?’
‘সব সময় ই কি বাঁচতে ইচ্ছা করে?’
‘না আপনার সাথে মনোমালিন্য হলে তখন আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না।তখন মরে যেতে ইচ্ছা করে।’
‘হুম পিচ্চি প্রমের মরণ ব্যাধি মানে জীবনের মৃত্যু বোঝায় না,প্রেমে পড়ে বার বার তার প্রমেই আসক্ত হওয়াকে বোঝায় যেখান থেকে চাইলেই আর ফিরে আসা যায় না।প্রেমে পড়া একটা দরূণ নেশা,যে নেশা যে কোনো নেশা জাতীয় পণ্যর থেকে ভয়ংঙ্কর।পৃথিবীর সব নেশা থেকে চাইলেই বের হওয়া যায় কিন্তু প্রেমের নেশা থেকে আর বেরোনো যায় না।আমি যদি আগে বুঝতাম এ নেশা আমাকে এভাবে ঘায়েল করবে,রাতের ঘুম কেড়ে নিবে,সারাক্ষণ তার ভাবনায় ঘিরে রাখবে আর বের হতে দিবে না আমি প্রমে পড়ার আগে আরো পাঁচবার ভাবতাম।কিন্তু সমস্যা হলো আমি জীবনে সব সিদ্ধান্ত অনেক বার ভেবে ঠান্ডা মাথায় নিয়েছি শুধু প্রমে পড়ার ব্যাপার টা না ভেবেই নিয়েছি।এই প্রেম আমার অনুমতি ছাড়া আমার ভেতরে প্রবেশ করেছে।এই সর্বনাশা প্রেম আমাকে একটা পিচ্চির কাছে মাথা নোয়াতে বাধ্য করেছে।’
‘উনার এত সুন্দর ভালবাসার বর্ণনা শুনে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম হে আকাশ তুমি তাকে আমার নামে লিখে দাও।হে আকাশ তোমার প্রতিটা বর্ষনে জানিয়ে দিও সে আমার,তোমার প্রতিটা গর্জনে জানিয়ে দিও সে আমার।অভিশপ্ত হোক সে যার নজর আমার একান্ত নিজের মানুষটার উপর পড়বে।’
উনি আমার দিকে ঝুঁকে এসে বললেন,আমি আমাকে লিখে দিয়েছি তোমার নামে।তোমার নামে রোদ্দুর নামে রোজ আমার আঙিনায়।
এমন সময় বিভোর এসে বললেন,এই দিয়া আয় আমরা একটা গেম খেলবো।
সবাই গোল হয়ে বসে আছি এখন ট্রুথ আর ডেয়ার গেম খেলা হবে।আমি ভীষণ এক্সসাইটেড এই গেম খেলা নিয়ে।প্রথমেই আমি ডেয়ার নিলাম।আমাকে কানে কানে ডেয়ার দিলো মেহু আপু যে বিহান ভাই কে মেসেজ দিয়ে ৫০০ টাকা নিতে হবে।তাহলেই ডেয়ারে জিতে যাবো।
বিহান ভাই কে মেসেজ করলাম শুনুন না বিহান ভাই বাসা থেকে টাকা আনতে ভুলে গিয়েছি।আমার বিকাশে ৫০০ টাকা দেন তো বাড়ি গিয়ে দিয়ে দিবো।
উনি সিন করে চুপ আছেন?
আবার মেসেজ দিলাম দিবেন টাকা?
উনি বললেন হুম দিবো.৫০০ টাকা।
আমি খুশি মনে বললাম ওকে দিন।
টুং টাং করে মেসেজের সাউন্ড এসছে আমি লাফিয়ে উঠে বললাম,গেম এ জিতে গেছি আমি মেহু আপু।মেহু আপু বললো কই দেখি দেখি।মেহু আপুর দিকে ফোন এগিয়ে দিতেই মেহু আপু বললো দিয়া এটা তো.৫০ ভালো ভাবে দেখ?আমি তাকিয়ে দেখি সত্যি ৫০০ টাকা দেন নি?আমি ক্ষিপ্ত নয়নে তাকিয়ে বললাম,আপনি বললেন দিবেন এখন দেন নি কেনো?
উনি বললেন সমস্যার গোডাউন ভাল ভাবে তাকিয়ে দেখ আমি ৫০০ লিখি নি।আমাকে ডেয়ার গেম এ হারানো অত সোজা নয় বুঝলি।
মানে একটা মানুষ বিকাশে. ৫০ টাকা ও দিতে পারে।এসব উনার পক্ষেই সম্ভব।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।