কবুল বলেছে তো ঠিকই।তবে তা সেহরিশ নয় বরং আয়রা।হ্যা আয়রা কবুল বলেছে।সবাই গেটের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা সাদা পরি দাড়িয়ে আছে মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে।
আয়রাকে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে।গায়ে সাদা বারবি গাউন।গলায় ডাইমন্ডের নেকলেস।কানে ডায়মন্ড ইয়ার রিং।দুই হাতে ডজন খানেক চিকন চুরি।আংটি।পায়ে সাদা পাম্পসু।আর মাথায় হিজাব করা।সব মিলিয়ে এ যেন জান্নাতি হুর নেমে এসেছে পৃথিবীতে।কেউ চোখ ফেরাতে পারছে নাহ আয়রার দিক থেকে।আরুশ এক ধ্যানে চেয়ে আছে ওর দিকে।
কবুলটা আয়রায় বলেছে।আর সবাই জানতো কবুল আয়রা ই বলবে।কারণ এগুলো যে পূর্ব পরিকল্পিত।
আয়রা:কি ভেবেছেন মি.আরুশ।আমার হাত থেকে এতো সহজে মুক্তি পাবেন?নাহ,সেইটা আমার মৃত্যুর আগে অবধি সম্ভব নয়।
আরুশ উঠে এসে আয়রার সামনে দাড়িয়ে বললো,,,,,
আ
আরুশ:আমি তো চাইও নাহ তোমার থেকে মুক্তি পেতে।
আয়রা:মানে?(অবাক হয়ে)
আয়রার কথায় সবাই হাসলো।কিন্তু কেউ কিছু বললো নাহ।
আরুশ:আমি বলছি সবটা,,,,
আয়রা,,তুমি কি করে ভাবলে আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো?আমি তো তোমাকে ছাড়া নিজেকে এক মুহূর্তের জন্যও কল্পনা করতে পারিনা।সেখানে বিয়ে তো অসম্ভব।আসলে এইসব কিছু আমাদের প্ল্যান করা।
আমরা সবাই জানতাম,তোমার রাগ,অভিমান এতে সহজে ভাংবে নাহ।তাই তোমাকে সত্যিটা জানানোর জন্য এবং তোমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে এভাবে বিয়ে করার জন্য আমরা সবাই মিলে এই প্ল্যানটা করি।
আর সেহরিশ?ওর আমার খালাতো বোন।আর ওর বিয়ে তো দুইমাস আগেই স্পন্দনের সাথে হয়ে গেছে।
আর বাকি রইলো ড্রেস কোড।তুমি চলে যাওয়ার পর একদিন আমি তোমার রুমের স্টাডি রেবিলের উপর একটা সুন্দর ডায়েরি পাই।সেটা পড়েই তোমার এই ইচ্ছে গুলে জানতে পারি।আমি জানতাম আজ তুমি আসবেই।(বলেই মুচকি হাসলো)
এইদিকে আয়রা গাল ফুলিয়ে সবার দিকে তাকালো।এই দেখে সবাই হো হো করে হাসতে শুরু করলো।সেহরিশ উঠে এসে আয়রাকে বললো,,,,
সেহরিশ:ওওওওওও মাই ডিয়ূর সুইট বউমনি।তুমি একদম সুইটের মতো।তোমাকে দেখে আমি নিজেই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।আজ যদি আনি ছেলে হতাম নাহ?তাহলে তোমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলতাম।(কিউট ফেস করে)
সেহরিশের কথায় সবাই আরেক দফা হাসলো।
আরুশ:এই পেত্নি,,,খবরদার আমার দশটা নাহ,পাঁচটা নাহ,একটা মাত্র বউয়ের দিকে নজর দিবি নাহ।
সেহরিশ:আহা আমাদের ভূত মহাশয় কিভাবে ফুলছে।একদম ফুলকো লুচির মতো(হাসতে হাসতে)
হঠাৎই কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে আয়রা দেখে বিন্দিয়া ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
বিন্দিয়া:বোন আমার আমাকে কি মাফ করা যায় না?(চোখের জল ফেলে)
আয়রা আলতো হাতে বিন্দিয়ার চোখের জল মুছে দিয়ে বললো,
আয়রা:তোমাকে কি মাফ করবো?আমি তো তেমার উপর রেগেই নেই।তুমি তো আমার অক্সিজেন।তাই তোমাকে ছাড়া তো আমি বাড়তেই পারবো নাহ।(বলেই জড়িয়ে ধরলো)
বিনৃদিয়াও পরম আবেশে আঁকড়ে ধরলো তার প্রাণ প্রিয় বোনকে।
এই সুযোগে ক্যামেরা ম্যান এই অসাধারণ মুহূর্ত টাকে ক্যামেরা বন্দি করে নিলো।
এরপর আয়রা আর আরুশ একে একে সবার থেকে দোয়া নিয়ে নিলো।আর বললো,আজ আয়রা আর আরুশ পুরো শহর ঘুরবে হাহে হাত রেখে।
এই বলেই বেরিয়ে এলো আয়রা আর আরুশ।
বাকি সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখে-মুখে একরাশ খুশির ঝিলিক।
