এক সমুদ্র প্রেম – ৪৮ (অঘোষিত সারপ্রাইজ পর্ব)

পিউ আলমারি থেকে এক টানে সমস্ত জামাকাপড় বের করল। কিছু ফ্লোরে পরল,কিছু এলো হাতে। সব বুকের সাথে চে*পে রুদ্ধশ্বাস সমেত, ছু*ড়ে ফেলল বিছানায়। ফ্লোরের গুলো তুলে, সোজা হয়ে, কোমড়ে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস টানল। অথচ,ওষ্ঠপুটের সবদিকে জ্বলজ্বল করছে হাসি। ধূসর ভাইয়ের সাথে প্রথম বার ঘুরতে যাচ্ছে সে। এই একটি কথাই তাকে পৃথিবী সমান সুখ পাইয়ে দিতে যথেষ্ট। যে কটা দিন ওখানে থাকবে,তাকে সুন্দর লাগতে হবে তো! এতটা সুন্দর, যেন ধূসর ভাইয়ের মত নিরামিষ মানুষটাও ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকেন।

আচ্ছা,ধূসর ভাইয়ের হাত ধরে সাগর দেখতে পারবে তো! গুনতে পারবে সমুদ্রের ঢেউ? কিংবা,গভীর রাতে হবে আকাশ দেখা?
পিউয়ের চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভবিষ্যতের, না ঘটা কয়েক মুহুর্ত। কিছু প্রবল কাঙ্ক্ষিত দৃশ্য। ধূসর হাঁটছে, তার পাশাপাশি সে। বাতাসের ঝাপটায় তার এলোমেলো লম্বা চুল উড়ছে। পাশ থেকে কানে লাগছে অর্ণবের অবাধ্য,উত্তাল উর্মীর শব্দ। আছড়ে আছড়ে পায়ে পরছে দুজনের। ভিজে যাচ্ছে শুভ্র পৃষ্ঠ,খসখসে আঙুল। সেই ক্ষণে একবার চোখাচোখি হলো দুজনের। ধূসরের নেশালো দুই চক্ষুতে চেয়ে,পিউ লাজুক হেসে নত করল মুখ। তার চিবুকটা জায়গা পেলো গলায়।

পিউয়ের মেরুদণ্ড হতে অনুষ্ণ স্রোত কলকল করে বেঁয়ে চলল। বক্ষে বইল ধুকপুক সুনামি। কুণ্ঠার বেড়িতে জড়িয়ে শিরশির করল মস্তক। এর মধ্যেই দরজায় এসে দাঁড়াল এক সুতনু মানব। ধ্যানমগ্ন পিউয়ের মনোযোগ পেতে গলা খাকাড়ি দিলো সে। মেয়েটা নড়েচড়ে ওঠে, তৎপর ভাবে চায়। সাদিফকে দেখেই হেসে বলে,
‘ আরে ভাইয়া,ওখানে কেন,ভেতর আসুন।’

সাদিফ আনমনা পায়ে ঢুকল। তার চোখে-মুখে সুখ নেই। কেমন বিষন্নতার ছাপ! পিউ পড়ার টেবিলের সামনে থেকে চেয়ারটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ বসুন।’
সাদিফ বসেনি। সে এক মনে চেয়ে আছে,বিছানায় রাখা জামাকাপড়, আর ছোটখাটো লাগেজটার দিকে। পিউ কি ব্যাগ গোছাচ্ছিল? ও কি যাওয়ার জন্য এতটাই উৎফুল্ল?
‘ কী হলো? বসবেন না?’
সাদিফের ঘোর কা*টে। বলে,
” হু? না,মানে,ব্যাগ গোছাচ্ছিস?’
‘ হ্যাঁ। কাল সকাল সকালই তো রওনা করবে বলল। সময়ই পাব না। তাই এখনই গুছিয়ে রাখছি ।’

স্ফূর্ত চিত্ত পিউয়ের। সাদিফ তবুও রয়ে সয়ে বলল,
‘ না গেলে হয়না?’
বড় মায়াময় শোনাল সেই স্বর। যেন কতশত আকুতি মিশে! পিউয়ের ব্যস্ত হাত থামে,হাসি কমে আসে। অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
‘ কেন ভাইয়া? কিছু হয়েছে?’
সাদিফ কী বলবে বুঝতে পারল না। ঠোঁটের ডগায় হাতানো উত্তর পেয়ে, বলল
‘ দুটোদিন পরেইতো তোর জন্মদিন,বাড়ির সবার সাথে সেলিব্রেট করবিনা?’

