অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ৩৫

বাসার পরিবেশ নীরব।আরহাম বাইরে।রাতে সুরাইম আসলো,মাইমুনার সাথে কোনো প্রয়োজনে।যাওয়ার আগে হাফসার সাথেও গল্প করে গেলো কিছুক্ষণ।কথায় কথায় আলফাজের কথা উঠলে সুরাইম বলল, ছোটভাই গতকাল রাতে হুট করেই নিজের ব্যাগপএ গুছিয়ে চট্রগ্রাম চলে গেছে।আমরা সবাই জিজ্ঞেস করলাম, এখন তো ছুটি ভার্সিটিতে তাও কেন যাচ্ছে!ও কিছুই বলল না।

আব্বুর ইচ্ছে ছিলো ভাইকে বড় ভাইয়ার মতো আলেম বানাতে।ইসলামিক লাইনে স্টাডি করাতে কিন্তু ভাই আব্বুর কোন কথাই শুনে নি।তাঁর ইচ্ছা,সিঙ্গিং আর্ট,ক্রাফটিং,স্পর্টস….ইসলামিক স্টাডিজের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই।আমাদের সব ভাই-বোন থেকে ও পুরোপুরি আলাদা।’

সুরাইম চলে গেলো।কিন্তু হাফসা চিন্তায় পড়লো।মাএ গতকালই ও আরহামকে আলফাজের কথা বলেছে,আর গতকাল রাতেই সে বাড়ি থেকে চলে গেছে।আরহাম কি কিছু বলেছেন?যাকগে সেটা না জানলেও হবে।বড় একটা দূ:শ্চিন্তা থেকে শান্তি পেয়েও চিন্তা কমছে না ওর।এখন আপুর বিষয়টা কীভাবে মিটমাট হবে!বিকেল থেকেই বাড়ি ফিরেননি তিনি।ফোন দিলে ফোনও তুলছেন না।পুনরায় কল দিতে গেলে কলিং বেল বেজে উঠলো।উনি আসছেন। দরজা খুলে দিলে উপরে উঠেই একেবারে নিজের রুমে চলে গেলেন।

****
ডিনারের সময় কাউকে খাইয়ে দিলেন না।সবাই চুপচাপ খাচ্ছে।আরহাম যেমন মাইমুনার দিকে তাকাচ্ছেনই না,তেমনি মাইমুনা ছলছল চোখে আরহামের দিকে ঘনঘন তাকাচ্ছে।এদিকে দূজনের মাঝখানের চেয়ারে চুপচাপ ভাত মেখেই যাচ্ছে হাফসা।আম্মু বেশ সময় নিয়ে আরহাম মাইমুনাকে পর্যবেক্ষন করলেন।আরহাম এত চুপচাপ কেন!অন্যসময় হলে, সে নিজেই প্রথমে দূজনের মুখে খাবার তুলে দিতেন,তারপর নিজে খেতেন।আম্মু ভ্রু কুঁচকে হাফসার দিকে তাকিয়ে ইশারায় জানতে চাইলেন, দূজনের মধ্যে কি হয়েছে! হাফসা আম্মুর দিকে ঠোঁট উল্টে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুঝালো,সে এসবের মধ্যে নেই।

****
খাবার খেয়ে আরহাম যখন শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে উপরে উঠতে যাচ্ছিলেন হাফসা মুখ ফসকে বলে ফেললো, ‘আজকে তো আপুর সাথে ঘুমানোর কথা।’

আরহাম পিছনে তাকিয়ে কড়াচোখে হাফসার দিকে একনজর তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন।মাইমুনাও চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেলেন।শুধু ড্রয়িংরুমে বসে রইলো হাফসা।ঝগড়া হয়েছে তাদের দূজনের!এদিকে অস্থির লাগছে ওর নিজের!

*****
মাথার ওপর সূর্য।বিকেল হয়ে এলেও সূর্যের তাপ যেনো কমছেই না।গরমের মধ্যেও ধৈর্য ধরে রোডের অন্যপাশে কোণায় দাঁড়িয়ে রয়েছে আদওয়া।ওর সামনাসামনিই মাদ্রাসার গেইট।এই সময়ই আরহাম মাদ্রাসা থেকে বের হোন।

ওর কলেজ থেকে এটা উল্টো রাস্তা।তবুও সে প্রায়দিন এখানে আসে।ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়াতে কখনো দেখা পায়,নয়তো ফিরে যায়।

