এক্সকিউজ মি!আপনি আমার ওড়ণা দিয়ে আপনার ওই জেল ফেল লাগানো চুল মুছতেছেন।আমার ওড়না ছাড়ুন, ছাড়ুন বলছি।কথাটা বলেই উনার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকালাম।
“উনি আমার মুখের উপর ঝুঁকে এসে বললেন, হোয়াট ইজ ইওর প্রব্লেম মিসেস বিহান।বউ আমার,ওড়না আমার বউ এর, আপনি এত রিয়্যাক্ট করছেন কেনো?আমি তো আপনাকে কিছু করছিনা।উনি নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে দুষ্টু হাসি দিতে দিতে বললেন খুব বেশী রিয়্যাক্ট দেখালে গায়ের জামা খুলে মুছতে শুরু করবো।”
“উনার কথা শুনে নিজের দিকে তাকালাম জামা কি আদেও ঠিক ঠাক আছে আমার।উনার পক্ষে অসম্ভব কিছুই নেই।সেটা আমার থেকে ভালো আর কেউ জানে না।ওড়না টানাটানি না করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি আমি।বলতে লজ্জা লাগলেও তার লুকিং কিন্তু সো হট।পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে আছি আমি পরনে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, গায়ে লাল গেঞ্জি, পুরা শরীর ভিজে আছে মাথার চুল ভরা পানি,সদ্য সাওয়ার থেকে আসা একটা হ্যান্ডসাম ছেলে দেখেতে কেমন লাগে বোঝায় যাচ্ছে।উনি চোখ ইশারা করে বললেন কি ভাবা হচ্ছে ভাবুক মহিলা।”
“উনার দিকে কেনো তাকিয়ে আছে সেটা না বলে বললাম,ভাবছি আপনি কোন লজিক এ মধ্যরাতে হাইয়ার ম্যাথ এ করতে দিলেন।আমার এডমিশনে কি হাইয়ার ম্যাথ আছে?তবুও আপনি আমাকে কেনো এই বিশ্রি সাব্জেক্ট করতে দিয়ে হেনস্হায় ফেললেন।তাও আবার আমার শান্তির ঘুম নষ্ট করে।”
“উনি ভ্রু কুচকে বললেন,তোর শরীরে কি এলার্জি আছে ভয়ানক মহিলা একটা।তাও দুই দুইটা এলার্জির ওষুধ খেয়েছিস।ওষুধ খেয়ে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছিস।তুই জানিস অহেতুক ওষুধ খেলে শরীরের জন্য কত ক্ষতিকর।তুই কি তোর বাপ দাদার মতোই হয়েছিস পুরাটা।খান শুধু বংশে না কাজে কামে রাজাকার দের কোনোকিছুতে কম না।ইয়াং জেনারেশন এর সর্বনাশ করতেই তোর আর তোর গুষ্টির জন্ম।”
“বুঝলাম না উনি কোন কথা থেকে কোথায় চলে গেলেন।আর এখন কি কি লজিক দিবেন।উনার দিকে তাকিয়ে বললাম আমার বংশ কি আপনার বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছে।বাপ,দাদা কে কি করেছে আপনার।”
“না এইযে ওষুধ খাবি তুই আর তোর কিছু হলে সমস্যা তোর বাপের জামাই এর।তোর বাপের জামাই এর একমাত্র বউ এর কিছু হলে তার একমাত্র জামাই টেনশনে টেনশনে ডিপ্রেশন এ চলে যাবে।তার মানে একটা ইয়াং ছেলে ডিপ্রেশন এ যাবে। একটা ছেলে ডিপ্রেশন এ যাওয়া মানে একটা একটা জেনারেশন এর ক্ষতি।”
“বলছি ডাক্তার না হয়ে কুটিল, জটিল ব্রেইনের পুরুষ হতেন সেটাই বেটার হতো।এত হাবি জাবি চিন্তা আপনার মাথায়।”
“চিন্তা এখন আরেক টা সেটা হলো এক্ষুণি তুই রাতের খাবার খাবি।রাতে না খেয়েই ঘুমিয়েছিস তুই।খাবার এনেই রেখেছিলাম ঝটপট খেয়ে নে।”