পিউ সচকিত হলো। মনে মনে দিন তারিখ হিসেব করে বুঝলো,ঠিক তিনদিনের মাথায় তার জন্মদিন আসছে। এই যা! তখন তো কক্সবাজারে থাকবে। আম্মুর হাতের সেমাই আর বিরিয়ানিটা? চাচ্চুদের কিনে দেওয়া জামা,এত এত গিফট সবই তো মিস হয়ে যাবে। মুহুর্ত মধ্যে মন খা*রাপ হয়ে গেল তার। পরমুহূর্তে ভাবল,ধূসর ভাইয়ের সাথে ঘুরতে যাওয়ার কাছে এইসব তুচ্ছ। জন্মদিন তো প্রতি বছরই হবে। এমন কাছাকাছি হয়ে ঘুরতে যাওয়াটা তো আর হবে না। বড়দের মত করে,
নিজেকে বোঝাল,
‘কিছু পেতে গেলে, কিছু দিতে হয় পিউ। ‘

তার চিন্তিত চেহারা দেখে সাদিফ ভেবেছিল কাজ হবে৷ পিউ হয়ত ইমোশোনাল হয়ে হলেও, যাওয়াটা ক্যান্সেল করবে। অথচ মেয়েটা তাকে আশা*হত করতে, বলে দিল,
‘ থাক ভাইয়া! এইবার নাহয় জন্মদিন পালন টালন নাই হলো,পরের বছর বেচে থাকলে হবে। আগে সমুদ্র দেখে আসি। ‘

সাদিফের আঁদোলের প্রতিটি পরতে তঁমসা নামল। ভেতর ভেতর মুডটাই খা*রাপ হয়ে গিয়েছে। পিউয়ের জন্মদিন নিয়ে ভাবা কত রকম ইচ্ছের দা*ফন হবে ভেবে দুঃ*খের রাজ্যে হারিয়ে গেল একরকম। ছোট করে বলল
‘ ওহ,ঠিক আছে।’

তারপর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে বেরিয়ে গেল। পিউ পিছু ডাকতে গিয়েও ডাকলো না। তার যাওয়ার সময় ঘরে ঢুকছিলেন মিনা বেগম। দুজন মুখোমুখি হলেও সাদিফ দাঁড়ায়নি। তবে চেহারার অবস্থা খেয়াল করেছেন তিনি। ভ্রু দুটো কুঁচকে ভেতরে এলেও,বিছানার দিক চোখ ফেলতেই আর্ত*নাদ করে বললেন,
‘ একী!’
পিউ আবার ব্যস্ত হয়েছিল কাজে। মায়ের চিৎকারে ভড়কে তাকাল। মিনা দ্রুত কাছে এসে দাঁড়ালেন। চোখ পাঁকিয়ে বললেন,
‘ তুই এত গুলো কাপড় নামিয়েছিস কেন?
পিউ গ্রাহ্যই করল না মায়ের দৃষ্টি। বলল,
‘ ওমা,ঘুরতে গেলে লাগবে না?’
‘ পাঁচদিনের জন্য তুই পঞ্চাশটা জামা নামাবি? কে গোছাবে এসব? একদিনও নিজের আলমারি নিজে গুছিয়েছিস? ‘

