ভালোবাসি তোমায় | পর্ব – ২৭

ফাইয়াজ ফোনে মেসেজ করা লোকেশনে পৌঁছাতেই দেখলো অনেকগুলো লোক গা’ন হাতে গোডাউন ঘেরাও করে দাঁড়িয়ে আছে। ফাইয়াজ গাড়ি থেকে বেরিয়ে ধীর পায়ে গোডাউনের দিকে এগোতে লাগলো। দরজার সামনে পৌঁছতেই দুইজন মিলে তার শরীরে ত’ল্লা’শি চালালো। কোনো রকমের অ’স্ত্র না পেয়ে তারা প্রবেশ পথ খুলে দিলো।
ফাইয়াজ ভেতরে প্রবেশ করে দেখলো মোস্তফা চৌধুরী একটা চেয়ারে বসে গা’ন ঘোরাচ্ছে। ফাইয়াজ কে দেখে একটা বি’দ’ঘু’টে হাসি দিলেন তিনি। বলে উঠলেন,
— ওয়েলকাম,, ওয়েলকাম মিস্টার ফাইয়াজ।
ফাইয়াজ কোনো প্রকার বাক্য ব্যয় না করে সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করলো,
— হুর কোথায়?
মোস্তফা চৌধুরী টি’ট’কা’রি মে’রে বললেন,
— বাহ্ বউয়ের প্রতি কি ভালোবাসা। আসতে না আসতেই বউয়ের খোঁজ নিচ্ছিস! আমার খোঁজ খবর ও নে একটু।
ফাইয়াজ গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— চরিত্র ভালো হলে বউকে কে না ভালোবাসে বল! যাইহোক এসব আ’জাই’রা কথা বলতে চাচ্ছি না। হুর কোথায় বল! আমার হুর কে আমি সহী সালামত চাই। কোথায় হুর?
মোস্তফা চৌধুরী হিং’স্র হয়ে বললেন,
— আ,,, আ হুর হুর একটু কম কর। এতো সহজে ছেড়ে দেয়ার জন্য তো তোর বউ কে আনি নি। কেনো আমার এতো ক্ষ’তি করলি বল? কেনো আমার ছেলে কে মা’র’লি বলললল!
চি’ল্লি’য়ে উঠলেন মোস্তফা চৌধুরী। ফাইয়াজ ও যেনো এবার হিং’স্র হয়ে উঠলো। মোস্তফা চৌধুরীর কাছাকাছি গিয়ে দাঁত ক’ট’ম’ট করে বললো,
— বেশ করেছি তোর ছেলে কে মে’রে’ছি। আরও জ’ঘ’ন্য ভাবে মা’রা’র ইচ্ছা ছিলো জানিস! জানতে চাস তো কেনো তোর বিজনেস, তোর নাম ডুবিয়ে দিলাম, কেনো তোর ছেলে কে মা’র’লা’ম। তোহ শোন দুটো কারণে তোর ছেলে কে মে’রে’ছি। আর আজ সেই দুটো কারণেই তুই ও ম’র’বি।
ফাইয়াজ একটা ভি’লে’নি হাসি দিয়ে মাথা কা’ত করে বললো,
— কারণ নাম্বার ওয়ান, সে আমার জানের দিকে হাত বাড়িয়েছিল। তাই তার সেই হাতের কি ভ’য়া’ন’ক অবস্থা করেছিলাম তা দেখেছিলি নিশ্চই! চোখ দিয়ে বা’জে নজরে দেখেছিলো তাই সেই চোখ গে’লে দিয়েছিলাম। যেই জিহ্বা দিয়ে বা’জে কথা বলেছিলো তা পু’ড়ি’য়ে দিয়েছিলাম।
ফাইয়াজ মুখ টা মোস্তফা চৌধুরীর মুখের আরেকটু কাছে নিয়ে স্লো ভয়েসে বললো,
— এতটুকুতেই কিন্তু আমি তাকে ছেড়ে দিতাম। আমার শ’ত্রু তুই ছিলি। তোর ছেলে না। কিন্তু তোর ছেলে কি করলো! সে আমার পরীর ক্ষ’তি করার প্ল্যান করলো। তারপরও তাকে ছেড়ে দেই কি করে বল!
ফাইয়াজের কথাগুলো শুনে ক্রো’ধে চোখ লাল হয়ে গেলো মোস্তফা চৌধুরীর। পারলে এখনই ফাইয়াজ কে দৃষ্টি দিয়ে জ্বা’লি’য়ে দেন। কিন্তু তিনি দ্বিতীয় কারণটাও জানতে চান। তিনি নিজের ক্রো’ধ সংবরণ করে জিজ্ঞাসা করলেন,
— আর দ্বিতীয় কারণ টা কি?
