বাবার শ্বশুর যখন দাদাশ্বশুর

বাবার শ্বশুর যখন দাদাশ্বশুর


আমার
ডান পাশে বসে আছে আমার মা, আর
আমার বাম পাশে বসে আছে আমার বাবা

আর
আমি অসহায়ের মত বাবা মার মাঝখানে বসে আছি

বাবা
আমার মুখ তার দিকে ঘুরিয়ে বললো,

  শুন, মামাতো বোন আর নিজের বোন বিষয়টা প্রায় একই  মামাতো
বোন কি করে বউ হবে মামাতো, খালাতো, ফুফাতো, চাচাতো বোনদের সাথে সম্পর্ক থাকবে মারামারির দুষ্টামি ফাইজলামির সম্পর্ক ওরা আবার কি করে বউ হয়?

  আমি বাবার কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে বললাম,

         
হুম ঠিক
বলেছ বাবা..

আমার
কথা শুনে মা আমার ডানগালে সজোরে থাপ্পড় মেরে বললো,

  আমাদের ধর্মে কোথাও লেখা আছে যে মামাতো বোন বিয়ে করা যাবে না? তাছাড়া  তুই
দেখেছিস শ্রাবণী(মামাতো বোন)কত সুন্দর আর ভদ্র মেয়ে

   আমি মার কথা শুনে মাথা নেড়ে বললাম

 তা ঠিক বলেছো শ্রাবণী অনেক সুন্দরী মেয়ে

  এইবার বাবা আমার বাম গালে সজোরে থাপ্পড় মেরে বললো,

  হারা+মজাদা তোর তো চারিত্রিক সমস্যা আছে মামাতো বোনের সৌন্দর্য্য তোর চোখের সামনে ভাসে কিভাবে? তাছাড়া শুধু ফর্সা হলেই সুন্দর হয় না কি?

দেখে
মনে হয় রক্ত শূন্যতায় ভুগছে তাছাড়া
ওর
চেহারার মাঝে চাকমা চাকমা ভাব আছে  আর
সুন্দরী ফর্সা মেয়েরা কখনো সিঙ্গেল থাকে না ওরা একসাথে অনেকগুলো ছেলেকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরায় 

   আমি বাবার কথা শুনে মাথা নেড়ে বললাম,

  ঠিক বলেছো বাবা শ্রাবণী দেখতে কিছুটা চাকমাদের মত

 এইবার মা আমার ডানগালে আবার থাপ্পড় মেরে বললো,

  শ্রাবণী আর তুই তো একসাথে বড় হয়েছিস শ্রাবণী প্রেম করলে তুই তো তা জানতি তাই না?

  আমি মাথা নেড়ে বললাম,

 তা ঠিক বলেছো মা  শ্রাবণী
কারো সাথে প্রেম করে না করলে আমায় অবশ্যই  বলতো..

  বাবা আবার আমার বাম গালে থাপ্পড় মেরে বললো,

 হারা*মজাদা,  সারাজীবন
যাকে মামা বলে ডেকেছিস তাকে আব্বা বলতে লজ্জা করবে না?

  আমি মাথা নেড়ে বললাম,

 হ্যাঁ বাবা
লজ্জা করবে..

  মা আমার ডান গালে থাপ্পড় মেরে বললো,

লজ্জার
কিছু নেই বিয়ের পর অভ্যাস হয়ে যাবে

 

  এইভাবে বাবা মার তর্ক চলতে লাগলো আর আমার দুইগাল একের পর এক থাপ্পড় সহ্য করতে লাগলাম!

 

কিছুক্ষণ পর

  আমি ছাদের কোণায় চুপ করে দাঁড়িয়ে  আছি  শ্রাবণী
আমায় দেখে অবাক হয়ে বললো,

  কি রে,  তোর
দুই গাল এমন গাল হয়ে আছে কেন?

  আমি কিছুটা রেগে গিয়ে বললাম,

 আমার বাম গালে বাবার ভালোবাসা আর ডানগালে মার ভালোবাসা লেগে আছে এখন বাকি আছে শুধু এই কপাল এখন তুইও এই কপাল বাবা মার মত ভালোবেসে লাল করে দে

  আমার কথা শুনে শ্রাবণী আমার খুব কাছে আসলো আর এতটাই কাছে এসেছিলো যে ওর নাকের গরম নিঃশ্বাস আমার গায়ে পড়ছিলো

  আমি কিছুটা ভয়ে পেয়ে বললাম,

  এই সব কি করছিস?

তুই
আমার পায়ের উপর পা রাখছিস কেন?