আচমকা গেটের দিকে চোখ যেতে দেখে আরহাম বের হচ্ছেন।গেটের বাইরে গাড়ি পার্কিং করা।গেট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠার সময়টুকুই উনাকে দেখা।তাও আজকে মাস্ক পড়া।গাড়িটা স্টার্ট নিতেই আড়াল হয় সে।এদিকেই ফিরবেন তিনি।গাড়ি টা চোখের আড়াল হতে মন খারাপ হয়ে যায় আদওয়ার।যেই এক ক্ষুদ্র শান্তি ছিলো,সেই চোখের শান্তিটাও শেষমেশ হারাতে হবে তার!এত এত মোনাজাত কি বৃথাই যাবে!

******
গোটা চার দিন পেরিয়েছে।আরহাম রীতিমতো উপেক্ষাই করে যাচ্ছেন মাইমুনা কে।কথা বলার সুযোগই অব্দি দিচ্ছেন না তাকে।এদিকে হাফসা সুযোগ পেলেই মাইমুনার হয়ে কথা বলে,আপুকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা বলে।আরহাম কানেই তুলেন না এসব।বরং এটাও বলে দিয়েছেন মাইমুনাকে নিয়ে কথা বললে, ওর সাথেও কথা বলা বন্ধ করে দিবেন।

আপু শুধু চুপচাপ সহ্য করে যাচ্ছেন।এই যেমন,ড্রয়িং রুমে সবার মধ্যে মাইমুনা থাকলে আরহাম চলে আসেন।মাইমুনার সাথে থাকার দিনগুলো নিজের রুমে থাকেন।বিকেলে একা একা বাগানে থাকেন,কাউকে খাইয়েও দেন না এখন।আগে বাসা থেকে বের হওয়া,আসার সময় কপালে চুমু দিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে কথা বলে যেতেন এখন,মাইমুনার রুমের সামনেও যান না তিনি।

আজকেও আরহাম বের হওয়ার সময় মাইমুনা ড্রয়িংরুমে অপেক্ষায় ছিলো।কথা বলতে নিলে আরহাম পাত্তা না দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

সেই থেকে রুমে এসে নিজের জামাকাপড় গুছাতে শুরু করলে নিলে হাফসা এসে জিজ্ঞেস করে,’লাগেজ কেন রেডি করেছেন আপু?’

‘তুমি থাকো তুমার বরকে নিয়ে, আমি চলে যাচ্ছি।’

‘উহু,যাবেন না প্লিজ।কয়দিনই ইগনোর করে থাকতে পারবেন, ক্ষমা করে দিবেন।’

‘মনে হয় না।আমাকে প্রয়োজন নেই উনার।আমার সাথে দেখা না করলেও, কথা না বললেও দিন যায় উনার।’

হাফসাকে মন খারাপ করে থাকতে দেখে মাইমুনা ওর মাথায় হাত দিয়ে বলেন, ‘তুমি আমার জীবনের একটা উপহার।ভীষণ মিস করবো।’

আম্মু এসে জিজ্ঞেস করলে,আপু নিজের মা বাবাকে দেখতে চাওয়ার কথা বলে চলেই গেলেন।হাফসাকে কড়াভাবে বলে দিলেন, ‘আরহামকে না বলতে।’

*****
আরহাম বাসায় ফিরেছেন বিকেলে।মাইমুনার কথামতো কেউই উনাকে জানালো না,যে উনি চলে গেছেন।সন্ধ্যায় চা খাওয়ার সময়,আরহাম কয়েকবার মাইমুনার রুমের দিকে তাকালেন।আসার পর থেকেই মাইমুনাকে একপলকও দেখেন নি।কিছু হলো না তো উনার!

আড়চোখে আরহামকে দেখে হাফসা আর আম্মু মিটিমিটি হাসছেন।একটু পর আম্মু কিচেনে যেতে,আরহাম হাফসার পাশের সোফায় এসে বসলেন।জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাসায় আর মানুষ কোথায়?’

‘আর কে?’

‘বাকিদের কথা বলছি’

হাফসা অন্যমনষ্ক হয়ে বলল,’বিনু আপু কিচেনে।কাজলদি ছুটিতে।আর…..

আরহাম হাফসার গাল হালকা করে চিপে ধরে চোখ রাঙ্গিয়ে বললেন ‘আপনার আপুর কথা বলছি।’

‘আমার আপু?আপনার তো কোনো শালি নেই।’

57★

‘আমার আপু?আপনার তো কোনো শালি নেই।’

‘উফফ মাইমুনার কথা বলছি উমায়ের।’

‘ওহহো,আপু চলে গেছেন।’

‘চলে গেছেন মানে?কোথায়??’