‘ আজকে গুছিয়ে রাখব।’
‘ তোর গোছানোর নমুনা আমার দেখা আছে। সব তো ঠেসে ঠুসে রাখবি। আর এটা কী জামা নিয়েছিস? ঘুরতে গিয়ে কেউ কালো জামা পরে? রাতে হারিয়ে গেলে তোকে কেউ খুঁজে পাবে? পাশাপাশি থাকলেও তো হাতড়ে পাবেনা। আমি গুছিয়ে দেই,সর। ‘

পিউ কথা বাড়াল না। চুপচাপ সরে দাঁড়াল। মিনা বেগম বকবক করতে করতে কাপড়চোপড় ভাঁজ করলেন। প্রতিটি কথার মাথায় মেয়ের কাজের যোগ্যতা নিয়ে হাহা*কার। অথচ পিউ মিটিমিটি হাসল। মায়ের বকুনির মধ্যেই হঠাৎ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে টেনে টেনে ডাকল,
‘ ওমা,মা, আমার মা।’

মিনা বেগম থতমত খেয়ে তাকালেন। বিনিময়ে দেখতে পেলেন পিউয়ের ঝকঝকে দাঁত। সন্দেহী কণ্ঠে শুধালেন,
‘ হঠাৎ এত আহ্লাদ কেন? কী লাগবে? ‘
‘ কই,কিছু লাগবে না। ‘
বলে মায়ের বুকে মাথাটা গুঁজে দিল পিউ। মিনা অবাক হলেও পরের দফায় হাসলেন। চুলে হাত বুলিয়ে বললেন,
‘ ওদের ছাড়া একা একা বের হবিনা কিন্তু। একা একা সাগরেও নামবিনা। সাতার জানা মানুষরাই ভেসে যায়,সেখানে তুইত….’

পিউ মাথাটা উঁচিয়ে, বলল, ‘ আহা!এটা আর কত বার বলবে? আমি একা একা কোথাও গেছি কখনও? ঢাকাতেইতো বের হইনা,আবার অচেনা জায়গায়।’

‘ তোকে আমার এক ফোঁটাও বিশ্বাস নেই। ‘
পিউ ঠোঁট উলটে,হতাশ চোখে তাকিয়ে রইল। সেই সময় পুষ্প রুমে ঢুকেছে। ভেতরের দৃশ্য দেখেই বিস্মিত কণ্ঠে বলল,
‘ ও বাবা,ছোট মেয়েকে দেখি আদর করে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমি ও তো যাচ্ছি। কই, কেউতো এত আহ্লাদ করলো না। আমি বুঝি আদর পাব না?’

মিনা ভ্রু গুটিয়ে বললেন,
‘ তুই আবার কোত্থেকে এলি? তোকে এখন আদর করবে তোর দ্বিতীয় মা৷ পিউয়ের তো আর শ্বাশুড়ি নেই,তাই আমিই করছি। ‘

‘ সেই মায়ের কাছে তো দুই বছর পর যাব। আপাতত যেই মা আছে, তার আদর টা লুটেপুটে নিয়ে নেই। ‘
বলতে বলতে এসেই মাকে জড়িয়ে ধরল পুষ্প।
পিউ চোখ নাক কুঁচকে বলল,
‘ দেখেছো কী হিংসু*টে?’
‘ চুপ কর।’
মিনা হেসে ফেললেন। এক হাতে ওকে,আরেক হাতে পুষ্পকে জড়িয়ে নিলেন বক্ষে। একটা একটা করে দুই মেয়ের মাথায় চুমু খেয়ে আওড়ালেন,
‘ তোরা দুজনেই আমার কলিজা।’

____

আরো দুটো ফ্লাইটের টিকিট নতুন করে কা*টা হলো। আগেপিছে হওয়াতে,একই বিমান পেলেও সিট ধারেকাছে পরেনি ওদের। তবে ফ্লাইট ছাড়ার সময় অনুযায়ী, সবার থেকে বিদায় নিলো ওরা। যাওয়ার সময়
আফতাব ছেলেকে গুরুতর ভঙিতে বললেন,
‘ পিউকে দেখে রাখবে কিন্তু,তোমার ভরসাতেই ভাবি ওকে ছাড়ছেন। আবার ওকে রেখে এদিক সেদিক যেওনা।’

ধূসর চুপ করে রইল। ইকবাল মাথা চুল্কে বিড়বিড় করে বলল, ‘ আপনার ছেলে পারলে ওকে কোলে নিয়ে হাঁটবে মেজো শ্বশুর মশাই। এসব নিয়ে নো টেনশন!’

