অফিসের একটা মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলো ফাইয়াজ। মিটিং রুমে যাওয়ার আগে ভু’লবশত ফোন টা নিজের কেবিনেই ফেলে চলে গিয়েছিল। মিটিং এর সময় হয়ে যাওয়ায় আর ফোন নিতে আসা হয় নি।
মিটিং শেষে নিজ কেবিনে প্রবেশ করে চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো ফাইয়াজ। আজ কেমন যেনো অ’স্থি’র অ’স্থি’র লাগছে তার। চোখ বন্ধ করতেই হুরের মায়াবী মুখ টা ভেসে উঠলো। চোখ মেলে ঘড়িতে সময় টা দেখে নিলো ফাইয়াজ। আরও ২০ থেকে ২৫ মিনিট আগেই হুরের ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। ফাইয়াজ ভাবলো হুর কে একবার কল করবে। এর মাঝেই তার ফোন ভাই’ব্রে’ট করে উঠলো। ফাইয়াজ ফোন হাতে নিয়ে দেখলো হুরের সাথে থাকা গার্ডের মধ্যে একজন ফোন দিচ্ছে। ফাইয়াজের হৃদস্পন্দন অ’স্বাভাবিক হারে বেড়ে গেলো। মস্তিস্কে একটা আ’ত’ঙ্ক’ই বিরাজ করতে লাগলো হুরের কিছু হলো না তো! ফাইয়াজের চিন্তার মাঝেই কল টা কেটে গেলো। ফাইয়াজ দেখলো তার ফোনে অনেকগুলো কল মেসেজের নোটিফিকেশন উঠে আছে। জিহ্বা দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে কাঁ’পা’কাঁ’পা হাতে গার্ডের নাম্বারে ডায়াল করলো।
গার্ড ফোন সাথে সাথে রিসিভ করে বললো,
— স্যার ম্যাম কে পাওয়া যাচ্ছে না।
এই এক কথায় মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গেলো ফাইয়াজের। কাঁ’পা কাঁ’পা স্বরে বললো,
— ক,, কি বললে?
গার্ড লোকটা ভ’য়া’র্ত কণ্ঠে বললো,
— স্যার ম্যাম কে পাচ্ছি না। আমরা সম্পূর্ণ ভার্সিটি খুঁজেছি কিন্তু ম্যাম আর তার বান্ধুবী কে কোথাও পাই নি।
ফাইয়াজের মস্তিষ্কে যেনো আ’গু’ন জ্ব’লে উঠলো। রাগে থ’র’থ’র করে কাঁ’প’তে কাঁ’প’তে গ’র্জে উঠলো,
— কি জন্য রেখেছি তোদের হ্যা! এতো করে বুঝিয়ে বলার পরও কেনো তোরা তোদের দায়িত্ব পালন করতে পারলি না বল! আমার বউয়ের যদি কিছু হয়েছে তোদের আমি কে’টে টু’ক’রো টু’ক’রো করবো I swear…
ফোন কেটে দিলো ফাইয়াজ। এসি অন থাকা সত্ত্বেও দ’র’দ’র করে ঘামছে সে। কোথায় যাবে, কি করবে! এরমাঝে আবার ফোন বেজে উঠলো ফাইয়াজের। ফাইয়াজ হুর ভেবে না দেখেই তাড়াহুড়ো করে ফোন রিসিভ করলো। কিন্তু অপর পক্ষের শব্দ শুনে বুঝতে পারলো এটা লিয়া। লিয়া কা’ন্না’র কারণে কথা বলতে পারছেনা। আটকে আটকে বললো,
— ফা,, ফাইয়াজ ভ,, ভাইয়া!!!