  আমার কথা শুনে শ্রাবণী মুচকি হেসে বললো,

 হয়েছিস তো কলাগাছের মত লম্বা আমি হালকা খাটো মেয়ে তোর কপাল নাগাল পাই কিভাবে?

  শ্রাবণী আমার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বললো,

  চিন্তা করিস না আমাদের বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে

 

  আসলে আমার আর শ্রাবণীর রিলেশন অনেক দিনের বাবা মা কেউ সেটা জানে না  সেদিন
আমি শ্রাবণী আর মা যখন একসাথে বসে টিভি দেখছিলাম তখন  শ্রাবণী
মাকে বলেছিলো,

  জানো ফুপি, সেদিন খবরে দেখলাম ছেলের বউ শ্বাশুড়ির সাথে ঝগড়া করে শ্বাশুড়ির গলা টিপে মেরে ফেলেছে তোমার ছেলেকে অচেনা অজানা মেয়ের সাথে বিয়ে দিও না দেখা গেলো ছেলের বউ তোমার সাথে ঝগড়া করে রাতে তোমায় বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেললো তাই তুমি তোমার ছেলেকে পরিচিত আত্মীয় স্বজনের মাঝেই বিয়ে দিও  তাছাড়া
আমিও তো বড় হয়ে গেছি  বাবা
মা আমারও বিয়ের কথাও বলছে

  আমি শ্রাবণীর কথা শুনে কাশতে কাশতে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম  পাগলিটা
ঠিকিই মার মাথাতে আমার আর ওর বিয়ের কথাটা ঢুকিয়ে দিয়েছিলো

 

  বাবার আপত্তি থাকার পরেও মার জোরাজোরিতে আমার আর শ্রাবণীর বিয়েটা হচ্ছে আমি যখন কবুল বলতে যাবো তখন বাবা আমার ডান কানের কাছে এসে বললো,

  ছিঃ ছিঃ ছিঃ  তুই
তোর বাবার সম্মানের কথা ভাবলি না যাকে এতকাল সালা বলে ডেকেছি থাকে কি করে এখন…..

বাবা-
এখন সময় আছে তুই বিয়েটা করিস না

   মা- তখন আমার বাম কানের কাছে এসে বললো,

  তোর বাবার যদি এতই সম্মানে লাগে তাহলে তোর বাবাকে আমি ডিভোর্স দিবো তবুও তকে এই বিয়ে করতেই হবে

 

  ডিভোর্সের কথা শুনে বাবার মুখটা চুপছে যাওয়া বেলুনের মত হয়ে গেলো আর আমি তখন হাসতে হাসতে কবুল বলে ফেললাম

 

  দুপুরের দিকে অফিসে কাজ করছি এমন সময় নানু আমায় ফোন দিয়ে বললো  নানার
শরীরটা একটু খারাপ আমি তাড়াতাড়ি বাসায় এসে বাবাকে বললাম,

  বাবা আমার দাদা শ্বশুরের শরীরটা খুব খারাপ চল উনাকে দেখতে যেতে হবে

  বাবা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,

  দাদা শ্বশুর মানে?

আমি
মুচকি হেসে বললাম,

 তোমার শ্বশুর  মানে
আমার নানাজান

বাবা
রাগে আমার দিকে পত্রিকাটা জুড়ে  বললো,

  হামারজাদা  আমার
শ্বশুরকে তুই দাদা শ্বশুর বলছিস কেন?

  আমি আবারও মুচকি হেসে বললাম,

 তোমার শ্বশুর হলো শ্রাবণীর দাদাআর শ্রাবণী আমার স্ত্রী সেই হিসাবে  তোমার
শ্বশুর হলো আমার দাদা শ্বশুর

 

  আমি গাড়ি চালাচ্ছি বাবা আমার পাশের সিটে বসা পিছনে সিটে মা আর শ্রাবণী বসেছে বাবা কপালে হাত দিয়ে বললো,

  ছিঃ ছিঃ বাবা ছেলে একসাথে শ্বশুরবাড়ি  যাচ্ছি..

  আমি বাবার কানে কানে বললাম,

 বাবা, তোমার শ্বশুরবাড়িতে কি খালি হাতে যাওয়া উচিত হবে?

  বাবা আমায় জোরে ধমক দিয়ে বললো,

    হারামজাদা এটা তোরও শ্বশুরবাড়ি এতদিন যাবত আমি নিয়েছি আজ থেকে তুই নিবি..

  মা আর শ্রাবণী হাসছে আর বাবা বিড়বিড় করে বলছে,

  ছিঃ ছিঃ ছিঃ….

 

সমাপ্ত

 

লেখক আবুল বাশার পিয়াস

ফেসবুক থেকে নেয়া

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।