বাইজি কন্যা | পর্ব – ৫২

সিগারেটে শেষ দু’টো টান দিতে দিতে সারিম পর্যবেক্ষণ করল সামনের সুশ্রী নারী মূর্তি’কে। কিঞ্চিৎ ত্বরান্বিত হয়ে সিগারেটের শেষ অংশটুকু মাটিতে ফেলে দিলো। ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে পা দিয়ে পিষেও ফেলল। পুরুষালী কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে দুর্বলচিত্তে ওঠে দাঁড়ালো শাহিনুর। একহাতে শাড়ির আঁচলে মাথায় ঘোমটা তুলে নিলো। আর এক মুহূর্তও উঠানে ব্যয় করল না সে। আরেক হাতে বালতি উঠিয়ে চঞ্চল পা’য়ে ঘরে গিয়ে দ্বার রুদ্ধ করে দিলো। ভ্রু কুঁচকে চিন্তামগ্ন হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল সারিম৷ দু-চোখের তারায় ভেসে ওঠল, শাহিনুরের স্নিগ্ধ, কোমল মুখশ্রী। চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য অবলোকন করে অপরিচিত নারীটির সৌন্দর্যের আলোকরশ্মির তীব্র আলোয় দৃষ্টিভ্রম হলো, মাথা ঝিমঝিম করে ওঠল। বির বির করে বলল,
-‘ এ’তো আহামরি সুন্দরী! ‘
ঘর থেকে বেরিয়ে এলো সামান্তা। মিটি মিটি হাসতে হাসতে বলল,
-‘ পরের বউয়ের দিকে নজর দিতে নেই ভাইয়া। ‘
শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠল সারিমের। সামান্তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-‘ নজর দেইনি নজরে পড়ে গেছে। ‘
মাথা দুলিয়ে হেসে সামান্তা বলল,
-‘ নজরে পড়ার মতোই সুন্দরী মেয়েটা। ‘
সামান্তার বড়ো ভাই সারিম। দু’দিনের ছুটিতে গতকাল মাঝরাতে বাড়িতে এসেছে ৷ তাদের বাড়িতে নতুন ভাড়াটিয়া ওঠেছে। এ ব্যাপারে সে জানতো৷ তাই সামান্তাকে বলল,
-‘ যারা ওঠেছে তাদের মধ্যে পুরুষ লোকটির নাম সুজন না? ‘
-‘ হ্যাঁ। তোমাকে তো সব বলেছি। ‘
সারিম চিন্তিত দৃষ্টিতে সামান্তার দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘ তা বলেছিস। সুজনের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিস আজ। বুঝতেই তো পারছিস দিনকাল ভালো না। তারা যেমনি হোক, যত সমস্যাতেই পড়ুক অপরিচিতদের এত বিশ্বাস করা উচিৎ না। ‘
সামান্তা কিছুটা শান্ত কণ্ঠে বলল,
-‘ মেয়েটা প্র্যাগনেন্ট ভাইয়া। এরপর আর অবিশ্বাস করিনি। ‘
-‘ বুঝলাম বাকিটা ওদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিস। বুঝে নেব। ‘

গর্ভাবস্থার তিনমাস চলছে। খাওয়াদাওয়া নিয়ে কিছুটা সমস্যা হলেও এ পর্যন্ত বমি হয়নি। তাই ভীষণ ভয় পেয়ে গেল শাহিনুর ৷ ভয় থেকেই ঘুমন্ত প্রণয়কে জাগিয়ে তুলল। চোখমুখ লাল করে বিধ্বস্ত মুখে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে আছে সে। সুন্দর, মিষ্টি, পরিপূর্ণ সুখকর একটি রাতের পর ঝলমলে একটি সকালের প্রত্যাশা করেছিল প্রণয়। কিন্তু শাহিনুরের বিধ্বস্ত রূপ দেখে নিভে গেল সে। তার দুনিয়া যেন অন্ধকার হয়ে এলো। রাতের সূচনায় যে তাকে দৈহিক সুখ দিয়ে সমাপ্তি উষ্ণ বুকে প্রশান্তি ভরে ঘুমাতে সাহায্য করে৷ দিনের সূচনায় তার এমন অসুখী, বিধ্বস্ত রূপ নিশ্চয়ই কাম্য নয়। দু’হাত বাড়িয়ে শাহিনুরের কপোলদ্বয় চেপে ধরল প্রণয়। উৎকণ্ঠিত হয়ে বলল,