“দেখুন এমনি আমার খাবার খেতে ভাল লাগে না।ভাত মোটেও ভাল লাগে না।এই মধ্যরাতে কিছুতেই খাবো না।”
“তুই খাবি তোর ঘাড় খাবে।তোর বাবাকে বল আমাকে প্রতি মাসে সেলারি দিতে তার মেয়েকে ভাত খাইয়ে দেওয়ার জন্য।কথা দিচ্ছি মুখ দিয়েই খাইয়ে দিবো”
“ইয়াক শুনেই বমি পাচ্ছে।আপনি মুখ দিয়ে দিবেন আর আমি খাবো।কারো খাওয়া প্লেট মগে তাই আমি খাই না।আর কারো মুখের তা।ছিঃভাবতেই গা গোলাচ্ছে আমার।”
“উনি কপাল কুচকে বললেন,আসলেই পুচকে তুই সেটা তোর কথাবার্তায় প্রমানিত।বলেই উনি ভাত মাখিয়ে আমার মুখে পুরে দিয়ে বললেন খেয়ে নে আগে।না খেয়ে খেয়ে ওজন হচ্ছে ৩৫ আমার ওজন জানিস কত ৭৫ কেজি।আমার অর্ধেক ও না।কিছু না হোক আমার সাথে ওজন এর ব্যালেন্স টা ঠিক ঠাক রাখ নইলে সমস্যা আছে ফিউচারে।”
“আমি অবুঝ বাচ্চাদের মতো ভাত খেতে খেতে বললাম কিসের সমস্যা বিহান ভাই?আর আমি পুচকে ক্যানো?..”
“ক্যানো পুচকে সেটা বুঝিস না। এখনো আমাকে ভাই ডাকিস তুই।আমি কি তোর জাতীয় ভাই নাকি।তোর বাপের সম্পত্তির ভাগ তো পাবো না।পাবো তার মেয়ের ভাগ আমি।কোনো বউকে দেখেছিস বর কে ভাই ডাকতে।”
“আপনি কোনো বরকে দেখেছেন মধ্য রাতে বউ কে ডেকে তুলে রোমান্স না করে পড়াতে বসাতে।খোজ নিয়ে দেখেন এই মধুর রাতে বর রা বউ দের কত্ত আদর করে।”
“তোর সাথে রোমান্স করতে গেলে তুই এই জেলার মানুষ এক জায়গা করে ফেলবি।আমার মান ইজ্জত যা আছে সব জাবে। তোকে কি আমি চিনি না।মুখের খাবার দিতে চাইলে যে বমি করতে চায় সে কি বুঝবে রোমান্স এর। এসব গভীর ভালবাসা বোঝার বয়স তোর হয় নি বুঝলি।”
উনি যে কি বললেন আসলেই বুঝি নি আমি।বিস্তারিত জানতে ও চাইলাম না আমি।।কি বলতে কি বলবে তার ঠিক নেই।খাওয়া শেষ হলে বিহান ভাই আমাকে বিছানায় নিয়ে বসালেন।উনি সুয়ে পড়লেন আর আমাকে বললেন পা টিপে দে ভাল ভাবে।উনার কথা শুনে আমার চোখ কপালে কি বলে এখন আমি পা টিপবো।বিছানা থেকে এক লাফে নেমে বললাম অসম্ভব আমি পারবো না।আমার আটচল্লিশ কেজি ওজন কে আপনি পয়ত্রিশ বলেছেন।
উনি আমার হাত টেনে ধরে বিছানায় বসিয়ে বললেন, হাইরে মুটি এত মোটা হচ্ছিস ক্যানো?আগে ভাবতাম যে শুকনো তুই একটা লাথি মারলে নড়াইল থেকে যশোর গিয়ে পড়বি।এখন দেখছি তা আর হবে না।নড়াইলেই থেকে যাবি।তোকে কোলে তুলে নিয়ে প্রেম করা টা আর হলো না।যক গা মধ্য রাতে তোকে খাইয়েছি যাতে তোর গায়ে বল হয় আর আমার পা টিপে দিতে পারিস ভালভাবে।কষ্ট করে খাইয়ে দিয়েছি নে এখন পা টিপে দে।
“উনার এমন প্রস্তাবের জন্য মোটেও রেডি ছিলাম না আমি।এক বাক্য বলে দিলাম দেখুন আমি পারবো না। ”
“দিয়া স্বামির সেবা যত্ন করলে প্রচুর নেকি বুঝলি।এখনি সুযোগ একটু ভাল করার।”
“রাগে রাগে পা টিপছি আর বলছি কোথায় আমাকে নিয়ে একটু রোমান্স করবে তা না পা টেপাচ্ছে।”
“আহ!রোমান্স। কি করি বলতো তোকে দেখে আসলে ওইসব ফিল আসে না দিয়া তাই রোমান্স করতে পারি না।”
“ফিল আসবে কিভাবে আপনার তো সমস্যা আছে।ডাক্তার দেখান না ক্যানো?”