সাদিফের সঙ্গে দেখা হয়নি ওদের। সেতো সকালেই অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে। কথা ছিল মারিয়াও সঙ্গে যাবে। আশ্চর্যের বিষয়, মেয়েটা নাস্তা সেড়েই তাড়াহুড়ো দেখিয়ে চলে গিয়েছে। সাদিফের অদ্ভূত লাগলেও,মাথা ঘামায়নি। তার মন মেজাজ ভালো না থাকায়,কোনও কিছুই ভালো লাগছিল না। যাওয়ার আগে পিউয়ের সাথে আরেকবার দেখা করে গেল। হাতের মুঠোয় অকারণেই গুঁজে দিলো এক হাজার টাকা। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘ কিছু খেতে মন চাইলে, কিনে খা’স।’

পিউ ঘাড় ঝাঁকিয়ে চমৎকার করে হেসেছে। দুদিকে বিস্তৃত হয়েছে তার গোলাপের মত টকটকে অধর। যেই হাসিতে সাদিফের বি*ষাদ, বাকিটুকু লেপ্টে এলো হৃদয়ে। মেয়েটাকে না দেখে পাঁচটা দিন,কীভাবে কা*টবে ওর?

–—-
শোঁ শোঁ করে গাড়ি চলছে ওদের। একটা মাইক্রোর মাঝের সিটে ইকবাল-পুষ্প,আর পেছনে পিউ- ধূসর বসা। সামনে তাদের নির্ধারিত চালক। বিমানবন্দর অবধি এগিয়ে দেবে,এরপর বাকী রাস্তা প্লেনে। সেখান থেকে নেমে,উবার ডেকে,পৌঁছাবে সোজা পাঁচ তারকা হোটেলে।

ইকবালের হাত সুড়সুড় করছে। পুষ্প আর তার এতখানি দুরুত্ব একটুও মনঃপুত হচ্ছে না। পেছনে পিউ সমস্যা না, ধূসর টা না থাকলেই টান মে*রে কাছে নিয়ে আসতো। বিয়ে করা, বৈধ বউটা এত দূরে থাকবে কেন? উফ! পুষ্পটা যে কেন আগে আগে এসে সামনে বসতে গেল! ওদের এখানে বসিয়ে তারা কি পেছনে বসতে পারতোনা? সুন্দর জার্নিটা আরো রোমাঞ্চকর হতো দুজনের অল্প স্বল্প কাছে আসায়। ইকবাল অসহায় হয়ে একবার পুষ্পর দিক চায়। একটু হাত ধরলেও মেয়েটা রা*গ করবে এখন। পেছেনে বসা বড় ভাইয়ের সামনে স্বামীর আশেপাশেও ঘিষবে না সে।

