হুর বাদে সবাই খেতে বসেছে।মিস্টার ফরিদ তা লক্ষ্য করে বললেন,
-“হুর মামুনী কোথায়! ও খাবে না?”
-“না আঙ্কেল আমি ঐ সময় খেয়েছি। আর খাবো না। পেট ভরা আমার। ”
হুর পিছন থেকে এসে বললো।
ফাইয়াজ হুরের কথা শুনে বিড়বিড় করে বললো,
-“একবারেই যেই রা’ক্ষসীর মতো খেয়েছে আর খাবে
কি করে!”
হুর পাশে দাঁড়িয়ে থাকায় ফাইয়াজ এর কথা তার কানে গেলো। সে নাকের পাটা ফুলিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।
-“মেহমান না হলে একেবারে ধু’য়ে দিতাম। এই হুরের সাথে লাগা! একবার সুযোগ পাই! তেরোটা না বাজালে আমিও হুর না! হুঁহ! ”
————————————————————————
-“বুঝলি হাসান ছেলেটাকে নিয়ে অনেক চিন্তায় আছি।”
-“কেনো চিন্তার আবার কি হলো! তোর এতো ভালো, ভদ্র একটা ছেলে। তাকে নিয়ে চিন্তা কিসের?”
-“তোকে তো গতকাল বললাম আমার পরশু এক মাসের জন্য দেশের বাইরে যাওয়া লাগবে কাজের জন্য। ছেলে টাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করে না রে। ও একটুও নিজের খেয়াল রাখে না। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়াও করে না। অন্যান্য বার আমি বেশি হলে এক সপ্তাহের জন্য দূরে যেতাম। কিন্ত এবার আমার এক মাস কমপক্ষে থাকা লাগবে। আর ওকে এখানের সব দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি। তাই চিন্তায় আছি ছেলেটা যে কি করবে! ওর মা বেঁচে থাকতো তাহলে আমার কোনো চিন্তা থাকতো না রে। ঐ আমার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল। ”
-“এতে এতো চিন্তার কি আছে! আচ্ছা এক কাজ কর ওকে বলে দেখ ও আমাদের বাড়িতে থাকবে কিনা! আমাদের বাড়ির ছাদে সুন্দর একটা এক্সট্রা ফ্ল্যাট আছে। আমরা ভাড়া দেই না তাই ফাঁকাই পড়ে থাকে। ও চাইলে সেখানে শিফট করতে পারে তোর না আসা পর্যন্ত। এতে হেনা ওর খেয়াল ও রাখতে পারবে আর তোর চিন্তাও দূর হবে। ”
-“তুই আমাকে বাঁচালি বন্ধু। ও এখানে আসবে না মানে ওকে থাকতেই হবে হু। তুই শুধু ওর খবরা-খবর আমাকে দিস। ও ঠিকমতো সব করে কিনা। আর হেনা আপা আপনি ওকে নিজের ছেলের মতো শা’সন করবেন। ”
-“ভাইয়া আপনি চিন্তা করবেন না। ফাইয়াজ যদি এখানে থাকে তাহলে আমি ওর যত্নের কোনো কমতি রাখবো না। আমার খুব পছন্দ হয়েছে ছেলেটা কে। কি সুন্দর অমায়িক ব্যবহার। ভাই ওকে বুঝিয়ে বলবেন যেনো এখানে থাকে। আমি খুব খুশি হবো ও এখানে থাকলে। ”
-“হ্যা আপা আমি বুঝাবো ওকে। তো আপা পরশু তো আমি চলেই যাবো। তার আগে আপনাদের আমাদের বাড়িতে দাওয়াত করতে চাই। না করবেন না কিন্তু! কালকে দুপুরে আপনারা সবাই আমাদের বাড়িতে আসবেন। অ’নুরোধ রইলো।”
-“আচ্ছা ভাইয়া আমরা সবাই কালকে আসবো। ”
হেসে বললেন মিসেস হেনা।
————————————————————————
-“তো হুর মামুনী, লিয়া মামুনী, হৃদ বাবাই তোমরা সবাই কালকে ফুল ফ্যামিলি নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসবে কেমন! আমি কিন্ত অপেক্ষায় থাকবো তোমাদের। ”
-“আচ্ছা আঙ্কেল আমরা সবাই যাবো। ”
-“এখন তাহলে আমরা বাপ-বেটা চলি। কাল দেখা হবে কেমন!”
