ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরেছে হুর। আজকের দিন টা জ’ঘন্য বা’জে ছিলো তার জন্য। লিয়ার সাথেও তেমন কথা বলে নি। না কিছু খেয়েছে। খাওয়া বা কথা বলা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছিলো তার জন্য। এমনিতেই ঠোঁটের ক্ষ’ত তার উপর উল্টোপাল্টা ঘষা ঘষি করায় ঠোঁটের অবস্থা ভ’য়ানক আকার ধারণ করেছে। তখন রা’গে, জি’দে ওভাবে ভার্সিটিতে চলে গেলেও পরে বুঝতে পেরেছে কি ভুল টাই না করেছে সে! ঠোঁটের তীব্র ব্য’থা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করেছে হুর। আজকে সারাদিন সে মাস্ক পরে ছিলো। এক মুহূর্তের জন্যও খোলে নি। নাহলে সবাই তার পেছনে পরে যেতো কি হয়েছে জানার জন্য। এমনিতেও মাস্ক পড়ার জন্যও কম জবাবদিহি করতে হয় নি। হুর বিষয় টা এড়িয়ে গিয়েছে ধুলা তে সমস্যা হচ্ছে বলে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওড়নার পিন খুলছিলো হুর। হুট করে ড্রেসিং টেবিলে চোঁখ যেতেই দেখলো একটা ব্ল্যাক রোজ। তার নিচে কিছু একটা চাপা দেয়া আছে। হুর আলতো হাতে রোজ টাকে স্পর্শ করলো। ব্ল্যাক রঙ যেমন তার প্রিয় তেমনি ব্ল্যাক রোজ ও। যদিও এর আগে ব্ল্যাক রোজ সামনে থেকে মাত্র একবার দেখেছিলো তাও ফাইয়াজ দের বাড়িতে। হুরের ছাদে রেড রোজের গাছ আছে তবে ব্ল্যাক নেই। তাই ব্ল্যাক রোজ পেয়ে খুব আনন্দিত হলো হুর। রোজ সরিয়ে দেখলো তার নিচে একটা চিরকুট ছিলো। চিরকুট টা খুলতেই ভেসে উঠলো সরি শব্দ টি। হুর হঠাৎ করে পাওয়ায় বুঝে উঠতে পারলো না এটা তাকে কে বা কেনো দিয়েছে! দুই মিনিট লাগলো তার আন্দাজ করতে।
-“আচ্ছা এটা ফাইয়াজ ভাইয়া দেয় নি তোহ! এখানে সরি লেখা আছে। আর উনি ছাড়া কেউই আমার সাথে misb’ehave করে নি। তার মানে উনিই দিয়েছেন। তাতে কি উনার কি মনে হয় উনি এভাবে রোজ দিয়ে সরি বললেই আমি তাকে ক্ষ’মা করে দিবো। হুঁহ এতো সহজে ক্ষ’মা করছি না আপনাকে মিস্টার ফাইয়াজ। অনেক বা’জে কথা বলেছেন আপনি আমাকে। ”
হুর শাওয়ার নিবে বলে towel নিতে বেলকনিতে গেলো। বেলকনিতে যেতেই আশ্চর্য হয়ে গেলো সে। কারণ তার সম্পূর্ণ বেলকনি অনেক সুন্দর করে বাহারী ফুল গাছ দিয়ে ডেকোরেট করা। ফুলের মিষ্টি ঘ্রানে মো মো করছে সম্পূর্ণ বারান্দা।হুর আশ্চর্য হলেও কোনো অনুভূতি প্রকাশ করলো না এবার। সোজা নিজের towel নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো শাওয়ার নিতে।
হুর ওয়াশরুমে ঢুকতেই হতাশ ভঙ্গিতে রুমে ঢুকলো ফাইয়াজ। এতক্ষন সে দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলো। লুকিয়ে হুর কে দেখছিলো। ভেবেছিলো এভাবে সরি বললে হুরের রা’গ কমবে। কিন্তু হুরের গম্ভীর মুখ দেখে হতাশ হলো সে। মাথার চুল টেনে আপন মনে বললো,
-“বাপরে এতো রা’গ! কই ভাবলাম এভাবে সরি বললে রা’গ কমে যাবে। কিন্তু ম্যাডাম এর মুডের তো কোনো পরিবর্তনই হলো না। ব্যাপার না। আমিও ফাইয়াজ তোমার রা’গ ভা’ঙিয়েই ছাড়বো দেখে নিও। নেক্সট surprise এর জন্য তৈরি হয়ে নাও মিস হুর। এই surprise পাওয়ার পর তোমার রা’গ গলে পানি না হয়ে যাবে কই আমিও দেখবো হুম। ”
অন্যদিকে হুর ওয়াশরুমে ঢুকে বাঁকা হাসলো। ঐ সময় ড্রেসিং টেবিল থেকে ফুল আর চিরকুট নিয়ে বেলকনিতে যাওয়ার সময় হুট করে আয়নার দিকে চোঁখ পড়তেই ফাইয়াজ কে দেখেছে সে। ফাইয়াজ কে দেখেছে বললে ভুল হবে ফাইয়াজ এর হাতটাই শুধু দেখেছিলো। তাতে কি দরজার বাইরে কে আছে হুর তা ঠিকই বুঝতে পেরেছে। তাই তোহ এসব surprise পেয়ে খুশি হওয়ার পরও নিজের অভিব্যক্তি দেখায় নি।