ফাইয়াজ অ’স্থি’র হয়ে বলতে লাগলো,
— হ্যালো হ্যালো লিয়া! কা’ন্না থামাও প্লিজ। কি হয়েছে আমাকে খুলে বলো। তোমরা কোথায়? লিয়া প্লিজ বলো।
লিয়া কা’ন্না’র’ত অবস্থায় বললো,
— ভাইয়া ওরা,,, ওরা হুর কে নিয়ে গেছে। ভাইয়া প্লিজ বাঁ’চা’ন হুর কে।
ফাইয়াজের বুক টা ধ’ক করে উঠলো। নিজেকে শান্ত করে বললো,
— কি হয়েছে লিয়া খুলে বলো আমায় প্লিজ! কারা নিয়ে গেছে হুর কে!?
লিয়া ফাইয়াজ কে সব খুলে বললো। রা’গে ফাইয়াজের কপালের র’গ ফু’লে উঠেছে।
— তুমি এখন কোথায় আছো লিয়া!
— ভাইয়া আমি একটা সিএনজি তে আছি।
— তুমি সোজা বাড়ি চলে যাও। আর বাড়িতে গিয়ে কাউকে এ বিষয়ে কিছু বলবেনা বোন। অ’নু’রো’ধ রইলো।
— কিন্তু ভাইয়া হুর…..
— ওকে নিয়ে চিন্তা করো না। আমাকে বিশ্বাস করো তো! আমি ঠিক ওকে স’হি সা’লা’ম’ত ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।
ফাইয়াজ কল কেটে নিজের লোকদের ইনফর্ম করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। ফাইয়াজের মাথায় যেনো আ’গু’ন জ্ব’ল’ছে। দাঁত ক’ট’ম’ট করে বাঁকা হেসে বললো,
— তোকে এতো জলদি মা’র’বো না ভেবেছিলাম। কিন্তু তুই নিজের আয়ু নিজেই কমিয়ে নিয়েছিস। এবার দেখ তোকে কিভাবে মৃ’ত্যু দেই।
ফাইয়াজের ফোন পুনরায় বেজে উঠলো। গাড়ি থামিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো unknown নাম্বার থেকে কল আসছে। ফাইয়াজ তাড়াহুড়ো করে কল রিসিভ করতেই কারোর বি’দ’ঘু’টে হাসির শব্দ পেলো ফাইয়াজ। সে ঠিকই বুঝতে পারলো ফোন টা কে করেছে। লোকটা হাসি থামিয়ে বললো,
— কিরে কেমন আছিস? তোর প্রানপ্রিয় বউ টার কি খবর? আছে তো নাকি হারিয়ে গেছে! হাহাহাহা।
ফাইয়াজ শান্ত স্বরে জবাব দিলো,
— আমার বউ এর গায়ে যদি একটা আঁ’চ’ড় লেগেছে তাহলে তোর দেহের যে কি হবে তুই কল্পনাও করতে পারবি না।
মোস্তফা চৌধুরী খে’ক খে’ক করে হেসে উঠলো। যেনো ফাইয়াজ কোনো জোকস শুনিয়েছে তাকে। হাসতে হাসতেই বলতে লাগলো,
— আ,, আ,, আমাকে থ্রে’ট দেয়ার সা’হ’স করবি না। জানিস তো তোর আদরের বউ আমার ক’ব্জা’য়! তোর এসব কথা নিতান্তই হাস্যকর লাগছে আমার কাছে।
মোস্তফা চৌধুরী এবার রা’গে গ’ড়’গ’ড় করে বলতে লাগলেন,
— অনেক ক্ষ’তি করেছিস আমার। এবার ভ’র্তু’কি দেয়ার পালা। যদি নিজের বউ এর কোনো ক্ষ’তি না চাস আমি যেভাবে বলবো সেভাবে চলবি। কোনো রকমের চালাকি করার চেষ্টা করবি না। নাহলে তোর বউ গা’য়া…
ফাইয়াজ গম্ভীর স্বরে বললো,
— কি করতে হবে বল। আমি কোনো রকমের চালাকি করবো না। তবে আমার হুরের গায়ে যেনো একটা আঁ’চ’ড় ও না লাগে।
মোস্তফা চৌধুরী টি’ট’কা’রি মে’রে বললেন,
— এইতো বাচ্চা লাইনে এসেছে। এখন আমি তোর ফোনে একটি এড্রেস মেসেজ করবো। তুই সেখানে আসবি তবে সম্পূর্ণ একা। কোনো রকমের চালাকি করার চেষ্টা করবি না। নাহলে…….