‘সেটা বলে যাননি।’

আরহাম রাগ করে উঠতে উঠতে বললেন, ‘উনি চলে গেছে এটা এখন বলছেন আমাকে?’

আম্মু এসে আরহামকে ধমকে বললেন, ‘খবরদার আমার মেয়ের সাথে উঁচ গলায় কথা বলবে না।তুমার বউ তুমার ওপর রাগ করে চলে গেছে।আমাদের কোনো দোষ নেই।’

আরহাম হাফসাকে সরি’ বলে দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলেন।হাফসা আর আম্মু হেসে উঠলেন দূজনে!

৯৩
পার হয়েছে গোটা একদিন।কিন্তু আরহামের মনে হয়েছে, মাইমুনাকে না দেখে থাকা একটা বছর পার হয়েছে।ফোনের ওপর ফোন দিলেও তুলছেন না।এবার নিজেই বেকে বসলেন আরহাম।পারমিশন ছাড়া কেন গেলেন ওখানে!আর ফোন কেন তুলবেন না?’

দূপুরের খাবারে হাফসা একবার এসে ডেকে গেলো।বললেন, খাবেন না।একটু পর হাফসা খাবার নিয়ে ঘরে আসলে বললেন, ‘খাবো না বলেছি তো।ইচ্ছে নেই।’

‘আমিও তো খাই নি।’

‘কেন?’

‘খাইয়ে দিলে খাবেন?’

‘আপনি?আমাকে?’

‘হু।’

‘আচ্ছা।’

হাফসা একটু ইতস্তত বোধ করলো।এই প্রথম এমন অনুভূতি।প্রথম লোকমা মুখে তুলে উনি হেসে দিলেন।হাফসা মনে মনে প্রস্ততি নিলো।কীভাবে শুরু করবে!এইতো হাসছেন!ওসব কথা বললে যদি রেগে যান!

‘দ্যা টেস্ট ইজ এনহেন্সড বাই ফিডিং উইথ ইউর হ্যান্ডস!উমমম ডিলিসিয়াস!’

হাফসা একটু সাহস নিয়ে বলল, ‘একটা কথা বলব?’

‘হুমম।’

‘আগে কথা দিতে হবে রাগ করবেন না।’

‘আপনার সাথে রাগ করি আমি?মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যায়,কিন্তু সবসময় করি?’

‘উহু,এটা বলছি না।আপনার রাগ অনেক ভয় লাগে!তাই আগে থেকে সেইফ হওয়া ভালো।’

আরহাম মুচকি হেসে বললেন, ‘আচ্ছা’

‘আমি শুধু বলবো,আপনি শুধু শুনবেন।ভুল হলে ক্ষমা করে দিতে হবে,রাগ করবেন না।ঠিক আছে?’

‘জ্বী।’

‘আপুকে ক্ষমা করে দিন না!উনি তো অনুতপ্ত।আগের সবকিছুর জন্য।মানুষ মাএই তো ভুল।আর প্রথম প্রথম আমার সাথে যা করেছেন,সবকিছু একটা ঝোঁকের বশে।এমন কোনো ভাবনা থেকে যে,আমি হয়তো আপনাকে উনার কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছি অথবা আপনি আমাক বেশী কেয়ার করবেন।আপনি তো উনার প্রিয়জন।তিনবছরের একান্ত মানুষটাকে হুট করে ভাগ করা উনার কাছে অবশ্যই কষ্টকর ছিলো।আপনি পজিটিভলি ভাবুন।মেয়েরা সবকিছু দিয়ে দিবে,প্রিয় মানুষের ভাগ দিবে না!আপু তো দিয়েছে।আপু বলেছেন, গত তিন বছরে আপনাদের মধ্যে কখনো এমন হয়নি, কিন্তু আমি আসার পর হয়েছে।আমার জন্যই হয়েছে।আপু আপনার কাছে কত বার ক্ষমাও চাইতে চেয়েছেন,আপনি সেই সুযোগও দেন নি।আপনি বাসা থেকে যাওয়ার পর আপু কিন্তু কাঁদতেন একা একা।আপু কষ্ট পেয়ে চলে গেছেন।প্লিজ উনাকে নিয়ে আসুন।ক্ষমা করে দিবেন বলুন প্লিজ।আমি অনুরোধ করছি।’