এদিকে পিউ,দু মিনিটের মাথায় একটু একটু করে এগোচ্ছে। এমন ভাবে নড়ছে যেন,সিটটাও টের না পায়। সময় যেতে যেতে,এমন এগোনোর দরুন,একদম ধূসরের কাছে চলে এলো সে। আর কেবল,একটু খানি ফাঁকা মাঝে। ধূসরের ঘড়ি পরা হাতটা সেই ফাঁকাতেই রাখা। পিউ চোরা চোখে সেদিকে চাইল। নিজের হাতটা সন্তর্পনে পাশে রাখল। বেহায়া মনের ভীষণ রকম ইচ্ছে জাগল ওই হাতটা একটু ছুঁয়ে দেওয়ার। কনিষ্ঠ আঙুলটা হাল্কা উঁচু করে ধূসরের আঙুলে লাগাতে যাবে যখনই,সহসা পাশ ফিরল ধূসর। পিউ ঘাবড়ে গেল ওমনি। আঙুলটা থেমে,তটস্থ ভঙিতে ফিরে এলো জায়গায়। আর সে,সেও বিদুৎ বেগে সরে, লেপ্টে গেলো জানলার কাছে। ধূসর কপালে ভাঁজ পরে। হতভম্ব নেত্রে তাকায়। পিউ আরো ঘাবড়াল তাতে। ভ*য়ে ভ*য়ে অথচ হাসার চেষ্টা করে বলল,
‘ সরে বসেছি তো।’
ধূসর জানলার দিক ফিরে লম্বা শ্বাস ফেলল। যার প্রতিটি ধাপে বিরক্তি৷ এই আহাম্মক মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় যে যাবে? তারপর একইরকম তাকাল আবার। পিউয়ের মুখটা শুষ্ক। এইভাবে দেখছেন কেন উনি? একটুত কাছেই গিয়েছে।

আচমকা কনুই ধরে টান দিলো ধূসর। পিউ হুমড়ি খেয়ে এসে গায়ের ওপর পরল। চমকে,গোল গোল চোখে চাইল তার চিবুকের দিকে। কতক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে চেয়েই রইল ওভাবে।
ধূসরের লম্বা হাতটা, কনুই ছেড়ে, পিঠ পার করে, কাধে পরতেই, হুশে এলো।
ওমনি শুরু হলো,চিরচেনা,পরিচিত গতরের কাঁপা-কাঁপি স্বভাব৷ সাথে বুকের ঢিপঢিপ আওয়াজ স্পষ্ট। এমনকি শীর্ন হাতের কব্জি দুটোও, আঙুল শুদ্ধ কাঁপছে। ধূসর তীক্ষ্ণ চোখে দেখল সেই কম্পন। স্বভাবসুলভ ভারী কণ্ঠে বলল,
‘ এতক্ষণ তো ঠিক ছিলিস,আমি ধরতেই মৃগী রোগ শুরু?’

পিউ অবলা,সহায়হীন নেত্রে চায়। বলার মত কিচ্ছুটি নেই এখানে। সত্যিইত,কেন এরকম হয় ওর সাথে? কী সমস্যা? কী করলেই বা যাবে এসব?

ধূসরদের চার সিট সামনে, প্লেনের সিট পরেছে ইকবালদের। পিউ ছোট্ট গোলাকার জানলা ঘেঁষে বসল। পাশেই ওর প্রিয় ধূসর ভাই৷ অথচ তার মনের মধ্যে উত্তেজনা নেই। ভেতরটা ছটফট করছে খুব। অস্থির লাগছে। ঘামাচ্ছেও। আজকেই প্রথম বার উঠেছে প্লেনে। ঢাকা ছেড়ে বাইরে কোনও দিন যায়ই-তো নি। যা যেত,যতটুকু গিয়েছে, গাড়ি করে মামার বাড়ি৷ ওইটুকু ওর গন্ডি। তাছাড়া অনেক ওপরে,বা উঁচুতে উঠলে ভ*য় লাগে। বুক কাঁ*পে,লাফায়,মাথা ঘোরে। ছাদেও খুব একটা ওঠেনা এইজন্যে।

প্লেন ওপরে ওঠার সময়, মাইক্রোফোনে একটা চিকণ মেয়েলী স্বর ভেসে এলো। সবাইকে সিট বেল্ট বাধতে অনুরোধ করছেন। পিউ আ*তঙ্কে খেয়ালই করল না। তার চোখ জানলার ওপাশে। ধূসর নিজেই ঝুঁকে এসে বেল্ট বেঁধে দিলো। পিউ স্পর্শ পেয়ে নড়েচড়ে ওঠে। ভী*তশশস্র লোঁচনে তাকায়। তার পল্লব অস্বাভাবিক রকম কাঁ*পছে। বক্ষপট ধড়ফড় করছে।কপাল,নাকের ডগা চিকচিক করছে ঘামে। ধূসর কোমল গলায় শুধাল,
‘ ভ*য় লাগছে?’