কল কেটে দিলো মোস্তফা চৌধুরী। ফাইয়াজ ফোন টা পাশের সিটে রেখে বাঁকা হাসলো। বিড়বিড়িয়ে বললো,
— শা’লা মোস্তফা তুই নিজের জন্য নিজেই কি বি’প’দ ডেকে এনেছিস এখনো আন্দাজ করতে পারছিস না। তোর কি অবস্থা করি জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।
——–
ধীরে ধীরে চোখ মেললো হুর। জ্ঞান ফিরেছে তার। নিভুনিভু চোখ মেলে নিজেকে অচেনা জায়গায় পেয়ে আঁ’ত’কে উঠলো হুর। নিভুনিভু চোখে আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো সে । শুধুমাত্র তার মাথার উপর একটা লাইট জ্ব’ল’ছে। তা দিয়েই মৃদু আলো ছড়াচ্ছে। নড়াচড়া করতে চাইলেও পারলো না হুর। হাত পা চেয়ারের সাথে বাঁ’ধা। মাথা ব্য’থা’য় ফে’টে যাচ্ছে হুরের। মাথার পেছনে, কপালে, গলায় র’ক্ত শুকিয়ে জ’মা’ট বেঁ’ধে আছে। আশপাশ পর্যবেক্ষণ করার পর নিজেকে একটা গোডাউনে আবিষ্কার করলো হুর।
প্রচন্ড পানি পিপাসা পেয়েছে হুরের। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে পানি না পেলে ম’রে’ই যাবে। হুর মাথা একদিকে এলিয়ে কা’ত’র কণ্ঠে বলে উঠলো,
— প,, পানি। পানি। ক,, কেউ আ,,মাকে পানি দ,, দিন প্লিজ।
— পানি লাগবে মামুনী! হুম!
হুট করে কারো কণ্ঠ শুনে ভ’য়া’র্ত চোঁখে সামনে তাকালো হুর। লোকটাকে দেখে চিনতে পারলো না হুর। মাথা নাড়িয়ে পানি খাবে বুঝালো। মোস্তফা চৌধুরী একটা ছেলেকে ডেকে পানি দিয়ে যেতে বললো। পানি দিয়ে যেতেই হুর কে পানি পান করালো মোস্তফা চৌধুরী। এবার যেনো জা’নে পানি এলো হুরের। কিন্তু মাথা ব্য’থা’য় অ’স্থি’র লাগছে। হুর কা’ত’র কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
— আমাকে এখানে কেনো আনা হয়েছে? কি অ’প’রা’ধ আমার?
মোস্তফা চৌধুরী হেসে বললেন,
— তোমাকে আমি অ’প’রা’ধী ভাবতাম তবে আসল অ’প’রা’ধী তুমি নও মামুনী আসল অ’প’রা’ধী তোমার ভালো মানুষের মু’খো’শ পড়ে থাকা স্বামী।
হুর অবাক হয়ে তাকালো। বললো,
— এসব আপনি কি বলছেন! ফাইয়াজ কেনো অ’প’রা’ধী হতে যাবে! কি করেছে সে? কি অ’প’রা’ধ তার?
মোস্তফা চৌধুরী বললেন,
— যাকে তুমি এতো বিশ্বাস করো তার অ’প’রা’ধ হলো সে একজন খু’নী। শুনেছো তুমি সে একজন খু’নী।
হুর অবিশ্বাসের কণ্ঠে বললো,
— আমি বিশ্বাস করি না। ফাইয়াজ খু’নী হতেই পারে না। কার খু’ন করেছে সে?
মোস্তফা চৌধুরী এবার হিং’স্র হয়ে উঠলেন। দাঁত ক’ট’ম’ট করে বললেন,
— আমার ছেলে কে। আমার ক’লিজার টু’ক’রো ছেলে কে!!