আরহাম পাংশুটে মুখ করে অন্যদিকে তাকিয়ে রয়েছেন।হাফসার অনুরোধিত সুরের উত্তরে বললেন, ‘বুঝলাম উনি ভুল করেছেন।আপনাকে মেনে নিতে কষ্ট পেয়েছেন,তাই আপনার সাথে অন্যায় করেছেন।কিন্তু রুদ্র!তাকে আপনার প্রতি উষ্কে দেওয়া?এটা মেনে নিব আমি?এত সহজ?আপনি আমার আমানত উমায়ের।আপনার বাবার থেকে একটা পবিত্র ফুল নিয়ে এসেছিলাম, আর রুদ্র আপনাকে টিজ…!’

আরহাম চোখ বুজে চুপ হয়ে গেলেন।হাফসা বুঝলো,উনার রাগ উঠছে।আটকানোর চেষ্টা করছেন।কিছু বলতে যাবে, তখন আরহাম বলে উঠলেন, ‘এখান থেকে যান।এখনই।’

হাফসা চুপচাপ বেরিয়ে এলো!উনাকে রাগতে দেখে ভয় লাগলো ওর!

সিঁড়ি পের হতে না হতেই বিকট শব্দ শুনে ভয় পেয়ে উঠলো হাফসা।সে যখন পুনরায় আরহামের ঘরে গেলো,ততক্ষণে কাঁচের টি টেবিল টা ফেলে দেয়ালে একহাত দিয়ে ঠেস ধরে অন্যহাতে মাথা চেপে আছেন তিনি।হাফসা ভয়ে কাঁপতে লাগলো,সাহস হলো না আরেকটু এগোতে।দূহাতে মাথা চেপে দাঁত দিয়ে অদ্ভুত শব্দ করছিলেন আরহাম।রাগকে কোনোমতেই কন্ট্রোলে আনতে না পেরে পুনরায় কাঁচের ভেইস হাতে নিলেই ভয়ে চোখ খিঁচে হাফসা।হাত পা থরথর করে কাঁপছে ওর।হঠাৎ মাথা ঘুরে উঠতেই ব্যালেন্স ছেড়ে দেয়।

ভেইস ছুড়ার শব্দ ছাড়াও পেছনে অন্য কোনো শব্দ শুনে সেই শব্দের উৎস খুঁজতে আরহাম যেই পেছনে তাকালেন অমনি হৃদপিণ্ড ধ্বক করে উঠলো উনার।দ্রুত এসে ওকে কোলে তুলে বিছানায় শোয়ােলেন।গাল চাপড়ে বললেন, ‘পড়ে গেলেন কীভাবে উমায়ের?চোখ খুলুন প্লিজ চোখ খুলুন।’

হাফসা ততক্ষণে সেন্সলেস।ভাঙ্গাচোরার আওয়াজ শুনে আম্মু আব্বু উপরে উঠলেন।হাফসাকে সেন্সলেস দেখে আব্বু আরহামকে রাগ নিয়ে বললেন, ‘তুমি খারাপ ব্যবহার করেছো ওর সাথে?’

আরহাম নতস্বরে বললেন, ‘জ্ জ্বী না আমি….

‘গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার।চোখের সামনে থেকে সরো।’

আম্মু ইশারায় আরহামকে সরে যেতে বললেন।যেই বাপের সেই ছেলে।বাবার রাগ পেয়েছেন আরহাম।যেখানে খোদ গুরু রেগে গেছেন….

আরহাম বেরিয়ে গেলেন চুপচাপ।হাফসার চোখেমুখে পানির ছিটা দিতেই পিটপিট করে চোখ খুলে সে।চক্ষু সম্মুখে আম্মু আব্বুকে দেখামাএই হুড়মুড়িয়ে উঠে বসে।আম্মু ব্যস্ত হয়ে বললেন, ‘উঠো না শুয়ে থাকো।’

‘আ আপনারা ক্ কেন?’

‘সেন্সলেস কীভাবে হয়ে গেলে?আরহাম কিছু করেছে?’

হাফসা পূর্বের ঘটনা মনে করার চেষ্টা করে বলল, ‘জ্বি না’

‘তাহলে?’

আম্মুর উত্তরে আমতাআমতা করে উত্তর দিলো, ‘ক কিছু না।ভ্ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তাই।’

‘ওহ আচ্ছা।’

‘আরহাম তুমার সাথে রাগারাগি করেছে কিছু নিয়ে?’