-“আপনাকে কিছু টা ক্ষ’মা করলাম মিস্টার ফাইয়াজ। কিন্তু সেটা তোহ আপনাকে জানতে দেয়া যাবে না। উহু এতো সহজে পার পাবেন না আপনি। আমাকে এতো বা’জে কথা কেউ কখনো বলে নি। অনেক ক’ষ্ট পেয়েছি আমি আপনার ব্যবহারে। যদিও আমি জানি আপনি আমার ভালোর জন্যই বলেছিলেন। তারপরও আমাকে খারাপ মেয়েদের সাথে কিভাবে তুলনা করলেন আপনি! আমিও দেখতে চাই আপনি কি কি করেন! ”
———————————————————————
শাওয়ার নিয়ে হালকা কিছু খেয়ে ঘুমিয়েছিল হুর। ঠোঁটের অবস্থা এখনো যাচ্ছেতাই। হুর চিন্তা করলো তার আম্মু এখনো এই ব্যাপারে জানেন না। জানলে প্রশ্নের ভান্ডার বসাবে। বাড়িতে ঢোকার সময় মাস্ক পড়েছিল বলে উনি বুঝতে পারেন। আর খাবার টাও হুর চুপিচুপি রান্নাঘর থেকে নিয়ে এসেছে। হুরের নিজের উপরই রা’গ উঠছে। কে বলেছিলো অমন পাগ’ল ছাগলের মতো ঠোঁট ঘষতে।নিজেকেই নিজের দুটো থা’প্পড় মার’তে ইচ্ছে করছে হুরের।
হুর ফ্রেস হয়ে নিচে নামলো। সে জানে মিসেস হেনা এখন বাড়িতে নেই। লিয়াদের বাড়িতে আছে। এটা তার নিত্য দিনের অভ্যাস। হুর রান্নাঘরে গিয়ে কফি করে ছাদে উঠলো। ছাদে দাঁড়িয়ে কফি খাওয়ার মজা টাই আলাদা বলে মনে হয় তার।
ছাদে উঠতেই আরেক দফা টাশকি খেলো হুর। তার ছাদ যেনো ছাদ না ফুলের বাগান হয়ে গেছে। হুরের চোঁখ আপনা আপনি বড়ো হয়ে গেলো। বিভিন্ন ফুলের মিশেল ঘ্রানে পা’গল হয়ে যাচ্ছে হুর। এগুলো সব হুরের প্রিয় ফুল যা সে সবসময় নিজের বাগানে রাখতে চাইতো। কিন্তু এগুলোর মধ্যে অনেক গাছ ই আছে যেগুলো দুর্লভ। সহজে পাওয়া যায় না। এই সব ফুলের গাছ সে ফাইয়াজ দের বাড়িতে দেখেছিলো। হুর খেয়াল করতেই দেখলো প্রতিটা টবের গায়ে ছোট ছোট কাগজ চিপকানো যেগুলোতে সরি লেখা। হুর বুঝতে পারলো এগুলো ফাইয়াজ করেছে আর সে নিজেও হুরের আশেপাশেই আছে। তাই হুর নিজেকে স্বাভাবিক করে একটু ভাব নিয়ে হাঁটতে লাগলো যেনো তার কিছু যায় আসে না এসবে। হাঁটতে হাঁটতে হুর একটা অদ্ভুত ক্যাকটাস গাছ দেখলো যাতে একটা ধবধবে সাদা ফুল ফুটে আছে। হুর অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো গাছটার দিকে। কারণ সে শুনেছে ক্যাকটাসে ফুল হয় আজকে নিজের চোঁখে দেখলো। টবের নিচে একটা কাগজ চাপা দেয়া দেখে হুর আলতো করে তা বের করে এনে মেলে ধরলো।
-“এই যে মিস হুর এই গাছটার জন্য হলেও আমাকে ক্ষ’মা করে দাও। তুমি হয়তো জানো না এই গাছটা আমার জন্য কতোটা স্পেশাল। গত সাত টা বছর ধরে আমি এই গাছটা কে যত্ন সহকারে রেখেছি। কিন্তু এই গাছে ফুল হতো না। তবে আমি হতাশ হয়নি কখনো কারণ আমার বিশ্বাস ছিলো যখন আমার জীবনে সত্যিকারের ভালোবাসা, আমার মুখের হাসির কারণ আসবে তখন এই গাছে ফুল হবে। আর দেখো শেষ পর্যন্ত সৃষ্টিকর্তা আমাকে হতাশ করেন নি। আমার বিশ্বাস টা সত্যি হয়েছে। আজকে আমার এই বিশেষ গাছটা তোমায় দিলাম। তার পরিবর্তে তুমি আমার সরি এক্সসেপ্ট করো। আমি তোমাকে হা’র্ট করতে চাই নি। তোমার ভালোটাই চেয়েছিলাম। সবশেষে বলবো আমাকে ক্ষ’মা করো আর না করো এই গাছটাকে যত্ন করে রেখো। কখনো যদি আমি হারিয়ে যাই তবে এই গাছটাকে স্মৃতি হিসেবে রেখে দিও। এই গাছটা তোমাকে আমার কথা মনে করাবে।
ইতি,
ফাইয়াজ”
চিঠি টা পড়ে হুরের রা’গ গলে পানি হয়ে গেছে। সে বিশ্বাস করতে পারছে না তার কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়ার জন্য ফাইয়াজ এতো কিছু করেছে। হুর এই মুহূর্তে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। হঠাৎ খুটখুট আওয়াজ পেয়ে হুর এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। নিচে চোঁখ যেতেই দেখলো একটা রঙিন বক্স। ওটা থেকেই শব্দ আসছে। হুর আগ্রহ নিয়ে বক্সটার সামনে গিয়ে ভ’য়ে ভ’য়ে বক্সটা খুলতে লাগলো। বক্সটা খুলতেই মুখ হা হয়ে গেলো হুরের। চোঁখ বড়ো বড়ো করে, মুখ হা করে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো বক্সটার দিকে।