-‘ কী হয়েছে! ‘
-‘ কিছুক্ষণ আগে বমি হয়েছে আমার। পেটে ব্যথা করছে। ‘
নড়ে ওঠল প্রণয়। একপলক শাহিনুরের উদরে তাকিয়ে বলল,
-‘ খালি পেটে থাকার কারণে বোধহয়। ‘
-‘ তার জন্য নয় সিগারেটের গন্ধে হয়েছে এমন। ‘
-‘ কীভাবে? সামান্তার মামা খাচ্ছিল? ‘
-‘ না অন্য একজন লোক চিনি না আমি। ‘
চিন্তান্বিত হয়ে প্রণয় বলল,
-‘ তুমি কিছু খেয়ে নাও আমি গোসল সেরে আসছি। অপরিচিত লোকটা কে সেটাও দেখে আসছি। ‘
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো শাহিনুর৷ প্রণয় তার ললাটে আদুরে চুমু খেয়ে বিছানা ছাড়ল। রাত থেকেই বুকের ভিতর অদ্ভুত এক কষ্ট হচ্ছে তার। ঘুম ভাঙতেই সে কষ্ট যেন গাঢ় হলো। শেকড়ের টানে বার বার স্মরণে আসছে পরিবার পরিজনদের। ভুলে থাকার চেষ্টা করেও ভুলতে পারছে না। অন্তঃকোণে ঠিক যন্ত্রণা হচ্ছে তাদের জন্য। আম্মা’কে মনে পড়ছে, কেমন আছে আম্মা? কেমন আছে ভাই অঙ্গন? দু’ভাইয়ের কবর কি পাশাপাশি দিয়েছে? মুনতাহার কী অবস্থা? সে সুস্থ আছে তো? আর সখিনা! যার গর্ভে রঙ্গনের ছোট্ট একটি অংশ বেড়ে ওঠছিল! তাকে কি বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে? আদরের ছোট্ট ভাইটার শেষ অংশটুকু টিকে আছে তো? অসহ্য যন্ত্রণায় বুকটা ছটফট করতে শুরু করল। রক্তের সম্পর্কীয় আপনজনদের অবস্থান জানার জন্য কলিজাটা মুচড়ে ওঠল ক্ষণে ক্ষণে। বুকচিরে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস।

সন্ধ্যার পর বাইরে গেল প্রণয়। দশমিনিটের মাথায়
সামান্তা আর সারিম এলো সুজনের সঙ্গে দেখা করার জন্য৷ এসেই দেখলো সুজন,শায়লার ঘরের দরজায় তালা ঝুলছে! অবাক হলো সারিম৷ বলল,
-‘ এরা কই গেছে? ‘
সামান্তা অবাক হলো না বরং মুচকি হেসে ডাকল,
-‘ শায়লা আছো? ‘
শাহিনুর শান্তকণ্ঠে জবাব দিলো,
-‘ হ্যাঁ আপু। উনি বাইরে গেছেন। ‘
সামান্তা বলল,
-‘ আচ্ছা তাহলে পরে আসব। ‘
বিস্মিত হয়ে সারিম সামান্তার দিকে তাকিয়ে রইল। বলল,
-‘ এসব কী! জ্যান্ত মানুষ’কে তালা দিয়ে বাইরে যেতে হয় কেন? পালিয়ে যাবার আশঙ্কা আছে নাকি? ‘
-‘ আমার মনে হয় ভদ্রলোক বউ পালিয়ে যাওয়া নিয়ে নয়, বউ ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় থাকে। ‘
দুষ্টু হেসে সারিম মাথা দুলালো। বলল,
-‘ ঘরে এমন সুন্দরী বউ থাকলে কিছু পুরুষ উন্মাদ হয়ে যায়। কথাটা সত্য। ‘

প্রণয় ফিরল বেশ রাত করে। বরাবরের মতো আজ শাহিনুর রাগ, অভিমান কিচ্ছুটি করল না। বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে ভালোবাসায় সিক্ত চাহনি নিক্ষেপ করে শুধাল,
-‘ আজ এত দেরি হলো যে। ‘
পোশাক পরিবর্তন করতে করতে প্রণয় বলল,
-‘ ডাকঘর খুঁজতে গিয়েছিলাম। ভাবছি আম্মাকে একটি চিঠি পাঠাব। ‘
কেঁপে ওঠল শাহিনুর। ত্বরিতগতিতে প্রণয়ের সামনে এসে দাঁড়ালো। ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল,