‘জ্বী না।’

‘তাহলে ও রেগে গিয়েছিলো কেন?’

হাফসা মাথা নিচু করে নিলো।উনার রেগে যাওয়ার কারণ যে নিজেই,সেটা কোন মুখে বলবে!

আব্বু ততক্ষণে বের হতে হতে বললেন, ‘যে কারণেই হোক!এত রাগার মানে কী!ঠান্ডা মাথায় সলুশন হতো না!হি ডিজার্ভস এ্যা হিউজ পানিশমেন্ট।’

রেস্ট নিতে বলে দূজনে বেরিয়ে গেলে আরহাম নিচুমুখে রুমে আসেন।

আরহাম আসতেই হাফসা উঠে বলে, ‘স সরি আমার জন্য আব্বু আপনাকে…

হাফসাকে বসিয়ে হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসে আরহাম অনুতপ্তসুরে বললেন, ‘আই এম সরী উমায়ের!রুদ্রের কথা উঠতেই আমার রাগ উঠে গিয়েছিল।নিজের মধ্যে ছিলাম না।অতিরিক্ত রাগে এসব করেছি।আপনাকে চলে যেতে বলেছিলাম কেন আসছিলেন আবার?’

‘শব্দ শুনে।’

‘আই ব্রেক মাই কমিটমেন্ট ফরগিভ মি!সরি।’

‘আই এম সরী টু।আর এসব কথা বলবো না।’

আরহাম হাফসার গালে হাত রেখে বললেন, ‘আপনার অনুরোধ রাখবো।মাইমুনাকে নিয়ে আসব।’

*****
রাত তখন সবে নয়টা।অনেকক্ষণ ভাবাভাবির পর চোখ খিঁচে আরহামের নাম্বারে কল দিয়েই বসলো আদওয়া।কলিং হওয়ার সময়কালের প্রতিটা শব্দ যেনো স্তব্ধ রুমে ভয়ংকর আওয়াজ তুলছে।হৃদপিণ্ড দ্রুতগতিতে বিট করছে।এত ভয় তো আগে কখনো হয়নি!

দূই দূইবার কল হলো।ওপাশ থেকে কোনো রেসপন্স নেই।হতাশ হয়ে বেলকনির বাইরে অন্ধকারে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রইলো।ভাবতে গেলে মনে হয়,জীবনে এই প্রথম একটা জিনিসের জন্য সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরছে সে।না পাওয়ার অনুভূতি খুব করে অনুভব করছে।এই বড় ছাদের নিচটায়,কত মানুষই না পাওয়ার কষ্টে ভুগছে!অথচ সে যেটা চায়,তার জন্য সেটা কল্যাণকর নাও হতে পারে!

******
মাইমুনার মাথার শিওরে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন আরহাম।এরা কি বুঝে না!এরা দূজনই আমার অর্ধেক।অর্ধেককে ছাড়া কি থাকা যায়?একজন অভিমান হলে বাবার বাড়ি চলে আসে,আর আরেকজন ডির্ভোস চায়।আমি কি আপনাদের মনমতো হতে পারিনি!আল্লাহ তো নিজেই বলেছেন, ‘তোমরা কখনোই তাদের মধ্যে সমতা করতে পারবে না।’
আমিও হয়তো পারি না।তবে চেষ্টা তো করি।

ঘুমটা হালকা হয়ে এসছিলো মাইমুনার।মাথায় কারো আলতো স্পর্শ পেতেই ঘুমের মাঝে কেঁপে উঠলো মাইমুনা। স্পর্শটা এত পরিচিত লাগছে কেন!শাহ তো আসার কথা নয়।তবুও মন বুঝে না।মাইমুনা বন্ধ চোখজোড়া খুলতেই চোখে ভাসে তাঁর প্রিয়তম।

দূহাতে ভর দিয়ে তড়িঘড়ি করে উঠতে গেলে আরহাম বাঁধা দেন।উনি এগিয়ে মাইমুনা কে ধরে বসান।

মাইমুনা পলকহীন বেশ কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে আরহামের দিকে। স্বাভাবিক হতেই আবার নিজের অবস্থানে অসার হয় সে।আরহাম উনার কাছে এসে বসে বললেন, ‘এত অভিমান?’

58★
৯৪
‘এত অভিমান?’