পিউ মাথা দোলাল। ধূসর নিজে থেকেই তাকে নিয়ে এলো কাছে। একদম বুকের সাথে পেঁচিয়ে ধরে বলল,
‘ চোখ বন্ধ কর। আমি আছি। ‘
পিউ বাধ্য মেয়ে। খিঁচে চোখ বুজে নেয়। ধূসরের বুকের মাংসে মিশে যায়। আকষ্মিক একটু আগের ভ*য়টা আস্তে আস্তে নেমে এসে থমকে দাঁড়ায় অনুভূতির দোড়গোড়ায়। ধূসর ভাইয়ের এত কাছে সে,মস্তিস্কের নিউরনে,সবখানে পৌঁছে যায় সেই বার্তা। পিউ কুণ্ঠায় নুইয়ে গেল। ভয়*ডরের বদলে ঠোঁট চেপে, সলজ্জিত হাসল। প্লেন আস্তে-ধীরে ওপরে ওঠে। একটা সময় মেঘ ছোঁয়। পেঁজা তুলোর মত কাদম্বিনী ছি*ড়েখুঁড়ে,দাপট সমেত উড়তে থাকে। পিউ সোজা হলো না। ওমন চোখ বুজে থাকতে থাকতেই বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে পরেছে। দীর্ঘকায় নিঃশ্বাস ঠিকড়ে পরছে ধূসরের লোমশ বুকে। সে ঘুমন্ত পিউয়ের দিকে এক পল চাইল। এভাবে থাকলে ঘাড় ব্য*থা করবে ভেবে, মাথাটা নিজের উরুর ওপর নিয়ে গেল। গায়ের ওড়নাটা ভালো করে টেনেটুনে আড়াল করল শরীর। একটা ছোট্ট, তবে শক্ত বিছানা পেয়ে পিউও প্রস্তুতি নিলো আরাম করে ঘুমানোর।

পাশের সাড়ির ভদ্রমহিলা বেশ কিছুক্ষণ দেখে গেলেন ওদের। একটা বলিষ্ঠ পুরুষের পাশে কবুতর ছানার মত মেয়েটাকে চশমার ওপর থেকে নিরীক্ষণ করার চেষ্টা করলেন। শেষে ধৈর্য হারিয়ে ডাকলেন,
‘ এই যে বাবা শোনো!’ ‘
ধূসর তাকাল। ভদ্রমহিলা সিটে বসে থেকেই মুখটা এগিয়ে এনে,ভ্রুঁ উঁচিয়ে শুধালেন,
‘ তোমার বোন বুঝি?’

ধূসরের চোখমুখের পরিবর্তন দেখা গেল না। রা*গ,বিস্ময়,হতভম্বিত ভাব কিচ্ছু নেই। পিউয়ের দিক বিচক্ষণ চোখে চাইল একবার। বোঝার প্রয়াস চালাল ও জেগে কী না! যখন বুঝল, ঘুমে জুবুথুবু পিউ,ওর নরম শরীরটা নিজের উরুতে আরেকটু শক্ত করে চে*পে ধরল ধূসর। রাশভারী, অথচ সাবলীল ভঙিতে জবাব দিলো,
‘ এটা আমার বউ।’

লেখকের কথা: এই পর্বটা, সংখ্যায় ধরবেন না। ওদের সুন্দর জার্নিটা তুলে ধরতেই যাস্ট ছোট করে লিখলাম।
জানি এত ছোটতে আপনাদের মন ভরবেনা, তাও দিয়েছি।
সামনে অনেক সুন্দর সুন্দর পর্ব আসছে। সেসব আরো চমকপ্রদ করে তুলে ধরার জন্য অল্প খানেক সময় তো লাগবেই। না বেশি নয়,সুস্থ থাকলে কাল বাদে পরশুই পর্ব পাবেন ইনশাআল্লাহ। ????

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।