-‘ কেন? ‘
কোমরে লুঙ্গি প্যাঁচ দিয়ে বেঁধে শাহিনুরকে কাছে টেনে নিলো প্রণয়। তার শ্যামবর্ণ বুকের ঘনকালো লোমগুলো স্বেদজলে লেপ্টে রয়েছে। সে বুকে নাক ডুবিয়ে দিলো শাহিনুর। প্রণয় ক্ষীণ কণ্ঠে বলে ওঠল,
-‘ আম্মার জন্য বড়ো চিন্তা হয় নুর৷ অঙ্গনের জন্য ঘুম আসে না। এই দু’টো মানুষের খোঁজ না নিয়ে শান্তি পাচ্ছি না। আপাতত একটা চিঠি পাঠাই। আম্মা শান্তি পাবে। আমার শান্তিটা পরেই আসুক। ‘
চোখ মেলে তাকাল শাহিনুর। এ বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করল না সে। বরং অন্য কথায় চলে গেল,
-‘ সবার জন্যই ভাবেন শুধু নিজকে ছাড়া। ‘
মৃদু হাসলো প্রণয় বলল,
-‘ আমাকে নিয়ে ভাবার জন্য তুমি আছোতো। ‘
অভিমানে আরক্ত হয়ে দু’হাতে প্রণয়ের গাল দুটো স্পর্শ করল শাহিনুর। বলল,
-‘ মুখের কী অবস্থা দেখেছেন? ভয় লাগে আমার। দাঁড়ি, গোঁফ, চুল কিছুইতো কাটছেন না। কত টাকা আর খরচা হবে? বড়ো উন্মাদ লাগে আপনাকে! ‘
শব্দ করে হেসে ফেলল প্রণয়। শাহিনুরের কপালে কপাল ছুঁইয়ে শীতল কণ্ঠে বলল,
-‘ আরে বোকা, টাকার জন্য নয় ইচ্ছে করেই কাটাইনি। ভদ্রলোকের বেশভূষা পরিবর্তন করেছি এই যা। চেনা মুখটা একটু অচেনা করার পাঁয়তারা। ভুলে যাচ্ছ কেন আমি তোমার প্রণয় নই আমি তোমার সুজন। ‘
আশ্চর্য হয়ে শাহিনুর বলল,
-‘ না আপনি কোন সুজন নয়, আপনি আমার ডাক্তারসাহেব। ‘
সহসা শাহিনুরের থেকে ছিটকে সরে গেল প্রণয়৷ কঠিন হয়ে ওঠল তার মুখাবয়ব। বুকের ভিতর ধক করে ওঠল শাহিনুরের। এক ঢোক গিলে দু’কদম এগিয়ে গেল। অস্থিরচিত্তে চারিদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল প্রণয়। লুকোনোর চেষ্টা করল নিজের ব্যর্থতাকে। শাহিনুর দু-হাত বাড়িয়ে আবারও প্রণয়ের কপোলজোড়া আঁকড়ে ধরল। ব্যথাহত সুরে বলল,
-‘ এমন করছেন কেন? ‘
কিঞ্চিৎ সরে যাওয়ার চেষ্টা করল প্রণয়। স্বামীকে শান্ত করার মন্ত্র সে জানে তাই আরো কাছাকাছি চলে গেল। নিজের ভেজা কোমল অধরযুগল ছুঁইয়ে দিলো প্রণয়ের শুষ্ক, কঠিন অধরযুগলে। দু-চোখ আবদ্ধ করে নিলো প্রণয়। একহাতে শাহিনুরের পিঠ আঁকড়ে ধরল। অধর ছেড়ে দাঁড়ি ভর্তি গালে যত্নশীল একটি চুমু দিলো শাহিনুর। চোখ বুজে ভারি নিঃশ্বাস ছেড়ে রুদ্ধ হয়ে আসা কণ্ঠে প্রণয় বলল,
– ‘ ডাক্তারসাহেব বলে আমায় তুমি আর যন্ত্রণা দিও না নুর। আজ থেকে তুমি বরং আমায় বাবুর আব্বু বলে ডেকো? ‘
শাহিনুরের বুকের ভিতরটা হুহু করে ওঠল। তীব্র এক কষ্টে বুকটা ভারি হয়ে গেল তার। তর্জনী দ্বারা স্বামীর ঠোঁট চেপে ধরল। অসহায় চোখে তাকিয়ে কাতর কণ্ঠে বলল,
-‘ চুপ, আমি সারাজীবনই আপনাকে ডাক্তারসাহেব ডাকব। আপনি আমার ডাক্তারসাহেব, আপনি আমাদের ডাক্তারসাহেব। দুনিয়ার মানুষ গুলোর মতো আমরা স্বার্থপর নই। আপনার স্থান আমাদের কাছে এক, অদ্বিতীয় এবং অনন্ত। ‘