মাইমুনা উত্তর দিলেন না।আরহাম মুচকি হেসে ঝুঁকে মাইমুনার গালে কপালে চোখে চুমু খেলেন।লোকটার বিরতিহীন চুমুতে মাইমুনা নিজেকে গুটিলে নিলেন।উনার চেহারায় লজ্জারাঙ্গা লাল আভা দেখতেই আরহাম বেশ শব্দ করেই হেসে দেন।

হাতের পিঠে চুমু খেয়ে গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘আম সরী।’

মাইমুনা মুখ ফিরিয়ে নিলে আরহাম হাটু গেড়ে উনার সামনে বসে কানে ধরে অসহায় ভাব নিয়ে বললেন, ‘তিন বছরের ভালোবাসাকে না দেখে থাকতে খুব কষ্ট হয়।’

মাইমুনা বলতে শুরু করলেন, ‘আমাকে এভাবে শাস্তি না দিলেও পারতেন।ভুল করেছি, শাসন করতেন, বকতেন, প্রয়োজনে মারতেন….
মারের কথা শুনে আরহাম বিস্ফোরিত চোখে তাকালেন।

মাইমুনা তাঁর কথা চলতি রেখে বলল,’তবুও শাসন করলেন না।বুঝালেন না।আমার দোষ আমি স্বীকার করছি কিন্তু…আমি কি নিজের বিবেকে ছিলাম?অতপর মিনমিনে স্বরে বললেন, ‘প্রিয়জনকে ভাগ করা যে কত কষ্টের সেটা আপনি বুঝবেন না।’

‘আমার কথায় কষ্ট পাবেন না।আমি দূজনকে সমান ভালোবাসি।একবার ভাবেন,আপনি আমার ইগনোরেন্সে কতটুক কষ্ট পেয়েছেন,আপনাকে ইঙ্গিত করা আমার ইনডিরেক্ট কথাগুলোয় আপনি কতটুক হার্ট হয়েছেন,তাহলে বুঝুন উমায়েরকে আমি সরাসরি কঠিন কথা বলেছি,হৃদয় ফেঁড়ে যাওয়া কথার আঘাত দিয়েছি,গায়ে হাত তুলেছি, উনি কতটুকু কষ্ট পেয়েছিলেন?উমায়ের জিতে গিয়েছেন।যে মেয়েটা এত কঠিন যন্ত্রণা সহ্য করেও সবর করতে পারে,সেই উত্তম।উমায়ের যতটুক ধৈর্য ধরেছেন, অতটুক ধৈর্য হয়তো আমারও নেই।উনার এত কষ্টে আপনার প্রতি আমার কয়দিনের ইগ্নোরেন্সের কষ্ট কি বেশী হয়ে গেল?আপনি যখন উমায়েরকে কষ্ট দিয়ে সুখে ছিলেন,তৃপ্তি পেয়েছিলেন,আপনার ক্ষেএে এই সময় উমায়ের আমাকে সবসময় অনুরোধ করেছেন যেনো আপনাকে আর ইগনোর না করি।আপনার সাথে থাকি,সম্পর্ক স্বাভাবিক করি।আপনি আমাকে উমায়ের সম্পর্কে মিথ্যে অপবাদও দিয়েছিলেন, আমি ভুলিনি।কিন্তু উমায়ের!উনি আপনার খারাপটা রেখে আপনার ভালো দিকগুলো দিয়ে আমাকে দূর্বল বানানোর চেষ্টা করেছিলেন। যাই হোক!সবশেষে বলব,আপনার সাথে আমার সম্পর্কের দূরত্ব আরও দীর্ঘদিন থাকতো,তবে উমায়ের এর জন্য আপনার সাথে কম দিনেই সব সহজ করে নিয়েছি।’

মাইমুনা নিজের ছোট মন মানসিকতার জন্য চরম লজ্জা অনুভব করছেন।আরহামের প্রতিটা কথাই সত্যি!

‘আশা করি আপনি বুঝবেন মাইমুনা!আপনার সাথে দূরত্ব হউক, আমি চাই নি আমারও কষ্ট হতো।কিন্তু আমি বারবার ব্যর্থ,আপনাদের সমতা করায়।’

আরহামের আক্ষেপের সুরে কথাটা বলার সাথে সাথেই মাইমুনার চোখের বাঁধ ভাঙ্গলো।অনুতপ্ত সুরে বললেন, ‘আমাকে ক্ষমা করে দিন।প্লিজ শাহ।আর কখনো এমন ভুল হবে না।আই প্রমিস!
আপনি অসন্তুষ্ট থাকলে মরে গেলেও শান্তি পাবো না।’

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।