এরপর ফাইয়াজ তার কানে কানে যা বললো তাতে তিনি দ’র’দ’রি’য়ে ঘামতে লাগলেন। গলা শু’কি’য়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে তার। এটা কিভাবে সম্ভব! কপালের ঘাম শার্ট এর হাতায় মুছে এদিক ওদিক তাকিয়ে হিসাব মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
ফাইয়াজ মোস্তফা চৌধুরীর অবস্থা দেখে বাঁকা হেসে আশেপাশে চোখ বুলাতে লাগলো হুর কে পাওয়ার আশায়। পিছন দিকে ঘুরতেই দেখলো সামান্য দূরত্বে হুর দাঁড়িয়ে আছে। চোখ ভর্তি জল, মাথার চুল এলোমেলো, কানের সাইড দিয়ে, কপালে, গলায় র’ক্ত লেপ্টে আছে। দুই হাত পিছনে দিকে এক করে বাঁ’ধা। মুখটাও রুমাল দিয়ে বা’ধা।
হুরের বি’দ্ধ’স্ত অবস্থা দেখে ফাইয়াজের বুকটা ধ’ক করে উঠলো। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে কি অবস্থা হয়েছে মেয়েটার। মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। কতো টা ক’ষ্ট দেয়া হয়েছে তার পরিটাকে। রা’গে, দুঃ’খে চোখ লাল বর্ণ ধারণ করলো ফাইয়াজের। নিজেকে ব্যর্থ মনে হচ্ছে। তার ভুলের জন্য কি অবস্থা হয়েছে তার পরিটার।
ফাইয়াজ দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে হুরের মুখের বাঁ’ধন টা খুলে দিলো। হুর কে জড়িয়ে ধরতে চাইলে দুই পা পিছিয়ে গেলো হুর। ঘৃ’ণা ভরা দৃষ্টি দিয়ে আটকানো গলায় বললো,
— আ,, আপনি একটা খ,, খু’নী। স্পর্শ করবেন না আমাকে। ঘৃ’ণা হ,, হচ্ছে আমার আপনাকে আ,, আমার স্বামী বলতে। খু,, খু’নী আপনি।
ফাইয়াজ আ’হ’ত দৃষ্টিতে হুরের পানে তাকালো। হুরের চোঁখে নিজের জন্য ঘৃ’ণা দেখে ফাইয়াজের মনে হলো কেউ তার বুকটাকে ছু’রি দিয়ে ক্ষ’ত বি’ক্ষ’ত করে দিয়েছে।
হঠাৎ করে হাসির শব্দে পিছন ফিরে তাকালো ফাইয়াজ। মোস্তফা চৌধুরী হাহা করে হেসেই চলেছেন। হাসি থামিয়ে ফাইয়াজ, হুরের কাছাকাছি এসে দাঁড়ালেন। হুর কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
— দেখলে তো মামুনী তোমার স্বামী একটা খু’নী। তুমি তো বিশ্বাস করতে চাইছিলে না। এবার নিজের কানে শুনলে তো!
হুর মাথা নিচু করে অ’শ্রু ঝ’রাতে লাগলো। মোস্তফা চৌধুরী ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে বললেন,
— যেই ভুল আগে একবার করেছি তা আর দ্বিতীয়বার করবো না। আজকে তুই আর তোর বউ দুইজনই এখান থেকে লা’শ হয়ে বের হবি। নিজের চোঁখের সামনে যখন নিজের প্রেয়সী কে ত’ড়’পে ত’ড়’পে ম’র’তে দেখবি, তখন আসবে আসল মজা। আমার ক’লি’জা টা ঠান্ডা হবে।
মোস্তফা চৌধুরী তার হাতে থাকা গা’ন টা হুরের মাথা বরাবর তা’ক করলেন। হুর ভ’য়ে সি’টি’য়ে গেলো। যেই মাত্র হুর কে শু’ট করবেন সেই মুহূর্তে ফাইয়াজ মোস্তফা চৌধুরীর হাতে লা’ত্থি দিয়ে গা’নটাকে মাটিতে ফেলে দিলো। অতঃপর গা’ন’টা উঠিয়ে নিজের হাতের মুঠোয় পুরে মোস্তফা চৌধুরীর দিকে তা’ক করলো।
হঠাৎ আ’ক্র’ম’ণে হতোভম্ব হয়ে গেলেন মোস্তফা চৌধুরী। কি করবেন বুঝে উঠতে পারলেন না। ফাইয়াজ যে এবার তাকে মে’রে ফেলবে বুঝে গেছেন তিনি। ফাইয়াজ কে বোঝানোর ভঙ্গিতে বললেন,
— দেখ,,, দেখ তুই আমাকে মা’র’বি না। আর আমাকে মে’রেও লাভ নেই। তোরাও এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারবি না। আমার লোকেরা তোদের জীবিত এখান থেকে ফিরতে দেবে না। তাই ভালো হয় আমাকে এখান থেকে যেতে দে।
ফাইয়াজ বাঁকা হেসে বললো,
— তাহলে ডাক তোর লোকেদের। আমিও দেখি তারা কিভাবে আমাদের মা’রে।
মোস্তফা চৌধুরীর জানে যেনো এবার পানি এলো। এই একটা সুযোগ। নিজের লোকেদের একবার ভিতরে আনতে পারলেই এই ফাইয়াজের খেল খ’ত’ম করে দিবেন। তিনি সর্বশক্তি দিয়ে নিজের লোকেদের ডাকতে লাগলেন কিন্তু একজনও এলো না। আশ্চর্য হলেন তিনি। বা’জে ভাষায় কিছু গা’লি দিয়ে দাঁত কি’ড়’মি’ড় করে বললেন,
— শা’লা’রা সব কই ম’র’সে? একবার হাতের কাছে পাই সবগুলোরে জ্যা’ন্ত পুঁ’তে ফেলবো। নাহলে আমি মোস্তফা না।
ফাইয়াজ মোস্তফা চৌধুরীর চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বললো,
— কিরে! কেউ ডাকে সারা দিলো না বুঝি! দিবে কিভাবে বল? তারা নিজেরাই তো এখন আমার লোকের ক’ব্জা’য়।
ফাইয়াজ দুঃ’খী দুঃ’খী লুক দিয়ে বললো,
— ইসস তোকে এখন কে বাঁচাবে রে!