দু-চোখ ঝাপসা হয়ে এলো প্রণয়ের। বুকের উপর ভারটা যেন কমে গেল অনেকটাই। শাহিনুরের তর্জনীতে আলতো চুমু খেল। তর্জনী সরিয়ে দু’পায়ের গোড়ালি উঁচিয়ে প্রণয়ের ললাট চুম্বন করল শাহিনুর। এত এত ভালোবাসা পেয়ে সত্যি বদ্ধ উন্মাদ হয়ে ওঠল প্রণয়। সমস্ত বিষাদ ভুলে প্রণয়ের ঢেউয়ে ঢেউয়ে অতল গভীরে হারিয়ে গেল দু’জনে।
[৯৪]
সারিম চলে যাবে। রাত ন’টায় রওনা দেবে সে। তাই সন্ধ্যার দিকে সামান্তাকে নিয়ে সুজনদের ঘরে গেল।
সারিমকে ঘরে বসতে দেওয়াতে একেবারেই মন মানেনি৷ তবুও আলাদা ঘর না থাকায় বসতে দিলো প্রণয়। শাহিনুর’কে বলল তিন কাপ চা বানাতে।আলাপচারিতার এক পর্যায়ে সারিম বলল,
-‘ চুল, দাঁড়ির তো বেহাল দশা। বউ’কে ঘরে তালা দিয়ে রেখে শুধু বাজার করারই সময় পান নাকি? ‘
তীক্ষ্ণ খোঁচাটা নিমিষেই ধরে ফেলল প্রণয়। স্বভাবের বাইরে গিয়ে মৃদু হাসলো সে। বলল,
-‘ আপনি যেন কী করেন? ‘
-‘ দেশের আবর্জনা ছাঁটাই করি! ‘
কথাটি বলেই হো হো করে হেঁসে ওঠল সারিম। শাহিনুর তিন কাপ চা নিয়ে তাদের সামনে ধরতেই চট করে এক কাপ নিয়ে নিলো সারিম৷ শাহিনুরকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে প্রণয়’কে বলল,
-‘ ডোন্ট মাইন্ড ফান করছি। তা ভাবির পড়াশোনা কতদূর? ‘
শাহিনুর সামান্তা আর প্রণয়কে চা দিয়ে প্রণয়ের পাশে লুকিয়ে বসে রইল। প্রণয় চায়ের কাপে এক চুমুক দিয়ে বলল,
-‘ বেশিদূর নয় স্কুল অবধিই। ‘
মৃদু হাসলো সারিম। কয়েক চুমুকে চা শেষ করে হঠাৎ বলল,
-‘ আচ্ছা সুজন সাহেব আপনার সঙ্গে পরে কথা হবে। এখন আসি। ‘
সারিম চলে গেল। পেছন পেছন গেল সামান্তা। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল প্রণয়। শাহিনুর বলল,
-‘ লোকটা সুবিধার না। ‘
বাঁকা হেসে প্রণয় বলল,
-‘ বুঝতে পারছি। কী করব বলো? দুনিয়াটাই এমন। নিজের বাড়িতে, নিজের ঘরে, নিজের পরিবারেই তোমাকে নিয়ে স্বস্তি পাইনি। বাইরে কী করে পাবো!’

মধ্যরাত হঠাৎ দরজায় মৃদু মৃদু টোকা পড়ল। যেন কেউ অগোচরে দরজায় টোকা দিয়ে তাদের ডাকছে। ঘুমে বিভোর প্রণয় আচমকাই চোখ খুলল। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করল। শাহিনুর’কে ডেকেও তুলল। শাহিনুর ওঠে বসে গায়ের কাপড় ঠিক করে নিতেই প্রণয় গিয়ে দরজা খুলল। সঙ্গে সঙ্গে হুড়মুড়িয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে সামান্তা দরজা আঁটকে দিলো। তীব্র শীতেও তরতর করে ঘামছে সে। হাত,পা থরথর করে কাঁপছে। ভয়ে শিউরে ওঠে প্রণয়ের পিঠ খামচে ধরল শাহিনুর৷ প্রণয় তাকে অভয় দিয়ে সামান্তার দিকে তাকাল। সামান্তা বারকয়েক ঢোক গিলে শঙ্কিত কণ্ঠে বলল,
-‘ আপনি এখুনি এই মুহূর্তে শায়লাকে নিয়ে পালান। ভাইয়া ফোর্স নিয়ে আসছে তাড়াতাড়ি করুন। ‘
প্রণয়ের ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় পূর্বেই কিছুটা টের পেয়েছিল। তাই সময় নষ্ট করল না। সামান্তার দেখানো পথ দিয়ে শাহিনুরের হাত ধরে বেরিয়ে পড়ল। সামান্তাদের বাড়ির পিছন দিকের শেষ সীমানায় গিয়ে হঠাৎ প্রণয় দাড়িয়ে পড়ল৷ সামান্তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-‘ আপনার ভাই আইনের লোক? ‘
