আমজাদ সিকদারের চকচকে গাড়িটা লম্বা জ্যামের কবলে । বারবার তিনি হাত ঘড়ি দেখছেন। এই নিয়ে বিশ মিনিট হতে চলল,জট ছোটার নাম নেই। এই জ্যামের মুখাপেক্ষী হবেন না বলেই প্রতিদিন ভোরে বের হন। কিন্তু আজ,আজ আর রক্ষে পাওয়া গেল না।
'পৃথিবীটা কী অদ্ভূত পিউ ! আমরা একই বাড়িতে থাকব,একই ছাদের নীচে। সামনাসামনি, কাছাকাছি, মুখোমুখি আবার। অথচ আমাদের মধ্য থাকবে আকাশ সমান দূরত্ব। যে আকাশের প্রতিটি মেঘ অসিত , কুচকুচে, শ্রী- হীন হবে। যেই তোকে এত গুলো বছর স্বযত্নে,নিজের হিসেবে কল্পনা করে এলাম, সেই তুই হবি এখন আমার বড় ভাইয়ের বউ।'
প্রখর তাপের মধ্য দুপুর। ঘড়ির কাঁটায় টিকটিক করছে দেড়টা। অফিসের সবাই লাঞ্চ করতে ঝটপট উঠল। মারিয়া মনিটর বন্ধ করে ব্যাগের চেইন খুলল। মা টিফিন দিয়েছেন ওকে। পরোটা আর ডিম পোচ হয়ত। খিদেও পেয়েছে বেশ। সে বাটি বের করতে গেল,এর মধ্যে সাদিফ এসে পাশে দাঁড়ায়।
' এই ম্যালেরিয়া,লাঞ্চ করবেন না?'
মেয়েটা দুচোখ ছাপানো বিস্ময় সমেত তার শক্ত চিবুকটা একযোগে দেখে যায় । বাকরুদ্ধ সে,হতবিহ্বল।
পেছনে হাঁটতে হাঁটতে ইকবাল, পুষ্পকে হা হুতাশ ভঙিতে বলল,
' সাহস দেখেছো? ব্যাটা আস্ত একটা জল্লা*দ! ভয়ড*র নেই।'
পিউ ঘা*বড়ে গেল। বুকের কম্পন জোড়াল। জ্বিভে ঠোঁট ভিজিয়ে কাঁ*পা- কাঁপা পল্লবে তাকায়। ধূসরের পূর্ন দৃষ্টি তার ওপর। পরপর ঠোঁট এসে ভেড়ে ওর কানের পাশে। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,
'একটু কাছে এলেই তো হাঁপানি রোগীর মত ছ*টফট করিস। রোমান্টিক হলে সুস্থ থাকবি?'
সব বুকের সাথে চে*পে রুদ্ধশ্বাস সমেত, ছু*ড়ে ফেলল বিছানায়। ফ্লোরের গুলো তুলে, সোজা হয়ে, কোমড়ে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস টানল। অথচ,ওষ্ঠপুটের সবদিকে জ্বলজ্বল করছে হাসি। ধূসর ভাইয়ের সাথে প্রথম বার ঘুরতে যাচ্ছে সে। এই একটি কথাই তাকে পৃথিবী সমান সুখ পাইয়ে দিতে যথেষ্ট।
ধূসর ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে আছে। না কিছু বলছে,না কিছু বোঝাচ্ছে। হয়না,বরফের মত কিছু শীতল দৃষ্টি, যা দেখলে হাত বা বিবশ হয়ে আসে! পিউয়ের বুক ধড়ফড় করছে। তানহা কখন উঠে গেল পাশ থেকে? উনিই বা এসে বসলেন কখন? কোন পর্যায়ের বেয়াক্কেল হলে একটা মানুষ কিচ্ছু টের পায়না!
প্রাণের চেয়েও প্রিয় মোবাইল ফোন কে বাঁচাতে পেরে বুক ভরে শ্বাস নেয়। এই ফোন,মায়ের কানের কাছে তার অক্লান্ত ঘ্যানঘ্যানানির ফল। এটা ন*ষ্ট হলে ভার্সিটি ওঠার আগে আর জুটবেনা কপালে। মেয়েটা পিউয়ের প্রতি একটু বিরক্ত হলো বটে।
একটা মেসেজ দেখে এত কাঁ*পা-কাঁ*পির কী হলো?
ঢাকার বুকে তখন সন্ধ্যা। কমে এসেছে আলোর ছটা। বেড়েছে বিয়েবাড়ির হৈ-হুল্লোড়। ক্রমে ক্রমে হচ্ছে অতিথিদের আগমন। একেকজন কে একেকভাবে আপ্যায়নে ব্যস্ত সিকদার বাড়ির কর্তৃরা৷ মাগরিবের আজান পরায় সাউন্ড সিস্টেম আপাতত বন্ধ। জিরোচ্ছে ওটা।
এসি বাড়িতেও মানুষের গায়ের ভ্যাপ্সা গরম ছোটাছুটি করছে।
লাঞ্চ টাইম শুরু। সবাই রওনা করল ক্যান্টিনে। কেউ বা ডেস্কেই বসল বাটি খুলে। বাড়ি থেকে আনা সুস্বাদু খাবারের ঘ্রানে মুহুর্তে অফিস ম ম করে উঠল। একেকজন যখন তৃপ্তি নিয়ে খেতে থাকে,সেই ক্ষনে চুপ করে বসে আছে মারিয়া। চেহারায় বিষাদের ছাঁয়া। পেট খুদায় চোঁ চোঁ করলেও খাওয়ার ইচ্ছে নেই।