আয়রা আর আরুশ পাশাপাশি দাড়িয়ে হাতে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে একটা ব্রিজের সামনে।আকাশ দেখছে দুজনে।হঠাৎই আয়রা আরুশের কাঁধে মাথা রেখে পরম আবেশে চোখ বুজে নিলো।
আরুশ:জানো সায়ু,তোমাকে না পেলে আমি সত্যিই মরে যেতাম।
এই কথা শুনে আয়রা চট করে মাথা তুলে আরুশের মুখে হাত দিয়ে বললো,,,
আয়রা:খবরদার এমন বাজে কথা আর কক্ষনো বলবে নাহ।এতোগুলো বছর পর আজ আমরা এক হয়েছি।আর পারবো নাহ তোমাকে হারাতে।
এইবার বাঁচলে একসাথে বাঁচবো।আর মরলেও এক সাথেই মরবো ইনশাআল্লাহ।
হঠাৎই আরুশ আয়রার ওষ্ঠদয় নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো।আয়রা যেন ফ্রিজ্ড হয়ে গেলো কিছু মুহূর্তের জন্যে।এরপর নিজেও তাল মেলাতে লাগলো আরুশের সাথে।ওদের ভালেবাসার সাক্ষী হয়ে রইলো এই চাঁদ,তারা,আর জোৎস্না রাত।
আরুশ আর আয়রা একটা সময় ডুয়েটে গাইতে লাগলো………
আরুশ:শোনোওওওও বলি তোমায়,
না বলা কথাগুলো আজ বলে দিতে চাই।(আয়রার দিকে তাকিয়ে)
আয়রা:বলোওওও কি বলতে চাওওও,
সারাটি জীবন ধরে শুনে যেতে চাই।(আরুশের দিকে তাকিয়ে)
আরুশ:ভালোওওও বাসি আমি যে তোমায়,
এই কথাটাই ছিলো শুধু বলার(আয়রার চোখের দিকে তাকিয়ে)
আয়রা:ভালোওওও বাসি আমিও তোমায়,
শুধু কথাটি মুখে বলে দিতে হয়।(আরুশের চোখে চোখ রেখে)
আরুশ:আকাশের ওই নীল ঠিকানায়,
মেঘেরা সাদা ডানা ছড়ায়(আকাশের দিকে তাকিয়ে)
ওদেরই সেইই ভালোবাসা,এই মনে আজ পেয়েছে ঠায়(বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে)
আরুশ:জড়াবোওওওওও আদরে,তোমাকেই অনুভবে(আয়রাকে জড়িয়ে ধরে)
আকাশের চেয়ে বেশি,তোমাকেই ভালোবাসি(আয়রার মাথায় চুমু দিয়ে)
ভালোওওও বাসি আমি যে তোমায়,
এই কথাটায় ছিলো শুধু বলার।(আয়রার মুখটা কাছে এনে)
আয়রা:ভালোওওও বাসি আমিও তোমায়,
শুধু কথাটি মুখে বলে দিতে হয়(আরুশের গালে চুমু দিয়ে মুচকি হেসে)
সাত সাগর আর তেরোওওওও নদী,পার হয়ে তুমি আসতে যদি(চোখে ভীর করেছে কিছু জলকণা)
রুপকথার রাজকুমার হয়ে,আমায় তুমি ভালোবাসতে যদি(আরুশের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে)
আরুশ:ভালোওওও বাসি তোমায় পুরোনো অনুভবে
এই মনেরই জগতে,রাজকুমারী তুমি(আয়রার নাক টেনে)
ভালোওওও বাসি আমি যে তোমায়,এই কথাটাই ছিলো শুধু বলার(আয়রার হাতে হাত রেখে)
আয়রা:ভালোওওও বাসি আমিও তোমায়,শুধু কথাটি মুখে বলে দিতে হয়।(আরুশের হাত নিজের হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে)
আরুশ:শোনোওওওওও বলি তোমায়,না বলা কথাগুলো আজ বলে দিতে চাই(আয়ার চুলে মুখ ডুবিয়ে)
আয়রা:বলোওওওও কি বলতে চাওওও,সারাটি জীবন ধরে শুনে যেতে চাই(আরুশকে নিজের দিকে করে)
আরুশ:ভালোওওও বাসি আমি যে তোমায়,
এই কথায়টায় ছিলো শুধু বলার।(আয়রাকে কোলে তুলে নিয়ে)
আয়রার:ভালোওওও বাসি আমিও তোমায়,
শুধু কথাটি মুখে বলে দিতে হয়(আরুশের গলা জড়িয়ে বুকে মুখ লুকিয়ে)
এইভাবেই ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল পবিত্র ভালোবাসাগুলো।সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায়না।তবে আরুশ আর আয়রা হাজারো বাধা পেরিয়ে এক হতে পেরেছে।এজন্যই হয়তো একে বলা যায়”A Destination Wedding”
<<>>
(আসসালামু আলাইকুম।আমার লেখা এইটায় প্রথম ধারাবাহিক গল্প।জানিনা কেমন লিখেছি।আপনাদের মনে জায়গা করে নিতে পেরেছি কিনা।তবে গল্পটি কেমন লাগলো,তা অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
আর খুব শীঘ্রই নতুন আরেকটি গল্প নিয়ে হাজির হবো আমি আপনাদের সামনে।
ততদিন অবধি সবাই ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন।
ধন্যবাদ সবাইকে।)