মাথা নাড়িয়ে সামান্তা বলল,
-‘ হ্যাঁ। ‘
প্রণয় মৃদু হেসে বলল,
-‘ আমাদের সাহায্য করার কারণ? ‘
-‘ আপনি পালান সুজন, এখন এত কথা বলার সময় নেই। ‘
দু”পা এগিয়ে থেমে গিয়ে পিছু ঘুরল প্রণয়। সামান্তা হতভম্ব হয়ে চেয়ে বলল,
-‘ নিজের দু’টো ভাইকে মার্ডার করা আসামি কাউকে কী করে এতটা ভালোবাসে! ‘
প্রণয়ের মনে পড়ল, তার স্ত্রীর করা দু’টো খু/নের দায় সে নিজে নিয়েছে। তাই সামান্তাকে বলল,
-‘ একজন পুরুষ যদি কোন নারী’কে নিখুঁতভাবে ভালোবাসতে পারে তাহলে তার জন্য সে সব করতে পারে৷ দু’একটা খু/নও অস্বাভাবিক কিছু না। ‘
একটু থেমে সামান্তার হতভম্ব মুখের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকাল। মনে পড়ে গেল শাহিনুরের হাতে তার দু’টো ভাই খু/ন হয়েছে। এক ঢোক গিলে রুদ্ধ শ্বাস ত্যাগ করল। ক্ষীণ কণ্ঠে পুনরায় বলল,
-‘ পুরুষের জোরালো প্রেম আর নারীর জোরালো ঘৃণা বড়ো ভয়ংকর হয় সামান্তা। আপনার করা এই উপকার কোনদিন ভুলব না। আসছি, ধন্যবাদ আপনাকে, ভালো থাকবেন আপনি। ‘
কুয়াশায় মোড়ানো রাতের অন্ধকারে হারিয়ে গেল ওরা৷ দু’চোখের কার্ণিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল সামান্তার। বির বির করে বলল,
-‘ আপনার শায়লা বড়ো ভাগ্যবতী সুজন। আপনারাও ভালো থাকবেন। ‘
পুলিশি গাড়ির হর্ণ শুনতেই কেঁপে ওঠল সামান্তা। দৌড়ে বাড়ির পেছন দিয়ে বাড়িতে ঢুকল সে। বাড়ির সামনের মেইন গেটে শব্দ করে তাকে ডাকছে সারিম। নিজেকে ধাতস্থ করে ত্বরিতবেগে ঘরে ঢুকে সানজি খানম’কে ডেকে তুলল। বলল,
-‘ আম্মা ভাইয়া তার ফোর্স নিয়ে এসেছে। সুজন ছদ্মনামে এ বাড়িতে রয়েছে। ও আসলে খু/নের আসামি! ‘
সানজি খানম চেঁচিয়ে উঠলো। বিছানা ছেড়ে ওঠে বলল,
-‘ সে কী! এসব কী করে জানলি তুই? আমরা একজন খু/নিকে জায়গা দিয়েছি!’
-‘ আমি সন্ধ্যায় জেনেছি আম্মা। ভাইয়া খুব গোপনভাবে শুধু আমাকে বলে গেছে। গতকাল শায়লা’কে দেখে চেনেনি কিন্তু আজ সুজন’কে দেখেই চিনেছে। সুজনের একটি ছবিও আছে ভাইয়ার কাছে। শুনেছি উনার আসল নাম প্রণয় চৌধুরী! তুমি তাড়াতাড়ি গেট খুলে দাও। ওরা সুজন’কে ধরতে এসেছে। ‘
শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত নেমে গেল সানজি বেগমের৷ মাথা ঘুরছিল তার তবুও কোনরকমে নিজেকে ঠিক রেখে এগিয়ে গেল মেইন গেটের দিকে৷
চোখ বন্ধ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সামান্তা। বির বির করে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করল,
-‘ ওদের তুমি নিরাপদে রেখ প্রভু। ‘

লেখকের কথা: যারা তৃতীয় খণ্ড পড়ছেন সকলে’কে রেসপন্স করার অনুরোধ রইল। আপনারা যদি রেসপন্স না করেন, আমি বুঝতে বা জানতেও পারব না #বাইজি_কন্যা কতজন পাঠক পড়ছে। বাইজি কন্যার সকল পাঠককে ধন্যবাদ এবং ভালোবাসা রইল।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।