মোস্তফা চৌধুরী প্রচন্ড ভ’য় পেলেন। আ’ত’ঙ্কি’@ত হয়ে বলতে লাগলেন,
— দে,, দেখ ফাইয়াজ তুই আ,, আমাকে মা’র’বি না। প্লিজ ছেড়ে দে আমাকে। আমি আর কোনোদিন তোর রাস্তায় আসবো না ওয়াদা করলাম। ছ,, ছেড়ে দে আমায়। আর,, আর আমি জানি তুই হুরের সামনে আমাকে কখনোই মা’র’তে পারবিনা। হুর তোকে ঘৃ’ণা করবে।
মোস্তফা চৌধুরী হুরের কাছে যেতে চাইলে ফাইয়াজ সামনে এসে দাঁড়ালো। হুর নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। তারও বিশ্বাস ফাইয়াজ তার সামনে কখনোই কাউকে মা’র’বে না। কিন্তু সেই বিশ্বাস যে কিছুক্ষন পরই বদলে যাবে তা কে জানতো!
ফাইয়াজ পরপর কয়েকবার শু’ট করলো। হয়তো গা’নে যতগুলো বু’লে’ট ছিলো সবগুলোই ঠু’কে দিলো মোস্তফা চৌধুরীর মাথায়। মাটিতে লু’টি’য়ে পড়লেন তিনি। র’ক্তে ভে’সে গেলো ফ্লোর। ফাইয়াজ র’ক্তলা’ল চোঁখে লা’শে’র দিকে তাকিয়ে বললো,
— আজ পূরণ হলো আমার রি’ভে’ঞ্জ। তোকে এতো সহজ মৃ’ত্যু দিতে চাই নি রে। যা করেছিলি তার জন্য ভ’য়া’ন’ক মৃ’ত্যু প্রাপ্য ছিলো। কিন্তু তোর ভাগ্য হয়তো ভালো তাই সহজ মৃ’ত্যু পেলি।
হুর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোস্তফা চৌধুরীর লা’শে’র দিকে। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে। তার চোঁখের সামনে একটা তা’জা প্রাণ নিয়ে নিলো ফাইয়াজ। এতো হিং’স্র’তা নিতে পারলো না হুর। ভ’য়ে কাঁ’প’তে কাঁ’প’তে একসময় মাটিতে লু’টি’য়ে পড়লো।
কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে হুঁশ ফিরলো ফাইয়াজের। পিছন ফিরে হুর কে মাটিতে পরে থাকতে দেখে দৌড়ে গেলো হুরের কাছে। ওকে নিজের বুঁকের সাথে চে’পে ধরে বললো,
— তুমি আমায় ভুল বুঝলে হুর! এটা তো হওয়ার ই ছিলো। এই লোকটা যে আমার জীবনে কতবড় ক্ষ’তি করেছে তা যে তুমি জানো না। আমি কখনোই চাই নি তোমার সামনে আমার এই হিং’স্র রূপ আনতে। কিন্তু আজ একে না মারলে এই লোক নতুন ফ’ন্দি আটতো। সময় এসে গেছে পরি। একবার সুস্থ হও। তোমাকে আমার জীবনের সমস্ত ঘটনা বলবো। আর কোনো রহস্য রাখতে চাই না। সব রহস্যের অবসান ঘটবে। তারপরও যদি তোমার আমাকে ভুল মনে হয় তাতেও আমার কিছু যায় আসে না। প্রয়োজন পড়লে তোমায় বেঁ’ধে রাখবো তাও দূরে যেতে দেবো না। তুমি যে আমার প্রাণ!
ফাইয়াজ হুর কে কোলে তুলে দরজার দিকে হাঁটা দিলো। দরজার কাছে যেতেই দরজা খুলে দিলো ফাইয়াজের লোকেরা। ফাইয়াজ ওদের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,
— এই ন’র্দ’মা’র কী’ট’টা’কে কোনো ন’র্দ’মা’র সামনেই ফে’লে আসবে। আর কাল সকালের মধ্যে এর সব কু’ক’র্ম ফাঁ’স হওয়া চাই।
লোকগুলো মাথা নাড়াতেই ফাইয়াজ হুর কে নিয়ে গাড়ির দিকে হাঁটা দিলো।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।