-“চল আমি তোদের এগিয়ে দিয়ে আসি। ”
-“আয়।”
হাসান সাহেব আর ফরিদ সাহেব বেরিয়ে পড়লেন। ফাইয়াজ হুর, লিয়া আর হৃদের সামনে এসে বললো,
-“চলি চ্যাম্প। চলি লিয়া। কালকে দেখা হচ্ছে তবে। আর এই যে মিস রা’ক্ষসী কালকে দেখা হচ্ছে। আমাদের বাড়িতে এসে আবার রা’ক্ষসীর মতো খাওয়া শুরু করবেন না যেনো! সতর্ক করে দিলাম নাহলে মান সম্মান কিছু থাকবে না আর। ”
ফাইয়াজ কথা শেষ করে চোঁখ টিপ দিয়ে চলে গেলো। হুর দাঁত ক’টম’ট করে ফাইয়াজ এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আর লিয়া আর হৃদ তো হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। হুর ওদের দিকে রা’গী চোঁখে তাকিয়ে বললো,
-“দেখলে তো মনে হয় ইনোসেন্ট এর ডিব্বা। সবার সাথে কি সুন্দর করে কথা বলে যেনো মহা ভদ্র। আর আমার সাথে কেমন করলো। রা’ক্ষস পোলা একটা। ”
ধূ’পধা’প পা ফেলে নিজের রুমে চলে গেলো হুর। রা’গে তার মাথা আ’গুন হয়ে যাচ্ছে। একটু খাওয়ার জন্য কতো খো’টা দিলো লোকটা। হুর মুখ বাঁকা করে বললো,
-“শা’লা তুই বউ পাবি না দেখে নিস। বউ পাবি কি করে! বউ কে তো না খাইয়ে মে’রে ফেলবি। ব’জ্জাত কোথাকার। একটু তাড়াহুড়ো করে নাহয় খেয়েছিলাম তাই বলে আমার বাড়ি এসে আমাকে খো’টা দিবি! কালকে তোর বাড়িতে যাবো তো! আমাকে অপ’মান করার ব’দ’লা না নিলে আমিও হুর না। ”
————————————————————————–
সকাল হতেই লিয়া হুরদের বাসায় এসে হাজির। আজকে তারা ভার্সিটি যাবে না। ফাইয়াজ দের বাড়ি যেতে হবে। লিয়ার ধা’ক্কা ধা’ক্কিতে বিরক্ত হয়ে হুর উঠে বসে লিয়ার পিঠে ধু’ম করে দুই টা বা’রি দিলো।
-“পে’ত্নীর তিন নাম্বার জামাইয়ের বাচ্চা কোথাকার! আজকে না আমরা ভার্সিটি যাবো না। তুই আমাকে গু’তা’ইলি কেন স’য়তান কোথাকার। আমি আজকে ১০ টা পর্যন্ত ঘুমাবো। তুই যা আমার রুম থেকে। বি’র’ক্ত করবি না একদম।”
যেই হুর আবার শুতে যাবে অমনি লিয়া আবার ওর হাত টেনে বসিয়ে দিয়ে বললো,
-“দোস্ত আজকে আমরা ঘুরতে যাবো আঙ্কেল দের বাসায়। রেডি হতে হবে না! জলদি ওঠ। ”
-“এই সকাল সকাল রেডি হওয়া শুরু করবো? আমার রেডি হতে ৩০ মিনিট এর বেশি লাগবে না। তুই যা তো যা আমার সামনে থেকে মা’ই’র না খাইতে চাইলে… ”
লিয়া আবার হুরের হাত ধরে বলে উঠলো,
-“দস্ত শুন না হয়েছে কি আমি না ড্রেস সিলেক্ট করতে পারছি না। কি পড়মু রে আমার তো কোনো কাপড় ই নাই। ”
হুর কপাল চা’পড়ে বললো,
-“তুই না কয়েকদিন আগেই কতগুলো ড্রেস নিলি বেদ্দ’প মহিলা। এখন বলিস কাপড় নাই তোর। দারা আন্টির কাছে বিচা’র দিমু তোর নামে। ”
-“না না দোস্ত। তুমি না আমার ভালো সোনা মোনা জানু এমন করে না। উম্মাহ। আম্মু কে বললে আম্মু আজকে সারাদিন আমার কানের সামনে নবাবের বেটি বলে খে’ছখে’ছ করবে। ”
-“ভালো হবে। ”
-“জানু দে না একটা ড্রেস সিলেক্ট করে। তুই তো জানিস আমার কতো সময় লাগে রেডি হতে! তুই না আমার সোনা জানু। আমি না তোকে কতো ভালোবাসি। ”
-“হয়েছে চলেন মহারানী আর পা’ম দেয়া লাগবে না। এমনিতেও আমার ঘুমের তো বারোটা বা’জিয়েই দিয়েছিস। ”
-“চলো জানু উম্মাহ!”
——————————————————–
বিশাল বড়ো এক ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে গাড়ি থামলো হুরদের। হুর অবাক হয়ে বাড়ি টার দিকে তাকিয়ে আছে। চমৎকার সুন্দর করে বানানো হয়েছে বাড়ি টা।তারা গাড়ি থেকে নেমে দেখলো ফরিদ সাহেব তাদের ভিতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসছেন। বাড়ির মেইন গেট পেরিয়ে হুর আরও অবাক হলো। মাঝখানে রাস্তা, একপাশে বিশাল বাগান আর আরেক পাশে একটা মিনি সুইমিং পুল । হুরের মনে হলো সে কোনো ফুলের রাজ্যে চলে এসেছে। সে একধ্যানে ফুলগুলো দেখতে দেখতে হাটছে। হুট করে কেউ তার কানে ফিশফিশ করে বললো,
-“যেভাবে রা’ক্ষসীর নজরে আমার বাগান টাকে দেখছো তাতে সব গাছ ম’রে যাবে মনে হচ্ছে!”
হুর ভয় পেয়ে লাফ দিয়ে পিছিয়ে গিয়ে দেখলো ফাইয়াজ তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। হুর আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই। তার মানে সবাই ভিতরে চলে গেছে আর সে ফুল দেখাতে এতটাই মগ্ন ছিলো যে খেয়াল ই করে নি। হুর নিজের জিভে কা’মড় দিয়ে দ্রুত বাড়ির ভিতরের দিকে হাঁটা দিলো।
-“আরে এই যে মিস রা’ক্ষসী! আমার কথার জবাব না দিয়ে কোথায় পালাচ্ছ! আমার গাছগুলোর কিছু হলে তোমাকে ক্ষ’তিপূরণ করতে হবে কিন্ত। ”
পিছন থেকে চি’ল্লি’য়ে বললো ফাইয়াজ।