“কি সমস্যা আছে আমার।”
“তা কি আমি বুঝি।মেহু আপু যে কি সমস্যার কথা বললো বুঝলাম নাহ।”
“মান সম্মান তো আমার পুরাই গেছে দেখতেছি।মানে আমাকে নিয়ে এইগুলা আলোচনা হয়।”
“ইয়ে বিহান ভাই মেহু আপু কিসের কথা বলেছে।”
“তোর ছোট মাথায় এসব ঢুকবে না।তুই পা টেপ মন দিয়ে।কাল ই তোর বাবাকে গিয়ে বলবো শ্বশুর মশাই আমার বউ কে আমার হাতে তুলে দিন।”
“মানে।”
“বাংলা ভাষায় বলেছি।”
“ভুলেও না।বাবার এমনি মেজাজ খারাপ।আম্মু ভাইয়া আর মেহু আপুর বিয়ের কথা বলেছিলো শুনেই বাবা আপত্তি করেছে।সে নিজেদের মাঝে আত্মীয়তা করবে না।নিজেদের মাঝে বিয়ে হলে নাকি সম্পর্ক ভাল থাকে না।বাবা চান না তার কোনো আত্মীয়ের সাথে কোনো ঝামেলা হোক।তাই সে এ বিয়ে চাইছে না।এখন আপনি কিছু বললে আরো ঝামেলা হয়ে যাবে বুঝেছেন।”
“তোর বাবার সমস্যা কি?দুজন ভালবাসার মানুষ কে আলাদা করতে উঠে পড়ে লেগেছে।তার মানে আমাদের সময় ও এমন করবেন তাইতো।ভিলেন রাজিব মেনে না নিলে আমাদের বিয়ে হবে না এ নেহি চালতা।হামারা রিস্তা কাভি নেহি টুট গ্যায়া।”
“বাবা কে রাজিব বলছেন।তাহলে আপনি মিশা সওদাগর।”
“হ্যাঁ আর তুই হলি নায়কা নাসরিন।ভালো ভাবে পা টিপে দে আমি ঘুমোলাম।”
পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি আমি বিহান ভাই এর কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছি আর উনি রুমে নেই।ঘুম ভাঙতেই অবাক আমি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল সাড়ে আটটা বাজে।আড়মোড়া দিয়ে বেড থেকে উঠে বেলকনিতে গেলাম।বিহান ভাই কে দেখা যাচ্ছে গেটের বাইরে।বিহান ভাই,বিভোর ভাই আর কয়েক টা ছেলে আড্ডা দিচ্ছে চায়ের দোকানে।সবার মাঝে ওই একটায় মুখের দিকে আমার বার বার তাকিয়ে দেখতে ইচ্ছা করছে।উনার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি আর ব্রাশ করছি আমি।কিছুক্ষণ পরে বিভোর ভাই এর আম্মু এসে বললেন দিয়া দ্রুত রেডি হয়ে নে রোদ ওঠার আগেই বেরোবো।
রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম ছোট মামির সাথে। সাথে বিহান ভাই আর বিভোর ও আছেন।আমার মুড অফ বিহান ভাই এর সাথে কথা বলছি না।বিহান ভাই জিনিস টা খেয়াল করেছেন যে উনার সাথে কথা বলছি না।মামি আর বিভোর ভাই মিষ্টি কিনতে গেলে অটোর মাঝে আমি আর বিহান ভাই একা রইলাম।বিহান ভাই বলছেন,কাল রাতে কেউ একজন আমার পায়ের উপর ঘুমিয়ে পড়েছিলো।তার গরম নিঃশ্বাস পায়ের উপর পড়তেই আমার ঘুম ভেঙে গেলো।তাকিয়ে দেখি ঘুমন্ত পরী ঘুমোচ্ছে।আস্তে করে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে আমি বাইরে ডিভাইনে ঘুমোলাম।আমি কোনো উত্তর দিলাম না উনার কথায়।গতরাতে উনার বলা একটা কথা ভীষণ খারাপ লেগেছে আমার।